অনুবাদ সাহিত্য পত্র, সংখ্যা নং ৪ ।। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল) (নকশালবাড়ী)র সামরিক দলিলঃ গণযুদ্ধ সম্পর্কে মাওবাদী দৃষ্টিকোন

অনুবাদ সাহিত্য পত্র

অনুবাদ সাহিত্য পত্র, সংখ্যা নং

পূবাসপা এম ইউ জির অনুবাদ সাহিত্য পত্র

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল) (নকশালবাড়ী) সামরিক দলিলঃ

গণযুদ্ধ সম্পর্কে মাওবাদী দৃষ্টিকোন

পূবাসপা এমইউজি কর্তৃক হাতে লেখা প্রকাশঃ ২৮শে ডিসেম্বর, ২০০৪

পূবাসপা এমইউজির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সংস্থা কর্তৃক কম্পিউটার মুদ্রন প্রকাশঃ ২৬শে জানুয়ারী, ২০০৫

সম্পাদকীয়

২রা জানুয়ারী ২০০৫ মহান সভাপতি সিরাজ সিকদারের ২০-তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শহীদ দিবসকে সামনে রেখে অনুবাদ সাহিত্য পত্র সংখ্যা নং ৪ প্রকাশিত হল। বিগত প্রায় আট মাস যাবr এর প্রকাশনা বন্ধ ছিল। এ জাতীয় পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশের বিপরীতে মোটা অংকের অর্থ বরাদ্দের সংকলন প্রকাশের ভ্রান্ত প্রবণতাকে আমাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে। সংকলন প্রকাশও প্রয়োজনীয়। কিন্তু সেটা করতে হবে পাশাপাশি। এ পত্রিকাকে যৌথভাবে প্রকাশের প্রস্তাব সবগুলো মাওবাদী গ্রুপের কাছে আমরা রাখতে চাই। সেই সঙ্গে, আগের ৩টি সংখ্যার পুনমুদ্রণেরও।

২০০৪ সালের ২রা জানুয়ারী প্রদত্ত আমাদের ঘোষণাকে আমরা দৃঢ়ভাবে ঊর্ধ্বে তুলে ধরি-যেখানে আমাদের দেশের মাওবাদী আন্দোলনে সর্বাধিক অগ্রসর লাইনকে তুলে ধরা হয়েছে। মাওবাদীদের এককেন্দ্রীক ঐক্যের নীতিতে দৃঢ় থেকেই আমরা আন্দোলনে বিরাজমান বিবিধ সংশোধনবাদী-সংস্কারবাদী লাইন উপাদানকে সংগ্রাম করা অব্যাহত রেখেছি। ঐক্যের স্পষ্ট নির্দিষ্ট পদক্ষেপে এগিয়েছি। আমাদের সফলতা ও বিফলতার মধ্যে সফলতার পাল্লা অনেক ভারী। কারণ, আমাদের লাইনগত স্পষ্টতা অর্জিত হয়েছে। এখন আমরা অধিকতর মূর্তভাবে ভ্রান্তলাইনগুলোকে মোকাবেলা করতে পারবো। সুতরাং, ঐক্যের ভিত্তিটা আরো সুগঠিত হয়েছে। যারা বিড়বিড় করছেনঃ সময়টা বড্ড জোড়ে পেরিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে আমরা বলবো, আমরা নিশ্চিতভাবে আরো বৃহত্তর ঐক্যের পদক্ষেপ নেব।

এবারের সংখ্যায় আমরা প্রকাশ করলামঃ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল) (নকশালবাড়ী) র সামরিক দলিল হিসেবে পরিচিত-‘গণযুদ্ধ সম্পর্কে মাওবাদী দৃষ্টিকোণ’ । এটি তাদের পত্রিকা নকশালবাড়ী-২, জুন, ২০০৩ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

সিপিআই(এম এল) সম্পর্কে বলা যায়, তাঁরা হচেছন ভারতের বিপ্লবী সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে জন্ম নেওয়া, নিজেদের দলের অভ্যন্তরে কে, ভেনুর সংশোধনবাদী লাইনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে গড়ে ওঠা একটি অগ্রবর্তী দল যারা মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও ত r পরবর্তীকালে বিকশিত  হওয়া মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ এর সংশ্লেষণসমূহের আলোকে মূর্ত অগ্রসর লাইন হাজিরের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁরা বিমূর্ততায় আটকে থাকতে চাননা, প্রয়োগবাদেও না। তাঁরা আন্তর্জাতিক থেকে দ্বিধাহীনভাবে শিক্ষা নিতে চান যা দলিলটির ছত্রে ছত্রে প্রকাশিত। পিসিপি ও তার চেয়ারম্যান কমরেড গনসালো কৃত মহান লাইনগত স্তম্ভসমূহ, সিপিএন (মাওবাদী) কর্তৃক তার পরবর্তী প্রয়োগজাত শিক্ষামালা, আর এসব কিছুর ওপর ভিত্তি করে বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন (রিম)-এর তাত্ত্বিক অগ্রাভিযানকে তারা যথাযথ গুরুত্বে গ্রহণ করেছেন। তাকে তারা মিলিয়ে দেখেছেন ভারতের ইতিহাসের সাথে। তারা ভারতীয় বিপ্লবী সংগ্রামসমূহ তথা মহান নকশালবাড়ী উত্থান ও কমরেড চারু মজুমদারের বিপ্লবী রাজনীতির সার বের করতে, দৃঢ়তার সাথে তাকে রক্ষা করতে, ভুল দিকগুলিকে বর্জন আর ইতিবাচক সারসংকলনে প্রবৃত্ত হয়েছেন। সর্বোপরি, আন্তর্জাতিক শিক্ষার আলোকে তাকে বিকশিত করতে ইচ্ছুক তাঁরা।

এ দলিলটির অধ্যয়ন আমাদের পার্টিতে ও আন্দোলনে বিরাজমান দৃষ্টিভঙ্গীগত সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে।

তারিখঃ২৮/১২/০৪

গণযদ্ধ সম্পর্কে মাওবাদী দৃষ্টিকোন

ভারতে গণযুদ্ধ গড়ে তোলার জটিলতাসমূহ

বিশাল জনসংখ্যাসমেত ভারত একটি বিশাল দেশ। প্রতিক্রিয়াশীল শাসকশ্রেণী বর্তমানে একচ্ছত্র পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাঁধা। তাদের দয়ায় সে সম্প্রসারণবাদী স্বপ্ন দেখছে, আর দক্ষিণ এশিয়ায় ঘৃনিত খলনায়কে পরিণত হয়েছে। সে ব্যাপক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজুদ করেছে (বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম)। এতদসহকারে তার রয়েছে এক শক্তিশালী পুলিশী, আধা সামরিক ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক যা তাকে প্রায় অপরাজেয় দেখার মতো বানিয়েছে।

বিপ্লবীদের দ্বারা মোকাবেলা করার জন্য চ্যালেঞ্জসমূহ হচেছ এর দৈর্ঘ প্রস্থব্যাপী বিস্তৃত তীক্ষè অসমতা। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে অসমতা বিহার, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ ও রাজস্থানের মতো উচ্চ সামন্তরাজ্যসমূহ থেকে ছদ্ম বিকশিত রাজ্য যেমন কেরালা, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রের অংশবিশেষ ও গুজরাট পর্যন্ত বিস্তৃত। একই কথা জনগণের চেতনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যা রাজ্যসমূহের সংগ্রামের ইতিহাসের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত, যেখানে রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ ও গুজরাটcharu-mazumdar1 ফ্যাসিবাদী প্রতিক্রিয়াশীলদের খুবই নিয়ন্ত্রণে ও পশ্চাদপদ, অন্য দিকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাসের কারণে কেরালা-বাংলাকে তুলনামূলকভাবে অগ্রসর হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়-যদিও সংশোধনবাদীদের দীর্ঘ আধিপত্য সেখানে জনগণের মতকে পদদলিত করেছে। বিভিন্ন  ভাষা, জাতীয় সমস্যা, সংস্কৃতি, বর্ণ, ধর্মমত আর ধর্মও বিপ্লবী শ্রেণীসমূহকে বিভক্ত করে। তাই, সমগ্র দেশের জন্য একটি সাধারণ সূত্র গ্রহণ করা যায়না।

