অনুবাদ সাহিত্য পত্র
৯
সম্মিলিত সরকার সম্পর্কে
-মাও সেতুঙ
সামরিক লাইন
-পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি
অনুবাদ সাহিত্য পত্র
সংখ্যা নং ৯
কমরেড মাও সেতুঙের একটি গুরুত্বপুর্ণ রচনা
ও পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির একটি মৌলিক দলিল
অকেনেস, পূবাসপা এমইউজি কর্তৃক অক্টোবর ২৪, ২০০৯ প্রকাশিত।
সম্পাদকীয়
আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা তাদের কালো থাবা বিস্তার করেছে আমাদেরই বিরুদ্ধে। এর পুর্বতন সরকারগুলোর কলঙ্কিত পথ অনুসরণ করে তারা আমাদের ও অপরাপর মাওবাদী কর্মীদের হত্যা করে চলেছে তথাকথিত ভুয়া ক্রসফায়ারের নামে। শত শত মানুষকে তারা ইতিমধ্যেই হত্যা করেছে। দ্রব্যমূল্যের ভয়ংকর স্ফীতিতে জনগণ যখন দিশেহারা, যখন এই ফ্যাসিস্টরা সমগ্র বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় আর সাধারণ মানুষকে বুটের নীচে দাবিয়ে দিয়ে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানীগুলোর কাছে বিকিয়ে দিচ্ছে, যখন উজানে বাঁধ দিয়ে আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে মারার ভারতীয় ও চীনা ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়িত হতে দিচ্ছে তখন ফ্যাসিস্টরা জানে যে তাদের পায়ের নীচে মাটি নেই, তাই এক শ্বেত সন্ত্রাসের মাধ্যমেই কেবল তারা তাদের আয়ু বৃদ্ধি করতে পারে। যদিও মৃত্যু তাদের তাড়া করে ফিরবে সর্বক্ষণ। আর তাদের কবর খোদাইকারীরা তাদের সম্মুখেই আছে। তারা আছেন কারখানায় কারখানায়, খনিতে, জমিতে এমনকি তাদের নিজেদের বাহিনীর মধ্যেও। এই কিছুদিন আগেও বিডিআরের নিপীড়িত সৈনিকগণ তাদের মাথার ওপর চেপে বসা… । এর পেছনে তারা দেশী বিদেশী বহুবিধ ষড়যন্ত্র আবিষ্কারের অনেক চেষ্টা চালিয়েও শেষমেষ দেখা গেল সমগ্র বাহিনী সচেতনভাবেই শোষকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ঘুরিয়ে দিয়েছিল, যা হচ্ছে সিপাহী বিদ্রোহ। ১৮৫৭, ১৯৭১, ১৯৭৫…এরকম অসংখ্য সিপাহী বিদ্রোহেরই এ হচ্ছে ধারাবাহিকতা। এরকম একটা রক্তাক্ত ভুমিতে রক্ত রঞ্জিত আমরা কলম ধরছি। ভারতে মাওবাদী গণযুদ্ধের দাবানল জ্বলে ওঠছে। দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি লাল পতাকা হাতে ইতিহাসের রাজপথে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় বিপ্লব হচ্ছে এখন একটা বাস্তবতা। পেরুতে মাওবাদী গেরিলাদের আক্রমণে মার খেয়ে সেদেশের প্রতিক্রিয়াশীলরা ইসরায়েলের সমর বিশেষজ্ঞদের শরনাপন্ন হয়েছে যারা কিনা রাশিয়ার কাছে মারাত্মকভাবে মার খেয়ে জর্জিয়া থেকে পালিয়েছিল কিছুদিন আগে। ফিলিপাইনে মাওবাদী গেরিলারা এগিয়ে চলেছেন। আমরাও পিছিয়ে থাকবোনা। আমরা ইতিমধ্যেই ভ্রান্ত লাইনগুলোকে পরাজিত করতে শুরু করেছি। লাইনগত সংগ্রামে আমরা শক্তি অর্জন করছি।
অনুবাদ সাহিত্যপত্র ৯ নং সংখ্যায় আমরা প্রকাশ করছি দুটি বিরাট গুরুত্বপুর্ণ রচনা। ১) সম্মিলিত সরকার সম্পর্কে কমরেড মাওসেতুঙের এপ্রিল, ২৪, ১৯৪৫-এ রচিত সিপিসির ৭ম কংগ্রেসে প্রদত্ত রিপোর্ট। ২) পিসিপির অন্যতম মৌলিক দলিল-সামরিক লাইন।
সম্মিলিত সরকার সম্পর্কে রচনাটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ফ্যাসিবাদের চুড়ান্ত পতন, জাপ হানাদারদের আসন্ন সামগ্রিক পরাজয়ের প্রেক্ষিতে রচিত চীনের জনগণের সামনে তুলে ধরা দিশা। এটা হচ্ছে এক রাজনৈতিক রচনা। এ হচ্ছে এক রাজনৈতিক উদ্যোগ। চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধের সারসংকলনও। এক কর্মনীতির সূত্রায়ণ। চীনা জনগণের সামনে কমিউনিস্টদের কর্মসুচি। চীনা জনগণের সকল জাপবিরোধি শক্তিকে সমাবেশিতকরণে ও ঐক্যবদ্ধকরণে জাপ হানাদারদের সম্পুর্ণরূপে উচেছদ করে এক স্বাধীন, মুক্ত, গণতান্ত্রিক, ঐক্যবদ্ধ, প্রগতিশীল ও শক্তিশালি নয়া চীন নির্মাণ করতে একটা ঐকমত্যের সাধারণ কর্মসুচি চীনা জনগণ, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও সকল জাপবিরোধি গণতান্ত্রিক পার্টির প্রয়োজন ছিল। সভাপতি মাও চীনের জনগণের সামনে নয়া গণতান্ত্রিক চীনের কর্মসুচি তুলে ধরেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশিল কুওমিনতাঙ-এর সাথে মিলে সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান কীভাবে নয়াগণতান্ত্রিক কর্মসুচি বাস্তবায়ন করবে। এখানে মাও মুক্ত এলাকাসমূহ ও বাহিনীসমূহ বিসর্জন দিয়ে সম্মিলিত সরকারের কথা বলেননি, যেটা নেপালে দেখা গেছে। মাও মুক্ত এলাকা ও বাহিনীর ভিত্তিতেই উপরোক্ত কর্মসুচি দিয়েছেন। যা বাস্তবে দেখা গেছে, অল্প দিন পরেই জাপ হানাদারদের চুড়ান্ত পরাজয়ের পর কুওমিনতাঙের প্রতিক্রিয়াশিল চক্রের সাথেই গৃহযুদ্ধ লড়তে হয় কমিউনিস্টদের এবং বিপ্লব সামগ্রিক বিজয়ের দিকে এগিয়ে যায়। সম্মিলিত সরকারের মাওবাদী আহ্বাণ বস্তুত কমিউনিস্টদের জন্য রাজনৈতিক বিজয় আর প্রতিক্রিয়াশীলদের রাজনৈতিক পরাজয় ডেকে এনেছে। এর মাধ্যমে কমিউনিস্টরা জনগণের ব্যাপক স্তরকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন। চেয়ারম্যান মাও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, বাহিনী না থাকলে জনগণের কিছুই থাকবেনা। আর মুক্ত এলাকাসমূহ হচ্ছে সমগ্র চীনা জনগণের আশা ভরসার কেন্দ্র।
পিসিপির সামরিক লাইন দলিলটি হচ্ছে একটি মৌলিক দলিল। এটা চেয়ারম্যান মাওসেতুঙের দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের সামরিক লাইনের বিকাশ। এটা মূর্ত দলিল। পেরুতে গণযুদ্ধ এক ঐক্যবদ্ধ গণযুদ্ধের রূপ নিয়েছে যেখানে গ্রামাঞ্চলকে প্রধান হিসেবে নিয়ে শহরাঞ্চলে পরিপুরক যুদ্ধ চালানো হয়েছে। মাওবাদী গণযুদ্ধের তত্ত্বকে তারা সর্বহারা শ্রেণীর সামরিক তত্ত্ব হিসেবে দেখেন যা মাও কর্তৃক রচিত এবং গনসালো কর্র্তক পুনপ্রতিষ্ঠিত। এ দলিলটি এক অতিশয় গুরুত্বপুর্ণ দলিল যা আমাদের নিজেদের নয়া গণযুদ্ধের সংজ্ঞায়িত করণে কাজে দেবে।
অক্টোবর ২৪, ২০০৯
সম্মিলিত সরকার সম্পর্কে
এপ্রিল ২৪, ১৯৪৫
– মাও সেতুঙ
[চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ৭ম জাতীয় কংগ্রেসে কমরেড মাও সেতুঙ কর্তৃক রচিত রাজনৈতিক রিপোর্ট]
ক) চীনা জনগণের মৌলিক দাবী
আমাদের কংগ্রেস নীচের পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাপ হানাদারদের বিরুদ্ধে বর্ণনাতীত দুঃখকষ্টের মধ্যে অপরিমেয় আত্মদানের মধ্য দিয়ে চীনা জনগণ কর্তৃক পরিচালিত প্রায় আট বছরের দৃঢ়, বীরত্বব্যাঞ্জক ও অদম্য সংগ্রামের পর এক নতুন পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে। বিশ্বে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনকারীদের বিরুদ্ধে ন্যায্য ও পবিত্র সংগ্রামে নির্ধারক বিজয় অর্জিত হয়েছে এবং সেই মুহুর্ত অদুরে যখন মিত্রদেশগুলোর সাথে সমন্বয়ে চীনা জনগণ কর্তৃক জাপানী আগ্রাসনকারীরা পরাজিত হবে। কিন্তু চীন বিভক্ত হয়ে রয়েছে এবং এখনো মারাত্মক সংকট মোকাবেলা করছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী? সকল সন্দেহের ঊর্ধ্বে জরুরী কর্তব্য হচ্ছে সকল রাজনৈতিক পার্টি ও গ্রুপসমূহের প্রতিনিধি ও পার্টি বহির্ভুত প্রতিনিধিদের ঐক্যবদ্ধ করা এবং একটি অস্থায়ী গণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠিত করা গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধন, বর্তমান সংকট অতিক্রম, জাপানী আক্রমণকারীদের পরাজিত করতে মিত্র দেশগুলির সাথে কার্যকর সমন্বয়ে লড়াই করার লক্ষ্যে সকল জাপ-বিরোধি সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং এভাবে যাতে জাপানী থাবা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে চীনা জনগণকে সক্ষম করে তোলা যায়। তারপর একটা ব্যাপক গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে এক জাতীয় প্রতিনিধি সভা (এসেম্বলী) ডাকার প্রয়োজন হবে এবং একটা আনুষ্ঠানিক সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হবে, এটাও একটি সম্মিলিত চরিত্রের হবে এবং তখনো তা সকল পার্টি, গ্রুপ এবং পার্টি বহির্ভুত জনগণের ব্যাপকতর প্রতিনিধিযুক্ত হবে এবং মুক্ত জনগণ ও সমগ্র দেশকে যা এক স্বাধীন, মুক্ত, গণতান্ত্রিক, ঐক্যবদ্ধ, প্রগতিশীল ও শক্তিশালি নয়া চীন গড়তে নেতৃত্ব দেবে। সংক্ষেপে, আমাদেরকে ঐক্য ও গণতন্ত্রের লাইন গ্রহণ করতে হবে, আগ্রাসনকারীদের পরাজিত করতে হবে এবং এক নয়া চীন গড়ে তুলতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি কেবল এটাই চীনা জনগণের মৌলিক দাবীর প্রকাশ ঘটাতে পারে। তাই, আমার রিপোর্ট প্রধানভাবে এই দাবীসমূহের বোঝাপড়া করবে। একটা গণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে কি হবেনা তা চীনা জনগণের জন্য এবং মিত্র দেশসমূহের গণতান্ত্রিক জনমতের জন্য একটা গভীর চিন্তার বিষয় হয়েছে। তাই, আমার রিপোর্ট এই প্রশ্ন বিশদকরণে নির্দিষ্টভাবে জোর দেবে। আট বছরের জাপ- বিরেধি প্রতিরোধ যুদ্ধে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বহু প্রতিকুলতা অতিক্রম করেছে এবং মহান সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি দাবী করছে যে আমাদের পার্টি আরো কঠিনভাবে ও তীব্রভাবে কাজ করুক এবং সে অব্যাহতভাবে প্রতিকুলতা মোকাবেল করে যাক এবং চীনা জনগণের মৌলিক দাবী পুরণ করতে সচেষ্ট থাকুক।
খ) আন্তর্জাতিক ও দেশিয় পরিস্থিতি
চীনা জনগণ কি এই মূল দাবীসমূহকে বাস্তবে রূপদান করতে পারবেন? এটা তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার স্তর, ঐক্য ও প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করবে। একইসাথে, বর্তমান আন্তর্জাতিক ও দেশিয় পরিস্থিতি অত্যন্ত অনুকুল সুযোগ নিবেদন করে। যদি চীনা জনগণ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন এবং অবিচলিতভাবে, সজীবতার সাথে এবং অব্যাহতভাবে লড়াই করে যান, তারা সন্দেহাতীতভাবে আগ্রাসনকারীদের পরাজিত করবেন এবং এক নয়া চীন গড়ে তুলবেন। তাদের পবিত্র কর্তব্য সম্পাদনে তাদের সংগ্রামে প্রচেষ্টাকে অবশ্যই দ্বিগুণ করতে হবে।
বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কি?
বর্তমান সামরিক পরিস্থিতি হচ্ছে সোভিয়েত বাহিনী বার্লিন আক্রমণ করছে এবং বৃটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মিত্র বাহিনী এই আক্রমণের সাথে সমন্বয়ে হিটলারীয় অবশেষকে আক্রমণ করছে, যেখানে ইতালীয় জনগণ অভুত্থান সংঘটিত করছেন। এসবই হিটলারকে চিরতরে অপসারণ করবে। হিটলার উতখাত হওয়ার পর জাপানী হানাদারদের পরাজয় আর বেশি দুরে থাকবেনা। চীনা ও বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীলদের ভবিষ্যতবাণির বিপরীতে ফ্যাসিবাদী হানাদারদের শক্তি সন্দেহাতীতভাবে উচ্ছেদ হবে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক শক্তি সন্দেহাতীতভাবে জয়ী হবে। বিশ্ব প্রশ্নাতীতভাবে প্রগতির রাস্তা ধরবে, প্রতিক্রিয়ার নয়। অবশ্যই আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এবং ঘটনার কিছু অস্থায়ী অথবা সম্ভবত এমনকি মারাত্মক বাঁকের সম্ভাবনাকে হিসেব করতে হবে; অনেক দেশে এখনো শক্তিশালি প্রতিক্রিয়াশিল শক্তি রয়েছে যারা জনগণের ঐক্য, প্রগতি ও মুক্তিকে কেড়ে নিতে পারে। যে এই সম্ভাবনাকে দেখতে পাবেনা সে রাজনৈতিক ভুল করবে। ইতিহাসের সাধারণ প্রবণতা, যাহোক, ইতোমধ্যে পরিস্কারভাবে নির্ধারিত হয়েছে এবং পরিবর্তন হবেনা। এটা ফ্যাসিবাদীদের জন্য এবং সকল দেশের প্রতিক্রিয়াশিল যারা বস্তুত তাদের সাহায্যকারী তাদের জন্য খারাপ কিন্তু সকল দেশের জনগণ ও সংগঠিত গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য তা আশির্বাদ। জনগণ এবং কেবলমাত্র জনগণই বিশ্ব ইতিহাসের চালিকাশক্তি। সোভিয়েত জনগণ বিরাট সামর্থ গড়ে তুলেছেন এবং ফ্যসিবাদকে পরাজিতকরণে প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তাদেরই প্রচেষ্টা এবং সেইসাথে অন্য ফ্যাসি-বিরোধী মিত্রদেশগুলির জনগণের প্রচেষ্টা ফ্যাসিবাদের ধ্বংসকে সম্ভব করে তুলছে। যুদ্ধ জনগনকে শিক্ষিত করেছে এবং জনগণই কেবল যুদ্ধে জয়ী হবেন, শান্তি ও প্রগতি জয় করবেন।
এই নয়া পরিস্থিতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের থেকে খুবই পৃথক। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্ব ছিলনা এবং আজকে বহু দেশে যতখানি ততখানি জনগণ রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিলনা। দুই বিশ্বযুদ্ধ সমগ্রভাবে দুটি ভিন্ন যুগকে প্রতিনিধিত্ব করে।
এর অর্থ এই নয় যে ফ্যাসিবাদি হানাদার দেশগুলোর পরাজয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি এবং আন্তজাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার পর কোন সংগ্রাম হবেনা। ফ্যাসিবাদের অবশিষ্ট শক্তিসমূহ যা এখনো ব্যাপক বিস্তুৃত নিশ্চিতভাবে অব্যাহতভাবে গোলযোগ সৃষ্টি করে যাবে, যেখানে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনকে মোকাবেলার শিবিরের মধ্যে সেসব শক্তি রয়েছে যারা গণতন্ত্রের বিরোধিতা করে ও অপরাপর জাতিসমূহকে নিপীড়ণ করে এবং তারা বিবিধ দেশে, উপনিবেশ ও আধা-উপনিবেশের জনগণকে নিপীড়ণ করে যাবে। তাই, আন্তর্জাতিক শান্তি স্থাপন করার পর বিশ্বের বৃহত্তর অংশে বহুবিধ সংগ্রাম তখনো থাকবে-ফ্যাসিবাদ বিরোধি জনগণ ও গণতন্ত্রবিরেধিদের মধ্যে, জাতীয় মুক্তি ও জাতীয় নিপীড়ণের মধ্যে। জনগণ সর্বাধিক বিজয় অর্জন করবেন কেবল দীর্ঘ ও অব্যাহত প্রচেষ্টায় যখন ফ্যাসিবাদের অবশিষ্ট শক্তিসমূহ, গনতন্ত্র -বিরোধি শক্তি এবং সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে জয় করা হবে। নিশ্চিত যে সেই দিন খুব দ্রুত অথবা সহজভাবে আসবেনা, কিন্তু নিশ্চিতভাবে তা আসবে। ফ্যাসিবাদ-বিরোধি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয যুদ্ধ-পরবর্তী সংগ্রামসমূহে জনগণের বিজয়ের পথ তৈরি করবে। একটা স্থায়ি শান্তি কেবল তখনই নিশ্চিত হবে যখন এই সংগ্রামসমূহে বিজয় ছিনিয়ে আনা হবে।
বর্তমান দেশীয় পরিস্থিতি কী?
চীনের দীর্ঘস্থায়ি যুদ্ধ বিশেষায়িত করেছে এবং অব্যাহতভাবে চীনের জনগণের বিরাট আত্মত্যাগ বিশেষায়িত করে যাবে, কিন্তু এই যুদ্ধই তাদের ইস্পাত করেছে। এটা গত শত বছরের তাদের সকল বিরাট সংগ্রামসমূহের চেয়ে অধিক মাত্রায় চীনের জনগনকে জাগ্রত ও ঐক্যবদ্ধ করেছে। চীনা জনগণ শুধু এক ভয়ংকর জাতীয় শত্রুকেই মোকাবেলা করছেননা বরং বস্তুত একে সহায়তাকারী শক্তিশালি দেশিয় প্রতিক্রিয়াশিল শত্রুকেও; এটা হচ্ছে চিত্রের এক দিক। অপর দিকটি হচ্ছে চীনের জনগণ অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি রাজনৈতিকভাবে সচেতনই শুধু নন বরং শক্তিশালি মুক্ত এলাকাসমূহ এবং দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক আন্দোলন সৃষ্টি করছেন যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এগুলো অনুকুল দেশিয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যদি গত শত বছরের চীনা জনগণের সংগ্রামসমূহের পরাজয় কিছু আ্ন্তর্জাতিক ও দেশিয় পরিস্থিতির অনুপস্থিতির কারণে হয়ে থাকে, তাহলে আজকে পরি্স্থিতি ভিন্ন-সকল প্রয়োজনীয় শর্ত বর্তমান। পরাজয় এড়ানোর ও বিজয় ছিনিয়ে আনার সকল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা জয়ী হবো যদি আমরা সমগ্র জনগণকে দৃঢ় সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি এবং তাদের যথার্থ নেতৃত্ব প্রদান করতে পারি।
আজকে চীনা জনগণের অনেক বেশি আস্থা রয়েছে যে তারা হানাদারদের পরাজিত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন এবং এক নয়া চীন গড়তে পারেন। তাদের জন্য এখন সময় হয়েছে সকল প্রতিকুলতা জয় করার এবং তাদের মৌলিক দাবীসমূহ ও তাদের মহান ঐতিহাসিক আকাঙ্খা পুরণ করার। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ আছে কি? আমার মনে হয় নেই। এমনই হচ্ছে আজকের সাধারণ আন্তর্জাতিক ও দেশিয় পরিস্থিতি।
গ) জাপ বিরোধি যুদ্ধে দুই লাইন
চীনের সমস্যার মূল
দেশিয় পরিস্থিতির কথা বলতে গেলে চীনের প্রতিরোধ যুদ্ধেরও একটা মূর্ত বিশ্লেষণ আমাদের করতে হবে।
ফ্যাসিবাদ-বিরোধি যুদ্ধে অংশগ্রহণরত পাঁচটি বৃহত দেশের মধ্যে চীন অন্যতম এবং সে এশিয়া মহাদেশে জাপ হানাদারদের মোকাবেলারত প্রধান দেশ। জাপ-বিরোধি যুদ্ধে চীনা জনগণ বিরাট ভুমিকা নিয়েছে শুধু তাই নয় বরং যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে শান্তি রক্ষায় বিরাট ভুমিকা পালন করবে এবং প্রাচ্যে শান্তি রক্ষায় নির্ধারক ভুমিকা পালন করবে। চীন নিজেকে মুক্ত করতে বিরাট প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং মিত্র দেশগুলিকে সাহায্য করেছে আট বছরের জাপ বিরোধি প্রতিরোধ যুদ্ধের সময়। এই প্রচেষ্টাসমূহ চালিয়েছেন প্রধানভাবে চীনের জনগণ। চীনের সৈন্যবাহিনীর বিশাল সংখ্যক অফিসার ও সৈনিক লড়াই করেছেন এবং রক্ত দিয়েছেন ফ্রন্টে; পশ্চাদভাগে চীনের শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবি ও শিল্পপতিরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন; প্রবাসী চীনারা যুদ্ধের সমর্থনে অর্থ সহযোগিতা করেছেন, জনগণ বিরোধি সদস্য ছাড়া সকল জাপ বিরোধি রাজনৈতিক পার্টিসমুহ যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। সংক্ষেপে, তাদের রক্ত ও ঘাম সহযোগে, দীর্ঘ আট বছর ধরে চীনা জনগণ বীরত্বব্যাঞ্জকভাবে জাপানী হানাদারদের লড়েছেন। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে চীনা প্রতিক্রিয়াশিলরা দুর্নাম রটাচ্ছে এবং জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে যুদ্ধে চীনা জনগণের পালিত ভুমিকার সত্য যাতে বিশ্বজনগণ না জানেন। পাশাপাশি, এই আট বছরের যুদ্ধে চীনের অর্জিত বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতার এখনো কোন সামগ্রিক সারসংকলন নেই। তাই, এই কংগ্রেসের উচিত এসকল অভিজ্ঞতার যথার্থ সারসংকলন করা জনগণকে শিক্ষিত করতে এবং কর্মনীতি সূত্রায়ণে আমাদের পার্টিকে একটা ভিত্তি যোগান দিতে।
এরকম সারসংকলনে এলে এটা পরিস্কার সবার কাছে যে চীনে দুই ভিন্ন পথ নির্দেশ রয়েছে। একটা জাপ হানাদারদের পরাজয়ে পরিচালিত করে। যেখানে অন্যটি তাদের পরাজয় শুধু অসম্ভবই করে তোলে তাই নয় কিছূ দিক থেকে তাদের সহায়তা করে এবং প্রতিরোধ যুদ্ধকে খাটো করে।
জাপানের প্রতি নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের কুওমিনতাঙ সরকারের কর্মনীতি এবং জনগণকে নিপীড়ণ করার তার দেশিয় কর্মনীতির ফল হয়েছে সামরিক বিপর্যয়, বিপুল ভুখন্ড হারানো, অর্থনৈতিক সংকট, জনগণের জন্য দুঃখকষ্ট ও নিপীড়ণ এবং জাতিয় ঐক্য ভেঙে যাওয়া। চীনা জনগণের সকল জাপ-বিরোধি শক্তিকে কার্যকর যুদ্ধে সমাবেশিতকরণ ও ঐক্যবদ্ধকরণে এই প্রতিক্রিয়াশিল কর্মনীতি একটা প্রতিবন্ধকতা হয়ে রয়েছে এবং জনগণের জাগ্রতকরণ ও ঐক্যকে বাঁধাগ্রস্ত করেছে। তথাপি এই রাজনৈতিক জাগরণ ও এই ঐক্যের বিকাশ কখনো বন্ধ হয়নি, বরং একটা আঁকাবাঁকা পথে সামনের দিকে এগিয়েছে জাপানী হানাদার ও কুওমিনতাঙ সরকারের দ্বিবিধ নিপীড়ণের অধীনে। পরিস্কারভাবে, চীনে দীর্ঘদিন ধরে দুই লাইন রয়েছে, জনগণকে নিপীড়ণ করার ও নিস্ক্রিয় প্রতিরোধের কুওমিনতাঙ সরকারের লাইন এবং গণযুদ্ধ চালাতে নিজেদের সচেতনতা ও ঐক্য বৃদ্ধির চীনা জনগণের লাইন। চীনের সকল সমস্যার মূল এখানেই নিহিত।
ইতিহাস আঁকাবাঁকা পথ অনুসরণ করে
চীনের সমস্যার মূল দুই লাইনের প্রশ্নকে বুঝতে জনগণকে সাহায্য করতে জাপ-বিরোধি আমাদের প্রতিরোধ যুদ্ধের ইতিহাস খুঁজতে হবে। চীনের প্রতিরোধের গণযুদ্ধ এক আঁকাবাঁকা পথ অনুসরণ করেছে। সুদূর ১৯৩১-এর দিকে এটা শুরু হয়। সে বছর সেপ্টেম্বর ১৮-এ জাপানী দখলদাররা সেন ইয়াং দখল করল এবং কয়েক মাসের মধ্যে তারা উত্তর পুর্বাঞ্চলীয় তিনটি প্রদেশ দখল করে। কুওমিনতাঙ সরকার প্রতিরোধ না করার কর্মনীতি গ্রহণ করে। কিন্তু কুওমিনতাঙ সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অথবা তার সাহায্যে এই প্রদেশগুলির জনগণ ও সৈন্যবাহিনীর দেশপ্রেমিক অংশ জাপ-বিরোধি স্বেচ্ছাসেবক দল এবং জাপবিরোধি ঐক্যবদ্ধ সৈন্যবাহিনী সংগঠিত করলো এবং বীরত্বব্যাঞ্জক গেরিলাযুদ্ধে নিয়োযিত হলো। একটা সময়ে এই বীরত্বব্যাঞ্জক গেরিলাযুদ্ধ বিরাট মাত্রায় বেড়ে ওঠলো, এবং বহু দুঃখকষ্ট ও বিপর্যয় সত্ত্বেও তা শত্রু কর্তৃক কখনো ধ্বংস হয়নি। যখন জাপ দখলদাররা ১৯৩২ সালে সাংহাই আক্রমণ করলো আবারো কুওমিনতাঙের দেশপ্রেমিক একটা গ্রুপ কুওমিনতাঙ সরকারের ইচ্ছাকে চ্যালেঞ্জ করলো এবং জাপানী দখলদারদের প্রতিরোধে ১৯-তম রুট বাহিনীকে নেতৃত্ব দিল। ১৯৩৩ সালে জাপ দখলদাররা জেহল ও চাহার প্রদেশ আক্রমণ করলো এবং তৃতীয় বারের মতো কুওমিনতাঙের দেশপ্রেমিকদের একটা গ্রুপ কুওমিনতাঙ সরকারের ইচ্ছাকে চ্যালেঞ্জ করলো এবং কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সহযোগিতা করলো শত্রুকে প্রতিরোধে জাপ বিরোধি মিত্র বাহিনী গড়ে তোলায়। কিন্তু জাপ বিরোধি এসকল লড়াইযে সমর্থন সামগ্রিকভাবে আসে চীনা জনগণ, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি, অন্য গণতান্ত্রিক গ্রুপসমূহ এবং দেশপ্রেমিক চীনা প্রবাসীদের কাছ থেকে, যেখানে প্রতিরোধ না করার কর্মনীতিসমেত কুওমিনতাঙ সরকার কোন অবদান রাখেনা। বিপরীতে, সাংহাই ও চাহারে জাপ-বিরোধি ততপরতা খোদ কুওমিনতাঙ সরকার কর্তৃক ধ্বংস হয়। ১৯৩৩ সালে এটা ফুকিয়েনে ১৯-তম রুট বাহিনী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গণসরকারকে ধ্বংস করে।
সেসময়ের কুওমিনতাঙ সরকার কেন প্রতিরোধ না করার কর্মনীতি গ্রহণ করলো? প্রধান কারণ হলো এই যে এটা ১৯২৭ সালে কুওমিনতাঙ-কমিউনিস্ট পার্টি সহযোগিতা এবং চীনা জনগণের ঐক্যকে ধ্বংস করে।
১৯২৪ সালে ড. সান ইয়াত-সেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রস্তাব গ্রহণ করে কুওমিনতাঙের প্রথম জাতীয় কংগ্রেস আহ্বান করেন যেখানে কমিউনিস্টরা অংশ নেয়। কংগ্রেস রাশিয়ার সাথে মোর্চা, কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সহযোগিতা এবং কৃষক ও শ্রমিকদের প্রতি সহযোগিতার তিন মহান কর্মনীতি গ্রহণ করে, হোয়ামপোয়া সামরিক একাদেমি প্রতিষ্ঠা করে, এবং কুওমিনতাঙ, কমিউনিস্ট পার্টি এবং জনগণের সকল স্তরের যুক্ত ফ্রন্ট গঠণ করে। ফলে কুয়াংতোঙ প্রদেশে প্রতিক্রিয়াশিল শক্তি ১৯২৪-২৫ সালে ধ্বংস হয়, ১৯২৬-২৭ পর্যায়কালে বিজয়ী উত্তর অভিযান চালানো হয়, ইয়াংসী ও পীত নদী বরাবর অধিকাংশ এলাকাই জয় করা হয়েছিল, উত্তরের যুদ্ধবাজ সরকার পরাজিত হয়েছিল, জনগণের সংগ্রাম এমন মাত্রায় বিকশিত হয়েছিল যা ছিল চীনের ইতিহাসে অ-ভূতপুর্ব। কিন্তু উত্তর অভিযানের বিকাশের এক জটিল মুহুর্তে ১৯২৭-এর বসন্তের শেষে ও গ্রীস্মের শুরুতে কুওমিনতাঙ কর্তৃপক্ষ তাদের গৃহীত বিশ্বাসঘাতকতাবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল “পার্টি শোধন” কর্মনীতি এবং গণহত্যার মাধ্যমে ধ্বংস করলো এই জাতীয় যুক্তফ্রন্টকে – কুওমিনতাঙ, কমিউনিস্ট পার্টি ও সকল স্তরের জনগনের যুক্তফ্রন্টকে, যাতে চীনা জনগনের মুক্তির আদর্শ মূর্ত হয়েছিল – এবং সকল বিপ্লবী কর্মনীতিকে ধ্বংস করলো। গতকালের মিত্র চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও চীনা জনগণ এখন শত্রু পরিগণিত হল, এবং গতকালের শত্রু সাম্রাজ্যবাদী ও সামন্তবাদীরা এখন মিত্র পরিগণিত হলো। সুতরাং, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও জনগনের বিরুদ্ধে অতর্কিত, বিশ্বাসঘাতকতাবাদী আক্রমণে মহান, গতিশীল ও প্রচণ্ড বিপ্লবকে ধ্বংস করা হলো। তখন থেকে ঐক্যকে গৃহযুদ্ধ দ্বারা, গণতন্ত্রকে একনায়কত্ব দ্বারা এবং উজ্জ্বলতাপুর্ণ চীনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন চীন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হলো। কিন্তু চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও চীনা জনগণ না ভীত না বিজিত না নির্মুল হয়েছেন। তারা ওঠে দাঁড়িয়েছেন, রক্ত মুছে নিয়েছেন, মৃত কমরেডদের কবর দিয়েছেন এবং পুনরায় যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। বিপ্লবের মহান সম্মানকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে তারা সশস্ত্র প্রতিরোধে জেগে ওঠলেন এবং চীনের বিশাল ভুখণ্ডে তারা জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করলেন, ভুমি সংস্কার পরিচালনা করলেন, গণবাহিনী-চীনা লাল ফৌজ গড়ে তোলেন এবং চীনা জনগণের বিপ্লবী শক্তিকে রক্ষা ও সম্প্রসারণ করলেন। ডঃ সান ইয়াত-সেনের তিন গণনীতি যা কুওমিনতাঙ প্রতিক্রিয়াশীলরা বর্জন করেছিল, তা জনগণ, কমিউনিস্ট পার্টি এবং অন্য গণতন্ত্রীরা এগিয়ে নিল।
জাপ হানাদারদের কর্তৃক তিনটি উত্তর পুর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দখল হওয়ার পর বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকা ও লাল ফৌজের ওপর আক্রমণরত সকল কুওমিনতাঙ বাহিনীর প্রতি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রস্তাব করে যে জাপানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের সুবিধার্থে এক শান্তিচুক্তি সম্পাদন করা প্রয়োজন। এই প্রস্তাবনা তিনটি শর্ত সহকারে প্রদান করা হয়-সকল আক্রমণ বন্ধ করতে হবে, জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে এবং জনগণকে সশস্ত্র করতে হবে। কিন্তু কুওমিনতাঙ কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করলো।
তখন থেকে গৃহযুদ্ধের কুওমিনতাঙ সরকারের কর্মনীতি ভয়ংকর হল, যেখানে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি এবং জাপান বিরোধি ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ যুদ্ধের দাবীতে চীনা জনগণের আওয়াজ ক্রমান্বয়ে শক্তিশালি হতে লাগলো। সাংহাই ও অন্য অনেক এলাকায় সকল ধরণের জনপ্রিয় দেশপ্রেমিক সংগঠন গড়ে ওঠলো। ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৬ পর্যন্ত আমাদের পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির নেতৃত্বের অধীনে ইয়াংসি নদীর উত্তর ও দক্ষিণের লাল ফৌজের প্রধান শক্তি চরম দুঃখকষ্ট সহ্য করলো এবং চীনের উত্তর পশ্চিমে সরে এসে সেখানকার লাল ফৌজ ইউনিটসমূহের সাথে একত্রিত হলো। ঠিক এই দুই বছরেই নতুন পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ এক নয়া ও সামগ্রিক রাজনৈতিক লাইন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি গ্রহণ করে এবং পরিচালিত করে-জাপানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এবং সংগ্রামের লক্ষ্য হিসেবে এক নয়া গনতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা সহকারে জাপ বিরোধি জাতীয় যুক্তফ্রন্ট্রের লাইন। ১৯৩৫-এর ডিসেম্বর ৯-এ পিপিং-এর ছাত্র জনতা আমাদের পার্টির নেতৃত্বের অধীনে এক বীরত্বব্যাঞ্জক দেশপ্রেমিক আন্দোলন পরিচালনা করলো; তারা চীনা জাতীয় মুক্তি অগ্রবাহিনী [১] গঠণ করলো এবং চীনের সকল বড় শহরে এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিল। ডিসেম্বর ১২, ১৯৩৬-এ জাপানকে প্রতিরোধ সমর্থনকারী দুই দেশপ্রেমিক কুওমিনতাঙ গ্রুপ উত্তর পুর্বাঞ্চলীয় বাহিনী ও ১৭-তম রুট বাহিনী একত্রে জাপানের সাথে আপোষ আর স্বদেশে গণহত্যার কুওমিনতাঙের প্রতিক্রিয়াশিল কর্মনীতির সাহসী বিরোধিতায় বিখ্যাত সিয়ান ঘটনা সংঘটিত করলো। কুওমিনতাঙের অন্য দেশপ্রেমিকরাও সেসময় একই রকম কুওমিনতাঙের কর্মনীতিতে অসন্তুস্ট ছিল। এগুলো ছিল সেই পরিস্থিতি যা কুওমিনতাঙ কর্তৃপক্ষকে জনগণের দাবীর স্বীকৃতি দিতে গৃহযুদ্ধের কর্মনীতি পরিত্যাগে বাধ্য করে। সিয়ান ঘটনার শান্তিপুর্ণ সমাধান মোড় ঘুরিয়ে দিল; নয়া পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ সহযোগিতা মূর্ত রূপ নিল এবং দেশব্যাপী জাপ-বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হলো। মে, ১৯৩৭-এ লুকাচিয়াও ঘটনা[২]-র অল্প আগে আমাদের পার্টি ঐতিহাসিক জাতীয় সম্মেলন আহ্বাণ করলো যেখানে ১৯৩৫ থেকে পার্টি অনুসৃত নয়া রাজনৈতিক লাইন গৃহিত হলো।
জুলাই ৭ ১৯৩৭-এ লুকোচিয়াও ঘটনা থেকে অক্টোবর ১৯৩৮-এ উহানের পতন পর্যন্ত কুওমিনতাঙ সরকার জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তুলনামূলক সক্রিয় ছিল। সেই সময়কালে বড় মাত্রার জাপানী আক্রমণ এবং সমগ্র জনগণের দেশপ্রেমিক ক্রোধ কুওমিনতাঙ সরকারকে বাধ্য করলো জাপানী আগ্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধকে তার কর্মনীতির কেন্দ্র বানাতে, যা সমগ্র সৈন্যবাহিনী ও জনগনের জাপবিরোধি সংগ্রামে এক অভ্যুত্থান জন্ম দেওয়া সহজ করে তোলে এবং একটা সময়ের জন্য একটা নয়া ও গতিশীল আবহাওয়া ছিল। কমিউনিস্ট ও অন্য গনতন্ত্রীরাসমেত সকল জনগণ সততার সাথে আশা করেছিল যে কুওমিনতাঙ সরকার সুযোগ কাজে লাগাবে গনতান্ত্রিক সংস্কার সাধন করতে এবং ডা. সান ইয়াত-সেনের বিপ্লবী তিন গণনীতিকে অনুশীলনে নিতে, একটা সময়ে যখন জাতি বিপদগ্রস্ত ছিল আর জনগণ উদ্দীপনায় পুর্ণ ছিল। কিন্তু তাদের আশা হতাশায় পরিনত হল। এমনকি তুলনামূলক সক্রিয় প্রতিরোধের ঐ দুই বছরেও কুওমিনতাঙ সরকার অব্যাহতভাবে বিরেধিতা করে গণযুদ্ধের জন্য জনগণের সমাবেশিতকরণকে এবং জাপবিরোধি ঐক্য ও গণতান্ত্রিক ততপরতার জন্য জনগণের স্বতস্ফুর্ত প্রচেষ্টার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কুওমিনতাঙ সরকার চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও অন্য জাপবিরোধি পার্টিসমূহের ওপর তার আগের মনোভাব পরিবর্তন করেছিল প্রতীয়মান হলেও, সে তাদের সমান মর্যাদা দিতে অব্যাহতভাবে অস্বীকৃতি জানায় এবং বহু দিক থেকে তাদের ততপরতার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে। দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক বন্দীদের তখনো ব্যাপকসংখ্যায় তারা জেলে পুরে রেখেছিল। সর্বোপরি ১৯২৭ সালে গৃহযুদ্ধ পরিচালনার পর কুওমিনতাঙ সরকার যে মুষ্টিমেয়র একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল তা তখনো বজায় রেখেছিল যাতে জাতির সর্বসম্মত ইচ্ছার প্রতিনিধিত্বকারী একটা গণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়।
এই সময়কালের একেবারে শুরুতেই আমরা কমিউনিস্টরা তুলে ধরেছিলাম যে জাপবিরোধি চীনের প্রতিরোধ যুদ্ধে দুইটি বিকল্প লাইন রয়েছে, বিজয়ের দিকে পরিচালনাকারী এক সামগ্রিক গণযুদ্ধ, অথবা একটা আংশিক যুদ্ধ পরাজয়ের দিকে পরিচালনাকারী যাতে জনগণ নিপীড়িত থাকে। আমরা আরো তুলে ধরেছিলাম যে যুদ্ধ হবে দীর্ঘস্থায়ি এবং অনিবার্যভাবে বহু বাঁধাবিপত্তি তাতে থাকবে কিন্তু নিজেদের চেষ্টায় চুড়ান্ত বিজয় চীনা জনগণ নিশ্চিতভাবে জয় করবেন।
গণযুদ্ধ
একই সময়কালে কমিউনিস্ট নেতৃত্বাধীন সৈন্যবাহিনীর প্রধান বাহিনী উত্তরপশ্চিম চীনে সরে এসে চীনা জাতিয় বিপ্লবী বাহিনীর অস্টম রুট বাহিনী নাম ধারন করলো, যেখানে চীনা লাল ফৌজের গেরিলা ইউনিটগুলি যারা ইয়াংসী নদীর উভয় পাশে বিবিধ এলাকায় ছিল তারা চীনা বিপ্লবী বাহিনীর নয়া চতুর্থ বাহিনী নাম ধারণ করলো। প্রথমটি উত্তর চীন ফ্রন্টে লড়াই করতে গেল আর পরেরটা কেন্দ্রিয় চীন ফ্রন্টে। গৃহযুদ্ধের সময়কালে চীনা লাল ফৌজ যে হোয়ামপোয়া সামরিক একাদেমির এবং উত্তর অভিযান কালের জাতীয় বিপ্লবী সৈন্যবাহিনীর গণতান্ত্রিক ট্রাডিশন (ঐতিহ্য) বজায় রেখেছিল ও বিকশিত করেছিল, একসময় কয়েক লক্ষ সদস্যে বেড়ে ওঠেছিল। কিন্তু জাপবিরোধি প্রতিরোধ যুদ্ধের শুরুতে কয়েক দশক সহস্রে নেমে গেল আমাদের দক্ষিণের ঘাঁটিগুলিতে কুওমিনতাঙ সরকারের চালিত ধ্বংসযজ্ঞ, লঙমার্চের সময়ে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি এবং অন্যান্য কারণে। ফলত, এমন লোকেরা ছিল যারা এই বাহিনীকে ছোট মনে করতো এবং মনে করেছিল যে জাপানকে প্রতিরোধে কুওমিনতাঙের ওপর প্রধানভাবে নির্ভর করতে হবে। কিন্তু জনগণ হচ্ছেন শেষ্ঠতম বিচারক। জনগণ জানতেন সেসময় ক্ষুদ্র সংখ্যা সত্ত্বেও অস্টম রুট ও নয়া চতুর্থ বাহিনী উচ্চগুণসম্পন্ন এবং তারাই কেবল একটা সত্যিকার গণযুদ্ধ পরিচালনা করতে পারে এবং সীমাহীন ভবিষ্যত খুলে যাবে একবার তারা জাপবিরোধি ফ্রন্টে পৌঁছলে আর সেখানে ব্যাপক জনগণের সাথে মিলিত হলে। এবং জনগণই ছিলেন সঠিক। বর্তমানে, যখন আমি রিপোর্ট লিখছি, আমাদের সৈন্যবাহিনী ইতোমধ্যে ৯,১০,০০০ সদস্যে বিস্তৃত হয়েছে আর আমাদের মিলিশিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২২,০০,০০০ এ যাদের স্বাভাবিক উতপাদনমূলক কাজ থেকে প্রত্যাহার করা হয়না । আমাদের নিয়মিত বাহিনী এখনো সংখ্যাগতভাবে কুওমিনতাঙ বাহিনীর চেয়ে অনেক ক্ষুদ্রতর (কুওমিনতাঙের স্থানীয় ও কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণধিন ইউনিট গণনায়) হওয়া সত্ত্বেও সে জাপানী ও পুতুল বাহিনীকে যে সংখ্যায় যুদ্ধে লড়ছে এবং যুদ্ধফ্রন্টের পরিমাণ দ্বারা, লড়ার কার্যকরিতা দ্বারা, অপারেশনে যে গণসমর্থন সে পায়, তার রাজনৈতিক গুণ, সংসক্তি ও ঐক্যের বিচারে সে ইতোমধ্যেই চীনের প্রতিরোধ যুদ্ধে প্রধান বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
