অনুবাদ সাহিত্য পত্র ১০।। কমরেড মাও সেতুঙের দর্শন সম্পর্কে আলোচনা ও পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির দুটি মৌলিক দলিল: বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের বিনির্মাণ লাইন ও গণলাইন। অকেনেস, পূবাসপা এমইউজি কর্তৃক ডিসেম্বর ৩, ২০০৯ প্রকাশিত।।

অনুবাদ সাহিত্য পত্র

১০

 

 

দর্শন সম্পর্কে আলোচনা

-মাও সেতুঙ

 

বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের বিনির্মাণ লাইন

-পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি

 

গণলাইন

-পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি

 

অনুবাদ সাহিত্য পত্র

সংখ্যা নং ১০

 

কমরেড মাও সেতুঙের একটি গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা

ও পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির দুটি মৌলিক দলিল

অকেনেস, পূবাসপা এমইউজি কর্তৃক ডিসেম্বর ৩, ২০০৯ প্রকাশিত

 

 

সম্পাদকীয়

অনুবাদ সাহিত্য পত্রের দশম সংখ্যা পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা। পত্রিকাটির মাধ্যমে এমনসব অপ্রকাশিত দলিল প্রকাশ করা হয়েছে যা আমাদের দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে পুনর্গঠণে তাত্ত্বিক সহায়তা দানে মুখ্য গুরুত্বপুর্ণ।

এরপর আমাদের নতুন যাত্রারম্ভ। আমরা এদেশে একটি লাইনগত সংগ্রাম সূচিত করতে সক্ষম হয়েছি।

আমাদের পার্টি এদেশের প্রধান মাওবাদী পার্টি। অপর পার্টি পুবাকপা নিজেকে মাওবাদী দাবী করলেও দীর্ঘ দীর্ঘকাল তারা চেবাদী ধারা অনুশীলনের প্রক্রিয়ায় এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। সভাপতি সিরাজ সিকদার সর্বহারা শ্রেণীর মাওবাদী পার্টি পুবাসপা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি পুর্ববাংলার সমাজের আর্থ সামাজিক বিশ্লেষন করেন, পুরোনো ও নয়া সংশোধনবাদের  বিরুদ্ধে কঠিণ মতাদর্শিক সংগ্রামের মাধ্যমে তার শেকল ভেঙে ফেলেন, গণযুদ্ধ সুচিত করেন, পুর্ববাংলায় সর্বপ্রথম সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন, ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন দুই বার, একবার পেয়ারাবাগানে ’৭১-এ, আরেকবার ‘৭২-‘৭৫-এ পার্বত্য চট্রগ্রামে।

সভাপতির লাইন-চিন্তাধারা, সভাপতি ও পুবাসপা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে।

সভাপতির মৃত্যুর পর আনোয়ার কবীরের নেতৃত্বে পার্টি আশির দশকে পুনরায় উত্থান ঘটাতে সক্ষম হলেও ঘাঁটির পর্যায়ে যেতে পারেনি। আনোয়ার কবীর সিরাজ সিকদারের পথ নির্দেশের কাঁট ছাট করে সেই সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন যার জন্য তা সামগ্রিক গণযুদ্ধে রূপ নিতে পারেনি। সে ৮০র দশকের শেষে পার্টির সামরিক বিপর্যয়কে অবলম্বন করে সেই সময় থেকে ৯০ দশকের শুরু পর্যন্ত পার্টিকে বিলোপের এক ডান সুবিধাবাদী লাইন (আরওএল) গড়ে তোলে, যার মুল বিষয়টা ছিল সিরাজ সিকদারের পথ নির্দেশকে সম্পুর্ণত বর্জন করা, যে জিনিসটা সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পর জিয়াউদ্দিন করেছিল, সে তারই ষোলকলা পুর্ণ করে। ৯২-এ তৃতীয় কংগ্রেসে তার সহযোগী কেন্দ্রিয় নেতাদের নিয়ে ডান সুবিধাবাদী লাইনটি পাশ করে। এই লাইনটির মূল অঙ্গ ছিলঃ ১। মাওসেতুঙ চিন্তাধারা শব্দ পরিবর্তন করে মাওবাদ গ্রহণের ভাণ করা যা হচ্ছে সারহীন মাওবাদ, পরে যেটা দেখা গেছে তা হল তারা খোদ মাও চিন্তাধারাকে মাওবাদের ভিত্তি হিসেবে বিরোধিতা করে মাওবাদ গ্রহণের ভাণ করে । ২। সিরাজ সিকদার লাইনকে জাতীয়তাবাদী লাইন আখ্যায়িত করা তথা সিরাজ সিকদারের পথ নির্দেশকে বর্জন করা ও তথাকথিত শ্রেণীবাদী লাইন গ্রহণ করা, জাতীয় মুক্তিযুদ্ধকে  বিরোধিতা করা  ২। আধা-সামন্ততন্ত্র মূল্যায়ণ ও উপনিবেশ (বা আধা-উপনিবেশ) মূল্যায়ণকে বর্জন করে ভিত্তিহীন তথাকথিত বিকৃত পুঁজিবাদের মুল্যায়ণ গ্রহণ করা, কৃষি বিপ্লবকে বর্জন করা  ৩। গণযুদ্ধকে বর্জন করে তথাকথিত যুদ্ধের লাইন গ্রহণ (যা পরে উন্মোচিত হয়ে গেছে)। সংশ্লেষণে, তারা মাওবাদ ও পুর্ববাংলার সমাজে তার প্রয়োগে অর্জিত মহামূল্যবাণ শিক্ষা সিরাজ সিকদারের পথ নির্দেশক চিন্তাধারাকে বর্জন  করে। সুতরাং আকর এই ডান সুবিধাবাদী লাইনটি ছিল এক সামগ্রিক লাইন। একে প্রয়োগে নিতে গিয়ে তিন নেতার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়ায় তারা পার্টিকে তিন ভাগ করে নেয়। আক যুদ্ধের  নিম্ন স্তরের সশস্ত্র সংগ্রাম তত্ত্ব আবিষ্কার করে  অল্পকিছু ভাড়াটে স্কোয়াড মারফত খুবই সীমিত ভ্রাম্যমাণ সশস্ত্র ততপরতা চালিয়ে অধঃপতিত হয়। মতিন গণযুদ্ধ বর্জিত বিরাট যুদ্ধের প্রবক্তা সেজে কিছু অস্ত্র সংগ্রহের এ্যাকশন করে সাময়িকভাবে প্রকৃত বিপ্লবীদের বিভ্রান্ত করে অবশেষে অল্পকিছু ভাড়াটে স্কোয়াড মারফত খুবই সীমিত ভ্রাম্যমাণ সশস্ত্র ততপরতা চালিয়ে অধঃপতিত হয়। সুলতান বিরাট তাত্ত্বিক সেজে গোঁড়ামীবাদী কথাবার্তা বলে কিছুকাল প্রকৃত বিপ্লবীদের বিভ্রান্ত করে শেষে সংগঠণ বিলুপ্ত করে দেয়। সম্প্রতি সুলতানের মৃত্যু ঘটেছে।

ফলে, একবিংশ শতরের শুরুর বছরগুলিতে পুবাসপা প্রকৃতই বিলোপের দিকে এগিয়ে যায়।

এমনই এক কঠিণ মুহুর্তে নিম্ন স্তরের ক্যাডাররা পার্টিকে রক্ষা করার প্রয়োজন উপলব্ধি করেন যে পার্টি সিরাজ সিকদারের গড়া। তাই তারা নিরংকুশভাবে নতুন প্রজন্মের ক্যাডারদের নিয়ে এমইউজি গঠণ করেন। এমইউজির উদ্দেশ্য ছিল সিরাজ সিকদার চিন্তাধারাকে সংজ্ঞায়িত করা, গণযুদ্ধের সংজ্ঞায়িত করা, গণযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার মারফত পুবাসপার পুনপ্রতিষ্ঠা করা। শুরু থেকেই এমইউজি ছিল সামরিকীকৃত, তাই তাকে একদিকে রাষ্ট্রশক্তিকে মোকাবেলা করতে হয়েছে, অপরদিকে সংশোধনবাদীদের আক্রমনকে। এমইউজির বেশকিছু কমরেডকে জীবন দিতে হয়েছে।

এরই মাঝে অনুবাদ সাহিত্য পত্রের কাজ চালানো হয়। এর মাধ্যমে তত্ত্ব বিনির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, একটু একটু করে লাইন বিনির্মাণ চলছে। এখন আমরা লাইন বিনির্মাণের মূল পর্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, পার্টিকে উচ্চতর কেন্দ্রে পুনপ্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি, গণযুদ্ধের সংজ্ঞায়িতকরণে প্রবেশ করতে যাচ্ছি যেখান থেকে আমরা গণযুদ্ধের প্রস্ততিতে চলে যাবো।

আমরা কোন ফাঁকা তত্ত্ব বিশ্বাস করিনা, তাই আমরা এমনসব দলিল প্রকাশ করেছি যা গণযুদ্ধের কষ্টিপাথরে পরীক্ষিত।

এবারের সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে চেয়ারম্যান মাওয়ের আগষ্ট, ১৯৬৪-এর দর্শন সম্পর্কে আলোচনা যাতে তিনি দ্বন্দ্ববাদের সর্বাধিক বিকশিত সূত্রায়ন করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে দ্বন্দ্ববাদের মূল সূত্র হলো বিপরীতের একত্বের নিয়ম। পরিমাণের গুণে রূপান্তরকে তিনি এই বিপরীতের একত্বের সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন। আর বলেছেন নেতিকরণের নেতিকরণ নিয়ম হিসেবে বিরাজ করেনা। যা রয়েছে তা হচ্ছে ইতিকরণ ও নেতিকরণের বিপরীতের একত্ব। বিকাশের এতকাল ধরে চলে আসা ত্রয়ী মতবাদ বাতিল করেছেন যা তিনটি সূত্রকে সমান গুরুত্বে পাশাপাশি উপস্থান করে আর প্রতিষ্ঠা করেছেন অদ্বৈতবাদ। সুতরাং  কমরেড মাওই মার্কসীয় দ্বন্দ্ববাদকে পুর্ণাঙ্গ ভিত্তিতে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি এঙ্গেলসের স্বাধীনতার সূত্রায়ণ সংশোধন করে দেখিয়েছেন স্বাধীনতা কেবল প্রয়োজনের উপলব্ধি নয় তার রূপান্তরও। এটি এক অমূল্য দার্শনিক আলোচনা। এখানে তিনি বহুমাত্রিকভাবে দ্বন্দ্ববাদকে সমৃদ্ধ করেছেন।

পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির পার্টি ঐক্যের ভিত্তির অতি গুরুত্বপুর্ণ দুটি দলিল আমরা প্রকাশ করেছি এ সংখ্যায়ঃ ১। বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের বিনির্মাণের লাইন ২। গণ লাইন। দলিল দুটি ১৯৮৮ তে পিসিপির কংগ্রেসে গৃহিত। প্রথমটিতে সভাপতি গনসালোর বিপ্লবের তিন হাতিয়ারঃ পার্টি, বাহিনী ও ফ্রন্টের সমকেন্দ্রিক বিনির্মাণের লাইন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সভাপতি গনসালো পার্টির সামরিকীকরণের ধারণাও গড়ে তোলেন। গণ লাইন দলিলে সভাপতি গনসালোর মূর্ত থিসিস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা দেখায় যে কীভাবে পার্টি গণযুদ্ধের প্রয়োজন থেকে বহুবিধ জাত সংগঠণ গড়ে তোলে।

দর্শন সম্পর্কে আলোচনা

 

-মাও সেতুঙ

(আগষ্ট ১৮, ১৯৬৪)

[উতসঃ মাও চু-শি তুই পেঙ, হুয়া-ঙ, চ্যাঙ, চৌউ ফ্যান-তাঙ চি-তুয়ান তি পি-প্যান]

1927-wuhan

যেখানে শ্রেণীসংগ্রাম রয়েছে কেবল সেখানেই দর্শন থাকতে পারে। অনুশীলন বিচ্ছিন্নভাবে দর্শন চর্চা সময়ের অপচয়। যেসকল কমরেড দর্শন অধ্যয়ণ করেন তাদের গ্রামে যাওয়া উচিত। তাদেরকে এই শীতে অথবা সামনের বসন্তে যেতে হবে শ্রেণীসংগ্রামে অংশ নিতে। যাদের স্বাস্থ্য ভাল নয় তাদেরকেও যেতে হবে। গেলে লোক মারা যাবেনা। যা হতে পারে তা হলো ঠাণ্ডা লাগা, আর যদি তারা কয়েকটা অতিরিক্ত জামা গায়ে দেন তাহলে সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলবে।

বর্তমানে যেভাবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছেন তা ভাল নয়, তারা বই থেকে বইয়ে, ধারণা থেকে ধারণায় গমন করছেন। দর্শন কীভাবে বই থেকে আসতে পারে? মার্কসবাদের তিনটি মূল অঙ্গ হচ্ছে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, দর্শন ও রাজনৈতিক অর্থনীতি। [১] ভিত্তি হচ্ছে সামাজিক বিজ্ঞান, শ্রেণীসংগ্রাম। সর্বহারা ও বুর্জোয়ার মধ্যে রয়েছে সংগ্রাম। মার্কস ও অন্যরা এটা অবলোকন করেছেন। ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রীরা সর্বদাই বুর্জোয়াদের দয়ালূ হতে প্ররোচিত করার প্রয়াস চালান। এটা কাজে দেবেনা, সর্বহারা শ্রেণীর শ্রেণীসংগ্রামের ওপর নির্ভর করা প্রয়োজন। সেসয় ইতিমধ্যেই বহু ধর্মঘট হয়েছিল। ইংরেজ সংসদীয় তদন্ত স্বীকার করেছিল যে পুঁজিবাদীদের স্বার্থের পক্ষে বার ঘন্টা কর্মদিবস আট ঘন্টা কর্মদিবসের চেয়ে কম অনুকুল ছিল। এই দৃষ্টিকোণ থেকে শুরু হয়েই কেবল মার্কসবাদ উদ্ভূত হয়। ভিত্তি হচ্ছে শ্রেণীসংগ্রাম। দর্শনের অধ্যয়ন কেবল তার পরেই আসতে পারে। কার দর্শন? বুর্জোয়া দর্শন না সর্বহারা দর্শন? সর্বহারা দর্শন হচ্ছে মার্কসবাদী দর্শন। সর্বহারা অর্থনীতিও রয়েছে যা ধ্রুপদী অর্থনীতিকে রূপান্তরিত করেছিল। যারা দর্শনে নিয়োযিত তারা বিশ্বাস করেন দর্শন আগে আসে। অত্যাচারীরা অত্যাচারিতদের নিপীড়ণ করে, তখন অত্যাচারিতদের প্রয়োজন হয় পাল্টা লড়াইয়ের আর তারা দর্শনের খোঁজ করার আগে একটা সমাধান চান। কেবল তখনই জনগণ একে তাদের সূচনা বিন্দু হিসেবে নেন যা হচ্ছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ আর তারা দর্শন আবিষ্কার করেন। আমরা সকলেই এর মধ্য দিয়ে এসেছি। অন্যরা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল; চিয়াং কাই-শেক আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এভাবে আমরা শ্রেণীসংগ্রামে নিয়োযিত হয়েছি, দার্শনীকিকরণে নিয়োযিত হয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এই শীতে যাওয়া উচিত-আমি মানবিক ছাত্রদের কথা বলছি। প্রকৃতি বিজ্ঞানের ছাত্রদের এখন যাওয়া উচিত নয়, যদিও আমরা একবার দুইবারের জন্য তাদের নিতে পারি। যারা মানবিক-ইতিহাস, রাজনৈতিক অর্থনীতি, সাহিত্য, আইন-অধ্যয়ন করছেন তাদের সবাইকেই যেতে হবে।  অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রশাসনিক কর্মী ও ছাত্রদের সবাইকেই যেতে হবে পাঁচ মাসের একটা সীমিত সময়ের জন্য। তারা যদি গ্রামে অথবা কারখানায় পাঁচ মাসের জন্য যান তারা কিছু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান অর্জন করবেন। ঘোড়া, গরু, ভেড়া, মুরগী, কুকুর, শুকর, ধান, ভুট্রা, সিম, গম, বিভিন্ন ধরণের বাদাম ইত্যাদি সবকিছুর ওপর তারা দৃষ্টিপাত করতে পারেন। তারা যদি শীতে যান তারা ফসল কাটা দেখতে পাবেননা, কিন্তু অন্ততঃ তখনো তারা ভুমি ও জনগণ দেখতে পাবেন। শ্রেণীসংগ্রামের কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করা-যাকে আমি বলি একটা বিশ্ববিদ্যালয়। তারা বিতর্ক করেন যে কোন্ বিশ্ববিদ্যালয় বেশি ভাল, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় নাকি গণবিশ্ববিদ্যালয়।[২] আমার কথা বলতে গেলে আমি গ্রীনউড-এর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট, আমি সেখানে কিছু শিখেছি। অতীতে আমি কনফুসিয়াস অধ্যয়ন করেছি এবং চার গ্রন্থ ও পাঁচ ধ্রুপদী নিয়ে ছয় বছর কাটিয়েছি।[৩] আমি সেগুলো মুখস্থ করতে শিখেছি, কিন্তু আমি সেগুলো বুঝিনি। সেসময় আমি কনফুসিয়াসে গভীরভাবে বিশ্বাস করতাম, এমনকি প্রবন্ধও রচনা করেছিলাম [তার ভাবধারা বিশদ করে]। পরে আমি একটা বুর্জোয়া স্কুলে যাই সাত বছরের জন্য। সাত আর ছয় মিলে তের বছর। আমি সমস্ত বুর্জোয়া বিষয়বস্তু অধ্যয়ণ করি-প্রকৃতি বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। তারা কিছু শিক্ষণবিজ্ঞানও শেখায়। তার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ বছর, দুই বছরের মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং গ্রন্থাগারে আমি যে সময় অতিবাহিত করেছি তা।[৪] সেসময় আমি কান্টের দ্বৈতবাদে বিশ্বাস করতাম, বিশেষত তার ভাববাদে। মূলগতভাবে আমি ছিলাম একজন সামন্তবাদী, আর বুর্জোয়া গণতন্ত্রের এক প্রবক্তা। সমাজ আমাকে ঠেলে দিয়েছে বিপ্লবে যোগ দিতে। আমি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে অল্প কয়েক বছর এবং চার বছরের বিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে কাটিয়েছি। আমি একটি ছয় বছরের বিদ্যালয়ে ইতিহাস ও চীনা ভাষাও পড়িয়েছি। আমি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অল্প কিছুকাল পড়িয়েছি, কিন্তু আমি কিছুই বুঝিনি। যখন আমি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলাম আমি জানতাম যে আমাদেরকে বিপ্লব করতে হবে, কিন্তু কার বিরুদ্ধে? আর কীভাবে আমরা এতে এগোব? অবশ্যই আমাদেরকে সাম্রাজ্যবাদ ও পুরোনো সমাজের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে হয়েছিল। সাম্রাজ্যবাদ কী জিনিস তার আমি কিছুই বুঝতামনা, তার চেয়েও কম বুঝতাম এর বিরুদ্ধে আমরা কিভাবে বিপ্লব করবো। তের বছরে আমি যা শিখেছি তা বিপ্লবের জন্য কোন উপকারে আসেনি। আমি কেবল হাতিয়ার-ভাষা ব্যবহার করলাম। প্রবন্ধ রচনা করা হচ্ছে একটা হাতিয়ার। আমার অধ্যয়ণের বিষয়বস্তুর একটুও আমি ব্যবহার করিনি। কনফুসিয়াস বলেছেনঃ ‘দয়া হচ্ছে মানবতার একটা বিশিষ্ট উপাদান।’ ‘দয়ালু ব্যক্তি অপরদের ভালবাসেন।’ [৫] তিনি কাকে ভালবাসেন? সকল মানুষকে? মোটেই না। তিনি কি শোষকদের ভালবেসেছেন? ঠিক তাও না। তিনি কেবল শোষকদের একটা অংশকে ভালবেসেছেন। অন্যথায়, কেন কনফুসিয়াস একজন উচ্চ কর্মকর্তা হতে পারলেন না? জনগণ তাকে চায়নি। তিনি তাদের ভালবেসেছেন, তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছেন। কিন্তু অনাহারের মুখোমুখি এবং  “শ্রেষ্ঠতর মানুষ দারিদ্রকে সহ্য করতে পারে’[অনুশাসন]-এর ফলে তিনি প্রায় তার জীবন হারাতে বসেছিলেন, কুয়াঙের জনগণ তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।[৬] তারাও ছিল যারা পশ্চিমে তার ভ্রমণের সময় ছিনে না যাওয়ার জন্য তাকে সমালোচনা করেছিল। বাস্তবে, ওডেস এর গ্রন্থ-এর ‘অগ্নি নক্ষত্র মধ্যরেখা অতিক্রম করে সপ্তম মাসে’ শেনসির ঘটনাবলীর প্রতি নির্দেশ করে। আরো আছে ‘হলুদ পাখি’ যা ছিনের ডিউক মুর সাথে তিন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা কীভাবে মারা গেল ও সমাধিস্থ হলো সে গল্প করে।[৭] ওডেসের গ্রন্থ-এর ওপর শু-মা ছিয়েন [৮]-এর খুবই উচ্চ মূল্যায়ণ ছিল। তিনি বলেন এতে যে ৩০০ কবিতা রয়েছে তা সেই প্রাচীন কালে আদি মুনি-ঋষিদের দ্বারা রচিত। ওডেস-এর গ্রন্থ-এর বিরাট অংশ কবিতাই বহুবিধ অবস্থার ধরণে লেখা, সেগুলো হচ্ছে সাধারণ জনগণের লোক সঙ্গীত, মুনি-ঋষিরা কেউ নয় সাধারণ জনগণ। ‘যখন সেগুলো উদ্ভূত হলো তখন রচিত হলো’এর অর্থ হলো যখন কারো হৃদয় ক্ষোভে পুর্ণ হয় তিনি একটা কবিতা লেখেন!

না তুমি বপন করো না ফসল তোল;

কী করে তোমার তিন শত ঝুরি করবে পুরণ??

তুমি শিকারের পেছন ছোটনা;

কী করে তোমার বারান্দায় কোয়েল ঝুলে থাকতে দেখবো?

সেই যে শ্রেষ্ঠতর মানুষ!

যে অলসতার রুটি করবেনা ভক্ষণ! [৯]

‘বেতন নিয়ে দপ্তরের কর্তব্যে অবহেলা করা’র প্রকাশ এখান থেকে আসে। এটা একটা কবিতা যা স্বর্গকে দায়ী করে এবং শাসকদের বিরোধিতা করে। কনফুসিয়াসও বরং গণতান্ত্রিক ছিলেন। তিনি একজন পুরুষ ও নারীর মধ্যেকার ভালবাসাকে অন্তর্ভুক্ত করেন [ওডেসের গ্রন্থ-এ]। তার মন্তব্যে ছু শি সেগুলোকে গোপন প্রেম কাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।[১০] বাস্তবে সেগুলোর কতগুলি তাই আবার কতগুলো তা নয়; পরেরগুলো পুরুষ ও নারীর চিত্রকল্প ধার করে রাজা ও প্রজার মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে লিখতে। শু [বর্তমান কালের শেচুয়ান] তে পাঁচ রাজবংশ ও দশ দেশের সময়কালে ওয়েই চুয়াঙ কর্তৃক রচিত ‘ছিনের স্ত্রী শীতে ক্রন্দন করে’ শীর্ষক একটা কবিতা ছিল।[১১] তিনি তার যৌবনকালে লেখেন আর তা ছিল তার রাজন্যের জন্য তার আকুলতা।

মাঠে যাওয়ার ব্যাপারে আবার ফিরে আসি, লোকেদের উচিত এই শীতের শুরুতে ও বসন্তে গ্রুপে গ্রুপে ও চক্রাকারে যাওয়া শ্রেণীসংগ্রামে অংশ নিতে। কেবল এই ভাবেই তারা কিছু শিখতে পারেন, বিপ্লব সম্পর্কে শিখতে পারেন। আপনারা বুদ্ধিজীবিরা প্রতিদিন সরকারী দপ্তরে বসেন, ভাল খাবার দাবার খান, সুন্দর পোষাক আশাক পরেন আর এমনকি হাটেনওনা। এজন্যই আপনারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাপড় চোপড়, খাদ্য, গৃহ ও অনুশীলন হচ্ছে চার মহা উপাদান যা রোগ বয়ে আনে। যদি জীবনের ভাল পরিস্থিতি থেকে আপনারা পরিবর্তন করে কিছুটা খারাপ পরিস্থিতিতে যান, যদি আপনারা শ্রেণীসংগ্রামে অংশ নিতে নেমে আসেন, যদি আপনারা ‘চার পরিষ্কারকরণ’ ও ‘পাঁচ বিরোধী’ [১২]র মধ্যে ঢোকেন, এবং এক প্রচণ্ডতার মধ্যে দিয়ে যান, তখন আপনারা বুদ্ধিজীবিরা নিজেদের সম্পর্কে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গী পাবেন।

আপনারা যদি শ্রেণীসংগ্রামে নিয়োযিত না হন, তাহলে আপনারা কোন্ দর্শনে নিয়োযিত?

