প্রস্তাবিত নয়া ঐক্যবদ্ধ মালেমাবাদী কমিউনিস্ট পার্টি সংগঠনের প্রাথমিক রূপরেখা

পিডিএফ

আমরা সুদীর্ঘকাল বাংলাদেশের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী সংগঠনসমূহের তরফ থেকে একটি ঐক্যবদ্ধ পার্টি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। বর্তমান কালের অগ্রবর্তী সারির নেতা ও কর্মীগণ মালেমাবাদী একটি ঐক্যবদ্ধ পার্টি সংগঠনের লক্ষ্যে একটি প্রাথমিক রূপরেখা প্রনয়ণ করেছেন। আমরা আশা করি মালেমাবাদী সকল পার্টি ও সংগঠনের নেতা ও কর্মীগণ এই রূপরেখা অধ্যয়ণ করবেন, প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তনের প্রস্তাব করবেন। সেইসঙ্গে ঐক্যপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

প্রস্তাবিত প্রাথমিক রূপরেখাটি নিম্নরূপঃ

কর্মসূচি

মূল নীতিসমূহ

১। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদকে পথনির্দেশক মতবাদ হিসেবে আঁকড়ে ধরা। মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবেরনীতিকে আঁকড়ে ধরা যা হচ্ছে বিরাট শ্রেণীসংগ্রামের মধ্যে বিরাট দুই লাইনের সংগ্রাম চালানো, আর বিরাট দুই লাইনের সংগ্রামের মধ্যে ব্যাপক মতাদর্শিক পুনর্গঠন।

২। দ্বন্দ্ব হচেছ বস্তু জগতের অবিশ্রান্ত রূপান্তরের একমাত্র মৌলিক নিয়মঃ বিপরীতের ঐক্য ও সংগ্রাম, জনগণ ইতিহাস সৃষ্টি করেন এবং ‘‘বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত”।

৩। শ্রেণীসংগ্রাম, সর্বহারা একনায়কত্ব ও সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদ।

৪। দুই লাইনের সংগ্রামকে মালেমাবাদী পার্টির নীতিগত ভিত্তি হিসেবে আঁকড়ে ধরা। একে পার্টি বিকাশের আভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি হিসেবে আঁকড়ে ধরা।

৫। একটি নতুন ধরণের পার্টি গড়ে তোলা, অর্থাৎ বিপরীতের ঐক্যভিত্তিক অর্থাৎ দুই লাইনের সংগ্রাম ভিত্তিক পার্টি গড়ে তোলা যা গণযুদ্ধ সূচনা ও বিকাশে সক্ষম, আমাদের মত দেশে কৃষক, মধ্যবিত্ত ও জাতীয় বুর্শোয়াদের শর্তাধীনে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম।

৬। পুরোনো সমাজের বিপ্লবী রূপান্তর ঘটাবে পার্টি, তাই পার্টি হবে বিপ্লবী, এর কেন্দ্রও হবে বেআইনী। উক্ত বেআইনী কেন্দ্রের সাথে আইনী কাজের বিরাট জাল সৃষ্টি করা।

৭। এক নতুন ধরণের বাহিনী গড়ে তোলা যা জনগণের কাছে বোঝা হবেনা, বরং উৎপাদনের সাথে যুক্ত থাকবে।

৮। পার্টি, বাহিনী ও ফ্রন্ট এই তিন যাদুকরী অস্ত্রকে আঁকড়ে ধরা এবং এ তিনটি পরস্পর সংযুক্তভাবে গড়ে তোলা।

৯। গণযুদ্ধে অস্ত্র নয়, জনগণই হচ্ছেন নির্ধারক এই নীতিকে ঊর্ধে তুলে ধরা।

১০। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা তথা গণক্ষমতা হচ্ছে আমাদের মতাদর্শে মৌলিক।