এই বাহিনী শক্তিশালি কারণ তার সকল সৈনিকের রাজনৈতিক সচেতনতাভিত্তিক একটা শৃঙ্খলা রয়েছে, তারা একত্রিত হয়েছে এবং তারা ব্যক্তিগত অথবা কতিপয়ের স্বার্থে অথবা একটা সংকীর্ণ চক্রের সাথে লড়েনা বরং ব্যাপক জনগণের এবং সমগ্র জাতির স্বার্থে। এই বাহিনীর পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনা জনগণের সাথে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো এবং তাদের সর্বান্তকরণে সেবা করা।
এই উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই বাহিনীর রয়েছে এক অদম্য চেতনা এবং সকল শত্রুকে উতখাতে ও কখনো আত্মসমর্পণ না করায় সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যত দুঃখকষ্ট ও বাঁধাবিপত্তিই থাক যতক্ষণ পর্যন্ত একজনও জীবিত আছেন তিনি যুদ্ধ করে যাবেন।
এই উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই বাহিনী নিজ সারির মধ্যে এবং তার সারির বাইরে উল্লেখযোগ্য ঐক্য অর্জন করেছে। আভ্যন্তরীনভাবে অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে, উচ্চতর ও নিম্নতর স্তরের মধ্যে, সামরিক কাজ, রাজনৈতিক কাজ এবং পশ্চাদএলাকার সেবা কাজের মধ্যে ঐক্য রয়েছে এবং বাইরে, সৈন্যবাহিনী ও জনগণের মধ্যে, সৈন্যবাহিনী ও সরকারী সংগঠনসমূহের মধ্যে এবং আমাদের বাহিনী ও মিত্র বাহিনীসমূহের মধ্যে ঐক্য রয়েছে। এই ঐক্যকে ক্ষতি করে এমন যেকোনকিছুকে পরাজিত করা কর্তব্য।
এই উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হয়ে শত্রু অফিসার ও সৈনিকদের জয় করার এবং যুদ্ধবন্দীদের বোঝাপড়া করার সঠিক কর্মনীতি এই বাহিনীর রযেছে। ব্যতিক্রমহীনভাবে শত্রুবাহিনীর সকল সদস্য যারা আত্মসমর্পন করে, যারা আমাদের পক্ষে যোগ দেয় অথবা যারা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে, সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইচ্ছুক, তাদের স্বাগত জানানো হয় এবং যথার্থ শিক্ষা দেওয়া হয়। কোন যুদ্ধবন্দীকে হত্যা, খারাপ ব্যবহার করা অথবা অপমান করা নিষিদ্ধ।
এই উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই বাহিনী রণনীতি ও রণকৌশলের একটা পদ্ধতি গড়ে তুলেছে যা গনযুদ্ধের জন্য অপরিহার্য। পরিবর্তিত মূর্ত বাস্তব অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণভাবে সে নমনীয় গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনায় দক্ষ এবং চলমান যুদ্ধেও সে দক্ষ।
এই উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই বাহিনী রাজনৈতিক কাজের একটা পদ্ধতি তৈরি করেছে যা গণযুদ্ধের জন্য অপরিহার্য এবং তার নিজ সারিতে, মিত্র বাহিনীগুলোর সাথে ও জনগনের সাথে ঐক্যের লক্ষ্যযুক্ত আর শত্রুবাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে এবং যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যযুক্ত।
এই উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়ে গেরিলা যুদ্ধের পরিস্থিতির অধীনে কার্যরত সমগ্র বাহিনী যুদ্ধের বিরতি এবং ট্রেনিং পর্যায়কালসমূহের মধ্যে বিরতিকে কাজে লাগাতে সক্ষম এবং বস্তুত কাজে লাগিয়েছে শস্য ও অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস উতপাদনে এবং সম্পূর্ণভাবে, অর্ধেক অথবা অন্ততঃ আংশিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হতে যাতে অর্থনৈতিক বিপত্তিকে জয় করা যায়, জীবন জীবিকার মান উন্নত করা যায় এবং জনগণের ওপর বোঝা কমানো যায়। বহুবিধ সামরিক ঘাঁটি এলাকায় বেশকিছু ক্ষুদ্রাকৃতি অস্ত্রনির্মাণ কারখানা প্রতিষ্ঠার প্রতিটি সম্ভাবনা কাজে লাগানো হয়েছে।
অধিকন্তু, এই সৈন্যবাহিনী শক্তিশালি কারণ এর রয়েছে জনগণের আত্মরক্ষী দল এবং মিলিশিয়া-জনগণের বিশাল সশস্ত্র সংগঠণসমূহ যা এর (সৈন্যবাহিনীর) সাথে সমন্বয়ে লড়ছে। চীনের মুক্ত এলাকাসমূহে তরুন থেকে মাঝারি বয়সী সকল নারী পুরুষ স্বেচ্ছামূলকভাবে ও গণতা্ন্ত্রিক ভিত্তিতে এবং উতপাদনে তাদের কাজ ছেড়ে না দিয়ে জাপবিরোধি আত্মরক্ষী দলে সংগঠিত। সৈন্যবাহিনী অথবা গেরিলা ইউনিটসমূহে যারা যোগ দেয় তাদের ছাড়া আত্মরক্ষী দলের শ্রেষ্ঠ সদস্যদের মিলিশিয়ায় আনা হয়। জনগণের এই সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সহযোগিতা ছাড়া শত্রুকে পরাজিত করা অসম্ভব হতো। চুড়ান্তত এই বাহিনী শক্তিশালি তার দুই অংশে বিভক্তির কারণে, প্রধান বাহিনী এবং আঞ্চলিক বাহিনীসমূহ। প্রধান বাহিনী কোন এলাকার অপারেশনে প্রয়োজনে আসে এবং আঞ্চলিক বাহিনী তাদের নিজ স্থানিয় এলাকা রক্ষায় কেন্দ্রিভুত এবং স্থানিয় মিলিশিয়া ও আত্মরক্ষী দলের সাথে সমন্বয়ে শত্রুকে আক্রমণে কে্ন্দ্রিভূত। এই শ্রমবিভাজন জনগণের আন্তরিক সমর্থন লাভ করেছে। এই সঠিক শ্রমবিভাজন ছাড়া যদি উদাহারণস্বরূপ আঞ্চলিক বাহিনীকে অবহেলা করে শুধু প্রধান বাহিনীর প্রতি যদি মনোযোগ দেওয়া হতো চীনের মুক্ত এলাকাসমূহে অর্জনরত পরিস্থিতিতে শত্রুকে পরাজিত করাও একই ভাবে অসম্ভব হতো। আঞ্চলিক বাহিনীসমূহের অধীনে বহু সশস্ত্র কার্যকরি টিম সংগঠিত করা হয়েছে যারা ভাল ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং তাই সামরিক, রাজনৈতিক ও গণকাজের জন্য উপযুক্ত। তারা শত্রু লাইনের পেছনে সর্বাধিক পশ্চাদএলাকায় অনুপ্রবেশ করে, শত্রুকে আক্রমণ করে এবং জনগণকে জাপ বিরোধি সংগ্রামে জাগ্রত করে, এভাবে বিবিধ মুক্ত এলাকার সম্মুখ সারির সামরিক অপারেশনে সহায়তা দেয়। এসবকিছুতেই তারা বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে।
নিজ গণতন্ত্রিক সরকারসমুহের অধীনে চীনের মুক্ত এলাকাসমূহে সকল জাপবিরোধি জনগণকে আহ্বাণ জানানো হয় শ্রমিক, কৃষক, যুব ও নারী এবং সাংস্কৃতিক, পেশাগত এবং অন্য সংগঠণসমূহে যোগদানের যারা সৈন্যবাহিনীর সমর্থনে বিবিধ কর্তব্য সর্বান্তকরণে সম্পাদন করে। জনগণকে সৈন্যবাহিনীতে সমাবেশিত করা, এর জন্য শস্য পরিবহন করা, সৈনিকদের পরিবারের দেখাশুনা করা এবং সৈন্যবাহিনীর ভরন পোষণে সহায়তা করাতে এই কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয়। এই কর্তব্যগুলির মধ্যে রয়েছে গেরিলা ইউনিট, মিলিশিয়া এবং আত্মরক্ষী দল সমাবেশ করা ব্যাপক রেইড সংঘটিত করতে, শত্রুর বিরুদ্ধে মাইন স্থাপন করা, তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা, বিশ্বাসঘাতক ও চরদের খুঁজে বের করা, আহতদের পরিবহন ও রক্ষা করা এবং সৈন্যবাহিনীর অপারেশনে প্রতক্ষ অংশগ্রহণ করা। একইসাথে সকল মুক্ত এলাকার জনগন বহুবিধ ধরণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও স্বাস্থ্যকর্ম এগিয়ে নিচ্ছে। এই প্রশ্নে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হচ্ছে প্রত্যেককে শস্যের উতপাদনে এবং অন্য প্রয়োজনসমূহে সমাবেশিত করা এবং নিশ্চিত করা যে বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ও স্কুলগুলি তাদের অবসর সময় উতপাদনে নিবেদন করে তাদের নিজেেদর ভালর জন্যই, সৈন্যবাহিনী ও জনগণের আত্ম উতপাদন অভিযানের পরিপুরক হিসেবে কাজ করতে এবং এভাবে দীর্ঘস্থায়ি প্রতিরোধ যুদ্ধকে টিকিয়ে রাখতে উতপাদনের এক বিরাট উত্থান সৃষ্টিতে তারা সহায়তা করে। চীনের মুক্ত এলাকাসূহে শত্রু বিরাট ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা এবং মড়ক নিত্য নৈমিত্তিক। যাহোক, সেখানে গনতা্ন্ত্রিক সরকার জনগণকে নেতৃত্ব দিচ্ছে সংগঠিতভাবে এই সমস্যাগুলো সমাধানে এবং মড়ক উচ্ছেদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় বিরাট গণ অভিযানের ফলে অভুতপুর্ব ফলাফল অর্জিত হয়েছে এবং এভাবে দীর্ঘস্থায়ি প্রতিরোধ যুদ্ধে টিকে থাকা সম্ভব করে তুলেছে। এক কথায়, সবকিছুই ফ্রন্টের জন্য, জাপ হানাদারদের পরাজয়ের জন্য এবং চীনা জনগণের মুক্তির জন্য-এটাই হচেছ সমগ্র সৈন্যবাহিনী এবং চীনের মুক্ত এলাকার জনগণের জন্য সাধারণ শ্লোগান, সাধারণ কর্মনীতি।
প্রকৃত গণযুদ্ধ হচ্ছে এমনই। কেবল এমন একটা গনযুদ্ধ পরিচালনা করেই আমরা জাতীয় শত্রুকে পরাজিত করতে পারি। কুওমিনতাঙ ব্যর্থ হয়েছে নির্দিষ্টভাবে গণযুদ্ধের তার কট্রর বিরোধিতার কারনেই।
একবার আধুনিক অস্ত্র দ্বারা সজ্জিত হলে চীনের মুক্ত এলাকাগুলি আরো শক্তিশালি এবং জাপানী হানাদারদের চড়ান্ত পরাজয় সাধন করতে সক্ষম হবে।
দুই রণক্ষেত্র
একেবারে শুরু থেকেই চীনের প্রতিরোধ যুদ্ধে দুটি ফ্রন্ট ছিল, কুওমিনতাঙ ফ্রন্ট এবং মুক্ত এলাকার ফ্রন্ট। অক্টোবর, ১৯৩৮-এ উহানের পতনের পর জাপানী হানাদাররা কুওমিনতাঙ ফ্রন্টে তাদের রণনৈতিক আক্রমণ বন্ধ করলো এবং ক্রমান্বয়ে তাদের প্রধান শক্তিকে মুক্ত এলাকার ফ্রন্টে সরিয়ে নিল। একই সাথে কুওমিনতাঙ সরকারের পরাজয়বাদী ভাবালুতার সুযোগ নিয়ে তারা এর সাথে শান্তি আপসে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করলো, চীনা জাতিকে প্রতারণা করার নীল নকশার এক কর্মনীতি গ্রহণ করে তারা ওয়াঙ চিঙ-ওয়েইকে চুঙকিঙ ত্যাগে ও নানচিঙে একটা পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠায় প্রবৃত্ত করলো। তখন কুওমিনতাঙ সরকার তার কর্মনীতি পরিবর্তন করা শুরু করলো, জাপানকে প্রতিরোধ থেকে গুরুত্ব আরোপ কমিউনিস্ট পার্টি ও জনগণকে বিরোধিতায় সরিয়ে নিয়ে এল। এই স্থানান্তর প্রথমে সামরিক ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতীয়মান করলো। নিজ সামরিক সামর্থ সংরক্ষণে কুওমিনতাঙ সরকার জাপানের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের কর্মনীতি গ্রহণ করলো; সে লড়াইয়ের বোঝা মুক্ত এলাকার দিকে নিক্ষেপ করলো জাপানীদের মুক্ত এলাকায় সবলে আক্রমণ করতে দিয়ে নিজে “পর্বতের শিখরে বসে বাঘের লড়াই দেখার জন্য”।
১৯৩৯-এ কুওমিনতাঙ সরকার প্রতিক্রিয়াশিল “বিদেশি পার্টির ততপরতা নিষিদ্ধ করার মানদন্ড গ্রহণ” করলো এবং প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে জনগণ ও জাপবিরোধি পার্টিসমূহ যে অধিকার অর্জন করেছিল তা থেকে সম্পুর্ণত তাদের বঞ্চিত করলো। তখন থেকে কুওমিনতাঙ এলাকাসমূহে কুওমিনতাঙ সরকার সকল গণতান্ত্রিক দল, প্রথম ও সর্বাগ্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে গোপনে যেতে বাধ্য করলো। এই এলাকাসমূহের প্রতিটি প্রদেশের জেল ও রাজনৈতিক বন্দী শিবিরগুলো কমিউনিস্ট, তরুণ দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রের জন্য যোদ্ধাদের দ্বারা ভরে গেল। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৩ এর শরত পর্যন্ত এই পাঁচ বছরে কুওমিনতাঙ সরকার জাতিয় ঐক্য ভেঙে ফেলতে তিনটি কমিউনিস্ট বিরোধি আাক্রমণাভিযান [৩] পরিচালনা করলো এবং এভাবে গৃহযুদ্ধের মারাত্মক বিপদ সৃষ্টি করলো। এই সময়কালেই নয়া চতুর্থ বাহিনীকে “ভেঙে দেওয়া”র আদেশ দেওয়া হলো এবং দক্ষিন আনহেইয়ে এর নয় হাজারের বেশি সৈনিককে হত্যা করা হলো–একটা ঘটনা যা বিশ্বকে তড়িতাহত করলো। এই নির্দিষ্ট মুহুর্তে মুক্ত এলাকাসমূহে কুওমিনতাঙ বাহিনীর হামলা বন্ধ হলোনা, করবে এমন কোন চিহ্নও দেখা গেলনা। একইসাথে, কুওমিনতাঙ প্রতিক্রিয়াশিলরা সকল ধরণের অপবাদ রটনা করতে লাগলো। তারাই “বেঈমান পার্টি”, “বেঈমান বাহিনী”, “বেঈমান এলাকা” এবং “প্রতিরোধ যুদ্ধকে সাবোটাজ করা এবং রাষ্ট্রকে বিপদগ্রস্থ করা”র মতো লেবেল আঁটলো এবং প্রকাশ ঘটালো কমিউনিস্ট পার্টি, অস্টম রুট বাহিনী ও নয়া চতুর্থ বাহিনী এবং মুক্ত এলাকাকে অপবাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যে। এই সংকট মোকাবেলায় ১৯৩৯-এর জুলাই ২৭-এ চীনের কমিউনিস্ট পার্র্টির কেন্দ্রিয় কমিটি এই শ্লোগান সহকারে ইশতেহার প্রকাশ করলো, “প্রতিরোধে লেগে থাকুন এবং বিশ্বাসঘাতকতাকে বিরোধিতা করুন! ঐক্যে লেগে থাকুন এবং বিভক্তিকে বিরোধিতা করুন! প্রগতিতে লেগে থাকুন এবং পশ্চাদগমণকে বিরোধিতা করুন!” এই পাঁচ বছরে আমাদের পার্টি এই সময়োচিত শ্লোগান বাস্তবায়ন করে তিনটি প্রতিক্রিয়াশিল ও জনগনবিরোধি কমিউনিস্টবিরোধি আক্রমণাভিযানকে প্রচণ্ড শক্তিমত্ততায় দাবিয়ে দিল এবং প্রতিটি মুহুর্তে সংকটকে অতিক্রমন করলো।
এই বছরগুলিতে কুওমিনতাঙ ফ্রন্টে কোন সিরিয়াস লড়াই হয়নি। জাপানী হানাদারদের তলোয়ার প্রধানভাবে মুক্ত এলাকাসমূহের দিকে তাক করা ছিল। ১৯৪৩-এর মধ্যে মুক্ত এলাকার সৈন্যবাহিনী ও জনগণ চীনকে হানা দেওয়া জাপানী বাহিনীর শতকরা ৬৪ ভাগ এবং পুতুল বাহিনীর শতকরা ৯৫ ভাগের ওপর আঘাত হানলো যেখানে কুওমিনতাঙ ফ্রন্ট কেবল শতকরা ৩৬ ভাগ হানাদার বাহিনীকে এবং ৫ ভাগ পুতুল বাহিনীকে মোকাবেলা করলো।
১৯৪৪তে জাপ হানাদাররা চীনের উত্তর-দক্ষিণ রেলওয়ে বাণিজ্যের জন্য খুলে দিতে বাধ্য করতে অপারেশন পরিচালনা করলো [৪]; ভীতসন্ত্রস্ত কুওমিনতাঙ বাহিনী প্রতিরোধে সম্পূর্ণ অক্ষম ছিল। অল্প কয়েক মাসের মধ্যে হোনান, হুনান, কোয়াংসি এবং কোয়াংতুঙ প্রদেশের প্রচুর এলাকা শত্রুর হাতে চলে গেল। তারপর দুই ফ্রন্টে শত্রুবাহিনীর অনুপাত কিছুটা পরিবর্তিত হলো। তাসত্ত্বেও এই রিপোর্ট লেখার এই মুহুর্তেও চীনে ৫,৮০,০০০ জাপানী সৈন্য (তিনটি উত্তর-পুর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ হিসেব না করে)-এর ৪০ ডিভিশনের ৩,২০,০০০ সৈন্যের ২২ ১/২ ডিভিশন অথবা মোট বাহিনীর শতকরা ৫৬ ভাগ মুক্ত এলাকায় নিয়োযিত এবং ২,৬০,০০০ সৈন্যের ১৭ ১/২ ডিভিশন অথবা শতকরা ৪৪ ভাগ কুওমিনতাঙ ফ্রন্টে নিয়োযিত। দুই ফ্রন্টে পুতুল সৈন্যের অনুপাত মোটেই পরিবর্তিত হয়নি।
এটা উল্লেখ করা দরকার যে পুতুল বাহিনী সংখ্যায় ৮,০০,০০০ (নিয়মিত ও স্থানীয় উভয় বাহিনীর) হয় সেসব ইউনিট নিয়ে গঠিত যারা তাদের কুওমিনতাঙ কমান্ডারদের অধীনে আত্মসমর্পণ করেছে অথবা আত্মসমর্পণের পর কুওমিনতাঙ অফিসারদের দ্বারা সংগঠিত। কুওমিনতাঙ প্রতিক্রিয়াশিলরা এই পুতুল সৈন্যবাহিনীকে এই মিথ্যা ও বেঈমান তত্ত্ব দ্বারা সজ্জিত করেছে “বিচ্যুতিপুর্ণ পথ দ্বারা জাতিকে রক্ষা করা”, তাদের আত্মসমর্পণের পর থেকে তাদের নৈতিক ও সাংগঠনিক সমর্থন দিয়েছে জাপানী হানাদারদের সাথে সমন্বয়ে চীনা মুক্ত এলাকাগুলি আক্রমণ করার মাধ্যমে। এই প্রতিক্রিয়াশিলরা বিরাট বাহিনীও সমাবেশ করেছে সবমিলিয়ে ৭,৯৭,০০০-এর কম নয়, সেনশি-কানসু-নিংসিয়া সীমান্ত অঞ্চল এবং অন্য মুক্ত এলাকা অবরোধ অথবা আক্রমণ করতে। কুওমিনতাঙ সরকারের সংবাদ নিপীড়ণ করার কর্মনীতির কারণে বহু চীনা ও বিদেশি এই মারাত্মক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নন।
চীনের মুক্ত এলাকাসমূহ
কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধিন চীনের মুক্ত এলাকাসমুহের জনসংখ্যা ৯,৫৫,০০,০০০। তারা উত্তরে আভ্যন্তরীণ মঙ্গেলিয়া থেকে দক্ষিণ হাইনান দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। শত্রু যেখানে যায় প্রায় সেখানেই অস্টম রুট বাহিনী, নয়া চতুর্থ বাহিনী অথবা জনগণের অন্য বাহিনীকে অপারেশনরত দেখতে পায়। বিশাল মুক্ত ভুখন্ড উনিশটি প্রধান মুক্ত এলাকা নিয়ে গঠিত, লিয়াওনিঙ, জেহল, চাহার, সুইউয়ান, সেনশি, কানসু, নিংসিয়া, সানশি, হোপেই, হোনান, শানতুঙ, কিয়াংসু, চেকিয়াং, আনহোয়েই, কিয়াংসি, হুপেহ, হুনান, কোয়াংতুঙ এবং ফুকিয়েন-এর কমবেশি এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। ইয়েনান হচ্ছে কেন্দ্র যেখান থেকে এসব মুক্ত এলাকাসমূহকে পরিচালনা করা হয়। পীত নদীর পশ্চিমে সেনশি-কানসু-নিংশিয়া সীমান্ত অঞ্চল কেবল ১৫,০০.০০০ জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত, চীনের বিশাল মুক্ত এলাকা গঠণকারী উনিশটি অঞ্চলের কেবল একটি এবং পুর্ব চেকিয়াং প্রদেশ এবং হেইনান দ্বীপ বাদ দিলে জনসংখ্যায় ক্ষুদ্রতম। এব্যাপারে অসেচতন হয়ে কিছু মানুষ মনে করে চীনের মুক্ত ভুখন্ড প্রধানভাবে শেনসি-কানসু-নিংশিয়া সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে গঠিত। কুওমিনতাঙ সরকারের অবরোধ থেকে এই ভ্রান্ত ধারণা আসে। প্রতিটি মুক্ত এলাকায় জাপবিরোধি জাতীয় যুক্তফ্রন্টের সকল প্রয়োজনীয় কর্মনীতিকে অনুশীলন করা হয়েছে, জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সরকার অর্থাত স্থানীয় সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অথবা হচ্ছে, যাতে কমিউনিস্টগণ, জাপবিরোধি পার্টিসমুহের প্রতিনিধিগণ অথবা পার্টিবহির্ভুত প্রতিনিধিগণ পরস্পর সহযোগিতা করছেন। জনগণের সমগ্র শক্তিকে মুক্ত এলাকাসমূহে সমাবেশিত করা হয়েছে। ফলে, শত্রুর ভয়ংকর চাপ, কুওমিনতাঙের সামরিক অবরোধ ও আক্রমণ এবং বাইরের সহযোগিতার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি সত্ত্বেও শত্রুর দখলকৃত ভুখন্ড কমিয়ে ও নিজেদের সম্প্রসারণ করে চীনের মুক্ত এলাকাসমূহ দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং দ্রুত বেড়ে ওঠেছে এবং তারা গণতান্ত্রিক চীনের আদর্শ হয়েছে এবং মিত্রদেশগুলির সাথে সামরিক পারস্পরিক সহযোগিতাসহাকারে জাপানী হানাদারদের উতখাত ও চীনা জনগণকে মুক্ত করতে প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে। চীনের মুক্ত এলাকার সশস্ত্র বাহিনী অস্টম রুট বাহিনী, নয়া চতুর্থ বাহিনী এবং জনগণের অন্য বাহিনীসমূহ জাপবিরোধি লড়াইয়ে শুধু বীরত্মব্যাঞ্জক উদাহারণ স্থাপন করেনি বরং জাপবিরোধি যুক্তফ্রন্ট্রের গণতান্ত্রিক কর্মনীতিকে বাস্তবায়নেও উদাহারণ স্থাপন করেছে। “ড. সান ইয়াত-সেনের তিন গণনীতি যা আজকে চীনের প্রয়োজন, আমাদের পার্টি তার পুর্ণ বাস্তবায়নের জন্য লড়তে প্রস্তুত”কে ইতিকরণ করে ১৯৩৭-এর সেপ্টেম্বর ২২-এ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির ঘোষণা চীনের মুক্ত এলাকাসমূহে পুর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করা হয়েছে।
কুওমিনতাঙ এলাকাসমূহ
একনায়কতান্ত্রিক শাসনে টিকে থাকা কুওমিনতাঙের প্রধান শাসক চক্র জাপানের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের কর্মনীতি এবং জনগণেরর বিরুদ্ধে তাক করা এক দেশিয় কর্মনীতি অনুসরন করে, ফলে তার বাহিনীগুলো তাদের আসল আকারের অর্ধেকে হ্রাস পেয়েছে এবং তাদের অধিকাংশই লড়াই করার কার্যকরি ক্ষমতা হারিয়েছে; এই চক্রের ও জনগণের মধ্যে গভীর ফাঁটল রয়েছে এবং গন দারিদ্র, ফুটন্ত অসন্তোষ এবং ব্যাপক বিস্তৃত বিদ্রোহের এক মারাত্মক সংকট যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ শুধু তীব্রভাবে কমিয়েই দেয়নি বরং চীনা জনগণের সকল জাপবিরোধি বাহিনীর সমাবেশ ও ঐক্যেরও তা বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতি”, কিন্তু তাদের ততপরতা জাতির বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠের দাবীর সাথে সামঞ্জসপুর্ণ নয়। তারাও বলে, “সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র”, কিন্তু তারা যা অর্থ করে তা হচ্ছে বৃহত ভুস্বামী, বৃহত ব্যাংকার ও বৃহত মুতসুদ্দিদের সামন্ত-ফ্যাসিবাদি একনায়কত্ব, এবং জনগণের রাষ্ট্র নয়। তাই, তারা জনগণের জাগরণের ভয়ে ভীত, গনতান্ত্রিক আন্দোলনের ভয়ে ভীত এবং জাপবিরোধী যুদ্ধের জন্য পুর্ণ গণসমাবেশের ভয়ে ভীত। এখানেই জাপানের প্রতি নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের কর্মনীতি এবং জনগণ, গনতন্ত্র ও কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশিল দেশিয় কর্মনীতির মূল নিহিত। সবকিছুতে তাদের এক দ্বিমুখি কর্মনীতি রয়েছে। উদাহারণস্বরূপ, একদিকে তারা জাপানকে প্রতিরোধ করছে আর অন্যদিকে এক নিষ্ক্রিয় যুদ্ধের কর্মনীতি বাস্তবায়ন করছে, এবং অধিকন্তু তারা হচ্ছে আত্মসমর্পণের জন্য জাপানী প্রবৃত্তকরণের অব্যাহত নিশানা। তারা চীনের অর্থনীতিকে বিকাশের কথা বলে, কিন্তু কার্যত তারা তাদের নিজ আমলাতান্ত্রিক পুঁজি গড়ে অর্থাত বৃহত ভুস্বামী, ব্যাংকার ও মুতসুদ্দিদের পুঁজি, এবং কৃষক, শ্রমিক, ক্ষুদে বুর্জোয়া ও অ-একচেটিয়া বুর্জোয়াদের নিষ্ঠুরভাবে নিপীড়ণ করে চীনের অর্থনৈতিক জীবনধারাকে একচেটিয়াকরণ করে। তারা “গণতন্ত্র”কে অনুশীলনে নেওয়ার কথা বলে এবং “জনগণের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে”, তথাপি তারা গণতন্ত্রের জন্য জনগণের আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করে এবং সামাণ্যতম সংস্কার সাধন করতে অস্বীকার করে। তারা বলে যে “কমিউনিস্ট সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা এবং তা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে”, তথাপি তারা চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষ্ঠুরতার সাথে সামরিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে দমন করে তাকে “১ নম্বর শত্রু” মনে করে এবং জাপানী হানাদারদের মনে করে “২নং শত্রু” এবং দিনে দিনে তারা গৃহযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকে এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে খতম করার নকশা আাঁকে। তারা বলে যে তারা একটা “আধুনিক রাষ্ট্র” প্রতিষ্ঠা করবে, তথাপি তারা বৃহত ভুস্বামী, ব্যাংকার ও মুতসুদ্দিদের সামন্ত ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব বজায় রাখতে মরিয়াভাবে কাজ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আনুষ্ঠানিক কুটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করলেও তারা তার প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন। ফ্যাসিবাদী জার্মানীর আয়ু বৃদ্ধি করতে তারা মার্কিন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে গলা মিলিয়ে শ্লোগান দেয় “ইউরোপের আগে এশিয়া” যা অনুপাতিকভাবে সবজায়গায় ফ্যাসিবাদীদের আয়ু বাড়ানোর সাথে যুক্ত চীনা জনগণের ওপর ফ্যাসিবাদী শাসনসহ, তথাপি একইসাথে কুটনৈতিক চালাচালির আশ্রয নিয়ে তারা ফ্যাসিবাদ-বিরোধি বীরের মুখোশ পড়ে। যদি এই স্ববিরোধি দ্বিমুখি কর্মনীতির মূল খোঁজেন তাহলে দেখবেন তারা সকলে বড় ভুস্বামী, ব্যাংকার ও মুতসুদ্দিদের সামাজিক স্তরের ডাঁটা।
তথাপি, কুওমিনতাঙ কোন সমসত্ত্ব পার্টি নয়। যদিও বৃহত ভুস্বামী, ব্যাংকার ও মুতসুদ্দিদের স্তরের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিক্রিয়াশিল চক্র দ্বারা এটা নিয়ন্ত্রিত ও নেতৃত্বপ্রাপ্ত, সমগ্রভাবে একে এই চক্র দ্বারা চিহ্নিত করা উচিত নয়। কিছু কুওমিনতাঙ নেতা এই চক্রের সাথে জড়িত নয় যারা (চক্র) তাদের তুচ্ছ করে, দুরে ঠেলে দেয় এবং আক্রমণ করে। এর বহু কেডার ও কর্মী এবং তিন গণ নীতির যুবলীগের বহু সদস্য এই চক্রের প্রতি অসন্তুষ্ট এবং অনেকে একে বিরোধিতা করে। সকল কুওমিনতাঙ সৈন্যবাহিনী, সরকারী শাখা ও অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসমুহ-যা প্রতিক্রিয়াশিল চক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে-তাদের সকলের ক্ষেত্রেই একই কথা সত্য। তাদের সকলের মধ্যে বেশ পরিমাণ গণতান্ত্রিক উপাদান রয়েছে। অধিকন্তু, প্রতিক্রিয়াশিল চক্র নিজেও কতিপয় বিরোধি উপদলে বিভক্ত এবং সুসংবদ্ধ কাঠামো নয়। সন্দেহাতীতভাবে, কুওমিনতাঙকে প্রতিক্রিয়াশিলদের এক সমসত্ত্ব কাঠামো মনে করা ভুল।
একটা বৈপরীত্য
চীনা জনগণ মুক্ত এলাকা ও কুওমিনতাঙ এলাকার মধ্যে তীব্র বৈপরীত্য দেখতে পাচ্ছেন।
বাস্তব চিত্র কি যথেষ্ট পরিষ্কার নয়? এখানে দুই লাইন রয়েছে, গণযুদ্ধের লাইন এবং গণযুদ্ধের বিরোধি পরোক্ষ প্রতিরোধের লাইন; একটা এমনকি প্রতিকুল পরিস্থিতিতে চীনের মুক্ত এলাকাসমূহে বহি সাহায্যের সামগ্রিক অনুপস্থিতিতে বিজয়ের দিকে চালিত করে, অন্যটি এমনকি বৈদেশিক সাহায্য সহযোগিতা সহযোগে কুওমিনতাঙ এলাকার অতি অনুকুল পরিস্থিতিতেও পরাজয়ের দিকে চালিত করে।
কুওমিনতাঙ সরকার তার ব্যর্থতার দায় অস্ত্রের স্বল্পতার ওপর চাপায়। তথাপি কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, কোনটির অস্ত্র স্বল্পতা রয়েছে, কুওমিনতাঙ বাহিনীর নাকি মুক্ত এলাকার বাহিনীর? চীনের সকল বাহিনীর মধ্যে মুক্ত এলাকারগুলোর সর্বাধিক অস্ত্র স্বল্পতা রয়েছে, তাদের অস্ত্র হয় শত্রুর থেকে কেড়ে নেওয়া নতুবা সর্বাধিক প্রতিকুল পরিবেশে নির্মিত।
এটা কি সত্য নয় যে কুওমিনতাঙ কেন্দ্রিয় সরকার প্রাদেশিক বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি অস্ত্রে সজ্জিত? তথাপি লড়াইয়ের সক্ষমতায় অধিকাংশ কেন্দ্রিয় বাহিনী প্রাদেশিক বাহিনীরর চেয়ে হীনতর।
কুওমিনতাঙ জনশক্তির বিশাল মজুদকে নেতৃত্ব করে, তথাপি তার ভ্রান্ত রিক্রুট কর্মনীতি জনশক্তির পুরণ খুবই কঠিণ করে তোলে। শত্রুর দ্বারা নিজেরা বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং অব্যাহত লড়াইয়ে নিয়োযিত হওয়া সত্ত্বেও চীনের মুক্ত এলাকাসমুহ ক্লান্তিহীন জনশক্তি সমাবেশিতকরণে সক্ষম কারণ জনগণের প্রয়োজনের সাথে সুসামঞ্জস মিলিশিয়া ও আত্মরক্ষী বাহিনী সর্বত্র প্রযুক্ত হয় এবং জনশক্তির অপব্যবহার ও অপব্যয় এড়ানো হয়।
যদিও কুওমিনতাঙ পর্যাপ্ত শস্যপুর্ণ বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে আর সেখানে জনগণ প্রতি বছর ৭০-১০০ মিলিয়ন ট্যান শস্য যোগান দেয়, তথাপি এর বাহিনী সর্বদাই খাদ্যের অভাবে থাকে এবং এর সৈনিকেরা জীর্নশীর্ন কারণ শস্যের বৃহত্তর অংশ লুন্ঠিত হয় তাদের কর্তৃক যাদের হাতে এটা যায়। যদিও শত্রুর পশ্চাদভাগে অবস্থিত চীনের অধিকাংশ মুক্ত এলাকা শত্রুর “জ্বালাও পোড়াও, সবাইকে হত্যা কর, সবকিছু লুট করো” কর্মনীতি দ্বারা ধ্বংসযজ্ঞের স্বীকার এবং উত্তর শেনসির মতো এলাকাগুলি যদিও খুবই শুষ্ক, আমরা সফলভাবে শস্য সমস্যা সমাধান করেছি কৃষি উতপাদন বৃদ্ধির আমাদের নিজ প্রচেষ্টার দ্বারা।
কুওমিনতাঙ এলাকাগুলো খুবই মারাত্মক অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করছে, অধিকাংশ শিল্পই দেউলিয়া, এবং এমনকি কাপড়ের মতো প্রয়োজনীয়তাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু চীনের মুক্ত এলাকাগুলি শিল্পের বিকাশ দ্বারা কাপড় ও অন্যান্য নিজ চাহিদা পুরণ করতে সক্ষম।
কুওমিনতাঙ এলাকায় শ্রমিক, কৃষক, দোকানসহকারী, সরকারী কর্মচারি, বুদ্ধিজীবি ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা চরম দুঃখকষ্টের মধ্যে বাস করে। মুক্ত এলাকায় সকল জনগণের খাদ্য, বস্ত্র ও কাজ রয়েছে।
এটা হচ্ছে কুওমিনতাঙ এলাকার বৈশিষ্ট্য যেখানে লাভের উদ্দেশ্যে জাতীয় সংকটকে অপব্যবহার করে কর্মকর্তারা অব্যাহতভাবে ব্যবসায়ি ও স্বভাবগত দুর্নীতিবাজে পরিণত হচ্ছে কোন প্রকার লজ্জা অথবা নৈতিকতার মনেবৃত্তি ছাড়া। এটা হচ্ছে চীনের মুক্ত এলাকার বৈশিষ্ট যেখানে সরল জীবনযাত্রা ও কঠোর কাজের উদাহারণ স্থাপন করে কেডাররা তাদের দৈনন্দিন কর্তব্যের সাথে সাথে উতপাদনে অংশগ্রহণ করে, সততাকে উচ্চ মূল্য দেওয়া হয় যেখানে দুর্নীতি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
কুওমিনতাঙ এলাকায় জনগণের কোনই স্বাধীনতা নেই। চীনের মুক্ত এলাকায় জনগণের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।
কুওমিনতাঙ শাসকরা যে অনিয়মসমূহ মোকাবেলা করে তার জন্য কে দায়ী? অন্যরা না তারা নিজেরা দায়ী? তাদের পর্যাপ্ত সাহায্য না দেওয়ার জন্য বাইরের দেশগুলো দায়ী নাকি কুওমিনতাঙ সরকারের একনায়কতান্ত্রিক শাসন, দুর্নীতি এবং অযোগ্যতা দায়ী? উত্তরটা কি নিশ্চিত নয়?
কে “প্রতিরোধ যুদ্ধকে সাবোটাজ করছে এবং রাষ্ট্রকে বিপদগ্রস্থ করছে”?
তর্কাতীত প্রমাণের আলোকে যেটা দেখা যায় তাকি এই নয় যে কুওমিনতাঙ সরকার নিজেই প্রতিরোধের চীনা গণযুদ্ধকে সাবোটাজ করছে এবং আমাদের দেশকে বিপদগ্রস্থ করছে? সম্পুর্ণ দশ বছর যাবত সরকার গৃহযুদ্ধে নিজেকে সম্পুর্ণরূপে নিবেদন করে, তার তলোয়ারের ডগা জনগণের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে জাতীয় প্রতিরক্ষাকে সম্পুর্ণরূপে অবহেলা করে আর তারা কোন প্রতিরোধ নয় কর্মনীতি দ্বারা চারটি উত্তর-পুর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ছেড়ে দেয়। যখন জাপানী হানাদাররা মহাপ্রাচীরের দক্ষিণে ধাবিত হলো, সে প্রতিরোধের একটা ঝাপটা দিয়ে তারপর লুকাওচিয়াও থেকে কেইচৌ প্রদেশের দিকে সার্বিক পশ্চাদপসারণ করলো। তথাপি কুওমিনতাঙ অপবাদ দেয় যে “কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিরোধ যুদ্ধকে সাবোটাজ করছে এবং রাষ্ট্রকে বিপদগ্রস্থ করছে” (সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩-এ অনুষ্ঠিত কুওমিনতাঙের কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির একাদশ পুর্ণাঙ্গ অধিবেশনের সিদ্ধান্তবলী দেখুন)। এর একমাত্র প্রমাণ হচেছ কমিউনিস্ট পার্টি মুক্ত এলাকা সৃষ্টি করতে জনগণের সকল অংশের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে যা জাপানকে বীরের মতো প্রতিরোধ করছে। কুওমিনতাঙের যুক্তি চীনা জনগনের চেয়ে এত ভিন্ন যে বহু সমস্যায় সাধারণ বক্তব্যে আসায় ব্যর্থতা আশ্চর্য কিছু নয়।
এখানে দুটি প্রশ্ন রয়েছে।
প্রথম, হেইলুঙকিয়াঙ প্রদেশ থেকে লুকোচিয়াও এবং লুকোচিয়াও থেকে কেইচৌ পর্যন্ত এত বিশাল ও বিপুল জনসংখ্যাবিশিষ্ট এলাকা পরিত্যাগে ঠিক কোন জিনিসটা নিয়ে গেল? সেটা কি প্রথমত, জাপানের বিরুদ্ধে না-প্রতিরোধ এবং তারপর নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের এবং জনগণকে বিরোধিতার দেশীয় কর্মনীতি ছাড়া অন্য কিছু কি?
দ্বিতীয়, জাপানী ও পুতুল সৈন্যবাহিনীর নির্মম ও দীর্ঘায়িত আক্রমণকে উতপাটিত করতে এবং এমন বিশাল অঞ্চল ও এমন বিপুল জনসংখ্যাকে জাতীয় শত্রুর শৃংখল থেকে মুক্ত করতে ঠিক কি জিনিস চীনের মুক্ত এলাকাসমূহকে সক্ষম করে তুলেছিল? সেটাকি আমাদের সঠিক লাইন-গণযুদ্ধের লাইন ছাড়া আর কিছূ?
“সরকারী ও সামরিক আদেশের অবমাননা”
কুওমিনতাঙ সরকার আবার অব্যাহতভাবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে “সরকারী ও সামরিক আদেশ অবমাননা”র অভিযোগে অভিযুক্ত করছে। আমাদের যা বলা দরকার তাহচ্ছে যে সৌভাগ্যতঃ চীনা জনগণের ভাবধারার অংশীদার চীনা কমিউনিস্টরা “সরকারী ও সামরিক আদেশ” মানেনি যা মানার অর্থ হচ্ছে জাপ হানাদারদের কাছে মুক্ত এলাকাসমূহকে সমর্পণ করা যা চীনা জনগণ তাদের কাছ থেকে পুনরায় দখল করেছে চরম দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে। কিছু উদাহারণ হচ্ছে ১৯৩৯-এর “বিদেশী পার্টিসমূহের ততপরতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ”, “নয়া চতুর্থ বাহিনীকে ভেঙে দেওয়া”র আদেশ এবং এর “পীত নদীর পুরোনো ধারার উত্তরে প্রত্যাহার”-এর জন্য ১৯৪৩-এ “চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে ভেঙে দেওয়া”র আদেশ, ১৯৪৪-এ “দশটি ডিভিশন বাদে সকল বাহিনী ভেঙে দেওয়া”র জন্য আমাদের ওপর আদেশ এবং আমাদের সাথে সাম্প্রতিক এক আলোচনায় যে প্রস্তাব তারা দিয়েছেন, যাকে কুওমিনতাঙ সরকার বলছে “একটা ছাড়”, যার জন্য আমাদেরকে আমাদের বাহিনীগুলো ও স্থানীয় সরকারসমূহকে হস্তান্তর করতে হতো তাদের একনায়কতান্ত্রিক সরকারে কয়েকটি পদের বিনিময়ে কিন্তু একটা সম্মিলিত সরকার গঠন না করে। সৌভাগ্যবশতঃ এজাতীয় জিনিসের প্রতি আমরা আত্মসমর্পণ করিনি এবং এভাবে এক নিষ্কলুষ অখন্ড ভুমিকে রক্ষা করেছি আর চীনের জনগণের জন্য এক বীরত্বব্যাঞ্জক জাপবিরোধি বাহিনীকে রক্ষা করেছি। এমন “অবমাননা”র জন্য চীনা জনগণ কি নিজেদের স্বাগত জানাবেননা? তার ফ্যাসিস্ট সরকারী ডিক্রী ও পরাজয়বাদী সামরিক আদেশ দ্বারা হেইলুঙকিয়াঙ থেকে কেইচৌ পর্যন্ত বিশাল জনসংখ্যাবিশিষ্ট এলাকা জাপ হানাদারদের কাছে সমর্পন করার পর কুওমিনতাঙ সরকার কি অনুভব করেনা যে যথেষ্ট হয়েছে? জাপ হানাদাররা ও প্রতিক্রিয়াশীলরা এসব “সরকারী ও সামরিক আদেশ” কে অভিনন্দন জানায়, কিন্তু কোন সত্যিকার চীনা দেশপ্রেমিকের পক্ষে কি এমনটা করা সম্ভব? একটা সম্মিলিত সরকার না থাকলেঃ রূপে নয় বরং বাস্তবে, ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব নয় বরং একটা গণতান্ত্রিক সরকার, এটা কি অনুধাবনযোগ্য যে চীনের জনগণ চীনা কমিউনিস্টদের মুক্ত এলাকাগুলি হস্তান্তরে অনুমোদন দেবে যেখানে জনগণ স্বাধীনতা জয় করেছে এবং গণ বাহিনীসমূহ যা বর্তমান কুওমিনতাঙ সরকারের প্রতি প্রতিরোধের সংকেত সেবা প্রদান করেছে, যে (কুওমিনতাঙ সরকার) হচ্ছে পরাজয়বাদী, ফ্যাসিবাদী ও একনায়কত্ববাদী? মুক্ত এলাকা ও গণ বাহিনী ব্যাতিরেকে চীনের জনগণের জাপবিরোধি আদর্শ আজকে যেমনটা তেমনটা কি হতে পারতো? এবং কেউ কি অনুধাবন করতে পারেন চীনা জাতির ভবিষ্যত কী হতো?