ভারতে বিপ্লবীদের দ্বারা মোকাবেলা করা অন্য সিরিয়াস প্রশ্নটি হচেছ ভারতে চলমান বহুবিধ সশস্ত্র তৎপরতা-জাতীয়তাবাদী যুদ্ধ, ইসলামবাদী সশস্ত্র তrপরতা, হিন্দু মৌলবাদী গণহত্যাসমূহ, মাফিয়া সংঘাত, যুদ্ধবাজ-এর অধঃপাত, আর বহুবিধ রাষ্ট্রীয় মদদযুক্ত সন্ত্রাসবাদী তrপরতার সাথে মাওবাদী গণযুদ্ধের পার্থক্য অংকন করা। সাম্রাজ্যবাদীরা ও প্রতিক্্িরয়াশীলরা যেকোন সশস্ত্র ভিন্নমতকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেয় জনগণ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে আর তাদের ওপর দমন নামিয়ে আনতে। তাই, এর সাথে শুধু সীমারেখা অংকন করাই প্রয়োজন নয় বরং মাওবাদী যুদ্ধের শক্তিকেও উrসারিত করা প্রয়োজন-কেবলমাত্র যা শত্রুর প্রচারকে নস্যা r করে দিতে পারে, আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে পারে, আর শত্রুর দমনকে মোকাবেলা করতে পারে।

কিন্তু স্থিতিশীলতা ও ঐক্যের পাতলা পর্দার নীচে ফাঁক ও ফাঁটল প্রশস্ততর হচ্ছে। শাসকশ্রেণী বহুবিধ দ্বন্দ্ব মোকাবেলায় ব্যাস্ত। জাতীয় সমস্যা কাশ্মীরে-উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রচন্ড সশস্ত্র সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়ে রাষ্ট্রের রক্ত ঝরিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় শাসকশ্রেণীর সম্প্রসারণবাদী ও আধিপত্যবাদী র্দৃষ্টিভঙ্গী তার সকল প্রতিবেশীর ওপর মাতব্বরী সম্পর্ক চাপিয়ে দিয়েছে। ভারতের উন্নয়ন ও বিকাশের অসার বক্তৃতা দিয়ে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণে ব্যবস্থার ব্যর্থতা মুছে ফেলা যায়না। ভূমণ্ডলীকরণ, উদারীকরণ ও বেসরকারীকরণ গ্রামে-শহরে একইভাবে ফল দিতে শুরু Leader of the party and immortal martyr comrade Saroj Duttকরেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসাকে গিলে খাওযা হচ্ছে আর শ্রেণীচ্যুতকরণের প্রক্রিয়া বেগবান হচ্ছে। ক্ষোভ ও অসন্তোষ ব্যাপক বিস্তৃত। এমনকি উন্মোচিত সংসদীয় দলগুলো ও সংস্কারবাদীরা বাধ্য হচ্ছে জনগণকে জঙ্গী সংগ্রামে সমাবেশিত করতে। জনগন এই ব্যবস্থার ওপর, এর ভূয়া সংসদ, দূনীতিগ্রস্ত বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়েছেন, আর তারা এই সন্ত্রাসী ব্যবস্থাকে ঘৃণা করেন। বস্তুগত অবস্থা বিপ্লবের জন্য এতটা পরিপক্ক কোন সময় ছিলনা। জনগন যখন সংগঠিত হতে ও নেতৃত্ব লাভের জন্য প্রার্থনা করছেন, আত্মগত শক্তিসমূহ-বিপবীরা এখনো ঐক্যবদ্ধ হতে ও সারা দেশে জনগনকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম সর্বভারতীয় মাওবাদী অগ্রসেনা পার্টি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।

এইসব জ্বলন্ত বাস্তবতার পাশাপাশি কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ভারতে বিপ্লবের সুবিধা হিসেবে কাজ করে। শত্রুর অপরাজেয় সশস্ত্র শক্তি কাশ্মীরে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জাতীয়তাবাদী যুদ্ধকে মোকাবেলায় পর্যাপ্ত পরিমানে নিয়োযিত, তাই সীমান্ত ত্যাগে সক্ষম নয়। অমৃতসরে বুস্টার অপারেশনের পর সেনাবাহিনীর তথাকথিত ঐক্য এক প্রবল ঝাঁকুনি খেল। সেনাবাহিনিতে স্বেচ্ছাদলত্যাগ ও বিদ্রোহ সংঘটিত হচ্ছে আর তেহেলকা ও কফিন কেসের ঘটনাধারায এর নৈতিক মনোবলও অনেক নীচে। শাসক শ্রেণীসমূহের মধ্যকার দ্বন্দ্বসমূহ তীক্ষ্ণ না হলেও সিরিয়াস। পরিস্থিতি শোচনীয়তর হওয়ার সাথে সাথে এটাও বেড়ে যেতে বাধ্য।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিপ্লবী পরিস্থিতি সিএম (চারু মজুমদার)-এর সময়ের চাইতে অনেক বেশী অনুকূল। মার্কিন-বিরোধী, যুদ্ধ-বিরোধী ও ভূমণ্ডলীকরণ-বিরোধী চেতনা দ্রুত বর্ধনশীল। মতাদর্শিক পার্থক্যসমূহ বেশ পরিমানে  চিহ্নিত করা হয়েছে আর সংশোধনবাদী ও বিপ্লবী শক্তির মধ্যে মেরুকরণ বাড়ছে। অন্ধ্র প্রদেশ, বিহার ও দণ্ডকারণ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের বিশাল অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে যা প্রমাণ করেছে যে সশস্ত্র সংগ্রাম দীর্ঘকালব্যাপী টিকিয়ে রাখা সম্ভব। kc.tifঅধিকন্তু, সেগুলো আমাদের বিপ্লবের স্তম্ভ। ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই আমাদেরকে যুদ্ধ প্রশ্নটি অধ্যয়ন করতে হবে। প্রতিকূল দিকসমূহ নিয়ে শুধু চিrকার করায় কাজ হবেনা। মাওবাদী হিসেবে আমাদেরকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক  দিকগুলোকে বৈচারিকভাবে মাপতে হবে, অনুকূল দিকগুলিকে ব্যবহার করতে হবে যাতে প্রতিকূল দিকগুলিকে পরিবর্তন করা যায়। যেমনটা মাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, “শত্রুকে জান ও নিজেকে জান তাহলে একশবার যুদ্ধ করলেও পরাজিত হবেনা।” প্রতিটি দেশের মাওবাদীদের বিপ্লবী যুদ্ধের বিকাশের মূর্ত নিয়মগুলিকে অধ্যয়ন করতে হবে, একের অভিজ্ঞতা থেকে অন্যকে শিখতে হবে এবং মার্কসবাদ-লেনিননবাদ-মাওবাদকে মূর্ত বাস্তবতায় সৃজনশীলভাবে প্রয়োগের পদ্ধতি বিকশিত করতে হবে যাতে জনগণের সুপ্ত বিপ্লবী ক্ষমতাকে উrসারিত করা যায়, আর জাতীয়ভাবে এক জোয়ার সৃষ্টি করা যায়।

সামগ্রিক যুদ্ধের ধারণা

আমাদের মতো আধা-সামন্ততান্ত্রিক আধা-উপনিবেশিক দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধ পরিচালনার কাজ বস্তুগতভাবে ইতিমধ্যেই আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। তাই, প্রথম থেকেই আমাদের সকল পার্টি-কাজের ভারকেন্দ্র হতে হবে যুদ্ধ। মাও বলেন, “যুদ্ধ বেঁধে ওঠার আগে সকল সংগঠন ও সংগ্রাম হচ্ছে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য…যুদ্ধ বেঁধে ওঠার পর সকল সংগঠন ও সংগ্রাম যুদ্ধকে সহযোগিতা করে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে…।”(যুদ্ধ ও রণনীতির back1.tifসমস্যা)। এখানে এটা পরিস্কার যে সকল সংগঠন ও সংগ্রামকে যুদ্ধের আওতার মধ্যে আসতে হবে অথবা যুদ্ধ পরিচালনার আগে ও পরে যুদ্ধের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে হতে হবে। মাওবাদী গণযুদ্ধের তত্ত্বের এই দিকটি সিপিএন (মাওবাদী) ও  পিসিপি ভালভাবে আত্মস্থ করেছে। সামগ্রিক যুদ্ধ-এর তাদের ধারণায় এই দিকটির প্রয়োগের প্রকাশ ঘটেছে। তারা যে পরিকল্পনা সূত্রায়িত করেছিলেন তা গণসংগঠন ও গণসংগ্রামের ভূমিকাকে হিসেবে নিয়েছে। পরিকল্পনাসমূহে গনসংগ্রামের রাজনৈতিক সারবস্তুও মূর্ত করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট উপস্তর ও মূর্ত অভিযানসমূহে প্রয়োজন ও কর্তব্যের সাথে সংগতি রেখে বিকল্পরূপে উভয় ধরণের সংগ্রামের প্রতিভাদীপ্ত ব্যবহার হচ্ছে এই দিকটির সৃজনশীল প্রয়োগ-যা শেখাও গুরুত্বপূর্ণ।