১১। জনগণের উপর নির্ভর করা, প্রধানত শ্রমিক, ভূমিহীন কৃষক ও গরীব কৃষকদের উপর নির্ভর করা। অর্থাৎ মূল শ্রেণীসমূহের উপর নির্ভর করা।

১২। জনগণের স্বার্থে ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগকে ঊর্ধে তুলে ধরা।

 

গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সাধারণ কর্মসূচী

১। বাংলাদেশের সমাজ হচ্ছে আধা সামন্তবাদী-আধা উপনিবেশিক, যার কেন্দ্রে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ। এই সমাজ ব্যবস্থার ধ্বংস সাধনের লক্ষ্যে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষক বুনিয়াদী মৈত্রীর ভিত্তিতে শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত ও জাতীয় বুর্শোয়া শ্রেণীর যুক্তফ্রন্ট গড়ে তোলার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদ উচ্ছেদ করে নয়াগনতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা তথা নয়াগনতান্ত্রিক বিপ্লব সাধন করা, অব্যাহতভাবে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের পথে এগিয়ে চলা, এই লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক সমাজে সাংস্কৃতিক বিপ্লবসমূহের জন্ম দেয়া।

২। প্রতিক্রিয়াশীল এই সমাজ কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রের ধ্বংসসাধন, যা হচেছ আমলাতান্ত্রিক বুর্শোয়াদের নেতৃত্বে শোষকদের একনায়কত্ব; এর সশস্ত্র বহিনী সমূহের ধ্বংসসাধন, সকল অত্যাচারী শক্তিসমূহ ও আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাসমূহ ধ্বংস করা।

৩। মার্কিন, রুশ, চীন সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি, ইউরোপ ও জাপানসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী, প্রধানত ভারতীয় সম্প্রসারণবাদসহ সৌদি, তুর্কি সকল আধিপত্যবাদী শোষণ ও নিপীড়ণ উৎখাত করা, সাধারণভাবে তাদের একচেটিয়া কোম্পানীসমূহ, ব্যাংক এবং বিদেশী ঋণসমেত তাদের সকল রূপের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।

৪। ব্যক্তি ও রাষ্ট্র নিয়োন্ত্রিত আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ধ্বংস করা, তাদের সম্পত্তি, দ্রব্যসামগ্রি ও অর্থনৈতিক অধিকার বাজেয়াপ্ত করা, সেইসাথে সাম্রাজ্যবাদের সাথে যুক্ত সবকিছু বাজেয়াপ্ত করা।

৫। আধা-সামন্ততন্ত্রের সাথে কৃষক জনগণের দ্বন্দ্বই হল বিপ্লবের বর্তমান পর্যায়ে প্রধান দ্বন্দ্ব। আধা-সামন্তবাদী সম্পত্তি আর গ্রামে-শহরে এর উপর টিকে থাকা সবকিছুর বিলোপ সাধন।

৬। গ্রামে ও শহরে জাতীয় বুর্শোয়াদের অথবা মাঝারি বুর্শোয়াদের সম্পত্তি ও অধিকারকে সম্মান করা।

৭। কৃষি বিপ্লবকে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্ল­বের অক্ষ হিসেবে আঁকড়ে ধরা। আমলাতান্ত্রিক বুর্শোয়া শ্রেণীর কেন্দ্রীয় কাঠামোর অধীন তার নীচের স্তরের আধা-সামন্ততান্ত্রিক বড় ধনী শ্রেণীর সাথে শ্রমিক-কৃষক ব্যাপক জনগণের দ্বন্দ্বই হচ্ছে কৃষি বিপ্লবের পর্যায়ে শ্রেণীগতভাবে প্রধান দ্বন্দ্ব। তাই ভূমি বিপ্ল­ব এবং ‘যে জমি চাষ করে তার হাতে জমি’ নীতিকে আঁকড়ে ধরা। এই নীতির ভিত্তিতে আমলাতান্ত্রিক বুর্শোয়া ও সামন্তশ্রেণীর জমি বাজেয়াপ্ত করে ভুমিহীন ও গরীব কৃষকদের মধ্যে বন্টন। মাঝারি কৃষকদের স্বার্থরক্ষা করা আর ধনী কৃষকদের শর্তসাপেক্ষে ঐক্যবদ্ধ করা।