গৃহযুদ্ধের বিপদ
আজকের দিন পর্যন্ত কুওমিনতাঙের প্রধান শাসক চক্র একনায়কত্ব ও গৃহযুদ্ধের তার প্রতিক্রিয়াশিল কর্মনীতিতে অটল রয়েছে। বহু প্রমাণ রয়েছে যে সে কিছু মিত্র দেশ কর্তৃক চীনের মুল ভুখন্ডের কিছু অংশ পরিস্কার করার সাথে সাথে গৃহযুদ্ধ সূচিত করার প্রস্তুতি দীর্ঘদিন যাবত নিচ্ছে এবং এখন সেদিকে পা ফেলছে। সে আরো আশা করে যে কিছু মিত্র দেশের জেনারেলরা চীনে সেই কাজটাই করবে যা ব্রিটিশ জেনারেল স্কোবি[৫] গ্রীসে করছে। সে স্কোবি ও প্রতিক্রিয়াশিল গ্রীক সরকারের কৃত গণহত্যায় হাত তালি দেয়। সে ১৯২৭-৩৭-এর মতো একইভাবে পুনরায় চীনকে গৃহযুদ্ধের ঝঞ্জায় নিয়ে যেতে চায়। “জাতীয় সংসদ” ও “রাজনৈতিক সমাধান” এর ধুঁয়ার আড়ালে গোপনে সে গৃহযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি আমাদের দেশবাসী তা দেখতে ব্যর্থ হন, এর পরিকল্পনাকে উন্মোচিত করতে ও এসব প্রস্তুতি বন্ধ করতে ব্যর্থ হন তাহলে এক সুন্দর সকালে তারা গৃহযুদ্ধের দামামা শুনতে পাবেন।
দরকষাকষি
অন্য গণতান্ত্রিক দলসমুহের মতামত পাওয়ার পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সেপ্টেম্বর ১৯৪৪-এ গণ রাজনৈতিক কাউন্সিল-এ দাবী তুলে ধরে যে যথাশীঘ্র কুওমিনতাঙের একপার্টি একনায়কত্ব বিলুপ্ত করা হোক এবং একটা গণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার গঠণ করা হোক জাপানী হানাদারদের পরাজিত করতে, একটা নয়াচীন বিনির্মাণ করতে এবং গৃহযুদ্ধ রুখতে। সন্দেহাতীতভাবে এটা ছিল একটা সময়োচিত দাবী, আর অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই তা ব্যাপক জনগণের উষ্ণ সাড়া পেয়েছে।
আমরা কুওমিনতাঙ সরকারের সাথে অনেক দফা দরকষাকষি চালিয়েছি একপার্টি একনায়কত্ব বিলোপ করার, একটা সম্মিলিত সরকার গঠন এবং জরুরি গণতান্ত্রিক সংস্কারসমূহ চালানোর প্রশ্নে, কিন্তু সে আমাদের সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কুওমিনতাঙ একপার্টি একনায়কত্ব বিলোপে ও একটা সম্মিলিত সরকার গঠণে অনিচ্ছুকই শুধু নয়, সে জরুরি গণতান্ত্রিক সংস্কারের কোন একটিও সূচিত করতে অনিচ্ছুক, যেমন, গুপ্ত পুলিশের বিলোপ, প্রতিক্রিয়াশিল আইন ও ডিক্রির বিলোপ যা জনগণের স্বাধিনতাকে দমন করে, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি প্রদান, রাজনৈতিক পার্টিসমুহের বৈধতার স্বীকৃতি, মুক্ত এলাকাসমূহের স্বীকৃতি এবং তাকে অবরোধকারী ও আক্রমণকারী সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার। ফলতঃ চীনে রাজনৈতিক সম্পর্ক খুবই উতকন্ঠার মধ্যে রয়েছে।
দুই ভবিষ্যত
সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং প্রকৃত আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের উপরোক্ত বিশ্লেষণের আলোকে আমি সকলকে সতর্ক হওয়ার আহ্বাণ জানাই এবং তারা যেন আশা না করেন আমাদের পথ খুব মসৃন ও সহজ-সরল হবে। না, তা হবেনা। প্রকৃতপক্ষে, দুই সম্ভাবনা রয়েছে, দুই ভবিষ্যত, একটা ভাল, অপরটা মন্দ। একটা সম্ভাবনা অথবা ভবিষ্যত হচ্ছে যে ফ্যসিস্ট একনায়কত্ব অব্যাহত থাকবে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার অনুমোদিত হবেনা, জাপানী হানাদারদের বদলে জনগণকে বিরোধিতায় জোর দেওয়া হবে, এমনকি জাপ হানাদাররা পরাজিত হওয়ার পর গৃহযুদ্ধের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে চীনকে তার পুরোনো শোচনীয়াবস্থায়, স্বাধীনতাবিহীন, মুক্তিহীন, গণতন্ত্রহীন, ঐক্যহীন, উন্নতিহীন অথবা শক্তিহীন অবস্থানে টেনে নিয়ে গিয়ে। এই সম্ভাবনা অথবা ভবিষ্যত এখনো আছে, এবং স্রেফ অনুকুল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও জনগণের বর্ধিত রাজনৈতিক সচেতনতা ও সাংগঠনিক সামর্থের কারণে এটা বিলুপ্ত হয়নি অথবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উবে যায়নি। যারা আশা করে যে এই সম্ভাবনা অথবা ভবিষ্যত হবে চীনের বাস্তবতা তারা হচ্ছে দেশে কুওমিনতাঙের প্রতিক্রিয়াশিল চক্র এবং বিদেশে সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার প্রতিক্রিয়াশীলরা। এটা হচ্ছে একটা দিক যাকে অবশ্যই হিসেবে নিতে হবে।
কিন্তু আরেকটি দিক রয়েছে, এবং পুনরায় সামগ্রিক অবস্থা ও আন্তর্জাতিক ও দেশিয় রাষ্ট্রীয় অগ্রসরমাণ পরিস্থিতির আলোকে আমরা দ্বিতীয় সম্ভাবনা অথবা ভবিষ্যতের জন্য সচেষ্ট হতে বর্ধিত আস্থা ও সাহস অর্জন করতে পারি। তাহচ্ছে সকল প্রতিকুলতাকে জয় করা, সমগ্র জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা, কুওমিনতাঙের ফ্যাসিস্ট একনায়কত্বকে বিলোপ করা, গণতান্ত্রিক সংস্কার পরিচালনা করা, জাপবিরোধি বাহিনীসমূহকে সুসংহত ও সম্প্রসারণ করা জাপ হানাদারদের সামগ্রিকভাবে পরাজিত করে এবং এক স্বাধীন, মুক্ত, গণতান্ত্রিক, ঐক্যবদ্ধ, প্রগতিশীল ও শক্তিশালি নয়া চীন নির্মাণ করে। যারা আশা করেন যে এই সম্ভাবনা আর ভবিষ্যত একটা বাস্তবতায় পরিণত হবে তারা হচ্ছেন চীনের জনগণ, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং দেশে অন্য গণতান্ত্রিক পার্টিসমূহ আর সকল জাতিসমূহ যারা আমাদের সমান দৃষ্টিতে দেখেন এবং বিদেশে প্রগতিশীল ও জনগণ।
আমরা ভালভাবে জানি যে সমগ্র চীনা জনগণসমেত কমিউনিস্টরা এখনো বিরাট প্রতিকুলতা ও বহু বাঁধা বিঘন পার হবেন এবং তাদের সামনে রয়েছে পার হওয়ার এক বিরাট ও আঁকাবাঁকা পথ। কিন্তু একই সমানভাবে আমরা জানি যে সমগ্র চীনাজনগণসহযোগে আমরা জয় করবো সকল প্রতিকুলতা ও বাঁধা বিঘন এবং সেই কর্তব্য সম্পাদন করবো যা ইতিহাস চীনের কাছে অর্পণ করেছে। আমাদের জন্য এবং সমগ্র জনগণের জন্য মহা কর্তব্য হচ্ছে প্রথম সম্ভাবনা অথবা ভবিষ্যতকে প্রতিরোধ করা আর প্রতিটি বিন্দু শক্তি দিয়ে দ্বিতীয়টির জন্য কাজ করা। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবে সমগ্রত চীনা জনগণসমেত আমাদের কমিউনিস্টদের পক্ষে। এটা আমি ইতিমধ্যেই সম্পুর্ণভাবে পরিস্কার করেছি। আমরা আশা করি কুওমিনতাঙ কর্তৃপক্ষ সাধারণ বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গী ও চীনের জন মানসের দৃষ্টিভঙ্গীতে নিজেদের বর্তমান ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনে সাহস করবেন, যাতে যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়, চীনা জনগণের দুর্দশাকে কমানো যায় এবং এক নয়া চীনের জন্ম দেওয়া যায়। এটা বুঝতে হবে যে পথ যতই আঁকাবাঁক হোক, চীনা জনগণ স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের কর্তব্যকে নিশ্চিতভাবে সম্পাদন করবেন এবং তাদের একাজ করার সময় এসেছে। বিগত শতকের অগণিত শহীদের মহান আশা আকাঙ্খা পুরন করার দায়িত্ব আমাদের প্রজন্মের ওপর বর্তায় এবং আমাদের থামানোর যে কোন প্রচেষ্টা নিশ্চিতভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
ঘ. চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মনীতি
চীনের প্রতিরোধ যুদ্ধের দুই লাইন আমি বিশ্লেষণ করেছি। এমন বিশ্লেষন পরমভাবে প্রয়োজন। কারণ ঠিক এই মুহুর্ত পর্যন্ত বহু চীনা জনগণ এখনো জানেননা এই যুদ্ধে সত্যিকারভাবে কী হচ্ছে। কুওমিনতাঙ সরকারের অবরোধ কর্মনীতির দ্বারা কুওমিনতাঙ এলাকার ও বিদেশের অনেক জনগণ অন্ধকারে আছেন। চীনা ও বিদেশী একটা প্রতিনিধিদল এখানে ১৯৪৪ সালে পর্যবেক্ষণে না আসা পর্যন্ত তারা চীনের মুক্ত এলাকাগুলো সম্পর্কে বাস্তবে কিছুই জানতেননা। এই গ্রুপ ফিরে যাওয়ার সাথে সাথে কুওমিনতাঙ সরকার যে কিনা মুক্ত এলাকাসমূহের সত্যিকার পরিস্থিতি বাইরে পরিচিত হওয়ার ব্যাপারে খুবই ভীত ছিল, দ্বার রুদ্ধ করে দিল এবং অন্য কোন প্রতিনিধি দলকে এখানে আসতে দিতে অস্বীকৃতি জানাল। একইভাবে সে কুওমিনতাঙ এলাকাসমূহের সত্যকে ধামাচাপা দিল। তাই, আমার মনে হয় জনগণকে “দুই এলাকার”র সত্য চিত্র সম্পর্কে যতদূর সম্ভব ধারণা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। কেবল যখন জনগণ চীনের সমগ্র পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবেন তখনই তারা বুঝতে পারবেন কেন চীনের দুই বৃহত্তম পার্টি কমিউনিস্ট পার্টি ও কুওমিনতাঙের কর্মনীতিতে এমন পার্থক্য রয়েছে এবং কেন দুই লাইনের মধ্যে এমন একটা সংগ্রাম রয়েছে। কেবল তখনই জনগন বুঝতে পারবেন দুই পাটির মধ্যে বিতর্ক কোন অপ্রয়োজনীয়, গুরুত্বহীন অথবা স্রেফ কুটতর্ক নয়-যেমনটা অনেকে দাবী করে থাকেন বরং নীতিগত একটা কিছু যার ওপর কোটি কোটি জনগণের জীবন নির্ভরশীল।
চীনের বর্তমান মারাত্মক পরিস্তিতিতে, দেশে জনগণ, গণতন্ত্রীরা ও গণতান্ত্রিক পার্টিসমূহ এবং অন্যদেশের জনগণ যারা চীনা পরিস্তিতিতে উদ্বিগ্ন, সকলে আশা করেন যে ঐক্য অনৈক্যকে প্রতিস্থাপন করবে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার সূচিত হবে, এবং তারা সকলে জানতে চান আজকের বহু নির্ধারক সমস্যার সমাধানে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মনীত কী। আমাদের পার্টিসদস্যদের নিশ্চয়রই এসব ব্যাপারে গভীরতর আগ্রহ রয়েছে। যুদ্ধে জাপবিরোধি জাতীয় যুক্তফ্রন্টের আমাদের কর্মনীতি সর্বদাই ছিল পরিস্কার ও সুনির্দিষ্ট, এবং আট বছরের যুদ্ধে সেগুলো পরীক্ষিত হয়েছে। ভবিষ্যতের সংগ্রামের একটা পথনির্দেশ হিসেবে আমাদের কংগ্রেসের উচিত সেটা থেকে একটা উপসংহার টানা।
চীনের সমস্যা সমাধানে প্রধান প্রধান কর্মনীতি সম্পর্কে আমাদের পার্টি যে বেশ কিছু উপসংহারে পৌঁচেছে তা আমি এখানে ব্যাখ্যা করবো।
আমাদের সাধারণ কর্মসুচি
চীনা জনগণের সকল জাপবিরোধি শক্তিকে সমাবেশিতকরণে ও ঐক্যবদ্ধকরণে জাপ হানাদারদের সম্পুর্ণরূপে উচেছদ করে এক স্বাধীন, মুক্ত, গণতান্ত্রিক, ঐক্যবদ্ধ, প্রগতিশীল ও শক্তিশালি নয়া চীন নির্মাণ করতে একটা ঐকমত্যের সাধারণ কর্মসুচি চীনা জনগণ, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও সকল জাপবিরোধি গণতান্ত্রিক পার্টির প্রয়োজন।
এমন একটি সাধারণ কর্মসুচি দুইভাবে বিভক্ত হতে পারে, সাধারণ ও মুর্ত। আসুন প্রথমে সাধারন তারপর মুর্ত কর্মসুচি বিবেচনা করা যাক।
জাপ হানাদারদের অবশ্যই সম্পুর্ণরূপে ধ্বংস করতে হবে এবং এক নয়া চীন নির্মাণ করতে হবে, এই প্রধান প্রতিজ্ঞায় আমরা কমিউনিস্টরা ও চীনের নিরংকুশ জনগন চীনের বিকাশের বর্তমান স্তরে নীচের মৌলিক প্রস্তাবনায় একমত।
প্রথম, বৃহত ভুস্বামী ও বৃহত বুর্জোয়াদের একনায়কত্বের অধীনে একটা সামন্তীয়, ফ্যাসিস্ট ও জনগণবিরোধিক রাষ্ট্রব্যবস্থা চীনের থাকা উচিত নয়, কারন কুওমিনতাঙের প্রধান শাসক চক্রের আঠার বছরের সরকার তার পুর্ণ দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করেছে। দ্বিতীয়, চীনের পুরোনো ধরণের গণতান্ত্রিক একটা খাঁটি জাতীয় বুর্জোয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় কারন একদিকে চীনা জাতীয় বুর্জোয়ারা নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল প্রমাণ করেছে এবং অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে, একটি নতুন উপাদান উপস্থিত যা হচ্ছে জেগে ওঠা চীনা সর্বহারা তার নেতা কমিউনিস্ট পার্টিসমেত যা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট সামর্থ প্রদর্শন করেছে এবং কৃষক জনগণ, শহুরে ক্ষুদে বুর্জোয়া, বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় ও অন্য গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের নেতৃত্বে পরিণত হয়েছে। তৃতীয়, বর্তমান স্তরে চীনের জনগণের পক্ষে একটা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা তেমনি অসম্ভব যখন বিদেশী ও সামন্তীয় নিপীড়ণকে লড়ার কর্তব্য এখনো রয়েছে এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক শর্তের এখনো অভাব রয়েছে।
অত:পর আমরা কী প্রস্তাব করবো? জাপ হানাদারদের সামগ্রিক পরাজয়ের পর একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করি যাকে আমরা বলি নয়া গণতন্ত্র, যাহচ্ছে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বের অধীনে জনগনের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে একটা যুক্তফ্রন্ট গণতান্ত্রিক মোর্চা।
এটা সেধরণের রাষ্ট্রব্যবস্থা যা চীনের জনসংখ্যার নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের চাহিদা পুরণ করে, কারণ এটা অনুমোদন জয় করতে পারে, এবং সত্যিই জয় করে আসছে দশক দশক লক্ষ শিল্প শ্রমিকদের, কোটি কোটি হস্তশিল্পী ও খামার মজুরের, দ্বিতীয়ত, কৃষক সম্প্রদায়ের, যারা চীনের জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ অর্থাত, ৪৫ কোটি জনসংখ্যার ৩৬ কোটি, এবং তৃতীয়ত, বিশাল সংখ্যক শহুরে ক্ষুদে বুর্জোয়া আর সেইসাথে জাতীয় বুর্জোয়া, আলোকপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিকের।
অবশ্যই, এসব শ্রেণীর মধ্যে এখনো দ্বন্দ্ব রয়েছে, লক্ষণীয়, শ্রম ও পুঁজির মধ্যে দ্বন্দ্ব, এবং ফলতঃ প্রত্যেকটির রয়েছে নির্দিষ্ট নিজ দাবী। এসব দ্বন্দ্ব ও ভিন্ন ভিন্ন দাবীর অস্তিত্বকে অস্বীকার করাটা প্রতারণা ও ভুল হবে। কিন্তু নয়াগণতন্ত্রের সমগ্র স্তর ধরে এই দ্বন্দ্বসমূহ, এই ভিন্ন দাবীসমূহ বাড়বেনা এবং সকলের সাধারন দাবীকে অতিক্রম করবেনা ও তা করতে অনুমতি দেওয়া হবেনা; সেগুলোকে সমন্বয় করা যাবে। এই সমন্বয় সহকারে এই শ্রেণীসমূহ একসাথে নয়াগণতন্ত্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্তব্যসমূহ সম্পাদন করতে পারেন।
নয়াগণতন্ত্রের যে রাজনীতির কথা আমরা বলি তা গঠিত হয় বাইরের নিপীড়ণ আর আভ্যন্তরীণ সামন্তীয় ও ফ্যাসিস্ট নিপীড়ণকে উচ্ছেদ করে তারপর পুরোনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে নয় বরং সকল গনতান্ত্রিক শ্রেণীর এক যুক্ত ফ্রন্টের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। আমাদের এই মতসমূহ ড.সান ইয়াত-সেনের বিপ্লবী মতাবস্থানসমূহের সাথে সম্পুর্ণরূপে সামঞ্জস্যপুর্ণ। কুওমিনতাঙের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসের ইশতেহারে ডঃ সান লেখেনঃ
আধুনিক রাষ্ট্রসমূহে তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বুর্জোয়াদের কর্তৃক একচেটিয়াকৃত হয়ে থাকে এবং সাধারন জনগণকে নিপীড়ণের এক যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে কুওমিনতাঙের গণতন্ত্রের নীতির অর্থ হচ্ছে সাধারণ জনগন কর্তৃক অংশীদারিত্বের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মুষ্টিমেয় কর্তৃক ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নয়।
এটা ডঃ সানের এক মহান নির্দেশনা। চীনা জনগণ, চীনা কমিউনিস্ট পার্র্টি এবং অন্য সকল গণতন্ত্রীর অবশ্যই একে সম্মান করতে হবে, একে দৃঢ়ভাবে অনুশীলনে নিতে হবে, এক লঙ্ঘণ ও বিরোধিতাকারী ও সকল ব্যক্তি ও গ্রুপের বিরুদ্ধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সংগ্রাম চালাতে হবে এবং এভাবে নয়া গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ সঠিক রাজনৈতিক নীতিকে রক্ষা ও বিকাশ করতে হবে।
নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সাংগঠনিক নীতিমালা হতে হবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা, যেখানে গণকংগ্রেসসমূহ প্রধান প্রধান কর্মনীতি নির্ধারণ করবে এবং বিভিন্ন স্তরে সরকার নির্বাচন করবে। এটা একইসাথে গণতান্ত্রিক এবং কেন্দ্রিকৃত, অর্থাত গণতন্ত্রের ভিত্তিতে কেন্দ্রিকৃত এবং কেন্দ্রিকৃত পরিচালনাধীনে গণতান্ত্রিক। এটা হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা যা সকল স্তরে গণকংগ্রেসে মূর্ত পুর্ণক্ষমতাসমেত গণতন্ত্রের পুর্ন প্রকাশ ঘটাতে পারে,এবং একইসাথে, গণকংগ্রেস কর্তৃক নির্দিষ্ট স্তরে প্রদত্ত সকল বিভাগের কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনা অনুশীলনকারী জনগণের গণতান্ত্রিক জীবনের জন্য জরুরী সকল জিনিস রক্ষাকারী সকল স্তরের সরকারসমেত কেন্দ্রিভূত প্রশাসন নিশ্চিত করে ।
সৈন্যবাহিনী ও অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী হচ্ছে নয়াগনতান্ত্রিক রাষ্ট্রক্ষমতার যন্ত্রের গুরুত্বপুর্ণ অংশ যা ছাড়া রাষ্ট্রকে রক্ষা করা যায়না। ক্ষমতার অন্যান্য অঙ্গের মতো নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহ জনগণের সাথে জড়িত এবং জনগণকে রক্ষা করে। পুরনো ধরণের সৈন্যবাহিনী, পুলিশ প্রভৃতির সাথে তাদের কোনই মিল নেই যারা মুষ্টিমেয়র সাথে জড়িত এবং জনগণকে নিপীড়ণ করে।
নয়াগণতন্ত্রের যে অর্থনীতির কথা আমরা বলি তাও একইভাবে ডঃ সানের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ। ভুমি প্রশ্নে ডঃ সান “কৃষকের হাতে জমি”র প্রবক্তা। শিল্প ও বাণিজ্যের প্রশ্নে উপরে উদ্ধৃত ইশতেহারে ডঃ সান বলেনঃ
ব্যাংক, রেলওয়ে এবং বিমানের মতো সংস্থাসমূহ, চীনা মালিকানাধীন অথবা বিদেশী মালিকানাধীন যাই হোকনা কেন, যারা হয় একচেটিয়া চরিত্রের অথবা ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনার জন্য অতিশয় বড়, রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত ও শাসিত হবে, যাতে ব্যক্তি পুঁজি জনগণের জীবনযাত্রায় আধিপত্য করতে না পারে-এটাই হচ্ছে পুঁজি প্রবাহের মূল সূত্র।
বর্তমান স্তরে, অর্থনৈতিক প্রশ্নে ডঃ সানের এই মতাবস্থানসমূহের সাথে আমরা সম্পুর্ণভাবে একমত।
কিছু লোক সন্দেহ করেন যে চীনা কমিউনিস্টরা ব্যক্তি উদ্যোগের বিকাশ, ব্যক্তি পুঁজির বৃদ্ধি ও ব্যক্তি সম্পত্তির নিরাপত্তার বিরোধী। কিন্তু তারা ভুল করেন। বিদেশী নিপড়ণ ও সামন্তীয় নিপীড়ণই নিষ্ঠুরভাবে চীনা জনগণের ব্যক্তি উদ্যোগের বিকাশে বাঁধা দেয়, ব্যক্তি পুঁজির বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয় এবং জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করে। যে নয়াগণতন্ত্রের কথা আমরা বলি তারই কর্তব্য হচ্ছে এই বাঁধাগুলো অপসারণ করা; এই ধ্বংসকে বন্ধ করা যাতে জনগণকে এই নিশ্চয়তা দেয়া যায় যে তারা সমাজের কাঠামোর মধ্যে তাদের ব্যক্তি স্বতন্ত্রতা মুক্তভাবে বিকশিত করতে পারবেন এবং মুক্তভাবে ব্যক্তি পুঁজিবাদী অর্থনীতি বিকশিত করতে পারবেন যা হবে লাভজনক কিন্তু “জনগণের জীবনযাত্রাকে আধিপত্য করবেনা; এবং সকল যথার্থ রূপের ব্যক্তি সম্পত্তিকে রক্ষা করা। ড. সানের নীতিমালা ও চীনা বিপ্লবের অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণভাবে বর্তমান স্তরে চীনের অর্থনীতিকে গঠিত হতে হবে রাষ্ট্রীয় সেক্টর, ব্যক্তি সেক্টর এবং সমবায় সেক্টর নিয়ে। কিন্তু এখানে রাষ্ট্র কোনভাবেই “মুষ্টিমেয়র ব্যক্তিমালিকানাধীন” হবেনা, বরং এক নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সর্বহারা নেতৃত্বের অধীনে “সকল সাধারণ জনগণের অংশীদারিত্বে”।
নয়াগণতন্ত্রের সংস্কৃতিকেও একইভাবে হতে হবে “সকল সাধারণ জনগণের অংশীদারিত্বে”, অর্থাত একে হতে হবে জাতীয়, বৈজ্ঞানিক ও গণসংস্কৃতি এবং কোন অবস্থাতেই “মুষ্টিমেয়র ব্যক্তিমালিকানাধীন” সংস্কৃতি হতে পারবেনা।
এমনই হচ্ছে সাধারণ অথবা মৌলিক কর্মসুচি যার কথা আমরা কমিউনিস্টরা বলি বর্তমান স্তর বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সমগ্র স্তরের জন্য। সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের আমাদের ভবিষ্যত অথবা সর্বোচ্চ কর্মসুচির বিপরীতে এটাই আমাদের সর্বনিম্ন কর্মসুচি। এর বাস্তবায়ন চীনা রাষ্ট্র ও চীনা সমাজকে এক ধাপ এগিয়ে দেবে, এক ঔপনিবেশিক, আধা-ঔপনিবেশিক ও আধা-সামন্ততান্ত্রিক থেকে এক নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজে।।
সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং আমাদের কর্মসূচি কর্তৃক প্রয়োজনীয় অর্থনীতির সর্বহারা নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় এবং সমবায় সেক্টর হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক উপাদান। তথাপি, এই কর্মসুচির বাস্তবায়ন চীনকে সমাজতান্ত্রিক সমাজে রূপান্তরিত করবেনা।
আমরা কমিউনিস্টরা আমাদের রাজনৈতিক মত গোপন করিনা। নিশ্চিতভাবে ও সন্দেহাতীতভাবে, আমাদের ভবিষ্যত অথবা সর্বোচ্চ কর্মসুচি হচ্ছে চীনকে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদে নিয়ে যাওয়ার। আমাদের পার্টির নাম ও আমাদের মার্কসবাদী বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গী দ্ব্যার্থহীনভাবে ভবিষ্যতের চরম আদর্শের দিকে নির্দেশ করে,তুলনাহীন গৌরবোজ্জ্বল এক ভবিষ্যতের। পার্টিতে যোগদান করার সাথে সাথে প্রতিটি কমিউনিস্টের হৃদয়ে দুটি পরিষ্কার মূর্ত লক্ষ্য থাকে, বর্তমানে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং ভবিষ্যতে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ এবং এর জন্য তিনি লড়বেন সাম্যবাদের শত্রুদের বিদ্বেষ সত্ত্বেও এবং তাদের স্থূল ও মূর্খ অপবাদ, নির্যাতন ও উপহাস সত্ত্বেও, যাকে আমাদের দৃঢ়ভাবে লড়তে হবে। সন্দেহবাদীদের ক্ষেত্রে, আমাদেরকে সুন্দর মন নিয়ে ও ধৈর্যসহকারে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করতে হবে এবং তাদের আক্রমণ করা যাবেনা। এসবই, খুব পরিষ্কার, মূর্ত ও দ্ব্যার্থতাহীন।
কিন্তু চীনে সকল কমিউনিস্ট ও সাম্যবাদের সহানুভূতিশীলদের বর্তমান স্তরের লক্ষ্য অর্জনে অবশ্যই সংগ্রাম করতে হবে, তাদেরকে অবশ্যই বিদেশী ও সামন্তীয় নিপীড়ণের বিরুদ্ধে লড়তে হবে চীনা জনগণকে শোচনীয় ঔপনিবেশিক, আধাঔপনিবেশিক ও আধাসামন্ততান্ত্রিক দুর্দশা থেকে মুক্ত করতে এবং এক সর্বহারা নেতৃত্বাধীন নয়া গণতান্ত্রিক চীন প্রতিষ্ঠা করতে যার প্রধান কর্তব্য হচ্ছে কৃষক জনগণের মুক্তি, ডঃ সান ইয়াত-সেনের বিপ্লবী তিন গণনীতির এক চীন, এক স্বাধীন, মুক্ত, গণতান্ত্রিক, ঐক্যবদ্ধ, প্রগতিশীল ও শক্তিশালি চীন। এটাই আমরা বর্তমানে করছি। চব্বিশ বছর যাবত চীনা জনগনের সাথে একত্রে আমরা কমিউনিস্টরা বীরত্বের সাথে এই লক্ষ্যের জন্য লড়ছি।
যদি কোন কমিউনিস্ট অথবা কমিউনিস্ট সহানুভূতিশীল সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের কথা বলেন কিন্তু এর লক্ষ্যের জন্য সংগ্রাম করতে ব্যর্থ হন, যদি তিনি এই বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে খাঁটো করেন, শিথিল করেন অথবা সামাণ্যতমও মন্থর করেন আর সামান্যতমও অবিশ্বস্ততা এবং শীতলতা প্রদর্শন করেন অথবা এর জন্য রক্ত দানে অথবা নিজ জীবনদানে অনিচ্ছুক হন, তাহলে সচেতন অথবা অসচেতনভাবে এমন লোক কমবেশি মাত্রায় সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন এবং নিশ্চিতভাবে তিনি কমিউনিজমের জন্য একজন রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও অবিচল যোদ্ধা নন। মার্কসবাদের এটা একটা নিয়ম যে সমাজতন্ত্র অর্জিত হতে পারে কেবল গণতন্ত্রের স্তরের মধ্য দিয়ে। আর চীনে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির। এক ঐক্যবদ্ধ নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছাড়া, নয়াগণতান্ত্রিক অর্থনীতির এক রাষ্ট্রীয় সেক্টর, ব্যক্তি পুঁজিবাদী ও সমবায় সেক্টরের বিকাশ ছাড়া, এক জাতীয়, বৈজ্ঞানিক ও গণসংস্কৃতি অর্থাত এক নয়াগণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ছাড়া, এবং কোটি কোটি জনগণের ব্যক্তি স্বতন্ত্রতার মুক্তি ও বিকাশ ছাড়া-সংক্ষেপে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে এক নতুন ধরণের সামগ্রিক বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব ছাড়া ঔপনিবেশিক, আধাঔপনিবেশিক ও আধাসামন্ততান্ত্রিক শাসনের অবসানের ওপর এক সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের চেষ্টা হবে পুর্ণ মরীচিকা।
কিছু লোক বুঝতে ব্যর্থ হন কেন পুঁজিবাদকে ভয় পাওয়ার বদলে কমিউনিস্টরা কিছূ শর্তাধীনে এর বিকাশের কথা বলবে। আমাদের উত্তর হচ্ছে সহজ সরল। বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ ও দেশীয় সামন্তবাদের বদলে কিছু মাত্রার পুঁজিবাদী বিকাশ এক অগ্রসরতাই নয় বরং এক এড়ানোর অযোগ্য এমন প্রক্রিয়া। এটা সর্বহারা ও বুর্জোয়া উভয়ের জন্য লাভ এনে দেয়, সর্বহারার জন্য সম্ভবত বেশি। আজকে চীনে দেশীয় পুঁজিবাদ নয়, বরং বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ ও দেশীয় সামন্তবাদ মাত্রাতিরিক্ত; বস্তুত আমাদের পুঁজিবাদ রয়েছে অত্যন্ত কম। খুব আশ্চর্য যে, চীনা বুর্জোয়াদের কিছু মুখপাত্র পুঁজিবাদের বিকাশের কথা প্রকাশ্যে বলতে লজ্জাবোধ করেন, এবং এর দিকে তীর্যকভাবে নির্দেশ করেন। অন্য কিছূ লোক সোজা সাপ্টা অস্বীকার করেন যে চীনের উচিত এক প্রয়োজনীয় মাত্রার পুঁজিবাদী বিকাশ অনুমোদন করা এবং তারা সমাজতন্ত্রে একবারে পৌঁছার আর তিনগণনীতি ও সমাজতন্ত্রের কর্তব্যকে “এক লাফে সম্পাদন করার” কথা বলেন। নিশ্চিতভাবে, এই মতসমূহ হয় চীনা জাতীয় বুর্জোয়াদের দুর্বলতার প্রতিফলন ঘটায় অথবা তাহচ্ছে বৃহত ভুস্বামী ও বৃহত বুর্জোয়াদের এক রাজনৈতিক ভন্ডামি। সামাজিক বিকাশের মার্কসবাদী নিয়মের আমাদের জ্ঞান থেকে আমরা কমিউনিস্টরা পরিষ্কার ভাবে জানি যে চীনের নয়া গনতন্ত্রের রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে অর্থনীতির ব্যক্তি পুঁজিবাদী সেক্টরের বিকাশ (যাতে তা জনগণের জীবনযাত্রার ওপর আধিপত্য না করে)-এর ব্যবস্থা করা সামাজিক প্রগতির স্বার্থে প্রয়োজন হবে মেহনতী জনগণ কর্তৃক পরিচালিত রাষ্ট্রীয় সেক্টর, স্বতন্ত্র ব্যক্তি সেক্টর এবং সমবায় সেক্টরের পাশাপাশি। আমরা কোন ফাঁকা কথা অথবা প্রতারক ষড়যন্ত্র দ্বারা আমাদের মাতাল করতে দেবনা।
কিছূ লোক রয়েছে যারা সন্দেহ করে যে আমরা কমিউনিস্টরা আন্তরিক কিনা যখন আমরা ঘোষণা করি “চীনের আজকে যা প্রয়োজন সেই তিন গণনীতির পুর্ণ বাস্তবায়নের জন্য লড়তে পার্টি প্রস্তুত।” এটা হচ্ছে তাদের এটা বোঝার ব্যর্থতার ফল যে, ১৯২৪-এ কুওমিনতাঙের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসের ইশতেহারে ড. সান ইয়াত-সেনের ঘোষিত এবং আমরা যা গ্রহণ করেছি সেই তিন গণনীতির মৌলিক মতাবস্থান বর্তমান স্তরে আমাদের কর্মসুচি, অর্থাত, আমাদের সর্বনিম্ন কর্মসুচির কিছু মৌলিক মতাবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ। এটা অবশ্যই তুলে ধরতে হবে যে ড.সান ইয়াত-সেনের এই তিন গণনীতি বর্তমান স্তরে আমাদের পার্টি কর্মসুচির কিছু মৌলিক নীতির সাথেই কেবল সামঞ্জস্যপুর্ণ, প্রতিটির সাথে নয়। নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের আমাদের পার্টি কর্মসুচি অবশ্যই ড.সান ইয়াত সেনের নীতিমালার চেয়ে অধিকতর সামগ্রিক, নির্দিষ্টত আামদের পার্টির তত্ত্ব, কর্মসুচি এবং নয়াগণতন্ত্রের অনুশীলন ড.সান ইয়াত-সেনের মৃত্যুর পর থেকে বিশ বছর যাবত বিপুলভাবে বিকশিত হয়েছে, আরো বিকশিত হবে। সারে, যাহোক, এই তিন গণনীতি হচ্ছে নয়াগণতন্ত্রের এক কর্মসুচি, পুরোনো বিগত তিন গণনীতি থেকে পৃথক, স্বভাবতই সেগুলো “যা চীনের আজ প্রয়োজন” এবং স্বভাবতই “আমাদের পার্টি সেগুলোর পুর্ণ বাস্তবায়নের লড়াই জন্য করতে প্রস্তুত”। আমাদের চীনা কমিউনিস্টদের জন্য আমাদের পার্টির সর্বনিম্ন কর্মসুচির জন্য সংগ্রাম এবং ড.সানের বিপ্লবী অথবা তিন গণনীতি মৌলিকভাবে এক (যদিও প্রতিটি প্রশ্নে নয়) এবং একই জিনিস। তাই, অতীত ও বর্তমানের মতো ভবিষ্যতেও চীনা কমিউনিস্টরা বিপ্লবী তিন গণনীতির সবচেয়ে আন্তরিক ও সামগ্রিক বাস্তবায়নকারী প্রমানিত হবেন।
অনেক মানুষ সন্দেহ করেন এবং ভাবেন যে একবার ক্ষমতায় গেলে কমিউনিস্ট পার্টি রাশিয়ার উদাহারণ অনুসরণ করবে এবং সর্বহারা একনায়কত্ব ও এক-পার্টি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করবে। আমাদের উত্তর হচ্ছে গণতান্ত্রিক শ্রেণীসমূহের মোর্চার ওপর ভিত্তি করে গঠিত নয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নীতিগতভাবে সর্বহারা একনায়কত্বধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে পৃথক। সন্দেহাতীতভাবে নয়াগণতন্ত্রের আমাদের ব্যবস্থা সর্বহারা শ্রেণী ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের অধীনে গড়া হবে, কিন্তু নয়া গণতন্ত্রের সমগ্র স্তর ধরে চীনের এক-শ্রেণী এবং এক-পার্টি সরকার থাকা সম্ভব নয় এবং তাই সে চেষ্টা করা উচিত নয়। সেসব রাজনৈতিক পার্টি, সামাজিক গ্রুপ ও স্বতন্ত্র ব্যক্তির সাথে সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করার আমাদের কোন কারণ নেই যখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গী কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি সহযোগিতামূলক, ও শত্রুভাবাপন্ন নয়। রুশ ব্যবস্থা রুশ ইতিহাসের দ্বারা আকৃতিপ্রাপ্ত; রাশিয়ায় মানুষ কর্তৃক মানুষের শোষণ সামাজিক ব্যবস্থা হিসেবে বিলুপ্ত হয়েছে। রাশিয়ায় নতুনতম ধরণের গণতন্ত্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা অর্থাত সমাজতন্ত্র কার্যকর করা হয়েছে এবং সকল সমাজতন্ত্রবিরোধি পার্টিকে বর্জন করে জনগণ কেবল বলশেভিক পার্টিকেই সমর্থন করে। এসবই রুশ পদ্ধতিকে আকৃতি দিয়েছে, যাহচ্ছে যথার্থত প্রয়োজন ও যুক্তিযুক্ত সেখানে। কিন্তু এমনকি রাশিয়ায়ও, যেখানে বলশেভিক পার্টি হচ্ছে একমাত্র রাজনৈতিক পার্টি, রাষ্ট্রক্ষমতার অঙ্গে অনুশীলিত ব্যবস্থা হচ্ছে এখনো শ্রমিক, কৃষক ও বুদ্ধিজীবিদের এক জোট এবং পার্টি সদস্য ও অ-পার্টি জনগণের এক জোট এবং এমন একটা ব্যবস্থা নয় যেখানে সরকারের অঙ্গে কেবল শ্রমিক শ্রেণী ও বলশেভিকরাই কাজ করতে পারে।
বর্তমান স্তরের জন্য চীনা পদ্ধতি চীনা ইতিহাসের বর্তমান স্তর দ্বারা আকৃতিপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘদীন যাবত এখানে একটা বিশেষ ধরণের রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বিদ্যমান থাকবে, একটা ধরণ যা রুশ পদ্ধতি থেকে পৃথক কিন্তু যথার্থভাবে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় ও যুক্তিযুক্ত যা হচ্ছে গণতান্ত্রিক শ্রেণীসমূহের জোটের ভিত্তিতে নয়াগণতান্ত্রিক ধরণের রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ক্ষমতা।
আমাদের মূর্ত কর্মসুচি
আমাদের পার্টির অবশ্যই সাধারণ কর্মসুচির ভিত্তিতে প্রতিটি পর্যায়ের জন্য মূর্ত কর্মসুচি থাকতে হবে। বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সমগ্র স্তরে অর্থাত কয়েক দশকের জন্য নয়া গণতন্ত্রের আমাদের সাধারণ কর্মসুচি অপরিবর্তিত থাকবে। এই স্তরের পর্ব থেকে পর্বে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং হচ্ছে আর এটা খুব স্বাভাবিক যে সে অনুসারে আমাদের মূর্ত কর্মসুচির পরিবর্তন করতে হবে। উদাহারণস্বরূপ, নয়াগণতন্ত্রের আমাদের সাধারণ কর্মসুচি উত্তর অভিযান, কৃষি বিপ্লবী যুদ্ধ এবং জাপবিরোধি প্রতিরোধ যুদ্ধের সমগ্র পর্যায়সমূহ ধরে একই রয়েছে, কিন্তু আমাদের মূর্ত কর্মসুচিতে পরিবর্তন হয়েছে। কেননা এই তিন পর্যায়ে আমাদের বন্ধু ও শত্রুরা একই ছিলনা।
চীনের জনগণ এখন নিজেদের নিচের অবস্থায় খুঁজে পানঃ
(১) জাপ হানাদারদের এখনো পরাজিত করা হয়নি
(২) একটা গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য জাতীয় ঐক্য অর্জনের লক্ষ্যে চীনের জনগণের জরুরীভাবে একত্রে কাজ করা দরকার, সকল জাপবিরোধী শক্তিকে দ্রুতগতিতে সমাবেশিত ও ঐক্যবদ্ধ করা দরকার এবং মিত্রদের সাথে সহযোগিতায় জাপ হানাদারদের পরাজিত করা দরকার; এবং
(৩) কুওমিনতাঙ সরকার জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করছে এবং এমন গণতান্ত্রিক পরিবর্তনকে বাঁধাগ্রস্থ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মূর্ত কর্মসুচি কী? অন্য কথায়, জনগণের আশু দাবীসমূহ কী কী?
আমাদের বিবেচনায় নীচের দাবীসমূহ যথার্থ ও সর্বনিম্ন দাবীঃ
জাপ হানাদারদের সামগ্রিক পরাজয়ের জন্য এবং মিত্রদের সাথে সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকল সম্ভাব্য শক্তিকে সমাবেশিত করুন;
কুওমিনতাঙের এক পার্টি একনায়কত্ব বিলোপ করুন এবং এক গণতান্ত্রিক সরকার ও এক যৌথ সর্বোচ্চ কমান্ড প্রতিষ্ঠা করুন;
জাপপন্থী উপাদান, ফ্যাসিস্ট ও পরাজয়বাদী যারা জনগণকে বিরোধিতা করছে এবং জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করছে, তাদের শাস্তি দিন এবং এভাবে জাতীয় ঐক্য গড়তে সাহায্য করুন;
সেসব প্রতিক্রিয়াশিলদের শাস্তি দিন যারা গৃহযুদ্ধের বিপদ সৃষ্টি করছে এবং এভাবে আভ্যন্তরীণ শান্তি নিশ্চিতকরণে সাহায্য করুন;
বিশ্বাসঘাতকদের শাস্তি দিন; শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করে এমন অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিন এবং জাপানী এজেন্টদের শাস্তি দিন;
প্রতিক্রিয়াশীল গোয়েন্দা দল (সিক্রেট সার্ভিস), তার সকল নিপীড়ক ততপররতা এবং রাজনৈতিক বন্দী শিবির (কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প) বিলোপ করুন;
জনগণের কথা বলার স্বাধীনতা, সংবাদপত্র, সভা, সংঘ, রাজনৈতিক মত, ধর্মীয় বিশ্বাস, ব্যক্তি স্বাধীনতাকে নিপীড়ণের উদ্দেশ্য সম্বলিত সকল প্রতিক্রিয়াশিল আইন ডিক্রী বাতিল করুন; এবং জনগণের পুর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করুন;
সকল গণতান্ত্রিক পার্টি ও গ্রুপের বৈধতার স্বীকৃতি দিন;
সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিন;
চীনের মুক্ত এলাকাকে ঘেরাওকারী ও আক্রমণকারী সকল সৈন্যদলকে প্রত্যাহার করুন এবং তাদেরকে জাপবিরোধি ফ্রন্টে প্রেরণ করুন;
চীনের মুক্ত এলাকাসমূহের জাপবিরোধী সশস্ত্র বাহিনীসমূহকে ও গণ নির্বাচিত সরকারসমূহকে স্বীকৃতি দিন;
মুক্ত এলাকাসমূহকে ও তার সশস্ত্র বাহিনীসমূহকে সুসংহত ও সম্প্রসারিত করুন, এবং সকল হৃত ভুখণ্ড উদ্ধার করুন;
জাপানী অধিকৃত এলাকার জনগণকে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের লক্ষ্যে গোপন সশস্ত্র বাহিনী সংগঠিতকরণে সাহায্য করুন;
চীনা জনগণকে সশস্ত্র হতে ও তাদের ঘরবাড়ী ও দেশ রক্ষার অনুমোদন দিন;
কুওমিনতাঙের সর্বোচ্চ কমান্ডের প্রত্যক্ষ অধীন সেসব বাহিনীর রাজনৈতিক ও সামরিক রূপান্তর ঘটান যারা অব্যাহতভাবে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করছে, জনগণকে অত্যাচার করছে এবং তাদের প্রত্যক্ষ অধীন নয় এমন বাহিনীসমূহের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে; বিপর্যয়কর পরাজয়ের জন্য দায়ি কমান্ডারদের শাস্তি দিন;
রিক্রুট পদ্ধতি এবং অফিসার ও সৈনিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করুন।
জাপ-বিরোধী যুদ্ধে লড়াইরত সৈনিকদের পরিবারের অগ্রাধিকার দেখাশুনা করুন যাতে ফ্রন্টে অফিসার ও সৈনিকেরা বাড়ীর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকে;
পঙ্গু সৈনিকদের অগ্রাধিকার দেখাশুনা করুন এবং দেশের জন্য জীবনদানকারী সৈনিকদের পরিবারের জন্য এবং অসংগঠিত সৈন্যদের একটা বাসস্থান অর্জনে ও আয় উপার্জনে সাহায্য করুন;
যুদ্ধ চালানোর সুবিধার্থে যুদ্ধ শিল্পের বিকাশ ঘটান;
মিত্রদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতা প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণরত সকল বাহিনীর প্রতি পক্ষপাতহীনভাবে বন্টন করুন;
দুর্নীতিবাজ অফিসারদের শাস্তি দিন এবং নিষ্কলুষ সরকার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করুন;
মাঝারি ও নিম্ন গ্রেডের সরকারী কর্মচারিদের বেতনের উন্নতি ঘটান;
চীনের জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার দিন;
উতপীড়ণমূলক পাও-চিয়া পদ্ধতির বিলোপ ঘটান; [৬]
যুদ্ধ উদ্বাস্তু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্বীকারদের সাহায্য দিন;
চীনের হৃত ভুখন্ড উদ্ধারের পর শত্রু অধিকৃত অবস্থায় দুর্দশাগ্রস’ জনগনের যথেষ্ট সহযোগিতার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের ব্যবস্থা করুন;
মাত্রাতিরিক্ত কর ও বিবিধ লেভি বিলোপ করুন এবং সুসংহত এক প্রগতিশীল কর প্রতিষ্ঠা করুন;
গ্রামীন সংস্কার সুচিত করুন, খাজনা ও সুদ হ্রাস করুন; প্রজা অধিকারের উপযুক্ত সুরক্ষা দান করুন, দরিদ্র কৃষকদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ অনুমোদন করুন এবং কৃষি উতপাদনের বর্ধনের জন্য কৃষকদের সংগঠিত হতে সাহায্য করুন;
আমলাতান্ত্রিক পুঁজি নিষিদ্ধ করুন;
অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বর্তমান কর্মনীতির বিলোপ করুন;
লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রতবর্ধনশীল দাম নিয়ন্ত্রণ করুন:
ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্পে সহযোগিতা দিন, একে ঋণ পাওয়ার, কাঁচামাল ক্রয় ও এর উতপন্নের বাজারজাতকরণে সহযোগিতা করুন;
শিল্পোতপাদনের সম্প্রসারণ ঘটাতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটান, বেকারদের সাহায্য দিন এবং শ্রমিকদের সংগঠিত হতে সহযোগিতা করুন;
কুওমিনতাঙ শিক্ষাদান বিলোপ করুন এবং এক জাতীয়, বৈজ্ঞানিক এবং গণসংস্কৃতি ও শিক্ষা বিকশিত করুন;
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষক ও অন্য স্টাফসদস্যদের জীবনযাত্রা নিশ্চিত করুন এবং একাদেমী স্বাধীনতা নিশ্চিত করুন; যুব, নারী ও শিশুদের রক্ষা করুন, তরুণ ছাত্র উদ্বাস্তুদের প্রতি সহযোগিতা দিন, যুব ও নারীদের সংগঠিত হতে সহযোগিতা দিন যাতে যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য ও সামাজিক প্রগতির জন্য উপকারী সকল কাজে সমান অংশগ্রহণ সম্ভব হয়, বিয়ের স্বাধীনতা এবং পুরুষ ও নারীদের মধ্যে স্বাধীনতা ও সাম্য নিশ্চিত করুন এবং যুব তরুণ ও শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষা দিন;
চীনের সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বাসমূহকে অধিকতর ভাল জীবন দিন এবং তাদের স্বায়ত্বশাসনের অধিকার দিন;
চীনা প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করুন এবং যারা মাতৃভুমিতে ফিরে এসেছেন তাদের সহযোগিতা করুন:
জাপানী নিপীড়ণ থেকে চীনে পালিয়ে এসেছেন এমন বিদেশী নাগরিকদের রক্ষা করুন এবং জাপ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামকে সমর্থন করুন;
চীন-সোভিয়েত সম্পর্কের উন্নতি ঘটান;
এই দাবীসমূহ অর্জন করতে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হলো কুওমিনতাঙের এক পার্টি একনায়কত্বের আশু বিলোপ এবং এক গণতান্ত্রিক অস্থায়ী কেন্দ্রিয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা, এক সম্মিলিত সরকার যা সকল জাপবিরোধি পার্টি এবং পার্টি বহির্ভুত জনগণসমেত দেশব্যাপী সমর্থন ভোগ করে। এই শর্ত ছাড়া কুওমিনতাঙ এলাকায় এবং তাই সমগ্রত সারা দেশে কোন প্রকৃত পরিবর্তন ঘটানো অসম্ভব।
এই দাবীসমূহ চীনা জনগণের আশা আকাঙ্খার কন্ঠস্বর এবং মিত্র দেশগুলোর ব্যাপক অংশের গনতান্ত্রিক জনমতেরও।
সকল জাপবিরোধি গণতান্ত্রিক পার্টিসমূহের একমত হওয়া এক সর্বনিম্ন মূর্ত কর্মসুচি হচ্ছে পরমভাবে অপরিহার্য এবং উপরে তুলে ধরা রূপরেখার ভিত্তিতে আমরা তাদের সাথে শলাপরামর্শ করতে প্রস্তুত। ভিন্ন ভিন্ন পার্টির ভিন্ন ভিন্ন দাবী থাকতে পারে, কিন্তু সবাইকে এক সাধারণ কর্মসুচির ভিত্তিতে ঐক্যমতে পৌঁছতে হবে।
কুওমিনতাঙ এলাকার কথা বলতে গেলে এমন কর্মসুচি এখনো জনগণের দাবীর পর্যায়ে রয়েছে; জাপানী অধিকৃত এলাকার কথা বলতে গেলে এটা একটা কর্মসুচি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের জন্য গোপন বাহিনীসমূহের সংগঠনের কাজ বাদ দিলে যার বাস্তবায়ন ঐসব এলাকার উদ্ধারের জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করবে; মুক্ত এলাকাসমূহের কথা বলতে গেলে এটা একটা কর্মসুচি যা ইতিমধ্যেই প্রয়োগ হয়েছে; প্রয়োগ হচ্ছে এবং অব্যাহত থাকতে হবে।
উপরে রূপরেখা প্রদত্ত চীনা জনগণের আশু দাবী অথবা মূর্ত কর্মসুচির সাথে বহু নির্ধারক যুদ্ধকালীন অথবা যুদ্ধ পরবর্তী সমস্যা জড়িত যা বিশদকরণ দাবী করে। নীচে এই সমস্যাগুলো ব্যাখ্যা করে আমরা কুওমিনতাঙের প্রধান শাসক চক্রের কিছু ভুল মতাবস্থানকে সমালোচনা করবো এবং একইসাথে অন্য কিছু লোকের তুলে ধরা কিছু প্রশ্নের জবাব দেব।
১. জাপ হানাদারদের পরিপুর্ণরূপে ধ্বংস করো, মাঝপথে কোন আপোষ অনুমোদন করোনা
কায়রো সম্মেলন [৭] সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত করেছে যে জাপ হানাদারদের অবশ্যই নিঃশর্তভাবে আত্মসমপর্ণে বাধ্য করতে হবে। কিন্তু জাপ হানাদাররা এক আপোষ-শান্তির জন্য পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ছে, যেখানে কুওমিনতাঙ সরকারের জাপপন্থী উপাদানসমূহ জাপানের গোপন লক্ষ্যের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে নানকিঙের পুতুল সরকারের মাধ্যমে, এবং এটা থামেনি। তাই, মাঝপথে আপোষের বিপদ সম্পর্ণ এখনো কাটেনি। কায়রো সম্মেলন আরেকটি ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যথা চার উত্তরাঞ্চলীয প্রদেশ, তাইওয়ান ও পেংঘু দ্বীপপুঞ্জকে চীনের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তার বর্তমান কর্মনীতিতে কুওমিনতাঙ সরকারের পক্ষে ইয়ালু নদীর বরাবর সর্বাত্মক যুদ্ধ করা এবং আমাদের হৃত সকল ভুখন্ড উদ্ধার করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে চীনের জনগণের কী করা উচিত?
