মহান কার্ল মার্কসের ২০৫-তম জন্মদিন

সর্বহারা শ্রেণী ও বিশ্ব জনগণের মহান শিক্ষক কার্ল মার্কস ১৮১৮ সালের ৫ মার্চ প্রুশিয়ার ট্রিয়ের শহরে জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি ও তার বন্ধু ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস মিলে একটি মতবাদ গড়ে তোলেন যা মার্কসবাদ নামে পরিচিত হয়। লেনিন মার্কসবাদকে সর্বশক্তিমান বলেছিলেন, কারণ তা সত্য।

মার্কস, এঙ্গেলস আর তাঁদের কমরেডরা মিলে ১৮৪৮ সালে দুনিয়ার সর্বহারা এক হও! ঘোষণা করার সাথে সাথে দুনিয়া ব্যাপী এই সংগ্রাম সুচিত হয়, যা হচ্ছে

সর্বহারা শ্রেণীর মহান শিক্ষক কার্ল মার্কস

সর্বহারা শ্রেণীর মহান শিক্ষক কার্ল মার্কস

সাম্যবাদের জন্য সংগ্রাম। আজো দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তে এই সংগ্রাম চলমান!

মার্কসবাদকে বুঝতে হলে আমাদের এর তিনটি দিক বুঝতে হবেঃ দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি।

মার্কসের দর্শন বস্তুবাদ।  আমরা যা কিছু অস্তিত্বমান দেখি অথবা না দেখি, তা হল বস্তু, এটা আমরা চাই আর না চাই বিরাজমান। ক্রমে ক্রমে এই জগত, ঘটনা, চিন্তা আমাদের মস্তিষ্কে প্রতিফলিত হতে থাকে, যার কোন শেষ নেই। তাহলে কোনটা আদি? এই বস্তুই হল আদি। আর চেতনাটা আসল পরে। এই হল বস্তুবাদ। মার্কসের বস্তবাদ দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক। সকল বস্তুর মধ্যেই রয়েছে দ্বন্দ্ব। অর্থাৎ সংগ্রামরত দুই দিক। মানুষের হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস যেমন একবার সংকুচিত ও একবার প্রসারিত হয়, পরমানুর মধ্যে যেমন ইলেক্ট্রন, প্রোটন দুই বিপরীত দিক, তেমনি সকল জিনিসের মধ্যেই দুই বিপরীত দিক রয়েছে। আর দুই বিপরীত দিক সংগ্রামরত। এই বস্তুবাদ ঐতিহাসিক কারণ সমাজজীবনে এই বস্তুবাদ প্রযুক্ত হয়। একই দ্বন্দ্ব সমাজজীবনেও বিরাজমান, যথাঃ শ্রেণীসংগ্রাম।

মার্কসের অর্থনীতির মূল তত্ত্ব হল উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব। পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিকেরা যে শ্রম দেয়, তার মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে বাড়তি শ্রম। এই বাড়তি শ্রম শোষণ করেই পুঁজিপতিদের পুঁজি বাড়ে। সকল শোষণমূলক সমাজেই এই শোষণ ঘটে।আমরা আমাদের চোখের সামনে দেখি সম্পদ বাড়ছে। কীভাবে? এই বাড়তি শ্রম থেকেই।

মার্কসের রাজনীতির মূলকথা হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীকে তাঁর ঐতিহাসিক কর্তব্য কর্ম সম্পর্কে সচেতন করা। যে আজকের দিনের বিপ্লবী শ্রেণী, যে সচেতন হবে যে তার শ্রম শোষণ করা হচ্ছে, তাকে এই শোষণ বন্ধ করে দিতে হবে। তাই মার্কস নিয়ে এলেন সর্বহারা বিপ্লবের ধারণা। বিপ্লবের মাধ্যমে সর্বহারা শ্রেণী সারা দুনিয়ার দেশে দেশে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করবে, পুরোনা রাষ্ট্রকে ভেঙে দেবে, তৈরি করবে এমন রাষ্ট্র যে নিজেই আর নিজের অস্তিত্বের প্রয়োজন রাখবেনা, তখন দুনিয়া এগিয়ে চলবে এমন এক রাষ্ট্রহীন সাম্যবাদী সমাজের দিকে, যেখানে কোন শোষণ থাকবেনা।

মহান মার্কস ১৮৮৩ সালের ১৪ মার্চ লন্ডনে মৃত্যু বরণ করেন। তাকে লন্ডনের হাইগেট সমাধিক্ষেত্রে পত্নী জেনি ভন ভেস্টাফেলেন এর পাশে সমাধিস্থ করা হয়।।