কেন নেমে পড়া ও চেষ্টা চালানো নয়? যদি অসুস্থতা মারাত্মক রূপ নেয় আপনাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে-আপনাদের মৃত্যুর সীমারেখা টানতে হবে। আপনারা যখন এতই অসুস্থ যে মৃত্যুর মুখোমুখি তখন আপনাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। নেমে পড়ার সাথে সাথেই আপনারা কিছু চেতনা পাবেন। (কাঙ সেঙ বলে ওঠলেনঃ ‘দর্শন বিভাগের গবেষণা অনুষদ এবং বিজ্ঞান একাদেমীর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সকলেরও নেমে পড়া উচিত। বর্তমানে তারা প্রাচীন নিদর্শনের অধ্যয়নের এক অনুষদে রূপান্তরের এবং ক্ষোভের নৈবেদ্যের গন্ধ শুঁকে নিজেকে এক উদ্যানে রূপান্তরের মুখোমুখি। দর্শন অনুষদের কেউই কুয়াঙ-মিঙ জিহ-পাও পড়েনা।’) আমি কেবল কুয়াঙ-মিঙ জিহপাও এবং ওয়েন-হুই পাও পড়ি, [১৩]। আমি পিপল্স ডেইলি পড়িনা, কারন পিপল্স ডেইলি কোন তাত্ত্বিক নিবন্ধ ছাঁপেনা; আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তারা তা প্রকাশ করে। দৈনিক দি লিবারেশন আর্মি  জীবন্ত, এটা পঠন যোগ্য। (কমরেড কাঙ সেঙঃ ‘সাহিত্য অনুষদ চৌ কুছেঙ-এর প্রতি কোন মনোযোগ দেয়না, [১৪] এবং অর্থনীতি অনুষদ সুন ইয়েহ-ফ্যাঙ [১৫]-এর প্রতি ও এর উদারতাবাদের দিকে যাওয়ার এবং পুঁজিবাদের দিকে যাওয়ার প্রতি কোন মনোযোগ দেয়না।’)

তাদেরকে পুঁজিবাদের দিকে যেতে দিন। সমাজ খুবই জটিল। যদি সবাই সমাজতন্ত্রের দিকে যায় আর কেউ পুঁজিবাদের দিকে না যায়, তাকি অতি সরল নয়? তাহলে তখন কি আমাদের বিপরীতের একত্বের অভাব ঘটবেনা এবং আমরা কি একতরফা হয়ে যাবনা? তাদেরকে তা করতে দিন। তাদেরকে আমাদের ওপর উন্মত্তের মত আক্রমণ করতে দিন, রাস্তায় মিছিল করতে দিন, অস্ত্র হাতে নিয়ে বিদ্রোহ করতে দিন-আমি এসবই অনুমোদন করি। সমাজ খুবই জটিল, এমন একটাও কমিউন নেই, একটাও শিয়েন, কেন্দ্রিয় কমিটির বিভাগ নেই যেখানে এক নিজেকে দুইয়ে বিভক্ত করবেনা। তাকিয়ে দেখুন, গ্রামীন কাজের বিভাগকে কি ভেঙে দেওয়া হয়নি?[১৬] এটা সম্পুর্ণত স্বতন্ত্র গৃহস্থালির ভিত্তিতে হিসেব করায় এবং ‘চার স্বাধীনতা’-টাকা ধার দেওয়া, ব্যবসা করার স্বাধীনতা, শ্রম ভাড়া করা এবং ভমি ক্রয় ও বিক্রয় করার স্বাধীনতা প্রচারে নিজেকে নিবেদিত করেছিল। অতীতে তারা একটা ঘোষণা দিয়েছিল [একে কার্যকর করতে]। তেঙ ঝু-হুই আমার সাথে বিতর্ক করেছিল। কেন্দ্রিয় কমিটির এক সভায় সে চার বিরাট স্বাধীনতা বাস্তবায়নের ধারণা তুলে ধরেছিল। [১৭]

নয়া গণতন্ত্রকে সংহত করা এবং চিরকালের জন্য তা সংহত করতে যাওয়া হচ্ছে পুঁজিবাদে নিয়োযিত হওয়া। [১৮] নয়া গণতন্ত্র হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে একটা বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। এটা কেবল ভুস্বামী ও মুতসুদ্দি বুর্জোয়াদের স্পর্শ করে, জাতীয় বুর্জোয়াদের একেবারেই স্পর্শ করেনা। জমি ভাগ করে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে সামন্ত ভুস্বামীদের সম্পত্তিকে কৃষকদের ব্যক্তি সম্পত্তিতে পরিণত করা, আর তা তখনো বুর্জোয়া বিপ্লবের সীমার মধ্যে থাকে। জমি ভাগ করা উল্লেখযোগ্য কিছূ নয়-ম্যাক আর্থার জাপানে তা করেছে। নেপোলিয়নও জমি  ভাগ করে দিয়েছিল। ভুমিসংস্কার না পুঁজিবাদকে বিলোপ করতে পারে, না সমাজতন্ত্রের দিকে চালিত করতে পারে।

আমাদের রাষ্ট্রে ক্ষমতার প্রায় এক তৃতিয়াংশ শত্রুদের হাতে অথবা শত্রুদের সহানুভূতিশীলদের হাতে রয়েছে। আমরা পনের বছর অতিক্রম করেছি আর এখন আমরা দুই তৃতিয়াংশ ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করি। আপনি বর্তমানে একজন [পার্টি] শাখা সম্পাদককে কয়েক প্যাকেট সিগারেটের বিনিময়ে কিনতে পারেন, তার কোন কন্যাকে বিয়ের কথা নাহয় নাই বললাম। কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে ভুমি সংস্কার শান্তিপুর্ণভাবে পরিচালনা করা হয়েছে, এবং ভুমি সংস্কার টিমগুলি ছিল খুবই দুর্বল, এখন আপনি দেখতে পারেন যে সেখানে প্রচুর সমস্যা রয়েছে।

আমি দর্শন সম্পর্কে বস্তুগুলো পেয়েছি। [এটা দ্বন্দ্বের সমস্যা সংক্রান্ত বস্তুগুলোর প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে-স্টেনোগ্রাফারের নোট] আমি রূপরেখার ওপর দৃষ্টিপাত করেছি। [এটা ‘দুয়ে মিলে এক হয়’ কে সমালোচনাকারী একটা নিবন্ধের রূপরেখার প্রতি নির্দেশ করছে[১৯]-স্টেনোগ্রাফারের নোট] আমি বাকিগুলো পড়তে পারিনি। আমি বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ সম্পর্কে বস্তুগুলোর প্রতিও দৃষ্টিপাত করেছি।

বিপরীতের একত্বের নিয়ম সম্পর্কে, বুর্জোয়ারা এসম্পর্কে কি বলে, মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন ও স্তালিন এসম্পর্কে কী বলেন, সংশোধনবাদীরা এসম্পর্কে কী বলে এরকম জিনিস সংগ্রহ করা ভাল । বুর্জোয়াদের কথা বলতে গেলে, ইয়াং শিয়েন-চেন এসম্পর্কে আলোচনা করে, এবং প্রাচীন হেগেল এসম্পর্কে আলোচনা করে। এ ধরণের লোকেরা প্রাচীন কালে ছিল। বর্তমানে তারা আরো খারাপ। বগদানভ ও লুনাচারস্কি ছিল যারা একাত্মবাদ (ধর্মে বা ঐশি প্রত্যাদেশে আস্থা ছাড়াই এক পরমসত্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস-বাংলা অনুবাদক] নিয়ে কথা বলতো। আমি বগদানভের অর্থনীতি পড়েছি। [১৯] লেনিন এটা পড়েছেন, আর মনে হয় তিনি আদিম সঞ্চয়ের অংশটি অনুমোদন করেছিলেন। (কাঙ সেঙঃ ‘বগদানভ’এর অর্থনীতি সম্ভবত আধুনিক সংশোধনবাদীদের চেয়ে বেশি আলোকপ্রাপ্ত ছিল।  কাউতস্কির অর্থনৈতিক মতবাদ সম্ভবত ক্রুশ্চেভের চেয়ে বেশি আলোকপ্রাপ্ত, আর যুগোস্লাভিয়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের চেয়ে বেশি আলোকপ্রাপ্ত। মোটের ওপর ডিজিলাস স্তালিন সম্পর্কে কিছু ভাল কথা বলেছে, সে বলেছে চীন প্রশ্নে স্তালিন একটা আত্মসমালোচনা করেছিলেন।’)

স্তালিন অনুভব করেছিলেন যে চীন প্রশ্ন বোঝাপড়ায় তিনি ভুল করেছিলেন, আর সেগুলো কোন ছোটখাট ভুল ছিলনা। আমরা কয়েক দশক কোটি মানুষের এক বিরাট দেশ, আর তিনি আমাদের বিপ্লবকে, আমাদের ক্ষমতা দখলকে বিরোধিতা করেছিলেন। সারা দেশে ক্ষমতা দখলের জন্য আমরা অনেক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি, সমগ্র জাপবিরোধি যুদ্ধ একটা প্রস্তুতি গঠণ করে। আপনারা যদি নয়া গণতন্ত্র সম্পর্কে সমেত সেসময়ের কেন্দ্রিয় কমিটির দলিলসমূহের দিকে দৃষ্টিপাত করেন, তাহলে দেখবেন এটা খুবই পরিষ্কার। তাই বলতে গেলে, আপনারা একটা বুর্জোয়া একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেননা, কেবল সর্বহারা নেতৃত্বাধীনে নয়া গণতন্ত্রই কেবল প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, কেবল সর্বহারার নেতৃত্বে একটা জনগণতান্ত্রিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। আমাদের দেশে আশি বছর যাবত বুর্জোয়াদের নেতৃত্বে সকল গণতান্ত্রিক বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের নেতৃত্বাধীন গনতান্ত্রিক বিপ্লব নিশ্চিতভাবে জয়যুক্ত হবে। এটাই হচ্ছে একমাত্র সমাধান, অন্য কোন সমাধান নেই। এটা হচ্ছে প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপ হবে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলা। তাই, নয়া গণতন্ত্র  ছিল একটা পুর্ণাঙ্গ কর্মসুচি। এটা রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সেইসাথে সংস্কৃতি আলোচনা করেছে; এটা কেবল সামরিক বিষয়াদি আলোচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। (কাঙ সেঙঃ ‘ নয়া গণতন্ত্র সম্পর্কে হচ্ছে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের জন্য বিরাট তাতপর্যময়। আমি স্প্যানিশ কমরেডদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তারা বলেছে যে তাদের জন্য সমস্যাটা ছিল বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্টা করা, নয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা নয়। তাদের দেশে তারা তিনটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করেনিঃ বাহিনী, গ্রামাঞ্চল, রাজনৈতিক ক্ষমতা। তারা সম্পুর্ণত সোভিয়েত পররাষ্ট্র নীতির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, কিছূই অর্জন করেনি।’) এগুলো হচ্ছে চেন তু-সিউয়ের কর্মনীতি! (কমরেড কাঙ সেঙঃ ‘তারা বলে কমিউনিস্ট পার্টি একটা বাহিনী গড়ে তোলে আর তারপর অন্যদের কাছে তা ন্যাস্ত করে।’) এটা অর্থহীন, বৃথা।

(কমরেড কাঙ শেঙঃ ‘তারা রাজনৈতিক ক্ষমতাও চায়নি, তারা কৃষকদেরও সমাবেশিত করেনি। সেসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন বলেছিল যদি তারা সর্বহারা নেতৃত্ব আরোপ করে তাহলে ইংলন্ড ও ফ্রান্স তা বিরোধিতা করতে পারে, আর তা সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বার্থের

পক্ষে যাবেনা।’)

কিউবার ব্যাপারটা কী? কিউবাতে তারা নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় ও সৈন্যবাহিনী প্রতিষ্ঠায় ব্যাপৃত করে, এবং কৃষকদেরকে সমাবেশিত করে, যেমনটা অতীতে [আমরা করেছিলাম], তাই তারা সফল হয়েছিল।

(কমরেড কাঙ শেঙঃ ‘তারাও [স্প্যানিশরা] যখন লড়াই করেছিল, তারা বুর্জোয়াদের মতন করে নিয়মিত যুদ্ধ চালায়, তারা শেষ পর্যন্ত মাদ্রিদকে রক্ষা করে চলে। [২০] সব বিষয়ে তারা সোভিয়েত পররাষ্ট্র নীতির অধীন করে নিজেদের।’)

এমনকি তৃতীয় আন্তর্জাতিকের ভেঙে দেওয়ার আগেও আমরা তৃতিয় আন্তর্জাতিকের নির্দেশ অমান্য করেছিলাম। সুনাই সম্মেলনে আমরা তা মান্য করিনি, এবং পরে দশ বছর ধরে শুদ্ধি অভিযান সমেত সপ্তম কংগ্রেস পর্যন্ত যখন আমরা একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম (‘আমাদের পার্টি ইতিহাসের কিছু সিদ্ধান্ত’), [২১] এবং ‘বামপন্থা’ [এর ভ্রান্তি]— সংশোধন করলাম, আমরা সেগুলো একেবারেই মান্য করিনি। সেসব গোঁড়ামীবাদীরা চীনের বিশেষত্ব অধ্যয়ণ করতে সম্পূর্ণত ব্যর্থ হলো; তাদের গ্রামে নিয়ে যাওয়ার এতগুলো দশটি বছর পার করেও তারা গ্রামাঞ্চলের ভুমি, সম্পত্তি ও শ্রেণীসম্পর্ক অধ্যয়ণে সম্পুর্ণত ব্যর্থ হলো। স্রেফ গ্রামে গিয়েই আপনি গ্রাম বুঝতে পারবেননা। আপনাকে গ্রামাঞ্চলের সকল শ্রেণী ও স্তরসমূহের মধ্যকার সম্পর্ককে অধ্যয়ণ করতে হবে। এসকল সমস্যার অধ্যয়ণে আমি দশটি বছর নিবেদন করেছি চুড়ান্তত সেগুলি নিজের কাছে পরিষ্কার করার আগে। আপনাকে সকল ধরণের জনগণের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে চাখানায় আর জুয়ার আসরে এবং তাদের তদন্ত করতে হবে। ১৯২৫-এ আমি কৃষক আন্দোলন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সক্রিয় ছিলাম, [২২] এবং গ্রামীন সার্ভে পরিচালনা করেছিলাম। আমার নিজ গ্রামে আমি গরীব কৃষকদের মধ্যে গেলাম তদন্ত চালাতে। তাদের জীবন ছিল শোচনীয়, তাদের খাওয়ার মতো কোন খাদ্য ছিলনা। একজন কৃষক ছিল যার সাথে আমি ডোমিনো খেলি ( স্বর্গ, পৃথিবী, মানুষ, ভারসাম্য, মেই ছিয়েন, চ্যাঙ সাঙ এবং বেঞ্চ নিয়ে), পরে তাকে খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। খাদ্য গ্রহণের আগে, সময়কালে ও পরে আমি তার সাথে কথা বলি আর বুঝতে সক্ষম হই যে গ্রামাঞ্চলে শ্রেণীসংগ্রাম কেন এত তীব্র ছিল। যে কারণে সে আমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী ছিল তা ছিলঃ প্রথম, আমাকে একজন মানুষ মনে হয়েছে, দ্বিতীয়, আমি তাকে খাদ্য গ্রহণে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, এবং তৃতিয়, সে কিছু টাকা কামাই করতে পারে। আমি হারতে লাগলাম; আমি একটা অথবা দুটা রৌপ্য ডলার হারলাম, এবং ফলে সে খুবই সন্তুষ্ট হলো। আমার এক বন্ধু মুক্তির পরও দুবার আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। ঐদিন গুলোতে একবার সে সত্যিই খারাপভাবে আমাকে খুঁজছিল আমার কাছ থেকে এক ডলার ধার নিতে। আমি তাকে তিনটি দিলাম অফেরতযোগ্য সহযোগিতা হিসেবে। তখনকার দিনে এমন অফেরতযোগ্য সহযোগিতা পাওয়াটা খুবই কঠিণ ছিল। আমার বাবা মনে করতেন যদি কেউ তার নিজের দেখভাল নিজে না করে স্বর্গ ও মর্ত্য তাকে শাস্তি দেবে। আমার মা তাকে বিরোধিতা করেন। আমার বাবা মারা গেলে খুব কম লোক তার শেষকৃত্য শোভাযাত্রা অনুসরণ করেছিল। যখন আমার মা মারা গেলেন বহুলোক শোভাযাত্রা অনুসরণ করলো। একবার কো লা হুই আমাদের পরিবারে ডাকাতি দেয়। আমি বলেছিলাম এটা তারা ঠিকই করেছে, যেহেতু জনগণের কিছুই ছিলনা। আমার মাও এটা একেবারেই গ্রহণ করতে পারেননি।

একবার চাঙশায় ভাতের দাঙ্গা দেখা দেয় যাতে প্রাদেশিক গভর্ণর প্রহৃত হয়। সিয়াঙ সিয়াঙ থেকে কিছু হকার এসেছিল যারা তাদের প্রশস্থ সিম বিক্রী করে বাড়ীর দিকে ছুটছিল। আমি তাদের থামিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলাম। গ্রামাঞ্চলে লাল ও সবুজ গ্যাঙেরাও সভা করছিল আর বড় বড় পরিবারগুলোকে খেয়ে ফেলছিল। সাংহাই সংবাদপত্রে এর রিপোর্ট এসেছিল, সমস্যাটা দমিত হলো যখন চাঙশা থেকে সৈন্যদল প্রেরিত হলো। তারা ভাল শৃংখলা মেনে চললোনা আর মাঝারি কৃষকদের ধান নিয়ে গেল, এভাবে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। তাদের অন্যতম একজন নেতা এখানে সেখানে পালিয়ে বেড়ালো, শেষ পর্যন্ত পাহাড়ে আশ্রয় নিল, কিন্তু সে সেখানে ধরা পড়লো ও নিহত হল। পরে গ্রামীন ভদ্র সম্প্রদায় একটা সভা করলো আর কিছু গরীব কৃষককে হত্যা করলো। সেসময় তখনো এখনকার মত কোন কমিউনিস্ট পার্টি ছিলনা; এগুলো ছিল স্বতস্ফুর্ত শ্রেণীসংগ্রাম।

সমাজ আমাদের রাজনৈতিক স্তরে ঠেলে দিয়েছে। আগে কেই বা মার্কসবাদে দীক্ষিত হওয়ার কথা ভেবেছে? আমি এমনকি এর কথা শুনিওনি। যা আমি শুনেছি ও পড়েছি তাহচ্ছে কনফুসিয়াস, নেপোলিয়ন, ওয়াশিংটন, পিটার দি গ্রেট, মেইজি পুনরুত্থান, তিন বিশিষ্ট ইতালীয় [দেশপ্রেমিক]-অন্য কথায়, পুঁজিবাদের সেই সব [বীরদের]। আমি ফ্রাংকলিনের একটা জীবনিও পড়েছি। তিনি এক দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছেন; পরে তিনি একজন লেখকে পরিণত হন, এবং বিদ্যুতের পরীক্ষাও চালান। (চেন পো তাঃ ‘ফ্রাংকলিনই প্রথম এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন যে মানুষ হচ্ছে একজন কলকব্জা প্রস্তুতকারক পশু।’)

তিনি এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন যে মানুষ হচ্ছে এক কলকব্জা প্রস্তুতকারক পশু। আগে তারা বলতেন যে মানুষ এক চিন্তাশীল পশু, ‘হৃদয় অঙ্গ চিন্তা করতে পারে’ [২৩], তারা বলেন যে মানুষ হচ্ছে সকল সৃষ্টির আত্মা। কারা সভা ডেকেছিল আর তাকে [এ পদে] নির্বাচিত করেছিল? তিনি এ মর্যাদা নিজের ওপর ন্যাস্ত করেন। সামন্ত যুগে এই প্রস্তাবনার অস্তিত্ব ছিল। পরে, মার্কস এই মত তুলে ধরেন যে মানুষ হচ্ছে কলকব্জা প্রস্তুতকারক এবং মানুষ হচ্ছে এক সামাজিক পশু। বাস্তবে কেবল এক মিলিয়ন বছর [বিবর্তনের]-এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরই মানুষ এক বৃহত মস্তিষ্ক ও এক জোড়া হাত গড়ে তোলে। ভবিষ্যতে প্রাণীরাও বিকশিত হতে থাকবে। আমি বিশ্বাস করিনা যে মানুষেরই কেবল দুই হাত হতে পারে। ঘোড়া, গরু, ভেড়ারা কি বিবর্তিত হতে পারেনা? কেবল বানরেরাই কি বিবর্তিত হতে পারে? অধিকন্তু সকল বানরের মধ্যে কেবল একটি প্রজাতিই কি বিবর্তিত হতে পারে, অন্যরা কি বিবর্তনে অক্ষম? এক মিলিয়ন বছর পর, দশ মিলিয়ন বছর পর ঘোড়া, গরু ও ভেড়ারা আজকে যেমনটা তেমনটাই কি থাকবে? আমার মনে হয় তারা পরিবর্তিত হতে থাকবে। ঘোড়া, গরু, ভেড়া ও কীটপতঙ্গ সবাই পরিবর্তিত হবে। প্রাণীরা উদ্ভিত থেকে আর উদ্ভিদেরা সামুদ্রিক আগাছা থেকে বিবর্তিত হয়েছে। চ্যাঙ তাই-ইয়েন এসবই জানতেন। যে বইয়ে তিনি কাঙ ইউ-ওয়েইয়ের সাথে মিলে বিপ্লবের কথা বলেছেন সেখানে এই নীতিমালা বিশদ করেছেন। [২৪] পৃথিবী ছিল মূলতঃ মৃত, কোন উদ্ভিদ ছিলনা, কোন পানি ছিলনা, কোন বাতাস ছিলনা। পরে, আমি জানিনা কত কোটি বছর পর পানি গঠিত হয়; হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দ্রুতই পুরোনো পথে পানিতে রূপান্তরিত হয়না। পানিরও নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। তারও আগে এমনকি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনেরও অস্তিত্ব ছিলনা। হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন উতপন্ন হওয়ার পরই কেবল দুই উপাদান মিলে পানি উতপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমাদেরকে প্রকৃতি বিজ্ঞানের ইতিহাস অধ্যয়ণ করতে হবে, এবিষয়কে অবহেলা করলে চলবেনা। আমাদের অল্প কয়েকটি বই পড়তে হবে। আমাদের বর্তমান সংগ্রামের প্রয়োজন থেকে পড়া আর লক্ষ্যহীনভাবে পড়ার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। ফু ইং [২৫] বলেন যে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন শত সহস্রবার একত্রিত হওয়ার পরই কেবল পানি গঠণ করে; এটা দুয়ে মিলে এক হওয়ার সরল কোন ঘটনা নয়। এ ব্যাপারেও তিনি সঠিক ছিলেন; আমি তাকে খুঁজতে চাই এবং আলাপ করতে চাই (লু পিঙের [২৬] সাথে কথোপকথন;) আপনাদের উচিত নয় ফু ইংয়ের সবকিছুকে পরমভাবে বিরোধিতা করা।

এর আগে বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণকে পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। বিশ্লেষণ অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার, কিন্তু সংশ্লেষণ সম্পর্কে বেশি কিছু বলা হয়নি। আমি একবার আই সু-চির সাথে কথা বলেছি। [২৭] তিনি বলেন যে আজকাল কেবল ধারণাত্মক সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণের কথা বলা হয়, বিষয়গত ব্যবহারিক সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণের কথা বলা হয়না। কমিউনিস্ট পার্টি ও কুওমিনতাঙকে, সর্বহারা ও বুর্জোয়াকে, ভুস্বামী ও কৃষকদের এবং চীনা ও সাম্রাজ্যবাদীদের আমরা কীভাবে বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ করি? আমরা কীভাবে তা করি, উদাহারণস্বরূপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও কুওমিনতাঙের ক্ষেত্রে? বিশ্লেষণ হচ্ছে সরলভাবে এই প্রশ্ন যে আমরা কতটা শক্তিশালি, আমাদের কী পরিমাণ ভুখণ্ড রয়েছে, আমাদের কত সংখ্যক সদস্য রয়েছে, কত সৈন্য রয়েছে, ইয়েনানের মত আমাদের কতগুলি ঘাঁটি রয়েছে, আমাদের দুর্বলতাগুলি কী কী? কোন বড় শহর আমাদের দখলে নেই, আমাদের বাহিনী সদস্য কেবল ১২,০০০,০০। আমাদের কোন বিদেশী সাহায্য নেই, যেখানে কুওমিনতাঙের রয়েছে প্রচুর বিদেশী সাহায্য। আপনি যদি সাংহাইয়ের সাথে ইয়েনানের তুলনা করেন, ইয়েনানের কেবল ৭,০০০ জনসংখ্যা, এর সাথে [পার্টি ও সরকারী] শাখাসমূহের লোকবল ও সৈন্যদল [ইয়েনানে স্থিত] যোগ করলে মোট হয় ২০,০০০। এখানে কেবল হস্তশিল্প ও কৃষি রয়েছে। কীভাবে তাকে এক বিরাট শহরের সাথে তুলনা করা যায়? আমাদের শক্তিশালি দিক হচ্ছে এই যে আমাদের রয়েছে জনসমর্থন যেখানে কুওমিনতাঙ গণবিচ্ছিন্ন। তোমাদের অধিক ভুখণ্ড, সৈন্য, অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে, কিন্তু তোমাদের সৈন্য জোরজবরদস্তিতে অর্জিত, এবং অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে রয়েছে বিরোধিতা। স্বভাবতই, তাদের সৈন্যবাহিনীর বিরাট অংশেরই বিবেচনাযোগ্য লড়ার সামর্থ রযেছে, সর্বক্ষেত্রে এমন না যে তারা এক আঘাতে ধ্বংস হবে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা হচ্ছে তাদের চাবিকাঠি দুর্বল দিক। আমরা ব্যাপক জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ হই; তারা ব্যাপক জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন।

তারা তাদের প্রচারে বলে যে কমিউনিস্ট পার্টি সাধারণ সম্পত্তি ও সাধারণ স্ত্রী প্রতিষ্ঠা করে; তারা এগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রচার করে। তারা একটা গান বানিয়েছিলঃ ‘যখন চুতে ও মাও সে-তুঙ আবির্ভুত হবে, খুন খারাপি, জ্বালাও পোড়াও চালাবে, তখন তুমি কী করবে?’ তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের এটা গাইতে শেখায়, আর তারা গাওয়া মাত্রই ছাত্রাছাত্রীরা বাড়ীতে গিয়ে বাবা মা, ভাই ও বোনেদের জিজ্ঞেস করলো, এভাবে আমাদের জন্য প্রচারের বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলো। একটি ছোট্র ছেলে গানটিতে [শুনে] তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো। তার বাবা উত্তর দিলঃ ‘তুমি অবশ্যই প্রশ্ন করবেনা; বড় হলে তুমি নিজেই দেখবে, তখন বুঝবে।’ সে ছিল একজন মধ্যপন্থী। তখন ছেলেটি তার কাকাকে জিজ্ঞেস করলো। কাকা তাকে তিরষ্কার করে জবাব দিলঃ ‘এই এসব খুন খারাপি, জ্বালাও পোড়াও ব্যাপারটা কী? তুমি যদি আমাকে আবার জিজ্ঞেস করো, আমি কিন্তু পিটুনি দেব‘। তার কাকা আগে কমিউনিস্ট যুব লীগের সদস্য ছিল। সকল সংবাদপত্র ও রেডিও স্টেশন আমাদের আক্রমণ করে। প্রচুর সংবাদপত্র ছিল, প্রতিটা শহরে কয়েক ডজন করে, প্রতিটা উপদল একটা করে চালাতো, আর ব্যতিক্রমহীনভাবে সকলেই ছিল কমিউনিস্ট-বিরোধি। সমস্ত সাধারণ মানুষ কি সেগুলোতে কর্ণপাত করেছে? মোটেই না। চীনা সম্পর্কের আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা আছে, চীন হচ্ছে একটা ‘চড়–ই পাখি’। [২৮] বিদেশেও এটা ধনী ও গরীব, প্রতিবিপ্লব ও বিপ্লব, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও সংশোধনবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। অবশ্যই বিশ্বাস করবেননা যে প্রত্যেকেই কমিউনিস্ট বিরোধি প্রচারে গলে যাবে, আর কমিউনিজমের বিরোধিতায় যোগ দেবে। আমরা কি সেসময় সংবাদপত্র পড়িনি? তথাপি আমরা তাদের দ্বারা প্রভাবিত হইনি।

Mao1938a

আমি ড্রিম অব রেড চেম্বার পড়েছি। কিন্তু এর দ্বারা প্রভাবিত হইনি। আমি একে ইতিহাস হিসেবে পড়েছি। প্রথমে আমি একে একটা গল্প হিসেবে পড়েছি তারপর ইতিহাস হিসেবে। যখন লোকে ড্রিম অব রেড চেম্বার পড়েন, তারা চতুর্থ অধ্যায় যতন সহকারে পড়েননা, বস্তুত, এই অধ্যায় এই বইয়ের সার ধারণ করে। লেঙ জু-সিংও রয়েছে যে কিনা জুঙ-কুও প্রাসাদের বর্ণনা দেন, গান ও নোট তৈরি করেন। চতুর্থ অধ্যায়ে ‘লাউয়ের বৈরাগী লাউ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, ‘কর্মকর্তাদের জন্য তেলেসমাত’-এর কথা বলে, এটা চার বৃহত পরিবারের পরিচয় দেয়ঃ

হৈ হৈ রৈ রৈ

নানকিং চিয়া!