তাদের দাবী তোলা উচিত যে কুওমিনতাঙ সরকারকে জাপ হানাদারদের পরিপুর্ণরূপে ধ্বংস করতে হবে এবং মাঝপথে আপোষ অনুমোদন করতে পারবেনা। আপোষের সকল ষড়যন্ত্র আশুভাবে থামাতে হবে। চীনা জনগণকে দাবী তুলতে হবে যে কুওমিনতাঙ সরকারকে তার পরোক্ষ প্রতিরোধের বর্তমান কর্মনীতি পরিবর্তন করতে হবে এবং তার সকল সামরিক সামর্থ জাপানের বিরুদ্ধে সক্রিয় যুদ্ধে নিয়োযিত করতে হবে।। তাদের (জনগণ) কে নিজেদের সশস্ত্র বাহিনী অস্টম রুট বাহিনী, নয়া চতুর্থ বাহিনী ও জনগণের অন্যান্য সশস্ত্র ইউনিটসমুহকে সম্প্রসারিত করতে হবে এবং শত্রু যেখানেই পৌঁছে সেখানেই বিপুল মাত্রায় জাপবিরোধি বাহিনী বিকশিত করতে হবে এবং মিত্রদের সাথে প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় লড়াই করে সকল হৃত ভুখন্ড উদ্ধারে প্রস্তুতি নিতে হবে; কুওমিনতাঙের ওপর কোন অবস্থায়ই পরমভাবে নির্ভর করা চলবেনা। জাপ হানাদারদের পরাজিত করা চীনা জনগণের পবিত্র অধিকার। যদি প্রতিক্রিয়াশীলরা তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়, জাপবিরোধি ততপরতাকে দমন করে অথবা তাদের সামর্থকে খাঁটো করে, তাহলে প্ররোচনা নিষ্ফল হলে চীনা জনগণকে আত্মরক্ষায় দৃঢ়ভাবে পাল্টা আঘাত হানতে হবে। চীনা প্রতিক্রিয়াশীলদের পক্ষ থেকে এমন জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতার কর্ম কেবল জাপ হানাদারদের সাহায্য ও প্ররোচনা দেবে।
২. কুওমিনতাঙ এক-পার্টি একনায়কত্ব বিলোপ করুন, এক গণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করুন
জাপ হানাদারদের উতপাটিত করার জন্য সারাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধন করা দরকার। তথাপি এটা অসম্ভব হবে যদিনা কুওমিনতাঙ এক-পার্টি একনায়কত্ব বিলোপ করা হয় এবং গণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কুওমিনতাঙের এক পার্টি একনায়কত্ব বাস্তবে কুওমিনতাঙের মধ্যকার জনগণবিরোধী চক্রের একনায়কত্ব এবং এই একনায়কত্ব হচ্ছে চীনের জাতীয় ঐক্যের ধ্বংসকারী যুদ্ধে কুওমিনতাঙ ফ্রন্টের পরাজয়ের রচয়িতা এবং চীনা জনগণের জাপবিরোধি শক্তির সমাবেশিতকরণ ও একীভূতকরণের মূল প্রতিবন্ধকতা। আট বছরের প্রতিরোধ যুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে চীনা জনগণ এই একনায়কত্বের অনিষ্ট সম্পর্কে পুর্ণ সচেতন হয়ে ওঠেছেন, এবং স্বাভাবিকভাবে তারা এর আশু বিলোপ দাবী করেন। এই প্রতিক্রিয়াশীল একনায়কত্ব গৃহযুদ্ধেরও উতপাদক, এবং যদিনা তা আশুভাবে বিলোপ করা হয় এটা তাদের ওপর গৃহযুদ্ধের দুর্বিপাক পুনরায় নিয়ে আসবে।
জনগণবিরোধি একনায়কত্বের বিলোপের জন্য চীনা জনগনের শ্লোগান এতটাই বিস্তৃত ও প্রচণ্ড যে কুওমিনতাঙ সরকার “রাজনৈতিক অভিভাবকত্বের পুর্বতন বিলোপ”-এ নিজেরা বাধ্য হয়েছে প্রকাশ্যে রাজী হতে, যা দেখায় যে এই “রাজনৈতিক অভিভাবকত্ব” অথবা এক-পার্টি একনায়কত্ব কতটা জনসমর্থন ও সম্মান খুইয়েছে। চীনে একজন লোকও নেই যে এখনো একথা বলতে সাহস করে যে এই “রাজনৈতিক অভিভাবকত্ব” অথবা এক-পার্টি একনায়কত্ব কোন ভাল কিছু অথবা একে “বিলোপ” করতে হবেনা, এবং এটা পরিস্থিতির বিরাট পরিবর্তন চিহ্নিত করে। এটা নিশ্চিত ও সন্দেহাতীত যে একে “বিলোপ” করতে হবে। কিন্তু কীভাবে তা করা যায় তাতে মতভিন্নতা রয়েছে। কেউ কেউ একে একবারে বিলোপ করা ও এক অস্থায়ী গণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। অন্যরা বলেন, কিছু অপেক্ষা করে “জাতীয় প্রতিনিধি সভা” ডাকুন এবং “জনগনের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিন” এবং এক সম্মিলিত সরকারের কাছে নয়।
এর অর্থ কী?
এর অর্থ হচ্ছে এটা করার দুই পথ রয়েছে। সত পথ ও অসত পথ।
প্রথম, সত পথ। সত পথ হচ্ছে কুওমিনতাঙ এক-পার্টি একনায়কত্বের আশু বিলোপ ঘোষণা করা এবং কুওমিনতাঙ, কমিউনিস্ট পার্টি, গণতান্ত্রিক লীগ ও পার্টিবহির্ভুত জনগনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এক অস্থায়ী কেন্দ্রিয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং এক গণতান্ত্রিক কর্মসুচির রাজনৈতিক ততপরতা ঘোষণা করা যেমন জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা ও জাপ হানাদারদের পরাজিত করার লক্ষ্যে আমরা ওপরে যে জনগনের আশু দাবীসমূহ তুলে ধরেছি। এই বিষয়গুলি আলোচনা করতে ও ঐক্যমতে পৌঁছতে এবং সেইমতো কর্মততপরতা নিতে বিবিধ পার্টি ও পার্টি বহির্ভুত জনগণের প্রতিনিধিদের এক গোল টেবিল বৈঠক ডাকতে হবে। এটাই হচ্ছে ঐক্যের পথ, যা চীনা জনগণ দৃঢ়ভাবে সমর্থন করবেন।
দ্বিতীয় হচ্ছে অসত পথ। অসত পথ হচ্ছে জনগনের ও সকল গণতান্ত্রিক পার্টিসমূহের দাবীসমূহ অগ্রাহ্য করতে এবং কুওমিনতাঙের জনগণবিরোধি চক্র কর্তৃক মঞ্চস্থ তথাকথিত জাতীয় প্রতিনিধি সভা আহ্বাণ করা এবং তার দ্বারা এক “সংবিধান” গ্রহণ করানো যা বাস্তবে হবে গণতন্ত্রবিরোধি এবং যা হবে এই চক্রের অবলম্বন এক অবৈধ “জাতীয় সরকার” কে এক বৈধতার ছদ্মাবরণ দিতে- যে-সরকার কয়েক ডজন কুওমিনতাঙ সদস্যদের নিয়োগ দানের মাধ্যমে গোপনে গঠিত হবে, জনগণের ইচ্ছা আকাঙ্খা সম্পূর্ণ এড়িয়ে জনগণের ওপর আরোপিত, এভাবে “জনগনের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার” ভাণ করে যাহচ্ছে প্রকৃতপক্ষে কুওমিনতাঙের একই প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। যারাই একে অননুমোদন করবেন তাদেরই “গণতন্ত্র” ও “ঐক্য”কে সাবোটাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে, যা তারপর একটা “যুক্তি” হবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার। এটা হচ্ছে ধ্বংসের পথ যা চীনা জনগণ দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করেন।
আমাদের প্রতিক্রিয়াশীল বীরেরা যে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এই ভাঙনকারী কর্মনীতির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণভাবে তা তাদের সম্ভাব্য ধ্বংসের দিকে চালিত করবে। তারা এক গলাবন্ধ পড়ছে, আর তা গলায় শক্ত করে বাঁধছে যা হচ্ছে “জাতীয় প্রতিনিধি সভা”। তাদের প্রবৃত্তি হচ্ছে এ “জাতীয় প্রতিনিধি সভা” কে যাদুকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা, প্রথমত, এক সম্মিলিত সরকার গঠণ রোধ করা, দ্বিতীয়ত, তাদের একনায়কত্ব বজায় রাখা, এবং তৃতীয়ত, গৃহযুদ্ধের ন্যায্যতা প্রতিপাদনের প্রস্তুতি নেওয়া। যাহোক, ইতিহাসের যুক্তি তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়, তারা “পাথর তুলে নিজেদের পায়ে আঘাত করতে” থাকবে। কারণ এটা সকলের কাছে নিশ্চিত যে কুওমিনতাঙ এলাকার জনগণের কোন স্বাধীনতা নেই এবং জাপানী অধিকৃত এলাকার জনগণ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননা, যেখানে স্বাধীনতা রয়েছে মুক্ত এলাকাসমূহে আর তা কুওমিনতাঙ সরকার স্বীকৃতি দেয়না। এই যখন ঘটনা, সেখানে কীভাবে জাতীয় প্রতিনিধি থাকতে পারে? কীভাবে “জাতীয় প্রতিনিধি সভা”হতে পারে? যে জাতীয় প্রতিনিধি সভার কথা তারা জোর গলায় বলছে তাহচ্ছে সেই যা আট বছর আগে গৃহযুদ্ধকালীন সময়ের প্রতিটি ক্ষণে কুওমিনতাঙ একনায়কত্ব প্রতারনার সাথে পরিধান করেছে। যদি এমন একটা প্রতিনিধি সভা ডাকা হয়, সমগ্র জাতি এর বিরুদ্ধে অনিবার্যভাবে জেগে ওঠবে, প্রশ্ন করা যেতে পারে কীভাবে আমাদের প্রতিক্রিয়াশীল বীরেরা সেই শ্লোগান থেকে বেরিয়ে আসবে? ভুয়া জাতীয় প্রতিনিধি সভার আহ্বাণ সর্বাংশে তাদের ধ্বংসে চালিত করবে।
আমরা কমিউনিস্টরা দুই ধাপে কুওমিনতাঙ এক পার্টি-একনায়কত্ব বিলোপের প্রস্তাব করি। প্রথম, বর্তমান স্তরে, সকল পার্টি ও পার্টিবহির্ভুত জনগণের প্রতিনিধিদের মধ্যে সাধারণ ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে এক অস্থায়ী সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়, পরের স্তরে, মুক্ত ও বিধিনিষেধহীন নির্বাচনের মাধ্যমে এক জাতীয় প্রতিনিধি সভা আহ্বাণ করা এবং নিয়মিত সম্মিলিত সরকার গঠণ করা। উভয় ক্ষেত্রে, একটা সম্মিলিত সরকার হবে যাতে অংশগ্রহনেচ্ছু সকল শ্রেণী ও রাজনৈতিক পার্টি এক গণতান্ত্রিক সাধারণ কর্মসুচির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হবে আজকে জাপানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং কাল জাতীয় পুনর্গঠনে।
এটাই হচ্ছে একমাত্র পথ যা চীন গ্রহণ করতে পারে, কুওমিনতাঙ অথবা অন্য পার্টিসমূহের, গ্রুপ অথবা ব্যক্তির প্রবৃত্তি যাই হোক না কেন, তারা পছন্দ করুক আর না করুক, তারা এর ওপর সচেতন থাক আর না থাক। এ হচ্ছে এক ঐতিহাসিক নিয়ম, এক দৃঢ় প্রবণতা যাকে কোন শক্তিই উল্টাতে পারবেনা।
এ ব্যাপারে ও অন্য সকল গনতান্ত্রিক সংস্কার নিয়ে আমরা কমিউনিস্টরা ঘোষণা করি যে যদিও কুওমিনতাঙ কর্তৃপক্ষ এখনো একগুঁয়েভাবে ভ্রান্ত কর্মনীতিতে বজায় রয়েছে এবং দরকষাকষি আলোচনায় কালক্ষেপণের জন্য এবং জনমত প্রশমনের জন্য খেলছে, আমরা তাদের সাথে দরকষাকষি আলোচনার জন্য প্রস্তুত যে মুহুর্তে তারা তাদের ভ্রান্ত কর্মনীতি পরিত্যাগের ইচ্ছা প্রদর্শন করবে, গণতান্ত্রিক সংস্কারে একমত হবে। কিন্তু দরকষাকষি আলোচনাকে হতে হবে প্রতিরোধ, ঐক্য ও গণতন্ত্রের সাধারন নীতির ভিত্তিতে এবং আমরা কেবল তথাকথিত মানদন্ড, পরিকল্পনা অথবা ফাঁকা কথাবার্তার ভিত্তিতে একমত হবোনা যা সাধারণ নীতি থেকে বিচ্যুত হয়, সেগুলো শুনতে যত ভালই হোক।
৩. জনগনের জন্য স্বাধীনতা
বর্তমানে স্বাধীনতার জন্য চীনা জনগনের সংগ্রাম মুখ্যত জাপ হানাদারদের বিরুদ্ধে চালিত। কিন্তু কুওমিনতাঙ সরকার জাপ হানাদারদের বিরুদ্ধে তাদেরকে লড়াই থেকে বিরত করছে তাদের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করে এবং তাদের হাত পা বেঁধে ফেলে। এই সমস্যা সমাধান না করা হলে জাতির সকল জাপবিরোধি শক্তিকে সমাবেশিত করা ও ঐক্যবদ্ধ করা অসম্ভব হবে। এটা হচ্ছে মূর্তভাবে জনগণের বন্ধনকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যাতে তারা জাপানকে প্রতিরোধ করার স্বাধীনতা পান, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য এবং গণতন্ত্র জয় করার জন্য যা আমাদের কর্মসুচি তুলে ধরেছে এমন দাবীসমূহ যথা, এক-পার্টি একনায়কত্ব বিলোপ করা; এক সম্মিলিতসরকার প্রতিষ্ঠা করা; গোপন পুলিশ বিলোপ, নিপীড়ক আইন ও ডিক্রী বাতিল; বিশ্বাসঘাতক, গোয়েন্দা, জাপপন্থী উপাদান, ফ্যাসিস্ট ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দান; রাজবন্দীদের মুক্তি দান; সকল গণতান্ত্রিক পার্টির বৈধতার স্বীকৃতি দান; মুক্ত এলাকা ঘেরাওকারী ও আক্রমণকারী সৈন্যদল প্রত্যাহার, মুক্ত এলাকাসমূহের স্বীকৃতি, পাও-চিয়া পদ্ধতি বিলোপ, এবং অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও গণ আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত অন্য বহু দাবী।
জনগণ স্বাধীনতা অর্জন করেন সংগ্রামের মাধ্যমে, এটা কেউ কাউকে দান করেনা। চীনের মুক্ত এলাকার জনগণ ইতিমধ্যেই স্বাধীনতা অর্জন করেছেন, এবং অন্যান্য এলাকায়ও জনগণ স্বাধীনতা জয় করতে পারেন এবং অবশ্যই তা করতে হবে। চীনের জনগণের স্বাধীনতা যত বেশি হবে, যত অধিক শক্তিধর তাদের সংগঠিত গণতান্ত্রিক শক্তি হবে, তত বেশি এক অস্থায়ী ও ঐক্যবদ্ধ সম্মিলিত সরকার গঠণের সম্ভাবনা থাকবে। একবার গঠিত হলে এই সম্মিলিত সরকার জনগণকে পুর্ণ স্বাধীনতা দেবে এবং এভাবে তার ভিত্তি সুসংহত করবে। কেবল তখনই জাপ হানাদারদের উচ্ছেদের পর মুক্ত ও বিধিনিষেধহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে সারা দেশে, এক গণতান্ত্রিক জাতীয় প্রতিনিধি সভা সৃষ্টি করা সম্ভব হবে এবং এক নিয়মিত ও ঐক্যবদ্ধ সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। জনগণের স্বাধীনতা যদি না থাকে, জনগণ কর্তৃক প্রকৃতভাবে নির্বাচিত কোন জাতীয় প্রতিনিধি সভা অথবা সরকার থাকতে পারেনা। এটা কি যথেষ্ট পরিষ্কার নয়?
কথা বলার স্বাধীনতা, সংবাদপত্র, সভা, রাজনৈতিক মত ও ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ স্বাধীনতা। চীনে কেবল মুক্ত এলাকাসমূহই এই স্বাধীনতাসমূহ কার্যকর করেছে।
১৯২৫-এ ড.সান ইয়াত-সেন তার মৃত্যুশয্যার ইচ্ছাপত্রে ঘোষণা করেনঃ
চল্লিশ বছর যাবত আমি জাতীয় বিপ্লবের আদর্শে নিজেকে উতসর্গ করেছি চীনের স্বাধীনতা ও সমতার লক্ষ্যে। এই চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতা আমাকে দৃঢ়ভাবে আশ্বস্ত করেছে যে এই লক্ষ্য অর্জন করতে আমাদের অবশ্যই ব্যাপক জনগণকে জাগরিত করতে হবে ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বিশ্বের সেসকল জাতির সাথে সাধারণ সংগ্রামে যারা আমাদের সমান মর্যাদা দেয়।
ডা.সানের তুচ্ছ উত্তরাধিকাররা যারা কিনা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে জনগণকে জাগরিত করার বদলে নিপীড়ণ করে, তাদের কথা বলার, সংবাদপত্র, সভা, সংঘ, রাজনৈতিক মত, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ব্যক্তির স্বাধীনতার মতো সকল স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছে। যারা প্রকৃতপক্ষে ব্যাপক জনগণকে জাগরিত করছে এবং তাদের স্বাধীনতা ও অধিকারকে রক্ষা করছে সেই কমিউনিস্ট পার্টি, অস্টম রুট বাহিনী, নয়া চতুর্থ বাহিনী ও মুক্ত এলাকাসমূহের ওপর তারা “বিশ্বাসঘাতক পার্টি”, “বিশ্বাসঘাতক বাহিনী” এবং “বিশ্বাসঘাতক এলাকা”র লেবেল আঁটে। আমরা আশা করি শীঘ্রই সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে এই উল্টানোর অবসান ঘটবে। যদি এটা দীর্ঘদিন টিকে থাকে, চীনের জনগণ সমুদয় ধৈর্য হারাবেন।
৪. জনগণের ঐক্য
জাপ হানাদারদের ধ্বংস করতে, গৃহযুদ্ধ রোধ করতে এবং এক নয়া চীন নির্মাণ করতে বিভক্ত চীনকে ঐক্যবদ্ধ চীনে রূপান্তর করা প্রয়োজন; চীনা জনগণের ঐতিহাসিক কর্তব্য এমনই।
কিন্তু কীভাবে চীন ঐক্যবদ্ধ হবে? একনায়কের স্বৈারাচারী একীভূতকরণ না জনগণের গণতান্ত্রিক একীভূতকরণ? ইউয়ান শিহ-কাই [৮]-এর সময় থেকে উত্তরাঞ্চলীয় যুদ্ধবাজরা এক স্বৈরাচারী একীভূতকরণ কেন্দ্রীভূত করেছিল। কিন্তু ফল কি হয়েছিল? তাদের আকাঙ্খার বিপরীতে তারা যা অর্জন করেছিল তা একীভূতকরণ নয় বরং বিভক্তি, এবং চুড়ান্ততঃ তারা ক্ষমতা থেকে পতিত হয়েছিল। ইউয়ান শিহ-কাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কুওমিনতাঙের জনগণ বিরোধী চক্র স্বৈরতান্ত্রিক একীভূতকরণ চেয়েছিল আর দশ বছর যাবত গৃহযুদ্ধ চালিয়েছে কেবল জাপ হানাদারদের অনুপ্রবেশ করতে দিতে যারা নিজেরাই মাউন্ট ও সেই [৯]-এ নিজেদের প্রত্যাহার করেছিল। আর এখন তাদের পর্বত শিখর থেকে আবারো তাদের স্বৈরতান্ত্রিক একীভূতকরণ তত্ত্ব কপচাচ্ছে। তারা কাদের উদ্দেশ্যে চীতকার করছে? কোন সত চীনা দেশপ্রেমিক কি তাদের কথা শুনবে? ষোল বছরের উত্তরাঞ্চলীয় যুদ্ধবাজদের শাসন আর আঠারো বছরের একনায়তান্ত্রিক কুওমিনতাঙ শাসনে বাস করে জনগণ পর্যাপ্ত মূল্যবাণ অভিজ্ঞতা ও দুরদৃষ্টি অর্জন করেছেন। তারা জনগণ কর্তৃক গণতান্ত্রিক একীভূতকরণ চান, কোন একনায়ক কর্তৃক স্বৈরতান্ত্রিক একীভূতকরণ নয়। ১৯৩৫-এর দিকে আমরা কমিউনিস্টরা জাপবিরোধি জাতীয় যুক্তফ্রন্টের কর্মনীতি তুলে ধরি, এবং তখন থেকেই আমরা এর জন্য লড়াই চালিয়েছি। ১৯৩৯-এ যখন কুওমিনতাঙ তার প্রতিক্রিয়াশীল “বিদেশী পার্টির ততপরতা নিষিদ্ধকরণের মানদন্ড” প্রয়োগ করছিল, এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা, বিভক্তি ও অধঃপতনের বিপদ সৃষ্টি করছিল এবং যখন সে তার স্বৈরতান্ত্রিক একীভূতকরণ তত্ত্ব চিতকার করছিল, আমরা পুনরায় ঘোষণা করলামঃ একীভূতকরণ হতে হবে প্রতিরোধের ভিত্তিতে, বিশ্বাসঘাতকতার ভিত্তিতে নয়, ঐক্যের ভিত্তিতে, বিভক্তির ভিত্তিতে নয়, প্রগতির ভিত্তিতে, অধোগতির ভিত্তিতে নয়। কেবল প্রতিরোধ, ঐক্য ও প্রগতির ভিত্তিতে একীভূতকরণ হচ্ছে প্রকৃত এবং অন্য ধরণ হচ্ছে ভুয়া। ছয় বছর অতিক্রান্ত হয়েছে কিন্তু বিষয়টি একই রয়েছে।
জনগণের কোন স্বাধীনতা অথবা গণতন্ত্র না থাকলে কি কোন ঐক্য থাকতে পারে? উভয়টা তাদের হওয়ার সাথে সাথেই ঐক্য হবে। চীনের জনগণের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সম্মিলিত সরকারের জন্য আন্দোলন একইসাথে ঐক্যের জন্য আন্দোলন। যখন আমরা আমাদের কর্মসুচিতে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও এক সম্মিলিত সরকারের বহু দাবী তুলে ধরি, একইসাথে আমরা ঐক্যের লক্ষ্যে বজায় থাকি। এটা খুবই সহজ সরল কথা যে গণবিরোধি কুওমিনতাঙ চক্রের একনায়কত্ব যদি বিলোপ না করা হয় ও এক গণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার গঠণ করা না হয়, কুওমিনতাঙ এলাকায় কোন গণতান্ত্রিক সংস্কার পরিচালনা করা অসম্ভব হবে অথবা সেখানে সৈন্যবাহিনী ও জনগণকে সমাবেশিত করা অসম্ভব হবে জাপ হানাদারদের পরাজিত করতে, বরং গৃহযুদ্ধের দুর্বিপাক দেখা দেবে। পার্টি ও পার্টিবহির্ভুত এত সংখ্যক গণতন্ত্রী যার মধ্যে কুওনিতাঙেরও অনেকে রয়েছে কেন সর্বসম্মতভাবে সম্মিলিত সরকার দাবী করেন? কারণ বর্তমান সংকট সম্পর্কে তারা পরিষ্কার এবং উপলব্ধি করেন যে একে কাটানোর অন্য কোন উপায় নেই এবং শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্য ও জাতীয় বিনির্মাণের জন্য ঐক্য অর্জনেরও অন্য কোন উপায় নেই।
৫. গণবাহিনী
জনগণের পাশে দাঁড়ানো এক সৈন্যবাহিনী ছাড়া চীনের জনগণের পক্ষে একীভূতকরণের স্বাধীনতা জয় করা, এক সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা, জাপ হানাদারদের পরিপুর্ণরূপে পরাজিত করা এবং এক নয়া চীন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। বর্তমানে সমগ্রত জনগণের পাশে দাঁড়ানো একমাত্র বাহিনী হচ্ছে মুক্ত এলাকার অস্টম রুট বাহিনী ও নয়া চতুর্থ বাহিনী, যারা খুব বেশী বড় নয়, পর্যাপ্ত থেকে দুরে। তথাপি জনগণকে বিরোধিতা করে যে কুওমিনতাঙ গ্রুপ সে অবিরতভাবে মুক্ত এলাকার সৈন্যবাহিনীকে খাঁটো করা ও ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৪৪ সালে কুওমিনতাঙ সরকার এক তথাকথিত স্মারকলিপি প্রদান করে এই দাবী করে যে কমিউনিস্ট পার্টিকে মুক্ত এলাকার চার পঞ্চমাংশ বাহিনীকে “একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ভেঙে দিতে হবে”। ১৯৪৫-এ খুব সাম্প্রতিক দরকষাকষি আলোচনার সময় সে আরো দাবী করে যে কমিউনিস্ট পার্টি মুক্ত এলাকার সকল বাহিনী হস্তান্তর করুক, তারপরই সে কমিউনিস্ট পার্টিকে “বৈধতা” দেবে।
এসব লোক কমিউনিস্টদের বলে, “তোমাদের সৈন্যদল হস্তান্তর করো আর আমরা তোমাদের স্বাধীনতা দেব”। তাদের তত্ত্বানুসারে সেই রাজনৈতিক পার্টি স্বাধীনতা ভোগ করবে যার কোন বাহিনী নেই। তথাপি ১৯২৪-২৭ সময়কালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির যখন এক ক্ষুদ্র বাহিনী ছিল, যে স্বাধীনতাই সে ভোগকরুক, কুওমিনতাঙ সরকারের “পার্টি বিশোধন” ও গণহত্যার কর্মনীতির দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। এবং আজকে চীনা গণতান্ত্রিক লীগ ও কুওমিতাঙের মধ্যকার গণতন্ত্রীদের-যাদের কোন বাহিনী নেই তাদের স্বাধীনতাও নেই। কুওনিতাঙ শাসনের অধীন শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র এবং সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও শিল্প মহলের প্রগতি আকাঙ্খী জনগণের কথা ধরুন, বিগত আঠারো বছর যাবত এদের কারুরই কোন বাহিনী ছিলনা। এসব গণতান্ত্রিক পার্টি ও জনগণকে স্বাধীনতা দিতে অস্বীকার করা হয়েছে কি এজন্য যে তারা বাহিনী সংগঠিত করেছিলেন, “সামন্তবাদী বিভক্তিবাদ”-এর অপরাধ করেছিলেন, “বিশ্বাসঘাতক এলাকা” সৃষ্টি করেছিলেন এবং “সরকারী ও সামরিক নির্দেশ” লংঘন করেছিলেন? একটুও না। বিপরীতে, তাদের স্বাধীনতা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে কারণ তারা এর কোনটাই করেননি।
“সৈন্যবাহিনী রাষ্ট্রের অধীন”-কথাটা খাঁটি সত্য, এবং পৃথিবীতে এমন কোন সৈন্যবাহিনী নেই যে কোন রাষ্ট্রের অধীন নয়। কিন্তু কি ধরণের রাষ্ট্র? বৃহত ভুস্বামী, বৃহত ব্যাংকার ও বৃহত মুতসুদ্দিদের সামন্তবাদী ও ফ্যাসিস্ট একনায়কত্বধীন রাষ্ট্র নাকি ব্যাপক জনগণের নয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র? একমাত্র যে ধরণের রাষ্ট্র চীনের জন্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে তাহচ্ছে একটা নয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, এবং সেই ভিত্তিতে, তাকে একটা নয়াগণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, চীনের সকল সৈন্যবাহিনীকে এমন একটা রাষ্ট্রের এমন একটা সরকারের অধীনস্ত হতে হবে যাতে তারা জনগনের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারেন এবং বিদেশী হানাদারদের কার্যকরভাবে লড়তে পারেন। যে মুহুর্তে চীনে নয়াগণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার জন্ম নেবে চীনের মুক্ত এলাকাগুলি তখনই তাদের বাহিনীগুলোকে তার কাছে হস্তান্তর করবে। কিন্তু কুওমিনতাঙের সকল বাহিনীকেও একই সাথে তার কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
১৯২৪-এ ড.সান ইয়াত-সেন বলেন, “আজকে সেই দিন যা জাতীয় বিপ্লবে এক নয়া যুগের সূচক…প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীকে জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ করা, এবং পরের পদক্ষেপ হচ্ছে তাদেরকে জনগণের সশস্ত্র বাহিনীতে রূপান্তরিত করা।”[১০] এর কারণ তারা এই কর্মনীতি প্রয়োগ করেছিলেন যে অস্টম রুট বাহিনী ও নয়া চতুর্থ বাহিনী “জনগণের সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত হয়েছে”, অর্থাত গণবাহিনী, এবং জয় ছিনিয়ে আনাতে সক্ষম হয়েছে। উত্তরাভিযানের প্রথম দিককার সময়ে, কুওমিনতাঙ বাহিনীসমূহ ড.সানের “প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলো এবং তাই বিজয় অর্জন করেছিল। উত্তরাভিযানের পরবর্তী সময়কালে তারা এমনকি “প্রথম পদক্ষেপ” পরিত্যাগ করে, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং তাই সেসময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত তারা অধিক থেকে অধিকতর দুর্নীতিবাজ ও অধঃপতিত হয়েছে; আভ্যন্তরীণ যুদ্ধে তাদের এই হচ্ছে চরিত্র আর বাহ্যিক যুদ্ধ লড়ার সময় তারা এই চরিত্রের বাইরে যেতে পারেনা। কুওমিনতাঙ সৈন্যবাহিনীর প্রতিটি বিবেকবাণ দেশপ্রেমিক অফিসারকে সান ইয়াত-সেনের চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করার ও তার সৈন্যদলকে রূপান্তরের প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
পুরোনো সৈন্যবাহিনীসমূহকে রূপান্তরের কাজে সকল অফিসারকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে যারা পুনশিক্ষিত হতে সক্ষম তাদের সেকেলে দৃষ্টিভঙ্গী থেকে মুক্ত হতে এবং একটা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী অর্জনে যাতে তারা গণবাহিনীতে থাকতে পারে ও তাকে সেবা করতে পারে।
চীনা জনগণের সৈন্যবাহিনী সৃষ্টি করার জন্য সংগ্রাম করা সমগ্র জাতির কর্তব্য। বাহিনী না থাকলে জনগণের কিছূই থাকেনা। এপ্রশ্নে ফাঁকা তত্ত্ব দেওয়া চলবেনা।
চীনা সৈন্যবাহিনীর রূপান্তরের কর্তব্যে সমর্থন দিতে আমরা কমিউনিস্টরা প্রস্তুত। জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে ইচ্ছুক ও চীনা মুক্ত এলাকার সশস্ত্র বাহিনীকে বিরোধিতার বদলে জাপ হানাদারদের বিরোধিতা করতে ইচ্ছূক সৈন্যবাহিনীসমূহকে মিত্রবাহিনী হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং অস্টম রুট বাহিনী ও নয়া চতুর্থ বাহিনীকে তাদেরকে যথাযথ সহযোগিতা দিতে হবে।
৬. ভুমি সমস্যা
জাপ হানাদারদের উতপাটিত করতে ও এক নয়া চীন নির্মাণ করতে ভুমি সমস্যার সংস্কার ও কৃষকদের মুক্ত করা প্রয়োজন। ড.সান ইয়াত-সেনের “কৃষকের হাতে জমি”র থিসিস আমাদের বিপ্লবের বর্তমান পর্যায়কাল – যাহচ্ছে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক চরিত্রের – এর জন্য সঠিক।
কেন আমরা বলি যে বর্তমান পর্যায়কালে আমাদের বিপ্লব বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক চরিত্রের? আমরা অর্থ করি যে বিপ্লবের নিশানা সাধারণভাবে বুর্জোয়ারা নয় বরং জাতীয় ও সামন্তবাদী নিপীড়ণ, বিপ্লবে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয় তা সাধারণভাবে ব্যক্তিমালিকানার বিলোপে চালিত নয় এবং এই বিপ্লবের ফলে শ্রমিকশ্রেণী চীনকে সমাজতন্ত্রের দিকে নিয়ে যেতে সামর্থ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে, যদিও পুঁজিবাদকে এক দীর্ঘসময় ধরে একটা যথাযথ মাত্রায় বাড়তে দেওয়া হবে। “কৃষকের হাতে জমি”র অর্থ হচ্ছে ভুমি সামন্ত শোষকদের কাছ থেকে কৃষকদের কাছে স্থানান্তর করা, সামন্ত ভুস্বামীদের ব্যক্তি মালিকানাকে কৃষকদের ব্যক্তি মালিকানায় রূপান্তর করা এবং তাদেরকে সামন্ত কৃষি-সম্পর্ক থেকে মুক্তি দিয়ে একটা কৃষীয় দেশকে শিল্পীয় দেশে রূপান্তর সম্ভব করে তোলা। তাই “কৃষকের হাতে জমি” এক বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক চরিত্রের এবং সর্বহারা সমাজতান্ত্রিক দাবী নয়, এটা সকল বিপ্লবী গণতন্ত্রীর দাবী, কমিউনিস্টদের একার দাবী নয়। পার্থক্যটা হচ্ছে চীনের পরিস্থিতিতে আমরা কমিউনিস্টরাই কেবল এই দাবীর বোঝাপড়া করি বিশেষ গুরুত্বসহকারে এবং স্রেফ এনিয়ে কথা বলিনা বরং অনুশীলনে প্রয়োগ করি। কারা বিপ্লবী গণতন্ত্রী? বিপ্লবী গণতন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে সামগ্রিক যে সর্বহারা শ্রেণী তাকে বাদ দিলে কৃষকরা হচ্ছে সর্ববৃহত গ্রুপ। সামন্তীয় লেজযুক্ত ধনী কৃষকদের ছাড়া কৃষকদের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ সক্রিয়ভাবে “কৃষকের হাতে জমি” দাবী করে। শহুরে পেটি বুর্জোয়ারাও বিপ্লবী গণতন্ত্রী এবং “কৃষকের হাতে জমি” তাদের সুবিধাও প্রমাণ করবে কারণ এটা কৃষি উতপাদিকা শক্তির বিকাশে সাহায্য করবে। জাতীয় বুর্জোয়ারা হচ্ছে এক দোদুল্যমাণ শ্রেণী, তারাও “কৃষকের হাতে জমি” অনুমোদন করে কারণ তাদের বাজার দরকার, তাদের অনেকেই একে ভয় পায় কারণ তারা ভুমিস্থ সম্পত্তির সাথে সর্বাধিক বাঁধা। ড.সান ইয়াত-সেন ছিলেন চীনের সবচেয়ে আগের বিপ্লবী গণতন্ত্রী। জাতীয় বুর্জোয়ার বিপ্লবী অংশ এবং শহুরে পেটি বুর্জোয়া ও কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব করে তিনি এক সশস্ত্র বিপ্লব পরিচালনা করেন এবং তার “ভুমি মালিকানার সাম্যকরণ” এবং “কৃষকের হাতে জমি” থিসিস তুলে ধরেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে উদ্যোগ নেননি এবং ভুমিব্যবস্থার সংস্কার করেননি। আর কুওমিনতাঙের গণবিরোধি চক্র যখন ক্ষমতা নিল, তারা তার অবস্থানের সাথে সম্পুর্ণভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। এই সেই চক্র যা “কৃষকের হাতে জমি” কে একগুঁয়েভাবে বিরোধিতা করছে কারণ সে বৃহত ভুস্বামী, ব্যাংকার ও মুতসুদ্দিদের প্রতিনিধিত্ব করে। যেহেতু চীনে কেবল কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন রাজনৈতিক পার্টি নেই এবং জাতীয় বুর্জোয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী পার্টিসমূহের কোন সামগ্রিক ভুমি কর্মসুচি নেই, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কৃষক ও অন্য সকল বিপ্লবী গণতন্ত্রীদের নেতায় পরিণত হয়েছে, একমাত্র পার্টি যে এক সামগ্রিক ভুমি কর্মসুচি সূত্রায়িত করেছে ও পরিচালিত করেছে, কৃষকদের স্বার্থে আন্তরিকভাবে লড়াই চালিয়েছে এবং তাই কৃষকদের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠকে তার বৃহত্তম মিত্র হিসেবে জয় করেছে।
১৯২৭ থেকে ১৯৩৬ পর্যন্ত চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ভুমিব্যবস্থার সামগ্রিক সংস্কারের জন্য বিবিধ পদক্ষেপ নেয় এবং ড.সানের “কৃষকের হাতে জমি” কার্যকর করে। এটা হচ্ছে মূর্তভাবে কুওমিনতাঙের প্রতিক্রিয়াশিল চক্র, ড.সান ইয়াত-সেনের তুচ্ছ অনুসারীরা, যারা তাদের দাঁতগুলো বের করেছে, তাদের থাবা উত্থিত করেছে এবং “কৃষকের হাতে জমি”র বিরুদ্ধে লড়েছে জনগণের বিরুদ্ধে দশ বছরের যুদ্ধে।
জাপবিরোধী যুদ্ধের সময়কালে কমিউনিস্টরা একটা বড় ছাড় দিয়েছে “কৃষকের হাতে জমি”র কর্মনীতিকে খাজনা ও সুদ হ্রাসের কর্মসুচিতে পরিবর্তিত করে। এই ছাড় সঠিক, কারণ তা কুওমিনতাঙকে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়ে এসেছে এবং মুক্ত এলাকাসমূহে জাপবিরোধী যুদ্ধে আমাদের কর্তৃক কৃষকদের সমাবেশিতকরণে ভুস্বামীদের প্রতিরোধ হ্রাস করেছে। যদি কোন বিশেষ বাঁধা না আসে, যুদ্ধের পর এই কর্মনীতিকে অব্যাহত রাখতে আমরা প্রস্তুত, প্রথমে খাজনা ও সুদ হ্রাসকে সমগ্র দেশে সম্প্রসারিত করে এবং তারপর “কৃষকের হাতে জমি”র ক্রমিক অর্জনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে।
যাহোক, যারা ড.সানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তারা খাজনা ও সুদ হ্রাসকেই বিরোধিতা করে, “কৃষকের হাতে জমি” দুরে থাক। কুওমিনতাঙ সরকার তার নিজ কর্তৃক ঘোষিত “খাজনার শতকরা ২৫ ভাগ হ্রাস” ও একইধরণের ডিক্রী বাস্তবায়ন করেনি; কেবল আমরাই মুক্ত এাকায় তা প্রয়োগ করেছি, আর এই অপরাধের জন্য মুক্ত এলাকা “বিশ্বাসঘাতক এলাকা” লেবেল পেয়েছে।
জাপবিরোধি যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় দুই স্তরের এক তথাকথিত তত্ত্ব-“জাতীয় বিপ্লব”এর এক স্তর এবং “গণতন্ত্র ও জনগণের জীবনযাত্রার জন্য বিপ্লব” এর আরেক স্তর জন্ম নিয়েছে। এই তত্ত্ব ভুল।
“এক ভয়ানক শত্রুর মোকাবেলায়, আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কার অথবা জনগণের জীবনযাত্রার প্রশ্ন তোলা উচিত নয়; জাপানীদের চলে যাওয়ার জন্য বরং অপেক্ষা করা উচিত” হচ্ছে যুদ্ধে পুর্ণ বিজয় রোধের উদ্দেশ্যে কুওমিনতাঙের প্রতিক্রিয়াশিল চক্রের তুলে ধরা এক ভ্রান্ত তত্ত্ব। কিছু লোক রয়েছে যারা এই তত্ত্বের প্রতিনিধিত্ব করছে এবং এর সেবায় অনুগত রয়েছে।
“এক ভয়ানক শত্রুর মোকাবেলায় জাপানীদের বিরুদ্ধে ঘাঁটি গড়া এবং তাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করা অসম্ভব যদিনা গণতন্ত্র ও জনগণের জীবনযাত্রার প্রশ্ন সমাধান করা হয়”-এই হচ্ছে যা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বলে আসছে, এবং অধিকন্তু চমতকার ফল সহকারে অনুশীলনে ইতিমধ্যে প্রয়োগ করেছে।
জাপবিরোধী যুদ্ধের সময়কালে খাজনা ও সুদ হ্রাস এবং অন্য গণতান্ত্রিক সংস্কারসমূহ সবই যুদ্ধকে সেবা করে। যুদ্ধ প্রচেষ্টায় ভুস্বামীদের প্রতিরোধ কমাতে আমরা তাদের ভুমির মালিকানা বিলোপ করা থেকে বিরত হয়েছি এবং কেবল খাজনা ও সুদ হ্রাস করেছি। আমরা তাদের উতসাহিত করেছি তাদের সম্পত্তি শিল্পে স্থানান্তর করতে এবং যুদ্ধের ও সরকারের কাজে জনগণের অন্য প্রতিনিধিদের পাশাপাশি আলোকপ্রাপ্ত ভদ্রসম্প্রদায়কে গণ কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছি। ধনী কৃষকদের ক্ষেত্রে, আমরা তাদের উতপাদন বিকাশে উতসাহিত করেছি।
এসবই হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দৃঢ় লাইনের অংশ এবং পরমভাবে প্রয়োজন।
দুই লাইন রয়েছে। হয় গণতন্ত্র ও জনগণের জীবনযাত্রার সমস্যা সমাধানে চীনা কৃষকদের প্রচেষ্টাকে একগুঁয়েভাবে বিরোধিতা করা আর দুর্নীতিবাজ, অকার্যকর এবং জাপানকে লড়তে সম্পুর্ণভাবে অক্ষম হওয়া, অথবা চীনা কৃষকদের তাদের প্রচেষ্টায় দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা এবং জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ গঠণকারী এই বিরাটতম মিত্র কৃষকদের অর্জন করা, এভাবে প্রচণ্ড সামর্থ গড়ে তোলা। আগেরটা হচ্ছে কুওমিনতাঙ সরকারের লাইন, পরেরটা হচ্ছে চীনের মুক্ত এলাকাসমূহের লাইন।
সুবিধাবাদীদের লাইন হচ্ছে এই দুইয়ের মধ্যে দোল খাওয়া, কৃষকদের প্রতি সমর্থন করা তথাপি খাজনা ও সুদ কমানো, কৃষকদের সশস্ত্র করা অথবা গ্রামাঞ্চলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা ব্যতিরেকে।
তার অধীনস্ত সকল বাহিনীকে ব্যবহার করে কুওমিনতাঙের গণবিরোধি চক্র প্রকাশ্য ও গোপন, সামরিক ও রাজনৈতিক, রক্তাক্ত অথবা রক্তপাতহীন সকল ধরণের ভয়ানক আক্রমণ চালিয়েছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে। সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে দুই পার্টির মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে সারে এই কৃষি সম্পর্কের ওপর। কুওমিনতাঙ প্রতিক্রিয়াশিল চক্রের ওপর ঠিক কোথায় আমরা আক্রমণ করেছি? এটা কি ঠিক এখানেই নয়? জাপ হানাদারদের কাছে মূর্তভাবে এই বিষয়েই কি বিরাট সাহায্য করে কুওমিনতাঙ চক্র তাদের সমর্থন ও অনুপ্রেরণা লাভ করেনি? চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে “প্রতিরোধ যুদ্ধকে সাবোটাজ করা এবং রাষ্ট্রকে সংকটাপন্ন করা”, “বিশ্বাসঘাতক পার্টি”, “বিশ্বাসঘাতক বাহিনী”, “বিশ্বাসঘাতক এলাকা” এবং “সরকারী ও সামরিক নির্দেশের অবাধ্যতা”র মতো যত অভিযোগ তারা আরোপ করেছে তা কি মূর্তভাবে এজন্য নয় যে সে এক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থে অধ্যবসায়ী কাজ করেছে?
কৃষকরাই হচ্ছে চীনের শিল্প শ্রমিকদের উতস। ভবিষ্যতে আরো কোটি কোটি কৃষক বড় বড় শহরে যাবে এবং কারখানায় ঢুকবে। যদি চীনকে শক্তিশালি জাতীয় শিল্প এবং বহু বৃহত আধুনিক শহর গড়তে হয়, গ্রামীন অধিবাসীদের শহুরে অধিবাসীতে পরিণত করার এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া থাকতে হবে।
কৃষকরাই চীনের শিল্পের প্রধান বাজার নির্মাতা। কেবল তারাই বিপুল পরিমাণে খাদ্যশস্য ও কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারেন এবং বিপুল পরিমাণ উতপন্ন হজম করতে পারেন।
কৃষকরাই হচ্ছে চীনা সৈন্যবাহিনীর উতস। সৈনিকেরা হচ্ছে সামরিক ইউনিফর্ম পরা কৃষক, জাপ হানাদারদের বিপজ্জনক শত্রু।
কৃষকরাই হচ্ছে বর্তমান স্তরে চীনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ৩৬ কোটি কৃষকের সমর্থনের ওপর নির্ভর না করলে চীনা গণতন্ত্রীরা কিছূই অর্জন করতে পারবেননা।
চীনের কৃষকেরাই হচ্ছে বর্তমান স্তরে চীনের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রধান বিষয়। ৩৬ কোটি কৃষককে বাদ দিলে “অশিক্ষার অবসান”, “গণশিক্ষা”, “জনগণের জন্য সাহিত্য ও শিল্পকলা” এবং “গণস্বাস্থ্য” কি বিরাট ফাঁকা কথায় পরিণত হবেনা?