৮। গনযুদ্ধকে কেন্দ্রীয় কর্তব্য হিসেবে আঁকড়ে ধরা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পথ হিসেবে গ্রাম ভিত্তিক দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের পথ আঁকড়ে ধরা।

৯। সকল প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশী জাতির গঠণ সম্পূর্ণ করা, সংখ্যালঘু সকল জাতিসত্তাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রদান এবং আদিবাসী জনজাতিসমুহের সকল অধিকার রক্ষার মাধ্যমে দেশকে সত্যিকারভাবে ঐক্যবদ্ধ করা।

১০। প্রতিটি দেশের বিপ্লব বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের অংশ। প্রতিটি দেশের সর্বহারা শ্রেণী বিশ্ব সর্বহারা শ্রেণীর অবিচ্ছেদ্য অংশ, সুতরাং আন্তর্জাতিকতাবাদকে দৃঢ়ভাবে ঊর্ধে তুলে ধরা। বিশ্ব সর্বহারার ঐক্যের লক্ষ্যে বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী উদ্যোগ সমর্থন করা, তাতে অংশ গ্রহন করা ও তাকে এগিয়ে নেওয়া যাতে বিশ্ব বিপ্লব সাধন করা যায় এবং একটি নতুন ধরনের কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক গড়ে তোলা যায়।

১১। শ্রমিক শ্রেণী ও জনগন রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা, অধিকার, লাভ ও বিজয়সমূহ অর্জন করেছে তা রক্ষা করা; সেসবের স্বীকৃতি প্রদান এবং “জনগনের অধিকারের ঘোষণা”র মাধ্যমে এর বৈধ প্রয়োগ। ধর্মমতের স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান কিন্তু এর ব্যাপক অর্থে, বিশ্বাস অথবা অবিশ্বাস করার মতের স্বাধীনতা। জনগণের স্বার্থের ক্ষতি করে এমন সকল প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা, বিশেষত যেকোন প্রকার অদেয় মজুরী অথবা ব্যক্তিগত বোঝা অথবা জনগনের ওপর চেপে বসা নিরংকুশ করসমূহের বিরুদ্ধে।

১২। জমি, সম্পত্তি, কাজ, পরিবার ও সমাজের সকল ক্ষেত্রে নরনারীদের জন্য সত্যিকার সাম্য; তরুনদের জন্য অধিকতর ভাল ভবিষ্যত—শিক্ষা, কাজ ও বিনোদনের নিশ্চয়তা; মা ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তা; বয়স্কদের প্রতি সম্মান ও সহযোগিতা।

১৩। এক নয়া সংস্কৃতির বিকাশ যা ব্যাপক জনগণের সেবা করে আর সর্বহারা শ্রেণীর মতার্দশ দ্বারা পরিচালিত।
১৪। আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণী, নিপীড়িত জাতিসমূহ ও দুনিয়ার জনগণের সংগ্রামসমূকে সমর্থন করা, পরাশক্তি মার্কিন, রুশ ও চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করা, ইউরোপ, জাপানসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা; ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা; সৌদি আরব, ইসরাইল, তুরষ্কসহ সকল আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। ট্রটস্কীবাদ, হোজাবাদ, চেবাদ, তৃতীয় বিশ্ববাদ তথা তেঙপন্থা, ক্রুশ্চভীয় সংশোধনবাদসহ আন্তর্জাতিক সকল রূপের সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা।

আমাদের সংগঠনটি আমাদের দেশে যে সকল সংশোধনবাদী-সংস্কারবাদী ভ্রান্ত লাইন ও কর্মসূচির বিরুদ্ধে কঠিন লাইনগত সংগ্রাম চালাবেঃ