কলসি দিয়ে মাপে তারা স্বর্ণ

আহ-প্যাঙ প্রাসাদ

আকাশ ছোঁয়া

কিন্তু নানকিং সি-এর আবাস

হয়না তাতেও

মহাসমুদ্রের রাজা যায়

নানকিং ওয়াঙের কাছে

যখন তার স্বর্ণ বিছানার অভাব ঘটে

নানকিং শুয়ে

এত ধনী তারা

গুণতে তাদের অর্থ

লেগে যাবে সারাটাদিন… …[২৯]

লাল ঘরের স্বপ্ন [ড্রিম অব দি রেড চেম্বার] চার বৃহত পরিবারের প্রতিটার বর্ণনা দেয়। এটা ব্যাপৃত হয় এক সাংঘাতিক শ্রেণীসংগ্রাম নিয়ে যার সাথে বহু ডজন লোকের ভাগ্য জড়িত, যদিও এর মধ্যে কেবল কুড়ি অথবা তিরিশ জন শাসক শ্রেণীর। (হিসেব করে দেখা গেছে যে [এই বর্গে] রয়েছে তেত্রিশ জন।) অন্যরা সবাই হচ্ছে দাস, তিনশ জনেরও অধিক সবাই, যেমন ইউয়েহ ইয়াঙ, সু-চি, দ্বিতীয় বোন ইউউ, তৃতীয় বোন ইউউ প্রমুখ। ইতিহাস অধ্যয়ণে, আপনি যদি শ্রেণীসংগ্রামের দৃষ্টিকোণ গ্রহণ না করেন যাত্রাবিন্দু হিসেবে, আপনি বিভ্রান্ত হবেন। বিষয়সমূহকে পরিষ্কারভাবে কেবল শ্রেণীসংগ্রামের দ্বারাই বিশ্লেষণ করা যায়। লাল ঘরের স্বপ্ন লেখার পর দুশ বছরেরও অধিক কেটে গেছে, এই বইয়ের ওপর গবেষণা এবিষয়টিকে পরিষ্কার করেনি, এমনকি বর্তমান পর্যন্ত, এথেকে আমরা সমস্যার জটিলতা বুঝতে পারি। ইউ পিঙ-পো এবং ওয়াঙ কুন-লুন উভয়ে হচ্ছে বিশেষজ্ঞ। [৩০] হো চি-ফ্যাঙও একটা ভুমিকা লিখেছেন। উ-শিহ চ্যাঙ [৩২] নামের এক ভদ্রলোকও পর্দায় আবির্ভুত হয়েছেন। এসবই লাল ঘরের স্বপ্ন-এর ওপর সাম্প্রতিক গবেষণা নির্দেশ করে, পুরোনো অধ্যয়ণগুলোকে আমি এমনকি গুণে বলতে পারবোনা। লাল ঘরের স্বপ্ন -এর ওপর সাই ইউয়ান-পেইর মত ছিল ভুল; হু শিহ ছিল কিছুটা বেশি সঠিক। [৩৩]

সংশ্লেষণ কী? আপনারা সবাই দেখেছেন কীভাবে দুটি বিপরীত কুওমিনতাঙ ও কমিউনিস্ট পার্টি মূল ভুখণ্ডে সংশ্লেষিত হয়েছে। সংশ্লেষণ ঘটেছে এভাবেঃ তাদের বাহিনী আসতো আমরা গিলে ফেলতাম, আমরা তাদের খেয়ে ফেলতাম এক গ্রাস এক গ্রাস করে। এটা ইয়াঙ শিয়েন-চেন বর্ণিত দুইয়ে মিলে এক হওয়ার ঘটনা নয়, এটা শান্তিপুর্ণভাবে পাশাপাশি অবস্থানরত দুই বিপরীতের সংশ্লেষণ নয়। তারা শান্তিপুর্ণভাবে পাশাপাশি অবস্থান করতে চায়নি, তারা আপনাকে গিলে ফেলতে চেয়েছে। অন্যথায়, কেন তারা ইয়েনান আক্রমণ করলো? তাদের সৈন্য বাহিনী উত্তর শেনসির সর্বত্র অনুপ্রবেশ করেছিল, তিন সীমান্তের তিন শিয়েন ছাড়া। তোমাদের রয়েছে তোমাদের স্বাধীনতা, আমাদের রয়েছে আমাদের। তোমাদের রয়েছে ২,৫০,০০০ জন, আমাদের রয়েছে ২৫,০০০ জন। [৩৪] অল্প কয়েকটি ব্রিগেড, ২০,০০০-এর বেশি কিছু লোক। বিশ্লেষণ সহকারে আমরা কীভাবে সংশ্লেষণ করি? তোমরা যদি কোথাও যেতে চাও সোজা এগিয়ে যাও। আমরা তখনো তোমাদের বাহিনীকে এক গ্রাস এক গ্রাস করে ভক্ষণ করি। আমরা যদি জয়ী লড়াই চালাতে পারি, আমরা চালিয়েছি; আমরা যদি জিততে না পারি, আমরা পশ্চাদপসারণ করেছি। মার্চ, ১৯৪৭ থেকে মার্চ ১৯৪৮ তে [শত্রুর] একটা সমগ্র বাহিনী দৃশ্যপট থেকে মিলিয়ে গেল, যেহেতু আমরা তাদের কয়েক দশক সহস্রের সৈন্যদলকে ধ্বংস করলাম। যখন আমরা আই-চুয়ান ঘিরে ফেললাম, লিউ কান শহর রক্ষা করতে এল, কমান্ডার ইন চিফ লিউ কান নিহত হল, তার তিন ডিভিশন কমান্ডারের দুইজন নিহত আর বাকী একজন বন্দী হলো, এবং সমগ্র বাহিনী লুপ্ত হলো। এটা ছিল সংশ্লেষণ। তাদের সকল বন্দুক ও গোলন্দাজ আমাদের পক্ষে সংশ্লেষিত হলো, তাদের সৈন্যরাও সংশ্লেষিত হলো। যারা আমাদের সাথে থাকতে চেয়েছে তারা থাকতে পেরেছে, যারা আমাদের সাথে থাকতে চায়নি তাদের mao-and-friendsআমরা ভ্রমণ খরচা দিয়েছি। লিউ কানকে আমরা খতম করার পর আই চুয়ানে স্থিত ব্রিগেড বিনা লড়াইয়ে আত্মসমর্পণ করলো। আমাদের তিন অভিযান লিয়াও-শেন, হুয়েই-হেই এবং পিকিং-তিয়েনশিনে আমাদের সংশ্লেষণ পদ্ধতি কী ছিল? ফু সো-ই আমাদের পক্ষে সংশ্লেষিত হয় তার ৪.০০,০০০ সদস্যের বাহিনীসহ বিনা লড়াইয়ে এবং তারা তাদের সকল রাইফেল হস্তান্তর করে। [৩৫] একটা আরেকটাকে খেয়ে ফেলে, বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে, এটাই হচ্ছে সংশ্লেষণ । বইতে এটা কখনোই এভাবে বলা হয়নি। আমিও আমার বইয়ে কখনো এভাবে বলিনি। ইয়াং শিয়েন-চেন বিশ্বাস করেন দুইয়ে মিলে এক হয়, এবং সংশ্লেষণ হচ্ছে দুই বিপরীতের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। বিশ্বে কোন্ অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে? বস্তুসমূহকে বেঁধে রাখা যায়, কিন্তু শেষে তাদের অবশ্যই ভেঙে যেতে হবে। এমন কোন কিছূ নেই যাকে ভাঙা যায়না। দীর্ঘ কুড়ি বছরের সংগ্রামের পর আমাদের অনেককেই শত্রু গিলে খেয়েছে। যখন ৩,০০,০০০ শক্তিশালি লালফৌজ শেন কান-নিঙ এলাকায় পৌঁছলো, কেবল ২৫,০০০ বাকী থাকলো। বাকীদের অনেককেই শত্রু গিলেছে, অনেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, অনেকে মারা গেছে অথবা আহত হয়েছে।

বিপরীতের একত্ব আলোচনা করার সময় জীবনকে আমাদের যাত্রাবিন্দু হিসেবে নিতে হবে। (কমরেড কাঙ শেঙঃ ‘স্রেফ ধারণার ব্যাপারে কথা বললে চলবেনা।’)

যখন বিশ্লেষণ চলে তখন সেখানে সংশ্লেষণও থাকে, যখন সংশ্লেষণ চলে তখন বিশ্লেষণও থাকে।

যখন লোকে প্রাণী ও উদ্ভিদ খায়, তারাও বিশ্লেষণ দিয়ে শুরু করে। আমরা কেন বালুকণা খাইনা? যখন ভাতের সাথে বালুকণা থাকে তা খেতে ভাল নয়। আমরা কেন ঘোড়া, গরু ও ভেড়াদের মতো ঘাশ খাইনা বরং বাঁধাকপির মতো জিনিস খাই? আমাদেরকে সবকিছু বিশ্লেষণ করতে হবে। শেন নুঙ শত শত ওষধির স্বাদ নিয়েছেন; [৩৬] তাদের ওষধি গুণাগুণ আবিষ্কার করেছেন। বহু দশক সহস্র বছর পরে বিশ্লেষণ পরিষ্কারভাবে উন্মোচিত করেছে কী খাওয়া যাবে আর কী খাওয়া যাবেনা। ফড়িং, সাপ ও কচ্ছপ খাওয়া যায়। কাঁকড়া, কুকুর ও জলজ প্রাণী খাওয়া যায়। কিছু বিদেশী আছে যারা তা খায়না। উত্তর শেনসিতে তারা জলজ প্রাণী খায়না। তারা মাছ খায়না। তারা বিড়ালও খায়না। একবছর পীত নদীতে বড় বন্যা হলো, যা দশক দশক সহস্র টন মাছ তীরে আছরে ফেললো, আর তারা সেগুলো সব সার হিসেবে ব্যবহার করলো।

আমি একজন দেশী দার্শনিক, আপনারা বিদেশী দার্শনিক।

(কমরেড শেঙঃ ‘চেয়ারম্যান কি তিন বর্গের সমস্যা সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন?’)

এঙ্গেলস তিন বর্গের কথা বলেছেন, কিন্তু আমার কাছে, আমি বিশ্বাস করি তার দুই বর্গে। (বিপরীতের ঐক্য হচ্ছে সবচেয়ে মৌলিক নিয়ম, গুণ ও পরিমাণের পারস্পরিক রূপান্তর হচ্ছে গুণ ও পরিমাণ-এই দুই বিপরীতের ঐক্য, এবং নেতিকরণের নেতিকরণ বলতে কিছু নেই)। গুণ ও পরিমাণের পারস্পরিক রূপান্তর, নেতিকরণের নেতিকরণ এবং বিপরীতের ঐক্যের নিয়মের একই স্তরে পারস্পরিক সহাবস্থান ‘ত্রয়ীবাদ’, অদ্বৈতবাদ নয়। সবচেয়ে মৌলিক জিনিস হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। গুণ ও পরিমাণের পরস্পর রূপান্তর হচ্ছে গুণ ও পরিমাণ-এই দুই বিপরীতের ঐক্য। নেতিকরণের নেতিকরণ বলতে কিছু নেই। ইতিকরণ, নেতিকরণ, ইতিকরণ, নেতিকরণ…বস্তুর বিকাশের ঘটনার শেকলের প্রতিটি সংযোগ উভয়ত ইতিকরণ ও নেতিকরণ। দাস সমাজ আদিম সমাজকে নেতিকরণ করে, কিন্তু সামন্ত সমাজের প্রেক্ষিতে ফলত তাহচ্ছে ইতিকরণ। দাস সমাজের সাথে সম্পর্কের দিক থেকে সামন্ত সমাজ নেতিকরণ গঠণ করে, কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজের দিক থেকে তা ফলত ইতিকরণ। পুঁজিবাদী সমাজ সামন্ত সমাজের দিক থেকে নেতিকরণ, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক সমাজের দিক থেকে ফলত, ইতিকরণ।

সংশ্লেষণের পদ্ধতি কী?  এটা কি সম্ভব যে দাস সমাজের পাশাপাশি আদিম সমাজ অবস্থান করতে পারে? তারা পাশাপাশি অবস্থান করে, কিন্তু সমগ্রের একটা ছোট অংশ হিসেবে। সমগ্র চিত্র হচ্ছে যে আদিম সমাজ অপসারিত হতে যাচ্ছে। সমাজের বিকাশ, অধিকন্তু, সংঘটিত হয় স্তরে স্তরে; আদিম সমাজও বহু স্তরে বিভক্ত। সেসময় তখনো মৃত স্বামীর সাথে স্ত্রীদের কবর দেওয়ার অনুশীলন ছিলনা, কিন্তু তারা পুরুষের অধীন হতে বাধ্য ছিলেন। প্রথমে পুরুষেরা নারীদের অধীন ছিল, তারপর জিনিসগুলো বিপরীতে ধাবিত হলো, এবং নারীরা পুরুষের অধীনে চলে গেল। ইতিহাসের এই স্তর এখনো স্বচ্ছকৃত হয়নি যদিও এটা চলে আসছে এক মিলিয়ন এবং তারো বেশি বছর ধরে। শ্রেণী সমাজ এখনো ৫০০০ বছর অতিক্রম করেনি, লুঙ সান ও ইয়াঙ সাও [৩৭]-এর মতো সংস্কৃতি আদিম যুগের শেষে মৃতশিল্পকে বৈশিষ্টমণ্ডিত করে। এক কথায়, একটা আরেকটাকে গিলে খায়, একটা আরেকটাকে উচ্ছেদ করে, এক শ্রেণী অপসারিত হয়, আরেকটা উদিত হয়, এক সমাজ অপসারিত হয়, আরেকটা উদিত হয়। স্বাভাবিকভাবে, বিকাশের প্রক্রিয়ায় সবকিছু পুরোপুরি বিশুদ্ধ নয়। যখন এটা সামন্ত সমাজে যায়, তখনো দাসমালিক ব্যবস্থার কিছু অবশিষ্ট থেকে যায়, যদিও সমাজ কাঠামোর বৃহত্তর অংশ সামন্ত ব্যবস্থার দ্বারা বৈশিষ্টমণ্ডিত হয়। এখনো কিছু ভুমিদাস রয়ে গেছে, কিছু বেগার শ্রমিকও যেমন হস্তশিল্পীরা। পুঁজিবাদী সমাজও সর্বাংশে খাঁটি নয়, এবং অধিকতর অগ্রসর পুঁজিবাদী সমাজেও একটা পশ্চাদপদ অংশ রয়েছে। উদাহারণস্বরূপ দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাস ব্যবস্থা ছিল। লিংকন দাস ব্যবস্থার বিলোপ ঘটান, কিন্তু এখনো কৃষ্ণাঙ্গ দাস রয়েছে আজকে, তাদের সংগ্রাম খুবই প্রচণ্ড। দুই কোটিরও বেশি জনগণ এতে অংশগ্রহণ করছেন আর সেটা যথেষ্ট অল্প।

একটা জিনিস আরেকটাকে ধ্বংস করে, জিনিসেরা আবির্ভুত হয়, বিকশিত হয় এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, সর্বত্র একই রকম। যদি জিনিসসমূহ অন্যদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত না হয়, তারা নিজেরা নিজেদের ধ্বংস করে। লোকে মারা যায় কেন? অভিজাততন্ত্রও কি মারা যায়? এটা হচ্ছে একটা প্রাকৃতিক নিয়ম। বনেরা মানুষের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে, তথাপি তারা বাঁচে কেবল কয়েক হাজার বছর। যদি মৃত্যুর মতো কোন কিছু না থাকতো তা হতো অসহনীয়। কনফুসিয়াস যদি আজও বেঁচে থাকতেন পৃথিবী এতো লোককে জায়গা দিতে পারতোনা। আমি চুয়াঙ-ঝুর দৃষ্টিভঙ্গী অনুমোদন করি। [৩৮] তার স্ত্রী যখন মারা গেলেন তিনি একটা বেসিন ধরে গান গাইলেন। লোকে মারা গেলে দ্বন্দ্ববাদের বিজয় উদযাপন করতে অনুষ্ঠান করা উচিত, পুরাতনের ধ্বংস উদযাপন করতে। সমাজতন্ত্রও অপসারিত হবে, এটা অপসারিত না হলে চলবেনা, তা না হলে কোন সাম্যবাদ হবেনা। সাম্যবাদ হাজার হাজার বছর ধরে থাকবে। আমি বিশ্বাস করিনা যে সাম্যবাদের অধীনে কোন গুণগত রূপান্তর হবেনা, এটা গুণগত রূপান্তরের দ্বারা স্তরে স্তরে বিভক্ত হবেনা! আমি এটা বিশ্বাস করিনা! পরিমাণ গুণে রূপান্তরিত হয় এবং গুণ পরিমাণে। আমি বিশ্বাস করিনা কোটি কোটি বছর ধরে এটা গুণগতভাবে পরিবর্তিত না হয়ে একই থাকবে! দ্বন্দ্ববাদের আলোকে এটা অচিন্ত্যনীয়। তারপর রয়েছে ‘প্রত্যেকে দেবে সাধ্যমতো, প্রত্যেকে নেবে প্রয়োজনমত’ নীতি। আপনি কি বিশ্বাস করেন এক মিলিয়ন বছর ধরে তারা একই অর্থনীতি দিয়ে চলতে পারবেন? আপনারা কি এটা চিন্তা করেছেন? সেক্ষেত্রে আমাদের কোন অর্থনীতিবিদ প্রয়োজন হবেনা, অথবা যেকোন ক্ষেত্রে আমরা একটা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে চলতে পারি, আর দ্বন্দ্ববাদ হয়ে পড়বে মৃত।

দ্বন্দ্ববাদের জীবন হচ্ছে বিপরীতে ধাবমান অব্যাহত গতি। মানবজাতিও চুড়ান্ততঃ ধ্বংস হবে। ধর্মবাদীরা যখন কেয়ামতের কথা বলে তারা হতাশাবাদী আর জনগণকে ভয় দেখায়। আমরা বলি যে মানবজাতির বিলোপ হচ্ছে এমন একটা কিছু যা মানবজাতির চেয়ে আরো অধিকতর অগ্রসর কিছু সৃষ্টি করবে। মানবজাতি এখনো তার শৈশবে। এঙ্গেলস প্রয়োজনের ক্ষেত্র থেকে স্বাধীনতার ক্ষেত্রের দিকে গতির কথা বলেছেন, এবং বলেছেন যে স্বাধীনতা হচ্ছে প্রয়োজনের উপলব্ধি। এই বাক্য সম্পুর্ণ নয়, এটা কেবল অর্ধেক বলে আর বাকী অব্যক্ত রেখে দেয়। স্রেফ উপলব্ধি কি আপনাকে মুক্ত করবে? স্বাধীনতা হচ্ছে প্রয়োজনের উপলব্ধি এবং প্রয়োজনের রূপান্তর-আমাদের কিছু কাজও করার রয়েছে। আপনি যদি কোন কাজ করা ছাড়া কেবল খান, আপনি যদি স্রেফ উপলব্ধি করেন, তাকি পর্যাপ্ত? আপনি যখন কোন নিয়ম আবিষ্কার করেন, আপনাকে তা প্রয়োগ করতে সক্ষম হতে হবে, আপনাকে এক নতুন পৃথিবী সৃজন করতে হবে, আপনাকে মাটি খুঁড়ে দালান তৈরি করতে হবে, আপনাকে খনি খনন করতে হবে, শিল্পায়ন করতে হবে। ভবিষ্যতে আরো বেশি মানুষ হবে, আর পর্যাপ্ত শস্য হবেনা, তাই মানুষকে খনিজ থেকে খাদ্য পেতে হবে। তাই কেবল রূপান্তরের মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জন করা যায়। ভবিষ্যতে কি সম্পুর্ণ মুক্ত হওয়া সম্ভব হবে? লেনিন বলেছেন যে ভবিষ্যতে আকাশে মাছির মতো বিমান থাকবে, এখানে ওখানে ভোঁ ভোঁ করে ওড়বে। সর্বত্র তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটবে, আর আমরা এ ব্যাপারে কি করবো? আমরা কিভাবে এদের নিয়ন্ত্রণ করবো? আর আমরা যদি করি জিনিসগুলো কি একেবারে মুক্ত হবে? পিকিঙে বর্তমানে ১০,০০০ বাস রয়েছে; টোকিওতে ১০০,০০০ [গাড়ি] (অথবা ৮০০,০০০?) রয়েছে, তাই অধিক মটর দুর্ঘটনা রয়েছে। আমাদের অপেক্ষাকৃত কম গাড়ি রয়েছে তাই আমরা ড্রাইভার ও জনগণকে প্রশিক্ষিত করতে পারি, তাই স্বল্প দুর্ঘটনা রয়েছে। তাহলে ১০,০০০ বছর পরে তারা পিকিঙে কি করবে? তখনো কি ১০,০০০ বাস থাকবে? তারা নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারেন, যাতে তারা পরিবহনের এই উপায়কে বন্টন করতে পারেন, যাতে মানুষ উড়তে পারে কিছু সরল যান্ত্রিক কলকব্জা ব্যবহার করে এবং যেকোন স্থানে উড়ে যেতে পারে এবং যেখানে খুশি অবতরণ করতে পারে। স্রেফ প্রয়োজনের উপলব্ধি কাজে দেবেনা, আমাদের অবশ্যই রূপান্তর ঘটাতে হবে।

আমি বিশ্বাস করিনা যে সাম্যবাদ স্তরে স্তরে বিভক্ত হবেনা এবং কোন গুণগত পরিবর্তন থাকবেনা। লেনিন বলেন যে সকল জিনিসকে বিভক্ত করা যায়। তিনি পরমাণুকে একটা উদাহারণ হিসেবে আনেন এবং বলেন যে পরমাণুকে যে শুধু বিভক্ত করা যায় তাই নয়, ইলেক্ট্রণকেও বিভক্ত করা যায়। আগে এটা মনে করা হতো যে একে বিভক্ত করা যায়না; বিজ্ঞানের যে শাখা পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের বিভাজনে নিবেদিত এখনো খুবই তরুণ, কেবল কুড়ি অথবা ত্রিশ বছর বয়সী। সাম্প্রতিক দশকসমূহে বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের অঙ্গগুলোকে বের করেছেন, যথা প্রোটন, এন্টিপ্রোটন,নিউট্রিনো, এন্টিনিউট্রিনো, মেসন ও এন্টিমেসন। এগুলো হচ্ছে ভারীগুলো। হালকাগুলোও রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই আবিষ্কারগুলি 1967-Liu-Deng-Counter-Revolutionary-Lineদ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়কালে ও পরে হয়েছে। পারমাণবিক নিউক্লিয়াস থেকে ইলেক্ট্রণ আলাদা করার ব্যাপারটা আবিষ্কার হয়েছে কিছু কাল আগে। একটা ইলেক্ট্রিক তার কপার অথবা এলুমিনিয়ামের বাইরের বিচ্ছিন্ন ইলেক্ট্রনগুলোকে ব্যবহার করে হয়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ৩০০ লি তে এটাও আবিষ্কার হয়েছে যে ইলেক্ট্রণের বিচ্ছিন্ন স্তরসমূহ রয়েছে। এখানেও পারমাণবিক নিউক্লিয়াস আর ইলেক্ট্রণসমূহ আলাদাকৃত। এখনো যদিও ইলেক্ট্রণকে বিভাজিত করা হয়নি, কিন্তু একদিন তারা নিশ্চিতভাবে একে বিভাজিত করতে সক্ষম হবেন। চুয়াঙ-ঝু বলেন, ‘এক ফুট দুরত্বকে প্রতিদিন আধাআধি ভাগ করে কখনই শুণ্য বানানো যাবেনা।’ (চুয়াঙ-ঝু, অধ্যায় [৩৩ জি] ‘বিবিধ স্কুল সম্পর্কে’ কুঙ সুন লুঙকে উদ্ধৃত করে।) এটা হচ্ছে সত্য। আপনি যদি এটা বিশ্বাস না করেন, একে স্রেফ বিবেচনায় নিন। একে যদি শুণ্যে কমিয়ে আনা যায় বিজ্ঞান বলে কোন কিছু থাকবেনা। অগণন জিনিস অব্যাহত ও সীমাহীনভাবে বিকশিত হয়, আর তারা হচ্ছে অসীম। সময় ও স্থান হচ্ছে অসীম। স্থানকে সমগ্রবীক্ষণভাবে ও অণুবীক্ষণভাবে উভয়ত পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এটা অসীম, একে অসীমভাবে বিভাজিত করা যায়। তাই এমনকি এক মিলিয়ন বছর পরেও বিজ্ঞানীদের করার মতো কাজ থাকবে। সাকাতা কর্তৃক প্রকৃতি বিজ্ঞানের বুলেটিন-এ মৌলিক কণা সম্পর্কে নিবন্ধের আমি প্রশংসা করি। [৩৯] আমি এধরণের নিবন্ধ আগে দেখিনি। এটা হচ্ছে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ। তিনি লেনিনকে উদ্ধৃত করেন।

দর্শনের দুর্বলতা হচ্ছে এটা ব্যবহারিক দর্শন সৃষ্টি করেনি, বরং কেবল পুঁথিগত দর্শন সৃষ্টি করেছে।

আমাদের সর্বদাই নতুন জিনিস তুলে আনতে হবে। অন্যথায় আমরা কিসের জন্য? পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা কী চাই? বাস্তবতার মধ্যে নতুন জিনিস খুঁজে বের করতে হবে, আমাদেরকে বাস্তবতাকে আঁকড়ে ধরতে হবে। শেষ বিশ্লেষণে, জেন ছি-উ [৪০] কি মার্কসবাদী নাকি তা নন? বৌদ্ধবাদ সম্পর্কে তার সেই নিবন্ধগুলোকে আমি বিরাটভাবে প্রশংসা করি। [এগুলোর পেছনে] কিছু গবেষণা রয়েছে, তিনি তাঙ ইউয়াঙ-তুঙের একজন ছাত্র। [৪১] তিনি তাঙ রাজবংশের বৌদ্ধবাদ নিয়ে কেবল আলোচনা করেন, পরবর্তীকালের বৌদ্ধবাদকে সরাসরি স্পর্শ করেননি। তাঙ রাজবংশের ছান স্কুল থেকে সুঙ ও মিঙ অধিবিদ্যা গড়ে ওঠেছে, আর এটা হচ্ছে বিষয়ীগত ভাববাদ থেকে বিষয়গত ভাববাদে গতি। [৪২] বৌদ্ধবাদ ও তাওবাদ রয়েছে, আর এদের মধ্যে পার্থক্য না করা ভুল। এগুলোর প্রতি মনোযোগ না দেওয়া কীভাবে যথার্থ হতে পারে? হান উ বোধ নিয়ে কথা বলেননি। তাঁর শ্লোগান ছিল, ‘তাদের ভাবধারা থেকে শিখুন, তাদের প্রকাশের ধরণ থেকে নয়।’ তার ভাবধারাগুলো সমগ্রত অন্যদের থেকে অনুলিপি করা, তিনি রূপ ও রচনার গড়নের ধরণ পাল্টে দিয়েছেন। তিনি বোধ নিয়ে কথা বলেননি, অল্পবিস্তর তিনি যা করেছেন তা হচ্ছে মূলতঃ প্রাচীনদের থেকে নেওয়া। শিক্ষকদের কথোপকথন এর মতো লেখাগুলোতে অল্পবিস্তর নতুন কিছু আছে। লিউ ঝু-হৌ ছিলেন ভিন্ন, তিনি বিশদভাবে বৌদ্ধ ও তাও বস্তুবাদের সম্পর্কে জানতেন। [৪৩] আর তথাপি তাঁর স্বর্গের উত্তর আতি সংক্ষিপত, স্রেফ অল্প। তার স্বর্গের উত্তর হচ্ছে ছু ইউয়ানের স্বর্গের প্রশ্ন-এর ফল। [৪৪] কয়েক হাজার বছর ধরে কেবল এই এক ব্যক্তিই লিখেছেন স্বর্গের উত্তর-এর মতো গ্রন্থ লিখেছেন। স্বর্গের প্রশ্ন এবং স্বর্গের উত্তর  কী নিয়ে? একে ব্যাখ্যা করে বিশদকরণ না থাকলে আপনি এটা পড়ে বুঝতে পারবেননা, কেবল সাধারণ ধারণা পাবেন। স্বর্গের প্রশ্ন সত্যিই চমতকার, হাজারো বছর আগে এটা মহাবিশ্ব, প্রকৃতি ও ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত সকল ধরণের প্রশ্ন তুলে ধরেছে।

(দুয়ে মিলে এক হওয়ার প্রশ্নে আলোচনা সম্পর্কে;) হুঙ ছিকে অল্পকিছু ভাল জিনিস পুনমুদ্রণ এবং একটা রিপোর্ট লিখতে দিন।

নোট

১.     ১) অর্থাত মার্কসবাদী দর্শন, অর্থাত দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, যা প্রকৃতি, মানব সমাজ ও মানুষের চিন্তাধারায় বিদ্যমান দ্বন্দ্বসমূহের বিকাশের সাধারণ নিয়ম নিয়ে আলোচনা করে; ২) মার্কসবাদী অর্থনীতি যা সমাজের অর্থনীতির বিকাশের পরিচালক নিয়মসমূহ ব্যাখ্যা করে এবং পুঁজিপতিরা কীভাবে শ্রমিকশ্রেণীকে শোষণ করে তা উন্মোচন করে (উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব); এবং ৩) বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র যা দেখায় যে পুঁজিবাদী সমাজ এক উচ্চতর সমাজে বিকশিত হতে বাধ্য এবং সর্বহারা শ্রেণী হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কবর খোদক। ( বিস্তারিতের জন্য দেখুন লেনিনের মার্কসবাদের তিনটি উতস ও তিনটি অঙ্গ।)

২.     পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ত পুরোনো পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় যা ১৯১৯তে চৌঠা মে আন্দোলন পরিচালনা করেছে এবং আমেরিকার তৈরি ইয়েঞ্চিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জন্ম নিয়েছে। ১৯৪৯ থেকে এটা সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক চমতকারিত্বের জন্য উচ্চতম সম্মান ভোগ করে। গণ বিশ্ববিদ্যালয় (জেন-মিন তা-শিউয়েহ)ও পিকিংয়ে অবস্থিত, এটা বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শ্রমিক ও কৃষক থেকে আগত ছাত্রদের জন্য অধিক উপযোগী কোর্স যোগান দিতে।

৩.     কনফুসিয়ান ক্লাসিকের মধ্যে চার গ্রন্থ প্রারম্ভিক অধ্যয়নের সারকে প্রতিনিধিত্ব করে, পাঁচ ক্লাসিক হচ্ছে বৃহত্তর পরিসরের।

৪.     তাঁর বিচিত্র শিক্ষা অভিজ্ঞতার মধ্যে মাও সেতুঙ বাছাই করেছেন ১৯১২-১৩র শীতে তিনি হুনান প্রাদেশিক গ্রন্থাগারে যে অধ্যয়ণে কাটিয়েছেন তাকে সর্বাধিক মূল্যবাণ হিসেবে।