একথা বলার সময় ৯ কোটি জনসংখ্যাবিশিষ্ট জনগণের বাকী অংশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে অবশ্যই অবহেলা করছিনা, এবং নির্দিষ্টত আমি শ্রমিক শ্রেণীকে অবহেলা করছিনা যারা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে সচেতন এবং সমগ্র বিপ্লবী আন্দোলনকে নেতৃত্ব করতে যোগ্য। কোন ভুল বোঝাবুঝি হলে চলবেনা।
শুধূ কমিউনিস্টদেরই নয় বরং চীনের প্রত্যেকটি গণতন্ত্রীকে এই পয়েন্টসমূহ আত্মস্থ করতে হবে।
যখন ভুমি সমস্যার কোন সংস্কার হয়, এমনকি খাজনা ও সুদ হ্রাসের মতো প্রাথমিক সংস্কার-কৃষকরা উতপাদনে বেশি আগ্রহী হয়। তারপর যখন কৃষকদের স্বেচ্ছামূলক ভিত্তিতে ধাপে ধাপে খামার ও সমবায় গড়ে তুলতে সহযোগিতা করা হবে উতপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে খামার সমবায়সমূহ কেবল স্বতন্ত্র ব্যক্তি কৃষক অর্থনীতি ভিত্তিক (অর্থাত কৃষকদের ব্যক্তি মালিকানা), যৌথ, পারস্পরিক সহযোগিতা সংগঠন হতে পারে যেমন শ্রম বিনিময় টিম, পারস্পরিক সহযোগিতা টিম এবং কাজ বিনিময় গ্রুপ; এমনকি ইতিমধ্যেই শ্রম উতপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং ফলাফল চমতকার। এমন গ্রুপসমূহ চীনের মুক্ত এলাকাসমূহে ব্যাপকভাবে বিকশিত করা হয়েছে এবং এখন থেকে যতটুকু সম্ভব তার বিস্তার ঘটাতে হবে।
উল্লেখ্য যে শ্রমবিনিময় ধরণের সমবায় সংগঠন কৃষকদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে ছিল কিন্তু এটা কেবল ছিল একটা উপায় যার দ্বারা তারা তাদের দুরবস্থা দুর করতে চেষ্টা করেছিল। আজকে চীনের মুক্ত এলাকায় শ্রম বিনিময় টিম রূপ ও সার উভয়তঃ ভিন্ন; সেগুলো একটা উপায়ে পরিণত হয়েছে যার দ্বারা কৃষক জনগণ উতপাদন বৃদ্ধি করতে এবং এক উন্নততর জীবনের জন্য সচেষ্ট হয়।
শেষ বিশ্লেষণে জনগণের ওপর চীনের যে কোন রাজনৈতিক পার্টির কর্মনীতি ও অনুশীলনের ভাল অথবা মন্দ, বৃহত অথবা ক্ষুদ্র প্রভাব নির্ভর করে কী পরিমাণ সে উতপাদিকা শক্তির বিকাশে সাহায্য করে এবং সে এই শক্তিসমূহের বিকাশে বাঁধা দেয় না মুক্ত করে তার ওপর। চীনের সামাজিক উতপাদিকা শক্তিকে মুক্ত করা যায় কেবল জাপ হানাদারদের পরাজিত করে, ভুমি সংস্কার পরিচালনা করে, কৃষকদের মুক্ত করে, আধুনিক শিল্প গড়ে তুলে এবং এক স্বাধীন, মুক্ত, গণতান্ত্রিক, ঐক্যবদ্ধ, প্রগতিশীল ও শক্তিশালি নয়া চীন প্রতিষ্ঠা করে¬ এবং তা চীনের জনগণের অনুমোদন পাবে।
এটা বলা দরকার যে গ্রামাঞ্চলের বৈশিষ্টসমূহ বুঝতে গ্রামে কাজ করতে আসা শহুরে বুদ্ধিজীবিদের জন্য ব্যাপারটা সহজ নয় যা এখনো বিচ্ছিন্ন, পশ্চাদপদ ও স্বতন্ত্র অর্থনীতি ভিত্তিক, এবং অধিকন্তু, মুক্ত এলাকাগুলো একটা থেকে আরেকটা শত্রু কর্তৃক অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন এবং সেখানে গেরিলা যুদ্ধ চলছে। এই বৈশিষ্টসমূহ বুঝতে ব্যর্থ হয়ে তারা শহুরে জীবনের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রায়শই অযথার্থভাবে গ্রামীণ সমস্যা ও গ্রামীণ কাজকে দেখে ও বোঝাপড়া করে, এবং তাই গ্রামাঞ্চলের বাস্তবতা থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে এবং কৃষকদের সাথে একাত্ম হতে ব্যর্থ হয়। শিক্ষার মাধ্যমে একে জয় করা দরকার।
চীনের ব্যাপক বিপ্লবী বুদ্ধিজীবিদের কৃষকদের একজন হওয়ার প্রয়োজনে জেগে ওঠতে হবে। তাদেরকে কৃষকদের প্রয়োজন এবং তাদের সহযোগিতার জন্য তারা অপেক্ষা করছেন। তাদেরকে উদ্দীপনার সাথে গ্রামাঞ্চলে যেতে হবে, ছাত্র পোষাক খুলে ফেলতে হবে এবং সাধারণ জামা গায়ে দিতে হবে এবং যত তুচ্ছই হোক সেই কাজ স্বেচ্ছায় শুরু করতে হবে; তাদের শিখতে হবে কৃষকরা কী চায় এবং তাদের জেগে ওঠতে সাহায্য করতে হবে, গ্রামাঞ্চলে গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার সংগ্রামে তাদের সংগঠিত করতে হবে যা হচ্ছে চীনের গণতান্ত্রিক বিপ্লবে অন্যতম সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ কর্তব্য।
জাপ হানাদারদের ও প্রধান প্রধান বিশ্বাসঘাতকদের উচ্ছেদের পর তাদের দ্বারা দখলকৃত ভুমি আমাদের বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তা যাদের সামাণ্য আছে অথবা কোন জমি নেই এমন কৃষকদের কাছে বন্টন করতে হবে।
৭. শিল্পের সমস্যা
জাপ হানাদারদের পরাজিত করতে এবং এক নয়া চীনের নির্মাণের জন্য শিল্পের বিকাশ করা প্রয়োজন। কিন্তু কুওমিনতাঙ সরকারের অধীনে সবকিছুর জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরতা রয়েছে, এবং এর আর্থিক ও পরিকল্পনা কর্মনীতি জনগণের সমগ্র অর্থনৈতিক জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছে। কুওমিনতাঙ এলাকায় যা পাওয়া যায় তাহচ্ছে কিছু ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা দুর্র্নীতি এড়াতে অক্ষম। রাজনৈতিক সংস্কারের অনুপস্থিতিতে সকল উতপাদিকা শক্তি ধ্বংস হচ্ছে এবং তা কৃষি ও শিল্প উভয়ের ক্ষেত্রে সত্য। সাধারণভাবে বলতে গেলে, চীন স্বাধীন, মুক্ত, গনতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধ না হলে শিল্পের বিকাশ ঘটানো অসম্ভব। জাপ হানাদারদের উতপাটিত করা হচ্ছে স্বাধীনতা কামনা করা। কুওমিনতাঙের এক-পার্টি একনায়কত্ব বিলোপ করা, এক গণতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধ সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা, চীনের সকল সৈন্যদলকে গণ সশস্ত্র বাহিনীতে রূপান্তরিত করা, ভুমি সংস্কার পরিচালনা করা এবং কৃষকদের মুক্ত করা হচ্ছে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ঐক্য কামনা করা। স্বাধীনতা, মুক্তি, গণতন্ত্র ও ঐক্য ছাড়া সত্যিকার বৃহত মাত্রায় শিল্প নির্মাণ করা অসম্ভব। শিল্প ছাড়া কোন সুকঠিন জাতীয় প্রতিরক্ষা হতে পারেনা, জনগণের কোন উন্নতি হতে পারেনা, জাতির জন্য কোন উন্নতি অথবা সামর্থ হতে পারেনা। ১৮৪০ সালের আফিম যুদ্ধের থেকে ১০৫ বছরের ইতিহাস এবং বিশেষত কুওমিনতাঙ ক্ষমতায় আসার আঠার বছর দেশে চীনের জনগণের কাছে এই গুরুত্বপুর্ণ বিষয়টি নিয়ে এসেছে। দরিদ্র ও দুর্বল নয় বরং প্রগতিশীল ও শক্তিশালি চীন মানে হচ্ছে এমন এক চীন যা ঔপনিবেশিক আধা-ঔপনিবেশিক নয় বরং স্বাধীন; আধা-সামন্তবাদী নয় বরং স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক, বিভক্ত নয় বরং ঐক্যবদ্ধ। আধা ঔপনিবেশিক আধা সামন্তবাদী ও বিভক্ত চীনে বহু জনগণ বহু বছর ধরে স্বপ্ন দেখে আসছেন শিল্পের বিকাশ, জাতীয় প্রতিরক্ষার নির্মাণ, এবং জনগণের জন্য স্বচ্ছলতা আনয়ন ও জাতির উন্নতি ও সামর্থ আনয়নের কিন্তু তাদের সকল স্বপ্ন ভেঙে গেছে। অনেক ভাল মনের শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও ছাত্র নিজ কাজ অথবা অধ্যয়ণে নিজেদের নিবিষ্ট রেখেছেন এবং রাজনীতির প্রতি কোন মনোযোগ দেননি এই বিশ্বাসে যে তারা তাদের জ্ঞান দ্বারা দেশ সেবা করতে পারবেন, কিন্তু এটাও একটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে যা ভেঙে গেছে। এটা সত্যিই একটা ভাল লক্ষণ, কারণ এই ছেলেমানুষী স্বপ্নের ভেঙে যাওয়া উন্নতি ও সামর্থের দিকে চীনের পথের সুচনাবিন্দু। চীনা জনগণ যুদ্ধে বহু কিছু শিখেছেন, তারা জানেন যে জাপ হানাদারদের পরাজয়ের পর তাদেরকে অবশ্যই এক নয়াগণতান্ত্রিক চীন গড়ে তুলতে হবে যে স্বাধীনতা, মুক্তি, গণতন্ত্র, ঐক্য, প্রগতি ও সামর্থ ভোগ করে- যার সবকিছু পরস্পর সম্পর্কিত ও অপরিহার্য। তারা যদি তা করেন তাহলে চীনের সামনে এক উজ্জল ভবিষ্যত রয়েছে। চীনা জনগণের উতপাদিকা শক্তিসমূহ কেবল তখনই উতসারিত হবে এবং বিকাশের সকল সুযোগ পাবে যখন চীনের সকল অংশ নয়াগণতন্ত্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রাপ্ত হবে। প্রতিদিন অধিক থেকে অধিকতর জনগণ এই বিষয়টি বুঝতে পারার দিকে এগিয়ে আসছেন।
যখন নয়াগণতন্ত্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থা জয় করা হবে, চীনা জনগণ ও তাদের সরকারকে ভারী শিল্প ও হালকা শিল্প ধাপে ধাপে বেশ কিছু বছর ধরে নির্মাণের ব্যবহারিক পদক্ষেপ নিতে হবে এবং চীনকে এক কৃষীয় দেশ থেকে শিল্পীয় দেশে রূপান্তরিত করতে হবে। নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে সুসংহত করা যাবেনা যদি এর এক সুকঠিণ অর্থনৈতিক ভিত্তি না থাকে, বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রসর কৃষি না থাকে, জাতীয় অর্থনীতিতে আধিপত্যকারী বৃহত মাত্রার শিল্প না থাকে সামঞ্জস্যপুর্ণ যোগাযোগ, ব্যবসা ও পরিকল্পনা সহকারে।
আমরা কমিউনিস্টরা অন্য সকল গনতান্ত্রিক পার্টি ও শিল্প চক্রের সহযোগিতায় সারা দেশে এই লক্ষ্যের জন্য লড়তে প্রস্তুত। এই উদ্যোগে চীনা শ্রমিক শ্রেণী এক বিরাট ভুমিকা পালন করবে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে চীনা শ্রমিক শ্রেনী সচেতনভাবে চীনের স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য লড়ছে। ১৯২১ সাল প্রত্যক্ষ করেছে শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রবাহিনী চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম, এবং মুক্তির জন্য শ্রেণীসংগ্রাম তারপর এক নতুন স্তরে প্রবেশ করেছে। উত্তরাভিযান, কৃষি বিপ্লবী যুদ্ধ এবং জাপবিরোধি প্রতিরোধ যুদ্ধের তিন সময়কালে শ্রমিকশ্রেণী ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কঠোর পরিশ্রম করেছে এবং চীনা জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে মূল্যবাণ অবদান রেখেছে। জাপ হানাদারদের চুড়ান্ত পরাজয়ের জন্য সংগ্রামে এবং বিশেষত বড় বড় শহর ও যোগাযোগের গুরুত্বপুর্ণ লাইনসমূহের উদ্ধারের জন্য চীনা শ্রমিকশ্রেণী এক বিরাট ভুমিকা পালন করবে। এবং এটা ভবিষ্যতবাণী করা যায় যে জাপবিরোধী যুদ্ধের পর এই প্রচেষ্টা ও অবদান আরো বৃহত্তর হবে। চীনের শ্রমিকশ্রেনীকে এক নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্যই শুধু নয় বরং চীনের শিল্পায়ন ও কৃষির আধুনিকীকরণ করার জন্য সংগ্রাম করতে হবে।
শ্রম ও পুঁজির স্বার্থের সমন্বয়ের কর্মনীতি গ্রহণ করা হবে নয়াগণতন্ত্রের রাষ্ট্রব্যবস্থায়। একদিকে, এটা শ্রমিকদের স্বার্থকে রক্ষা করবে, পরিস্থিতি অনুসারে আট থেকে দশ ঘন্টার কর্মদিবস প্রতিষ্ঠা করবে, উপয্ক্তু বেকার ভাতা ও সামাজিক বীমার ব্যবস্থা করবে এবং ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার রক্ষা করবে, অপরদিকে, যথাযথ ব্যবস্থাধীনে রাষ্ট্র, ব্যক্তি ও সমবায় সংস্থার জন্য বৈধ লাভ নিশ্চিত করবে যাতে উভয়ত গণ ও ব্যক্তি সেক্টর এবং শ্রম ও পুঁজি একযোগে কাজ করতে পারে শিল্পোতপাদন বিকশিত করতে।
জাপান পরাজিত হলে জাপ হানাদারদের ও প্রধান প্রধান বিশ্বাসঘাতকদের সংস্থা ও সম্পত্তিসমূহ বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং সরকারের অধীনে স্থানান্তর করা হবে।
৮. সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বুদ্ধিজীবিদের সমস্যা
বিদেশী ও সামন্তবাদী নিপীড়ণের দ্বারা চীনা জনগণের ওপর আনীত দুর্যোগও আমাদের জাতিয় সংস্কৃতিকে আক্রান্ত করে। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মীরা ও শিক্ষকরা নির্দিষ্টভাবে ভুক্তভোগী। বিদেশী ও সামন্তীয় নিপীড়ণকে ঝেটিয়ে বিদেয় করতে এবং এক নয়াগণতান্ত্রিক চীন নির্মাণ করতে জনগণের জন্য আমাদের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক দরকার। এবং দরকার জনগণের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, কৃতকৌশলী, চিকিতসক, সাংবাদিক, লেখক, পণ্ডিত ব্যক্তি, শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের সকল সারি। তাদেরকে জনগণের সেবার চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। জনগণকে সেবায় দৃষ্টান্ত হলে সকল বুদ্ধিজীবিদের সম্মান করতে হবে এবং মূল্যবাণ জাতীয় ও সামাজিক সম্পদ হিসেবে তাদরে গণ্য করতে হবে। চীনে বুদ্ধিজীবিদের সমস্যা নির্দিষ্টভাবে গুরুত্বপুর্ণ কারণ দেশটি বিদেশী ও সামন্ততান্ত্রিক নিপীড়ণের ফলে সাংস্কৃতিকভাবে পশ্চাদপদ এবং মুক্তির জন্য জনগনের সংগ্রামে জরুরীভাবে বুদ্ধিজীবিদের প্রয়োজন। বিগত অর্ধ শতকে, বিশেষত ১৯১৯ সালের ৪ঠা মে আন্দোলনের পর থেকে এবং জাপবিরোধী যুদ্ধের আট বছরে বহুবিধ বিপ্লবী বুদ্ধিজীবিগণ মুক্তির জন্য জনগণের সংগ্রামে এক বিরাট ভুমিকা পালন করেছেন। তারা সামনের সংগ্রামেও এমনকি আরো বৃহত্তর ভুমিকা পালন করবেন। তাই, গণসরকারের এক কর্তব্য হচ্ছে জনগণের সারির মধ্য থেকে বুদ্ধিবৃত্তিতে সজ্জিত সকল ধরনের কেডারদের সুব্যবস্থিতভাবে বিকশিত করা এবং ইতিমধ্যে যেসব উপযুক্ত বুদ্ধিজীবি রয়েছেন তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে ও তাদের পুনঃশিক্ষিত করতে যতন নিতে হবে।
জনসংখ্যার ৮০ ভাগের অশিক্ষা দুরীভূতকরণ নয়া চীনের জন্য এক নির্ধারক করণীয়।
সকল দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধকারী সামন্তবাদী এবং ফ্যাসিস্ট সংস্কৃতি ও শিক্ষার বিলোপে যথাযথ ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
জনগণের মধ্যে সকল ব্যাপক বিস্তৃত ও অন্য রোগসমূহ প্রতিরোধ ও আরোগ্যকরণে প্রচণ্ড পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জনগণের চিকিতসা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারিত করতে হবে।
পুরনো ধরণের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কর্মীদের ও চিকিতসকদের উপযুক্ত পুনঃশিক্ষা দিতে হবে যাতে জনগণকে সেবা করতে তারা এক নয়া দৃষ্টিভঙ্গী ও নয়া পদ্ধতি অর্জন করতে পারেন।
চীনা জনগণের সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে হতে হবে নয়া গণতান্ত্রিক, তাই, বলতে গেলে, চীনকে তার নিজস্ব জাতীয়, বৈজ্ঞানিক, গণসংস্কৃতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিদেশী সংস্কৃতির কথা বলতে গেলে, একে বন্ধ করে দেওয়া হবে এক ভ্রান্ত কর্মনীতি, বরং এর মধ্যেকার প্রগতিশীল দিককে যতদুর পারা যায় আমাদের বের করে আনতে হবে চীনের নয়া সংস্কৃতির বিকাশে কাজে লাগাতে; একে অন্ধভাবে নকল করাও ভুল হবে, বরং একে আমাদের সমালোচনামুলকভাবে বের করে আনতে হবে চীনা জনগণের প্রকৃত প্রয়োজনীয়তার চাহিদা মেটাতে। আমাদের জনগণের সংস্কৃতি বিনির্মাণে সোভিয়েত ইউনিয়নে সৃষ্ট নয়া সংস্কৃতিকে আমাদের জন্য মডেল হতে হবে। একইভাবে, প্রাচীন চীনা সংস্কৃতি না সম্পুর্ণরূপে বর্জনীয় না অন্ধভাবে নকলযোগ্য, বরং একে সমালোচনামূলকভাবে গ্রহণ করতে হবে যাতে চীনের নয়া সংস্কৃতির উন্নতিতে সহায়তা করা যায়।
৯. সংখ্যালঘু জাতিসমস্যা
কুওমিনতাঙের গণবিরোধী চক্র অস্বীকার করে যে চীনে বহু জাতির অস্তিত্ব রয়েছে, এবং হান জাতি ছাড়া অন্যদের “উপজাতি” লেবেল আঁটে। সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে সম্ভাব্য সকল উপায়ে নিপীড়ণ ও শোষণ করে সে সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বা সম্পর্কে চিঙ রাজবংশ ও উত্তরাঞ্চলীয় যুদ্ধবাজদের সরকারের প্রতিক্রিয়াশীল কর্মনীতি গ্রহণ করেছে। পরিষ্কার ঘটনা হচেছ ১৯৪৩-এ ইখচাও লীগে মঙ্গোলিয়ানদের ওপর গণহত্যা, ১৯৪৪ থেকে সিঙকিয়াঙে সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বাসমূহের ওপর সশস্ত্র নিপীড়ণ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কানশু প্রদেশে হুই জনগণের ওপর গণহত্যা। এগুলো হচ্ছে ভ্রান্ত হান জাত্যাভিমানী ভাবাদর্শ ও কর্মনীতির প্রকাশ।
১৯২৪ সালে ড. সান ইয়াত-সেন কুওমিনতাঙের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসের ইশতেহারে লেখেন, “কুওমিনতাঙের জাতীয়তাবাদী নীতির দ্বিবিধ অর্থ রয়েছে, প্রথম, চীনা জাতির মুক্তি, এবং দ্বিতীয়, চীনের সকল জাতিসত্ত্বাসমূহের সমতা” এবং এই যে “কুওমিনতাঙ গুরুত্বসহকারে ঘোষণা করছে যে সে চীনের সকল জাতিসত্ত্বাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও যুদ্ধবাজবিরোধী বিপ্লব বিজয়ী হলে এক মুক্ত ও ঐক্যবদ্ধ চীনা প্রজাতন্ত্র (সকল জাতিসত্ত্বাসমূহের এক মুক্ত ইউনিয়ন) প্রতিষ্ঠা করা হবে।”
এখানে বিবৃত ড. সানের জাতি প্রশ্নে কর্মনীতির সাথে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি পুর্ণ একমত। এর জন্য লড়াই করতে সকল সংখ্যালঘু জাতিকে কমিউনিস্টদের সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে হবে, জনগণের সাথে সম্পর্ক আছে এমন তাদের নেতাদের সমেত তাদের সাহায্য করতে হবে যাতে তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি ও বিকাশের জন্য লড়াই করতে পারে এবং তাদের নিজস্ব সৈন্যবাহিনী প্রতিষ্ঠা করতে পারে যা জনগণের স্বার্থকে রক্ষা করবে। তাদের কথ্য ও লিখিত ভাষা, তাদের আচরণ, রীতিনীতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে।
শেনসি-কানসু-নিংশিয়া সীমান্ত এলাকা ও উত্তর চীনের মুক্ত এলাকাসমূহ বছর বছর ধরে যে দৃষ্টিভঙ্গী মঙ্গোলিয়ান ও হুই জাতিসত্ত্বাসমূহ সম্পর্কে গ্রহণ করেছে তা সঠিক, এবং তারা যে কাজ করেছেন তা ফলপ্রসু হয়েছে।
১০. পররাষ্ট্র নীতির সমস্যা
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি আটলান্টিক সনদ এবং মস্কো, কায়রো, তেহরান ও ক্রিমিয়া [১২]র আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহের সাথে একমত কারণ এইসকল সিদ্ধান্ত ফ্যাসিস্ট হানাদরদের পরাজয় ও বিশ্বশান্তি রক্ষায় অবদান রাখে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি যে পররাষ্ট্র নীতির কথা বলে তার মূল নীতিমালা হচ্ছেঃ চীন সকল দেশের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালি করবে এবং সাধারণ সমস্যার সকল প্রশ্ন সমাধান করবে, যেমনঃ যুদ্ধে সামরিক অপারেশনে সমন্বয়, শান্তি সম্মেলন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, এই শর্ত যে জাপ হানাদারদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করতে হবে এবং বিশ্বশান্তি রক্ষা করতে হবে, জাতীয় স্বাধীনতা ও সমতার প্রতি পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন করতে হবে, জাতিসমূহের মধ্যে ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ ও বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করতে হবে।
ডাম্বারটন ওকস সম্মেলনের প্রস্তাবসমূহ এবং ক্রিমিয়া সম্মেলনে যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় এক সংগঠণ প্রতিষ্ঠার ওপর সিদ্ধান্তসমূহের সাথে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সম্পুর্ণ একমত। সে সান ফ্রান্সিসকোয় আন্তর্জাতিক সংগঠণের ওপর জাতিসংঘের সম্মেলনকে স্বাগত জানায়।
এই সম্মেলনে চীনের জনগণের ইচ্ছাকে ব্যক্ত করতে সে চীনা প্রতিনিধিদলে নিজ প্রতিনিধি নিয়োযিত করেছে।[১৩]
আমরা মনে করি কুওমিনতাঙ সরকারকে অবশ্যই সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে শত্রুতা বন্ধ করতে হবে এবং চীন-সোভিয়েত সম্পর্ক দ্রুতগতিতে উন্নত করতে হবে। চীনের সাথে অসম চুক্তিসমূহ বাতিল করায় এবং নয়া সম চুক্তির স্বাক্ষরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল প্রথম দেশ। ১৯২৪ সালে ড.সান ইয়াত-সেন কর্তৃক ডাকা কুওমিনতাঙের প্রথম জাতীয় কংগ্রেস এবং তারপরবর্তী উত্তর অভিযানের সময় চীনের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একমাত্র দেশ। যখন ১৯৩৭ সালে জাপবিরোধী যুদ্ধ দেখা দিল, আবারো সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল প্রথম দেশ জাপ হানাদারদের বিরুদ্ধে চীনকে সহায়তা করায়। এই সাহায্যের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকার ও জনগণের প্রতি চীনা জনগণ কৃতজ্ঞ। আমরা বিশ্বাস করি যে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ গ্রহণ ব্যতিরেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমস্যার কোন চুড়ান্ত ও সামগ্রিক সমাধান সম্ভব নয়।
আমরা সকল মিত্র দেশের সরকারকে এবং প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনকে আহ্বাণ করি চীনা জনগণের বক্তব্যের দিকে সিরিয়াস মনোযোগ দিতে এবং তাদের সাথে বন্ধুত্বের ক্ষতি করে এমন বিদেশ নীতি না নিতে যা তাদের (চীনা জনগণের) ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়। আমরা মনে করি, যদি কোন বিদেশী সরকার চীনা প্রতিক্রিয়াশীলদের সহায়তা করে এবং চীনা জনগণের গণতান্ত্রিক লক্ষ্যের বিরোধিতা করে, সে মারাত্মক ভুল করবে।
বহু বিদেশী সরকার কর্তৃক চীনের সাথে তাদের অসম চুক্তি বাতিল করে নয়া সম চুক্তি করার গৃহিত পদক্ষেপকে চীনা জনগণ স্বাগত জানায়। যাহোক, আমরা মনে করি যে সম চুক্তি করাটা নিজে নিজে অর্থ করেনা যে চীন বাস্তবতঃ প্রকৃত সমতা অর্জন করেছে।
সত্যিকার ও প্রকৃত সমতা কখনোই কোন বিদেশী সরকারের উপহার নয়, বরং চীনা জনগণের নিজস্ব প্রচেষ্টার দ্বারা প্রধানভাবে জয় করতে হবে এবং তা জয় করার উপায় হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে এক নয়াগণতান্ত্রিক চীন গড়ে তোলা; অন্যথায় কেবল আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতাই হবে, প্রকৃত স্বাধীনতা ও সমতা নয়। তাই বলতে গেলে, কুওমিনতাঙ সরকারের বর্তমান কর্মনীতি অনুসরণ করে চীন কখনোই প্রকৃত স্বাধীনতা ও সমতা অর্জন করতে পারেনা।
আমাদের বিবেচনায়, জাপ হানাদারদের পরাজয় ও নিঃশর্ত আত্মাসমর্পণের পর জাপানী জনগণের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিজস্ব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা প্রয়োজন হবে যাতে জাপ ফ্যাসিবাদ ও সমরবাদকে সমগ্রভাবে উতপাটিত করা যায় তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক শেকড় সমেত। জাপানী জনগণের এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকলে জাপ ফ্যাসিবাদ ও সমরবাদকে সমগ্রভাবে উতপাটিত করা অসম্ভব হবে এবং প্রশান্ত মহাসাগরে শান্তি নিশ্চিত করা অসম্ভব হবে।
আমাদের বিবেচনায় কোরিয়ার স্বাধীনতার ব্যাপারে কায়রো সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে সঠিক। মুক্তি অর্জনে কোরিয়ার জনগণকে চীনা জনগণের সাহায্য করা উচিত।
আমরা আশা করি ভারত স্বাধীনতা অর্জন করবে। এক স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক ভারত শুধু ভারতের জনগণেরই প্রয়োজন নয় বরং বিশ্ব শান্তির জন্যও জরুরী।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহ-বার্মা, মালয়, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন সম্পর্কে আমরা আশা করি, জাপ হানাদারদের পরাজয়ের পর সেসব দেশের জনগণ তাদের নিজ নিজ স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার অনুশীলন করবেন। থাইল্যান্ড সম্পর্কে, তাকে ইউরোপের ফ্যাসিস্ট অধীনস্থ দেশসমূহের মতো বোঝাপড়া করতে হবে।
আমাদের মূর্ত কর্মসুচির প্রধান প্রধান বিষয়সমূহের জন্য এটুকুই।
পুনরায় বলতে গেলে, এই মূর্ত কর্মসুচির কোন একটিও সফলভাবে দেশব্যাপী বাস্তবায়ন করা যাবেনা সমগ্র জাতির সমর্থন ভোগকারী এক গণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার ব্যতিত।
চীনা জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে চব্বিশ বছরের সংগ্রামে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এমন অবস্থান অর্জন করেছে যে চীন সম্পর্কে তার মত অথবা প্রশ্নকে কোন রাজনৈতিক পার্টি অথবা সামাজিক গ্রুপ অথবা কোন চীনা অথবা বিদেশী যদি অবহেলা করেন তাহলে মারাত্মক ভুল করবেন এবং নিশ্চিত ব্যর্থতা বরণ করবেন। এমন লোক ছিল এবং আছে যারা আমাদের মতামতকে অবহেলা করার চেষ্টা করে এবং নিজ উদ্ধত পথ অনুসরণ করে কিন্তু তারা সকলেই কানা গলিতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কেন? কারণটা সহজ আর তা হচ্ছে আমাদের মতাবস্থান চীনা জনগণের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি হচ্ছে চীনা জনগণের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মুখপাত্র, আর যারাই একে সম্মান করতে ব্যর্থ হয় বস্তুত তারাই চীনা জনগণকে সম্মান করতে ব্যর্থ হয় এবং পরাজয় বরণ করে।
কুওমিনতাঙ এলাকায় করণীয়
আমি আমাদের পার্টির সাধারণ ও মূর্ত কর্মসুচির বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছি। সন্দেহ নেই যে এই কর্মসুচিসমূহ সারা চীনে কার্যকর হবে আগে অথবা পরে; এই হচ্ছে সেই দিশা যা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরিস্থিতি সমগ্রভাবে চীনের জনগনের সামনে তুলে ধরেছে। যাহোক, এই মুহুর্তে কুওমিনতাঙ এলাকা, শত্রু অধিকৃত এলাকা এবং মুক্ত এলাকাসমুহের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে যা আমাদের কর্মসুচি প্রয়োগে সেগুলোর মধ্যে পার্থক্যকরণ প্রয়োজনীয় করে তোলে। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন করণীয় উত্থিত করে। এসব করণীয়র কিছু আমি উপরে উল্লেখ করেছি, যেখানে অন্যগুলি এখনো ব্যাখ্যা দাবী করে।
কুওমিনতাঙ এলাকায় জনগণ দেশপ্রেমিক কর্মকান্ডে নিয়োযিত হতে মুক্ত নয় এবং সেখানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অবৈধ মনে করা হয়, এবং তথাপি বিভিন্ন সামাজিক স্তর, গণতান্ত্রিক পার্টি ও ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে সক্রিয় হচ্ছেন। চীনা গণতন্ত্রী লীগ এবছরের জানুয়ারিতে এক ইশতেহার ইস্যু করেছে কুওমিনতাঙের এক-পার্টি একনায়কত্বের বিলোপ এবং এক সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবী জানিয়ে। জনগণের বহু অংশ একই ধরণের ঘোষণা দিয়েছেন। কুওমিনতাঙের ভেতরেও, অনেকেই নিজ পার্টির নেতৃত্বকারী কাঠামোর কর্মনীতির ব্যাপারে বর্ধিত সন্দেহ ও অসন্তোষ প্রদর্শন করছেন, বর্ধিতভাবে জনগণ থেকে তাদের পার্টির বিচ্ছিন্নতার বিপদের ব্যাপারে সচেতন হচ্ছেন আর তাই সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ গণতান্ত্রিক সংস্কার দাবী করছেন। চুঙকিং ও অন্যান্য স্থানে শ্রমিক, কৃষক, সাংস্কৃতিক চক্র, ছাত্র, শিক্ষাচক্র, নারী, শিল্প ও ব্যবসা মহলে, সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে এবং এমনকি কিছু সৈনিক ও অফিসারদের মধ্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাড়ছে। এই তথ্যসমূহ ইঙ্গিত করে যে সকল নিপীড়িত স্তরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্রমান্বয়ে এক সাধারণ লক্ষ্যে সমবিন্দু মিলন ঘটছে। বর্তমান আন্দোলনের একটা মূল দুর্বলতা হচ্ছে এই যে সমাজের মূল অংশসমূহ এতে এখনো ব্যাপকমাত্রায় যোগ দেয়নি এবং সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ শক্তিসমূহ যথা, কৃষক, শ্রমিক, সৈন্য এবং নিম্নস্তরের সরকারী কর্মচারি ও শিক্ষকবৃন্দ যারা তিক্ত ভুক্তভোগী এখনো সংগঠিত নয়। আরেকটা দুর্বলতা হচ্ছে যে আন্দোলনের গণতান্ত্রিক ব্যক্তিবৃন্দের অনেকেই এখনো মৌলিক কর্মনীতির ব্যাপারে পরিষ্কার নন অথবা দ্বিধান্বিত যেমন, এক গণতান্ত্রিক গণভিত্তিতে সংগ্রাম চালানোর মাধ্যমে পরিস্থিতির একটা পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হতে হবে। যাহোক, বস্তুগত পরিস্থিতি সকল নিপীড়িত স্তর, রাজনৈতিক পার্টি এবং সামাজিক গ্রুপকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে জাগ্রত ও ঐক্যবদ্ধ হতে। কুওমিনতাঙ সরকারের কোন উতপীড়ণই আন্দোলনের এগিয়ে যাওয়াকে থামাতে পারবেনা।
জাতীয় ঐক্যের জন্য লড়তে, সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে, জাপ হানাদারদের পরাজিত করতে এবং এক নয়া চীন নির্মাণ করতে কুওমিনতাঙ এলাকাসমূহের সকল নিপীড়িত অংশ, রাজনৈতিক পার্টিসমূহ ও সামাজিক গ্রুপকে তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ব্যাপক মাত্রায় সম্প্রসারিত করতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে তাদের বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত শক্তিসমূহকে একত্রিত করতে হবে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও মুক্ত এলাকাসমূহের জনগন তাদের সম্ভাব্য সকল সহায়তা দেবেন।
কুওমিনতাঙ এলাকায় কমিউনিস্টদের অব্যাহতভাবে ব্যাপক জাপবিরোধি যুক্তফ্রন্টের কর্মনীতি অনুসরণ করতে হবে। সাধারণ লক্ষ্যের জন্য সংগ্রামে এমন সকলের সাথেই আমাদের সহযোগিতা করতে হবে যারা আজকে আমাদের বিরোধিতা করেনা, এমনকি যদি তিনি অতীতে তা করেও থাকেন।
জাপ অধিকৃত এলাকায় করণীয়
অধিকৃত এলাকাসমূহে কমিউনিস্টদের উচিত জাপানকে বিরোধিতা করে এমন সকলের প্রতি আহ্বান জানানো যাতে তারা ফরাসী ও ইতালীয় উদাহারন অনুসরণ করেন এবং সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে সংগঠন ও গোপন বাহিনী গঠণ করেন যাতে যখন সময় আসবে তারা যাতে বাইরের সৈন্যদলের আক্রমণের সাথে ভেতর থেকে সমন্বয়ে ততপরতা চালাতে পারেন এবং জাপ হানাদারদের উতপাটিত করতে পারেন। জাপ হানাদার ও তাদের দাসানুদাস ভৃত্যদের হাতে অধিকৃত এলাকায় আমাদের ভাইবোনেরা যে নৃশংসতা, লুন্ঠন, ধর্ষণ ও লাঞ্চনা ভোগ করেছেন তা চীনাদের জ্বলন্ত ক্রোধকে জাগিয়ে তুলেছে এবং প্রতিশোধের ক্ষণ আগমণী ধ্বণি দিচ্ছে। ইউরোপীয় যুদ্ধ মঞ্চে বিজয়সমূহ এবং অস্টম রুট বাহিনী ও নয়া চতুর্থ বাহিনীর বিজয়সমূহ অধিকৃত এলাকাসমূহে জনগণের জাপবিরোধি চেতনাকে উজ্জীবিত করেছে এবং উচ্চে আসীন করেছে। তারা জরুরীভাবে সংগঠিত হতে চান যাতে করে যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি অর্জন করা যায়। তাই, অধিকৃত এলাকাসমূহে আমাদের কাজকে মুক্ত এলাকাসমূহের সমান গুরুত্বের স্তরে আমাদেরকে উন্নীত করতে হবে। বিপুল সংখ্যক আমাদের নেতা-কর্মীদের সেখানে পাঠাতে হবে কাজ করার জন্য। সেখানে জনগণের মধ্যে বিপুল সংখ্যক কর্মীকে প্রশিক্ষিত করতে হবে এবং উন্নীত করতে হবে এবং তাদেরকে অবশ্যই স্থানীয় কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। চারটি উত্তর-পুর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে আমাদের গোপন কাজ তীব্র করতে হবে যেগুলো অন্য যেকোন অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি কাল ধরে অধিকৃত হয়ে রয়েছে এবং যাহচ্ছে জাপ হানাদারদের এক নির্ধারক শিল্প ও সৈন্য সমাবেশ এলাকা। এই হৃত এলাকাসমূহ পুনরুদ্ধারে আমাদেরকে যারা উত্তর-পুর্ব থেকে দক্ষিণে পালিয়ে এসেছে এমন জনগণের সাথে সংহতি শক্তিশালি করতে হবে। সকল অধিকৃত এলাকায় কমিউনিস্টদের ব্যাপকতম যুক্ত ফ্রন্টের কর্মনীতি অনুসরণ করতে হবে। সাধারণ শত্রুকে উচ্ছেদে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এমন সকলের সাথে যারা জাপ হানাদারদের ও তাদের সেবাদাস ভৃত্যদের বিরোধিতা করেন।
শত্রুকে সহযোগিতা করছে এবং তাদের দেশী জনগণকে বিরোধিতা করছে এমন সকল পুতুল সৈন্যবাহিনী, পুতুল পুলিশ ও অন্যদের আমাদের সতর্ক করতে হবে যে তাদেরকে দ্রুত তাদের ততপরতার অপরাধী চরিত্র স্বীকার করতে হবে, সময় থাকতে তাদের অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে দেশী জনগণকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে। অন্যথায় শত্রুর ধ্বংসের সাথে সাথে জাতি নিশ্চিতভাবে তাদের হিসেব চুকিয়ে দেবে।
কিছূ গণ সমর্থন রয়েছে এমন সকল পুতুল সংগঠণের প্রতি কমিউনিস্টদের প্ররোচক প্রচারণা চালাতে হবে যাতে জাতীয় শত্রু কর্তৃক আমাদের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত পথে চালিত হয়েছে এমন জনগণকে জয় করা যায়। একইসাথে নৃশংস অপরাধ করেছে এমন অনুতাপহীন দালালদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে যাতে হৃত ভুখন্ডসমূহ পুনরুদ্ধারের পর তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করা যায়।
সেইসব কুওমিনতাঙ প্রতিক্রিয়াশীলদের সময় থাকতে অনুতপ্ত হতে সর্তকীকরণ জানাতে হবে যারা চীনা জনগণ, কমিউনিস্ট পার্টি, অস্টম রুট বাহিনী, নয়া চতুর্থ বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীকে লড়তে প্রকাশ্য দালাল সংগঠিত করার মাধ্যমে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অন্যথায় হৃত ভুখন্ডসমূহ উদ্ধারের পর জাপানের সহযোগী দালালদের সাথে তাদেরকে নিশ্চিতভাবে শাস্তি প্রদান করা হবে এবং কোন দয়া দেখানো হবেনা।
মুক্ত এলাকায় করণীয়
মুক্ত এলাকাসমূহে আমাদের পার্টি তার সমগ্র নয়াগণতান্ত্রিক কর্মসুচি প্রয়োগ করেছে চমতকার ফল সহকারে, এবং এভাবে প্রচণ্ড জাপবিরোধী শক্তি তৈরি করেছে এবং এখন থেকে এই শক্তিকে বিকশিত করতে ও সুসংহত করতে হবে সর্বোতভাবে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে, মুক্ত এলাকার সৈন্যদলকে এমন সকল স্থানে বিপুল আক্রমণ পরিচালনা করতে হবে যা জাপানী ও পুতুলদের কাছ থেকে দখল করা যায় মুক্ত এলাকার সম্প্রসারণ ও অধিকৃত এলাকার সংকোচনের লক্ষ্যে।
কিন্তু একই সাথে মনে রাখতে হবে যে শত্রু এখনো শক্তিশালি এবং মুক্ত এলাকাসূহে আরো আক্রমণ চালাতে পারে। তার সকল আক্রমণকে ধ্বংস করতে আমাদের এলাকাসমূহের সৈন্যবাহিনী ও জনগণকে সকল সময় প্রস্তুত থাকতে হবে এবং এসব এলাকাকে সুসংহত করতে সর্বোতভাবে কাজ করতে হবে।
আমাদেরকে মুক্ত এলাকাসমূহে আমাদের সৈন্যবাহিনীসমূহ, গেরিলা ইউনিট, গণমিলিশিয়া ও আত্মরক্ষী দলকে সম্প্রসারণ করতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণ ও সংহতকরন দ্রুততর করার মাধ্যমে তাদের লড়ার কার্যকরিতা বৃদ্ধি করতে হবে জাপ হানাদারদের চুড়ান্ত পরাজয়ের জন্য পর্যাপ্ত সামর্থ গড়ে তোলার লক্ষ্য থেকে।
মুক্ত এলাকাসমূহের সৈন্যবাহিনীকে সরকারকে সমর্থন করতে হবে এবং জনগণকে সম্মান করতে হবে যেখানে গণতান্ত্রিক সরকারকে অবশ্যই সৈন্যবাহিনীকে সমর্থনে ও জাপানকে মোকাবেলারত সৈনিকদের পরিবারের ভাল দেখাশুনা করায় জনগণকে নেতৃত্ব দিতে হবে। এভাবে সৈন্যবাহিনী ও জনগণের মধ্যেকার সম্পর্ক আরো ভাল হবে।
স্থানীয় সম্মিলিত সরকার ও গণসংগঠণের কাজে কমিউনিস্টদেরকে সকল জাপবিরোধী গণতন্ত্রীদের সাথে নয়াগণতান্ত্রিক কর্মসুচির ভিত্তিতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।
একইভাবে সামরিক কাজে, মুক্ত এলাকাসমূহের সৈন্যবাহিনীসমূহের সদস্য হোক আর না হোক যারা আমাদের সাথে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক এমন সকল জাপবিরোধী গণতন্ত্রীদের সাথে কমিউনিস্টদেরকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করতে হবে।
ব্যাপক শ্রমিক, কৃষক ও অন্য শ্রমজীবি জনগণের যুদ্ধ ও উতপাদনের প্রতি উতসাহ বাড়াতে আমাদেরকে সামগ্রিকভাবে খাজনা ও সুদ হ্রাস এবং শ্রমিক ও দাপ্তরিক কর্মচারিদের বেতন বাড়ানোর কর্মনীতি প্রয়োগ করতে হবে। মুক্ত এলাকাসমূহের কেডারদেরকে অধ্যবসায়ের সাথে অর্থনৈতিক কাজ শিখতে হবে। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের বিপুল বিকাশের জন্য এবং সৈনিক ও জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য সম্ভাব্য সকল শক্তিকে সমাবেশিত করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে শ্রম উতসাহদান অভিযান চালাতে হবে, এবং শ্রমবীরদের ও আদর্শ শ্রমিকদের পুরষ্কার দিতে হবে। জাপ হানাদারদের শহরের বাইরে নিক্ষেপ করার পর আমাদের কর্মীদের দ্রুতগতিতে শিখতে হবে কীভাবে শহুরে অর্থনৈতিক কাজ করতে হয়।
মুক্ত এলাকাসমূহের জনগণের এবং সর্বোপরি ব্যাপক শ্রমিক, কৃষক ও সৈন্যদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং বিপুল সংখ্যক কেডার প্রশিক্ষিত করতে আমাদের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কাজ বিকশিত করতে হবে । এই কাজ এগিয়ে নিতে, যারা এতে নিযুক্ত তাদেরকে বিদ্যমান গ্রামীণ পরিস্থিতি অনুসারে এবং গ্রামাঞ্চলের জনগণের প্রয়োজন ও চাহিদার সাথে সুসামঞ্জস রূপ গ্রহণ ও সার নির্বাচন করতে হবে।
মুক্ত এলাকাসমূহে আমাদের সকল কাজে জনশক্তি ও বস্তুগত সম্পদকে সর্বাধিক সতর্কতার সাথে কাজে লাগাতে হবে, এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রচনা করতে হবে এবং অপব্যবহার ও অপব্যয় এড়াতে হবে। এটা উভয়ত জাপ হানাদারদের পরাজয় ও এক নয়া চীন গড়তে প্রয়োজন।
মুক্ত এলাকাসমূহে আমাদের সকল কাজে আমাদেরকে স্থানীয় লোকেদের স্থানীয় বিষয়াদি পরিচালনায় সাহায্য করার দিকে বিরাট যতন নিতে হবে এবং শ্রেষ্ঠ স্থানীয় লোকেদের মধ্য থেকে বহু স্থানীয় কেডার তৈরি করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মহান কর্তব্য সম্পাদন করা অসম্ভব হবে যদিনা অন্য এলাকাসমূহ থেকে আগত কেডাররা স্থানীয় জনগণের সাথে একাত্ম হতে পারেন, স্থানীয় কেডারদের সর্বান্তকরণে, অধ্যবসায়সহারে এবং বাস্তবসম্মত উপায়ে সহায়তা করেন, এবং যদিনা তারা তাদেরকে নিজ ভাইবোনের মত ভালবাসেন।
যখন অস্টম রুট বাহিনী, নয়া চতুর্থ বাহিনী অথবা জনগণের অন্য কোন বাহিনীর কোন ইউনিট কোন স্থানে আসে,তাদেরকে ততক্ষনাত স্থানীয় জনগণকে সাহায্য করতে হবে স্থানীয় কেডারদের নেতৃত্বে মিলিশিয়া ও আত্মরক্ষী দলই শুধু নয় বরং স্থানীয় সৈন্যদল ও আঞ্চলিক বাহিনীসমেত বাহিনী সংগঠিতকরণে। এটা পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণের নেতৃত্বে নিয়মিত বাহিনী ও নিয়মিত সৈন্যবাহিনী ফর্মেশন সৃষ্টি সম্ভব করে তুলবে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ কর্তব্য। এটা সম্পাদন করা না হলে না আমরা স্থায়ী জাপবিরোধী ঘাঁটি এলাকা গড়তে পারবো না গণবাহিনীকে সম্প্রসারণ করতে পারবো।
অবশ্যই স্থানীয় জনগণ তাদের দিক থেকে অন্য এলাকা থেকে আগত বিপ্লবী শ্রমিক ও জনগণের বাহিনীসমূহকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানাবে ও সহায়তা দেবে।
ছদ্মবেশি অন্তর্ঘাতকদের বোঝাপড়া করার প্রশ্নে প্রত্যেককে সতর্ক হতে হবে। কারণ জাতীয় স্বার্থের শত্রু ও ঘাতকদের খুঁজে বের করা ও বোঝাপড়া করা সহজ কিন্তু ছদ্মবেশিদের ক্ষেত্রে তা সহজ নয়। তাই আমাদেরকে সার্বিক বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে এবং একই সাথে এমন লোকদের বোঝাপড়া করার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হতে হবে।
ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতার নীতির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণভাবে মুক্ত এলাকায় সকল ধর্ম অনুমোদিত। প্রটেস্টেন্টবাদ, ক্যাথলিকবাদ, ইসলামবাদ, বৌদ্ধবাদ ও অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাসীরা গণসরকারের নিরাপত্তা পায় যতক্ষণ তারা এর আইন মেনে চলে। প্রত্যেকে বিশ্বাস করা অথবা না করার ব্যাপারে স্বাধীন; বলপ্রয়োগ অথবা বঞ্চনা কোনটাই অনুমোদিত নয়।
মুক্ত এলাকার জনগণের প্রতি আমাদের কংগ্রেসকে প্রস্তাব করতে হবে যে চীনের মুক্ত এলাকাসমূহের [১৪] এক গণ সম্মেলন ইয়েনানে যথাশীঘ্র ডাকা হোক বহুবিধ মুক্ত এলাকাসমূহের মধ্যে সমন্বয়, প্রতিরোধ যুদ্ধে তাদের কাজ শক্তিশালিকরণ, কুওমিনতাঙ এলাকাসমূহে জনগণের জাপবিরোধী গণআন্দোলনকে সহযোগিতা করা, অধিকৃত এলাকাসমূহে জনগণের গোপন সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করা এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা ও এক সম্মিলিত সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করতে। এখন চীনের মুক্ত এলাকাসমূহ জাপানকে প্রতিরোধ ও দেশকে বাঁচানোর দেশব্যাপী জনগণের সংগ্রামের ভারকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, সারাদেশের ব্যাপকতম জনগণ আমাদের ওপর আশা রাখেন এবং আমাদের কর্তব্য হচ্ছে তাদের নিরাশ না করা। এমন একটা সম্মেলন চীনা জনগণের জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে একটা বিরাট গতিবর্ধক দান করবে।
ঙ) সমগ্র পার্টি ঐক্যবদ্ধ হোক এবং তার কর্তব্য সম্পাদনে লড়াই করুক!
কমরেডগণ, এখন আমরা যখন বুঝি আমাদের করণীয় ও তার সম্পাদনে কর্মনীতিসমূহ, তখন এসব কর্মনীতি বাস্তবায়নে ও এসব করণীয় সম্পাদনে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী কী হওয়া উচিত?