বাংলাদেশের সমাজ বিশ্লেষণে বিকৃত পুঁজিবাদের নয়া-মার্কসবাদী অমার্কসবাদী তত্ত্ব, এক্ষেত্রে ধ্রুপদী সামন্তবাদ সংক্রান্ত প্রাচীনপন্থী তত্ত্ব, যুদ্ধপূর্ব সশস্ত্র সংগ্রাম তত্ত্ব, সর্বহারা সহিংস বিপ্লব একমাত্র মতাদর্শিক মানদণ্ড তত্ত্ব, গেরিলাবাদ, ভ্রাম্যমান গেরিলাবাদ, সমরবাদ, গণসংগঠনবাদ, গণ অভ্যুত্থানবাদ, গণসংগ্রামের শীর্ষে গিয়ে গণ অভ্যুত্থান তত্ত্ব, ক্রমান্বয়বাদ, প্রতিরোধযুদ্ধ তত্ত্ব, মনোলিথিজম (একস্তম্ভীতাবাদ), খতম লাইন, শ্রেণীসংগ্রামবিচ্ছিন্ন শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব, বিভেদবাদ, সংকীর্ণতাবাদ, ব্যক্তিতাবাদ, গোষ্ঠীবাদ, উপদলবাদ, গণসংগ্রাম-গণসংগঠণ বিমুখতা, স্বদেশী ও বিদেশী জাতীয়তাবাদ, প্রয়োগবাদ, সমন্বয়বাদ, বিমূর্ত তত্ত্বচর্চার গোঁড়ামীবাদ, অ-পেশাদারবাদ, স্বতস্ফূর্ততাবাদ, সশস্ত্র ও নিরস্ত্র অর্থনীতিবাদ ইত্যাদি।

নতুন সংগঠনটি কমিউনিস্টদের এককেন্দ্রিক ঐক্যের লাইনকে ঊর্ধে তুলে ধরবে। ভ্রাতৃঘাতি দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারী যে কোন হিংসামূলক কর্মকান্ডকে প্রচণ্ডভাবে বিরোধিতা করবে।

নতুন সংগঠনটি সিরাজ সিকদার, তাহের আজমিরী, মনিরুজ্জামান তারা, শিখা, বাতেন, নজরুল, এরাদ আলী, বাদল দত্ত, রাবেয়া বেলী, মন্টু মাস্টার, মোফাখখর চৌধুরী, টুটুলসহ অগণিত মালেমাবাদী শহীদ কমরেডের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নেয়, শহীদদের মহান জীবনকে সর্বদা স্মরণ করবে।

নতুন সংগঠনটি মতাদর্শ ও তার প্রয়োগের শিক্ষামালাকে ঊর্ধে তুলে ধরবে। কীভাবে সর্বহারা শ্রেণীর মুক্তির দর্শন দেশে দেশে প্রযুক্ত হয়, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ গড়ে উঠে, দেশে দেশে তার প্রয়োগে গড়ে উঠে চিন্তাধারা, এবং তার প্রয়োগে গণযুদ্ধ। আবার গণযুদ্ধের মধ্যে চিন্তাধারা বিকশিত হয়, আর শেষ পর্যন্ত ‘বাদ’-এ বিকশিত হয়। যেমন, চীনে মাও সেতুঙ চিন্তাধারা থেকে মাওবাদ। একইভাবে, পেরুতে গনসালো চিন্তাধারা, ভারতে চারু মজুমদার ও কানাই চ্যাটার্জির শিক্ষা, বাংলাদেশে সিরাজ সিকদার চিন্তাধারা ও চারু মজুমদারের শিক্ষা, তুরস্কে ইব্রাহিম কায়পাক্কায়া, অস্ট্রিয়ায় আলফ্রেড ক্লাহর, আফগানিস্তানে আকরাম ইয়ারি তার উদাহারণ।