মাও বলেন, “বিজয় মানে যুদ্ধসমূহের বিজয়ের সমষ্টি নয়।” রণনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা আমাদের দেখতে হবে। বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত এ্যাকশন, সশস্ত্র সংগ্রাম আর সামগ্রিক যুদ্ধের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। সামগ্রিক যুদ্ধ হচ্ছে একটি ঘোষণাঃ যথেষ্ট হয়েছে, এখন আমরা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছি ব্যবস্থাকে সমূলে উrপাটিত করতে। এটি গ্রাম ও শহরাঞ্চলে একইসাথে পরিচালিত হয়, শহরকে পরিপূরক হিসেবে নিয়ে। কেবল এক সার্বিক প্রচেষ্টা সহকারে আমাদের সকল সামর্থ্যকে যুদ্ধে ধাক্কা (পুশ) অর্থাr রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে পরিকল্পিতভাবে চালিত করার মাধ্যমে জনগণের পূর্ণ বিপ্লবী সুপ্ত শক্তিকে তা উrসারিত করবে। (ঐতিহাসিক তrপরতার সামগ্রিকতা বাড়ার সাথে সাথে, যার স্বার্থ সে রক্ষা করে সেই জনগনের উত্থানের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাবে- মার্কস-এঙ্গেলস।) কেবল তখনই আমরা একদিকে শত্রু অন্যদিকে বিভিন্ন শ্রেণীর গভীরতর হওয়া মেরুকরণের মধ্যে সীমারেখা অঙ্কন করতে পারবো; শুধুমাত্র শত্রুদমনকে প্রতিরোধ অথবা প্রতিশোধের জন্য যুদ্ধের দ্বারা নয়। কেবল তখনই আমরা আমাদের নিজস্ব প্রচেষ্টা দ্বারা, দেশে একটি বিপ্লবী জোয়ার সৃষ্টি করতে সক্ষম হবো, এটা নিজে থেকে কখন আসবে তার জন্য অপেক্ষা না করে।  আমাদের গণযুদ্ধের দিকে একটি ধাক্কা দিতে ও এর নিজ ভরবেগ সৃষ্টি করতে-যা অনিবার্যভাবেই জনগনের সাথে মিশে যাওয়ার নীতির সাথে বিজরিত, আমাদের যথোচিত এ্যাকশন বাছাই করতে হবে। প্রতিটি স্তর অথবা উপস্তরের জন্য পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে যা আমাদের রাজনৈতিক বার্তা বহন করবে। শোষনমূলক ব্যবস্থা, নিপীড়ন ও সাম্রাজ্যবাদের প্রতীকের ওপর আঘাত হানে আর জনগন কর্তৃক দীর্ঘকাল স্বপ্ন দেখা রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিষ্ঠাকে সেবা করে এমন এ্যাকশন। এটা দেশে চালিত বহুবিধ সশস্ত্র সংগ্রাম ও সশস্ত্র তৎপরতা থেকে মাওবাদী যুদ্ধকে পৃথকীকরণ করবে। আর তখনই আমরা জাতীয় পর্যায়ের কেন্দ্রীয় স্তরে পৌঁছতে পারবো।

আমাদের স্মরণ রাখা দরকার যে প্রতিক্রিয়াশীলদের রাজনৈতিক কর্মসুচীকে যথেষ্ট পরিমানে আঘাত করতে আমরা সক্ষম হইনি। প্রতিটি গণবিরোধী কর্মসূচী ও কর্মনীতি প্রতিক্রিয়াশীলদের দ্বারা সফলভাবে পরিচালিত হওয়ার পর কেবল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছি মাত্র। এখানে যে বিষয়টিতে জোর দেওয়া দরকার তা হচ্ছে আমাদের যুদ্ধের দ্বারা শাসক শ্রেণীকে আমরা প্রকাশ্যে প্রহরা নিতে বাধ্য করেছি। তাদের গতিপথ পরিবর্তনে ও আমাদের যুদ্ধের প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে তাদের বাধ্য করতে হবে। এটা সম্পাদন করা যায় কেবল ও কেবলমাত্র যদি আমাদের কর্মসূচীকে প্রচণ্ডভাবে পরিকল্পিত উপায়ে পরিচালনা করি আর শত্রুর জন্য কেন্দ্রীয় আতঙ্কে পরিণত হই। “…শত্রুর সাথে পার্থক্য রেখা অংকন করা” বলতে মাও এটাই বুঝিয়েছেন, যাকে কেন্দ্র করে মেরুকরন ঘটে। এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা সত্যিকারভাবে সামগ্রিক যুদ্ধের ধারণায় রণনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্বকে আঁকড়ে ধরি এবং সেইমতো অভিযানের মাধ্যমে গণযুদ্ধকে স্তর থেকে স্তরে অগ্রমুখে ধাক্কা দেই আর উলম্ফণের মাধ্যমে বিকশিত করি।

এমন চিন্তা হচ্ছে সরল চিন্তা যে শত্রু শুরু থেকে সামগ্রিক যুদ্ধ পরিচালনা করবেনা কারন তারা সেনাবাহিনী নিয়োগ করবেনা। তারা সবসময় আমাদের সামর্থ্যরে চেয়ে আনুপাতিকভাবে উচ্চতর শক্তি বিনিয়োযিত করে আর সামরিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, মতাদর্শিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে, আবেগগতভাবে, সংস্কৃতিগতভাবে ও কুৎসাগতভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে সামগ্রিক যুদ্ধ পরিচালনা করে। তাই, আমাদের যুদ্ধকে কেবল প্রতিরোধ যুদ্ধে সীমিত করা, শত্রুর প্রতিক্রিয়ায় সীমিত করা কেবল জনগণকে বিভ্রান্ত করাকেই সেবা করে, প্রকৃতপক্ষে যাদের দ্বারা সংগ্রামকে বিরাট তরঙ্গে উচ্চতর স্তরে নিয়ে যাওয়ার কথা। যে ভূমিকা ও কর্তব্য হাতে তুলে নেয়া উচিত তা পরিস্কারভাবে তাদের কাছে আসেনা আর তাই শক্তি পূর্ণভাবে উৎসারিত হয়না। ধ্র“পদী সাহিত্য, ইতিহাস, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং পার্টি অভিজ্ঞতাসমূহেরsquad.tif সংশ্লেষণ থেকে অগ্রবর্তী ক্যাডার ও নেতারা যে শিক্ষা গ্রহন করে, তার থেকে বৈশাদৃস্যমুলকভাবে জনগন প্রধানত অভিজ্ঞতা থেকে শিখে। যখন বিষয়বস্তু মূর্তভাবে পরিস্কার হয় তখনই জনগন পূর্ণ আত্মবিশ্বাস সহকারে আত্মত্যাগী সংগ্রাম হাতে তুলে নেয় নিজেদের মুক্ত করার  লক্ষ্যে। নেপাল ও পেরূ ছাড়াও নকশালবাড়ীর অভিজ্ঞতা এই দৃষ্টিভঙ্গীর একটি মূর্ত উদাহারণ। যেখানে সূচনায় পেরু ও নেপাল সংগ্রামের চারটি রূপের সবকটি ব্যবহার করেছে, তার তুলনায় যদিও নকশালবাড়ী কেবল সংগ্রামের এক রূপঃ খতমকে অনুশীলন করেছিল, ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে সর্বাত্মকভাবে যাওয়ার রাজনৈতিক সার ছিল প্রবল ও পরিস্কার। সেকারণেই তা বিপ্লবী সংগ্রামের এক তরঙ্গ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিল। গণযুদ্ধের এক নতুন তরঙ্গ পরিচালনার এটাই উপযুক্ত সময়, তাই মাওবাদী গণযুদ্ধের তত্ত্বকে তার সামগ্রিকতায় পুংখানুপুংখরূপে আত্মস্থ করা, আর সৃজনশীলভাবে তাকে প্রয়োগ করা দরকার।

রণনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রশ্ন

পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজই করা সম্ভব নয় তা সে যে স্তরেরই হোকঃ একটি ছোট এ্যাকশন অথবা বড় অপারেশন। মাও বলেন যে যদিও যুদ্ধে অনিশ্চয়তা রয়েছে তথাপি একটি অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ণ করা সম্ভব। বিভিন্ন স্তরের পরিকল্পনা তৈরি করা যায়। রণকৌশলগত পরিকল্পনা অথবা খণ্ডযুদ্ধের জন্য পরিকল্পনা অর্থাr নির্দিষ্ট এ্যাকশন যার ক্ষুদ্রতর লক্ষবস্তু, ক্ষুদ্রতর বাহিনী-সংস্থান, দ্রুতগতি, ক্ষুদ্রতর বিরতির কারণে আর প্রচুর পরিমাণে শত্রুর গতিবিধির ওপর নির্ভরশীল থাকার কারণে, অনিশ্চয়তার মাত্রা অনেক বেশী। কিন্তু তারপরও আমাদের যতন সহকারে এই এ্যাকশনসমূহের পরিকল্পনা করতে হবে সেই অনুসারে। কতগুলি খণ্ডযুদ্ধ ও এ্যাকশন নিয়ে গঠিত অভিযানসমূহের পরিকল্পনাকেও পরিবর্তন অথবা বাতিল করতে হবে সেই অনুসারে। কতগুলি খণ্ডযুদ্ধ ও এ্যাকশন নিয়ে গঠিত অভিযানসমূহের পরিকল্পনা এক বৃহত্তর বাহিনী সংস্থানে করা হয়, আর দীর্ঘতর সময়কালব্যাপী সাধারণভাবে করা যায়। কিন্তু এর জন্য আংশিকভাবে অথবা কখনো সম্পূর্ণ পরিকল্পনাসমূহ পরিবর্তন করতে হবে। একইভাবে রণনৈতিক পরিকল্পনা সমগ্র রননৈতিক স্তরের জন্য প্রযোজ্য, অর্থাr রণনৈতিক আত্মরক্ষা, রণনৈতিক ভারসাম্য ও রণনৈতিক আক্রমণ, এবং স্তর পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে হবে (‘দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ সম্পর্কে’ তে যেভাবে বর্ণিত আছে, মাওসেতুঙের সামরিক রচনাসমূহ, পৃঃ ২৪৫, পয়েন্টঃ ৮৮)। একই প্যারায় মাও জোর দেন, “সুযোগ ও পরিস্থিতি অনুসারে রণকৌশল, অভিযান ও রণনৈতিক পরিকল্পনা রচনা ও পরিবর্তন করা যুদ্ধ পরিচালনার চাবিকাঠি।” এখানে দুটি বিষয় মূল্যবান। একটি হচ্ছে, তিনি যুদ্ধ পরিচালনার কথা বলেন, স্রেফ সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা নয়, তা করতে হবে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য দেশব্যাপী ক্ষমতা দখলের দিকে নির্দিষ্ট করে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে পরিকল্পনা রচনা করা বিশেষত রণনৈতিক পরিকল্পনা। পরিকল্পনা রচনায় মাও এ ধরণের শর্ত আরোপ করেননা যে “সারা চীন বড় পার্টি গঠিত হওয়ার পরই কেবল”… অথবা “বহু ফ্রন্টে প্রবল সংগ্রামের মুখে যখন শত্রু সেনাবাহিনী সরাতে বাধ্য হবে, আর পরিস্থিতি অনুকূল হবে…তখন…” ইত্যাদি। কিন্তু তিনি সুযোগ ও পরিস্থিতি অনুসারে জোর এবং বলেন যে এটাই হচ্ছে চাবিকাঠি।  এর অর্থ হচ্ছে স্রেফ কোন স্থানীয় খেলা নয়, বরং একটি বৃহত্তর নাটকের জন্য আমাদের নিজেদের প্রস্তুত করা। তাই তা অর্জন করার জন্য একটি যুদ্ধ পরিচালনায় নিজেরা সক্ষম হতে, আমাদের স্তর ভিত্তি করে একটি রণনৈতিক পরিকল্পনা দরকার, এবং একটি বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে এর মধ্যকার উপস্তর সমূহের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের বিকাশকে অধ্যয়ন করেও।

অধিকন্তু তিনি বর্ণনা করেন, “রণনীতি ও রণকৌশলের মূর্ত প্রয়োগ হচ্ছে যুদ্ধ পরিকল্পনাসমূহ, তা অবশ্যই নমনীয় হতে হবে যাতে তারা যুদ্ধের পরিস্থিতিসমূহের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আমাদের সর্বদা চেষ্টা করতে হবে আমাদের দূর্বলতাকে শ্রেষ্ঠত্বে আর পরোক্ষতাকে উদ্যোগে রূপান্তরিত করতে, যাতে শত্রু ও আমাদের মধ্যকার পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করা যায়।” এখানে মাও বস্তুগত বাস্তবতার পরিবর্তন অর্জনে আমাদের আত্মগত সামর্থ্যরে রূপান্তরে সচেতন ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। যুদ্ধে আমাদের উদ্যোগের মাধ্যমেই কেবল আমরা যুদ্ধকে যথাযথ দিকে পরিচালিত করতে পারি, আর পরিস্থিতির পরিবর্তনে বাহ্যিক বিকাশের দিকে অপেক্ষা না করে পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে পারি। প্রকৃতি ও সমাজে পরিবর্তন সংঘটিত হয় উলম্ফণের মাধ্যমে, তাই আমরা তা সিদ্ধান্ত করতে পারি রণনৈতিক যুদ্ধ পরিকল্পনা দ্বারা যা হচ্ছে নমনীয়; আমরা সচেতনভাবে যুদ্ধে উদ্যোগ লাভ করি, আমাদের আত্মগত সামর্থ্যে উলম্ফণ অর্জন করি, আর অব্যাহতভাবে বস্তুগত পরিস্থিতিকে আমাদের পক্ষে পরিবর্তন করি।

ব্যাপকতর স্তরে পরিস্থিতিকে বোঝার ক্ষেত্রে মাও যাকে আখ্যায়িত করেন “যুদ্ধের সামগ্রিক পরিস্থিতি”:  আমাদের আত্মস্থ করতে হবে যে যখনই আমরা যুদ্ধ শুরু করি একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি জন্ম নেয়। এলাকাভিত্তিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে যখন আমরা সামগ্রিক যুদ্ধ সূচনা করি, আমাদেরকে সর্বভারতীয় পর্যায়ে যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা চিন্তা করতে হবে। সমগ্র পার্টিতে এভাবে চিন্তা করা গড়ে যদি আমরা না তুলি, যুদ্ধের আঞ্চলিকতাবাদ ও ক্রমান্বয়বাদে গড়িয়ে পড়ার ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। নেপাল ও পেরু থেকে বৈশাদৃস্যমূলকভাবে আমাদের দেশ একটি বড় দেশ, আর অসমভাবে হলেও বিভিন্ন এলাকায় একই সাথে যদ্ধ সংঘটিত হবে। কিন্তু নিশ্চিতভাবে তা হবে একটি একক যুদ্ধের অংশ হিসেবে। সফলভাবে তা অর্জিত হতে পারে রণনৈতিক যুদ্ধ পরিকল্পনা দ্বারা। যুদ্ধে ক্রমান্বয়বাদ উলম্ফনের মাধ্যমে বিপ্লবী প্রক্রিয়ার বিকাশকে অস্বীকার করে, আর ‘তরঙ্গাকারে বিকাশ’-এর মাওবাদী উপলব্ধির বিরুদ্ধে ইঞ্চি ইঞ্চি করে সরলরৈখিক বিকাশ কামনা করে। ক্যাডার ও কমান্ডারদের মধ্যে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা দরকার।

রণনীতির বিজ্ঞান অধ্যয়ন করে রণনৈতিক চিন্তার উদ্ভব ঘটে। “চীনের বিপ্লবী যুদ্ধের রণনীতির সমস্যা” শীর্ষক তাঁর রচনায় মাও এসম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন। তিনি সংজ্ঞায়িত করেন, “রণনীতির বিজ্ঞানের কাজ হল যুদ্ধ পরিচালনার সেই নিয়মসমূহ অধ্যয়ন করা যা একটি যুদ্ধ পরিস্থিতিকে সমগ্রাভাবে পরিচালনা করে।” অভিযানসমূহের বিজ্ঞান ও রণকৌশলের বিজ্ঞানের কাজ হল যুদ্ধ পরিচালনার সেসব নিয়ম অধ্যয়ন করা যা একটি আংশিক পরিস্থিতিকে পরিচালনা করে।” তিনি আরো ব্যাখ্যা করেন কেন “একটি অভিযান অথবা কৌশলগত অপারেশন (অর্থাr নির্দিষ্ট খণ্ডযুদ্ধ, এ্যাকশন)-এর কমান্ডারকে রণনীতির নিয়মসমূহ অন্ততঃ কিছুটা হলেও বোঝা দরকার। “কেননা সমগ্রের উপলব্ধি অংশের সমাধানে সহায়তা করে, আর যেহেতু অংশ সমগ্রের অধীন।” এর অর্থ হচ্ছে একটি রণনৈতিক পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গী থাকতে হবে, আর তার ওপর ভিত্তি করে রণকৌশলগত পরিকল্পনা ও অভিযান পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। মাও সেসব লোকদের চিহ্নিত করেন যারা পরিকল্পনা করাকে অস্বীকার করে, তিনি তাদের অপেক্ষবাদী আখ্যায়িত করেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিকে সামগ্রিকভাবে মাথায় রেখে সমগ্র স্তর ও তাতে যে উপস্তরসমূহ রয়েছে তার জন্য তুলনামূলক স্থায়ী পরিকল্পনা রচনা করা হচ্ছে একটি প্রয়োজনীয়তা, যার ওপর ভিত্তি করে উপস্তরের জন্য অভিযানসমূহের পরিকল্পনা রচনা এবং প্রতিটি অভিযানের খণ্ডযুদ্ধ ও এ্যাকশনের পরিকল্পনা রচনা করা দরকার।