বর্তমান আন্তর্জাতিক ও দেশিয় পরিস্থিতি উজ্জ^ল ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করে এবং আমাদের জন্য ও সমগ্রভাবে চীনা জনগণের জন্য অভূতপূর্ব অনুকুল পরিস্থিতি যোগান দেয়; এটা স্বতঃপ্রমাণিত এবং সন্দেহাতিত। কিন্তু একইসাথে এখনো মারাত্মক প্রতিকুলতা রয়েছে। কেউ যদি কেবল উজ্জ্বল দিক দেখে কিন্তু প্রতিকুলতা না দেখে, সে পার্টির কর্তব্য সম্পাদনে কার্যকরিভাবে লড়তে পারবেনা।
জাপবিরোধি প্রতিরোধ যুদ্ধের আট বছরসমেত আমাদের পার্টির চব্বিশ বছরের ইতিহাসে চীনা জনগণসমেত আমাদের পার্টি চীনা জাতির জন্য প্রচণ্ড সামর্থ সৃষ্টি করেছে। আমাদের কাজের সাফল্য হচ্ছে নিশ্চিত এবং সন্দেহাতীত। কিন্তু একইসাথে এখনো আমদের কাজে ভুলত্রুটি রয়েছে। কেউ যদি কেবল সফলতার দিক দেখে কিন্তু ভুলত্রুটির দিক না দেখে, একইভাবে সে পার্টির কর্তব্য সম্পাদনে কার্যকরভাবে লড়তে পারবেনা।
১৯২১ সালে জন্মের পর চব্বিশ বছরের ইতিহাসে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তিন মহান সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে–উত্তরাভিযান, কৃষি বিপ্লবী যুদ্ধ এবং জাপবিরোধি প্রতিরোধ যুদ্ধ যা এখনো চলছে। একেবারে সূচনা থেকে আমাদের পার্টি মার্কসবাদ-লেনিনবাদের তত্ত্বের ওপর নিজেকে স্থাপন করেছে কারণ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ হচ্ছে বিশ্ব সর্বহারার সবচেয়ে সঠিক ও সর্বাধিক বিপ্লবী বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার স্ফটিকীকরণ। যখন মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সার্বজনীন সত্য চীনা বিপ্লবের মূর্ত অনুশীলনের সাথে একীভূত হতে শুরু করলো, চীন বিপ্লব সম্পুর্ণভাবে এক নয়া চেহারা নিল এবং নয়া গণতন্ত্রের সমগ্র ঐতিহাসিক স্তর উদ্ভূত হলো। মার্কসবাদী-লেনিনবাদী তত্ত্বে সজ্জিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টি চীনা জনগণের জন্য এক নয়া কাজের ধারা নিয়ে এলো, একটা কাজের ধারা যা অনুশীলনের সাথে তত্ত্বকে যুক্তকরণ আবশ্যিকভাবে ধারণ করে, জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে এবং আত্মসমালোচনা অনুশীলন করে।
মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সার্বজনিন সত্য যা দুনিয়াব্যাপী সর্বহারা সংগ্রামের অনুশীলনকে প্রতিফলিত করে, তা যখন চীনা সর্বহারা ও জনগণের বিপ্লবী সংগ্রামের সাথে একীভূত হলো, চীনা জনগণের জন্য এক অপরাজেয় অস্ত্রে তা পরিণত হলো। এটা চীনের কমিউনিস্ট পার্টি অর্জন করেছে। আমাদের পার্টি গোঁড়মীবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদের প্রতিটি প্রকাশের বিরুদ্ধে অব্যাহত সংগ্রামের মধ্যে বড় হয়েছে যা (গোঁড়ামীবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদ) এই নীতির বিরুদ্ধে যায়। গোঁড়ামীবাদ মূর্ত অনুশীলন থেকে বিচ্ছিন্ন, যেখানে অভিজ্ঞতাবাদ খণ্ডিত অভিজ্ঞতাকে সার্বজনীন সত্য হিসেবে তুলে ধরার ভুল করে। উভয় ধরণের সুবিধাবাদী চিন্তাধারা মার্কসবাদের বিরুদ্ধে যায়। তার চব্বিশ বছরের সংগ্রামের ইতিহাসে, আমাদের পার্টি এমন ভ্রান্ত চিন্তাধারাকে সফলভাবে বিরোধিতা করেছে এবং এখনো তা করছে আর এভাবে নিজেকে বিরাটাকারে মতাদর্শিকভাবে সুসংহত করে। আমদের পার্টির এখন ১২,১০,০০০ সদস্য রয়েছে। নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ প্রতিরোধ যুদ্ধের সময়কালে যোগদান করেছে এবং তাদের মতাদর্শে বহুবিধ ভেজাল রয়েছে। যুদ্ধপূর্ব কালে যারা যোগদান করেছে সেসব সদস্যদের অনেকের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য। বিগত কয়েক বছরের শুদ্ধিকরণ কাজ সর্বাধিক সফল হয়েছে এবং এসকল ভেজাল অপসারণে অনেক দুর এগিয়েছে। একাজকে অব্যাহত রাখতে হবে এবং “অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের ভুল এড়ানো” এবং “রোগ সারিয়ে রোগিকে বাঁচান”-এর চেতনার আলোকে পার্টির অভ্যন্তরে মতাদর্শিক শিক্ষাকে বিকশিত করতে হবে আরো অধিক প্রচণ্ডভাবে। আমাদের পার্টির সকল স্তরের নেতৃস্থানীয় কেডারদের বুঝতে সক্ষম করে তুলতে হবে যে তত্ত্ব ও অনুশীলনের ঘনিষ্ঠ মিলন হচ্ছে আমাদের পার্টিকে অন্য সকল পার্টি থেকে পৃথকীকরণ করার নিশ্চয়তা। তাই, মতাদর্শিক শিক্ষা হচ্ছে মহান রাজনৈতিক সংগ্রামসমূহে সমগ্র পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার চাবিকাঠি। এটা করা না হলে পার্টি তার কোন রাজনৈতিক কর্তব্যই সম্পাদন করতে পারবেনা।
অন্য সকল রাজনৈতিক পাটিসমূহ থেকে আমাদের পাটিকে পৃথকীকরণের আরেকটা মানদন্ড হচ্ছে যে আমাদের ব্যাপক জনগণের সাথে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের যাত্রাবিন্দু হচ্ছে জনগণকে সর্বান্তকরণে সেবা করা এবং কখনোই নিজেদেরকে জনগণ থেকে এক মুহুর্তের জন্যও বিচ্ছিন্ন না করা, সকল ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থ থেকে যাত্রা করা এবং কোন ব্যক্তিবিশেষের অথবা গ্রুপের স্বার্থ থেকে নয়, এবং জনগণের প্রতি আর আমাদের পার্টির নেতৃস্থানিয় অঙ্গসমূহের প্রতি আমাদের দায়িত্বের একত্বকে বোঝা। কমিউনিস্টদেরকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে, কারণ সত্য হচ্ছে জনগণের স্বার্থে; কমিউনিস্টদেরকে সকল সময় ভুল সংশোধনে প্রস্তুত থাকতে হবে, কারণ ভুল হচ্ছে জনগণের স্বার্থের বিরোধি। চব্বিশ বছরের অভিজ্ঞতা আমাদের বলে যে সঠিক করণীয়, কর্মনীতি ও কাজের ধারা একটা নির্দিষ্ট স্থান ও কালে জনগণের চাহিদার সাথে ব্যতিক্রমহীনভাবে সামঞ্জস্য বিধান করে এবং ব্যতিক্রমহীনভাবে জনগণের সাথে আমাদের সম্পর্ক মজবুত করে, আর ভ্রান্ত করণীয়, কর্মনীতি ও কাজের ধারা একটা নির্দিষ্ট স্থান ও কালে জনগণের চাহিদার সাথে ব্যতিক্রমহীনভাবে অসামঞ্জস্য বিধান করে এবং ব্যতিক্রমহীনভাবে জনগণ থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে। যেকারণে গোঁড়ামীবাদ, অভিজ্ঞতাবাদ, আদেশবাদ, লেজুড়বাদ, সংকীর্ণতাবাদ, আমলাতন্ত্র এবং কাজে উদ্ধত মনোভাবের মতো খারাপ দিকগুলো নিশ্চিতভাবে ক্ষতিকর ও অসহনীয় এবং এসব রোগে আক্রান্তদের যেকারণে অবশ্যই সুস্থ হতে হবে তা হচ্ছে তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। আমাদের কংগ্রেসের উচিত সমগ্র পার্টিকে সতর্ক হতে আহ্বাণ জানানো এবং লক্ষ্য রাখতে যে কোন কমরেড তা সে যে পদেরই হোন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন কিনা। কংগ্রেসের শিক্ষা দিতে হবে সকল কমরেডের উচিত জনগনকে ভালবাসা, জনগণের কথা মনোযোগসহকারে শোনা, যেখানেই তিনি যান জনগণের একজন হিসেবে নিজেকে সনাক্ত করা, তাদের ওপরে দাঁড়নোর পরিবর্তে নিজেকে তাদের মধ্যে একীভূত করা এবং তাদের বর্তমান স্তর অনুসারে তাদের জাগ্রত করা অথবা তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা উন্নীত করা এবং ক্রমান্বয়ে তাদের সহযোগিতা করা যাতে তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের সংগঠিত করতে পারেন এবং কোন নির্দিষ্ট স্থান ও কালে আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিস্থিতি কর্তৃক অনুমোদিত সকল জরুরী সংগ্রামে অংশ নিতে পারেন। হুকুমবাদ হচ্ছে যেকোন ধরণের কাজে ভুল কারণ তা জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতাকে অতিক্রম করে এবং স্বেচ্ছামূলক গণ ততপরতার নীতিকে লঙ্ঘন করে তা তাড়াহুড়াবাদের রোগকে প্রতিফলিত করে। আমাদের কমরেডদের মনে করা উচিত নয় যে যা তারা বোঝেন তা সবই জনগণ বোঝেন। জনগণ তা বোঝেন কিনা এবং তা করতে প্রস্তুত কিনা তা কেবল তাদের মধ্যে গিয়ে এবং তদন্ত করেই আবিস্কার করা সম্ভব। আমরা যদি তা করি, আমরা হুকুমবাদকে এড়াতে পারবো। যেকোন ধরণের কাজে লেজুড়বাদ হচেছ ভুল কারণ জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতার স্তরের নীচে নেমে গিয়ে তার লেজুড়বৃত্তি করে এবং জনগণকে সামনে এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দেওয়ার নীতিকে লঙ্ঘন করে তা অলসতার রোগকে প্রতিফলিত করে। আমাদের কমরেডদের মনে করা উচিত নয় যা তারা এখনো বোঝেননা জনগণ তা বোঝেননা। প্রায়শই এটা ঘটে যে জনগণ আমাদের থেকে এগিয়ে যায় আর এক পা সামনে এগোতে ইচ্ছুক যখন আমাদের কমরেডরা কিছু পশ্চাদপদ উপাদানের পেছনে পেছনে চলতে থাকেন, যেহেতু জনগণের নেতা হিসেবে কাজ করার বদলে এমন কমরেডরা এসব পশ্চাদপদ উপাদানের মতসমূহের প্রতিফলন ঘটান এবং সেগুলোকে ব্যাপক জনগণের হিসেবে ভুল করেন। এক কথায়, প্রত্যেকটি কমরেডকে বোঝাতে সক্ষম হতে হবে যে একজন কমিউনিস্টের কথা ও কাজের সর্বোচ্চ পরীক্ষা হচ্ছে তা নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সর্বোচ্চ স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ কিনা এবং তাদের সমর্থন পায় কিনা। প্রতিটি কমরেডকে বুঝতে সাহায্য করতে হবে যে যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জনগণের ওপর নির্ভর করি, জনগণের অফুরন্ত সৃজনী শক্তিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং তাই তাদের দ্বারা নিজেদের বিশ্বস্ত ও পরিচিত করি, কোন শত্রুই আমাদের পরাজিত করতে পারেনা বরং আমরা সকল শত্রুকে পরাজিত করতে পারি এবং সকল প্রতিকুলতা অতিক্রম করতে পারি। আত্মসমালোচনার কঠোর অনুশীলন হচ্ছে আমাদের পার্টিকে অন্য সকল রাজনৈতিক পার্টি থেকে আলাদা করার আরেক মানদন্ড। আমরা যেমন বলি, যদি কোন ঘর নিয়মিত পরিস্কার করা না হয় সেখানে ধূলা জমবে, আমাদের মুখ নোংরা হবে যদি তা নিয়মিতভাবে ধৌত করা না হয়। আমাদের কমরেডদের মনে আর আমাদের পার্টির কাজেও ধূলা জমতে পারে এবং তারও ঝাড়– দেওয়ার ও ধৌতকরণের প্রয়োজন। “স্রোতের জলে কখনো ময়লা জমেনা এবং কপাটের কব্জায় কখনো ঘুন ধরেনা” প্রবাদটির অর্থ হচ্ছে অব্যাহত গতি জীবাণুর সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে। আমাদের কাজে নিয়মিত পরীক্ষা চালানো, এবং এই প্রক্রিয়ায় একটা গণতান্ত্রিক কাজের ধারা বিকশিত করা, না সমালোচনা না আত্মসমালোচনাকে ভয় করা, এবং “যা জানুন সবটাই বলুন এবং দ্বিধাহীনভাবে বলুন”, “বক্তাকে দোষ দেবেননা বরং তার কথাকে সতর্কবাণী হিসেবে গ্রহণ করুন” এবং “ভুল করলে ভুল শোধরান, না করলে সেব্যাপারে সতর্ক থাকুন”-এমন সুন্দর চীনা জনপ্রিয় প্রবাদ বাক্যকে প্রয়োগ করা হচ্ছে আমাদের কমরেডদের মনকে ও আমাদের পার্টি কাঠামোকে দুষিতকারী সকল ধরণের রাজনৈতিক ধূলাবালি ও জীবাণুকে প্রতিরোধে একমাত্র কার্যকর উপায়। “অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের ভুল এড়ানো এবং রোগ সারিয়ে রোগীকে বাঁচানো”র উদ্দেশ্যযুক্ত শুদ্ধিকরণ আন্দোলনের বিরাট কার্যকরিতার কারণ ছিল যে সমালোচনা ও আত্মসমালোচনা আমরা পরিচালনা করেছিলাম তা ছিল সত ও অধ্যবসায়ী কিন্তু খামখেয়ালী ও বিকৃত নয়। যেহেতু আমরা চীনা কমিউনিস্টরা যারা নিজেদের সকল কর্মততপরতাকে চীনা জনগণের ব্যাপকতম অংশের স্বার্থের ওপর স্থাপন করি এবং নিজেদের লক্ষ্যের ন্যায্যতার ব্যাপারে সম্পূর্ণ আশ্বস্ত, কখনো ব্যক্তিগত আত্মত্যাগে ভীত নই এবং আমাদের আদর্শের জন্য যেকোন সময় জীবন দিতে প্রস্তুত, জনগণের স্বার্থের সাথে সংগতিপুর্ণ নয় এমন ভাবধারা, দৃষ্টিকোণ, মত অথবা পদ্ধতি বর্জনে অনিচ্ছুক হতে পারি কি? আমরা কি রাজনৈতিক ধুলাবালি ও জীবাণূকে আমাদের পরিস্কার মুখমণ্ডলকে নোংরা করতে অথবা আমাদের সুস্বাস্থ্যকর কাঠামোকে খেয়ে ফেলতে অনুমোদন করতে পারি? অগণিত বিপ্লবী শহীদ জনগণের স্বার্থে জীবন দান করেছেন, আর আমরা জীবিতরা যখন তাদের কথা চিন্তা করি আমাদের হৃদয় বেদনায় ভরে যায়, তাহলে কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ কি থাকতে পারে যা আমরা উতসর্গ করতে পারিনা অথবা এমন ভূল যা আমরা বর্জন করতে পারিনা?
কমরেডগণ! যখন এই কংগ্রেস শেষ হবে আমরা ফ্রন্টে চলে যাবো এবং এর সিদ্ধান্তসমূহের দ্বারা পরিচালিত হয়ে জাপানী হানাদারদের চূড়ান্ত পরাজয় আনয়নে ও এক নয়া চীন নির্মাণে লড়াই করবো। এই লক্ষ্য অর্জন করতে আমাদের দেশের সকল জনগণের সাথে আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো। আমি পুনরায় বলছিঃ জাপানী হানাদারদের পরাজিত করতে চায় ও এক নয়া চীন নির্মাণ করতে চায় এমন যেকোন শ্রেণী, পার্টি, গ্রুপ অথাব ব্যক্তির সাথে আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো। এই লক্ষ্য অর্জন করতে সংগঠনের গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি ও শৃংখলার ভিত্তিতে আমরা আমাদের পার্টির সকল শক্তিকে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ করবো। পার্টি কর্মসূচি, সংবিধান ও সিদ্ধান্তসমূহ মেনে চলে এমন প্রতিটি কমরেডের সাথে আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো। উত্তরাভিযানের সময় আমাদের পার্টি সদস্য সংখ্যা ৬০,০০০-এরও কম ছিল যাদের অধিকাংশই পরবর্তীতে শত্রুর দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন; কৃষি বিপ্লবী যুদ্ধের সময়কালে আমাদের ৩,০০,০০০-এর কম সদস্য ছিল যাদের অধিকাংশই একইভাবে শত্রুর দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। এখন আমাদের ১২,০০,০০০-এরও বেশি সদস্য রয়েছে, এবারে আমরা কোন অবস্থায়ই শত্রুর দ্বারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন হতে অনুমোদন করবোনা। আমরা যদি ঐ তিনটি পর্যায়কালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি, আমরা যদি বিনয়ী হই এবং অহংকারকে সতর্ক পাহাড়া দেই এবং পার্টির অভ্যন্তরস্থ সকল কমরেড ও পার্টির বহির্ভুত সকল জনগণের মধ্যে ঐক্যকে শক্তিশালি করতে পারি, আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে শত্রুর দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়া দুরে থাক, আমরা জাপানি হানাদারদের ও তাদের পোষা কুকুরদের দৃঢ়তার সাথে, সমগ্রভাবে, সম্পুর্ণত ও পুর্ণাঙ্গভাবে ধ্বংস করতে পারবো ও অতঃপর এক নয়াগণতান্ত্রিক চীন নির্মাণ করতে সক্ষম হবো।
বিপ্লবের তিনটি পর্যাযকালের বিশেষত জাপবিরোধি প্রতিরোধ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমাদের ও চীনা জনগণকে আশ্বস্ত করেছে যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রচেষ্টা ব্যতিত, চীনের জনগণের প্রধান অবলম্বন চীনা কমিউনিস্টদের ব্যতিত চীন কখনোই স্বাধীনতা অথবা মুক্তি, অথবা শিল্পায়ন অথবা তার কৃষির আধুনিকায়ন অর্জন করতে পারেনা।
কমরেডগণ! আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে তিনটি বিপ্লবের অভিজ্ঞতায় সজ্জিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সহকারে আমরা আমাদের বিরাট রাজনৈতিক কর্তব্য সম্পাদন করতে পারি।
সহস্র সহস্র শহীদ বীরের মতো জনগনের জন্য জীবন দান করেছেন; আসুন তাদের ব্যানারকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরি এবং তাদের রক্তে রঞ্জিত পথ ধরে এগিয়ে চলি!
শীঘ্রই এক নয়া গণতান্ত্রিক চীন জন্ম নেবে। আসুন সেই দিনকে স্বাগত জানাই!
নোট
১. চীনা জাতীয় মুক্তির অগ্রগামী দল, অথবা সংক্ষেপে জাতীয় অগ্রগামী দল ছিল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের অধীনে সেপ্টেম্বর, ১৯৩৬-এ গঠিত এক বিপ্লবী যুব সংগঠন, এটা গঠিত হয় প্রগতিশীল সেই সব যুবদের দ্বারা যারা ডিসেম্বর ৯, ১৯৩৫-এর আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। প্রতিরোধ যুদ্ধ সূচিত হওয়ার পর, এর বহু সদস্য ততপর হয় এবং শত্রু লাইনের পশ্চাদভাগে ঘাঁটি এলাকা গড়ে তোলায় অংশ নেয়। কুওমিনতাঙ এলাকায় জাতীয় অগ্রগামী দলের সংগঠণসমূহ চিয়াং কাই-শেক সরকার কর্তৃক বলপূর্বক ভেঙে দেওয়া হয় ১৯৩৮ সালে। মুক্ত এলাকার সংগঠণসমূহ পরে জাতীয় মুক্তির যুব সংঘে একীভূত হয় এক ব্যাপকতর পরিসরের সংগঠনে।
২. জুলাই ৭, ১৯৩৭-এ জাপানী হানাদার বাহিনী লুকাচিয়াওয়ে চীনা গ্যারিসনে আক্রমণ করলো, যা পিকিংয়ের প্রায় দশ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে। প্রতিশ্রুতিশীল ও জাতীয়ভিত্তিক জাপবিরোধি আন্দোলনের প্রভাবাধীনে চীনা বাহিনী প্রতিরোধ করলো। এই ঘটনা জাপানের বিরুদ্ধে বীরত্বব্যাঞ্জক প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচক যা আট বছর স্থায়ী হয়েছিল।
৩. তিনটি কমিউনিস্ট বিরোধী দমনাভিযানের পুর্ণতর বিবরণের জন্য দেখুন “কুওমিনতাঙের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী কমিটির ও গণ রাজনৈতিক কাউন্সিল-এর অধিবেশনসমূহের ওপর এক মন্তব্য”।
৪. মে, ১৯৪৪তে জাপানী বাহিনী ব্যবসার জন্য চীনের উত্তর-দক্ষিণ ট্রাঙ্ক রেলওয়েকে খুলে দিতে বল প্রয়োগ করতে এই অপারেশনসমূহের আক্রমণ অভিযান গড়ে তোলে সমগ্র ক্যান্টন-হ্যাঙ্কাও রেলপথ দখল করতে এবং এভাবে উত্তর ও দক্ষিণ চীনের মধ্যে বাঁধাহীন ভুযোগাযোগ নিরাপদ করতে।
৫. স্কোবি ছিল গ্রীসে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসী বাহিনীর কমান্ডার। অক্টোবর, ১৯৪৪-এ যখন জার্মান হানাদাররা ইউরোপ মহাদেশে পরাজয়ে পশ্চাদপসরণ করছিল, স্কোবির বাহিনী সেদেশে অনুপ্রবেশ করে সাথে নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল গ্রীক সরকার যা লন্ডনে প্রবাসী ছিল। জার্মান হানাদরদের বিরুদ্ধে যে গ্রীক গণ মুক্তি বাহিনী দীর্ঘ ও বীরত্বব্যাঞ্জক সংগ্রাম পরিচালনা করেছিল তাকে আক্রমণে, গ্রীক দেশপ্রেমিকদের ওপর গণহত্যা সংঘটিতকরণে এবং গ্রীসকে এভাবে রক্তে রঞ্জিত করতে স্কোবি এই সরকারকে পরিচালনা ও সহযোগিতা করে।
৬. পাও চিয়া ছিল প্রশাসনিক ব্যবস্থা যার দ্বারা কুওমিনতাঙ প্রতিক্রিয়াশিল চক্র প্রাথমিক স্তরে ফ্যাসিবাদী শাসন জারী করে । আগস্ট ১, ১৯৩২-এ চিয়াং কাই-শেক তার “কাউন্টিতে জনসংখ্যা গণনার জন্য পাও ও চিয়া র সংগঠনের বিধি” জারী করে হোনান, হুপেহ ও আনহোয়েই প্রদেশ জুরে। এই “বিধি” অনুসারে “পাও ও চিয়া কে গৃহস্থালীর ভিত্তিতে সংগঠিত করতে হবে; প্রতিটি চিয়ার প্রতিটি গৃহস্থালীর একজন শীর্ষ থাকতে হবে যা দশটি গৃহস্থালী নিয়ে গঠিত হবে, এবং প্রতিটি পাওয়ের, যা দশ চিয়া নিয়ে গঠিত হবে”। প্রতিবেশীদের একে অপরের ততপরতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হতো এবং কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দিতে হতো, এবং একজন দোষী পাওয়া গেলে সকলেই শাস্তিযোগ্য ছিল; বাধ্যমূলক শ্রম চালুর প্রতিবিপ্লবী শাসনও জারী করা হয়েছিল। নভেম্বর, ১৯৩৪-এ কুওমিনতাঙ সরকার দাপ্তরিকভাবে ঘোষণা করে যে ফ্যাসিবাদী শাসনের এই ব্যবস্থা তার শাসনের অধীন সকল প্রদেশ ও পৌরসভায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৭. চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন কর্তৃক ১৯৪৩ সালে অনুষ্ঠিত কায়রো সম্মেলন কায়রো ঘোষণা ইস্যু করে যা পরিস্কারভাবে বিবৃত করে যে তাইওয়ান ও অন্য কিছু ভুখন্ড চীনের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। জুন, ১৯৫০-এ মার্কিন সরকার তাইওয়ানকে নিয়ন্ত্রণে নিতে এক যুদ্ধ জাহাজ পাঠায় যা ছিল এর ওপর সার্বভৌমত্ব থেকে চীনকে বঞ্চিত করার প্রচেষ্টায় এই চুক্তির প্রকাশ্য বরখেলাপ।
৮. ইউয়ান শিহ-কাই ছিল চিঙ রাজবংশের শেষ বছরগুলোর উত্তরাঞ্চলীয় যুদ্ধবাজদের প্রধান। ১৯১১ সালের বিপ্লবে চিঙ রাজবংশের উচ্ছেদের পর সে প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পদ দখল করলো আর উত্তরাঞ্চলীয় যুদ্ধবাজদের প্রথম সরকার গঠণ করলো যা বৃহত ভুস্বামী ও বৃহত মুতসুদ্দি শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে। সে তা করে প্রতিবিপ্লবী সৈন্যাবাহিনীর ওপর নির্ভর করে এবং সাম্রাজ্যবাদীদের সমর্থনের ওপর দাঁড়িয়ে আর বুর্জোয়াদের আপোষবাদী চরিত্রের সুযোগ নিয়ে যারা তখন বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। ১৯১৫ সালে সে নিজেকে সম্রাট বানাতে চাইল এবং জাপানীদের সমর্থন পেতে একুশ দফা মেনে নিল যার দ্বারা জাপান সমগ্র চীনের ওপর পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ কামনা করেছিল। একই বছর ডিসেম্বরে ইউনান প্রদেশে তার সিংহাসন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এক উত্থান ঘটল এবং তড়িত দেশব্যাপী সাড়া ও সমর্থন পেল। ইউয়ান শিহ-কাই পিকিংয়ে জুন, ১৯১৬-তে মারা যায়।
৯. ওমেই হচ্ছে সেচুয়ান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক বিখ্যাত পাহাড়। এখানে এটা সেচুয়ানের পার্বত্য এলাকাকে প্রতীকিকরণ করছে, জাপবিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধে চিয়াং কাই-শেক শাসক চক্রের শেষ আশ্রয়।
১০. ড. সান ইয়াত-সেন-এর নভেম্বর ১০, ১৯২৪ তারিখের “উত্তরের দিকে আমার যাত্রার বিবৃতি” থেকে।
১১. ১৮ শতকের শেষ থেকে শুরু করে বহু যুগ ধরে বৃটেন বর্ধিত পরিমাণে চীনে আফিম রপ্তানি করে। এই ব্যবসা চীনা জনগণকে নেশার স্বীকারে পরিণতই শুধু করেনা বরং চীনের রৌপ্য লুটও করে। এটা চীনে মারাত্মক বিরোধিতা জাগিয়ে তোলে। ১৮৪০ সালে চীনে তার ব্যবসা রক্ষার অজুহাতে চীনের বিরুদ্ধে বৃটেন সশস্ত্র আগ্রাসন চালায়। লিন সে-শুর নেতৃত্বে চীনা বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে, এবং ক্যান্টনের জনগণ স্বতস্ফুর্তভাবে “বৃটিশ বাহিনীকে ধ্বংস করো” সংগঠিত করলো যা বৃটিশ আগ্রাসী বাহিনীর ওপর মারাত্মক আঘাত হানে। ১৮৪২ সালে দুর্নীতিবাজ চিঙ শাসকগোষ্ঠী বৃটেনের সাথে নানকিঙ চুক্তি সই করলো। চুক্তি ক্ষতিপুরণ পরিশোধ যোগান দিল এবং বৃটেনের কাছে হংকং ছেড়ে দিল, এবং বিবৃত করলো যে সাংহাই, ফোচৌ, আময়, নিঙপো এবং ক্যান্টন বৃটেনের ব্যবসার জন্য খুলে দেওয়া হবে এবং চীনে আমদানিকৃত ব্রিটিশ পণ্যের খাজনা চীন ও বৃটেন কর্তৃক যৌথভাবে নির্ধারিত হবে।”
১২. আটলান্টিক সনদ যৌথভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন কর্তৃক ঘোষিত হয় আগষ্ট, ১৯৪১-এ তাদের আটলান্টিক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হিসেবে। মস্কো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় অক্টোবর ১৯৪৩-এ সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ও বৃটেনের পররাস্ট্র মন্ত্রীদের কর্তৃক। সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ও বৃটেনের তেহরান সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ইরানের রাজধানীতে ১৯৪৩-এর নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে। সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ও বৃটেনের ক্রিমিয়া সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৯৪৫তে আল্টায়। এসকল আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বাক্ষরকারীগণ সিদ্ধান্ত করেন সাধারণ প্রচেস্টায় ফ্যাসিবাদী জার্মানী ও জাপানের পরাজয় সাধনে এবং যুদ্ধের পর আগ্রাসী শক্তির ও ফ্যাসিবাদের অবশেষের পুনরুজ্জীবনকে প্রতিরোধের, বিশ্বশান্তি রক্ষার এবং সকল দেশের জনগণকে তাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে সহযোগিতার। কিন্তু যুদ্ধের পরপরই মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকার এসব আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে।
১৩. চীনের মুক্ত এলাকাসমূহের প্রতিনিধি হিসেবে কমরেড তাঙ পাই-উ এপ্রিল থেকে জুন, ১৯৪৫-এ সান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠনের ওপর জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দেন, যেখানে পঞ্চাশটি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ডাম্বারটন ওকস-এ জাতিসংঘের সংগঠনের খসড়া কৃত হয় যেখানে মস্কো ও তেহরান সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে আগস্ট থেকে অক্টোবর ১৯৪৪-এ সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাস্ট্র, বৃটেন ও চীনের প্রতিনিধিরা মিলিত হয়।
১৪. জাপানের আত্মসমর্পণে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হলো এবং চীনের মুক্ত এলাকাসমূহের গণ কংগ্রেস ডাকা হলোনা, যদিও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কংগ্রেসের পর ইয়েনানে এই সম্মেলনের জন্য একটা প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং একটা সূচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল যাতে সকল মুক্ত এলাকার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির মৌলিক দলিলসমূহ
সামরিক লাইন
সূচনা
মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানতঃ মাওবাদকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে ও প্রয়োগ করে সভাপতি গনসালো পার্টির সামরিক লাইন প্রতিষ্ঠা করেন। নভেম্বর, ১৯৭৯-এ প্রথম বর্ধিত জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ রাজনৈতিক লাইনের কেন্দ্রিয় বিষয় হিসেবে এতে ঐকমত্য হয় এবং এখন এটা গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিকশিত হচ্ছে।
সভাপতি গনসালো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের সার্বজনীন সত্যকে পেরুভিয়ান বিপ্লবের মূর্ত অনুশীলনের সাথে অব্যাহতভাবে একীভূত করেছেন সংশোধনবাদ ও ডান সুবিধাবাদী লাইনকে মোকাবেলা ও চুর্ণ করে। যুদ্ধ প্রশ্নে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে প্রয়োগ করে, সামরিক লাইন সভাপতি গনসালোর দার্শনিক চিন্তাধারাকে প্রকাশ করে, যুদ্ধের নিয়মসমূহ, সাধারনভাবে বিপ্লবী যুদ্ধকে এবং পেরুর বিপ্লবী যুদ্ধের বিশেষ নিয়মসমূহকে সারসংক্ষেপিত করে। সামরিক লাইন হচ্ছে মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজে পরম গুরুত্বপুর্ণ এবং আমাদের অনুমোদন দেয় সর্বহারা সামরিক লাইন ও বুর্জোয়া সামরিক লাইনের মধ্যে পার্থক্যকরণে।
সামরিক লাইন সেই নিয়মসমূহ নিয়ে গঠিত যা ক্ষমতা দখলে ও এর রক্ষায় গণযুদ্ধকে পরিচালনা করে। এর রয়েছে তিন উপাদানঃ
১. গনযুদ্ধ, যা আমাদের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ গণযুদ্ধ হিসেবে বিশেষায়িত, প্রধানভাবে গ্রামাঞ্চলে, শহরকে পরিপুরক হিসেবে নিয়ে;
২. বিপ্লবী বাহিনী বিনির্মাণ, এখানে গণ গেরিলা বাহিনী হিসেবে প্রযুক্ত, যার রয়েছে মিলিশিয়াকে অন্তর্ভুক্তকরণের বৈশিষ্ট সশস্ত্র জনগণের সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যেতে এবং;
৩. রণনীতি ও রণকৌশলসমূহ যা গঠিত হয় ঘেরাও দমন অভিযানসমূহ ও পাল্টা ঘেরাও দমন অভিযানসমূহের মাধ্যমে। আমাদের ক্ষেত্রে এই উপাদান রাজনৈতিক ও সামরিক পরিকল্পনাসমূহের দ্বারা বিশেষায়িত যার নির্দিষ্ট লক্ষ্যযুক্ত অভিযানসমূহে বিকশিত রাজনৈতিক সামরিক রণনীতি রয়েছে।
১. গণযুদ্ধ
ক) পেরুর গণযুদ্ধ সম্পর্কে
সভপতি গনসালো বিপ্লবী সহিংসতার সার্বজনীন নীতিতে নিজেকে পুননিশ্চিত করে চেয়ারম্যান মাও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সর্বহারা শ্রেণীর সামরিক তত্ত্ব অনুসরণ করেনঃ গণযুদ্ধের রয়েছে সার্বজনীন প্রযোজ্যতা এবং তা সকল ধরনের দেশে প্রযোজ্য হবে প্রতিটি বিপ্লবের মূর্ত পরিস্থিতি অনুসারে। বিশ্ব গণযুদ্ধ হচ্ছে সংগ্রামের প্রধান ধরন যা সর্বহারা ও বিশ্বের নিপীড়িত জনগণকে পরিচালনা করতে হবে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধকে বিরোধিতা করতে। গণযুদ্ধ হচ্ছে জনসাধারণের যুদ্ধ এবং জনগণকে সমাবেশিত করে ও তাদের দ্বারা সমর্থনযুক্ত হয়েই কেবল তা সম্পাদন করা যায়। তিনি বলেনঃ “জনগণ আমাদের সবকিছু দেয়, তাদের মুখের গ্রাস রুটির টুকরো থেকে শুরু করে তাদের মূল্যবাণ রক্ত পর্যন্ত যা আমাদের লড়াকু ও যোদ্ধাদের সাথে যৌথভাবে আলোড়িত হয়, যা নয়া ক্ষমতার জন্য গনযুদ্ধের পথকে সমৃদ্ধ করে।” জনগণকে গণ গেরিলা বাহিনীর সশস্ত্র ইউনিটে সংগঠিত করতে হবে। সকল গ্রামীণ ঘাঁটি এলাকায় প্রতিটি পার্টি কমিটির সকল নারী পুরুষকে সামরিকভাবে সংগঠিত করা হয়। শহরেও গণগেরিলা বাহিনী ততপরতা চালায় এবং জনগণের সাথে বহুবিধ নয়া সংগঠণে গণযুদ্ধে ও এর জন্য অধিক থেকে অধিকতর বাঁধা। গণ রক্ষী বিপ্লবী আন্দোলন হচ্ছে শহরাঞ্চলে ফ্রন্টের বাস্তবায়ন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে প্রতিরোধে সমাবেশিত করা, যুদ্ধকে সেবা করা এবং ভবিষ্যত অভুত্থানকে সেবা করা।
তিনি মনে করেন গণযুদ্ধকে পরিচালনা করার লক্ষ্যে আমাদের অতি অবশ্যই চার মৌলিক প্রশ্নকে হিসেবে নিতে হবেঃ
১. সর্বহারা শ্রেনীর মতবাদ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ যাকে পথনির্দেশক চিন্তাধারা হিসেবে মূর্ত করতে হবে, তাই আমরা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারার ওপর নিজেদের স্থাপন করি, মুখ্যতঃ গনসালো চিন্তাধারায়;
২. পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির প্রয়োজনীয়তা যা গণযুদ্ধ পরিচালনা করে;
৩. গণযুদ্ধ কৃষক যুদ্ধ হিসেবে বিশেষায়িত যা গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের পথ অনুসরণ করে; এবং
৪. ঘাঁটি এলাকসমূহ অথবা নয়া ক্ষমতা, ঘাঁটি এলাকাসমূহের বিনির্মাণ-যা হচ্ছে গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের পথের সার।
তিনি বিশ্লেষন করেন আমাদের জনগনের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া এবং দেখান যে তারা সর্বদাই সংগ্রাম করেছেন, এটা “পুষ্ট হয়েছে ও অগ্রসর হয়েছে বিপ্লবী সহিংসতার মধ্য দিয়ে। এই সহিংসতার মাধ্যমেই, এর বিচিত্র রূপ ও মাত্রায় আমাদের জনগণ তাদের অর্থনৈতিক অর্জন [Revindicaciones] অধিকার ও স্বাধীনতা জয় করেছে, যেহেতু কোন কিছুই আকাশ থেকে পড়েনা, না তা কেউ কাউকে দেয়। ‘বিশ্বাসঘাতকদের বোলচাল নিপাত যাক’; সবকিছুই বস্তুত বিপ্লবী সহিংসতার মাধ্যমে জয় করা হয়েছে, প্রতিক্রিয়াশিল সহিংসতার বিরুদ্ধে ধৈর্যশীল সংগ্রামে; কীভাবে আট ঘন্টা কর্মদিবস জয় করা হয়েছে, আমাদের ভুমি জয় ও রক্ষা করা হয়েছে, আমাদের অধিকারসমূহ জয় করা হয়েছে এবং উতপীড়কদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিপ্লবী সহিংসতা হচ্ছে, তাই আমাদের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার অন্তসার…এটা বোঝা সহজ যে পেরুভিয়ান বিপ্লবের বিকাশ, আমাদের গণতান্ত্রিক বিপ্লবের, জনগন ও শ্রেণীর মুক্তি কেবলমাত্র জনগণের মহানতম বিপ্লবী যুদ্ধের মাধ্যমে, জনগণকে অস্ত্র হাতে গণযুদ্ধে জাগরিত করে অর্জন করা সম্ভব হবে”।
তিনি এই ঐতিহাসিক শিক্ষা তুলে ধরেন যে এসব রাজনৈতিক ও সামরিক বাস্তবতাসমূহ দেশের প্রধান রূপান্তরসমূহ মূর্ত করেছে। প্রথমে আসে সামরিক কাজ, তারপর রাজনৈতিক পরিবর্তন। এটা আবারো দেখায় যে যুদ্ধ হচ্ছে অন্য উপায়ে রাজনীতির ধারাবাহিকতা। তিনি আমাদের শিক্ষা দেন যে কীভাবে আমাদের জনসাধারন শোষণের বিরুদ্ধে লড়েছে। ৭ম শতক থেকে যখন পেরুভিয়ান রাষ্ট্র উদ্ভূত হয়েছে, জনগণ নিপীড়ন ও শোষণকে লড়েছে। ইনকা সাম্রাজ্য তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করলো দখলদারিত্বের যুদ্ধের মাধ্যমে যা ইয়াহুয়ারপম্পা [“রক্তক্ষেত্রসমূহ”-অর্থে Quechua-ইং অনুবাদক]র যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায় আয়াকুচো ও আপুরিমাক অঞ্চলে আধিপত্যকারী চানসাস সাংস্কৃতিক গ্রুপের বিরুদ্ধে। সাম্রাজ্য যুদ্ধের মাধ্যমে আরো সম্প্রসারিত হলো। এটা একটা রাজনৈতিক ও সামরিক ঘটনা।
স্প্যানিশ সাম্রাজ্য কর্তৃক দখলদারিত্ব হচ্ছে আরেক রাজনৈতিক ও সামরিক ঘটনা যা আরোপ করা হয়েছে আদিবাসী জনগণের প্রতিরোধকে চুর্ণ করে এবং বিজিতদের নিজেদের মধ্যেকার লড়াইকে কাজে লাগিয়ে। যাহোক, আমাদের অন্যান্যের মধ্যে মাঙ্কো ইনকার সংগ্রামকে গুরুত্ব দিতে হবে যে স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে একটা বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়।
ভাইস রয়েলটির আরোপ ছিল আরেকটা রাজনৈতিক ও সামরিক ঘটনা যা ব্যবহৃত হয়েছে দখলদারদের নিজেদের ধ্বংসে। নিজেকে বজায় রাখতে একে বৃহত উত্থানকে মোকাবেলা করতে হয়েছে যেমন আতাহুয়ালপায় খুয়ান সান্তোসের নেতৃত্বে এবং ১৭৮০তে টুপাক আমারুর শক্তিশালি আন্দোলন যা এক লক্ষ মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিল কাসকো ও পুনো থেকে বলিভিয়ার ভেতর পর্যন্ত ভাইস রয়েলটির আধিপত্যকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে এবং আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া ও মেক্সিকোয় প্রভাব ফেলে এবং এভাবে আমেরিকা মহাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়ে। আন্দোলন পরাজিত হলেও ভাইস রয়েলটিকে তা দুর্বল করে ও খাঁটো করে, এভাবে মুক্তির জন্য শর্ত প্রস্তুত করে। এর শ্রেণী চরিত্রকে দেখতে আমাদের স্মরণ করতে হবে যে টুপাক আমারু ছিল এক ক্যাসিকো (Cacique) [Cacique ছিল কাসকো এলাকায় ভারতীয়দের এক প্রধান যে ভাইসরয় কর্তৃক নিযুক্ত-ইং অনুবাদক]।
মুক্তি ছিল আরেক সামরিক ও রাজনৈতিক ঘটনা এবং এর রয়েছে তিনটি মুহুর্তঃ প্রথম, আঠারো শতকে কৃষক অভ্যুত্থান উদাহারণস্বরূপ টুপাক আমারু; দ্বিতীয়, শহরে অভ্যুত্থান যেমন, তাকনার ফ্রান্সিসকো দ্য জলা এবং গেরিলাগণ, বিশেষত অন্য বহুর মধ্যে কাঙ্গাযো ও ইয়াযোস; তৃতীয়ত, বৃহত সৈন্যবাহিনীসমূহের লড়াই যা ১৮২৪-এ আয়াকুচোর যুদ্ধে সান মার্টিন ও বলিভারের মুক্তিদাত্রী মহাকাব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এটা বোঝাটা গুরুত্বপুর্ণ যে যদিও মুক্তি পরিচালিত হয়েছিল ক্রেওলেস [Criollis] এর নেতৃত্বে, স্প্যানিশ সাম্রাজ্যকে ভাঙার মতো যোগ্যতা এর ছিল; সান মার্টিন ছিলেন এক মহান সামরিক রণনীতিবিশারদ এবং বলিভার নিজেকে একজন রাজনৈতিক ও সামরিক রণনীতি বিশারদ হিসেবে প্রমাণ করেন। তাদের উভয়ে কতিপয় আমেরিকান দেশের মুক্তির জন্য লড়াই করেন কোন ব্যক্তিগত লাভালাভ ছাড়াই, এটা দেখিয়ে যে এক মহান লক্ষ্যকে সেবা করতে আমাদের অবশ্যই প্রথমে সর্বদা সাধারন স্বার্থকে তুলে ধরতে হবে, কখনোই ব্যক্তিগত নয়, এবং তারা তা করেন কমিউনিস্ট হওয়া ছাড়াই।
প্রজাতন্ত্রে ভুস্বামীরা ক্ষমতায় রয়ে গেল কিন্তু রক্তাক্ত বিরাট কৃষক সংগ্রামসমূহের আগুণকে মোকাবেলা করে যার মধ্যে রয়েছে আতুসপারিয়া ও উসচো পেদ্রো অথবা লাকোয়া আতুসপারিয়ার। পেরুর দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন লাকোয্যা। অক্রোস। এখানে আমাদের রয়েছে চিলির সাথে যুদ্ধের অন্ধকার অধ্যায় যেখানে উভয় দেশ পরস্পরকে মোকাবেলা করেছে ইংরেজ ও ফরাসীদের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে-যারা গুয়ানো ও নাইট্রেটের আমাদের সম্পদ চাইছিল। এটা এক যুদ্ধ যা আমাদের দেশের প্রারম্ভিক পুঁজিবাদী বিকাশকে থামিয়ে দিয়েছিল এবং আধিপত্যকারী শ্রেণীসমূহের নোংরা ভুমিকাকে উন্মোচন করেছিল। যার একাংশ চিলির কাছে আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে জনগণকে রক্ষায় ও ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষায় দখলদারদের বিরুদ্ধে জনসাধারণের বীরত্মব্যাঞ্জক প্রতিরোধকে, একটা প্রতিরোধ যা বিশেষভাবে দেশের পার্বত্য কেন্দ্রিয় ও দক্ষিণাঞ্চলে শক্তিশালি ছিল যেখানে গেরিলারা সংগঠিত হয়েছিল। কাসেরেস [আন্দ্রেস এ. কাসেরেস হানাদারদের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালি গেরিলা আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন-ইং অনুবাদক] যিনি ছিলেন এক ভুস্বামী সৈনিক, তিনি এই পরিস্থিতিতে এক গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করেন।