৫.     প্রথম বাক্যটি দরিদ্রের মতবাদ থেকে আর দ্বিতীয়টি মেনশিয়াস, চতুর্থ গ্রন্থ থেকে।

৬.     উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে কনফুসিয়ান সাহিত্য সংগ্রহ থেকে। যে ঘটনায় কুয়াঙের লোকেরা কনফুসিয়াসকে বন্দী করেছিল এবং তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল তা এই সাহিত্য সংগ্রহে নির্দেশিত।

৭.     মাওয়ের যুক্তি আপতিকভাবে এই যে, সেখানে তিনি যান আর না যান, কনফুসিয়াসের ছিনের বিরুদ্ধে কিছু ছিলনা (একটা রাষ্ট্র যা বর্তমান কালের শেনসিতে অবস্থিত ছিল খৃষ্টপুর্ব প্রথম শতকে, যার শাসকেরা শেষপর্যন্ত পুরো চীন জয় করে এবং ২২১ খৃষ্টপুর্বাব্দে ছিন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে), যেহেতু তিনি অডেস-এর গ্রন্থ-তে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যাতে তিনি ঐ এলাকা থেকে মাও উল্লেখিত দুটি সহ বেশকিছু কবিতা খুব সম্ভবত সম্পাদনা করেছেন।

৮.     শু-মা ছিয়েন (১৪৫-৯০ খৃষ্টপুর্ব) ছিলেন চীনের প্রথম মহান ঐতিহাসিক, যিনি গোড়া থেকে তার দিন পর্যন্ত চীনের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত শিহ-চি (ঐতিহাসিক রেকর্ড) প্রস্তুত করেন।

৯.     উপরের কবিতাটির এবং আগে উল্লেখিত দুটোর শিরোনাম-এর অনুবাদ ওডেস-এর গ্রন্থ-এর লে¹গ্নি সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে।

১০.    প্রেমের কবিতাসমুহ চীনা সমালোচকগণ কর্তৃক প্রচলিতভাবে বিবৃত হয় এক কমকর্তা ও তার রাজন্যের মধ্যে সম্পর্কের রূপকল্প হিসেবে; চু শি (নীচে নোট ৪২ দেখুন) মনে করেছেন যে তাদেরকে আক্ষরিক অর্থে নিতে হবে। মাও সাধারণ বিবেচনা বোধ থেকে মত পোষণ করেন যে তাদেরকে কখনো আক্ষরিকভাবে নিতে হবে আবার কখনো তা নয়।

১১.     ওয়েই চুয়াঙ (৮৫৮-৯১০ খৃঃ) ছিলেন তাঙ রাজত্বের শেষভাগে এবং পাঁচ রাজত্বের (৯০৭ খৃষ্টাব্দে শুরু হয়) প্রথমদিকের পর্বের একজন খ্যাতনামা কবি। মাও মত রাখছেন যে ওডেস-এর গ্রন্থ এবং সকল ধ্রুপদী কাব্যের ক্ষেত্রে একই ব্যাখ্যার নীতি প্রয়োগ করতে হবে।

১২.     “চার পরিষ্কারকরণ” এবং “পাঁচ বিরোধী”র জন্য দেখুন এই খন্ডের [ইন্টারনেট] পৃষ্ঠা ৯-এর নোট ৫।

১৩.    চীনা গণতান্ত্রিক লীগের পত্রিকা কুয়াঙ-মিঙ ঝিহ-পাও এপ্রিল, ১৯৫৭তে পার্টির সমালোচনায় নেতৃত্ব দেয়, যখন ‘ফুল ফোটা ও প্রতিযোগিতা’ ছিল পুর্ণ মাত্রায়। সাংহাইয়ে প্রকাশিত ওয়েন-হুই পাও যা ছিল একটা অ-পার্টি পত্রিকা, তা এর বুর্জোয়া প্রবণতার জন্য ১৯৫৭তে মাও কর্তৃক সমালোচিত হয়। ১৯৬৫-এর নভেম্বর-এ সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সুচনা চিত্রায়ণের জন্য উতসারক হিসেবে এটা কাজ করে।

১৪.     চৌক কু-চ্যাঙ ছিলেন চীনা ও বিশ্ব ইতিহাসের ওপর বহুবিধ গ্রন্থের লেখক। ১৯৫০ থেকে সাংহাইয়ের ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৬২তে ইতিহাস ও শিল্পকলার ওপর একটা নিবন্ধ লেখেন যাতে তিনি ‘জেইতজিইস্ট’’ ভাবধারা প্রকাশ করেন যাকে বলা হয়েছে সৌন্দর্যতত্ত্বের ক্ষেত্রে ইয়াঙ শিয়েন-চেন’র দার্শনিক তত্ত্বের প্রকাশ (দেখুন এই পাঠের নোট ১৯)।

১৫.    সুন ইয়েহ-ফ্যাঙ ছিলেন এসময় বিজ্ঞান একাদেমীর অর্থনীতি অনুষদের পরিচালক; তাকে ১৯৬৬ সালে অপসারণ করা হয়। যেমনটা কাঙ শেঙের মন্তব্য ইঙ্গিত করে, তিনি কিছু সোভিয়েত ও পুর্ব ইউরোপীয় অর্থনীতিকের ধারণা গ্রহণ করেন যাদের সাথে তিনি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে লাভ প্রবণতার ভুমিকা নিয়ে পেশাদার সম্পর্ক রাখতেন।

১৬.    ১৯৫৫-এর গ্রীস্মে ঐবছরের জুলাই ৩১-এ মাওয়ের যে বক্তৃতা কৃষি উতপাদকদের সমবায়সমূহ গঠনে নতুন বেগবর্ধন করে তার কিছু পুর্বে পার্টির গ্রামীন কর্ম বিভাগ (লিউ শাউ-চির প্ররোচনায়) বেশ কিছু সমবায় ভেঙে দেয় যাদেরকে বলা হয়েছে তাড়াহুড়া করে ও অপরিপক্কভাবে গঠন করা হয়েছে।

১৭.     তেঙ ঝু-হুই (১৮৯৫-১৯৭২) ছিলেন ১৯৫২ থেকে গ্রামীন কর্ম বিভাগের প্রধান, যদিও ১৯৫০ দশকের শেষের দিক থেকে তার প্রভাব ছিল অবনতিশীল ১৯৫৫তে সমবায়সমূহ ‘ভেঙে দেওয়া’ অথবা ‘উতপাটিত করা’ তে তার অংশের দায়ের কারণে। এটা প্রতীয়মাণ হয় যে মাওয়ের মতসমূহকে বিরেধিতায় তার মতসমূহ তুলে ধরার মতো যথেষ্ট প্রতিপত্তি তখনো তার ছিল যখন ১৯৬০ দশকের শুরুর দিকে মাও কর্তৃক এখানে বিশদীকৃত কর্মনীতিনসমূহ পার্টির মধ্যে একটা বিতর্কের বিষয় ছিল। সমবায় রূপান্তরের সম্পর্কে বিতর্কের সময়কালে উভয়ত গ্রামীন কর্ম বিভাগ ও তেঙ ঝু-হুই মারাত্মকভাবে মাও কর্তৃক সমালোচিত হন। [আরো বিস্তারিতের জন্য দেখুন পৃ ২২৪-২২৫, নির্বাচিত রচনাবলী, খণ্ড ৫]

সাংস্কৃতিক বিপ্লবের শুরুর সময় থেকে ‘সানজি ইয়াবো’ ( তিন স্বাধীনতা এবং একটা ধ্রুব, অথবা নিশ্চয়তা’)র চেয়ে বৈষয়িক প্রণোদনা, ব্যক্তিগত নীল নকশার ভুমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে সমগ্র ঝাঁক বাঁধা কর্মনীতিসমূহকে লুকানোর প্রতীক হিসেবে ‘চার বিরাট স্বাধীনতা’ প্রকাশ ছিল প্রকাশিত দলিলাদিতে কম লক্ষনীয়। এ ধারণা সম্পর্কে দেখুন ‘চীনের গ্রামাঞ্চলে দুই পথের মধ্যেকার সংগ্রাম’ নিবন্ধ, পিকিং রিভিউ, নং ৪৯ (১৯৬৭), পৃ. ১১-১৯, যা গ্রামাঞ্চলে লিউ শাউ-চি ও তার সহানুভূতিশীলদের প্রতিক্রিয়াশিল লাইনকে সারসংক্ষেপিত করার জন্য রচিত।

১৮.    লিউ শাউ-চি ও অন্যদের কর্তৃক একটা ডান সুবিধাবাদী মত। এ সম্পর্কে দেখুন সিপিসির সিসির পিবি সভায় মাওয়ের বক্তৃতা “ডান বিচ্যুতিবাদী মতসমূহকে খণ্ডন করুন যা সাধারণ লাইন থেকে বিচ্যুত হয়”, নির্বাচিত রচনাবলী, খণ্ড ৫, পৃ ৯৩-৯৪।

১৯.    ‘দুইয়ে মিলে এক হয়’ মত ১৯৬০ দশকের প্রথম দিকে ইয়াঙ শিয়েন-চেন (১৮৯৯ খৃ-) তুলে ধরে, যে ১৯৫৫ থেকে উচ্চতর পার্টি স্কুলের সভাপতি ছিল। ১৯৬৪র জুলাইয়ের শুরুতে এই মতকে প্রচণ্ডভাবে সংবাদপত্রে আক্রমণ করা হয় এই ভিত্তিতে যে এটা সংগ্রাম ও দ্বন্দ্বের গুরুত্বকে সংকুচিত করেছে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছে মাওয়ের ‘এক নিজেকে দুইয়ে বিভক্ত করে’ মতের সাথে যা হচ্ছে সংগ্রাম, নির্দিষ্টভাবে শ্রেণীসংগ্রাম যা অব্যাহতভাবে পুন উদ্ভূত হয়, এমনকি যখন নির্দিষ্ট দ্বন্দ্বসমূহ সমাধা হয় তখনও। স্টেনোগ্রাফারের নোটে নির্দেশিত ‘একটি নিবন্ধের রূপরেখা’ ছিল খুব সম্ভবত ইয়াঙের ওপর আসন্ন আক্রমণের সারসংক্ষেপ যা চেয়ারম্যানের অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়েছে।

২০.    মাদ্রিদের প্রতিরক্ষা অক্টোবর ১৯৩৬-এ শুরু হয়ে দুই বছর ও পাঁচ মাস টিকে ছিল। ১৯৩৬-এ ফ্যাসিস্ট জার্মানী ও ইতালী স্প্যানিশ ফ্যাসিস্ট যুদ্ধবাজ ফ্রাঙ্কোকে ব্যবহার করে স্পেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধ চালাতে। পপুলার ফ্রন্ট সরকারের নেতৃত্বে স্প্যানীয় জনগন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বীরত্বব্যাঞ্জকভাবে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেন। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের যুদ্ধ ছিল সমগ্র যুদ্ধের মধ্যে সর্বাধিক তিক্ত। মার্চ, ১৯৩৯-এ মাদ্রিদের পতন ঘটে কারণ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অন্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি তাদের “কোন হস্তক্ষেপ নয়”-এর ভণ্ড কর্মনীতি দ্বারা আগ্রাসীদের সহযোগিতা করে এবং কারণ পপুলার ফ্রন্টের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। সমালোচনার বিষয় এই নয় যে স্প্যানিশ রিপাবলিকানরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে, বরং তারা এই প্রবাদ আত্মস্থ করতে ব্যর্থ হয় যে ভৌগলিক শক্তিশালি স্থানসমূহ নিজে থেকে নির্ধারক নয়।

২১.     অনুগ্রহ করে দেখুন এপ্রিল ২০, ১৯৪৫-এ গৃহিত “আমাদের পার্টির ইতিহাসের কতিপয় প্রশ্নে সিদ্ধান্ত”, নির্বাচিত রচনাবলী, খণ্ড ৩, পৃ ১৭৭-২২৫ (১৯৬৫ সংস্করণ)।

২২.     মাও এই অনুষদে তার ততপরতা শুরু করেন ১৯২৫-এ, কিন্তু ১৯২৬-তেই তিনি প্রকৃতপক্ষে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তার প্রধান অবদান রাখেন।

২৩.    উদ্ধৃতিটি মেনশিয়াস, ষষ্ঠ পাঠ, খণ্ড ক, অধ্যায় ১৫ থেকে।

২৪.     এটা খুব সম্ভবতঃ ১৯০৩ সালে প্রকাশিত ‘বিপ্লব সম্পর্কে কাঙ উ-ওয়েই-এর চিঠির খণ্ডন’ শীর্ষক চ্যাঙ পিঙ-লিনের উদ্যাপিত প্রবন্ধের একটা নির্দেশিকা। এই প্রবন্ধে চ্যাঙ কাঙের ওপর শুধু বিপ্লব বনাম ক্রমিক সংস্কার প্রশ্নেই ক্ষুরধার আক্রমণ চালাননি, বরং চীনা ও মাঞ্চুদের মধ্যে জাতিগত বৈষম্যের প্রশ্নেও যা কাঙ সংকুচিত করতে চেয়েছে। চ্যাঙ মত রাখেন মাঞ্চুরা এক বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়িষ্ণু জাতি, চীনকে শাসনের সম্পুর্ণ অনুপযুক্ত। এই প্রেক্ষাপটেই তিনি বিবর্তন আলোচনা করেছেন এটা নির্দেশ করে যে বিদ্যমান জাতিগত বৈষম্য হচ্ছে ইতিহাসের ফল।

২৫.    ফু ইং একজন চীনা বিজ্ঞানি প্রতীয়মান যিনি ১৯৬৪ সালে জীবিত ছিলেন, যেহেতু মাও বলেন তিনি তাকে খুঁজতে চান।

২৬.    লু পিং (১৯১০ খৃঃ-) সেসময় পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন; জুন, ১৯৬৬-এ ‘তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানো হয়’ এবং তিনি অপসারিত হন।

২৭.     আই সু-তি (১৯১০-৬৬ খৃঃ) তার মৃত্যুকালীন সময়ে উচ্চতর পার্টি স্কুলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন পার্টির একজন নেতৃস্থানীয় দার্শনিক মুখপাত্র যিনি রুশ থেকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ওপর গ্রন্থরাজি অনুবাদ করেছেন এবং বহু গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন যার লক্ষ্য ছিল মার্কসবাদকে জনসাধারণের মধ্যে নিয়ে যাওয়া। ‘দুইয়ে মিলে এক হওয়া’র নীতির সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নে এই আলোচনায় আগে মাও যে ‘বর্জোয়া’ দার্শনিকের কথা বলেছেন সেই ইয়াং শেন-চেনকে আক্রমণ করে নভেম্বর ১, ১৯৬৪তে তিনি পিপল্স ডেইলিতে এক নিবন্ধ প্রকাশ করেন।

২৮.    ‘চড়–ই পাখি বিদ্ধ করা’ হচ্ছে এক রূপক যা তত্ত্বে প্রযুক্ত হয় এবং জ্ঞান অর্জন ও অভিজ্ঞতার সারসংকলনে এক কর্মপদ্ধতি। বিপুল সংখ্যক ঘটনার পুনরাবৃত্তিকে সাধারণীকরণ করার প্রচেষ্টার পরিবর্তে এই কর্মপদ্ধতি গভীর বিশ্লেষণ, গভীর অধ্যয়ণ, কোন নমুণার তদন্ত এবং বিশ্লেষণের সাহায্যে অভিজ্ঞতার সারসংকলনের কথা বলে। “চুড়–ই পাখি ছোট কিন্তু সকল নির্ধারক অঙ্গই এর রয়েছে”এই প্রবাদ বাক্য থেকে শ্লোগানটি আসে। এখানে মাও এই বিষয়টি তুলে ধরেন যে ব্যাপকতর আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চীন হচেছ আজকের দুনিয়ার বিপ্লবের সমস্যার এক ক্ষুদ্র পৃথিবী।

২৯.    লেঙ ঝু-সিং (প্রস্তরের কাহিনী) গ্রন্থের ২য় অধ্যায়ে জুঙ-কুওর ডিউকের প্রাসাদের বর্ণনা দেন। ‘উচ্চ পদস্থ’দের জন্য তেলেসমাত’ ছিল ঐ এলাকার ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারসমুহের তালিকা যা লাউয়ের মন্দিরের প্রাক্তন শিক্ষানবীশ বলেছেন যে প্রত্যেক পদস্থকে বহন করতে হবে তাদেরকে আক্রমণ এড়াতে এবং এভাবে নিজ জীবিকার ক্ষতি এড়াতে (প্রস্তরের কাহিনী)।

৩০.    এই প্রশ্নে কমরেড মাওয়ের সমালোচনার জন্য দেখুন “লাল ঘরের স্বপ্ন সম্পর্কে চিঠি”(নির্বাচিত রচনাবলী, খণ্ড ৫, পৃঃ ১৫০-১৫১), “লঙলুমেঙ ইউয়ানজিয়াকে সমালোচনা সম্পর্কে” (নির্বাচিত রচনাবলী, খণ্ড ৫, পৃঃ ২৯৩-২৯৪)।

উ-পিঙ-পোকে মাওয়ের সমালোচনার জন্য দেখুন উপরের পাঠ ৮, নোট ৮। ওয়াঙ কুন-লুন ছিলেন ১৯৫০ দশকে পিকিঙের ভাইস মেয়র।

৩১.    হো চি-ফ্যাঙ (১৯১১-) একজন গীতি কবি এবং শিল্প জগতের এক শক্তিশালি চরিত্র। তিনি উ পিঙ-পোকে তার বিরুদ্ধে অভিযান চলার সময় একটা পর্যায় পর্যন্ত রক্ষা করেন এটা বলে যে উ লাল ঘরের স্বপ্ন সম্পর্কে বলার সময় ভুল ছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে নীতিবান। তিনি নিজে মহান অগ্রগামী উলম্ফণের সময়কালে আক্রমণে পড়লেন।

৩২.    উ শি-চ্যাঙের এই বিষয়ে বই ইংরেজীতে অনুদিত হয়েছেঃ ‘দি রেড চেম্বার ড্রিম’ (ক্লেরেনডন প্রেস, ১৯৬১।)

৩৩.    এখানে মাওয়ের বিবৃতি লু শুনের সাথে মিলে।

৩৪.    ঐতিহাসিক বর্তমানে দাঁড়িয়ে কুওমিনতাঙের সাথে চুড়ান্ত প্রদর্শন স্মরণ করে যে আকৃতি দেন তা ১৯৪৬-এ নবায়িত গৃহযুদ্ধের শুরুর চেয়ে বরং জাপবিরোধি যুদ্ধের সুচনার সময়কার যখন গণ মুক্তি বাহিনী অন্ততঃ অর্ধ মিলিয়ন সদস্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল।

৩৫.    জানুয়ারি, ১৯৪৯-এ পিপিঙ (তখন একে যেভাবে বলা হতো)-এর জাতীয়তাবাদী গ্যারিসনের কমান্ডার শহরকে সমর্পণ করেন বিনা লড়াইয়ে অযথা ধ্বংসযজ্ঞ এড়াতে। পরে তিনি পিকিং সরকারের পানি সংরক্ষণ মন্ত্রী হন।

৩৬.    রূপকথার সম্রাট শেন নুঙকে বলা হয়ে থাকে তিনি খৃষ্টপুর্ব তৃতিয় শতকে কৃষির শিল্পকলা শিখেছিলেন, এবং নির্দিষ্টভাবে উদ্ভিদের ওষধি গুণাগুণ আবিষ্কার করেছিলেন।

৩৭.    লুঙ শান এবং ইয়াং শাও সংস্কৃতি উত্তর-পুর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম চীনে অবস্থিত, এরা হচ্ছে নিওলিথিক যুগের দুই সর্বাধিক খ্যাতনামা সংস্কৃতি। মাও যেমনটা ইঙ্গিত করেন, তারা বিশেষভাবে মৃতশিল্পের জন্য বিখ্যাত।

৩৮.    চুয়াঙ-ঝু নামের গ্রন্থটি সম্ভবত অংশত রচিত হয়েছে একই নামের সেই লোকের দ্বারা যিনি খৃষ্টপুর্ব চতুর্থ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জীবিত ছিলেন। এটি তাওবাদ( লাও-ঝু এবং পরিবর্তনের গ্রন্থ সহকারে)-এরই শুধু যে এক ধ্রুপদী পাঠ তাই নয়,বরং চীনের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কর্ম।

৩৯.    নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জাপানী পদার্থবিদ মনে করেন যে ‘মৌলিক কণাসমূহ হচ্ছে একক, বাস্তব, অন্তরকৃত এবং অসীম বর্গ যা প্রাকৃতিক ধারা গঠণ করে’। এসব মত ব্যাখা করে তার একটা নিবন্ধ জুন, ১৯৬৫-এ রেড ফ্লাগ-এ প্রকাশিত হয়। (এই খণ্ডের পরবর্তী প্রবন্ধসমূহও দেখুন)

৪০.    মাও সম্ভবত ১৯৬৩-তে প্রকাশিত ও ১৯৭৩-এ পুনঃপ্রকাশিত সংগৃহিত রচনাবলীর প্রতি নির্দেশ করেছেনঃ হান তাঙ ফো-চিয়াও শু-শিয়াঙ লুন চি (হান ও তাঙ রাজত্বে বৌদ্ধবাদী চিন্তাধারার ওপর সংগৃহীত রচনাবলী) (পিকিংঃ জেন-মিন চু-পান-সে, পৃঃ ৩৪৮) এই অধ্যয়ণে তিনি দ্বন্দ্ববাদ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লেনিন থেকে উদ্ধৃত করেন।

৪১.     জেন চি-উ যাকে তার শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন সেই তাঙ ইয়ুঙ-তুঙ (১৮৯২-১৯৬৪) ছিলেন বৌদ্ধবাদের একজন নেতৃস্থানীয় ঐতিহাসিক, যিনি হান, ওয়েই, চিন এবং উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজবংশের অধীনে চীনা বৌদ্ধবাদের ওপর এবং ভারতীয় চিন্তাধারা প্রভৃতির ওপর লিখেছেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৪ সালে তিনি অসুস্থ হওয়া অবধি তিনি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিকের ডীন ছিলেন।

৪২.     চান (এর জাপানী নাম জেন দ্বারা ভালভাবে পরিচিত) বৌদ্ধবাদের প্রভাবাধীনে সুঙ ও মিঙ রাজত্বের চীনা দার্শনিকেরা, যাদের মধ্যে চু শি (১১৩০-১২০০) হচেছন সর্বাধিক বিখ্যাত, কনফুসিয়াসবাদ ও বৌদ্ধবাদের এক সংশ্লেষণ বিকশিত করেন যার মধ্যে এর লি (যুক্তির নীতি) ধারণা কেন্দ্রিয় ভুমিকা পালন করে, সাধারণভাবে যা নয়া-কনফুসিয়াসবাদ হিসেবে পরিচিত। এসব মতবাদের সাথে সম্পর্কের ওপর মাওয়ের মতো একইরকম চীনা মত জানতে দেখুন হোউ ওয়েই-লু, চীনা দর্শনের এক সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (পিকিংঃ বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়, ১৯৫৯), পৃঃ ৩৩-৫১। পশ্চিমা একজন বিশেষজ্ঞের বক্তব্যের জন্য দেখুন, এইচ, জি, ক্রীল, কনফুসিয়াস থেকে মাও সেতুঙ, চীনা চিন্তাধারা (শিকাগোঃ শিকাগো প্রেস বিশ্ববিদ্যালয়; এবং লন্ডনঃ আয়ার ও স্পটিসউডে, ১৯৫৩), অধ্যায়, ১০।

৪৩.    হান উ এবং লিউ সুঙ-ইউয়ান। হান উ অত্যধিক নৈরাজ্যবাদ এড়িয়ে ধ্রুপদী কালের সরলতা পুনসৃজনে আকাংখিত। মাও কর্তৃক উদ্ধৃত ‘তাদের ভাবধারা থেকে শেখা’র শ্লোগান প্রকাশের সেকেলে রূপ এড়িয়ে প্রাচীন কনফুসিয়ান মুনিদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার সেই লক্ষ্যকে নির্দেশ করে। তিনি বৌদ্ধবাদের ওপর এক সমালোচক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করেন, কিন্তু এর থেকে ভাবধারা ধার করেন তার চেয়ে কম নয়। লিউ সুঙ-ইউয়ান, যাকে মাও তার সাহিত্যিক নাম লিউ ঝু-হৌ-এ এখানে ডেকেছেন, ছিলেন হান উর ঘণিষ্ঠ বন্ধু।

৪৪.     লিউ সুঙ-ইউয়ানের রচনা তিয়েন তুই (স্বর্গের উত্তর) চু ইউয়ান কর্তৃক তার কবিতা তিয়েন ওয়েন (স্বর্গের প্রশ্ন)য় তুলে ধরা  মহাবিশ্বের উতস ও প্রকৃতি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেয়। পরেরটা লি সাও এবং চু ইউয়ানের অন্যান্য কবিতা, পৃঃ ৭৯-৯৭, তে “ধোঁয়াশা” শিরোনামে অনুদিত হয়েছে। এটা, মাও যেমনটা বলেন, পরামর্শদায়ক, কিন্তু অতি দ্ব্যার্থতাবোধক।

 

 

 

বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের বিনির্মাণ লাইন

 

-পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি

 

সুচনা

shining_path_clip_image001_0000

সভাপতি গনসালো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে ও প্রয়োগ করে বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের বিনির্মাণের পিসিপির লাইন প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি আমাদের শিক্ষা দেন যে শ্রমিক শ্রেণী তার প্রতিলিপিতে ও পছন্দমাফিক সংগঠণ সৃষ্টি করে, অন্য কথায় তার নিজ সংগঠণ। উনিশ শতকে মার্কস ও এঙ্গেলসমেত আমরা যাত্রা করেছি এক নির্দিষ্ট ধারণা নিয়ে, আমাদের নিজ মতবাদ, আমাদের নিজ উদ্দেশ্য, আমাদের নিজ লক্ষ্য, কীভাবে ক্ষমতা জয় করতে হবে এবং তা করার পথঃ বিপ্লবী সহিংসতা, এসবই এক কঠিণ দুই লাইনের সংগ্রামে অর্জিত। মার্কস প্রতিষ্ঠা করেন যে সর্বহারা শ্রেণী একটা শ্রেণী হিসেবে কাজ করতে পারে কেবল সম্পত্তিবাণ শ্রেণীগুলো কর্তৃক সৃষ্ট সকল রাজনৈতিক পার্টিগুলো থেকে ভিন্ন ও বিপরীত নিজেকে এক পার্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। তাই, যেহেতু তার আকৃতি লাভ হচ্ছে একটা দীর্ঘায়ত প্রক্রিয়া, তাই সর্বহারা শ্রেণী তার নিজস্ব সংগঠণের রূপসমূহ সৃষ্টি করেছে।  ফলত, পার্টি হচ্ছে সর্বোচ্চ রূপের সংগঠণ, বাহিনী হচ্ছে প্রধান ধরণের সংগঠণ আর ফ্রন্ট হচ্ছে তৃতিয় হাতিয়ার, এই তিন হাতিয়ার হচ্ছে ক্ষমতা দখলের জন্য বিপ্লবী সহিংসতা মারফত। তিনি আমাদের বলেন যে উনিশ শতকের শেষে এঙ্গেলস এই উপসংহারে পৌঁছেন যে শ্রেণীর ক্ষমতা দখল ও বজায় রাখার না আছে যথার্থ সংগঠণগত রূপ না আছে সামরিক রূপ। তথাপি, তিনি কখনো বলেননি যে আমাদেরকে বিপ্লব বর্জন করতে হবে বরং এসব ঝুলে থাকা সমস্যা সমাধানে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এটা খুব ভালভাবে বুঝতে হবে কারণ সংশোধনবাদীরা এক বিকৃত করে তাদের সুবিধাবাদ বেঁচতে।

বিশ শতকে লেনিন উপলব্ধি করেন যে বিপ্লব হচ্ছে পরিপক্ক এবং তিনি সর্বহারা শ্রেণীর নতুন ধরণের পার্টি সষ্টি করেন, সংগ্রামের রূপঃ অভ্যুত্থান এবং সংগঠণের রূপঃ বাহিনী সৃষ্টি করে যা ছিল চলমান ধরণের এবং পুর্বতন শতকের অবস্থান রূপের ব্যারিকেডের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর। লেনিন প্রতিষ্ঠা করেন নয়া, গোপন সংগঠণের প্রয়োজনীয়তা, যেহেতু বিপ্লবী ততপরতায় যাওয়া মানে হয়েছে পুলিশ কর্তৃক বৈধ সংগঠণ ভেঙে দেওয়া আর সেই পদক্ষেপ সম্ভব ছিল পুরোনো নেতাদের অতিক্রম করে, পুরোনো পার্টিকে অতিক্রম করে, তাকে ধ্বংস করে। পার্টিকে আধুনিক সৈন্যবাহিনীর উদাহারণ গ্রহণ করতে হবে তার নিজস্ব শৃংখলা, তার নিজ ঐক্যবদ্ধ ইচ্ছা সহকারে এবং নমনীয় হতে হবে।