কমরেড মাওয়ের নেতৃত্বাধীন সিপিসির নেতৃত্বে চীন বিপ্লবের পরে, কেবল পেরু ও নেপালেই রণনৈতিক পরিকল্পনা করার মূর্ত অনুশীলন আমরা দেখি, আর হয়েছিলও সৃজনশীলভাবে। এই উপলব্ধির ওপর ভিত্তি করে পিসিপি চেয়ারম্যান গনজালো অক্ষ, উপ অক্ষ, তrপরতার গতিমুখ ও গতিরেখা প্রতিষ্ঠা করেন যাতে যুদ্ধের রণনৈতিক গতিমুখ বজায় রাখা যায়। তা করা হয়েছিল সামাজিক সম্পর্কসমূহের ইতিহাস, অতীত যুদ্ধসমূহ, রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ভৌগলিক অবস্থা-এর সার্বিক অধ্যয়নের পর। এর ওপর ভিত্তি করেই জাতীয় সামরিক পরিকল্পনা সূত্রায়ণ করা হয়েছিল-যা ছিল রননৈতিকভাবে কেন্দ্রীভূত আর কৌশলগতভাবে বিকেন্দ্রীভূত এই মাওবাদী উপলব্ধি দ্বারা পরিচালিত যে “প্রতিটি পরিকল্পনা হচ্ছে একটি ভাবাদর্শ, আর বাস্তবতার প্রতিটি জটিলতাকে অবশ্যই প্রতিফলিত করবে।” তারপর রণনীতি ও রণকৌশলকে যুক্ত করে রণনৈতিক কার্যকরী পরিকল্পনা সূত্রায়িত করা হয়েছিল।

সমগ্র পার্টি কর্তৃক অনুসৃত রণনৈতিক কার্যকরী পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে এর নিচের সকল কমিটি নিজ নিজ রণনৈতিক কার্যকরী পরিকল্পনা সূত্রায়িত করে। শত্রু ও আমাদের মধ্যকার পরিস্থিতির সার্বিক সামরিক পর্যবেক্ষণ ও যতনশীল অধ্যয়নের মাধ্যমে আর রাজনৈতিক রণনীতি ও সামরিক রণনীতির দ্বারা পরিচালিত হয়ে সকল সামরিক পরিকল্পনা রচনা করা হয়। (পিসিপির মৌলিক দলিলসমূহ, পৃঃ ৪৩ থেকে)। রননৈতিক কেন্দ্রীভবন ও কৌশলগত বিকেন্দ্রীভবন নিম্নতর কমিটিগুলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করে পথ প্রদর্শক লাইন আর এলাকার প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে কোন্ নির্র্দিষ্ট সংগ্রাম সংশিষ্ট এলাকায় পরিচালিত হবে তার। সমগ্র পার্টি কর্তৃক অনুসৃত রননৈতিক অপারেশন পরিকল্পনা  প্রতিটি অভিযানের রাজনৈতিক সারবস্তু প্রদান করে, পার্টি ইউনিটসমূহের সংখ্যাবৃৃদ্ধির আকারে cpimaoistসাংগঠনিক উলম্ফণ, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে যুদ্ধ অথবা নয়া গণক্ষমতার লক্ষ্যে জনগণের মধ্যে মিশে গিয়ে সংগ্রামের নতুন এলাকাসমূহ বিকাশের মাধ্যমে। সামরিক সারবস্তু যে উলম্ফণ অর্জন করতে হবে তার কথা বলে। এ সম্পর্কে আঞ্চলিক কমিটিসমূহ এ্যাকশনসমূহের সংখ্যা, এ্যাকশনের রূপসমূহ, প্রচার ও সংগ্রাম নির্ধারণ করে। তারা লক্ষ্য তুলে ধরে একটি নির্দিষ্ট অভিযানে পার্টি কী পরিমানে বাড়তে যাচ্ছে, গণযুদ্ধ কতটুকু বাড়তে যাচ্ছে, গনক্ষমতা কতটুকু বাড়তে যাচ্ছে পিজিএ (গণ গেরিলা বাহিনী-বাংলা অনুবাদক) কতটুকু বাড়তে যাচ্ছে। অভিযানের শেষে সামগ্রিক সারসংকলন করা হয়, আর দেরী না করে নতুন অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি অভিযানের সারবস্তু প্রতিটি সময়ে ভিন্ন এবং স্রেফ পুনরাবৃত্তি নয়। যুদ্ধের মাত্রাকে উচ্চতর স্তরে উন্নীত করতে, প্রতিটি সময়ে আরো জটিল পরিস্থিতিতে আরো তীব্র যুদ্ধের লক্ষ্যে তারা এটাকে একটা নিয়মে পরিণত করেছে।

যুদ্ধের গতিকে উচ্চতর করতে আর বস্তুগত পরিস্থিতিকে বিপ্লবের পক্ষে চালিত করতে পার্টির সচেতন প্রচেষ্টাকে আমরা এখানে লক্ষ্য করি। কমরেড গনসালো এই সৃজনশীল প্রয়োগ সাধন করেন, যাকে সিপিএন(এম) কর্তৃক অধ্যয়ণ করা হয়েছে এবং তাদের পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেয়া হয়েছে। নেপালের পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন্। দীর্ঘ দিন ধরে পার্টি কেবল শান্তিপূর্ণ সংগ্রামে ছিল আর সংস্কারবাদী স্টাইলের কাজ প্রাধান্য বিস্তার করে ছিল। নিজেদেরকে একটি যুদ্ধের পার্টিতে রূপান্তরের কাজ তাদের হাতে তুলে নিতে হয়েছিল- আর তা পিসিপি থেকে খুবই ভিন্ন। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মতাদর্শিক সুসংহতকরন তাদের চালাতে হয়েছিল।

এলাকাভিত্তিক ক্ষমতা দখল আমাদের মূল লক্ষ্য

এলাকাভিত্তিক ক্ষমতা দখল অথবা ঘাঁটি এলাকা গঠণ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের সারবস্তু। কমরেড চারু মজুমদার এটা চিহ্নিত করেন এবং এর জন্য সর্বাত্মকভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা। সিএম বলেন, “হ্যাঁ, কমরেডগণ, আজকে আমাদের সাহসিকতার সাথে দৃঢ় কন্ঠে জনগণের সামনে বলতে হবে যে এলাকা ভিত্তিক ক্ষমতা দখলই হচ্ছে আমাদের পথ। বুর্জোয়াদের দূর্বল জায়গাগুলোতে চরমতম আঘাত হানার মাধ্যমে তাদের কাঁপিয়ে দিতে হবে।” আমরা তাঁর সমগ্র রচনা জুড়ে এ ধরণের সূত্রায়ণ দেখতে পাই। তিনি এই সত্যকে আত্মস্থ করেন যে যত ছোট এলাকা অথবা যত ক্ষুদ্র সময়ের জন্যই হোকনা কেন কৃষকরা যদি যুগ যুগের শোষণ ভেঙে ফেলে আর ক্ষমতার স্বাদ নেয়, তাদের বিপ্লবী শক্তিমত্তা পরিপূর্ণভাবে উrসারিত হবে। “…লাল রাজনৈতিক ক্ষমতার সংহতকরণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিপ্লবী জোয়ার ত্বরান্বিত করুন।”-মাওয়ের এই উপলব্ধির সাথে এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। গণযুদ্ধ হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর রণনীতি-দরকষাকষির মাধ্যমে নয়, কেবলমাত্র পুরোনো রাষ্ট্রের ধ্বংসের মাধ্যমেই নতুন রাষ্ট্রের নির্মাণ একই সাথে শুরু হবে। ঘাঁটি এলাকার নির্মাণ স্রেফ এক সামরিক রণকৌশলের প্রশ্ন নয় বরং এক মহা রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