চিলির সাথে যুদ্ধ পরিচালিত হয় ১৮৭৯ থেকে ১৮৮৩ পর্যন্ত, এবং এটা পেরুভিয়ান অর্থনীতিকে ধ্বংসে চালিত করে। এর অল্প কিছু পরে ১৮৯৫তে এটা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের সূচনায় প্রবেশ করে যা সমকালীন পেরুভিয়ান সমাজের বিকাশের সূচক। উনিশ শতক অতিক্রম করার সাথে সাথে পেরু এক উপনিবেশ থেকে আধাউপনিবেশে এবং সামন্ততান্ত্রিক থেকে আধাসামন্ততান্ত্রিকে পরিণত হয়। ইয়াঙ্কি [মার্কিন-বাং অনুবাদক] সাম্রাজ্যবাদের সাথে বাঁধা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ বিকশিত হতে শুরু করে, এভাবে ইংরেজদেরটা প্রতিস্থাপন করে। চুড়ান্তত, আধুনিক সর্বহারা শ্রেণী উদ্ভূত হল যা রাজনৈতিক সংগ্রামের ভাষাকে বদলে দিল। এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া থেকে নিম্নলিখিত শিক্ষা পাওয়া গেলঃ
জনগণ সর্বদাই সংগ্রাম করেছেন, তারা শান্তিপুর্ণ নন এবং তারা অস্ত্র হাতে বিপ্লবী সহিংসতাকে প্রয়োগ করেন।
কৃষক সংগ্রামসমূহই সমাজের ভিতকে সর্বাধিক কাঁপিয়েছে এবং এই সংগ্রামসমূহ জয়লাভ করতে পারেনি কারণ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্বে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বের তাদের অভাব ছিল।
রাজনৈতিক ও সামরিক কাজ প্রধান সামাজিক পরিবর্তন নির্ধারণ করে।
সামরিক লাইনের অবস্থান থেকে সমকালীন পেরুর তিনটি মুহুর্ত রয়েছে যা সর্বহারা শ্রেণীর আবির্ভাবের সাথে জড়িত যা তার পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছে বিপ্লবী সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা জয় করতে তার পথকে মূর্ত করে যা পার্টির সামরিক লাইনের প্রক্রিয়ায় সংশ্লেষিত হয়।
প্রথম মুহুর্ত। (১৮৯৫ থেকে ১৯৪৫) পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয় এবং সামরিক লাইন প্রশ্নে মারিয়েতেগুই প্রতিষ্ঠা করেন “পথের নির্দেশ ও রূপরেখা”। অধিকতর ভাল মজুরির জন্য, আট ঘন্টা কর্মদিবস ও উপযুক্ত কাজের পরিস্থিতির জন্য শ্রমিকদের বীরত্বব্যাঞ্জক সংগ্রামসমূহ, ভুমির জন্য কৃষকদের আন্দোলনসমূহ, দক্ষিণাঞ্চলীয় সিয়েররায় কৃষি সর্বহারা আন্দোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের জন্য আন্দোলন শ্রেণীসংগ্রামের এক জটিল তীক্ষ্ণকরণে চালিত করে যাতে পেরুভিয়ান সর্বহারা পরিপক্ক হয় যাতে অক্টোবর ৭, ১৯২৮-এ মারিয়েতেগুই পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ব্যানারের অধীনে।
মারিয়েতেগুই বিপ্লবী সহিংসতার মৌলিক ধারণা তুলে ধরেন ও রূপরেখা দেন। তিনি বলেনঃ “এমন কোন বিপ্লব নেই যা ভদ্র, সৌম্য, শান্ত ও নম্র।” “ক্ষমতা সহিংসতার মাধ্যমে জয় করা হয়…একে কেবলমাত্র একনায়কত্বের মাধ্যমে রক্ষা করা হয়।” তিনি বিপ্লবী যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী চরিত্রের হিসেবে আত্মস্থ করেন; “একটা বিপ্লব অনেক বছরেই কেবল সম্পন্ন করা সম্ভব। প্রায়শই হয় বিপ্লবী বাহিনী নয় প্রতিবিপ্লবী বাহিনীর আধিপত্য দ্বারা এর পাল্টাপাল্টি পর্যায় রয়েছে।” তিনি রাজনীতি ও যুদ্ধের মধ্যেকার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন; এটা বুঝে যে বিপ্লব এক নতুন ধরণের বাহিনী সষ্টি করে যা তার করণীয়সমেত শোষকদের চেয়ে ভিন্ন; তিনি আরো উপলব্ধি করেন কৃষককুলের চরিত্র এবং এক নেতৃত্বকারী ভুমিকায় শ্রমিক শ্রেনীর নির্ধারক অংশগ্রহন, এবং এই যে বিপ্লব আন্দিস থেকে আসবে, “ল্যাটিফুন্ডিস্টা সামন্তবাদের বিলোপের সাথে সাথে বাড়ন্ত শ্রমিক শ্রেনীকে প্রতিরোধে শহুরে পুঁজিবাদ হীন বল হবে”; বিপ্লব করার জন্য দরকার বন্দুক, একটা কর্মসুচি এবং মতবাদ। তিনি বিপ্লবকে এক সামগ্রিক যুদ্ধ হিসেবে ধারণ করেন যাতে রাজনৈতিক, সামাজিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক উপাদানসমূহের এক সমষ্টি রয়েছে এবং প্রতিটি দল টেনশনে পতিত হয় এবং সাধ্যমতো শক্তি সমাবেশ ঘটায়। তিনি নির্বাচনী পথ সম্পুণভাবে বর্জন করেন।
মারিয়েতেগুই এপ্রিল, ১৯৩০-এ মারা যান। রাভিনেসের নেতৃত্বে ডান পার্টির নেতৃত্ব কব্জা করতে যাচ্ছে এবং মারিয়েতেগুইর পথের ওপর প্রশ্ন তোলা ও অস্বীকৃতি সংঘটিত হলো। তারা মুখে অভ্যুত্থানের কথা বলে কিন্তু নির্বাচনপন্থায় অধঃপতিত হয়। পার্টির তথাকথিত “সাংবিধানিক কংগ্রেস” ১৯৪২-এ “জাতীয় ইউনিয়ন”-এর বিশ্বাসঘাতক রণকৌশল যোগান দেয় উভয়ত আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ও আন্তর্জাতিকভাবে। সমকালীন সংশোধনবাদের এক পুর্বপুরুষ ব্রাউডারীয় ভাবধারায় পার্টি প্রভাবিত হয় যেখানে বিপ্লবী সহিংসতার পরিষ্কার বর্জন রয়েছে এবং “জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট” কে কেন্দ্র করে এক নির্বাচনী রণকৌশল গড়ে তোলা হয়। তাসত্ত্বেও পার্টির লাল লাইন মার্কসবাদী-লেনিনবাদী অবস্থান রক্ষায় সংগ্রাম করলো যদিও তিক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়লো এবং অভ্যন্তরীণ সংগ্রামকে বহিষ্কারের মাধ্যমে সমাধা করা হলো।
দ্বিতীয় মুহুর্ত। (১৯৪৫ থেকে ১৯৮০) পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি পুনর্গঠিত হলো এবং সামরিক লাইনের দিক থেকে সভাপতি গনসালো প্রতিষ্ঠা করেন “পথের সংজ্ঞা ও ভিত্তি”। দ্বিতীয় মুহুর্তের রয়েছে দুই অংশঃ প্রথম, ১৯৪৫ থেকে ১৯৬৩-এর পর্যায় যাহচ্ছে “পার্টির বিকাশের নয়া উদ্দীপনা এবং সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সূচনা।” দ্বিতীয় অংশ ১৯৬৩ থেকে ১৯৮০ হচ্ছে “সাধারণ রাজনৈতিক লাইনের প্রতিষ্ঠা ও পার্টির পুনর্গঠন”।
দ্বিতীয় মুহর্তের প্রথম অংশে ১৯৫০ দশকের মাঝামাঝির দিকে, অদ্রিয়ার ক্যুদেতার পর পার্টিকে পুনসক্রিয়করণ অসমাপ্ত রয়ে গেল। পরে, পার্টি সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের উদ্বোধনী পদক্ষেপ নেয়। এই প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় কিউবান বিপ্লবের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে। একইসাথে, বিশ্বপর্যায়ে মার্কসবাদ ও সংশোধনবাদের মধ্যে সংগ্রাম গড়ে ওঠে। বিপ্লবী পথ আলোচিত হয়, সশস্ত্র সংগ্রাম পুনরায় আলোচিত হয় এবং ১৯৬২ সালে পার্টির চতুর্থ কংগ্রেসে ঐকমত্য হয় যে পেরুতে তথাকথিত “দুই পথ” সম্ভবঃ “শান্তিপুর্ণ পথ ও সহিংস পথ।” “বিপ্লব গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও অথবা শহর দিয়ে গ্রাম ঘেরাওয়ের পথ অনুসরন করতে পারে।” কিন্তু এসব কথা সত্ত্বেও পার্টি সারবস্তুতে সেই পুরোনো নির্বাচনী রণনীতিতে ঝুলে রইলো তারপর তথাকথিত “জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট”-এর রূপ নিয়ে। এটা ছিল ক্রু্েশ্চভের সংশোধনবাদ। এসময় সভাপতি গনসালোর রাজনৈতিক মতাবস্থান উদ্ভূত হতে শুরু করলো লাল লাইনের ভিত্তি স্থাপন করে যা মার্কসবাদ ও সংশোধনবাদের মধ্যে সংগ্রামে চেয়ারম্যান মাওয়ের মতাবস্থানের প্রতি অনুগত ছিল।
দ্বিতীয় মুহুর্তের দ্বিতীয় অংশে, ১৯৬৩ থেকে ১৯৮০তে, আমাদের রয়েছে “সাধারণ রাজনৈতিক লাইনের প্রতিষ্ঠা ও পার্টির পুনর্গঠণ”, সভাপতি গনসালো এই কর্তব্য পরিচালনা করেন পনের বছরেরও বেশি সময় ধরে তীব্র সংগ্রামে পার্টির লাল অংশ গঠণে এবং তিন রাজনৈতিক রণনীতির মধ্য দিয়েঃ
১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ তিনি লাল অংশ (ফ্র্যাকশন) কে “গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও” অনুসরণের রাজনৈতিক রণনীতির অধীনে পরিচালনা করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৬ তিনি পার্টিকে “গণযুদ্ধের জন্য পার্টিকে পুনর্গঠণ করুন” এর রাজনৈতিক রণনীতিতে পরিচালনা করেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ তে ছিল সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার জন্য “পুনর্গঠন সম্পন্ন করুন এবং ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করুন”-এর রাজনৈতিক রণনীতি।
“গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও” অনুসরনকারী প্রথম রণনৈতিক পর্যায়কালে পেরুর কমিউনিস্টরা মার্কসবাদ ও সংশোধনবাদের মধ্যকার সংগ্রাম দ্বারা গভীরভাবে আলোড়িত হলো এবং মার্কসবাদী মতাবস্থানসমূহ সংগঠণে ঢুকতে শুরু করলো। ১৯৬০ দশকে এক বিরাট কৃষক আন্দোলন হয় যা ৩ থেকে ৫ লক্ষ কৃষককে সমাবেশিত করে যা ভুমির জন্য লড়াই করে কিন্তু যাকে সংশোধনবাদী নেতৃত্ব সশস্ত্র সংগ্রামে যেতে দেয়না; শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে শ্রমিক ধর্মঘটের এক বিরাট আন্দোলন সংঘটিত হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম এক উচ্চতর সংগ্রামে বিকশিত হয়। এসকল ঘটনাই পার্টির ওপর প্রভাব ফেলে এবং সভাপতি গনসালো আয়াকুচোয় লাল অংশকে গড়ে তোলেন এই পরিষ্কার ধারনাসমেত যে পার্টিকে অবশ্যই ক্ষমতা দখল করতে হবে এবং তাকে মার্কসবাদী তত্ত্বের ওপর দাঁড়াতে হবে। এক সম্মুখসারির সংগ্রাম দানা বেঁধে ওঠলো সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে যার (সংশোধনবাদের ) কেন্দ্র ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং এটা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও প্রধানভাবে চেয়ারম্যান মাওযের মতাবস্থানের প্রতি অনুগত ছিল। তিনি মনে করেন “গ্রামাঞ্চল এক প্রচণ্ড বিপ্লবী আন্দোলনে মত্ত”, “আমাদেরকে গ্রামাঞ্চল ও গরীব কৃষকদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে”, “আমাদের বিপ্লব হবে গ্রাম থেকে শহরের দিকে।” ১৯৬৪ এর জানুয়ারিতে চতুর্থ কংগ্রেসে তিনি পার্টির বিভিন্ন ভিত্তিসমূহের সাথে দেখা করেন সংশোধনবাদ ও তার স্থূল প্রতিনিধি হোর্হে দেল প্রাদো, অ্যাকোস্টা ও খুয়ান বারি্যওকে পার্টি থেকে বহিষ্কারের জন্য। সংশোধনবাদকে নিজ সারি থেকে নিপাত ও বহিষ্কারে আমাদের পার্টি হতে যাচ্ছে অন্যতম প্রথম। সভাপতি গনসালো আয়াকুচোর আঞ্চলিক কমিটিতে পার্টিকে সুসংহত করা শুরু করেন; পার্টি কাজের কেন্দ্র করা হয় গ্রামাঞ্চলে, শহরে তিনি শহরতলী ফেডারেশনে গরীব জনগণকে সংগঠিত করেন, এবং বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্ট পুনসংগঠিত করেন। কিন্তু যাহচ্ছে সীমাতিক্রমকারী গুরুত্বপুর্ণ তাহলো নয়া কেন্দ্রিয় নেতৃত্বের বিরোধিতা সত্ত্বেও সভাপতি গনসালো পার্টি ঐকমত্য প্রয়োগ করে “বিশেষ কাজ” পরিচালনা করেন যা ছিল আঞ্চলিক কমিটিসমূহের সামরিক কাজ তিন কার্যকরিতা সহঃ রাজনৈতিক, সামরিক ও লজিস্টিকাল। পরবর্তীতে, সামরিক কাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে যে কেন্দ্রিয় নেতৃত্ব তার মতাবস্থানের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার দুই লাইনের সংগ্রামে তিনি সমরবাদ, ভাড়াটেবাদ ও ফুকোবাদ [চে গুয়েভারার ফোকো তত্ত্বের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে-ইংরেজী অনুবাদক] কে লড়েন। এই পরিস্থিতিতে এমআইআর [বিপ্লবী বামদের আন্দোলন-ইং অনুবাদক] গেরিলারা গড়ে ওঠলো, একটা মতাবস্থান যা আমাদের জনগনের সংগ্রামকে একটা পেটি বুর্জোয়া দৃষ্টিকোন থেকে ব্যক্ত করলো যা একটা সমরবাদী লাইন অনুসরণ করে এবং পার্টিকে অগ্রাহ্য করে। যদিও কৃষকদের উত্থানে অন্তর্হিত হয়, এই আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামের দিকটার সম্ভাব্যতা প্রদর্শন করলো যদি পার্টির নেতৃত্বের অধীনে একটা ন্যায্য ও সঠিক লাইন থাকে। এই কারণে এক সম্ভাব্য ফ্রন্টে এমআইআর ও ইএলএন [জাতীয় মুক্তি বাহিনী-ইং অনুবাদক]-এর লেজুরবৃত্তি করতে পার্টিকে ভেঙে দেওয়ার বিরোধিতা করেন সভাপতি গনসালো। বর্ধিত রাজনৈতিক ব্যুরোর সেপ্টেম্বর ১৯৬৭-এর সভায় তিনি এক রণনৈতিক পরিকল্পনার রূপরেখা দেন যাতে এক ঝাঁক পদক্ষেপ ছিল যাকে কেন্দ্রিয় কমিটিকে গ্রহন করতে হলো তিন হাতিয়ারের বিনির্মাণের জন্য, বাহিনী গঠণের কাজকে প্রধান করণীয় হিসেবে নিয়ে যাতে ১৯৬৫-এর পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে ঐকমত্য হয়েছিল। এটা ঘটে এক উপদলীয় সংগ্রামের মধ্যে যেখানে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্যভাবে “প্যাট্রিয়া রোখা”র অংশ এবং পারদেসের ডান বিলোপবাদ পার্টির নেতৃত্বের জন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। পারদেস বড় বুর্জোয়াদের একটা উপদলের লেজুরবৃত্তির রণকৌশল পুনমঞ্চস্থ করতে চায়, যেখানে “প্যাট্রিয়া রোখা” ডান সুবিধাবাদে তলিয়ে যাওয়ার দিকে ধাবিত হয়।
“গণযুদ্ধের জন্য পার্টিকে পুনর্গঠণ করুন”-এর দ্বিতীয় রাজনৈতিক রণনীতির পর্যায়কালে সভাপতি গনসালো রূপরেখা দেন পার্টির মধ্যকার সংশোধনবাদের, এবং পার্টি ঐক্যের ভিত্তিতে পার্টির পুনর্গঠণ, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারা, মারিয়েতেগুইর চিন্তাধারা এবং সাধারন রাজনৈতিক লাইনের প্রয়োজনীয়তা তলে ধরেন। এই মতাবস্থানসমূহ উপরেল্লিখিত দলগুলোর দ্বারা বিরোধিতা প্রাপ্ত হয়। পারদেস কর্তৃক দুই লাইনের সংগ্রামের ভ্রান্ত পরিচালনা পার্টিকে ভাঙতে যাচ্ছে। সভাপতি গনসালো পার্টিকে পুনর্গঠণের প্রয়োজনীয়তা এবং একে বাস্তবায়নের জন্য সংশোধনবাদকে ঝেটিয়ে বিদেয় করার জন্য এক আভ্যন্তরীন সংগ্রাম চালানোর প্রয়োজন উপলব্ধি করেন যার প্রমাণ রয়েছে বান্দেরা রোখা [পিসিপির অফিশিয়াল পত্রিকা-ইং অনুবাদক] [লাল পতাকা-বাং অনুবাদক] তে তিনি যে সম্পাদকীয়গুলি লিখেছিলেন, ডিসেম্বর ১৯৬৭তে, “আভ্যন্তরীণ সংগ্রামকে গভীরে বিকশিত করুন”, এবং এপ্রিল ১৯৬৮তে “বিপ্লবী অনুশীলনে আভ্যন্তরীণ সংগ্রামকে গভীর ও তীব্রতর করুন।” তিনি গণযুদ্ধে বিপ্লবী সহিংসতা উতসারণে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের পথের জন্য, এভাবে পার্টি কর্তৃক দাবীকৃত প্রধান কাজ সম্পন্ন করেঃ বিপ্লবী বাহিনী নির্মাণ। তিনি প্রস্তাব করেন যে এই উদ্যোগে অপরিহার্য ভিত্তি হচ্ছে বিপ্লবী কৃষকদের মধ্যে কাজের বিকাশ অর্থাত কৃষক জনগণের মধ্যে ভাল কাজ ছাড়া, অর্থাত মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারা কর্তৃক পরিচালিত ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে কাজ ছাড়া না কোন বাহিনী গড়ে ওঠতে পারে না গণযুদ্ধ। পরবর্তীতে তিনি প্রস্তাব করেন যে পার্টিকে শুধু যে মারিয়েতেগুইর চিন্তাধারার অব্যাহত প্রযোজ্যতাকেই পুনগ্রহণ করতে হবে তাই নয়, বরং অবশ্যই একে বিকশিত করতে হবে। তিনি মে ১৯৬৯-এ পার্টির কৃষি কর্মসুচি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২-এ আয়াকুচোর আঞ্চলিক কমিটির রণনৈতিক পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠিত হয়। দক্ষিণপন্থী বিলোপবাদ পরাজিত হয় এবং পার্টিতে দুটি অংশ (দল) বজায় থাকেঃ লাল দল মৌলিকভাবে আয়াকুচোতে সভাপতি গনসালোর নেতৃত্বে এবং প্রধানভাবে লিমায় কর্মরত “বলশেভিক” দল। দ্বিতীয়টি এক বাম বিলোপবাদী লাইন বিকশিত করে, সংশোধনবাদের এক রূপ যা পার্টিকে জনগন থেকে বি্িচ্ছন্ন করে। তাদের ধারনা ছিল ফ্যাসিবাদকে লড়া যাবেনা, একটা সঠিক লাইনই যথেষ্ট। তাদের একটা সামরিক লাইন ছিল যা ছিল গণযুদ্ধের বিরোধি। এরা ১৯৭৫-এ ধ্বংস হয় এবং এদের নেতারা পালিয়ে যায়।
সশস্ত্র সংগ্রাম সূচনা করতে “পুনর্গঠন সম্পূর্ণ করুন এবং ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করুন”-এর তৃতীয় রাজনৈতিক রণনীতির সময়কালে সমস্যাটি ছিল পার্টির পুনর্গঠণ শেষ করা, একে সম্পূর্ণ বিবেচনা করা, এবং সশস্ত্র সংগ্রাম সূচিত করতে ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করা। এপ্রিল ১৯৭৭-এর ৭ম পুর্ণাঙ্গ অধিবেশনে এটা সমাধা হয় যা সমগ্র পার্টি “সশস্ত্র সংগ্রামকে সেবা করতে বিনির্মাণ”-এর শ্লোগানের অধীনে কাজ করে, ডান সুবিধাবাদী লাইন (আরওএল)-এর বীজের বিরুদ্ধে সংগ্রাম যা মনে করে ভ্যালেস্কো [১৯৬৮-৭২-এর সামরিক শাসক-ইং অনুবাদক] কৃষি সংস্কার সাধন করেছে, কৃষকদের পেরুর কৃষক ফেডারেশনের সাথে যুক্তভাবে সংগঠিত করতে হবে, গণযুদ্ধকে “জনগণের গভীরতম দাবী”র জন্য পরিচালনা করতে হবে, ভুমি ও ক্ষমতার প্রশ্ন ভুলে গিয়ে। শহরে তারা “শ্রমিকবাদ” গড়ে তোলে, শ্রমিক ইউনিয়নগুলি [Gremialismo] তে শ্রেনীকে কে্িন্দ্রভূত করে এবং শ্রেণীর নেতৃত্বকারী ভুমিকা পালনকে অস্বীকার করে। এসব মতাবস্থানকে চুর্ণ করে সভাপতি গনসালো জুন, ১৯৭৭-এ “বিনির্মাণের জাতীয় পরিকল্পনা” পরিচালনা করলেন; ডজন ডজন কেডারদের গ্রামে পাঠানো হলো গণযুদ্ধের রণনৈতিক প্রয়োজনের স্বার্থে এবং আঞ্চলিক কমিটিসমুহ গড়তে ভবিষ্যতে ঘাঁটি এলাকাকে হিসেবে নিয়ে। জুলাই, ১৯৭৮-এর ৮ম পুর্ণাঙ্গ অধিবেশনে “সশস্ত্র সংগ্রামের রূপরেখা” প্রতিষ্ঠিত হলো। সারে, এটা রূপরেখা দিল যে পেরুতে গণযুদ্ধকে হতে হবে গ্রাম ও শহরে এক ঐক্যবদ্ধ সমগ্র যেখানে গ্রামাঞ্চল হবে সশস্ত্র এ্যাকশনসমূহের প্রধান মঞ্চ গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের পথ অনুসরণ করে। অধিকন্তু, দেশের ঐতিহাসিক সামাজিক প্রক্রিয়াকে একে অবশ্যই হিসেবে নিতে হবে, বিশেষত সামরিক দিককে, ইতিহাসে সিয়েররার গুরুত্ব এবং আমাদের ইতিহাসে প্রধানত দেশের কেন্দ্রিয় ও দক্ষিণ অংশ, রাজধানীর গুরুত্ব এবং লাতিন আমেরিকা বিশেষত দক্ষিন আমেরিকার প্রেক্ষাপটে পেরুর এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা এব্ং আন্তর্জাতিক ও বিশ্ব বিপ্লবের প্রেক্ষিতে। সমগ্র পার্টিকে সাধারন পুনর্গঠণে নিয়োযিত করা হলো প্রধান ধরণের সংগ্রাম ও সংগঠণ বিকশিত করতে গ্রামাঞ্চলকে কেন্দ্র করে। এভাবে, বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের বিনির্মাণের ভিত্তি স্থাপন করা হলো।
সংশ্লেষণে, পুনর্গঠণের সমগ্র প্রক্রিয়া নতুন ধরণের এক পার্টিতে আমাদের চালিত করে যে গণযুদ্ধকে শুরু করতে ও দেশব্যাপী ক্ষমতা দখল না হওয়া পর্যন্ত তাকে নেতৃত্ব করতে প্রস্তুত। এই প্রক্রিয়ায় ঐতিহাসিক বাহিনী (কনটিনজেন্ট) কে গড়ে তোলা হলো যে সর্বহারার মতাদর্শসমেত সভাপতি গনসালোর নেতৃত্বে অধীনে গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলে প্রস্তুত হয়েছিল।
তৃতিয় মুহুর্ত। (১৯৮০ থেকে বর্তমান পর্যন্ত) পার্টি গণযুদ্ধকে নেতৃত্ব দিতে শুরু করলো। “পথের প্রয়োগ ও বিকাশ” সহকারে এর সামরিক লাইন গড়ে ওঠলো। এই তৃতিয় মুহুর্তের চার মাইলফলক রয়েছেঃ
১. সংজ্ঞা;
২. প্রস্তুতি;
৩. সূচনা; এবং
৪. গেরিলা যুদ্ধের বিকাশ
১) সংজ্ঞা। সারে পার্টি পেরুতে গণযুদ্ধ সূচনার ঐতিহাসিক ও সীমাতিক্রমকারী ঐকমত্য অর্জন করে, যা জুন, ১৯৭৯-এ ৯ম বর্ধিত প্লেনামে গৃহিত হয়েছিল। এই ঐকমত্য তিনটা তীব্র সংগ্রামের মধ্যে অর্জিত হয়েছিল। প্রথমটা ডান সুবিধাবাদী লাইনের বিরুদ্ধে যা সশস্ত্র সংগ্রাম শুরুর বিরোধিতা করেছিল বিপ্লবী পরিস্থিতিকে অস্বীকার করে এর অনস্তিত্বশীলতা ঘোষণা করে এবং বলে যে “স্থিতিশীলতা”র পরিস্থিতি বজায় রয়েছে। এই লাইনের বহিষ্কারের পর পার্টি এক নয়া স্তর ও লক্ষ্যে একমত হয়। দ্বিতিয় সংগ্রাম ছিল এক নতুন ডানপন্থী লাইনের বিরুদ্ধে যা মনে করেছিল যে সশস্ত্র সংগ্রাম অসম্ভব এবং তা এক “স্বপ্ন” আর এই ঐকমত্যের কোন প্রয়োজন ছিলনা কারন সেটা ছিল একটা নীতিগত প্রশ্ন। তৃতিয় সংগ্রামটি ছিল বামের মধ্যে ভিন্নতাসমূহের মধ্য [পিসিপির মধ্যে বাম লাইন¬ইং অনুবাদক] যাতে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয় কীভাবে গনযুদ্ধ গড়ে তোলা যায়। এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে সর্বহারা মতাবস্থান হচ্ছে সভাপতি গনসালোর এবং তাই তাকেই প্রয়োগ করতে হবে; সমগ্র পার্টি সভাপতি গনসালোর নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
বাহিনী সংগঠন প্রশ্নে সামরিক কেডার, এ্যাকশনের জন্য বিশেষ গ্রুপ গড়ে তোলায় এবং সৈনিকদের দিকে নিশানা করে প্রতিক্রিয়াশিল বাহিনীকে দাবানোর ঐকমত্য হয়। রণনীতি ও রণকৌশলে এ কাঠামোগত ব্যবস্থা পুনবিবৃত হয়।
২) প্রস্তুতি। এই মাইলফলক ঘটনায়, পার্টির কর্মসুচি দেওয়া হয় পেরুভিয়ান বিপ্লবের সাধারন রাজনৈতিক লাইন ও পার্টি নীতিমালাসমেত। রাজনৈতিক রণনীতি, বিপ্লবী সহিংসতা, গণযুদ্ধ ও পার্টি, সৈন্যবাহিনী ও যুক্তফ্রন্ট সম্পর্কিত প্রশ্নে সমস্যা সমাধান করা হয়। নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়ঃ “প্রথম কোম্পানীকে কাজে গড়ে তুলুন! সহিংসতা সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা ও বিকাশকে শোভিত করুক; প্রথম কোম্পানীকে কাজে গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে আমরা পার্টি ও আমাদের জনগণের ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করতে নেতৃত্ব দিয়ে সূচনা করি ও আমাদের রক্ত দান করি। পেরু, ডিসেম্বর ৩, ১৯৭৯।”
পার্টি সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নেয় দুই সমস্যাকে মোকাবেলা করেঃ ১) রাজনৈতিক রণনীতির সমস্যা যা গণযুদ্ধকে সমগ্রত ও স্বল্পমেয়াদে উভয়ত সার ও লক্ষ্য দান করে, সেইসাথে সেই পথ নির্দেশ করে যা গণযুদ্ধের থাকতে হবে, সামরিক পরিকল্পনাসমূহ, তিন হাতিয়ারের বিনির্মাণ এবং নয়া ক্ষমতার সাথে তাদের সম্পর্ক; ২) সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা। এই নির্ধারক ও জরুরী সমস্যা সভাপতি গনসালোর সর্বাধিক বিশেষ মনোযোগ লাভ করে যিনি প্রতিষ্ঠা করেন “সশস্ত্র সংগ্রাম সূচনা করুন!” শ্লোগানের দ্বারা পরিচালিত “সূচনার পরিকল্পনা” যা ছিল প্রধান রাজনীতির মর্মবস্তু যাকে সামরিকভাবে বিকশিত করতে হয়েছে। এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হচ্ছেঃ
প্রথম, রাজনৈতিক করণীয়সমূহ যাকে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনার সময়কালে সম্পন্ন করতে হয়েছে, নির্বাচন বর্জন, ভুমির জন্য সশস্ত্র সংগ্রামকে সামরিকভাবে বিকশিত করা এবং নয়া জয় বিশেষত নয়া ক্ষমতার জন্য ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করা,
দ্বিতীয়, সংগ্রামের রূপঃ গেরিলা যুদ্ধ, সাবোটাজ, প্রচার, সশস্ত্র বিক্ষোভ এবং বাছাইকৃত খতম;
তৃতীয়, সাংগঠনিক ও সামরিক রূপঃ আধুনিক অস্ত্রসহ অথবা ব্যতিত সশস্ত্র বাহিনী সংস্থানসমূহ;
চতুর্থত, একটা কালপঞ্জী, সূচনার তারিখ ও পরিকল্পনার সময়কাল, এবং বিশেষ বিশেষ তারিখে সমন্বিত এ্যাকশন।
বিপ্লবী পরিস্থিতিকে অস্বীকার করছিল যে ডান মতাবস্থানসমূহ তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সহযোগে সূচনা শুরু হলো, এবং তারা আরো বলছিল যে পার্টি প্রস্তুত নয় অথবা জনগণ আমাদের সমর্থন দেবেনা। এই মতসমূহের নেতারা বিচ্ছিন্ন ও ধ্বংস হয়ে যায়।
৩) সূচনা। মে ১৭, ১৯৮০, পেরুর গণযুদ্ধ শুরু হল। এটা “সীমাতিক্রমী তাতপর্যপুর্ণ এক যুদ্ধ আহ্বানকারী রাজনৈতিক আঘাত যা বিদ্রোহী লাল পতাকা এবং কাস্তে হাতুড়ি উড়িয়ে ঘোষণা করেঃ ‘বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত’ এবং ‘বন্দুকের নল থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা বেড়িয়ে আসে।’ এটা জনগণকে বিশেষত গরীব কৃষককুলকে টেনে নিয়ে আসে অস্ত্র হাতে উঠে দাঁড়াতে, বহ্নুতসব জ্বালিয়ে দিতে এবং আন্দিসকে কাঁপিয়ে দিতে, আমাদের পার্বত্য ভৌগলিকতার ক্ষেত্রসমূহ ও লুক্কায়িত চিত্রে নয়া ইতিহাস লিখতে, নিপীড়নের শাসনের পঁচা দেওয়ালকে গুড়িয়ে দিতে, পর্বত শিখর জয় করতে, নতুন ভোরের দ্বার খুলে দিতে বন্দুক হাতে স্বর্গমর্ত্য কাঁপিয়ে দিতে। সূচনা ছিল ভদ্র, একেবারে প্রায় আধুনিক অস্ত্র ছাড়া। এটা লড়া হলো, এটা অগ্রসর হলো, ছোট থেকে বড় এটা গড়ে ওঠলো এবং দুর্বল বস্তুগত ও প্রারম্ভিক আগুণ ভয়ংকর অগ্নিশিখায় পরিণত হল, আর শক্তিমত্ত গর্জন বেড়ে ওঠলো বিপ্লব বপন করে আগের চেয়ে অধিক থেকে অধিকতর বেগবর্ধক গণযুদ্ধে বিস্ফোরিত হয়ে।”
তৃতীয় মাইলফলক ১৯৮০র মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল যা কীভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম সূচনা করা যায় শান্তির কাল থেকে যুদ্ধের কালে যেতে সেপ্রশ্ন সমাধা করে। এই প্রসঙ্গে, এ্যাকশনের মাধ্যমে পার্টির সামরিকীকরণ ও সূচনার পাণ্ডিত্যপুর্ণ পরিকল্পনা ছিল চাবিকাঠি। সেটা ছিল কীভাবে নতুন জন্ম নেয়ঃ সংগ্রামের প্রধান রূপ সশস্ত্র সংগ্রাম এবং প্রধান ধরণের সংগঠণ বাহিনী ও স্কোয়াড। মাঠে সবচেয়ে বিখ্যাত এ্যাকশনগুলো ছিল আয়রাবাম্বা ও আয়সারকা [আয়াকুচোর এলাকা-ইং অনুবাদক] এর এ্যাকশনসমূহ এবং শহরে সান মার্টিন [লিমার এক জেলা¬-ইং অনুবাদক]-এর পৌর ভবনে অগ্নিসংযোগ। চুসচির জনগণ কর্তৃক নির্বাচন বয়কট ছিল সেই এ্যাকশন যা গণযুদ্ধ সূচনা করে। এই পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হলো ডান সুবিধাবাদীদের পরাজিত করে যারা বলছিল যে পরিকল্পনা “হোজাবাদী” এবং এ্যাকশনসমূহ শহরে কেন্দ্রিভূত। তাদের বক্তব্য বাহ্যিক চেহারাকে বাস্তবের সাথে গুলিয়ে ফেলে এবং সংগ্রামের সারকে বিকৃত করে যেহেতু প্রতিক্রিয়াশীল প্রচার শহরের সাবোটাজকে বৃহত শিরোনাম দেয় আর গ্রামাঞ্চলের এ্যাকশনসমূহকে সংকুচিত করে। গ্রামাঞ্চলকে এ্যাকশনের প্রধান মঞ্চ ও শহরাঞ্চলকে প্রয়োজনীয় পরিপূরক বানানো হচ্ছে পেরুর গণযুদ্ধের একটা বৈশিষ্ট্য।
৪) গেরিলা যুদ্ধের বিকাশ। এটা সম্পন্ন করা হয় তিনটি সামরিক পরিকল্পনার মাধ্যমে: গেরিলা যুদ্ধ চালনা পরিকল্পনা, ঘাঁটি জয় করা এবং ঘাঁটি বিকশিত করা।
গেরিলাযুদ্ধের চালনা সম্পর্কে। এটা একটা পরিকল্পনা দ্বারা সম্পন্ন করা হয় যা ১৯৮১র মে থেকে ১৯৮২র ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল। এবং এর পাইলট পর্যায় ছিল জানুয়ারি ১৯৮১। “ঘাঁটি এলাকা হিসেবে কার্যকর গেরিলা জোন সূচিত করুন” শ্লোগান পার্টি ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, সভাপতি গনসালোর পথনির্দেশক চিন্তাধারাকে প্রয়োগ করে এক মতাদর্শিক-রাজনৈতিক উলম্ফণ দান করে। সামরিক দিক থেকে তারা সারা দেশে গেরিলাযুদ্ধের সূচনা ঘটায় “অস্ত্র ও যুদ্ধের হাতিয়ার দখল করুন, গ্রামাঞ্চলকে সশস্ত্র এ্যাকশন দ্বারা আলোড়িত করুন এবং ঘাঁটি এলাকার দিকে এগিয়ে চলুন” কামনা করে। এই পরিকল্পনাসমূহ শেষেরটা সমেত আংশিকভাবে সম্পন্ন হয় যেখানে “এগিয়ে চলুন” ছিল পরবর্তী পরিকল্পনার সংযোগ। গ্যামোনেল [আধাসামন্ততান্ত্রিক ভুস্বামী-ইং অনুবাদক] দের দিকে বর্শাফলক তাক করে উতপাদনের সামন্তবাদী সম্পর্ক গুড়িয়ে দিয়ে এবং যৌথ পুলিশী অপারেশনসমূহের বিরুদ্ধে লড়াই করে এটা অগ্রসর হয়। বহু সংখ্যক পুলিশ পোস্টের ওপর আক্রমণ চালালো হয় এবং গ্যামোনেলদের ওপর বাছাইকৃত খতম পরিচালিত হয় এক বিরাট ব্যাপক কৃষক সমাবেশিত করে যারা স্বেচ্ছায় মিলিশিয়ায় যোগ দেয় প্রতিক্রয়াশিলদের জন্য এক ক্ষমতাশুন্যতা সৃষ্টি করে। গনকমিটিসমূহ উদ্ভূত হলো যারা বহুগুণে বৃদ্ধি পেল। তাদের আবির্ভাব ঘাঁটি এলাকাসমূহকে মূর্ত করে।
আমাদেরকে সেই এ্যাকশনসমূহকে গুরুত্ব দিতে হবে যেমন, আয়াকুচো শহর জেল আক্রমণ যেখানে প্রথম কোম্পানী প্রথমবারের মতো কাজ করলো, শহর দখল করলো এবং দশ বন্দীকে মুক্ত করলো; ভিলকাশুয়মান, টোটোস ও সান জোসে সিসের পুলিশ পোস্টের ওপর আক্রমন; পাওয়ার গ্রীড ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সাবোটাজ আক্রমণ; অন্যান্যের মধ্যে পিংকো, তক্্রামা, আল্লাপাচাকা, হুয়াল্লাপম্পায় আক্রমণ। শহরে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ওপর সাবোটাজ হয়েছে এবং সেইসাথে ধর্মঘটের প্রতি সশস্ত্র ততপরতার মাধ্যমে সমর্থন জানানো হয়েছে।
এখানে যে ডানপন্থী মতসমূহকে লড়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ব্যক্তিগত ক্ষমতা, রাজভক্তি এবং এ্যাকশন থেকে পশ্চাদপসারণ। গেরিলাযুদ্ধের চালনা আমাদের সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ বিজয় দিয়েছেঃ নয়া ক্ষমতা, গোপন গনকমিটিসমূহ যা হচ্ছে ঘাঁটি এলাকাসমূহের মেরুদণ্ড।
গণযুদ্ধের অগ্রসরমাণতার মুখোমুখি হয়ে বেলেন্দের প্রতিক্রিয়াশীল সরকার শুরু থেকেই বাহিনী সদস্য, যোদ্ধা ও জনগণের ওপর নিপীড়ন, অত্যাচার ও জেলজুলুম ও হত্যা সংঘটিত করা শুরু করলো। তারা পরিচালনা করলো স্বতন্ত্র পুলিশ অপারেশন এবং “সিনশিস” নামক প্রতিবিপ্লবী দল সহযোগে পুলিশ বাহিনীর সাথে যৌথভাবে সিভিল গার্ড, তদন্তকারী পুলিশ দল নিয়ে। তারা ডিএল নং ০৪৬ [ডিক্রী আইন-ইং অনুবাদক] ঘোষণা করলো যা হচ্ছে প্রকৃতই একটা সন্ত্রাসবাদী আইন যা বুর্জোয়া অপরাধ আইনের একেবারে প্রাথমিক নীতিসমূহও লঙ্ঘন করে। কিন্তু তাদের সকল পরিকল্পনার ফল হলো সর্বোচ্চ নিশ্চিত ব্যর্থতা, জনগণ তাদের আগ্রাসন প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধ করলো। নয়া ক্ষমতার আবির্ভাব বেলেন্দে সরকারের নীরবতাকে ভেঙে দিল যা প্রথম থেকেই সমস্যাকে চাপা দিয়েছিল তাদের ভুয়া গণতান্ত্রিক আবরনকে বজায় রাখতে এবং ইয়াংকি সাম্রাজ্যবাদের নিরাপত্তার অধীনে দুই শোষক বড় বুর্জোয়া ও ভুস্বামীদের শ্রেণীপ্রয়োজনকে শক্তিশালি করলো। বেলেন্দে তারপর রাষ্টের মেরুদণ্ড বাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী)কে ক্ষমতা দিল পুলিশ বাহিনীর সহযোগিতায় সরকারী শাসন পুনপ্রতিষ্ঠা করতে ডিসেম্বর, ১৯৮২ থেকে আজ (১৯৮৮) পর্যন্ত আয়াকুচো ও আপুরিমাক অঞ্চলে রাজনৈতিক সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীনে জরুরী অবস্থা জারী করলো।
গণযুদ্ধের বিকাশ এবং উলম্ফণপ্রাপ্ত প্রতিবিপ্লবী সাড়ার প্রেক্ষিতে সভাপতি গনসালো ঘাঁটি জয় করার বিরাট পরিকল্পনার রূপরেখা দিলেন জানুয়ারী থেকে মার্চ ১৯৮৩তে বর্ধিত কেন্দ্রিয় কমিটিতে যেখানে চারটি রাজনৈতিক করণীয় মূর্ত করা হয়ঃ পার্টির সাধারণ পুনর্গঠণ, গণ গেরিলা বাহিনীর সৃষ্টি এবং জনগণের বিপ্লবী রক্ষী ফ্রন্ট এবং গ্রামাঞ্চলে গণকমিটি হিসেবে এবং শহরে জনগণের বিপ্লবী রক্ষী আন্দোলন হিসেবে তাদের সংহতকরণ এবং ঘাঁটি জয় করার সামরিক পরিকল্পা। রাজনৈতিকভাবে নয়া রাষ্ট্র ও পুরোনো রাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বন্দ্ব “রক্ষা, বিকাশ ও তৈরী করুন” ঘাঁটি এলাকা শ্লোগানের অধীনে অগ্রসর হচ্ছিল। এক ক্ষুরধার সংঘাত গড়ে ওঠলো যাতে প্রতিক্রিয়াশীলরা পুরোনো ক্ষমতা পুনপ্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম করে এবং বিপ্লব নয়াক্ষমতা পাল্টা প্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম করে। একেই আমরা বলি ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সাল জুরে পুনপ্রতিষ্ঠা ও পাল্টাপুনপ্রতিষ্ঠার মধ্যে সংগ্রাম। জোনসমূহের জন্য সামরিক লাইন মূর্ত করা হয় শত্রুর দুর্বল পয়েন্টে ঘেরাও ও আঘাত হানাকে প্রয়োগ করে। দুটি সফল অভিযান পরিচালনা করা হয় যাতে নয়া ক্ষমতা তার প্রথম অগ্নিপরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে ইস্পাত কঠিণ হয়; পার্টি গড়ে ওঠে এবং গণগেরিলা বাহিনী বিকশিত হয়।
প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনী প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধ পরিচালনা করলো তাদের ইয়াঙ্কী (মার্কিন) সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের ধারণা অনুসরন করে, যেসব তত্ত্ব তারা প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিষ্ঠা করেছে প্রধানত ভিয়েতনাম ও নির্দিষ্টভাবে লাতিন আমেরিকার সশস্ত্র সংগ্রামের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে, বিশেষত মধ্য আমেরিকা থেকে সংগ্রহ করেছে। ইসরায়েলের “সন্ত্রাসবিরোধি”অভিজ্ঞতার সাথে আর্জেন্টিনায় তার সাথীরা সেইসাথে ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানী আর তাইওয়ান ও স্পেন প্রভৃতিতে তার পরামর্শকরা মিলে এটাই হচ্ছে তার মূল তাত্তি^ক উতস। ১৯৬৫তে গেরিলাবিরোধি তাদের কয়েক মাসের সংগ্রামের অভিজ্ঞতা এবং লা কনভেনশন[কাসকোর এক প্রদেশ যেখানে ১৯৬৫তে গেরিলা সংগ্রাম ছিল]-এ আরো সীমিত লড়ার অভিজ্ঞতার সাথে এটা যুক্ত হয়। অপারেশনসমূহ সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের নির্দেশনার অধিনে পরিচালিত হয় যা কাজ করে জাতীয় প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের ইচ্ছায় যার শীর্ষে আছে প্রেসিডেন্ট, আজকে এলান গার্সিয়া, যে পুর্ণ দায়িত্ব বহন করে। এই প্রতিবিপ্লবী রণনীতিকে অনেকবার পরাজিত করা হয়েছে। এটা গণযুদ্ধ কর্তৃক পরিপুর্ণভাবে ও সমগ্রভাবে চুর্ণ ও পরাজিত হয়েছে, বারংবার দুনিয়াকে সাম্রাজ্যবাদের ওপর সর্বহারার রণনীতির শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে দিয়ে।
গনহত্যাকারী সরকারের প্রয়োগকৃত নির্দিষ্ট কর্মনীতিগুলির একটা সারসংক্ষেপ হচ্ছেঃ জনগণকে জনগণের বিরুদ্ধে লাগানো; গণহত্যা, গণকবর; সমগ্র গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। সবমিলিয়ে তারা গ্রামাঞ্চলে এক শ্বেত সন্ত্রাস কায়েম করে, বিশেষত আয়াকুচো, হুয়ানকাভেলিকা এবং আপুরিমাকে। তাদের গণহত্যার ফলাফল হচ্ছে আট হাজার সাত শত পেরুভিয়ানের মৃত্যু। এর মধ্যে চার হাজার সাত শত হচ্ছে দরিদ্রতম ও সর্বাধিক নিপীড়িত, প্রধানত কৃষক, এবং শহরতলী ও শহরের বস্তিগুলোতে চার হাজার নিখোঁজ হন। এই গণহত্যা তারা যা ফল চেয়েছিল তা সৃষ্টি করেনি; এটা গণযুদ্ধকে চুর্ণ করেনি। বিপরীতে, “গণযুদ্ধ অধিকতর শক্তিশালি ও বিকশিত হয় শক্তিমত্ত আঘাত হেনে”, যার প্রমান চেয়ারম্যান মাও শিক্ষা দিয়েছেন যে নিপীড়ণ বিপ্লবকে জাগরিত ও পুষ্ট করে।
ঘাঁটি জয় করার পরিকল্পনার মধ্যে “মহান উলম্ফণের পরিকল্পনা” হচ্ছে “দুই প্রজাতন্ত্র, দুই পথ, দুই অক্ষ”-এর রাজনৈতিক রণনীতি এবং “গেরিলা যুদ্ধকে সাধারণীকরণ করুন”-এর সামরিক রণনীতির প্রতি নিবেদিত। “আমাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রের দ্বার উন্মোচন করুন”, “১৯৮৫র সাধারন নির্বাচনের বিরুদ্ধে, তাদের চুর্ণ বিচুর্ণ করুন এবং যেখানে সম্ভব প্রতিহত করুন”, “নয়া আপ্রিস্টা সরকারের ক্ষমতারোহনকে বিরোধিতা করুন”, এবং “ফ্যাসিস্ট ও কর্পোরেটিভিস্ট আপ্রিস্টা প্রতিনিধি সভাকে দাবিয়ে দিন” এসব রাজিৈনতক শ্লোগানের অধীনে চারটি সফল অভিযান পরিচালিত হয়। গণযুদ্ধ বিকশিত হয় আয়াকুচো, হুয়ানকাভেলিকা ও আপুরিমাকে এবং পাসকো, হুয়ানুকো ও সান মার্টিনে সম্প্রসাতি হয় উত্তরপশ্চিমে ইকুয়েডর সীমান্তে কাজমারকা ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত এবং দক্ষিণপুবে বলিভিয়ার সীমান্তে পুনো পর্যন্ত এলাকা নিয়ে, শহরগুলিতে আঘাত হেনে ও কাঁপিয়ে দিয়ে বিশেষত রাজধানীকে। যা হচ্ছে পেরুভিয়ান সমাজের ঐতিহাসিক অক্ষ এবং এর সর্বাধিক দরিদ্রতম অংশ সেই সিয়েররায় মৌলিকভাবে গণযুদ্ধ সংঘটিত হয় একে বিপ্লবী যুদ্ধের মহামঞ্চে রূপান্তরিত করে। এটা জঙ্গলের ধার থেকে উপকুলের উপদ্বীপ পর্যন্ত অগ্রসর হয়। এভাবে গণযুদ্ধ কোন একটা একক অঞ্চলে ধারণ করা হয়নি বরং অসম হলেও কয়েকটি অঞ্চলে সমন্বিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল প্রধান এলাকা নিয়ে যা প্রয়োজনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সকল ততপরতাই একটা রণনৈতিকভাবে কেন্দ্রিভূত ও রণকৌশলগতভাবে বিকেন্দ্রিভূত পরিকল্পনায় ধারণ করা হয়েছিল।