চেয়ারম্যান মাও সেতুঙ সহকারে শ্রেণী বিপ্লবের তিন হাতিয়ারকে উপলব্ধি করেঃ পার্টি, বাহিনী ও যুক্তফ্রন্ট এক পরস্পর সম্পর্কিত উপায়ে। এভাবে এটা এক পশ্চাদপদ, আধা-সামন্তবাদী ও আধা-উপনিবেশিক দেশে গণযুদ্ধের পথে তিন হাতিয়ারে বিনির্মাণ সমাধান করে। মূর্তভাবে, এটা বন্দুককে ঘিরে পার্টি বিনির্মাণের ইস্যুকে সমাধা করে এবং এটা হচ্ছে সেই বীরযোদ্ধা যে তার নিজ বিনির্মাণ, বাহিনী ও ফ্রন্টকে নেতৃত্ব করে।

সভাপতি গনসালো কমিউনিস্ট পার্টিসমুহের সামরিকীকরণ ও তিন হাতিয়ারের সমকেন্দ্রিক বিনির্মাণ প্রতিষ্ঠা করেন। কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের সমারিকীকরণ হচ্ছে রণনৈতিক সারসমেত রাজনৈতিক নির্দেশনা যেহেতু এ হচ্ছে “সেই পরিবর্তন ও পুনসমন্বয়সমূহ যা প্রধান ধরনের সংগ্রাম হিসেবে গণযুদ্ধকে নেতৃত্ব করতে প্রয়োজনীয়, যা নয়া রাষ্ট্রকে জন্ম দেবে।” তাই, গণতান্ত্রিক বিপ্লব, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবসমূহের জন্য কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের সামরিকীকরণ হচ্ছে চাবিকাঠি।

তিনি বিনির্মাণের নীতিমালা সংজ্ঞায়িত করেনঃ “মতাদর্শিক-রাজনৈতিক ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে সাংগঠনিক রূপগুলিকে একইসাথে গড়ে তোলা শ্রেণীসংগ্রাম ও দুই লাইনের সংগ্রামের মধ্যে, এসবই সশস্ত্র সংগ্রাম এবং ক্ষমতা দখলের মধ্যে ও তার কার্যকরিতা দ্বারা।”

সেইসাথে, পিসিপি বিনির্মাণের সমগ্র প্রক্রিয়াকে গণযুদ্ধের গতিশীলতার সাথে যুক্ত করে চেয়ারম্যান মাওয়ের এই থিসিসের ওপর ভিত্তি করে যে “আমাদের সামরিক অপারেশনসমূহ এবং ভুখণ্ডগুলোর চলমানতা এক চলমান চরিত্রের ….সমেত বিনির্মাণের সকল কাজ যোগান দেয়।”

তাই, বিনির্মাণকে বুঝতে আমাদের সংগ্রামের রূপ ও সংগঠণের রূপ থেকে শুরু করতে হবে, শুরু করতে হবে বিনির্মাণের নীতি এবং আজকের দুনিয়ায় প্রধান ধরণের সংগ্রাম গণযুদ্ধের গতিশীলতার সাথে বিনির্মাণ থেকে।

১.   পাটি বিনির্মাণ সম্পর্কে

ক) পার্টির চরিত্র। আমরা নিজেদের মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারা, প্রধানত গনসালো চিন্তাধারায় দাঁড় করাই, সর্বহারা শ্রেণীর মতাদর্শের ওপর, মানবতার সর্বোচ্চ প্রকাশ, একমাত্র সত্য, বৈজ্ঞানিক ও অপরাজেয়। আমরা কমিউনিস্ট কর্মসুচির জন্য সংগ্রাম করি যার সার হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর সংগ্রামকে সংগঠিত করা ও নেতৃত্ব করা যাতে সে রাজনৈতিক ক্ষমতা জয় করতে পারে, গণতান্ত্রিক বিপ্লব, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও সাংস্কৃতি বিপ্লব চালাতে সাম্যবাদের পথে সেই অদোলায়মাণ লক্ষ্যে যেদিকে আমরা এগিয়ে চলি। ক্ষমতা দখলের জন্য শ্রেণীসংগ্রামের পরিচালক নিয়মের ওপর ভি্িত্ত করে বিপ্লবের সাধারণ রাজনৈতিক লাইন-এর ওপর আমরা নির্ভর করি, যে নীতি সভাপতি গনসালো প্রতিষ্ঠা করেছেন। পিসিপির রাজনৈতিক লাইনের পাঁচ উপাদান রয়েছেঃ

১। আন্তর্জাতিক লাইন;

২। গণতান্ত্রিক বিপ্লব;

৩। সামরিক লাইন;

৪। বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের লাইন-বিনির্মাণ; এবং

৫। গণ লাইন

সামরিক লাইন হচ্ছে রাজনৈতিক লাইনের কেন্দ্র । আমরা নিজেদের গড়ে তুলি সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদে যেহেতু আমরা আমাদের বিপ্লবকে ধারণ করি বিশ্বসর্বহারা বিপ্লবের অংশ হিসেবে। এবং আমরা বজায় রাখি মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক স্বাধীনতা আমাদের নিজস্ব প্রচেষ্টা এবং জনগণ কর্তৃক;

পিসিপি হচ্ছে এক নতুন ধরণের পার্টি যে পেরুভিয়ান বিপ্লবের নেতা সভাপতি গনসালোকে সৃষ্টি করেছে যিনি হচ্ছেন মহানতম জীবিত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী, যিনি পার্টিকে নেতৃত্ব করেন [‘পথের বাঁক’-এর পর (সেপ্টেম্বর, ১৯৯২-এর পর) কেন্দ্রিয় কমিটি পার্টি ও গণযুদ্ধকে নেতৃত্ব করে-ইংরেজী অনুবাদক], যা হচ্ছে বিপ্লবের বিজয়ের গ্যারান্টি এবং কমিউনিজমের দিকে এগিয়ে যাবে।

খ) কমিউনিস্ট পার্টির সামরিকীকরণ এবং সমকেন্দ্রিক বিনির্মাণ। সভাপতি গনসালো এই থিসিস প্রতিষ্ঠা করেন যে দুনিয়ার কমিউনিস্ট পার্টিসমূহকে নিজেদের তিনটি কারণে সামরিকীকরণ করতে হবেঃ

প্রথমত, যেহেতু আমরা বিশ্ববিপ্লবের রণনৈতিক আক্রমণে রয়েছি, পরবর্তী  ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর বুক থেকে সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়াকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করার মধ্যে বাস করি, একটা সময় যা সহিংসতা দ্বারা চিহ্নিত, যাতে সকল ধরণের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আমরা দেখি কীভাবে প্রতিক্রিয়া নিজেকে অধিক থেকে অধিকতর সামরিকীকৃত করে, পুরোনো রাষ্ট্রকে, তার অর্থনীতিকে সামরিকীকৃত করে, যুদ্ধ ও আগ্রাসন বিকাশ করে, জনগণের সংগ্রাম নিয়ে ব্যবসা করে এবং একটা বিশ্বযুদ্ধের লক্ষ্য থেকে যেহেতু বিপ্লবই হচ্ছে আজকের বিশ্বে প্রধান প্রবণতা, কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের কর্তব্য হচ্ছে বিপ্লবকে জাগিয়ে তোলা গণযুদ্ধকে প্রধান ধরণের সংগ্রাম হিসেবে বাস্তবায়িত করে বিশ্বপ্রতিবিপ্লবী যুদ্ধকে বিশ্ববিপ্লবী যুদ্ধ দ্বারা বিরোধিতা করে।

দ্বিতীয়ত, যেহেতু পুঁজিবাদী পুনরুত্থানকে অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে যখন বুর্জোয়ারা ক্ষমতা হারায় সে পার্টির ভেতরে পুনরায় আবির্ভুত হয়, সৈন্যবাহিনীকে ব্যবহার করে এবং সর্বহারা একনায়কত্বকে ধ্বংস করে পুঁজিবাদ পুনপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। তাই, কমিউনিস্ট পার্টিসমূহকে নিজেদের সামরিকীকৃত করতে হবে এবং তিন হাতিয়ারের সার্বিক একনায়কত্ব পরিচালনা করতে হবে, নিজেদের গণযুদ্ধের মধ্যে গড়তে হবে এবং জনগণের সশস্ত্র সংগঠণ গণমিলিশিয়ার ক্ষমতায়ণ করতে হবে, যাতে সৈন্যবাহিনীকে ঘিরে রাখা যায়। এই লক্ষ্যের দিকে, সভাপতি গনসালো আমাদের বলেন যে “সকল জঙ্গীদের কমিউনিস্ট হিসেবে গড়ে তুলুন, সর্বাগ্রে লড়াকু ও প্রশাসক হিসেবে”; একারণে প্রত্যেক জঙ্গীকে গণযুদ্ধের মধ্যে গড়ে তোলা হয় এবং পুঁজিবাদী পুনরুত্থানের যেকোন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হয়।

তৃতীয়ত, যেহেতু আমরা এক সামরিকীকৃত সমাজের দিকে এগিয়ে চলি। পার্টিকে সামরিকীকৃত করে সমাজের সামরিকীকরণের দিকে এক ধাপ অতিক্রম করি যা হচ্ছে সর্বহারা একনায়কত্বের নিশ্চয়তা বিধানের রণনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত। সামরিকীকৃত সমাজ হচ্ছে সশস্ত্র জনগণের সমুদ্র যার কথা মার্কস ও এঙ্গেলস বলেছেন যা দখলকৃত ক্ষমতার বজায় রাখা এবং রক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করে। আমরা চীন বিপ্লবের অভিজ্ঞতায় ইয়েনানে জাপবিরোধি ঘাঁটির উদাহারণ গ্রহণ করি, যা ছিল একটা সামরিকীকৃত সমাজ যেখানে সবকিছু বন্দুকের নল থেকে বেরিয়ে আসে, পার্টি, সৈন্যবাহিনী, রাষ্ট্র, নয়া রাজনীতি, নয়া অর্থনীতি, নয়া সংস্কৃতি। আর এভাবেই আমরা যুদ্ধ সাম্যবাদ গড়ে তুলি।

পিসিপির প্রথম জাতীয় সম্মেলন (নভেম্বর ১৯৭৯)-এ সভাপতি গনসালো প্রস্তাব করেন পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিপি)র সামরিকীকরণের প্রয়োজনীয়তার থিসিস; তারপর, ১৯৮০-এর প্রথম দিককার মাসগুলিতে যখন পার্টি গণযুদ্ধ পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তিনি এ্যাকশনের মাধ্যমে পার্টির সামরিকীকরণ বিকশিত করার প্রস্তাব করেন মহান লেনিনের এই কথার ওপর ভিত্তি করে যে অসামরিক কাজ কমিয়ে আনতে হবে, সামরিক কাজকে কেন্দ্র করতে হবে, শান্তির সময় শেষ হয়ে আসছে এবং আমরা যুদ্ধের কালে প্রবেশ করেছি যাতে সকল শক্তিসমূহকে সামরিকীকৃত করতে হবে। এভাবে পার্টিকে সবকিছুর অক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা, বাহিনীকে একে ঘিরে গড়ে তোলা এবং এই হাতিয়ারসমূহসমেত, গণযুদ্ধে জনগণসমেত উভয়ের ওপর ভিত্তি করে নয়া রাষ্ট্র গড়ে তোলা। পার্টির সামরিকীকরণ করা গেছে কেবল শ্রেণী সংগ্রামের মূর্ত এ্যাকশনসমূহ মারফত, মূর্ত সামরিক ধরণের এ্যাকশন মারফত, এর অর্থ এই নয় যে আমরা কেবল বহুবিধ ধরণের সামরিক এ্যাকশন চালাবো (গেরিলা এ্যাকশন, সাবোটাজ, বাছাইকৃত খতম, প্রচার ও সশস্ত্র মিছিল) বরং আমরা প্রধানভাবে এই ধরণসমূহ চালাবো যাতে শ্রেণীসংগ্রামে প্রণোদনা ও তাকে বিকশিত হতে সাহায্য করা যায়, বাস্তবতা থেকে গণযুদ্ধে প্রধান ধরণের সংগ্রাম হিসেবে এ জাতীয় এ্যাকশনসমূহ থেকে এর সংজ্ঞায়িতকরণে।

পার্টির সামরিকীকরণ লেনিন ও চেয়ারম্যান মাওয়ের উত্তরাধিকার, কিন্তু এটা হচ্ছে সভাপতি গনসালো কর্তৃক বিকশিত এক নয়া প্রশ্ন শ্রেণীসংগ্রামের নয়া পরিস্থিতিকে হিসেবে নিয়ে এবং আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে নয়া সমস্যাসমূহ উত্থিত হবে যাকে অভিজ্ঞতার দ্বারা সমাধা করতে হবে। এটা পুরাতন ও নতুনের মধ্যে সংগ্রামের একটা প্রক্রিয়া জন্ম দেবে তাকে আরো বিকশিত করতে, যুদ্ধকে দ্বন্দ্ব সমাধার উচ্চতম রূপ হিসেবে শাখাসমূহের ক্ষমতায়ন করে জনগণকে সমাধান খুঁজতে হবে। পার্টির সামরিকীকরণই আমাদের গণযুদ্ধকে সুচিত ও বিকশিত করতে সক্ষম করে তুলেছে এবং আমাদের বিবেচনায় এই অভিজ্ঞতার সার্বজনীন প্রযোজ্যতা রয়েছে, একারণে বিশ্বের কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের প্রয়োজন হচ্ছে নিজেদের সামরিকীকরণ করা।

তিন হাতিয়ারের সমকেন্দ্রিক বিনির্মাণ হচ্ছে পার্টির সামরিকীকরণের আঙ্গিক সম্পাদন এবং সংশ্লেষণে এটা সারসংক্ষেপিত হয়েছে যা সভাপতি গনসালো শিক্ষা দেন তাতেঃ “পার্টি হচ্ছে সবকিছর অক্ষ, এটা সমগ্রভাবে তিন হাতিয়ারকে নেতৃত্ব করে, এর নিজ বিনির্মাণ, পরমভাবে বাহিনীকে ও নয়া রাষ্ট্রকে পরিচালনা করে যৌথ একনায়কত্ব হিসেবে সর্বহারা একনায়কত্বের দিকে লক্ষ্য করে।”

গ) পার্টি বিনির্মাণের ছয়টি দিক

ক) মতাদর্শিক পুনর্গঠণ। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারা, প্রধানত গনসালো চিন্তাধারা সহকারে পার্টিঐক্যের ভিত্তিতে জঙ্গীত্ব গড়ে ওঠে। আমরা বলি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ কারণ এটা হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর সার্বজনীন মতাদর্শ, যে-শ্রেণী হচ্ছে ইতিহাসের সর্বশেষ শ্রেণী, একটা মতাদর্শ যা প্রতিটি বিপ্লবের মূর্ত পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে হবে এবং তার পথ নির্দেশক চিন্তাধারা সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের ক্ষেত্রে পেরুভিয়ান বিপ্লব গনসালো চিন্তাধারা সৃষ্টি করেছে কারণ সভাপতি গনসালো হচ্ছেন পেরুভিয়ান বিপ্লবের মূর্ত অনুশীলনের সাথে সার্বজনীন মতাদর্শের ফিউশনের সর্বোচ্চ প্রকাশ।

খ) রাজনৈতিক বিনির্মাণ। কর্মসুচি ও নীতিমালায় জঙ্গীত্ব প্রকাশিত হয়েছে এর কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে সাধারণ রাজনৈতিক লাইন ও সামরিক লাইন, মূর্ত লাইনসমূহ; সাধারণ কর্মনীতি, মূর্ত কর্মনীতিসমূহ এবং পার্টির সামরিক পরিকল্পনাসমূহ। রাজনীতিকে সর্বদাই কমান্ডে থাকতে হবে এবং এটাই আমাদের শক্তিশালি দিক।

গ) সাংগঠনিক বিনির্মাণ। সাংগঠনিক বিনির্মাণ রাজনৈতিক বিনির্মাণকে অনুসরণ করে এটা হিসেবে নিয়ে যে লাইন যথেষ্ট নয়, সাংগঠনিক কাঠামো, সাংগঠনিক ব্যবস্থা এবং পার্টি কাজকে হিসেবে নিয়ে সাংগঠনিক যন্ত্রকে যুগপত গড়ে তুলতে হবে। তার সাংগঠনিক কাঠামোতে পার্টি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতাভিত্তিক, প্রধানত কেন্দ্রিকতা ভিত্তিক। দুই পার্টি সশস্ত্র নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়, ভৌগলিক নেটওয়ার্ক যা ক্ষমতার এলাকা নিয়ে এবং চলমান নেটওয়ার্ক যার কাঠামো প্রয়োগ করা হয়। সাংগঠনিক ব্যবস্থা হচ্ছে যেখানেই বিপ্লব কাজ করছে তার প্রধান ও গৌণ স্থানসমূহে শক্তির বন্টন; পার্টি কাজ হচ্ছে গোপন কাজ-যা হচ্ছে প্রধান এবং প্রকাশ্য কাজের সম্পর্ক; পাঁচ প্রয়োজনের গুরুত্বঃ গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা, গোপনীয়তা, শৃংখলা, সতর্কতা এবং গোপন কাজ। এদের মধ্যে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা হচেছ সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ।

গ) নেতৃত্ব। আমরা পুর্ণ সচেতন যে ইতিহাসে কোন শ্রেণীই তার শাসন কায়েম করতে পারেনি যদিনা সে তার রাজনৈতিক নেতাদের গড়ে তোলে, তার অগ্র প্রতিনিধি, যারা আন্দোলন সংগঠিত করতে ও পরিচালনা করতে সক্ষম। পেরুভিয়ান সর্বহারা শ্রেণী শ্রেণীসংগ্রামের মধ্যে বিপ্লবী নেতৃত্ব ও তার সর্বোচ্চ প্রকাশ সৃষ্টি করেছেঃ সভাপতি গনসালোর নেতৃত্ব, যিনি বিপ্লবী তত্ত্ব পরিচালনা করেন এবং তার রয়েছে ইতিহাসের নির্দেশক (কমান্ডিং) জ্ঞান এবং বিপ্লবী অনুশীলনের গভীর উপলব্ধি; যিনি কঠিণ দুই লাইনের সংগ্রামের মধ্যে সংশোধনবাদকে পরাজিত করেছেন, ডান ও বাম বিলোপবাদকে, ডান সুবিধাবাদী লাইন ও ডানপন্থাকে।imagesgonzalored তিনি পার্টিকে পুনর্গঠণ করেন, একে গণযুদ্ধে পরিচালিত করেন, তিনি হচ্ছেন মহানতম জীবিত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী, এক মহান রাজনৈতিক ও সামরিক রণনীতিবিশারদ, এক দার্শনিক, কমিউনিস্টদের শিক্ষক, পার্টি ঐক্যের কেন্দ্র। প্রতিক্রিয়ার রয়েছে বিপ্লবকে ধ্বংস করার নীতিঃ এর নেতৃত্বকে খতম করা এবং গেরিলাদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। কিন্তু সংশ্লেষণে, এর সমস্যা হচ্ছে এর নেতৃত্বকে খতম করা, কারণ এটাই আমাদের পরিপ্রেক্ষিত বজায় রাখতে এবং আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম করে তোলে। আমাদের পার্টি সংজ্ঞায়িত করেছে যে নেতৃত্ব হচ্ছে চাবিকাঠি এবং সকল জঙ্গীর দায়িত্ব হচ্ছে পার্টির নেতৃত্বকে রক্ষায় অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়া, খুবই বিশেষত সভাপতি গনসালোর নেতৃত্বকে, আমাদের নেতা, আমাদের পার্টির ভেতরের ও বাইরের যেকোন আক্রমণ থেকে, এবং তার ব্যক্তিগত নেতৃত্ব ও কমান্ড মেনে চলা এই শ্লোগান তুলে ধরে যে “সভাপতি গনসালো থেকে শিক্ষা নিন” এবং গনসালো চিন্তাধারাকে আত্মস্থ করুন।”

আমরা যৌথ নেতৃত্ব এবং ব্যক্তি নেতৃত্বের ওপর নিজেদের ভিত্তি করি এবং নেতৃত্বদের ভুমিকা মনে রাখি এবং কীভাবে গণযুদ্ধের মাধ্যমে, নেতৃত্বের নবায়নের মাধ্যমে, বিপ্লবের দিশা সম্পাদিত হয় এবং নিজেকে ইস্পাতকরণ করে। আমরা এই নীতি মেনে চলি যে নেতৃত্ব কখনো মরেনা।

আমরা যারা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারা অনুসরণ করি সভাপতি গনসালোর অধীনে নিজেদের স্থাপন করি এবং গনসালো চিন্তাধারা আত্মস্থ করি।

ঙ) দুই লাইনের সংগ্রাম। পার্টি হচ্ছে একটা দ্বন্দ্ব যেখানে শ্রেণীসংগ্রাম ডান ও বামের মধ্যকার দুই লাইনের সংগ্রাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দুই লাইনের সংগ্রামই পার্টি বিকাশের চালিকাশক্তি, এর যথাযথ ও সঠিক পরিচালনা প্রয়োজন যাতে বাম নিজেকে আরোপ করতে পারে। আমরা আপোষকে লড়ি কারণ তা ডানকে শোভিত করে; পার্টির ভেতর সকলকে সমালোচনা ও আত্মসমালোচনা অনুশীলন করতে হবেঃ জঙ্গী, কেডার, নেতা, লড়াকু, জনগণকেও প্রত্যেককে এটা অনুশীলন করতে হবে, সংগ্রামের দর্শন গ্রহণ করে তারপর স্রোতের বিপরীতে গিয়ে, এটা মনে রেখে যে কেন্দ্রিয় কমিটি হচ্ছে ঝটিকা কেন্দ্র কারণ সেখানেই শ্রেণীসংগ্রাম সর্বাধিক ক্ষুরধার রূপে আবির্ভুত হয়। সভাপতি গনসালো দুই লাইনের সংগ্রামের ন্যায্য ও সঠিক পরিচালনা করেন তা পার্টি ঐক্য বজায় রাখতে এবং গণযুদ্ধকে আরো বিকশিত করতে সাহায্য করেছে। সাধারণভাবে, পার্টির জন্য প্রধান বিপদ হচ্ছে সংশোধনবাদ, যদিও পার্টি অভ্যন্তরে সে অব্যাহতভাবে ডানপন্থী বৈশিষ্ট, মত, দৃষ্টিভঙ্গী ও অবস্থানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলে জনগণের মধ্যে থেকে। পার্টি লাইনকে আরোপ করতে দুই লাইনের সংগ্রামকে সংগঠিত করা দরকার, একটা পরিকল্পনামাফিক সুসংগঠিতভাবে তাকে বিকশিত করা দরকার।

চ) গণকাজ। আমরা এই নীতি প্রয়োগ করিঃ “জনগণ ইতিহাস সৃষ্টি করে।” পার্টি গণসংগ্রামে ক্ষমতার কার্যকরণে চালিত করে যা হচ্ছে প্রধান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার [রিভিন্ডিকেশন(স্প্যানিশ)-ইং অনুবাদক]; মূল জনগণ, শ্রমিক ও কৃষকদের, প্রধানত গরীবদের, ক্ষুদে বুর্জোয়াদের ওপর ভিত্তি করে, পরিস্থিতি দাবী করলে মাঝারি বুর্জোয়াদের নিরপেক্ষ করে ও জয় করে আমরা গণ কাজ গড়ে তুলি গণযুদ্ধের মধ্যে ও গণযুদ্ধের জন্য। আমরা নিজেদের নিয়োযিত করি  জনগনের সাথে যুক্ত হওয়ার নিয়ম এবং “জনগণের গভীরতম মূলে এবং সর্বাধিক গভীরতম জনগনের মধ্যে যাওয়ার” একমাত্র মার্কসবাদী রণকৌশলের অধীনে এবং তাদেরকে বিপ্লবী সহিংসতায় এবং সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে অব্যাহত সংগ্রামে শিক্ষা দান করে। পার্টির গণকাজ গণবাহিনী মারফত করা হয় এবং জনগণকে সমাবেশিত করা হয়, রাজনীতিকরণ করা হয়, সংগঠিত করা হয় এবং সশস্ত্র করা হয় গ্রামাঞ্চলে নয়া ক্ষমতা রূপে এবং শহরাঞ্চলে গণরক্ষী বিপ্লবী আন্দোলন (এমআরডিপি) মারফত।

সংশ্লেষণে, সভাপতি গনসালোর নেতৃত্বেই আমাদের একটা নতুন ধরণের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী গনসালো চিন্তাধারা পার্টি রয়েছে যা গণযুদ্ধ পরিচালনা করে এবং বিশ্ববিপ্লবকে সেবা করে দেশব্যাপী ক্ষমতা দখলের পরিপ্রেক্ষিত খুলে দিয়েছে।

২. গণ গেরিলা বাহিনীর বিনির্মাণ

ক) বাহিনীর চরিত্র। গন গেরিলা বাহিনী [১৯৯১ সাল থেকে এটা গণ মুক্তি বাহিনীতে বিকশিত হয়েছে-ইং অনুবাদক]  হচ্ছে এক নতুন ধরণের বাহিনী যা পার্টি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবের রাজনৈতিক করণীয়সমূহ সম্পাদন করে। এটা এই মাওবাদী  নীতি প্রয়োগ করেঃ “পার্টি বন্দুককে শাসন করে এবং আমরা কখনোই অনুমোদন দেবনা বন্দুককে পার্টিকে শাসন করতে।” এটা তিন কর্তব্য সম্পাদন করেঃ

লড়াই করা, যা হচ্ছে প্রধান কাজ, যেহেতু তা প্রধান ধরণের সংগঠণের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ।

সংগঠিত করা, যা হচ্ছে খুবই গুরুত্বপুর্ণ, যার দ্বারা পার্টির গন কাজ সম্পাদিত হয়, জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত করে, জনগণকে সমাবেশিত, সংগঠিত ও সশস্ত্র করে।

উতপাদন করা, আত্মনির্ভরশীলতার নীতি প্রয়োগ করা, জনগণের বোঝা না হতে চেষ্টা করা।

মৌলিকভাবে এটা হচ্ছে কৃষকদের বাহিনী, পরমভাবে পার্টির নেতৃত্বে। সভাপতি গনসালো আমাদের শিক্ষা দেনঃ “গণ গেরিলা বাহিনীর ইস্পাত কঠিণ সৈনিকেরা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, পথনির্দেশক চিন্তাধারার ওপর টিকে থাকে যা হচ্ছে তার অপরাজেয়তার ভিত্তি, এবং যারা কঠোর জীবন, আত্মত্যাগ এবং মৃত্যুর চ্যালেঞ্জের মধ্যে গড়ে ওঠে যা তাদের বিপ্লবী বীরত্বে উন্নীত করে।”

খ) গন গেরিলা বাহিনী। মার্কস প্রতিষ্ঠা করেন যে সর্বহারা শ্রেণীর তার নিজ সৈন্যবাহিনী প্রয়োজন এবং জনগণের সাধারণ সশস্ত্রকরণ থিসিস। লেনিন লাল ফৌজ সৃষ্টি করেন এবং গণমিলিশিয়ার থিসিস প্রতিষ্ঠা করেন যাহচ্ছে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের কার্যকরিতাসহ। চেয়ারম্যান মাও জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের সহকারে বিপ্লবী বাহিনী নির্মাণ বিকশিত করেন। গণযুদ্ধ তার গণ চরিত্র বাস্তবায়ন করে তিন বিরাট সমন্বয়ের মধ্যে।

এই মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী থিসিসসমূহের ওপর ভিত্তি করে এবং পেরুর গণযুদ্ধের বিশেষ পরিস্থিতিকে হিসেবে নিয়ে সভাপতি গনসালো গণ গেরিলা বাহিনী গঠণের প্রস্তাব করেন। যুদ্ধের প্রস্তুতি থেকে সভাপতি গনসালো গণযুদ্ধ পরিচালনা করতে, শত্রুকে পরাজিত করতে এবং নয়া রাষ্ট্র গঠণ করতে প্রধান ধরণের সংগঠণ গড়ার প্রয়োজনীয়তা ধারণ করেন। ডিসেম্বর ৩, ১৯৭৯-এ ঐকমত্য হয় ১৯৮০তে “লাল ফৌজের প্রথম ডিভিশনের প্রথম কোম্পানী” গঠণের, ১৯৮০তে সূচনার দ্বারা প্লাটুন ও ডিটাচমেন্ট বাস্তবায়িত হয় এবং আমরা প্রস্তাব করি নিজেদের অসংগঠিত জনগণ থেকে সামরিকভাবে সংগঠিত জনগণে রূপান্তরে।