এলাকাভিত্তিক ক্ষমতা দখল, ঘাঁটি এলাকা প্রতিষ্ঠা করা ও সেগুলোকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে বিরতিহীনভাবে সামনে ঠেলে নেয়ার প্রক্রিয়ার নির্দেশক এক স্বচ্ছ লাইন ছাড়া অন্য সকল কাজই হবে অর্থহীন অনুশীল্ন। ঘাঁটি এলাকা গড়ে তোলার প্রশ্নে যে কোন পেছনে টানার দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে দ্ব্যার্থতাবোধকতার প্রতিফলন এবং মাওবাদের বিকৃত উপলব্ধি, আর তা হচ্ছে এক ধরণের পর্যায় তত্ত্ব । মাও খুব নির্দিষ্টভাবে বলেছেন, “কোন বিপ্লব অথবা বিপ্লবী যুদ্ধ তার উদ্ভব, ছোট শক্তি তেকে বড় শক্তিতে বৃদ্ধি প্রাপ্তিতে, রাজিৈনতিক ক্ষমতার অনুপস্থিতি থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে, লাল ফৌজের অনুপস্থিতি থেকে সৃষ্টিতে এবং বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকার অনুপস্থিতি থেকে তাদের প্রতিষ্ঠায় অতি অবশ্যই আক্রমণাত্মক হতে হবে এবং রক্ষণশীল হতে পারেনা, আর রক্ষণশীলতার দিকে প্রবণতাকে অতি অবশ্যই বিরোধিতা করতে হবে।” “ঘাঁটি এলাকার রণনৈতিক গুরুত্ব ও তার ওপর নির্ভর করে আমাদের শক্তিসমূহের পশ্চাদ এলাকা হিসেবে রণনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি এটা বিদ্যমান ব্যবস্থার প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়, সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে দ্বন্দ্বসমুহের সমাধানে এলাকাভিত্তিক ক্ষমতা দখলের কেন্দ্রীয় সমস্যাকে তুলে ধরে, আর জনতাকে উদ্দীপ্ত করে যখন তারা দেখতে পায় India's Red Armyতাদের সংগ্রামের ফলাফল, আর প্রকৃত আগুয়ান দল হিসেবে পার্টির প্রতি আস্থা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্টিত করে। সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য আমরা লড়াই করি, ব্যক্তিগত ক্ষমতার জন্য নয়। আমরা ভ্রাম্যমান বিদ্রোহী দস্যুদল ও ঘাঁটি এলাকা সংক্রান্ত তাদের উপলব্ধির বিরুদ্ধে। নয়া রাষ্ট্রটি গণযুদ্ধের মধ্যে গড়ে ওঠে আর বিকাশের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। পুরোনো রাষ্ট্রটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, যেমন পুরোনো রাষ্ট্র/নয়া রাষ্ট্র দ্বন্দ্বটি প্রকাশ খুঁজে পায় যতক্ষন না প্রতিক্রিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক পরিকল্পনাসমূহ আর জনগণ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিক্ষিপ্ত হচ্ছে।” (পিসিপির মৌলিক দলিলসমূহ, পৃঃ ৫৩)। পুরোনো রাষেট্রর প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নতুন রাষ্ট্রের গঠন জনগণের বিপ্লবী শক্তিমত্তাকে উrসারিত করে আর দৃঢ়ভাবে তাদের আশা সঞ্চার করে।

যখন আমরা রণনৈতিক এলাকাসমূহে গণযুদ্ধ পরিচালনা করবো, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিসমূহের তরফ থেকে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবো (প্রথম পর্যায়ে সেনাবাহিনী নয়)। প্রাথমিক কালে এটি হচ্ছে সর্বাধিক কঠিনতম পর্ব যখন আমরা দূর্বল আর শত্রু হচ্ছে শক্তিশালিতর। শত্র“কে এলাকা থেকে বিতাড়নের লক্ষ্যে যুদ্ধকে সচেতনভাবে ঠেলে এগিয়ে নিয়ে আমরা সামর্থ্য অর্জন করবো এবং তৎপরতার এলাকাকে গেরিলা জোনে রূপান্তরিত করবো। এটা হচ্ছে সেই সময়কাল যখন কোন পক্ষের এলাকর ওপর সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। এই গেরিলা জোনসমূহকে সৃজনশীলভাবে ঘাঁটি এলাকায় রূপান্তরিত করতে হবে, আর তা হচ্ছে একটি কষ্টসাধ্য কাজ। “… গেরিলাজোনের ঘাঁটি এলাকায় রূপান্তর হচ্ছে একটি কষ্টসাধ্য সৃজনশীল প্রক্রিয়া যার সম্পাদন নির্ভর করে কী পরিমাণে শত্রু ধ্বংস হচ্ছে আর জনগণ জাগ্রত হচ্ছে তার ওপর।” (গেরিলা যুদ্ধের রণনীতির সমস্যা, মাও সামরিক প্রবন্ধসমূহ, পৃঃ ১৭২)। মাও ঘাঁটি এলাকা নির্মাণের তিনটি শর্তের কথা বলেন, তা হচ্ছে-বিপ্লবী সশস্ত্র শক্তির অস্তিত্ব, শত্র“র পরাজয় আনয়ন ও জনগণকে সমাবেশিত করা। ঘাঁটি এলাকা নির্মানের জন্য প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে গেরিলা জোনের অস্থায়ী প্রকৃতি চিহ্নিত করা। ঘাঁটি এলাকা নির্মানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার অনুপস্থিতি অথবা বছরের পর বছর যে কোন অজুহাতে তা বিলম্বিত করার অর্থ হচ্ছে শত্র“কে গেরিলা জোন থেকে বিতাড়িত করার কোন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না থাকা। তাই, শত্র“ ও আমাদের শক্তিসমূহ দীর্ঘকাল পাশাপাশি অবস্থান করে। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাকে বজায় রাখতে সংগ্রাম চালাই, আর শত্র“ তার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সংগ্রাম চালায়। যেহেতু তারা সামরিকভাবে সংঘাত চালাতে পারেনা তাই শত্রু জনগণকে জয় করতে আর আমাদের সমর্থন ঘাঁটিকে সংকুচিত করতে তাদের পক্ষে সম্ভাব্য সকল উপায় নিযুক্ত করে। অনুপ্রবেশ, প্রলুব্ধকরণের রাজনীতি ও উন্নয়ন কর্মসূচীসমূহ জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। সেখানে আমরা অর্থনীতিবাদের জন্য স্থান পরিত্যাগ করে পাল্টা কর্মসূচী  ও তৎপরতা পরিচালনা করি। মাও এক বিশেষ ধরণের গেরিলা জোনের কথা বলেছেন যা দীর্ঘকাল ধরে গেরিলা জোন হিসেবে বজায় থাকবে। কিন্তু তা হচ্ছে একটি ‘বিশেষ ধরণ’ এবং কিছু নির্দিষ্ট কারণে তাকে সাধারণ নিয়ম হিসেবে নেয়া যায়না। ”শত্র“-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলসমূহ, সমতলভূমিাত ও রেল লাইন ধরে এ ধরণের উদাহারণ পাওয়া যাবে।” (গেরিলাযুদ্ধে রণনীতির সমস্যা, মাও সামরিক রচনাসমূহ, পৃঃ১৭২)

তাই, গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে প্রধান প্রশ্ন কারণ কেবলমাত্র এটাই নিপীড়িত জনগণের অসন্তোষের প্রতি একটা বিকল্প দেবে- আশাহীনদের আশা দেবে, আর বিপ্লবী তরঙ্গকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে। আমাদের সৃজনশীলভাবে নিজ সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে, সশস্ত্র সংগ্রাম ও গণসংগ্রামকে বিপ্লবের সর্বোচ্চ লাভের জন্য ব্যবহার করতে হবে আর শত্রুকে রাজনৈতিকভাবে, মতাদর্শিকভাবে ও সামরিকভাবে বিতাড়িত করতে হবে।

পিসিপি ও সিপিএন (এম) কর্তৃক মাওবাদী নীতির সৃজনশীল প্রয়োগই বিশ্বের অন্যান্য বিপ্লবী সংগ্রাম থেকে মাওবাদী নেতৃত্বাধীন গণযুদ্ধের পার্থক্যকে চিহ্নিত করে। পেরু ও নেপালে গণযুদ্ধের প্রচন্ড ও সর্বাত্মক পরিচালনা শত্রুদেরকে দুই বrসরের মধ্যে গেরিলা জোনের বাইরে নিক্ষেপ করেছে। এটা স্রেফ একারণে নয় যে শত্রু দূর্বল, বরং প্রধানত যুদ্ধে উদ্যোগ বজায় রাখা আর বস্তুগত পরিস্থিতি ও আত্মগত সামর্থ্যরে সঠিক মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে রচিত পরিকল্পনা অনুসারে আমাদের সামর্থ্যকে নমনীয়তার সাথে পূর্ণ ধাক্কাসহ কৌশলী বিনিয়োগ করে। পুলিশ স্টেশন, সামন্ত-শোষণ ও সামন্তপ্রভুদের প্রতীকের ওপর আক্রমণ ও বাছাইকৃত খতমের মাধ্যমে তারা শত্রুর  ওপর মৃত্যু আঘাত হেনেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে, পুলিশ ও শত্রু শক্তির কর্তৃপক্ষ বিশাল গ্রামাঞ্চল ছেড়েছে ক্ষমতা শূণ্যতার জন্ম দিয়ে। গোপন গণ সরকার এই শূণ্যতাকে প্রথম পূরণ করেছে এবং তারপর প্রকাশ্যে। “চীনের অভিজ্ঞতাকে গোঁড়ামীবাদীভাবে গ্রহণ করা ভুল; শর্তসমূহ বিদ্যমান থাকলে নীতি ঘাঁটি এলাকার বিনির্মাণ দাবী করে। কিন্তু এই প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জন করতে সেই ডানপন্থাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে যে দাবী করে যে ব্যাপক সংখ্যক শত্রু শক্তিকে পরাজিত করা হয়নি, যখন সমস্যা ছিল যে শত্রু তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিকল্পনাসমূহের পরাজয়ের ফলত্রুতিতে গ্রামাঞ্চল ত্যাগ করেছে।” (পিসিপির মৌলিক দলিলসমূহ, পৃঃ৪১)

