সিরাজ সিকদার রচনাঃ প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম, দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন এবং একটি জরুরী অধিবেশনের ইশতেহার

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ মার্চ ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ  (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ২২ অক্টোবর ২০১৩


 

পিডিএফ

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠক ১৭ই জানুয়ারী শুরু হয় এবং ১৮ই জানুয়ারী সাফল্যজনকভাবে সমাপ্ত হয়।

সভায় সকল সদস্য ও বিকল্প সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কমরেড সিরাজ সিকদার। তিনি সভায় গুরুত্বপূর্ণ উদ্বোধনী ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের গুরুদায়িত্ব এবং আদর্শের ভূমিকাকে স্মরণ করিয়ে দেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয় যে, কেন্দ্রীয় কমিটির স্থায়ী কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভা ডাকবেন।

কংগ্রেসের সিদ্বান্তসমূহ বাস্তবায়িত করা, পার্টির তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক পত্রিকা ‘লাল ঝাণ্ডা’ নিয়মিত প্রকাশ করার সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয় এবং সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি নিযুক্ত করা হয়।

বিভিন্ন ব্যুরো সমূহ বাতিল করা, বিভিন্ন স্তরের আহ্বায়ক কমিটি গঠন ও তাদের কংগ্রেস করার ব্যবস্থা করা, সর্বহারা পার্টির সদস্যপদ প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং পাঠ্যসূচী নির্ণয় করার প্রস্তাব করা হয়।

আরো সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয় যে, পার্টির খরচের যথাযথ ভাউচার পেশ করতে হবে এবং তা উচ্চস্তরের অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। সার্বক্ষণিক কর্মীদের অবশ্যই পার্টির নির্দেশ পালন করতে হবে।

পূর্ববাংলার সর্বহারার পার্টির প্রথম জাতীয় কংগ্রেসের ইশতেহার জনগণের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করার সিদ্বান্তও গ্রহণ করা হয়।

শ্রমিক-কৃষকের সাথে একীভূত হওয়া, শ্রমে অংশগ্রহণ করা, তাদের কাছ থেকে পুনরায় শিক্ষা গ্রহণ করা এবং পুনর্গঠিত হওয়া, পাঠচক্রের সদস্যদের কমপক্ষে একজন শ্রমিক বা কৃষক বন্ধু সংগ্রহ করতে হবে প্রভৃতি সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়।

সভায় বিভিন্ন সদস্যদের কাজের দায়িত্ব ও এলাকা ঠিক করে দেওয়া হয় এবং জনৈক কমরেডকে শোধরানোর জন্য কতগুলো শর্তাবলী নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

সভায় সকল সিদ্বান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয় এবং পরবর্তী সভার তারিখ ঠিক করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

 

● পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ২৫শে মার্চ শুরু হয় এবং ২৬শে মার্চ সম্পন্ন হয়।

সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যগণ ও বিকল্প সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন এবং কমরেড সিরাজ সিকদার সভাপতিত্ব করেন।

সভায় পূর্ববাংলার সামাজিক পরিস্থিতি এবং কংগ্রেসউত্তর কালের বাস্তব অনুশীলনের পর্যালোচনা করা হয় এবং সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয় যে, পূর্ববাংলার চমৎকার বিপ্লবী পরিস্থিতি দ্রুতগতিতে সৃষ্টি হচ্ছে, পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সামরিক ও অন্যান্য লাইন পূর্ববাংলার বাস্তব অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সঠিক।

সভায় বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের সাধারণ পরিণতি নির্দেশ করা হয়। পূর্ববাংলার সমাজের প্রচণ্ড বিপ্লবী ঝড়তরঙ্গে এবং পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীদের বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদ বিরোধী সংগ্রামের (তত্ত্বগত ও অনুশীলন উভয় ক্ষেত্রেই) ফলে বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের দেউলিয়াত্ব ও বিশ্বাসঘাতকতা সকল ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে। তারা মারাত্মকভাবে নিঃসঙ্গ, অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত, বিভক্ত এবং তাদের দিন শেষ হয়ে আসছে। অচিরেই পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীরা ও জনগণ তাদের কবরস্থ করবে।

পক্ষান্তরে আমরা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছি।

সভায় পর্যালোচনা করা হয় যে, আমাদের কাজ হয়েছিল এরূপ অধিকাংশ স্থানের সাথেই যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়েছে, অবশিষ্ট যোগাযোগসমূহ দ্রুত স্থাপন করা এবং দ্রুত নতুন যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কর্মীদের পুনঃনিয়োগ সম্পূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে কর্মীর তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। তবে সার্বক্ষণিক হতে ইচ্ছুক এরূপ প্রচুর কর্মী পাওয়া যাচ্ছে। কিছুটা শিক্ষিত শ্রমিকদের সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে নিয়োগের বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত।