১৯৮৩তে বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী নির্মাণে এক উলম্ফণ প্রদানের আমাদের প্রয়োজন হয়, আমাদের গণ মিলিশিয়ায় বৃহত বৃদ্ধি ঘটে যা দেখায় জনগণ কতটা লড়াই করতে চান; পাশাপাশি সেবছর প্রতিক্রিয়াশিল বাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। এভাবে মার্চ, ১৯৮৩তে বর্ধিত কেন্দিয় কমিটির সভায় (সিসিএ) সভাপতি গনসালো গণ গেরিলা বাহিনীর বাস্তবায়ন প্রস্তাব করেন। কেন বাহিনী? কারণ শত্রুকে মোকাবেলা ও গণযুদ্ধের বিকাশের জন্য এটা ছিল একটা রাজনৈতিক প্রয়োজন। সমগ্র পার্টি এভাবে একমত হলো দ্ইু লাইনের সংগ্রামের মধ্যে দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে যে কিনা বাহিনীতে মিলিশিয়া অন্তর্ভুক্তকরণ বিরোধিতা করেছিল। কেন গেরিলা? কারণ এটা “গেরিলা যুদ্ধকে বিকশিতকরণ” মাইলফলকে গেরিলা যুদ্ধ প্রয়োগ করে; এটা নিয়মতি বাহিনী নয় বরং এক গেরিলা বাহিনী এবং তার বৈশিষ্ট তাকে সক্ষম করে তোলে প্রয়োজন হলে নিয়মিত বাহিনী ধরণে নিজেকে বিকশিত করতে। কেন গণ? কারণ এটা ব্যাপক জনগণের দ্বারা গঠিত, কৃষকদের, বিশেষত গরীবদের দ্বারা; তারা জনগণকে সেবা করে, কারণ তারা জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। একটা খুবই গুরুত্বপুর্ণ পরিস্থিতি হচ্ছে কীভাবে সভাপতি গনসালো গণ গেরিলা বাহিনীকে আত্মস্থ করেন গণ মিলিশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে যা তিনটি বাহিনী নিয়ে গঠিতঃ প্রধান, স্থানীয় ও ভিত্তি বাহিনী যারা প্রধানতঃ গ্রামাঞ্চলে কাজ করে শহরকে পরিপুরক হিসেবে নিয়ে; সেটা হচ্ছে সশস্ত্র জনগণের সমুদ্রের দিকে এক বিরাট পদক্ষেপ।

গ) গণ গেরিলা বাহিনীর বিনির্মাণ। বাহিনীর চরিত্র যোদ্ধাদের ওপর ভিত্তি করে, অস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে নয়; আমাদের বাহিনী কৃষকদের নিয়ে, প্রধানত গরীব কৃষকদের নিয়ে, সর্বহারা এবং ক্ষুদে বুর্জোয়াদের নিয়ে, সে শত্রুর কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয় এবং সকল ধরণের মৌলিক অস্ত্র প্রয়োগ করে। আমাদের শ্লোগান হচ্ছে শত্রুর কাছ থেকে “অস্ত্র দখল করা” তার জন্য যত মূল্যই দিতে হোক। গণ বাহিনীর গঠণকে তার বিনির্মাণ থেকে অবশ্যই পার্থক্যকরণ করতে হবে।

ঘ) মতাদর্শিক-রাজনৈতিক বিনির্মাণ হচ্ছে প্রধান, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারাকে ভিত্তি করে। পার্টির রাজনৈতিক ও সামরিক ধারণায়, তার সকল রাজনৈতিক ও গণ কাজ পার্টির নেতৃত্বে প্রযুক্ত হয়। সৈন্যবাহিনীর সকল স্তরে পার্টিকে সংগঠিত করা হয়, দ্বৈত কমান্ড প্রয়োগ করা হয়ঃ রাজনৈতিক ও সামরিক, এবং দুই লাইনের সংগ্রাম বিকশিত হয় সর্বহারা সামরিক লাইন এবং বুর্জোয়া সামরিক লাইনের মধ্যে। সেইসাথে, বিপ্লবী বাহিনীর তিনটি বিভাগ গঠণ করতে হয়ঃ রাজনৈতিক, সামরিক ও লজিস্টিকাল।

ঙ) সামরিক বিনির্মাণ হচ্ছে গুরুত্বপুর্ণ। গণযুদ্ধের তত্ত্ব এবং অনুশীলন দ্বারা এবং সামরিক লাইন ও পার্টির সামরিক পরিকল্পনাসমূহের দ্বারা সজ্জিত হয়ে এটা গ্রামাঞ্চলে প্লাটুন, কোম্পানী এবং ব্যাটেলিয়নে সংগঠিত হয় এবং বিশেষ ডিটাচমেন্ট এবং গণ মিলিশিয়া হিসেবে শহরে সংগঠিত হয়। বিনির্মাণ দুই লাইনের সংগ্রামকে ভিত্তি করেও। তিন প্রধান বাহিনীঃ প্রধান, স্থানীয় এবং ভিত্তি স্তরে নয়া রাষ্ট্রকে সমর্থনের বিশেষ ভুমিকা সম্পাদন করে। “কোম্পানী বিকশিত করো, ব্যাটেলিয়নকে লক্ষ্য করে প্লাটুন শক্তিশালি করো!” এখনো একটা প্রযোজ্য শ্লোগান।

চ) নির্দেশনা হচ্ছে প্রয়োজনীয় এবং অপরিহার্য। এটা যুদ্ধ প্রস্তুতিকে বাড়ানোর লক্ষ্যে; পরীক্ষা চালানো হচ্ছে এড়ানোর অযোগ্য এবং কমান্ডের সক্ষমতা হচ্ছে এ্যাকশনের চাবিকাঠি। নির্দেশনা সংগ্রামের ধরণকে বিশেষায়িত ও উন্নীত করে। সাহসের সংগঠণের এক শ্রেণী চরিত্র রয়েছে এবং এটা যুদ্ধ প্রস্তুতিকে শক্তিশালি করে এবং তা লড়া হয় পরম নিঃস্বার্থপরতা থেকে এবং তা আমাদের লক্ষ্যের ন্যায্যতায় সম্পুর্নত আশ্বস্ত।

সংশ্লেষণে, সভাপতি গনসালো গণ গেরিলা বাহিনী সৃষ্টি করেছেন, নতুন এক বাহিনী, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারার ভিত্তিতে তিনি এর বিনির্মাণের লাইন প্রতিষ্ঠা করেছেন যাতে সে তার বিপ্লবের মূর্ত করণীয়সমূহ সম্পাদন করতে পারে। এটা বিশ্বের সামনে একটা উদাহারণ এবং বিশ্ব বিপ্লবকে সেবা করে।

৩. নয়া রাষ্ট্রের বিনির্মাণ সম্পর্কে

ক) নয়া রাষ্ট্রের চরিত্র। ক্ষমতা হচ্ছে বিপ্লবের কেন্দ্রিয় কর্তব্য এবং ফ্রন্ট হচ্ছে তৃতিয় হাতিয়ার। চেয়ারম্যান মাওয়ের পাণ্ডিত্যপুর্ণ থিসিস “নয়া গণতন্ত্র সম্পর্কে” প্রয়োগ করে সভাপতি গনসালো যৌথ একনায়কত্বের আমাদের ধারণা শিক্ষা দেন যা নয়া গণতন্ত্রের গণ প্রজাতন্ত্র বাস্তবায়ন করে।

রাষ্ট্র-ফ্রন্ট সম্পর্ক থেকে যাত্রা করে জনগণের আত্মরক্ষার বিপ্লবী ফ্রন্ট বাস্তবায়িত হয় যা গ্রামাঞ্চলে গণ কমিটিতে শুরু হয় আর শহরে তা হচ্ছে স্রেফ গণ আত্মরক্ষী বিপ্লবী আন্দোলন (এমআরডিপি)। আমরা গ্রামাঞ্চলে নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ করি ক্ষমতা দেশব্যাপী সম্প্রসারিত না হওয়া পর্যন্ত।

একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা হিসেবে, পার্টির প্রতিনিধিত্বে সর্বহারাশ্রেণীর একনায়কত্বধীনে এটা হচ্ছে শ্রমিক, কৃষক, প্রধানত গরীব কৃষক এবং ক্ষুদে বুর্জোয়াদের যৌথ একনায়কত্ব যা মাঝারি বুর্জোয়াদের স্বার্থকে সম্মান করে আর গণ প্রতিনিধি সভা (এসেম্বলী)র মাধ্যমে প্রযুক্ত ও কার্যকর হয়।

খ) নয়া রাষ্ট্র এবং যুদ্ধের গতিশীলতা। নয়া রাষ্ট্রের বিনির্মাণ গণযুদ্ধের গতিশীলতাকে অনুসরণ করে, এটা সম্প্রসারিত অথবা সংকুচিত হতে সক্ষম, কোথাও অদৃশ্য হয় আবার কোথাও আবির্ভুত হয়। এটা গতিশীল। যেমনটা চেয়ারম্যান মাও আমাদের শিক্ষা দেনঃ শ্রমিক ও কৃষকের আমাদের গণ প্রজাতন্ত্র হচ্ছে একটা রাষ্ট্র; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুর্ণ আক্ষরিক অর্থে তা নয়…আমাদের ক্ষমতা এখনো রাষ্ট্রের পুর্ণ রূপ হওয়া থেকে অনেক দুরে…আমাদের ভুখণ্ড এখনো খুবই ছোট আর শত্রু অব্যাহতভাবে আমাদের ধ্বংসের স্বপ্ন দেখে।”

ঘাঁটি এলাকা, গেরিলা জোন, অপারেশন জোন এবং এ্যাকশন ক্ষেত্রগুলোর ব্যবস্থাকে সর্বদাকে মনে রাখুন, কারণ এগুলো সেই পরিবেশ সৃষ্টি করে যাতে নয়া রাষ্ট্র গড়ে ওঠে এবং তাহচ্ছে রণনৈতিক ধারা বজায় রাখার চাবিকাঠি, এই পরিবেশের মধ্যে পার্টির নেতৃত্বের অধীনে তার মেরুদন্ড হিসেবে গণ গেরিলা বাহিনী এগিয়ে চলে।

গ) নয়া রাষ্ট্রের বিনির্মাণ। “গণ কমিটিসমূহকে শক্তিশালি করতে ঘাঁটি এলাকাসমূহকে বিকশিত করুন এবং নয়া গণতন্ত্রের গণ প্রজাতন্ত্রের এগিয়ে চলায় অবদান রাখুন!” এটাই হচ্ছে সেই শ্লোগান যা এর বিনির্মাণের পথ নির্দেশ করে।

আমরা সর্বহারা শ্রেণীর এবং জনগণের ক্ষমতার জন্য সংগ্রাম করি, ব্যক্তিগত ক্ষমতার জন্য নয়। আমরা ভ্রাম্যমাণতা ও ঘাঁটি এলাকাকে পাশে সরিয়ে রাখার বিরোধি।

নয়া রাষ্ট্র গণযুদ্ধের মধ্যে নির্মাণ করা হয় এবং একটা মূর্ত বিকাশের প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করে, আমাদের ক্ষেত্রে প্রথমে গ্রামাঞ্চলে নির্মাণ করা হয় শহরগুলো দখল এবং সারাদেশে একে বাস্তবায়ন করার আগ পর্যন্ত। এটা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া যাতে পুরোনো রাষ্ট্রের ক্ষয় চলে এবং পুরোনো রাষ্ট্র-নয়া রাষ্ট্র দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয়, যা প্রতিক্রিয়ার সকল রাজনৈতিক ও সামরিক পরিকল্পনার ব্যর্থতা ডেকে আনে এবং জনগণকে সংগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করে।

১৯৭৯-এর নভেম্বরে পিসিপির বর্ধিত জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি গনসালো চেয়ারম্যান মাওয়ের তত্ত্ব প্রয়োগ করে ফ্রন্ট-নয়া রাষ্ট্র সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। এপ্রিল, ১৯৮০-এর প্রথম সামরিক স্কুলে তিনি আমাদের বলেনঃ “…আমাদের মনে, আমাদের হৃদয়ে, আমাদের ইচ্ছায় গণ ক্ষমতা অঙ্গীভূত হয়, আমরা নিজেরাই এটা পরিচালনা করি…কমরেডগণ, আমরা যেন গণক্ষমতা ভুলে না যাই, শ্রমিক শ্রেণীর রাষ্ট্র ভুলে না যাই, শ্রমিক ও কৃষকদের রাষ্ট্র আমাদের মধ্যে অগ্রসর হয়, আমরা আমাদের রাইফেলের ডগায় এটা বহন করি, এটা আমাদের মনে বাসা বেঁধে থাকে, এটা আমাদের হাতে স্পন্দিত হয় আর আমাদের হৃদয়ে জাগরুক হয়ে আমাদের সাথেই থাকবে। এটা যেন আমরা ভূলে না যাই, এটা হচ্ছে সর্বপ্রথম জিনিস যা আমাদের মনে রাখতে হবে। কমরেডগণ, এটা নরম ও দুর্বল জন্ম নেবে যেহেতু নতুন কিন্তু পরিণতিতে তা বৈচিত্র ও নমনীয়তার মধ্য দিকে বিকশিত হবে একটা কচি চারাগাছের মতো। শুরুতে আমরা যে মূল যোগান দেই তা একটা স্বাস্থ্যবাণ ও সতেজ রাষ্ট্রের ভবিষ্যতে পরিণত হোক। কমরেডগণ, সর্বাধিক বিনীত ও সরল এ্যাকশনসমূহ থেকে সবকিছু জন্ম নেবে যা আগামীকাল আমরা শুরু করতে যাচ্ছি।” ১৯৮০তে বন্টন কমিটি জন্ম নিল যা হচ্ছে নতুন রাষ্ট্রের ভ্রুণ, ১৯৮২তে প্রথম গণকমিটি উদ্ভূত হলো যা বছর শেষে বহুগুণ হলে প্রতিক্রিয়াকে গণযুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দানে বাধ্য করে, যেহেতু প্রতিক্রিয়াশীলরা নিজেরাই সন্ত্রস্থ হয়েছিল। ১৯৮৩তে আমরা ঘাঁটি জয় করার বিরাট পরিকল্পনায় একমত হলাম, যার অন্যতম কর্তব্য ছিল নয়া গণতন্ত্রের গনপ্রজাতন্ত্রের সাংগঠনিক কমিটি গঠণ করা। সেখান থেকে শুরু করে আমরা শত্রু কর্তৃক পুরোনো ক্ষমতার পাল্টাপুনপ্রতিষ্ঠা এবং নয়া ক্ষমতার পুনপ্রতিষ্ঠার মধ্যে সংগ্রাম অনুসরণ করেছি আত্মরক্ষা, বিকাশ এবং বিনির্মাণ প্রয়োগ করে।

এভাবে রক্তস্নাত পথের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে গণ কমিটি বিকশিত হয়, এটা শত্রুর সাথে যুদ্ধের মধ্যে ইস্পাত কঠিণ হয় যাতে কৃষক জনগণের, যোদ্ধাদের ও জঙ্গীদের ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরেছে।

মার্চ ১৯৮৩তে বর্ধিত কেন্দ্রিয় কমিটিতে সভাপতি গনসালো ফ্রন্ট-নয়া রাষ্ট্রের বিনির্মাণের লাইনের আরো বিকাশ করেন। তিনি সেই স্তর প্রস্তাব করেন যাতে নয়া রাষ্ট্র সংগঠিত হচ্ছেঃ গণ কমিটি, ঘাঁটি এলাকা ও নয়া গণতন্ত্রের গণ প্রজাতন্ত্র। ঘাঁটি এলাকার এবং নয়া গণতন্ত্রের সাংগঠনিক কমিটির কার্যকরিতা হচ্ছে নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও সংগঠণের কার্যকরিতা এবং প্রতিটি ঘাঁটিকে তার নিজস্ব পরিকল্পনা বিশদ করতে হবে।

তিনি প্রতিষ্ঠা করেন যে গণ কমিটিসমূহ হচ্ছে নয়া রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন, তারা হচ্ছে যুক্ত ফ্রন্টের কমিটি; কমিশারদের নেতৃত্বে যারা কমিশনিংয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্র কার্যকর করে, তারা প্রতিনিধি সভা কর্তৃক নির্বাচিত এবং অপসারণের অধীন। তারা, এখন পর্যন্ত গোপন [১৯৯১তে প্রকাশ্য গণকমিটিসমূহ আবির্ভূত হয়-ইংরেজী অনুবাদক], তারা কমিশনে এগিয়ে যায় পার্টির নেতৃত্বে “তিন তৃতিয়াংশ” নিয়ম প্রয়োগ করে; তাদের এক তৃতিয়াংশ হচ্ছে কমিউনিস্ট, এক তৃতিয়াংশ কৃষক এবং এক তৃতিয়াংশ হচ্ছে প্রগতিশীল, এবং তারা বাহিনী কর্তৃক টিকে থাকে। তারা জনগণের একনায়কত্ব, আইন প্রয়োগ ও নিরাপত্তা পরিচালনা করে। বিপ্লবী সহিংসতাকে দৃঢ়ভাবে অনুশীলন করে যাতে গণক্ষমতাকে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে রক্ষা করা যায় এবং জনগণের অধিকারকে রক্ষা করা যায়।

গণকমিটিসমূহের এবং ঘাঁটি এলাকাসমূহের সারি হ্েচছ সেই রিং যা নয়া গণতন্ত্রের গণপ্রজাতন্ত্রকে সশস্ত্র করে, যা এখন গঠিত হচ্ছে। আমরা ঘাঁটি জয় করা থেকে ঘাঁটি বিকশিতকরণে গিয়েছি যা হচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক রণনীতি। আমাদেরকে অধিক থেকে অধিকতর নয়া ক্ষমতাকে বপন করতে হবে যার জন্য আমাদের পাঁচটি প্রতিষ্ঠিত ধরণ প্রয়োগ করতে হবে, বিশেষত আজকে যখন পরিস্থিতি দেশব্যাপী ক্ষমতা দখলের পরিপ্রেক্ষিতের দিকে নির্দেশ করছে।

সংশ্লেষণে, সভাপতি গনসালো নয়া রাষ্ট্রের বিনির্মাণের লাইন প্রতিষ্ঠা করেন যাতে দুই প্রজাতন্ত্র, দুই পথ, দুই অক্ষ পরস্পর মোকাবেলারত। আমরা উতপাদনের নয়া সামাজিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হয়েছি এবং নয়া গণতন্ত্রের গণপ্রজাতন্ত্র যা এখন গঠিত হচ্ছে তা পুরোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক ঝলক দিচ্ছে এবং সার্বিক ক্ষমতা দখলের পরিপ্রেক্ষিত খুলে দিচ্ছে। এই উদাহারণ বিশ্বের বিপ্লবীদের বিশেষত আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীকে উতসাহিত করে।

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারার অনুসারী হিসেবে আমরা বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের বিনির্মাণের লাইন ধারণ করি, পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি, সংগঠণের সর্বোচ্চ রূপ এবং প্রথম রাজনৈতিক সমাজ; গণ গেরিলা বাহিনীকে যা হচ্ছে প্রধান ধরণের সংগঠণ; এবং ফ্রন্ট-নয়া রাষ্ট্রকে যা হচ্ছে বিপ্লবের কেন্দ্রিয় কর্তব্য। এগুলো হচ্ছে সেই হাতিয়ারসমূহ নির্মাণ করা যা হচ্ছে আমাদের দেশে গণযুদ্ধের লড়াইয়ের উত্তাপের মধ্যে; প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনী কর্তৃক ঝরানো আমাদের এক নদী রক্ত পেড়িয়ে যাতে প্রচণ্ড বীরত্ব সহকারে কমিউনিস্ট, যোদ্ধা ও জনগণ জীবন দান করেন সভাপতি গনসালো কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সঠিক রাজনৈতিক লাইন প্রতিষ্ঠা করতে এবং যারা বেঁচে থাকবেন তারা এই পতাকাকে অব্যাহতভাবে বহন করবেন আমাদের লক্ষ্য সাম্যবাদের সেবায়।

পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির সামরিকীকরণ জিন্দাবাদ!

গণ গেরিলা বাহিনী জিন্দাবাদ!

বর্তমানে গঠনরত নয়া গণতন্ত্রের গণ প্রজাতন্ত্র জিন্দাবাদ!

তিন হাতিয়ারের সমকেন্দ্রিক বিনির্মাণের জন্য!

 

 

গণলাইন

 

– পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি

 poster_conf_mad_2012_en_sm

সুচনা

­­­­মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে, রক্ষা করে এবং প্রয়োগ করে সভাপতি গনসালো পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিপি)র গণলাইন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর থিসিস এই সর্বহারা ধারণায় নিজেকে পুননিশ্চিত করে যে জনগণের সমস্যাকে সঠিকভাবে আমাদের অবশ্যই মূল্যায়ণ করতে হবে। তিনি গণযুদ্ধের পথে ক্ষমতার জন্য সংগ্রামে জনগনের পালিত রাজনৈতিক ভুমিকা এবং উন্নততর জীবনের জন্য তাদের সংগ্রামের রূপরেখা প্রদান করেন যা অতি অবশ্যই এই লক্ষ্যকে সেবা করবে। আমাদের অবশ্যই প্রধানভাবে মূল জনগণের কাছে, শ্রমিক ও কৃষকদের কাছে যেতে হবে এবং যেতে হবে তাদের নির্দিষ্ট দাবীদাওয়ার ভিত্তিতে সংগ্রামের বহু ফ্রন্টে। একমাত্র মার্কসবাদী রনকৌশল হচ্ছে জনগণের গভীরতম মূলে এবং গভীরতম জনগণের মধ্যে যাওয়া, তাদের বিপ্লবী সহিংসতা এবং সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে শিক্ষা দেওয়া। পার্টির যে গণকাজ গণযুদ্ধকে পরিচালনা করে তা গণবাহিনী কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়। তিনি পার্টি সৃষ্ট সংগঠনিক কাঠামোসমূহের গুরুত্বের দিকে নির্দেশ করেন জনগণকে সংগঠিত করার অন্যতম রূপ হিসেবে। তাদেরকে গণ কাজ করতে হবে গণযুদ্ধের ভেতর এবং গণযুদ্ধের জন্য।

১.   “জনগণ ইতিহাস সৃষ্টি করেন নীতি পুনঃনিশ্চিতকরণ

সভাপতি গনসালো শক্তিশালি মার্কসবাদী এই নীতিতে নিজেকে পুনঃনিশ্চিত করেন যে “জনগণ ইতিহাস সৃষ্টি করেন।” স্বতন্ত্র ব্যক্তিকে ইতিহাসের অক্ষ মনে করে যে বুর্জোয়া ধারণা তার বিরুদ্ধে সংগ্রামে এটা আমাদের কমিউনিস্ট ধারণা গড়ে তোলে। সভাপতি গনসালো বলেনঃ “জনগণ হচ্ছেন বিশ্বের আলোকসত্ত্বা… তারা হচ্ছেন তার প্রাণসূত্র, ইতিহাসের অক্লান্ত হৃতস্পন্দন… যখন তাদের মুখে ভাষা ফোঁটে সবকিছু কেঁপে ওঠে, পুরোনে শাসন কেঁপে ওঠে, উচ্চতম শিখর অবনত হয়, নক্ষত্রেরা তাদের পথ বদলায় কারণ জনগণ সবকিছু সম্ভব করে তোলে আর তারা সবকিছু করতে সক্ষম।”

আজকে এই পুনঃনিশ্চিতকরণের রয়েছে বিরাট গুরুত্ব কারণ এটা সর্বহারা ধারণার অংশ। এটা গণ লাইনকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে আর তা সবকিছুতে প্রযোজ্য। আন্তর্জাতিক প্রশ্নসমূহ থেকে মূর্ত নির্দিষ্ট কর্মনীতি পর্যন্ত সবকিছুর বিচারকে গণলাইন অনুমোদন করে কারণ এটা একটা মতাদর্শিক প্রশ্ন। কোন ঐতিহাসিক ঘটনা, কোন রূপান্তরকারী আন্দোলন, কোন বিপ্লবই জনগণের অংশগ্রহণ ব্যাতিরেকে সম্ভব নয়। পার্টি এই নীতিকে প্রয়োগ করে কারণ তার রয়েছে গণ চরিত্র এবং সে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেনা, অন্যথায় সে নিথর অথবা শক্তিহীন হয়ে পড়বে। জনগণকে তাদের সংগ্রামের পথের নিশ্চয়তার জন্য পার্টির নেতৃত্বে চলতে হবে। পার্টির রয়েছে জনগণঃ জঙ্গীগণ, যাদের কমিউনিস্ট হিসেবে আবশ্যিকভাবে এই নীতিকে ধারণ করতে হবে এবং অব্যাহতভাবে সংগ্রাম করতে হবে পঁচা ব্যক্তি স্বতন্ত্রবাদকে উচ্ছেদে যা সর্বহারা ধারণা নয়। লক্ষ্য করা দরকার কীভাবে গণযুদ্ধের প্রক্রিয়া এই রূপান্তরের প্রতি বৈচারিক। অধিকন্তু, নেতৃত্বের একটা নীতি হচ্ছে “জনগণ থেকে আসা আর জনগণের মধ্যে যাওয়া”। এটা গণযুদ্ধেও প্রযোজ্য হয় কারণ এটা একটা জনসাধারণের যুদ্ধ যারা খোদ এর উতস। এই মার্কসবাদী ধারণা সহকারেই আমরা গণযুদ্ধ গড়ে তুলি।

তিনি নির্দিষ্টত ইতিহাসের নির্মাতা হিসেবে জনগণের বিদ্রোহে গুরুত্বারোপ করেন। সভাপতি গনসালো বলেনঃ “প্রাচীন কাল থেকে জনগণ নিপীড়ণ ও শোষণের শিকার হয়ে রয়েছেন, কিন্তু তারা সর্বদাই বিদ্রোহ করেছেন। এটা এক দীর্ঘ ও অক্লান্ত ইতিহাস… যখনই জনগন লড়েছেন তারা খুঁজে ফিরেছেন তাদের বিদ্রোহের সংগঠিতকরণ, সশ্রস্ত্রকরণ ও উত্থান, যাতে একে নেৃতত্ব করা হয়, একে পরিচালিত করা হয়। সর্বদাই এরকম ছিল এবং সর্বদাই তা থাকবে। এমনকি এরপর অন্য কোন পৃথিবী আসলেও এভাবেই হবে কেবল তার ধরণ হবে ভিন্ন।” “বিদ্রোহ সংঘটিতকরণে জনগণ বিস্ফোরিত হয়। তাই পার্টি, তার নেতৃত্ব, ক্যাডার ও জঙ্গীদের আজকে এক পরম কর্তব্য রয়েছে, এক নিয়তিঃ জনগণের অসংগঠিত ক্ষমতাকে সংগঠিত করা আর তা কেবল অস্ত্র হাতেই করা সম্ভব। আমাদের অবশ্যই জনগণকে সশস্ত্র করতে হবে একটু একটু করে, অংশে অংশে জনগণের সাধারণ সশস্ত্রকরণ না হওয়া অবধি। যখন এই লক্ষ্য অর্জিত হবে, পৃথিবীতে কোন শোষণ থাকবেনা।”

এখানে তিনি জনগণের ওপর পরম আস্থা ব্যক্ত করেন, বিদ্রোহ করায় তাদের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক আবশ্যিকতায়, তাদের সশস্ত্রকরণের লক্ষ্যে এবং সেইসাথে তাদের পরিচালিত ও সংগঠিত করার তাদের দাবীতে। তিনি কমিউনিস্ট পার্টিসমূহকে এই দাবী পুরণ করার আহবান জানান যা মার্কস ও এঙ্গেলস থেকে আসে যারা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে পৃথিবীতে দুই শক্তি রয়েছেঃ প্রতিক্রিয়াশিলদের বাহিনী এবং অসংগঠিত জনগণ। সভাপতি গনসালো প্রস্তাব করেন যে আমরা যদি এই শক্তিকে সংগঠিত করি, যা কেবল একটা বিভব তা ক্রিয়ারত হবে এবং যা কেবল সম্ভাবনা তা বাস্তবায়িত হবে। যদি  জনগণের ওপর ভিত্তি করে না হয় সবকিছু হচ্ছে তাসের ঘর। মূর্তভাবে, সমস্যা হচ্ছে অসংগঠিত জনগণের অবস্থা থেকে সামরিকভাবে সংগঠিত জনগণের দিকে যাওয়া।