শহরের কাজ

এটা একটা বিভাগ যা মনোযোগ দাবী করে। শহরকে কেবল তহবিল গঠণ, বুদ্ধিজীবি গড়ে তোলা এবং শান্তিপূর্ণ প্রচার ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের উপায় মনে করা হচ্ছে একটি মারাত্মক ভুল লাইন। সি এম এর রচনার কোথাও শহর-কাজের এমন করুন উপলব্ধি আমরা দেখতে পাইনা। পার্টি গড়ে তোলা ও গণ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলাই যে কেবল সম্ভব তাই নয় বরং গেরিলা যুদ্ধও পরিচালনা করা সম্ভব। নকশালবাড়ীর পর কোলকাতায় আমাদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা হচ্ছে-যে মজুদ শক্তি সঞ্চিত রয়েছে তার উজ্জল উদাহারণ। অন্যদিকে সি এম তাঁর প্রেরণাদায়ক লেখার মাধ্যমে উচ্চতাকে মাত্রাযুক্ত করতে জঙ্গী তরুনদের আন্দোলনে নিয়ে আসতে অনুকূল পরিস্থিতিকে ব্যবহারে সক্ষম ছিলেন। যদিও শহরের কাজে পরিকল্পিত কাজের অভাব আমরা দেখি, বিপ্লবী সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে শহরের কাজের ভূমিকা সম্পর্কে তাঁর কোন সন্দেহ ছিলনা।

অনুশীলনের মাধ্যমে পিসিপি ও সিপিএন(এম) প্রমাণ করেছে যে সচেতন ও পরিকল্পিত প্রচেষ্টা দ্বারা শহরের কাজের বিরাট মজুদ শক্তিকে বিপ্লবের পক্ষে কাজে লাগানো যায়। শহরের কাজের লাইন সম্পর্কে পিসিপি বলছে, “গণযুদ্ধ আমাদের ক্ষেত্রে এক ঐক্যবদ্ধ গণযুদ্ধের নির্দিষ্ট রূপ ধারণ করে যাতে গ্রামাঞ্চল হচ্ছে প্রধান এবং শহরের কাজ হচ্ছে সহায়ক।” (পিসিপির মৌলিক দলিলসমূহ, পৃঃ ২৭)। শহরে ঘাঁটি এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা তাদের নেই, যেহেতু তা অসম্ভব। পার্থক্য হচ্ছে, শহরে যা গড়ে তোলা হয় তা হচ্ছে-নয়া রাজনৈতিক ক্ষমতা নয়; ঘাঁটি এলাকা নয়, বরং গণ বিপ্লবী প্রতিরোধ আন্দোলনে প্রতিরোধ কেন্দ্র সহকারে মূর্ত এক ফ্রন্ট-যা গণযুদ্ধ পরিচালনা করে ও ভবিষ্যত অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নেয় যা সংঘটিত হবে যখন গ্রামাঞ্চল থেকে বাহিনী শহরের ভেতর থেকে অভ্যুত্থানের সাথে সমন্বিত করে শহরগুলির ওপর আঘাত হানবে। imagesপ্রতিটি পরিকল্পনা ও অভিযানের রয়েছে শহর-দিক যাতে এখানে কী কাজ, প্রচার ও গেরিলা এ্যাকশনসমূহ করা হবে তা থাকবে। এভাবে শহরাঞ্চলের কাজের বিকাশের একটি সামগ্রিক লাইন আমরা দেখি। নকশালবাড়ীর অভিজ্ঞতার পর, শহরের কাজ অবহেলিত হয়েছে প্রধানত লাইনের অনুপস্থিতির কারণে। যদিও মাঝে মাঝে কিছু গণ আন্দোলন ও ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রাম চলেছে, বিকাশের নির্দেশনার কোন স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গী না থাকার ফলে তা স্থবির হয়ে গেছে। ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রাম অর্থনীতিবাদের পঙ্কে নিমজ্জিত হয়েছে, আর শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামী মেজাজ বৈধতাবাদের ফাঁসে আটকে গেছে। এটা শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তুলতে, তাদের রাজনীতিকরণ করতে আর অগ্রসেনায় রূপান্তরে ব্যর্থ হয়েছে। আর এর উৎস রয়েছে ক্রমান্বয়বাদে-যাতে বিপ্লবী জোয়ারের উচ্ছাসের জন্য বাহ্যিক কারণ খোঁজা হয়েছে অভ্যন্তরীণ মজুদ শক্তি না দেখে, আর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল রণনৈতিক চিন্তা ও পরিকল্পনার অভাব। ফলে শহরের কাজ পেটি বুর্জোয়াদের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এবং পরোক্ষ সাড়া গ্রহণ করেছে।

সন্দেহ নেই রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রচণ্ড উপস্থিতির কারনে শহরের কাজকে গুণগতভাবে ভিন্ন হতে হবে, কিন্তু আন্দোলনের বিকাশের, আর সেইমতো আমাদের সংগঠনকে প্রস্তুত করার সুযোগ আমরা হারাতে পারিনা। বিশেষত বর্তমানে ও সামনের বছরগুলিতে শহরগুলো মারাত্মক সমস্যা মোকাবেলা করতে যাচ্ছে। ধনী-গরিব বিভাজন বাড়ছে, সুযোগ সুবিধা কমে যাচ্ছে। জীবন যাত্রার উচ্চ খরচ, বেকারত্ব, কারখানা বন্ধ, কঠোর আইন, অস্পর্শকাতর ও বর্বর রাষ্ট্রযন্ত্র, দূনীতি ইত্যাদিসহ জনগণ এই ব্যবস্থার ওপর ত্যাক্ত-বিরক্ত। ভূম্ণ্ডলীকরন, যুদ্ধ ইত্যাদির বিরূদ্ধে জনগণের আন্তর্জাতিক সংগ্রামের যে গল্প ও ছবি প্রায়শই ঝলক দিয়ে ওঠে তা তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করে। প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা ও টিকিয়ে রাখার সম্ভাবনা খুবই উচ্চ। শহর-ভিত্তিক গেরিলা যুদ্ধ গড়ে তোলার বস্তুগত ভিত্তি রয়েছে। এ প্রশ্নে আমাদের চিন্তাকে বিকশিত করতে হবে, তদন্ত চালাতে হবে, জনগনের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে, শক্তিশালী গোপন কাঠামো ও গণকাজ গড়তে হবে ইত্যাদি। বিভিন্ন পর্যায়ের সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে আমাদেরকে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, জনগণের ওপর যাতে তার প্রভাব পড়ে যতক্ষণ পর্যন্ত তার আস্থা লাভ করছে।

আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট আন্দোলনের অগ্রসর অভিজ্ঞতা