সর্বাধিক বিখ্যাত এ্যাকশনগুলোর মধ্যে রয়েছে আয়াকুচো ডিপার্টমেন্টে গেরিলাবিরোধি ঘাঁটিতে আঘাত; স্থানীয় মাইক্রো রিজিয়নগুলোতে প্রতিবিপ্লবী শিবির [নিউক্লিয়ামেনতিয়স] ধ্বংস এবং স্থাপনাগুলোকে গুড়িয়ে দেওয়া; হুয়ানকাভেলিকায় বৈদ্যুতিক গ্রীড উড়িয়ে দেওয়া এবং হাইওয়ে সিস্টেম ধ্বংস করা; সিন্তো ও ভিছিঞ্চা কৃষি সমবায়কে ধ্বংস করা গবাদি পশুর পুনবন্টন ও ভুমি দখল সমেত; আপুরিমাকে বিন্দু ভাঙা। কেন্দ্রিয় অঞ্চলে এ্যামবুশ করা হয় যেমন মিচিভিলকায়, সেন্ত্রোমিন[রাষ্ট্রীয় খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন-ইং অনুবাদক]-এর সাবস্টেশনে সাবোটাজ, এসএআইএস [রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সমবায়] টুপাক আমারুর ওপর সাবোটাজ, উত্তরে “ভুমি দখল করো” শ্লোগানের অধীনে ভুমি দখল যা ১ লক্ষ ৬০ হাজার কৃষককে সমাবেশিত করেছিল এবং ৩ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর জমি যার অধিকাংশই চাষযোগ্য এবং ১২ হাজার গবাদিপশু দখল করেছিল; “নরপেরুয়ানো” তেলের পাইপলাইনে সাবোটাজ, এবং ত্রুজিল্ল শহরে আপরার সদরদপ্তরে সাবোটাজ। দক্ষিণে ভুমি দখল দশ হাজারেরও বেশি কৃষককে সমাবেশিত করে; হুয়াল্লাগায় আউকায়াকু পুলিশ পোস্টের ওপর হামলা, বৃহত কোম্পানী তিয়ালারিার ধ্বংস, রিপাবলিকান গার্ডের ওপর এ্যামবুশ; মেট্রোপলিটন লিমায় রুশ সামাজিক সাম্রাজ্যবাদীদের দূতাবাসে সাবোটাজ, আপরা পার্টির ডজনখানেক স্থানীয় অফিসে, ব্যাংক ও কারখানায় সাবোটাজ, এসবই ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬তে সামরিক নিয়ন্ত্রিত জরুরী অবস্থার দিকে চালিত করে।
এলান গার্সিয়া তার পূর্বসূরিদের প্রতিবিপ্লবী কর্মনীতি অব্যাহত রাখে গণহত্যার মাধ্যমে গণযুদ্ধকে চুর্ণ করতে সচেষ্ট হয়, যেমন, গ্রামাঞ্চলে আকোমারকা, লোচ্চাপম্পা, উমারু ও বেয্যাভিস্টার গণহত্যা। প্রজাতন্ত্রের রাজধানীতে যুদ্ধবন্দীদের বিরুদ্ধে দুটি গণহত্যা সংঘটিত করে, প্রথমটি ৪ঠা অক্টোবর, ১৯৮৫তে যেখানে ৩০ জঙ্গী ও লড়াকুকে লুড়িগাঞ্চোর আলোকজ্জ্বল পরিখা [একটা জেলখানার কথা বলা হচ্ছে-ইং অনুবাদক]য় হত্যা করা হয়। তারা ভাঙতে পারেনি যুদ্ধবন্দীদের বীরত্ববঞ্জক প্রতিরোধকে যারা তাদের রক্ত দিয়ে যুদ্ধবন্দীদের দিবস গঠণ করেন জুন ১৯, ১৯৮৬ তে, চরম ঘৃণ্য ও নিন্দার্হ পুর্বপরিকল্পিত অপরাধ সংঘটিত করা হলো গণযুদ্ধকে চুর্ণ করতে এবং যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করতে যারা এক লোমহর্ষক প্রতিরোধের মাধ্যমে গণহত্যাকারী আপ্রিস্টা সরকারের সর্বাধিক রাজনৈতিক, সামরিক ও নৈতিক অধঃপতন ডেকে আনলো। গণহত্যার রক্তে চিরকাল স্নানরত অবস্থায় কর্পোরেটিভিস্ট ফ্যাসিবাদ গড়ে তোলার জন্য গার্সিয়া ও আাপ্রিস্টা পার্টি বড় বুর্জোয়াদের আমলাতান্ত্রিক উপদলকে সেবা করার ডিলেমা নিয়ে এল ও সংজ্ঞায়িত করলো। এভাবে এল ফ্রন্টন, লুরিগাঞ্চো ও কাল্লাওয়ের আলোকোজ্জ্বল পরিখায় ২৫০ জন মৃতের স্মৃতিস্তম্ভের উপাখ্যান নিয়ে বীরত্বের দিবস গড়ে ওঠলো।
আমরা বহুবিধ রূপে আবির্ভুত সুবিধাবাদ ও সংশোধনবাদকে উন্মোচন ও নিন্দা করিঃ রুশপন্থী, চীনপন্থী, ভ্রান্ত মারিয়েতেগুইপন্থী, যারা সকলে তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করেছে, প্রতিবিপ্লবের লেজুরবৃত্তি করেছে, গণযুদ্ধকে অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে লড়েছে এবং তাকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রিগান, পেরুভিয়ান ও দুনিয়ার প্রতিক্রিয়াশীলদের উক্তির পুনরুক্তি করে। তারা কখনোই তাদের দোষারোপকে প্রমাণ করার আশা করেনা এবং সরলভাবে বিশেষন আরোপ করে আর সহিংসতাকে নিন্দা করে তার “উতস যাই হোক না কেন”, জনগণকে সংসদীয়পন্থায় বেঁধে ফেলার লক্ষ্যে তাদের পুরোনো সংসদীয় ভন্ডামী অব্যাহত রাখে, প্রতিটি দিন তাদের পুরোনো শাসনকে আলিঙ্গন করে তাতে নিমজ্জিত হয় প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনী ও পুরোনো রাষ্ট্রের আতঙ্কে কাঁপে ও নতজানু হয়। আমরা ব্যারান্সেস লিঙ্গুয়ান ও এই ধারার অন্যদের তোষামোদী মনোভাব ও বিশ্বাসঘাতকতাকে নিন্দা জানাই।
১৯৮৩ থেকে ঘাঁটি জয় করার বিরাট পরিকল্পনার রাজনৈতিক রণনীতি অংশ ১ ও অংশ ২কে রক্ষা করা, বিকশিত করা ও নির্মাণ করার দুই অভিযানের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, এবং ডিসেম্বর ১৯৮৬ পর্যন্ত চার অভিযানসহযোগে মহান উলম্ফণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। এই পরিকল্পনাসমূহ আমাদেরকে দেখায় গণযুদ্ধের অগ্রগমন এবং তারা যাকিছু বলে তার বিপরীতে আমরা যে জনগণের সাথে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত, কারণ বাস্তব হচ্ছে অনস্বীকার্য। গণযুদ্ধ একটা এলাকা জয় করেছে যা সিয়েররা, অরণ্য ও উপকুল বরাবর সম্প্রসারিত হয়েছে প্রচণ্ডতায় ও শক্তিমত্ততায় এগিয়ে চলে এবং নতুনকে সৃষ্টি করে আর ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করে। গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের ভিত যে ঘাঁটি এলাকাসমূহ তা ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
ঘাঁটি বিকশিত করার বিরাট পরিকল্পনা। গণযুদ্ধে এর রয়েছে এক বিশেষ ভুমিকা যেহেতু গণযুদ্ধের সারবস্তু হচ্ছে ভিত্তি বিকশিত করা; তাই ঘাঁটি বিকশিত করার বিরাট পরিকল্পনার সাথে নয়া ক্ষমতার বিনির্মাণ ও তার বিকাশের সম্পর্ক রয়েছে, এর সাথে সেই প্রেক্ষিতের সম্পর্ক রয়েছে যা দেশব্যাপী ক্ষমতা জয় করার জন্য উন্মোচিত করা হয়েছে। বিশ্ববিপ্লবকে সেবা করে রাজনৈতিক রণনীতি হচ্ছে ঘাঁটি এলাকা বিকশিত করার জন্য এবং সামরিক রণনীতি হচ্ছে গণযুদ্ধকে বিকশিত করার জন্য, একটা পরিকল্পনা যা সম্পন্ন করা হয় একটা পাইলট পরিকল্পনা দ্বারা।
বিপ্লবের বিজয় এক শক্তিশালি প্রতিবিপ্লব জন্ম দেয় ও তাকে চুর্ণ করে। আমরা নির্ধারক বছরগুলিতে প্রবেশ করছি যাতে আপরা সরকার কোন রণনৈতিক পরিকল্পনা ছাড়া এগোচ্ছে; তারা “নয়া রণনীতি”র কথা বলে কিন্তু এমন কোন কিছুই নেই। যা বজায় আছে তা হচ্ছে আরো বৃহত্তর নিপীড়ণঃ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আইনের যা আমাদের জন্য ও সেইসাথে তাদের জন্য নতুন পরিস্থিতিতে নতুন নতুন গণহত্যার জন্ম দিতে সশস্ত্র বাহিনীসমূহের ততপরতাসমূহকে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালি করে। আমাদের জন্য, চলতি গণহত্যা নতুন পরিস্থিতিতে নিজেকে উপস্থিত করে। আমরা ১৯৮৩ ও ১৯৮৪র গণহত্যার মধ্যে দিয়ে গেছি যা বিরাট গণ প্রত্যাখ্যান ও বিপ্লবের শক্তিশালী হওয়া প্রদর্শন করে। প্রতিক্রিয়া কেবল গণহত্যাই প্রয়োগ করতে পারে, কিন্তু তা গণযুদ্ধকেই শক্তিশালি করবে। প্রাথমিক প্রত্যাহার অথবা আগুপিছু থাকতে পারে কিন্তু আমরা জয়ী হবো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারায়, আমাদের পাঁচ বিকাশের রাজনীতিতে, গণযুদ্ধের অপারেজয়তা এবং ইতিহাস রচনা করে যে জনগণ তাদের সমর্থনে নিজেদের টিকিয়ে রেখে, সর্বদাই কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ।
ঘাঁটি গড়ার নয়া বিরাট পরিকল্পনার যা আমাদেরকে মূর্ত পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা তুলে ধরে, তাতে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবেঃ
এমআরটিএ এবং সিআরপি [ক্ষণজন্মা গণবিপ্লবী কমান্ডো-ইং অনুবাদক]র মতো সশস্ত্র গ্রুপ উদ্ভূত হয়েছে। তাদেরকে আবার তুলে ধরা হয়েছে আর তাদের কোন সুনির্দিষ্ট মার্কসবাদী ধারণা নেই। তাই, তারা সাম্রাজ্যবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সেবায় এগিয়ে যায় এবং সেই ফ্যাসিস্ট কথোপকথনে যাতে তারা একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে।
আপরা ইতিমধ্যেই ফ্যাসিবাদ ও কর্পোরেটিভিসম বিকশিত করা শুরু করেছে। সে মারাত্মক ও বর্ধিত প্রতিকুলতা মোকাবেলা করছে যেমন, অন্য অধিক গুরুত্বপুর্ণ দ্বন্দ্বসমূহের মধ্যে তার মুতসুদ্দি বুর্জোয়াদের সাথে বর্ধিত ও সাংঘাতিক ঘোঁট পাঁকানো ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
শ্রেণীসংগ্রাম তীক্ষ্ণতর ও তীব্রতর হচ্ছে অধিক থেকে অধিকতর, জনগণ নিজেদের রক্ষা ও প্রতিরোধ শুরু করেছেন; যদি শহরাঞ্চলে সামাজিক বিস্ফোরণ ঘটে তা সাধারণভাবে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীলদের দ্বারা ব্যবহৃত হতে পারে তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের মারফত।
যে কোন সময় একটা কুদ্যেতা ঘটতে পারে। সেই গার্সিয়া পেরেজই স্বয়ং কুদ্যেতা ঘটাতে পারে তার নিজ রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে রক্ষা করতে।
এই প্রেক্ষিতে, প্রতিক্রিয়াশীলরা একটা আলেন্দে ধরণের সরকার নিয়েও খেলতে পারে আপ্রিস্টা বারান্তেস ও এই ধরণের কাউকে ব্যবহার করে; এই সম্ভাবনার মধ্যে ঐক্যবদ্ধ বামদের বদমাইশী ভুমিকা বিবেচ্য।
পেরুভিয়ান রাষ্ট্রের সীমান্ত সমস্যা রয়েছে যা যেকোন মুহুর্তে জ্বলে উঠতে পারে যেমনটা লাতিন আমেরিকান দেশগুলির অভিজ্ঞতা দেখায়। এই সমস্যাকে অবশ্যই গুরুত্বের সাথে তুলে ধরতে হবে।
ইয়াঙ্কি সৈন্যবাহিনী প্রেরন কেবল একটা সরল সম্ভাবনা নয় বরং ইতিমধ্যেই একটা বাস্তব সম্ভাবনা। তাদের উপস্থিতি অন্যান্য দেশে তাদের একইধরণের উপস্থিতির সাথে জড়িত বিশেষত সীমান্তে এবং একে ব্রাজিল কর্তৃক সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের পাসঙ্গিকতায় দেখতে হবে।
সাম্রজ্যাবাদী যুদ্ধ ও তাদের আগ্রাসন অব্যাহতভাবে বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একাধিপত্যের জন্য এক বিশ্বমাত্রায় ষড়যন্ত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি অব্যাহতভাবে চলছে।
ফলতঃ গনযুদ্ধ হচ্ছে পরমভাবে প্রয়োজন এবং বিশ্বগণযুদ্ধ হচ্ছে একটা অনিবার্য পরিপ্রেক্ষিত।
এসকল সম্ভাবনাকে গুরুত্বের সাথে হিসেবে নিতে হবে রাজনীতিকে কমান্ডে রেখে গণযুদ্ধ পরিচালনা করতে এবং নির্দিষ্টত দেশব্যাপী ক্ষমতা দখলের দিকে চোখ রাখতে হবে যা নিজেকে তুলে ধরতে পারে এবং যাকে অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। এসব কারণেই, আমাদেরকে মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে।
ঘাঁটি বিকশিত করার মহা পরিকল্পনার পাইলট পরিকল্পনার প্রথম অভিযানের অর্থ হয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াসমেত বৃহত্তম আলোড়ন। এটা পুরোনো রাষ্ট্রকে অধিক থেকে অধিকতরভাবে ভেঙে দিচ্ছে, যা পেরুতে অতীতে কারো দ্বারা এভাবে কেঁপে ওঠেনি। এখন এটা আমাদের ওপর বর্তায় দ্বিতীয় অভিযানের “প্রতিভাদীপ্তভাবে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক প্রতিষ্ঠা করা!”র ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা সম্পাদন করা। এটা বোঝা যে পাইলট পরিকল্পনা হচ্ছে ঘাঁটি বিকশিত করার প্রারম্ভিক যুদ্ধের মতো।
উপসংহারে, আট বছরের কাছাকাছি গণযুদ্ধের পর আমরা পঁয়তাল্লিশ হাজার এ্যাকশন করেছি যা তাদের উচ্চ গুণাগুণ প্রকাশ করে; সামরিকিকৃত পার্টি ইস্পাতকৃত হয়েছে; গণগেরিলা বাহিনী গড়ে ওঠেছে এবং তার সহিংসতা বাড়িয়েছে; আমাদের রয়েছে দরিদ্র জনগণের ক্রমবর্ধিত সমর্থনসমেত নয়া ক্ষমতার শত শত সংগঠন। গণযুদ্ধ আমাদের জনগণের শ্রেণীসংগ্রামকে তার সর্বোচ্চ রূপে উন্নীত করেছে, জনগণের নিজেদের সংগ্রামের ওপর যা নিজেকে আরোপ করে তাদেরকে প্রচুর পরিমাণে গণযুদ্ধে টেনে নিয়ে আসে। “গণযুদ্ধ দেশকে উল্টে দিচ্ছে, ‘পুরোনো গুবরে পোকা’ [ এল টপো ভিয়েখো] পুরোনো সমাজের অভ্যন্তরে গভীরভাবে পঁচে যাচ্ছে। কেউ একে থামাতে পারবেনা, ভবিষ্যত ইতিমধ্যেই আমাদের মধ্যে উপস্থিত, পুরোনো ও পঁচা সমাজ চিরতরে ডুবে যাচ্ছে, বিপ্লব জয়যুক্ত হবে। গণযুদ্ধ জিন্দাবাদ!” আমাদের কর্তব্য হচ্ছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারার ব্যানারের অধীনে বিশ্ববিপ্লবকে সেবা করে গণযুদ্ধকে বিকশিত করা।
খ) গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও করার পথ এবং বিপ্লবী সমর্থনের ঘাঁটি
চেয়ারম্যান মাও গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের পথ প্রতিষ্ঠা করেন। এর কেন্দ্রে রয়েছে ঘাঁটি এলাকা এটা হিসেবে নিয়ে যে শক্তিশালি সাম্রাজ্যবাদীরা ও তাদের প্রতিক্রিয়াশীল চীনা মিত্ররা প্রধান প্রধান শহরগুলিতে ঘাঁটি গেঁড়ে ছিল। বিপ্লবকে নিজের পরাজয় প্রত্যাখ্যান করতে ও সংগ্রামে টিকে থাকতে পশ্চাদপদ গ্রাম এলাকাগুলোকে অগ্রসর সুকঠিণ ঘাঁটি এলাকায় রূপান্তরিত করতে হয়েছিল, সেই ভয়ংকর শত্রুকে লড়তে যারা শহরকে ব্যবহার করে গ্রামাঞ্চলের ওপর হামলা চালাচ্ছিল, বিপ্লবের মহা সামরিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতি ঘাঁটিতে রূপান্তরিত করতে হয়েছিল আর এক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ধাপে ধাপে পুর্ন বিজয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
এই মাওবাদী থিসিসের সঠিকতা থেকে সভাপতি গনসালো এক ঐক্যবদ্ধ গণযুদ্ধ পরিচালনা প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে গ্রামাঞ্চল হবে সশস্ত্র এ্যাকশনসমূহের প্রধান মঞ্চঃ যেহেতু আমাদের দেশে এক নিরংকুশ সংখ্যাগুরু কৃষক জনগণ রয়েছে তাই সেখানেই আমাদের ঘাঁটি এলাকাসমূহ গড়তে হবে। যেমনটা চেয়ারম্যান মাও বলেছেনঃ “এমন ঘাঁটি এলাকাসমূহে সমর্থিত দীর্ঘস্থায়ী বিপ্লবী সংগ্রাম হচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে মৌলিকভাবে কৃষকদের গেরিলা যুদ্ধ। তাই, গ্রামাঞ্চলকে বিপ্লবী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়োজনকে, কৃষকদের মধ্যে অধ্যবসায়ী কাজ করাকে এবং গেরিলা যুদ্ধকে অবহেলা করা হচ্ছে ভুল।” আরো এগিয়ে চেয়ারম্যান গনসালো মূর্ত করেন যে শহরে সশস্ত্র এ্যাকশন চালাতে হবে পরিপূরক হিসেবে, যেহেতু আন্তর্জাতিক ও আামাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা দেখায় যে তা সম্ভব। তিনি শিক্ষা নেন, উদাহারণস্বরূপ, ফিলিপাইনে, গেরিলাদের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তাহচ্ছে এই যে তারা নিজেদের গ্রামাঞ্চলে আটকে ফেলেছেন এবং শহরগুলোকে খালি ছেড়ে দিয়েছেন, বিশেষত রাজধানীকে, যার ফল হয়েছে গেরিলারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ব্রাজিলে, বিপ্লবীরা গ্রাম ও শহরে সশস্ত্র এ্যাকশন চালিয়েছেন, শুধু কোনটা প্রধান তা অবহেলা করেছেন। ভিয়েতনামে শহরাঞ্চলে গুরুত্বপুর্ণ সশস্ত্র এ্যাকশন পরিচালিত হয়েছে। তাই, লাতিন আমেরিকার শহরগুলির বিশেষত্বকে হিসেবে নিয়ে যেখানে শহরাঞ্চলে সর্বহারাশ্রেণী ও গরীব জনগণের শতকরা হার উচ্চ, জনগণ এ্যাকশন বিকশিত করতে প্রস্তুত গ্রামাঞ্চলেরগুলোর পরিপূরক হিসেবে। শহরে অবশ্য নয়া ক্ষমতা অথবা ঘাঁটি এলাকা গড়ে তোলা হয়না বরং বিপ্লবী গণ রক্ষী আন্দোলন (এমআরডিপি)-এর মাধ্যমে ফ্রন্ট বাস্তবায়ন করা হয় প্রতিরোধ কেন্দ্রসমূহসমেত যা গণযুদ্ধ চালায় ও ভবিষ্যত অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নেয় যা সংঘটিত হবে যখন গ্রামাঞ্চলের শক্তিসমূহ শহরগুলিকে আক্রমণ করবে শহরের ভেতরকার অভ্যুত্থানের সাথে সমন্বিতভাবে।
ঘাঁটি এলাকাসমূহ হচ্ছে রণনৈতিক ঘাঁটি যার ওপর গেরিলা বাহিনীসমূহ নির্ভর করে তাদের রণনৈতিক করণীয় সম্পাদনের জন্য এবং তাদের শক্তি সংরক্ষণ ও বর্ধিতকরণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আর সেইসাথে শত্রুকে খতম ও তার ওপর পাল্টা আঘাত হানার জন্য। এমন রণনৈতিক ঘাঁটি এলাকা ছাড়া কোন কিছু থাকবেনা যেখান থেকে যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের রণনৈতিক করণীয়গুলোর কোনটিও বাস্তবায়ন করা যায়।
চেয়ারম্যান মাও ঘাঁটি এলাকা সৃষ্টির তিনটি কারণ তুলে ধরেনঃ বাহিনী গড়ে তোলা, শত্রুকে পরাজিত করা এবং জনগণকে সমাবেশিত করা। এগুলো আমাদের গণযুদ্ধে ১৯৮২তে মূর্ত করা হয়েছে শত্রুকে আঘাত হানার তার ভুমিকায় গেরিলা যুদ্ধের পরিচালনার পরিকল্পনা প্রয়োগ করার সময়, আমরা উতপাদনের পুরোনো সামন্তীয় সম্পর্ক ধ্বংস করায় নিশানা করেছিলাম। পুলিশ পোস্টসমূহের ওপর আক্রমন চালানো হয়েছে, ভুস্বামী শক্তির ওপর বাছাইকৃত খতম পরিচালনা করা হয়েছে আর পুলিশ বাহিনী গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে প্রাদেশিক রাজধানীসমূহে পুনসংগঠিত হয়েছে। পুরোনো ক্ষমতার কর্তৃপক্ষসমূহ ব্যাপকভাবে পদত্যাগ করেছে যা ক্ষমতাশুণ্যতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে দশক দশক সহস্র জনকে সমাবেশিত করা হয়েছে। এটা এমন একটা পরিস্থিতিতে যে ঘাঁটি এলাকাসমুহ উদ্ভূত হয়েছে এবং গোপন গণকমিটিসমূহের আকারে মূর্ত হয়েছে। তাই, চীনা অভিজ্ঞতাকে গোঁড়ামীবাদীভাবে নেওয়া ভুল যেহেতু শর্ত অনুকুলে থাকলে এবং নীতিসমূহ কার্যকর থাকলে ঘাঁটি এলাকা গড়ে তোলার মতো পর্যাপ্ত কারণ আমাদের থাকে। এই থিসিসের সাথে একমত হতে ডানপন্থার সাথে এক সংগ্রাম চালাতে হয়েছিল যা বির্তক তুলছিল যে আমরা বিরাট শত্রুবাহিনীকে পরাজিত করিনি, যেখানে সমস্যাটা ছিল যে শত্রু বাহিনী তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিকল্পনাসমূহের পরাজয়ের ফল হিসেবে মাঠ থেকে পালিয়েছিল।
রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিসমূহ, সংগ্রামের ইতিহাস, পার্টির ভৌগোলিক বৈশিষ্ট এবং পার্টি, বাহিনী ও জনগণের বিকাশকে হিসবে নিয়ে সভাপতি গনসালো এক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে ঘাঁটি এলাকাসমূহকে ঘিরে থাকবে গেরিলাজোনসমূহ, অপারেশন জোন ও এ্যাকশনের ক্ষেত্রসমূহ।
গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের পথ এবং তার কেন্দ্র ঘাঁটি এলাকার প্রযোজ্যতাকে সমর্থন করা হচ্ছে মৌলিক গুরুত্বপুর্ণ, কারণ কেবল অভুত্থানের ভ্রাম্যমাণ গেরিলা থাকলে গণ গেরিলা বাহিনীর না থাকবে ঘাঁটি এলাকা পেছনে দাঁড়াবার জায়গা হিসেবে যা তাদের টিকিয়ে রাখে না সৃষ্টি হবে নয়া ক্ষমতা। আমরা ফুকোবাদের সমগ্রভাবে বিরোধি।
গ) দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধ
গণযুদ্ধ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী কারণ তা শত্রু ও আমাদের উপাদানসমূহের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত হয় যা এই চারটি মৌলিক বৈশিষ্ট দ্বারা নির্ধারিত হয়ঃ প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে এই যে পেরু একটা আধাসামন্ততান্ত্রিক ও আধাউপনিবেশিক সমাজ যাতে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ গড়ে ওঠে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে এই যে শত্রু শক্তিশালি; তৃতীয়টি হচ্ছে এই যে গণ গেরিলা বাহিনী দুর্বল; আর চতুর্থটি হচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টি গণযুদ্ধকে নেতৃত্ব করে। প্রথম ও চতুর্থ বৈশিষ্ট থেকে আমরা পাই যে গণগেরিলা বাহিনী তড়িত গতিতে বৃদ্ধি পাবেনা এবং শীঘ্রই শত্রুকে পরাজিত করবেনা। এই বিশেষত্ব যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী চরিত্রকে নির্ধারণ করে।
শত্রু শক্তিশালি আর আমরা দুর্বল; এই বাস্তবতায় থাকে আমাদের পরাজয়ের বিপদ। শত্রুর একটা একক সুবিধা রয়েছে তা হচ্ছে তাদের বহুবিধ বাহিনীর বহুবিধ সংস্থান এবং যার ওপর তারা নির্ভর করে সেই অস্ত্রশস্ত্র। কিন্তু অন্য সকল দিক তাদের দুর্বল দিক রচনা করে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভুস্বামী-আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পঁচনশীল ক্ষমতাকে রক্ষা করা। তার রয়েছে এক বুর্জোয়া সামরিক লাইন; সে হচ্ছে একটা ভাড়াটিয়া বাহিনী। এর সচেতন শৃ্খংলা নেই এবং এর নৈতিকতা নিম্নমানের। এর রয়েছে অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে গভীর দ্বন্দ্ব, এবং এটা জনগণের কাছে সম্মান পায়না। অধিকন্তু, খোদ প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনীর ভিত্তি হচ্ছে শ্রমিক ও কৃষক উদ্ভূত যা একটা অন্যায় যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় ভেঙে যেতে পারে। এছাড়া, পেরুভিয়ান সশস্ত্র বাহিনী কখনো কোন যুদ্ধে জয়ী হয়নি আর তারা হচ্ছে পরাজয়ে দক্ষ। অধিকন্তু, তারা বারংবার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছে, কিন্তু আমরা দুনিয়ার নিপীড়িত জাতিসমূহ, জনগণ ও আন্তর্জাতিক সর্বহারার সমর্থনের ওপর নির্ভর করি, যারা হচ্ছে নয়া শক্তি।
গণ গেরিলা বাহিনীর রয়েছে এক দুর্বল দিক, তা হচ্ছে তার অপর্যাপ্ত বিকাশ, কিন্তু বাকী দিকগুলো মুল্যবাণ সুবিধা গঠণ করে; সে গণযুদ্ধ এগিয়ে নেয় নয়া ক্ষমতা সৃষ্টি করার জন্য; পরমভাবে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে তার রয়েছে এক সর্বহারা সামরিক লাইন; সে শ্রেণী উদ্যম, বিপ্লবী বীরত্ববাদ ও এক সচেতন শৃংখলার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তার নৈতিক মনোবল হচ্ছে উচ্চমানের আর অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ একতা, এবং এটা একটা বাহিনী যা জনগণের নিজেদের নিয়ে গঠিত, প্রধানত দরিদ্র শ্রমিক ও কৃষকদের নিয়ে।
কিন্তু বস্তুগত বাস্তবতা হচ্ছে এই যে শত্রুর বাহিনী ও আমাদের বাহিনীর মধ্যে রয়েছে এক বিরাট অসামঞ্জস্য এবং আমাদেরকে দুর্বলতা থেকে সবলতায় যেতে একটা পর্যায়কাল প্রয়োজন, যাতে শত্রুর প্রতিকুলতাগুলি উন্মোচিত হবে আর আমাদের অনুকুলতাগুলি বিকশিত হবে। তাই, আমরা বলি যে আমাদের বাহিনী আপাত দুর্বল কিন্তু সারে এটা শক্তিশালি আর শত্রুর বাহিনী আপাত শক্তিশালি কিন্তু সারে দুর্বল। তাই, দুর্বল থেকে সবলে যেতে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালাতে হবে এবং এর রয়েছে তিনটি স্তরঃ প্রথম পর্বটি হচ্ছে শত্রুর রণনৈতিক আক্রমণ আর আমাদের বাহিনীর রণনৈতিক আত্মরক্ষা। দ্বিতীয় পর্বটি হবে শত্রুর রণনৈতিক সংহতকরণ আর আমাদের পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি। তৃতিয়টি হবে আমাদের রণনৈতিক আক্রমণ আর শত্রুর রণনৈতিক প্রত্যাহার।
সভাপতি গনসালো আমাদের শিক্ষা দেন যে গণযুদ্ধ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী, দীর্ঘ ও রক্তাক্ত কিন্তু বিজয়বাণ এবং বলেন যে এর সময়কাল হবে দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির চৌহদ্দির মধ্যে বর্ধিত অথবা সংক্ষিপ্ত। সর্বহারা সামরিক লাইনের অভ্যন্তরে যে পরিমাণে আমরা লড়াই করবো তার ওপর সময় নির্ভর করবে, যেহেতু ডানপন্থা হচ্ছে প্রধান বিপদ যা যুদ্ধের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
আজকে, আমরা দেখি যে আমরা শত্রুর রণনৈতিক আক্রমণ এবং আমদের রণনৈতিক আত্মরক্ষার পর্বে রয়েছি। গেরিলা যুদ্ধকে প্রয়োগ করে, পরবর্তী স্তরের জন্য ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করে আমাদের অবশ্যই গণযুদ্ধকে শক্তিশালি করতে হবে, তার জন্য যত মূল্যই দিতে হোক যা লড়াইয়ের মাধ্যমেই কমিয়ে আনা যাবে।
২. গণ গেরিলা বাহিনী গঠণ
গণযুদ্ধ পরিচালনা করতে আমাদের নির্ভর করতে হবে প্রধান ধরণের সংগঠণের ওপর যা হচ্ছে গণ গেরিলা বাহিনী, যেহেুতু পুরোনো রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল সশস্ত্র বাহিনী আর পুরোনো রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে অবশ্যই তার প্রতিক্রিয়াশিল বাহিনীকে ধ্বংস করতে হবে। পার্টিকে এক শক্তিশালি বাহিনীর ওপর নির্ভর করতে হবে। “বাহিনী ছাড়া জনগণের কিছুই নেই”, যেমনটা চেয়ারম্যান মাও আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।
বাহিনী গঠণকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারার ভিত্তিতে বিনির্মাণ হিসেবে আমাদেরকে দেখতে হয়। সংশ্লেষণে, সভাপতি গনসালো গণ গেরিলা বাহিনীতে মিলিশিয়ার অন্তর্ভুক্তকরণ করায় অবদান রাখেন। এর সৃষ্টি হচ্ছে সশস্ত্র জনগণের সমুদ্রের দিকে এক পদক্ষেপ এবং অসংগঠিত জনগণ থেকে সামরিকভাবে সংগঠিত জনগণের দিকে যাওয়ার এক সমাধান।
৩. রণনীতি ও রণকৌশল
সভাপতি গনসালো চেয়ারম্যান মাওয়ের রণনীতি ও রণকৌশলের সাতটি পয়েন্টের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তার কিছু বিশেষায়িত করেন। গণযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য এগুলোর প্রতি আমাদেরকে ঘনিষ্ঠ মনোযোগ দিতে হবে।
ক) রণনীতি ও রণকৌশল সম্পর্কে
তিনি চেয়ারম্যান মাওয়ের এই থিসিস থেকে যাত্রা করেন যে একটা বিজ্ঞান হিসেবে রণনীতির কর্তব্য হচ্ছে সেই পরিচালক সামরিক অপারেশনসমূহের নিয়মসমূহ অধ্যয়ণ করা যা যুদ্ধের পরিস্থিতিকে তার সমগ্রতায় প্রভাবিত করে। অভিযান ও রণকৌশলসমূহের বিজ্ঞানের কর্তব্য হচ্ছে আংশিক চরিত্রের পরিচালক সামরিক অপারেশনসমূহের নিয়মসমূহ অধ্যয়ণ করা। তিনি সমগ্রভাবে দেশের প্রতিটি জোনে যুদ্ধ কীভাবে চালাতে হবে তার রণনৈতিক বিকাশ সাধন করেন, আন্তজাতিক পরিস্থিতির সাথে তার সম্পর্ককে হিসেবে নিয়ে। তিনি আমাদেরকে অক্ষ, উপঅক্ষ, আন্দোলনের দিশা এবং আন্দোলনের গতিধারার রূপরেখা প্রদান করেন যা যেকোন পরিস্থিতিতে যুদ্ধের রণনৈতিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে এবং প্রতিবিপ্লব কর্তৃক চালিত সকল ধরণের রাজনৈতিক ও সামরিক অপারেশনের মোকাবেলা করতে আমাদের অনুমোদন দেয়। এই ভিত্তিতে তিনি জাতীয় সামরিক পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠা করেন যা হচ্ছে রণনৈতিকভাবে কেন্দ্রিভূত আর রণকৌশলগতভাবে বিকেন্দ্রিভূত, এই নীতি থেকে যাত্রা করে যে সকল পরিকল্পনা একটা মতাদর্শকে প্রতিফলিত করে, এই যে তাদেরকে উভয়ত বাস্তবতা ও অবশ্যই উদ্যমকে প্রকাশিত করতে হবে। স্তালিনকে গ্রহণ করে তিনি রণকৌশলের সাথে রণনীতির যোগ সাধন করেন এবং রণনৈতিক অপারেশন পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠা করেন যা হচ্ছে মূর্ত পথ যাতে রণনীতি রণকৌশলগত অপারেশনের সাথে সংযুক্ত হয়। ফলত, প্রতিটি কমিটিকে সমগ্র পার্টির সাধারণ রণনৈতিক অপারেশন পরিকল্পনার মধ্যে তার রণনৈতিক অপারেশন পরিকল্পনা বিশদ করতে হবে।
সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী কমান্ডারের ন্যায্য সিদ্ধান্ত থেকে আসে; শত্রুর পরিস্থিতির অপরিহার্য স্বীকৃতি ও যতনশীল অধ্যয়ণ, প্রকৃত পরিস্থিতি ও এই দুইয়ের আন্তঃসম্পর্ককে ভিত্তি করে সকল সামরিক পরিকল্পনাকে হতে হবে। অর্থাত, আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে “দুই পাহাড়”; আমাদেরকে একটা রাজনৈতিক রণনীতি ও একটা সামরিক রণনীতি দ্বারা পরিচালিত হতে হবে।
পরিকল্পনাকে বিশদ করতে সর্বদাই নীচের সাধারণ বিষয়গুলিকে হিসেবে নিতে হবেঃ
বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবের মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রেণীসংগ্রাম; মতাদর্শ; আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন; রিম।
দেশে শ্রেণীসংগ্রাম; প্রতিবিপ্লব।
গণযুদ্ধের বিকাশ; এর ভারসাম্য; নিয়ম ও শিক্ষাসমূহ।
তদন্তের প্রয়োজনীয়তা।
গণযুদ্ধ ও এর বিনির্মাণ।
গণযুদ্ধ ও জনগণ।
দুই লাইনের সংগ্রাম।
কর্মসূচি প্রদান ও কালপঞ্জী।
দৃষ্টিভঙ্গী ও শ্লোগান, “দুঃখকষ্টের ঊর্ধ্বে উঠুন এবং বৃহত্তর বিজয় ছিনিয়ে আনুন!”
প্রায় আট বছরের গণযুদ্ধে আমাদের চারটি পরিকল্পনা ছিলঃ সূচনার পরিকল্পনা; গণযুদ্ধকে বিকাশের পরিকল্পনা; ঘাঁটি জয় করার পরিকল্পনা; এবং ঘাঁটি বিকশিত করার পরিকল্পনা।
খ) যুদ্ধের মূল নীতি
সামরিক অপারেশনের সাথে বিজড়িত সকল নীতিমালাই একটা মূলনীতি থেকে উদ্ভূত হয়ঃ নিজেদের শক্তিকে রক্ষা করতে এবং শত্রুর শক্তিকে খতম করার জন্য সম্ভব সবকিছু করো। সকল যুদ্ধই একটা মূল্য আরোপ করে, অনেকসময় যা অত্যন্ত উচ্চ। আমাদের নিজেদের শক্তিকে রক্ষা করতে আমাদেরকে অবশ্যই শত্রুর শক্তিকে খতম করতে হবে; কিন্তু শত্রুকে খতম করতে আমাদেরকে অবশ্যই একটা মূল্য দিতে হবে সমগ্রকে রক্ষা করার লক্ষ্যে। সভাপতি গনসালো আমাদের শিক্ষা দেন আমাদেরকে যুদ্ধের সর্বোচ্চ মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে, কিন্তু আমাদেরকে লড়তে হবে যাতে এটা সম্ভাব্য ক্ষদ্রতম মূল্য হয়। এটা একটা দ্বন্দ্ব এবং সমস্যাটা দৃষ্টিভঙ্গী ও ভাল পরিকল্পনা রচনার মধ্যে নিহিত। এটা প্রধানত নেতৃত্বের একটা প্রশ্ন। তিনি আমাদেরকে নিয়ে যান “মৃত্যুর চ্যালেঞ্জ”, “বিপ্লবী বীরত্ব” এবং “মৃত্যুতে সাফল্য জয় করা” তে। যুদ্ধে আমরা সর্বদাই দুটি দিক দেখতে পাই, ধ্বংসাত্বক আর গঠণমূলক এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রধান।
গ) গেরিলা রণকৌশল অথবা মৌলিক রণকৌশল
“শত্রু যখন আগায়, আমরা পিছাই, শত্রুশিবির ফেলে হয়রান করি; শত্রু ক্লান্ত হলে আমরা তাকে আক্রমণ করি; পলায়নরত শত্রুকে পিছু ধাওয়া করি।” এই মৌলিক রণকৌশলকে অন্তর্ভুক্ত ও প্রয়োগ করতে হবে শত্রুর চারদিকে জাল ফেলে ও তাকে ধ্বংস করতে তার দুর্বল দিক খুঁজে বের করে।
ঘ) “ঘেরাও দমন” অভিযান ও পাল্টা-অভিযান হচ্ছে গণযুদ্ধের প্রধান ধরণ
এটা হচ্ছে একটা নিয়ম যে প্রতিবিপ্লব বিপ্লবকে চুর্ণ করার লক্ষ্যে গণ গেরিলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিটের বিরুদ্ধে অথবা ঘাঁটি এলাকাসমূহের বিরুদ্ধে “ঘেরাও দমন” অভিযান চালায়। গণগেরিলা বাহিনীর অপারেশনসমূহ পাল্টা অভিযানের রূপ গ্রহণ করে আর চেয়ারম্যান মাও “ঘেরাও দমন” অভিযানকে চুর্ণ করতে নয়টি ধাপ প্রতিষ্ঠা করেছেনঃ
সক্রিয় আত্মরক্ষা;
পাল্টা অভিযানের প্রস্তুতি;
রণনৈতিক পশ্চাদপসারণ;
রণনৈতিক পাল্টা আক্রমণ;
পাল্টা আক্রমণের সূচনা;
শক্তি কেন্দ্রিভূতকরণ;
চলমান যুদ্ধ;
দ্রুত নিষ্পত্তির যুদ্ধ; এবং,
ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ।
সভাপতি গনসালো এই নিয়মকে আমাদের গণযুদ্ধের পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করে অভিযানের পাঁচটি অংশ মূর্ত করেছেন যা আমাদেরকে অনুমোদন দেয় প্রতিক্রিয়াশীলদের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিকল্পনাকে পরাজিত করতে। প্রতিটি অভিযানের রয়েছে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য যা আকস্মিক আক্রমণ, শত্রুকে যখন যেখানে আমাদের প্রয়োজন সেই অনুপাতে আক্রমণ করার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তিনি পাঁচটি ধাপকে মূর্ত করেন যাকে অবশ্যই প্রতিটি সামরিক এ্যকশনকে অনুসরণ করতে হবে সর্বদাই রাজনৈতিক লক্ষ্যকে সেবা করে এবং স্রেফ এ্যাকশনের জন্য এ্যাকশনের ধারাকে বিরোধিতা করে। শত্রুর গতিবিধির সার ও বহিরাকৃতির মধ্যে পার্থক্যকরণের গুরুত্বের ওপর তিনি জোর দেন। গণযুদ্ধের লড়াইয়ের চারটি রূপও তিনি আমাদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেনঃ
গেরিলা এ্যাকশন, তার দুই ধরণ আক্রমণ (অ্যাসল্ট) ও এ্যামবুশসহ;
সাবোটাজ;
বাছাইকৃত খতম; এবং
প্রচার ও সশস্ত্র মিছিল, সেইসাথে তার বিচিত্র পদ্ধতিসমূহ।
ঙ) গেরিলা যুদ্ধের রণনৈতিক ভুমিকা
চেয়ারম্যান মাও গেরিলা যুদ্ধকে এক রণনৈতিক স্তরে বিকশিত করেন। তার পূর্বে একে একটা রণকৌশলগত সমস্যা হিসেবে শুধূ বিবেচনা করা হতো যা যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ করতো না; কিন্তু যদিও গেরিলা যুদ্ধ যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ করেনা কারণ এর প্রয়োজন প্রচলিত যুদ্ধ, এটা যুদ্ধের অনুকুল ফলাফলের জন্য এক ঝাঁক রননৈতিক কর্তব্য সম্পাদন করে। আমরা গেরিলা যুদ্ধকে আত্মস্থ করি এক ব্যাপক মাত্রায় এক সাধারণীকৃত গেরিলা যুদ্ধ হিসেবে যা অবশ্যই দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকে সমর্থন দেবে। সেখান থেকে, আমরা গেরিলা যুদ্ধের ছয়টি রণনৈতিক প্রশ্ন প্রয়োগ করিঃ
আত্মরক্ষাত্বক যুদ্ধের মধ্যে আক্রমণাত্বক অপারেশন চালানোয় উদ্যোগ, নমনীয়তা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মধ্যে দ্রুত নিষ্পত্তির যুদ্ধ এবং অন্তর্লাইনের যুদ্ধের মধ্যে বহির্লাইনে অপারেশন চালানো।
নিয়মিত যুদ্ধের সাথে সমন্বয়।
ঘাঁটি এলাকাসমূহের সৃষ্টি।
গেরিলা যুদ্ধে রণনৈতিক আত্মরক্ষা ও রণনৈতিক আক্রমণ।
গেরিলা যুদ্ধকে চলমান যুদ্ধে রূপান্তর করা।
কমান্ডের আন্তঃসম্পর্ক।
চ) দশ সামরিক নীতিমালা
ডিসেম্বর ১৯৪৭-এ চেয়ারম্যান মাও পাণ্ডিত্যপুর্ণভাবে ১০ সামরিক নীতিমালার আকারে ২০ বছরেরও বেশি অনুসৃত ন্যায্য ও সঠিক রণনৈতিক লাইনের সংশ্লেষণ করেন। এটা তাঁর “বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয়” নিবন্ধের তৃতীয় খণ্ডে পাওয়া যায়। আমরা এই নীতিমালা প্রয়োগ করি আর তার প্রয়োগকে বিস্তৃত করা খুবই গুরুত্বপুর্ণ।
ছ) রণনীতি ও রণকৌশলের প্রতিভাদীপ্ত সারসংক্ষেপ
চেয়ারম্যান মাও এই বাক্যে প্রতিভাদীপ্তভাবে গণযুদ্ধের রণনীতি ও রণকৌশলের সারসংকলন করেনঃ “তোমরা তোমাদের কায়দায় লড়ো, আমরা আমাদের কায়দায়ঃ যখন জিততে পারি তখন আমরা লড়ি আর যখন জিততে পারিনা তখন পশ্চাদপসারণ করি।”
“অন্য কথায়, তোমরা আধুনিক অস্ত্র দ্বারা সমর্থিত আর আমরা উচ্চ স্তরের বিপ্লবী সচেতনতাযুক্ত ব্যাপক জনগণের সমর্থনপুষ্ট; তোমরা তোমাদের উতকৃষ্টতার সর্বোচ্চ ব্যবহারসমেত লড়াই করো, আমরা আমাদের উতকৃষ্টতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে লড়াই করি। তোমাদের রয়েছে তোমাদের লড়ার পদ্ধতি আমাদের রয়েছে আমাদের। তোমরা যখন আমাদের ওপর আক্রমন করতে চাও আমরা তা করার অনুমোদন দেইনা, এমনকি আমাদের খুঁজেও পাবেনা। কিন্তু আমরা যখন তোমাদের আক্রমণ করি, আমরা লক্ষ্যভেদ করি, আমরা নিপুণ, নিশ্চিত আঘাত হানি এবং ধ্বংস করি। আমরা যখন ধ্বংস করতে পারি, আমরা তা করি দৃঢ় সিদ্ধান্তে; যখন আমরা ধ্বংস করতে পারিনা, আমাদের নিজেদের তোমাদের দ্বারা ধ্বংস হতে অনুমোদন দিইনা। যখন জেতার সম্ভাবনা আছে তখন লড়াই না করা হচ্ছে সুবিধাবাদ। যখন জেতার কোন সম্ভাবনা নেই তখন তাতে লেগে থাকা হচ্ছে হঠকারিতাবাদ। আমাদের রণনৈতিক সজ্জিতকরণ ও রণকৌশল আমাদের লড়ার আকাঙ্খাভিত্তিক। পশ্চাদাপসারণের প্রয়োজনীয়তার আমাদের স্বীকৃতি হচেছ প্রথমত আমাদের লড়ার প্রয়োজনের স্বীকৃতিভিত্তিক। আমরা যখন পশ্চাদপসারণ করি তখন তা করি ভবিষ্যত লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে যাতে শত্রুকে আমরা চুড়ান্তভাবে ও সমগ্রভাবে ধ্বংস করতে পারি। কেবল ব্যাপক জনগণের সমর্থনের দ্বারাই আমরা এই রণনীতি ও রণকৌশলসমূহের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারি। আর এসব প্রয়োগে আমরা গণযুদ্ধের শ্রেষ্ঠত্বের পুর্ণ প্রয়োগ ঘটাতে পরি এবং শত্রুকে পরাজিত অবস্থার নিষ্ক্রিয় পরিস্থিতিতে আটকে দিতে পারি, যদিও তারা অস্ত্রে উতকৃষ্টতর আর কোন্ পদ্ধতি তারা প্রয়োগ করলো তাতে কিছুই যায় আসেনা। আমরা সর্বদাই আমাদের হাতে উদ্যোগ টিকিয়ে রাখি। “গণযুদ্ধের বিজয় দীর্ঘজীবি হোক!”, সেপ্টেম্বব, ১৯৬৫।
এই নীতির প্রয়োগ আমাদের অনুমোদন দেয় গণযুদ্ধের শ্রেষ্ঠতর রণনীতির অপরাজেয়তা প্রদর্শনে, কারণ সর্বহারা শ্রেণী ইতিহাসের সর্বশেষ শ্রেণী হিসেবে যুদ্ধের নিজস্ব শ্রেষ্ঠ ধরণ সৃষ্টি করেছে এবং বুর্জোয়ারাসহ অপর কোন শ্রেণীই তার শ্রেষ্ঠতম রাজনৈতিক ও সামরিক রণনীতিবিদদের নিয়ে একে পরাজিত করতে সক্ষম নয়। প্রতিক্রিয়াশীলরা গণযুদ্ধের চেয়ে “উতকৃষ্টতর রণনীতিসমূহ” বিশদ করার স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সেগুলো ব্যর্থতার দ্বারা নিন্দিত হয়, কারণ তারা ইতিহাসের বিরুদ্ধে। প্রায় আট বছর পর আমাদের গণযুদ্ধ বিজয় গর্বে ঝলক দিয়ে ওঠছে গণযুদ্ধের অপরাজেয়তা প্রদর্শন করে।
পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির জঙ্গী হিসেবে আমরা পার্টির সামরিক লাইন পুর্ণাঙ্গভাবে ও সমগ্রভাবে ধারণ করি যা সভাপতি গনসালো কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, আন্তর্জাতিক সর্বহারার উচ্চতম সৃষ্টি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের ভিত্তিতে যা গনসালো চিন্তাধারাসহকারে আমাদের সামরিক লাইন মূর্ত করেছে, আমাদেরকে এক অপারেজয় অস্ত্রে সজ্জিত করেছে যা হচ্ছে গ্রামাঞ্চলকে প্রধান হিসেবে ও শহরকে পরিপূরক হিসেবে নিয়ে এক ঐক্যবদ্ধ গণযুদ্ধ। প্রধান ধরণের সংগ্রাম হিসেবে আমরা একে এগিয়ে নেই। চিরজীবি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের সার্বজনীন প্রযোজ্যতাকে ঘোষণা করে এটা হচ্ছে বিশ্বের সামনে এক উজ্বল আলোকবর্তিকা ।
পার্টির সামরিক লাইন জিন্দাবাদ!
গণযুদ্ধ অপারেজয়!