আমাদের জনগণকে সশস্ত্রভাবে সংগঠিত করতে হবে যেহেতু তারা বিদ্রোহে বিস্ফোরিত হন। সেহেতু আমাদের প্রধান ধরণের সংগ্রাম গণযুদ্ধকে প্রয়োগ করতে হবে এবং পার্টির পরিচালনাধীনে তাদেরকে ক্ষমতা দখলে সংগঠিত করতে হবে। পরিষ্কারভাবে এটা আজকের দুনিয়ার প্রধান দ্বন্দ্বের সাথে বাঁধা, বিশ্ববিপ্লবের রণনৈতিক আক্রমণের সাথে এবং আজকের দুনিয়ার প্রধান প্রবণতা বিপ্লবের সাথে বাঁধা। যেমনটা মার্কস ইঙ্গিত করেছেন, গণলাইন বিপ্লবের বিজয়ের নিশ্চয়তাবিধানের এবং পুঁজিবাদী পুনরুত্থানের প্রতিরোধের লক্ষ্য সমেত জনগণের সাধারণ সশস্ত্রকরণের দিকে লক্ষ্যযুক্ত। এটা এক বিরাট পরিপ্রেক্ষিতের চিন্তাধারা যা আমাদের সাম্যবাদে নিয়ে যাবেঃ কেবলমাত্র সশস্ত্র জনগণের সমুদ্রকে সংগঠিত করেই যাকিছূ জয় করা হয়েছে তা রক্ষা করা যাবে এবং গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবসমূহ বিকশিত করা যাবে।

তিনি তাদের খণ্ডন করেন যারা প্রস্তাব করে যে জনগণ বিপ্লব করতে চায়না অথবা জনগণ গণযুদ্ধকে সমর্থন করবেনা। সমস্যাটা জনগণকে নিয়ে নয় কারণ তারা বিদ্রোহ করতে প্রস্তুত, বরং এটা কমিউনিস্ট পার্টিসমুহের যাদেরকে জনগণকে অস্ত্র হাতে উঠে দাঁড়াতে ও পরিচালনা করতে বাধ্যবাধকতা গ্রহণ করতে হবে। তিনি ঐসকল মতাবস্থানসমূহের সাথে পার্থক্য অঙ্কন করেন যারা “শক্তি সঞ্চয়” ভিত্তিক, যারা কৃপণের মতো জনগণকে তথাকথিত “গণতান্ত্রিক ক্ষেত্র” র পথে অথবা বৈধতার ব্যবহারে বেঁধে ফেলে। এরূপ শক্তি সঞ্চয় আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শ্রেণীসংগ্রামের বর্তমান মুহুর্তের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ নয়, এটা খাপ খায়না আমরা যে ধরণের গণতান্ত্রিক বিপ্লব গড়ে তুলছি তার সাথে আর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্যে যার অন্য বৈশিষ্টসমূহ হবে তার সাথেও যেহেতু আমরা বিশ্বের অসম বিকাশের এক বিপ্লবী পরিস্থিতিতে বাস করছি। তিনি জনগণকে বড় বুর্জোয়াদের লেজুড় বানানোর, একটা নির্বাচনী পথ অথবা কোন পরাশক্তি অথবা শক্তির কমান্ডের অধীন সশস্ত্র এ্যাকশনের সুবিধাবাদী মতাবস্থানের বিরোধী এবং সেসবের নিন্দা জানান।

তাই, তিনি চেয়ারম্যান মাওয়ের মহান শ্লোগানকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেনঃ “বিদ্রোহ করা ন্যায়সংগত”, এবং মনে করেন জনগণের আজকে সমস্যা হচ্ছে যে কমিউনিস্ট পার্টিসমূহ কর্তৃক গণযুদ্ধকে মূর্তকরণ করে জনগণকে সমাবেশিত, রাজনীতিকরণ, সংগঠিত এবং সশস্ত্রকরণ করা।

তিনি দারিদ্রের বৈজ্ঞানিক সংগঠণের প্রয়োজনীয়তা মূর্ত করেন। সভাপতি গনসালো পুনরায় গুরুত্ব দেন যে যারা সর্বাধিক বিদ্রোহে ইচ্ছুক, যারা বিদ্রোহে সর্বাধিক বিস্ফোরিত হন তারা হচ্ছেন গরীবতম জনগণ, আমাদেরকে অতি অবশ্যই জনগণের বিপ্লবী ও বৈজ্ঞানিক সংগঠণের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। এটা শ্রেণী বৈশিষ্ট্যের বিরোধী নয়, কারণ দারিদ্রের মূল রয়েছে শোষণের মধ্যে, শ্রেণীসংগ্রামের মধ্যে। “দুর্দশা অমিত বিত্ত বৈভবের সাথে জড়িত, এমনকি ইউটোপিয়ানরাও জানতেন যে উভয়ে পরস্পর সম্পর্কিতঃ অপরিমেয় ও অবাধ্য বৈভবের পাশেই রয়েছে উন্মোচন ও বিস্ফোরণরত দারিদ্রা। কারণ শোষণ বিদ্যমান।”

এই থিসিস মার্কসের সাথে বাঁধা যিনি দারিদ্রের বিপ্লবী বিভব এবং বিপ্লবের জন্য একে বৈজ্ঞানিকভাবে সংগঠিত করণের প্রয়োজনীয়তা আবিষ্কার করেন। মার্কস আমাদের শিক্ষা দেন যে সর্বহারা শ্রেণীর সম্পত্তি নেই এবং সে হচ্ছে এক সৃজনশীল শ্রেণী, একমাত্র শ্রেণী যে সম্পত্তিকে ধ্বংস করবে এবং এভাবে নিজেকে একটা শ্রেণী হিসেবে ধ্বংস করবে। এই থিসিস লেনিনের সাথে বাঁধা যিনি আমাদের শিক্ষা দেন যে সামাজিক বিপ্লব কর্মসুচি থেকে উত্থিত হয়না বরং এই বাস্তবতা থেকে যে কোটি কোটি জনগণ বলছে যে ক্ষুধার শিকার হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে বিপ্লবের জন্য লড়াই করে আমরা মরতে পছন্দ করি। এই থিসিস চেয়ারম্যান মাওয়ের সাথে বাঁধা যিনি ধারণ করেছেন যে দারিদ্র পরিবর্তনের আকাঙ্খাকে চালিত করবে কাজে ও বিপ্লবে, অর্থাত এটা হচ্ছে সেই সাদা কাগজ যার ওপর সর্বাধিক নতুনতম ও সুন্দরতম লেখা রচনা করা যায়।

তিনি আমাদের সমাজের মূর্ত নির্দিষ্ট পরিস্থিতিকে হিসেবে নেন। পেরুতে, জনগণের কথা বললে বলতে হয় গরীব কৃষকদের কথা; ১৯২০, ১৯৪০ এবং ১৯৬০ দশকসমূহ দেখায় যে কৃষক সংগ্রামসমূহই রাষ্ট্রের খোদ ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাদের পথনির্দেশের অভাব ছিলঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারার মতাদর্শ। তাদের একট চালিকাশক্তি ছিলনাঃ গণযুদ্ধ এবং কমিউনিস্ট পার্টির ন্যায়সঙ্গত ও সঠিক নেতৃত্ব। কৃষক সংগ্রামসমূহ ক্ষমতার সঠিক পথ গ্রহণে সক্ষম ছিলনা এবং তারা যে রক্ত ঝরিয়েছেন তা তাদের বাঁধা দিয়েছে আর পুরোনো শাসনের সাথে এঁটে দিয়েছে। এগুলো ছিল স্মরণীয় রক্তস্নান যা অতি মূল্যবাণ শিক্ষা রেখে গেছে। ১৯৮০ দশক দেখায় কমিউনিস্ট পার্টি ও গণ গেরিলা বাহিনীতে সংগঠিত সশস্ত্র কৃষক জনগণের এক সত্যিকার সমাবেশিতকরণ, এবং এই যে তারা নয়া ক্ষমতার জন্য তাদের মূল্যবাণ রক্ত দিচ্ছেন যা গণযুদ্ধের মাধ্যমে প্রস্ফুটিত ও বিকশিত হচ্ছে।

এই বৈশিষ্ট হচ্ছে রণনৈতিক কারণ এটা এই বক্তব্যে অনুমোদন দেয় যে বর্তমান বিশ্বে বিপ্লব গরীবতমদের পক্ষে মূর্ত, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আর বিদ্রোহে সর্বাধিক ইচ্ছুক। প্রতিটি বিপ্লবে আমাদেরকে গরীবতমদের মধ্যে যেতে হবে প্রয়োগ করে তিন শর্ত যা দারিদ্রের বৈজ্ঞানিক সংগঠণ দাবী করেঃ মতাদর্শ, গণযুদ্ধ এবং এক কমিউনিস্ট পার্টি।

এই প্রশ্নে সভাপতি গনসালো বলেনঃ “দারিদ্র হচ্ছে বিপ্লবের চালিকাশক্তি। দরিদ্রতমরা হচ্ছেন সবচেয়ে বিপ্লবী, দারিদ্র হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দরতম সঙ্গীত;… দারিদ্র কোন অপমান নয়, এটা একটা সম্মান, আমাদের পর্বতমালা তার জনগণ সমেত হচ্ছে আমাদের বিপ্লবের উতস, যারা তাদের হাত দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির পরিচালনায় এক নয়া বিশ্ব গড়ে তোলেন। আমাদের পথনির্দেশঃ মতাদর্শ। আমাদের চালিকাশক্তিঃ সশস্ত্র সংগ্রাম। আমাদের নেতৃত্বঃ কমিউনিস্ট পার্টি।”

২.    গণকাজের প্রধান দিক হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতা, কিন্তু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবী দাওয়ার আন্দোলন প্রয়োজনীয়

সভাপতি গনসালো চেয়ারম্যান মাওয়ের এই থিসিসের ওপর নিজেকে দাঁড় করান যা ক্ষমতা দখলের জন্য বিপ্লবী সহিংসতাকে সার্বজনীন নিয়ম হিসেবে সাধারণীকরণ করে এবং যা প্রতিষ্ঠা করেছে যে প্রধান ধরণের সংগ্রাম হচ্ছে সশস্ত্র সংগ্রাম আর প্রধান ধরণের সংগঠণ হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সকল সংগ্রাম ও সংগঠণ এর প্রস্তুতির সেবায় নিয়োযিত হয়। সভাপতি গনসালো আমাদের শিক্ষা দেন যে গণ কাজে ক্ষমতার জন্য সংগ্রাম এবং অর্থনৈতিক দাবী দাওয়ার সংগ্রাম [লুচাস রিভিন্ডিকেটিভা] হচ্ছে একই মুদ্্রার এপিঠ ওপিঠ, যাতে ক্ষমতার জন্য সংগ্রাম জনগণের সর্বপ্রথম দাবী।

জনগণকে সংগঠিত করুন যাতে তারা বিদ্যমান আইনি শাসন কর্তৃক অনুমোদিত সীমার বাইরে যেতে পারে, যাতে তারা পুরোনো শাসনকে ধ্বংস করার জন্য সংগ্রাম করে, তাকে বজায় রাখা নয়। এটা সম্পাদিত হয় বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের ব্যবহারের মাধ্যমে। পার্টিতে অল্প কিছু লোক একীভূত হয়, বাহিনীতে অধিক অংশ নেয়, নয়া রাষ্ট্র-ফ্রন্ট হচ্ছে ভিত্তি যা জনগণকে উলম্ফণের মাধ্যমে যুক্ত করে। গ্রামাঞ্চলে তা অর্জিত হয় গণ কমিটিসমূহ মারফত আর শহরাঞ্চলে গণ বিপ্লবী রক্ষী আন্দোলন দ্বারা। এভাবে, ধ্বংস হয নির্বাচনী ফ্রন্টসমূহের পুরোনো ট্রাডিশন যাকে সংশোধনবাদী ও সুবিধাবাদীরা প্রয়োগ করে গ্রামাঞ্চলে কৃষককুলকে এবং শহরাঞ্চলে জনগণকে যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল থেকে ভিন্ন দিকে ধাবিত করতে।

রাজনৈতিক ক্ষমতায় কেন্দ্র করা সংগ্রামের নয়া বিচিত্র রূপে জনগণের সংগঠনও দাবী করে, কারণ যুদ্ধ জনগণের সংগ্রাম ও সংগঠণে পরিবর্তন আরোপ করে। লেনিন যেমন শিক্ষা দিয়েছেন বিপ্লবী যুগসমূহে নয়া সংগঠন গড়ে তুলতে হবে এবং পুরোনো নেতাদের বিরুদ্ধে যেতে হবে যারা বিপ্লবকে বিক্রী করে প্রতিক্রিয়াশীল ব্যবস্থায় তাদের জায়গা করে নিতে চায়। একারণে, সংগ্রাম ও সংগঠণের পুরোনো রূপ ব্যবহার করা যায়না।

প্রধান দিক হিসেবে ক্ষমতার জন্য সংগ্রাম মানে এই নয় যে শুরু থেকেই একবারে আমরা সকল জনগণকে একীভূত করতে যাচ্ছি। চেয়ারম্যান মাও আমাদের শিক্ষা দেন যে ঘাঁটি এলাকা ও সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা হচ্ছে সেই জিনিস যা বিপ্লবের শিখর সৃষ্টি করে। এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে জনগণকে বিপ্লবে একীভূত করা যা পার্টি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮০-র দ্বিতীয় প্লেনামে, একটা একীভূতকরণ যা প্রগতিশীল উলম্ফণ মারফত হবে; অধিক গণযুদ্ধ জনগণের আরো বৃহত্তর একীভবন ঘটাবে। তাই, গণযুদ্ধ হচ্ছে এক রাজনৈতিক বাস্তবতা যা অব্যাহতভাবে লোকের মাথায় ভাবধারা স্পন্দিত করে শক্তিশালি এ্যাকশনসমূহের মাধ্যমে, যারা একটু একটু করে উপলব্ধি করবেন তাদের একমাত্র সত্য পথ, এভাবে তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা বিকশিত করবেন। গণযুদ্ধ সকল বিপ্লবীকে একত্রিত করে এবং বিকাশের সাথে একটা পথ খূলে দেয়।

জনগণ রাজনীতির জন্য আকাঙ্খিত আর কমিউনিস্টদের কর্তব্য হচ্ছে তাদের সংগঠিত ও পরিচালিত করা। জনগণের সর্বত্র মূর্ত সমস্যাবলী রয়েছে এবং আমাদেরকে তাদের সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হতে হবে আর তাদের মধ্যে উপস্থিত হতে হবে। গণকাজ করা হয় শ্রেণীসংগ্রামের অভ্যন্তরে, তার প্রান্তে নয়। আমরা যদি গণকাজ না করি, প্রতিক্রিয়াশিল ও সংশোধনবাদীরা তাদের নিজেদের লক্ষ্য থেকে তাকে ব্যবহার করবে, ফ্যাসিবাদ গড়ে তুলতে ও তাদের কর্পোরেটকৃত করতে অথবা তাদের সংগ্রামসমূহকে অন্য সাম্রাজ্যবাদী প্রভুর নিকট হস্তান্তর করতে। এগুলো হচ্ছে দুটি আকাঙ্খা যা মূর্ত নির্দিষ্ট এবং বিরোধি।

জনগণ তাদের কথা শুনতে চায় যারা ইতিকরণ করে, আর তাদের কথা শুনতে চায়না যারা সন্দেহ পোষণ করে। আমাদের পার্টিতে, সূচনায়, সভাপতি গনসালো তাদের সংগ্রাম করেন যারা জনগণের কন্ঠস্বরের সামনে বোবা কালা আর এই দাবী করেন যে কারোরই কখনই জনগণের ওপর সন্দেহ পোষণ করা উচিত নয়, জনগণের হালকা বিড়বিড়কেও শুনতে হবে এবং তাদের দৈনন্দিন ও মূর্ত সমস্যাগুলোতে অংশ নিতে হবে। জনগণকে কখনো বোকা বানানো চলবেনা, তাদের ওপর কখনোই বলপ্রয়োগ করা যাবেনা, তাদের অবশ্যই জানতে হবে কী ঝুঁকি তাদের মোকাবেলা করতে হবে। তাদেরকে ক্ষমতার জন্য দীর্ঘ, রক্তাক্ত সংগ্রামে ডাক দিতে হবে, কিন্তু এই লক্ষ্য সহকারে তারা বুঝবেন যে এটা একটা প্রয়োজনীয় সংগ্রাম আর এটা জয়যুক্ত হবে।

তাই, ক্ষমতার জন্য সংগ্রাম হচ্ছে প্রধান কিন্তু একে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবীদাওয়ার সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়না, তারা হচ্ছে একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ, আর পরের সংগ্রামটা হচ্ছে প্রয়োজনীয়।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামকে আমরা কীভাবে উপলব্ধি করি? আমাদের ওপর অভিযোগ করা হয় যে আমাদের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মূর্তনির্দিষ্ট লাইন নেই। সত্য হচ্ছে এই যে আমরা একে ভিন্নভাবে প্রয়োগ করি, অন্য রূপে, সুবিধাবাদী ও সংশোধনবাদীরা যা প্রয়োগ করে তার থেকে ভিন্ন রাজনীতিসমেত, প্রচলিত ধরণ থেকে ভিন্ন ও নয়া রূপে। সভাপতি গনসালো আমাদের শিক্ষা দেন যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবীদাওয়ার সংগ্রাম হচ্ছে মুদ্রার এক পিঠ, যার অপর পিঠে রয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতার সংগ্রাম। এদেরকে আলাদা করা সম্পুর্ণ ভুল, কেবল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবীদাওয়ার সংগ্রামের কথা বলা হচ্ছে সংশোধনবাদ। আমাদের সমাজে মার্কসের থিসিসকে মূর্ত করে সভাপতি গনসালো আমাদের বলেনঃ

“সংকট আমাদের কাছে হাজির হয় দুই সমস্যা নিয়েঃ প্রথম, যা জয় করা হয়েছে তাকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, কারণ এমনকি যদি সংকটে অর্জনসমূহ আমরা হারাই, তাদের রক্ষা না করা হলে আরো হারাবো। এটা হচ্ছে দাবীদাওয়ার সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা…, এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম…, অধিকন্তু, এটা শ্রেণী ও শ্রমিকদের তাদের ক্ষমতার জন্য সংগ্রামে ঠেলে নিয়ে আসে। দ্বিতীয়, কীভাবে সংকটের অবসান করা যায়? এর অবসান করা যাবেনা আধিপত্যকারী সামাজিক শাসনের অবসান করা না হলে… এর জন্য প্রয়োজন বিপ্লবী সংগ্রামের যা পার্টির নেতৃত্বের অধীনে সশস্ত্র সংগ্রাম দ্বারা ক্ষমতা দখলকে সেবা করে… একটাকে আরেকটা থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবেনা। রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের কার্যকরণের দাবী হিসেবে সংগ্রামকে বিকশিত করার মধ্যে উভয় সমস্যার সম্পর্ক বাস্তবায়িত হয়।”

দাবীদাওয়ার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে ইউনিয়ন ও ধর্মঘট ব্যবহৃত হয়। এগুলো হচ্ছে সর্বহারাশ্রেণীর অর্থনৈতিক সংগ্রামের প্রধান ধরণ যাকে গেরিলা যুদ্ধে বিকশিত করা হয়। এভাবেই, শ্রেণী ক্ষমতার জন্য সংগ্রামে শিক্ষিত হয় এবং সশস্ত্র এ্যাকশনের মাধ্যমে একে উন্নীত করে যা সংগ্রামের এই রূপসমূহকে শক্তিশালি করে তাদের উচ্চ গুণাবলী প্রদান করে।

এক কথায়, দাবীদাওয়ার সংগ্রামকে ক্ষমতা দখলকে সেবা করে বিকশিত করতে হবে। গণ কাজ করার এ হচ্ছে এক রাজনৈতিক নীতি।

৩.   কোন জনগণের কাছে আমরা যাব?

কোন জনগণের কাছে আমরা যাব তা বের করতে আমাদেরকে শ্রেণী বৈশিষ্ট থেকে যাত্রা করতে হবে। এটা লক্ষ্যনীয় গুরুত্বপুর্ণ যে জনগণ সংগঠিত হয় নিজ নিজ শ্রেণীর সাধারণ স্বার্থ অনুসারে। সভাপতি গনসালো আমাদের শিক্ষা দেন যে এই দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে জরুরী তাদেরকে লড়তে যারা “ঐক্য”-এর গালগল্প দ্বারা শ্রেণী থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করার ভাণ করে আর যারা জনগণের সংগ্রাম নিয়ে ব্যবসা করে জনগণের সত্যিকার স্বার্থের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এটা একারণেরও যে এটা আমাদের বুঝতে অনুমোদন দেয় যে জনগণ হচ্ছে সর্বদাই একটা সংগ্রামের ক্ষেত্র যেখানে তাদের পরিচালিত করতে বুর্জোয়া ও সর্বহারা পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত। যাহোক, কেবল কমিউনিস্ট পার্টিই তাদের নেতৃত্ব করতে সক্ষম কারণ কেবলমাত্র সেই তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে এবং তাদের স্বার্থে সংগ্রাম করতে পারে। যারা “যারা জন গণতন্ত্র”র কথা বলে অথবা যারা প্রকাশ্য গণ কাঠামো সৃষ্টি করে যেন সেগুলো হচ্ছে সহিংসতাবিহীন ক্ষমতার রূপ তারা স্রেফ বুর্জোয়া মতাবস্থান ঊর্ধ্বে তুলে ধরছে যা সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্ব ও তার একনায়কত্বকে নেতিকরণ করে।

শ্রেণী বৈশিষ্ট থেকে যাত্রা করার বিপ্লবের চরিত্রের সাথে সম্পর্ক রয়েছে, এটা সম্পর্কিত সেই শ্রেণীসমূহের সাথে যারা জনগণ গঠণ করে, যাদেরকে সর্বহারাশ্রেণীর নেতৃত্বের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে, সর্বহারা শ্রেণী নেতৃত্ব করে, কৃষক হচ্ছে প্রধান, ক্ষুদে বুর্জোয়া হচ্ছে দৃঢ় মিত্র আর মাঝারি বুর্জোয়ার রয়েছে দ্বৈত চরিত্র। যে মূল জনগণ যাদের মধ্যে আমাদের যেতে হবে তারা হচ্ছে কৃষককুল, প্রধানত গরীব কৃষক, ক্ষুদে বুজোয়া এবং মাঝারি বুর্জোয়াও।

জনগণের মূর্ত দাবীগুলোকে মনে রেখে আমাদেরকে সংগঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে জনগণের সেসব সেক্টরের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে যারা অধিক নিপীড়ণ ভোগ করে যাতে বিজয় অর্জনের জন্য সংগ্রাম করে এবং তাদের নির্দিষ্ট দ্বন্দ্ব সমাধা করে। এটা সেই গণ ফ্রন্টের দিকে নির্দেশ করে যাতে আমাদের কাজ করতে হবে। তারা হচ্ছেঃ শ্রমিক, সর্বহারা যে হচ্ছে সকল বিপ্লবের নেতৃত্বকারী শ্রেণী, একটা শ্রেণী যার প্রধান ও নির্ধারক রাজনৈতিক লক্ষ্য হচ্ছে গনযুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা জয় করা নিজেকে মুক্ত করতে, অন্যান্য শ্রেণীসমূহকে মুক্ত করতে এবং চুড়ান্তত নিজেকে একটা শ্রেনী হিসেবে ধ্বংস করতে। এর নির্দিষ্ট দাবীসমূহ হচ্ছে ক্ষমতা জয় করা এবং অধিকার যেমন বর্ধিত মজুরি, ক্ষুদ্রতর কর্মদিবস এবং অধিকতর ভাল কাজের পরিস্থিতি। এই লক্ষ্যে, শ্রমিক আন্দোলন, তার সংগ্রামসমূহ, সমাবেশিতকরণ, অগ্রযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল এবং ধর্মঘটকে সশস্ত্র এ্যাকশনসহকারে বিকশিত করতে হবে। “শ্রেণীর এবং মেহনতীদের মৌলিক সমস্যাসমুহ নিয়ে ভাবুন এবং তাদের সাধারণ ও মূর্ত সমস্যাবলী নিয়ে যার জন্য তারা দৈনন্দিন লড়াই করে।”

কৃষকরা হচ্ছে প্রধান শক্তি, প্রধানত গরীব কৃষকরা, যারা পার্টির পরিচালনাধীনে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ভুমি দখলের জন্য সংগ্রাম করে। একে এভাবে না দেখা সেই “ভুমি দখল” [সরকার, সংশোধনবাদী ও চার্চ কর্তৃক অ-চাষযোগ্য ভুমি ও অন্যান্য দখল-ইংরেজী অনুবাদক]-এর দিকে এবং পুরোনো শাসনের সাথে খাপ খাওয়ার দিকে চালিত করে। কৃষক আন্দোলনকে আরো বিকশিত করতে হবে “তিন সমেত”ঃ তাদের সাথে বাস করা, তাদের সাথে কাজ করা এবং তাদের সাথে সংগ্রাম করা, এভাবে কৃষকদের সর্বহারা মানসিকতায় গড়ে তুলতে হবে।

নারীরা যারা বিশ্বের অর্ধেক তাদের মুক্তির জন্য নারী আন্দোলন বিকশিত করতে হবে, একটা করণীয় যা নারীদের নিজেদের কাজ কিন্তু পার্টির নেতৃত্বের অধীনে। আমাদের নারী মুক্তির বুর্জোয়া থিসিসকে লড়তে হবে। নারীরা জীবনের অব্যাহত মুল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়ে যা শ্রেণী ও জনগণের বস্তুগত একত্বকে প্রভাবিত করে। পার্টি শ্রমিক, কৃষক ও বুদ্ধিজীবি নারী ইত্যাদিদের সমাবেশিত করে।

বুদ্ধিজীবিরা যাতে সর্বহারা শ্রেনী ও কৃষককুলকে গণযুদ্ধের মধ্যে সেবা করে বিপ্লবী বুদ্ধিজীবি হিসেবে তাদের ভুমিকা পালন করতে পারে। তাদের মধ্যে রয়েছে উচ্চ স্কুলের ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র এবং পেশাজীবি প্রভৃতি। তাদের মূর্ত দাবীগুলো দেখুন, তাদের জয়গুলোকে রক্ষা করুন এক জাতীয়, বৈজ্ঞানিক ও গণ সংস্কৃতির দিকে লক্ষ্য করে, তাদেরকে সচেতন করা যাতে তারা কেবল তা অর্জন করতে পারেন বিপ্লবের মাধ্যমে।

শহরে, বস্তিশহরগুলোতে ও বস্তিতে (স্লাম) দরিদ্র জনগণকে সমাবেশিত করুন ক্ষুদা ও দুর্দশার বিরুদ্ধে যাতে তারা বিপ্লবের কর্মসুচির জন্য লড়ে, তাদের গণযুদ্ধে একত্রিত করুন যাতে তারা ক্ষমতা জয় করতে পারেন এবং জয় করতে পারেন অধিকার যেগুলো প্রতিটি দিন অধিক থেকে অধিকতর বুটের নিচে দাবিয়ে দেওয়া হয়। তাদের অহিংসায় আক্রান্ত হতে অনুমোদন করবেননা এবং তাদের শিক্ষা দিন কীভাবে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারেন যাতে তারা তাদের পক্ষে সম্ভব সকল পন্থায় শত্রুর আগ্রাসন মোকাবেলা করতে পারেন। “লড়াই ও প্রতিরোধ” প্রয়োগ করুন, যা হচ্ছে শ্রেণীর জন্য সাধারণ শ্লোগান।

তরুণ যুবাদের সমাবেশিত করুন যাতে তারা গণযুদ্ধের লড়াই পরিখাগুলোর সম্মুখ সারিতে (ফ্রন্ট লাইন)-এ প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতে পারেন। তরুণ শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের তাদের সংগ্রামকে বিকশিত করতে দিন এক নয়া দুনিয়ার জন্য, শিক্ষার অধিকারের জন্য, বেকারত্ব ও অপরাপর দোষ যা তাদের আক্রান্ত করে তার বিরুদ্ধে।

শিশুদের গণযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করান। তারা অনেক কর্তব্য সম্পাদন করতে পারে যা তাদের সাহায্য করবে বিশ্বকে রূপান্তর করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে। তারা হচ্ছে ভবিষ্যত আর চুড়ান্তত তারা এক নয়া দুনিয়ায় বাস করবে। তাদের মতাদর্শ পরিবর্তন করুন যাতে তারা সর্বহারাশ্রেণীর মতাদর্শ গ্রহণ করতে পারে।