স্বীকার করা যায় যে পেরু ও নেপাল খুবই ছোট দেশ, ভারতের তুলনায উভয়েরই একটি দূর্বল শাসক শ্রেণী ও রাষ্ট্র রয়েছে (কিন্তু সম্পূর্ণ শক্তিশালী ও ভীতিকর নিজেদের দেশে)। এমনকি ছোট এ্যাকশনেরও দেশব্যাপী প্রভাব পড়তে পারে। দূর্বল অবকাঠামো ও উপযোগী সামরিক ভৌগলিকতা দীর্ঘকালের জন্য ঘাঁটি এলাকার টিকে থাকাকে সহজতর করে। অনুকুল পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে এটাই সিপিএন (এম) ও পিসিপির প্রচেষ্টাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। স্রেফ তাদের অনুকুলতা সম্পর্কে কথা বলার পাশাপাশি সেই তীক্ষতাকে আত্মস্থ করা দরকার যা দ্বারা তারা নিজেদের প্রেক্ষাপটে মালেমাকে প্রয়োগ করেছে। মূর্ত বাস্তবতায় মার্কসবাদকে প্রয়োগ করার মাধ্যমে সৃজনশীলতার সৃষ্টি হয়, আর এর জন্য মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের মতাদর্শের গভীরতর আত্মস্থকরণ প্রয়োজন। পেরু ও নেপালে প্রেরণাদায়ক বিকাশ মাওবাদের অগ্রসর আত্মস্থকরণ দেখায়। কমিউনিস্ট হিসেবে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। মাও বলেন, “এযুগে যে কোন বিপ্লব নিশ্চিতভাবে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবে যদি তা সর্বহারা শ্রেণী ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের অভাবে ভুগে অথবা তার বিরুদ্ধে যায়। সকল সামাজিক স্তর-এর মধ্যে সর্বহারা শ্রেণী ও কমিউনিস্ট পার্টি হচ্ছে সংকীর্ণ চিন্তা চেতনা ও স্বার্থপরতা থেকে সর্বাধিক মুক্ত, রাজনৈতিকভাবে সর্বাধিক দূরদর্শী, আগুয়ান শ্রেণী প্রলেতারিয়েত বিশ্বজুড়ে তার রাজনৈতিক পার্টিসমূহের অভিজ্ঞতা থেকে খোলা মনে শিক্ষা গ্রহনের জন্য সর্বাধিক সংগঠিত ও প্রস্তুত, আর নিজ স্বার্থে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে।”

এই নিবন্ধের প্রতিটা উপশিরোনামে আমরা দেখিয়েছি কীভাবে নেপাল ও পেরুর গণযুদ্ধ হচ্ছে তাদের নির্দিষ্ট বাস্তবতায় মাওবাদের অগ্রসর উপলব্ধির সৃজনশীল প্রয়োগ। ঠিক এটাই আমাদের শিখতে হবে-এখানকার মূর্ত বাস্তবতায় মাওবাদকে সৃজনশীলভাবে প্রয়োগ করতে। পেরু ও নেপালের স্রেফ অনুকরণ কোন কাজের নয়। গণযুদ্ধের নিয়ম আত্মস্থকরণের প্রাথামিক বিষয় হচ্ছে যুদ্ধের গতিশীলতাকে স্বীকৃতি প্রদান। মাও ব্যাখ্যা করেন যে মূলনীতি হচ্ছে “…আমাদের নিজেদের শক্তিকে রক্ষা আর শত্রুর শক্তিকে ধ্বংস করতে যথাসম্ভব চেষ্টা করা।” এখানে মাও পরিস্কারভাবে বলেছেন যে আমাদের শক্তিকে রক্ষা করতে শত্রুকে ধ্বংস করতে হবে-আমাদের নিজেদের ধ্বংসের চিন্তা থেকে জন্ম নেয়া রক্ষনশীলতা গণযুদ্ধের সার্বিক গতিকে আটকে দেয়। শত্রুর প্রলুব্ধকরণ এড়াতে যুদ্ধকে যে কোন ধরণ-এ সীমাবদ্ধ করা, অর্থাr সংগ্রামী এলাকা থেকে শত্রুকে উrপাটিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় না যাওয়া ’পর্যায় তত্ত্ব’-এ কেবল চালিত করে। সেটা যুদ্ধের বিকাশে উলম্ফণকে অস্বীকার করে আর ক্রমান্বয়বাদকে অনুসরণ করে। এটা বস্তুত যুদ্ধের গতিশীল প্রকৃতির লংঘন। পরিমাণগত পরিবর্তনের এক ধারা (সিরিজ)-এর পর গুণগত রূপান্তর ঘটে, উলম্ফণকে সেভাবে দেখাটা যুদ্ধকে উচ্চতর পর্যায়ে চালিত করায় ও ঢেওয়ের আকারে এগিয়ে নেওয়ায় অগ্রসেনানীর সচেতন ভূমিকাকে কেবল অবহেলাই করতে পারে। “নিজেকে রক্ষা করা ও অন্যকে ধ্বংস করা”র মূলনীতি বিপ্লবী শক্তি ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। হয় আমরা তাদের লাথি দিয়ে তাড়াবো অথবা তারা আমাদের তাড়াবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য কোন কিছু স্থবির থাকবেনা যেখানে আমরা টিকে থাকতে পারি। সেখানে স্বাভাবিকভাবে শত্রুর সশস্ত্র শক্তিকে পর্যাপ্তভাবে ধ্বংস করতে হবে। গেরিলা জোন থেকে বাস্তব ক্ষমতা দখল ও নয়া গক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় এটা উলম্ফণের কথা বলে। তা না হলে শেষপর্যন্ত আমরা বিপর্যস্ত হই।

গেরিলা জোন থেকে ঘাঁটি এলাকায় উলম্ফণকে ঘাঁটি এলাকা সংক্রান্ত যে কোন ভাববাদী উপলব্ধি বাঁধাগ্রস্ত করে। ঘাঁটি এলাকাকে উচ্চরূপে অননুপ্রবেশ্য ও সর্বাধিক নিরাপদ মনে করা হচ্ছে মাওবাদের ভ্রান্ত উপলব্ধি। যুদ্ধের অনিশ্চয়তায় এটা সম্ভব যে আমাদের কিছু ঘাঁটি এলাকা ত্যাগ করতে হতে পারে। মূল ব্যাপার হল ক্ষমতা দখল করা, এলাকা কত ছোট অথবা কত কম সময় লাগলো সেটা কোন ব্যাপার নয়।

কমরেড গনসালোর নেতৃত্বধীন পিসিপিই প্রথম মাওবাদ উপলব্ধির ক্ষেত্রে এই অগ্রসরতা-বিশেষত গণযুদ্ধে তার প্রয়োগ সম্পর্কিত প্রশ্নে ধারন করে আর অনুশীলনের মাধ্যমে পরীক্ষা চালায়। সংগ্রাম ও বিতর্কের পরেই কেবল এটা এখন স্বীকৃতি পাচ্ছে। নেপালে গণযুদ্ধ পরিচালনা ও ধারাবাহিকভাবে এর এগিয়ে যাওয়া একে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছে। যাদের এ ব্যাপারে সন্দেহ আছে তারা পুনরায় চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছে। এর প্রচারে ও এর ওপর স্বচ্ছতা অর্জনে রিম এক মহাগুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। রিম-এর মধ্যকার পার্টিগুলো একে গুরুত্বের সাথে নিতে শুরু করেছে এবং একটি অগ্রসর আন্তর্জাতিক ধারা হিসেবে এটা বিকাশ লাভ করতে থাকবে। উদীয়মান বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের নতুন তরঙ্গকে এটি আরো বেগবান করবে। মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি [এম কে পি](তুরস্ক ও উত্তর কুর্দিস্তান), প্রাক্তন টিকেপি[এম এল] নামের পার্টি ৩০ বছর সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল এবং রিম-এর সদস্য। তাঁরা সম্প্রতি তাঁদের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত করেছেন। নেপাল ও পেরুর গনযুদ্ধ সম্পর্কে তাঁদের উপলব্ধি তাঁদের দলিল থেকে দেখা গুরুত্বপূর্ণঃ “আমাদের প্রথম কংগ্রেস স্বতস্ফূর্ততাবাদকে চ্যালেঞ্জ করেছে যা হচ্ছে গনযুদ্ধের চেতনার বিপরীত, নেপাল ও পেরুর অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছে-যা মাওয়ের মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক অবদানসমূহের এক মহান প্রয়োগকে অনুশীলনে প্রতিফলিত করে। রণনৈতিক যুদ্ধ পরিকল্পনা সহকারে বিচক্ষণতার সাথে অগ্রসর হওয়ার কৌশলকে তারা দেখিয়েছে।” (এ ওয়র্ল্ড টু উইন নং-২৯, পৃঃ ৬০)। ভারতে এই অগ্রসরতাকে প্রকৃত মাওবাদী পার্টিগুলির সাধারণ লাইনের অংশে পরিণত করতে আরো বিতর্ক দরকার।

ভবিন

সচেতন ভূমিকা পশ্নে মাও

“যুদ্ধ হচ্ছে শক্তির প্রতিযোগিতা, কিন্তুু যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় শক্তির আসল কাঠামো পরিবর্তিত হয়। এখানে নির্ধারক দিক হচ্ছে আত্মগত প্রচেষ্টা-বেশী বেশী বিজয় ছিনিয়ে আনা আর আরো কম ভুল করা। বস্তুগত উপাদানসমূহ এ ধরণের পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রদান করে, কিন্তু এই সম্ভাব্যতাকে বাস্তবতায় রূপান্তরে সঠিক কর্মনীতি ও আত্মগত প্রচেষ্টা উভয়ই প্রয়োজন। অতঃপর, আত্মগত প্রচেষ্টা একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করে।”

                            দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ সম্পর্কে’, পয়েন্ট-৭৭, পৃঃ ২৩৭, মাও সামরিক প্রবন্ধসমূহ।