কর্মীস্বল্পতা এড়ানোর জন্য জরুরী ভিত্তিতে স্থানীয় কর্মীদের সর্বনিম্ন ট্রেনিং প্রদান করে কাজে নিয়োগ করা প্রয়োজন। ট্রেনিং-এর জন্য সর্বনিম্ন পাঠ্যসূচী নিম্নরূপ বলে নির্ধারণ করা হয়ঃ উদ্ধৃতির শৃংখলা, সংগঠনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দলিল, পাঁচটি প্রবন্ধ, গণযুদ্ধ, সংবিধান, সাংগঠনিক কর্মপদ্ধতি (পার্টি ও সামরিক), শ্রেণী বিশ্লেষণ ও শ্রেণী অনুসন্ধানের পদ্ধতি, রিপোর্ট লেখা, সামরিক লাইনে প্রাথমিক জ্ঞান, সমালোচনা-আত্মসমালোচনা, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলিল ইত্যাদি।

নতুন কর্মী সংগ্রহ সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে কারণ শত্রু চর আমাদের মাঝে অনুপ্রবেশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের নীতি হলো সাহসের সাথে কর্মী বাড়াও কিন্তু একটিও শত্রুচর আমাদের মাঝে ঢুকতে দিওনা।

এভাবে বর্তমানে পার্টির প্রধান সমস্যা কর্মীস্বল্পতা সমস্যার সমাধান করতে হবে।

সভায় আমাদের নাম নিয়ে শত্রুর খারাপ কাজ (ডাকাতি, লুট, হত্যা ইত্যাদি) পর্যালোচনা করা হয় এবং এ সম্পর্কে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে জনগণের নিকট প্রচার করার আহবান করা হয়।

শত্রু-মিত্র বিচার না করে স্বতঃস্ফূর্ত হামলা, ছিনতাই ইত্যাদির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টিকে জাতীয় গণভিত্তিক পার্টিরূপে অর্থাৎ সমগ্র পূর্ববাংলাব্যাপী জনগণের সাথে যুক্ত পার্টি রূপে গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।

কর্মী ও সহানুভূতিশীলদের সামাজিক অনুসন্ধান অর্থাৎ শ্রেণী বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানের পদ্ধতি এবং গণলাইনের কর্মপদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া জরুরী প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ সম্পর্কে দলিল প্রণয়ন এবং কর্মীদের ট্রেনিং প্রদানের ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

ভারত ও অন্যান্য দেশের সর্বহারা বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টা চালানোর বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কর্মীদের সর্বদা বর্তমান কার্যাবলীর সাথে অতীতের অভিজ্ঞতার সংযোগ সাধন করার এবং ভবিষ্যতের দিশা ঠিক রেখে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীদের পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টিতে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালানো, ঐক্যে ইচ্ছুকদের প্রতি সংবিধানের নিয়মাবলী প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব তীব্রতর হচ্ছে, এ কারণে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা বর্তমান। বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাবার জন্য আমাদের বিপ্লবী কাজ জোরদার করা প্রয়োজন।

জনৈক কমরেডের ভুল চিন্তাধারা ও ত্রুটিসমূহকে সমালোচনা করা হয় এবং তাকে ব্যক্তিগত স্বার্থ বিপ্লবী স্বার্থের অধীন রাখার আহবান জানানো হয়। অন্যথায় কেন্দ্রীয় কমিটি ও সংগঠন তার অগ্রগামী চরিত্র বজায় রাখার জন্য যে সকল সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে তা তাকে জানানো হয়।

এ সভায় পূর্ববর্তী সভার সিদ্ধান্তসমূহ পুনরায় অনুমোদিত হয় এবং কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে সভাপতি কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ অনুমোদিত হয়।

এ সভায় কেন্দ্রীয় কমিটিকে পুনর্গঠিত করা হয়। পুনর্গঠনে সাথে জড়িত কমরেডের বিষয় ছয়মাস পরে পুনরায় বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সভায় সকল সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয় এবং পরবর্তী সভার তারিখ ও বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে সভা সমাপ্ত হয়।

 

● পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির একটি জরুরী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ২৮শে মার্চ এবং ঐদিনই তা সমাপ্ত হয়।

সভায় সকল সদস্য এবং বিকল্প সদস্য উপস্থিত ছিলেন এবং কমরেড সিরাজ সিকদার সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় জনৈক সদস্যের ব্যক্তিগত জীবন রাজনৈতিক জীবনের অধীনে রাখতে না পারার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।

সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের অগ্রগামী ও আদর্শ স্থানীয় ভূমিকা ও কমিউনিস্ট হওয়ার সর্বনিম্ন মানদণ্ড তুলে ধরা হয়। উক্ত কমরেডের মানদণ্ড এর তুলনায় কম বলে বিবেচিত হয়। এ ত্রুটি সংশোধনের জন্য তাকে বহুদিন পূর্ব থেকেই বারংবার বলা সত্ত্বেও তিনি তা সংশোধন করতে ব্যর্থ হন।

এ সকল কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করা হয় এবং কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী উচ্চস্তরের প্রধানের পদে উক্ত কমরেডকে নিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

পুনর্গঠনের সাথে জড়িত কমরেডের বিষয় পুনরায় ছয়মাস পরে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এ সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব পুনরায় বন্টন করা হয়।

সভায় সকল সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।■