৪.   কেবল মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী রণকৌশলে লেগে থাকুন

আমাদের যাত্রা করতে হবে এঙ্গেলসের এই থিসিস থেকেঃ “একটা দেশে যেখানে পুরোনো রাজনৈতিক ও শ্রমিক আন্দোলন রয়েছে সেখানে সর্বদাই বিরাট ময়লার স্তুপ বজায় থাকে ট্রাডিশনের উত্তরাধিকার হিসেবে, একে ধাপে ধাপে পরিষ্কার করতে হবে।” লেনিন প্রতিষ্ঠা করেনঃ “বিশ্ব সর্বহারা আন্দোলনে একমাত্র মার্কসবাদী লাইন জনগণকে এই শিক্ষা দেওয়ার মধ্যে নিহিত থাকে যে সুবিধাবাদের সাথে বিভক্তি অনিবার্য ও অপরিহার্য আর এর বিরুদ্ধে নির্দয় সংগ্রামের মাধ্যমে বিপ্লব করার দরকার।” চেয়ারম্যান মাও ইঙ্গিত দেন যে সাম্রাজ্যবাদ ও সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের একটা পর্যায় সমাগত যেখানে সংশোধনবাদ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের অন্যতম প্রধান উতস এবং সাধারনভাবে কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে এক বিপদ। সভাপতি গনসালো একমাত্র মার্কসবাদী রণকৌশলে লেগে থাকার আহ্বান জানান যারা সাথে চারটি বিষয় জড়িতঃ

প্রথমত, বিরাট ময়লার স্তুপকে ঝাঁড়– দিয়ে পরিষ্কার করুন, যা হচ্ছে সংশোধনবাদ ও সুবিধাবাদ, প্রধানত নির্বাচনপন্থা। না এসব সংশোধনবাদী ও সুবিাধাবাদীরা না এদের কোন রূপভেদ জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, রক্ষা করে তারও অনেক কম। এখনো আগের মতোই তারা ফলত কেবল শোষকদের রক্ষা করে, গতকাল তারা ইউনিয়ন সংগঠণসমূহকে নিজেদের প্রভাবাধীনে নিয়ে ছিল ফ্যাসিস্ট কর্পোরেটিভিস্ট আপ্রিস্টা সরকারের লেজে বাঁধা এক মালগাড়ি। [সংশোধনবাদের অনুশীলন ফুজিমোরির অধীনে অব্যাহত রয়েছে-্ইং অনুবাদক]। এসব রাজনৈতিক ও ইউনিয়ন সংগঠনসমূহ আর তাদের নেতারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করেনা বরং আবরণের নীচে শ্রমিক অভিজাততন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। যে ইউনিয়ন আমলাতন্ত্র আর বুর্জোয়া ওয়ার্কার্স পার্টিসমূহ সর্বদাই জনগণকে বিপ্লবী পথ থেকে দুরে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে, তারা বিরাট ময়লার স্তুপের অংশ ছাড়া আর কিছু নয় যাকে ক্রমান্বয়ে ঝেঁটিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এঙ্গেলস যেমনটা বলেছেন।

দ্বিতীয়ত, জনগণের গভীরতম মর্মমূলে এং গভীরতম জনগণের মধ্যে যান, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যারা হচ্ছেন আমাদের দেশে শ্রমিক ও প্রধানত গরীব কৃষক, ক্ষুদে বুর্জোয়া, এবং জাতীয় বুর্জোদের কথাও মনে রাখতে হবে। এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে শ্রমিক আর প্রধানভাবে গরীব কৃষক, আর আমাদেরকে প্রধানত তাদের কাছে যেতে হবে উভয়ত গ্রাম ও শহরে। আমাদেরকে তাদের আন্দোলনকে চালিত করতে হবে, এতে নেতৃত্ব দিতে হবে, ক্ষমতার জন্য তাদের সমাবেশিত করতে হবে যাতে পুরোনো রাষ্ট্রকে ধ্বংস ও উচ্ছেদ করা যায়। এটাই হচ্ছে রণকৌশলের প্রধান বিষয়। জনগণের মধ্যে বাইরের আবরণকে আলাদা করে দেখাতে হবে যা বুর্জোয়াদের সেবা করে, গভীরতম জনগণের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে ক্ষয়িষ্ণু রাষ্ট্রের ধ্বংস না হওয়া অবধি তা অধিক থেকে অধিক জন্ম নেবে, এমনকি যখন একটা গণযুদ্ধ পুরোনো পেরুভিয়ান রাষ্ট্রকে ধ্বসিয়ে দিচ্ছে তখন আরো বেশি মাত্রায় জন্ম নেবে।

তৃতিয়ত, জনগণকে গণযুদ্ধে শিক্ষিত করতে হবে, তার তত্ত্বে ও অনুশীলনে। তাদেরকে বেয়নেটের শান্তির শিক্ষা দেওয়া মানে হচ্ছে তাদের জবাই হতে অনুমতি দেওয়া। জনগণের আর রক্ত দেওয়া উচিত নয় অহিংসায় কেবল তাদের ভুয়া নেতাদের দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতাপ্রাপ্ত হতে, বরং তাদের মূল্যবাণ রক্তকে শ্রেনী ও জনগণের জন্য ক্ষমতা দখলকে সেবা করতে হবে।

চতুর্থত, সংশোধনবাদ ও সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে নির্মম সংগ্রাম চালাতে হবে পার্টির ভেতরে বাইরে এমনকি খোদ জনগণের মধ্যে এক ভয়ংকর ক্যান্সার হিসেবে একে লড়তে হবে অন্যথায় তারা তাদের বিপ্লবী পথকে দৃঢ় করতে পারবেননা। এটা একটা সংগ্রাম যা আমরা পার্টি পুনর্গঠণের সময় থেকে চালাচ্ছি আর আজকে প্রকাশ্য গণযুদ্ধে এটা আরো জরুরী এবং নির্মম আমাদের বিরুদ্ধে, জনগণ ও বিপ্লবের বিরুদ্ধে তাদের বর্ধিত বিশ্বাসঘাতকতাবাদী পথ গ্রহণের কারণে, বিশেষত যখন তাদের পেছন থেকে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বে একাধিপত্যের জন্য ইয়াঙ্কি সাম্রাজ্যবাদের সাথে ঘোঁট পাঁকানো ও প্রতিযোগিতার তাদের কর্মনীতিতে কার্যরত। এটা সকল রূপ ও ধরণের সংশোধনবাদ ও সুবিধাবাদের প্রতি প্রযোজ্য তাদের প্রতিনিধি যারাই হোক না কেন।

এ সম্পর্কে সভাপতি গনসালো আমাদের বলেনঃ “এই ধোঁয়াশার ঊর্ধ্বে উঠুন, সেই পর্দার সংশোধনবাদ, সুবিধাবাদ ও নির্বাচনপন্থা যা জনগণের ওপর চড়ে বেড়ায়। প্রধান বিষয় হচ্ছে এর নীচে সর্বাধিক ব্যাপ্ত ও স্বয়ংচালিত শক্তি বিক্ষোভরত যার ওপর আমরা পরিচালনা করি বিদ্রোহের সর্বাধিক শক্তিশালি হাতিয়ার যা পৃথিবীতে বিদ্যমানঃ সশস্ত্র এ্যাকশন। আমরা সেই গর্জন যা বলেঃ “বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গ!”

৫.   জনগণকে সংগঠিত করা

মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি এবং সেইসাথে সাংগঠনিক বিনির্মাণ থেকে শুরু করে সভাপতি গনসালো সংগ্রামের রূপ ও জনগণকে সংগঠিত করণের ধরণসমূহ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আমাদের শিক্ষা দেন সেই প্রক্রিয়া যাতে পার্টির গণকাজ বিকশিত হয়েছে।

বিনির্মাণে [পিসিপির-ইং অনুবাদক], তিনি বলেন যে মারিয়েতেগুই পার্টির গণকাজের ভিত্তির রূপরেখা দেন এবং মূর্ত লাইনসমূহ নির্ণয় করেন নৈরাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দুই লাইনের সংগ্রাম বিকশিত করে যা পার্টির প্রয়োজনীয়তাকে পাশে সরিয়ে রেখেছিল এবং আপ্রার বিরুদ্ধেও যা নেতিকরণ করেছিল মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ধারণাকে এবং ফ্রন্টে তার কাজের মাধ্যমে শ্রেণীর নিজেকে একটা কমিউনিস্ট পার্টিতে সংগঠিত করার সামর্থকে।

মারিয়েতেগুই ১৯৩০ দশকে মারা গেলে তাঁর লাইনকে পরিত্যাগ করা হলো। জনগণকে ঘিরে কাজ কেন্দ্রিভূত করা হলো তাঁদেরকে বড় বুর্জোয়াদের লেজুড় বানিয়ে তাদের “ফ্রন্টবাদ”-এ বিচ্যুত করে, নির্বাচন ও সংশোধনবাদ-এ যা লাল লাইনের জন্য তাদেরকে সংগ্রামের এক বোঝা সৃষ্টি করে। এসব ভ্রান্ত রণকৌশল ৩০ বছরেরও বেশি টিকে থাকে।

পুনর্গঠণে, সভাপতি গনসালো পার্টির গণলাইন এবং সাংগঠণিক রূপ প্রতিষ্ঠা করেন। এটা ১৫ বছরের অধিক সময়কালের কঠিণ দুই লাইনের সংগ্রামে উলম্ফণ প্রাপ্ত হলো [সাফল্যের দিকে নির্দেশ করা হচ্ছে-ইং অনুবাদক]। পুনর্গঠণের এই প্রথম রাজনৈতিক রণনীতিতে তিনি পার্টির গণকাজের সূচনা বিকশিত করেন, আয়াকুচোর সকল জঙ্গীই সিভিল বিনির্মাণসহ কৃষক কাজ করে; উদাহারণস্বরূপ, বুদ্ধিজীবি ও বস্তির গরীব জনগণের সাথে। এরা ভুমি দখলকে সমর্থন করে, কৃষক ঘটনাসমূহ পরিচালনা করে, আয়াকুচোর কৃষকদের আঞ্চলিক কনভেশন সংগঠিত করে যেখানে কৃষি কর্মসুচি প্রতিষ্ঠা করা হয়; এটা ছিল একটা অপরিসীম গুরুত্বপুর্ণ ঘটনা। তিনি আয়াকুচো ও হুয়ানটায় ১৯৬৯-এর জুন ২০, ২১ ও ২২-এর ঐতিহাসিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন, উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র, পিতামাতা ও পরিবারদের জনগণকে সমাবেশিত করেন জেনারেল ভ্যালেস্কোর ডিক্রী ০০৬-এর বিরুদ্ধে যাকে আমরা পরাজিত করেছি। পিসিপি আয়াকুচোর গণ রক্ষা ফ্রন্ট সংগঠিত করে, বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্ট (এফইআর) পুনর্গঠিত করে, গণ নারী আন্দোলন (এমএফপি), মারিয়েতেগুইর বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের কেন্দ্র (সিইটিআইএম), বিপ্লবী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্র ফ্রন্ট (এফআরইএস) এবং সর্বোপরি সকল গরীব কৃষক আন্দোলন (এমসিপি) সৃষ্টি করে। এভাবে, গণ কাজের মাধ্যমে নয়া রাজনীতি বিকশিত হল এবং সংগ্রামের নতুন ধরণ ও নয়া সাংগঠণিক রূপ জন্ম নিল।

দুই লাইনের সংগ্রামে সভাপতি গনসালো সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন যা জনগণকে নির্বাচনপন্থা ও বিপ্লবী সহিংসতার বিরুদ্ধে চালিত করে পুরোনো শাসনকে রক্ষা করতে। তিনি সংশোধনবাদের একটা ধরণ প্যাট্রিয়া রোখার বিরুদ্ধে লড়েন যা আজকে যেমন করছে তেমনই ব্যবসা করছিল “বন্দুকের নল থেকে বেড়িয়ে আসে” শ্লোগান নিয়ে আধা-সামন্তবাদকে নেতিকরণ করে, পেটি বুর্জোয়াদের ঘিরে বিশেষত ছাত্র ও কৃষকদের ঘিরে তার কাজকে কেন্দ্র করে। তিনি সেই ডান বিলোপবাদকেও পরাজিত করেন যা জনগণের মধ্যে পার্টির নেতৃত্বকে হালকা করে বৈধতাবাদের বুলি আওড়ে এবং এটা বলে যে সবকিছু পেরুর কৃষক ফেডারেশন (সিসিপি)র দ্বারা সম্ভব, কৃষকেরা দখল বোঝেনা, বেদখল বোঝে আর ভ্যালেস্কোর সরকার [১৯৬২-১৯৭২ এর সামরিক একনায়কত্ব]-এর ফ্যাসিস্ট ও কর্পোরেটিভিস্ট পথকে গভীর করতে হবে।

পুনর্গঠণের দ্বিতীয় রাজনৈতিক রণনীতিতে তিনি ১৯৭৩-এর ৩য় প্লেনামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাত সংগঠণ প্রতিষ্ঠা করেনঃ “কাজের বিভিন্ন ফ্রন্টে সর্বহারা শ্রেণীর সৃষ্ট সংগঠণ হিসেবে প্রকৃত আন্দোলন। তাদের তিনটি বৈশিষ্ট রয়েছেঃ

১)     মারিয়েতেগুইর প্রতি আনুগত্য,

২)     গণ সংগঠনসমূহ এবং

৩)     গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা অনুশীলন করা।”

তিনি গোপন পার্টি এবং জনগণের মধ্যে পার্টি সমর্থনের পয়েন্টসমূহের ওপর লেনিনের থিসিস এবং প্রকাশ্য ও গোপন কাজের ওপর চীনা অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা প্রয়োগ করে জাত সংগঠণসমূহের চরিত্র, সার ও ভুমিকা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই প্রয়োজনীয়তাকে মূর্ত করেন যে পার্টির পুনর্গঠণকে বিকশিত করতে, পার্টিকে জনগণের কাছে আরো খুলে দিতে, একটা কর্মনীতিতে ঐকমত্য অর্জন করতে এবং একে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে বাম বিলোপবাদকে পরাজিত করা প্রয়োজন যা বিশ্বাস করেছে যে ফ্যাসিবাদ সবকিছু ঝেঁটিয়ে দুর করে, পার্টির বিলোপ চেয়েছে তাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে, এবং তারা কৃষক ও সর্বহারা শ্রেণীর প্রতি ঘৃনা প্রদর্শন করে আর “লাইনই যথেষ্ট” উপদেশ দেয়।

বাম বিলোপবাদী লাইনের পরাজয়ের সাথে জনগণের সাথে সম্পর্ক জন্মে এবং গণ স্কুলসমূহ গঠিত হলো, স্কুলসমূহ জনগণকে রাজনীতিকরণ করে পার্টির ধারণা ও লাইনে যা বিক্ষোভ ও প্রচারে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে রাজনৈতিক ক্ষমতার সংগ্রামের সাথে দাবী দাওয়ার সংগ্রামকে যুক্ত করে। দুই লাইনের সংগ্রাম ও গণ কাজ বিকশিত করে তারা ভিত্তি কর্ম পরিকল্পনার সুব্যবস্থিত ও পরিকল্পিত অধ্যয়ণ সম্পন্ন করেন।

জাত সংগঠণসমূহের কাজের অগ্রগতি সভাপতি গনসালোকে চালিত করে তাদের হিমানী সম্পাতে বিকাশের প্রস্তাব করতে সশস্ত্র সংগ্রামের সুচনা করার রাজনৈতিক পথ নির্দেশের অধীনে। এটা আঞ্চলিক কাজ (জোনাল) গঠণে চালিত করে। শহরাঞ্চলের জন্য মেট্রোপলিটন সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রকাশ্য কাজের ওপর লেনিনের থিসিস, শহরাঞ্চলে কাজের ওপর চেয়ারম্যান মাওয়ের থিসিস প্রয়োগ করে এবং এই যে জনগণের সংগ্রামকে যুক্তিযুক্ত, সুবিধাজনক ও পরিমাপযোগ্য পথে বিকশিত করতে হবে। সেসবের প্রয়োগ আমাদের অনুমোদন দেয় পার্টিক গোপন রাখতে, জনগণের মধ্যে প্রথিত, যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী সহকারে সক্রিয়, স্বল্প সময়ে প্রচার চালানো এবং এক কেন্দ্রিভূত পার্টি পরিকল্পনাধীনে সহজ বিক্ষোভ ও সমাবেশিতকরণ চালানোতে।

এসবই যাকে আমরা বলি শহরে গণ কাজের জন্য “তিন ক্ষুদ্র পা”ঃ জাত সংগঠণ, গণস্কুল এবং মেট্রেপলিটন সমন্বয়। গ্রামাঞ্চলে প্রথম দুই রূপ প্রযুক্ত হয়।

পার্টি পুনর্গঠণের তৃতিয় রাজনৈতিক রণনীতিতে পার্টি ব্যাপকভাবে তার গণকাজ বিকশিত করে সিয়েররা অঞ্চলে নিজেকে গরীব কৃষকদের সাথে যুক্ত করে প্রধানভাবে শহরে সর্বহারা শ্রেণী সমেত এবং বস্তি ও বস্তিশহরগুলোর জনগণ সমেত। এই জাত সংগঠণসমূহ একটি চমতকার ভুমিকা পালন করে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ঘাঁটি পুনর্গঠণ ও নির্মাণের ফল ঘটানোর মধ্যে। মুর্ত লাইনসমূহ এমনকি আরো বিকশিত করা হলো যাতে শ্রমিক ও শ্রমজীবিদের শ্রেণীবাদী আন্দোলন (এমওটিসি) শ্রমিক আন্দোলনের জন্য ১৫ মূল থিসিস প্রস্তাব করে; গরীব কৃষকদের আন্দোলন (এমসিপি) কৃষকদের রাজনীতিকরণে নতুন পরিস্থিতির জন্য কৃষি কর্মসুচি মূর্ত করে; বস্তি শহরের শ্রেণীবাদী আন্দোলন (এমসিবি) নিন্দাজ্ঞাপন ও জনগণের দাবী দাওয়ার তালিকা প্রকাশ করলো; বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্ট (এফইআর) ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরক্ষার থিসিস গড়ে তোলে, বিপ্লবী উচ্চ স্কুল ছাত্র ফ্রন্ট (এফআরইএস) গণশিক্ষার জন্য ছাত্রদের সংগ্রামকে চালিত করে; গণ নারী আন্দোলন (এমএফপি) নারীমুক্তির থিসিসকে তুলে ধরে মেহনতী নারী, কৃষক নারী, বস্তি দোকানদার ও ছাত্রদের সংগঠিতকরণে চালিত করে। অধিকন্তু, পেরুভিয়ান শিক্ষাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ সিন্ডিকেট (এসইউটিইপি)তে অংশগ্রহণ ছিল যা ১৯৭০ দশকে মূর্ত শ্রেণী লাইন গ্রহণে চালিত করে। পেরুভিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জাতীয় ফেডারেশন (এফইএনটিইউপি)ও গঠিত হল। এসব কাজই গণযুদ্ধের সূচনায় এক ব্যাপক মতাদর্শিক-রাজনৈতিক সমাবেশিতকরণে প্রবেশ করে।

সংশ্লেষণে, পুনর্গঠণের পার্টির সকল গণকাজ ছিল গণযুদ্ধ সূচনার প্রস্তুতির জন্য। যেমনটা চেয়ারম্যান মাও আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যুদ্ধের সূচনার পুর্বে সবকিছু যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য, একবার যুদ্ধ শুরু হলে সবকিছূ এর গড়ে তোলায় সেবা করে। সভাপতি গনসালো এই নীতিকে প্রয়োগ ও দৃঢ়ভাবে বিকশিত করেছেন।

গণযুদ্ধের নেতৃত্বের মধ্যে পার্টির গণকাজে এক বিরাট উলম্ফণ ঘটে, এক গুণগত উলম্ফণ যা মূর্ত করে প্রধান ধরনের সংগ্রামঃ গণযুদ্ধ এবং প্রধান ধরণের সংগঠণঃ গন গেরিলা বাহিনী [যা ১৯৯২তে গণ মুক্তি বাহিনীতে বিকশিত হয়-ইং অনুবাদক]। এই উচ্চতম কর্তব্য পার্টির সামরিকীকরণের পথের দ্বারা পরিচালিত হয়, গণকাজের কথা বলতে গেলে সকল গণকাজ গণ গেরিলা বাহিনী কর্তৃক সম্পাদিত হয় যা হচ্ছে এক নতুন ধরণের বাহিনী, যা তিনটি কাজ করেঃ লড়াই, সমাবেশিতকরণ ও উতপাদন। আমরা মনে করি বাহিনীর দ্বিতীয় কর্তব্য নির্দেশ করে জনগণকে সমাবেশিত করা, রাজনীতিকরণ, সংগঠিতকরণ ও সশস্ত্রকরণ, একটা কর্তব্য যা প্রধান করণীয় লড়াই করার বিরেধি নয়, কারণ লড়ার জন্য কেন্দ্রিভূতকরণ ও সমাবেশিতরণের জন্য বিকেন্দ্রিভূত হওয়ার নীতি প্রয়োগ করা হয়। সেইসাথে, জনগণকে যুদ্ধে শিক্ষিত করা হয়। এটা হচ্ছে একটা নীতি যা তিন বাহিনীকে পরিচালনা করেঃ প্রধান, স্থানীয় ও ভিত্তি, যেখানে বিবিধ মাত্রার এ্যাকশন মূর্তকৃত হয়।

জনগণকে সমাবেশিতকরণের জন্য পার্টি ইজিপির মাধ্যমে পরিচালনা করে গণস্কুল, জাত সংগঠণের কাঠামো, সমর্থন গ্রুপসমূহ, একটা কর্মনীতি যা গ্রামাঞ্চলে নির্দিষ্টত একভাবে প্রযুক্ত হয়, কারণ সেখানেই নয়া ক্ষমতা গঠিত হচ্ছে এবং শহরে অন্যভাবে। শহরে, জনগণের বিপ্লবী প্রতিরক্ষা আন্দোলন গঠিত হয় ভবিষ্যত অভ্যুত্থানকে লক্ষ্য করে।

গ্রামাঞ্চলে যেখানে ক্ষমতা রয়েছে, ঘাঁটি এলাকা ও গণকমিটি, আমরা একে এভাবে দেখি সকল জনগণ পার্টি, বাহিনী ও ফ্রন্ট-রাষ্ট্র-এ সংগঠিত হয়ে সশস্ত্র অংশগ্রহণে নিয়োজিত। যদি সকল জনগণ সংগঠিত না হয়, নয়া ক্ষমতা দীর্ঘকাল টিকে থাকতে পারবেনা। অবয়বহীন জনগণ অথবা পার্টির নেতৃত্বে সংগঠিত জনগণ ব্যতিরেকে ক্ষমতা যথেষ্ট নয়।

শহরাঞ্চলেও জনগণ বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হয়, এবং প্রধান বিষয় হচ্ছে গণযুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতার জন্য সংগ্রাম যেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে সেবাকারী দাবীদাওয়ার সংগ্রাম হচ্ছে একটা প্রয়োজনীয় পরিপুরক। নিশ্চিতভাবে এটা ঘটে বহু সশস্ত্র এ্যাকশন সহকারে নয়া রূপের সংগঠন বাস্তবায়নের লক্ষ্যযুক্তভাবে। আমরা গণ বিপ্লবী প্রতিরক্ষা আন্দোলন (এমআরডিপি) গঠণ করেছি যা শ্রমিক, কৃষক, বস্তিশহর ও ক্ষুদে বুর্জোয়াদের থেকে জনগণকে আকৃষ্ট করে মাঝারি বুর্জোয়াকে নিরপেক্ষ করে গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের দিকে লক্ষ্য করে যারা গণযুদ্ধকে সমর্থন করে। উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে প্রতিরোধের দিকে পরিচালিত করা এবং তাদের সংগ্রামকে গণযুদ্ধে উন্নীত করা, পুরোনো রাষ্ট্রকে বাঁধাগ্রস্থ, খাঁটো ও ব্যতিব্যস্ত করা এবং অভ্যুত্থানকে সেবা করা, শহরাঞ্চলে গণযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া একটা পরিপুরক হিসেবে। আমরা আমাদের নিজস্ব ধরনসমূহ বিকশিত করার দ্বৈত কর্মনীতি ব্যবহার করি, যা হচ্ছে প্রধান এবং সকল ধরণের সংগঠনকে অন্তর্ভুক্ত করি। আমরা লড়াই করা ও প্রতিরোধ করাকে প্রয়োগ করি।

জাত সংগঠণ সম্পর্কে, গনযুদ্ধে তারা বিকাশ প্রকাশ করেছে এবং তাদের বৈশিষ্ট পরিবর্তিত হয়েছে। তারা পার্টির গণসংগঠণ হিসেবে বজায় রয়েছে এবং আজকেঃ

তারা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারা দ্বারা পরিচালিত;

তারা গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা দ্বারা শাসিত, এবং

তারা গণযুদ্ধের বিকাশকে সেবা করে।

গ্রামাঞ্চলে, জাত সংগঠণসমূহ সামরিকীকৃত; শহরাঞ্চলে বহু মাত্রার সামরিকীকরণ প্রয়োগ করা যায়। আজকে আমাদের রয়েছেঃ এমওটিসি, এমসিপি, এমসিবি, এমএফপি, এমজেপি [যুব আন্দোলন-ইং অনুবাদক], এমআইপি [বুদ্ধিজীবি আন্দোলন-ইং অনুবাদক]। পেরুর গণ সহযোগিতাও গুরুত্বপুর্ণ যার গণযুদ্ধে উত্থান ঘটেছে যুদ্ধবন্দী ও নিখোঁজদের জন্য সংগ্রামের অংশ হিসেবে। পার্টির প্রবাসী কাজের জন্য পেরুর গণ আন্দোলন গঠিত হয়েছে তার মূর্ত করণীয় সমেত।

আজকে, প্রায় আট বছরের গণযুদ্ধের পর পার্টি তার গণকাজে বিরাট উলম্ফণ ঘটিয়েছে, এটা প্রমাণ করে যে গণযুদ্ধের মধ্যে ও তার জন্য গণকাজ গড়ে তোলা ন্যায্য ও সঠিক। এর প্রয়োগের ফলে আমাদের জনগণ প্রতিটি দিন শিখছে যে শ্রেণীসংগ্রাম আবশ্যিকভাবে ক্ষমতার জন্য সংগ্রামে চালিত করে। গণযুদ্ধে তার বাড়ন্ত অংশগ্রহণ খুবই দৃষ্টিগ্রাহ্য, এবং যদি সবাই এ উপলব্ধিতে নাও পৌঁছে, এতে তাদের মূর্ত আশা দেখতে পায়। তারা তাদের সংগ্রামসমূহকে সংগ্রাম ও সংগঠণের নয়া রূপসমূহে বিকশিত করছেন আর পেরুতে শ্রেণীসংগ্রাম তার প্রধান রূপঃ গনযুদ্ধে উন্নীত হয়েছে। জনগন গণযুদ্ধে সংগঠিত আর তারা হ্েচছ এর ভিত্তি এবং তারাই একে টিকিয়ে রাখেন। তারা সংগঠিত কমিউনিস্ট পাটিতে, গণগেরিলা বাহিনীতে এবং প্রধানত নয়া ক্ষমতায়, গণযুদ্ধের প্রধান বিজয় যাতে শ্রমিক, কৃষক ও ক্ষুদে বুর্জোয়ারা অংশ নেয় ইতিহাসে অভূতপুর্ব রাজনৈতিক ক্ষমতা অনুশীলন করে।

এগুলো হচ্ছে গুণগত উলম্ফণসমূহ যা দেশব্যাপী ক্ষমতা দখল না হওয়া পর্যন্ত গণযুদ্ধের মধ্যে ও তার জন্য গণকাজের নতুন অধ্যায়ের জন্য নতুন পরিস্থিতিসমূহ সৃষ্টি করে।

যারা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন তারা পার্টির গণলাইনকে আত্মস্থ করেন এবং নিজেদের জীবন দান করেন যাতে পার্টি দেশব্যাপী ক্ষমতা দখল করতে পারে এবং বিশ্ববিপ্লবকে সেবা করতে পারে।

পার্টির গণলাইনকে আত্মস্থ করুন!

বিদ্রোহে জনগণের বিস্ফোরনকে সংগঠিত করুন!

গনযুদ্ধের মধ্যে ও তার জন্য জনগণের অন্তর্ভুক্তকরণে বিরাট উলম্ফণ ঘটান!