আন্তর্জাতিকভাবে গনসালো চিন্তাধারা পেরুতে উদ্ভূত হয়েছিল মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ সূত্রায়ণ করার মাধ্যমে আর গণযুদ্ধের মাধ্যমে তার প্রয়োগ করার মাধ্যমে। একটি দেশে মতাদর্শের প্রয়োগের মাধমে চিন্তাধারা গড়ে উঠে যা বিকাশের মাধ্যমে ‘বাদ’-এ বিকশিত হয়। যেমন চীনের বাস্তবতায় মাও সেতুঙ চিন্তাধারা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কালে জন্ম নিয়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় মাওবাদ-এ বিকশিত হয়। সুতরাং সর্বহারা শ্রেণীর মতবাদ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ।  গনসালো চিন্তাধারা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশে সিরাজ সিকদার চিন্তাধারা ও চারু মজুমদারের শিক্ষার পুনরাবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। গণযুদ্ধের সার্বজনীনতাও একটি উল্লেখযোগ্য ধারণা যা গনসালো চিন্তাধারার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে কীভাবে একটি আধা-উপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী সমাজ তার কেন্দ্রে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ গড়ে তোলে ও তার দ্বারা পরিচালিত হয় এই তত্ত্ব। পার্টি-বাহিনী-ফ্রন্টের সমকেন্দ্রিক বিকাশের ধারণাও গনসালো চিন্তাধারা থেকে পাওয়া যায়। মহান নেতৃত্ব তত্ত্ব ব্যাখ্যা দেয় কীভাবে একটি পার্টির লাইন বিকাশের সাথে তার নেতৃত্বও বিকশিত হয়। মহান নেতৃত্ব কোন সাধারণ নেতৃত্ব নয়। এ হচ্ছে পার্টির নেতৃত্ব, কোন ব্যক্তির নেতৃত্ব নয়। বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় এক ঝাঁক নেতা গড়ে উঠে, যার মধ্যে একজন থাকে প্রধান, তাদের মধ্যে মহান নেতৃত্ব গড়ে উঠে, আর বিপ্লবকেই তা সেবা করে।

সিরাজ সিকদার চিন্তাধারা গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের বাস্তবতায় মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারা প্রয়োগের মাধ্যমে সর্বহারা শ্রেণীর পার্টি গণযুদ্ধ ও ঘাঁটি গড়ে তোলায় নিয়োযিত হয়ে। এই শিক্ষার মধ্যে রয়েছেঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারাকে মতাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা, মালেমার গবেষণার মাধ্যমে মতাদর্শিক খুঁটি প্রথিতকরণ, দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধ ও ঘাঁটি গড়ে তোলা ও এলাকাভিত্তিক সশস্ত্র সংগ্রামের লাইন, ভৌগলিকতার ব্যবহারঃ বাংলাদেশ প্রধানত সমতল, সুতরাং এখানে গেরিলা যুদ্ধের সমস্যা হচ্ছে সমতল ভূমিতে গেরিলা যুদ্ধ যার মধ্যে রয়েছে বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণঃ নদীনালার দেশ বাংলাদেশে বর্ষাকালে শত্রুর জন্য দুর্গমতা আর বিপ্লবী বাহিনীর জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেটাকে কাজে লাগিয়ে রণনৈতিক আক্রমণ পরিচালনা করা যায়, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ সংক্রান্ত ধারণাঃ উপনিবেশিক আধা উপনিবেশিক ও আধা সামন্তবাদী সমাজ কাঠামোর কেন্দ্রে গড়ে উঠে এক পুঁজিবাদ—ক্ষয়িষ্ণু, মুমূর্ষু, পরজীবি, সাম্রাজ্যবাদের উপর নির্ভরশীল ও তাদের দ্বারা পরিচালিত, সাম্রাজ্যবাদকে, নিজেকে ও আধা-সামন্তবাদকে সেবা করে, যা ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করে আর সমাজ রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাই সংগ্রামের নিশানা থাকবে এই বুর্শোয়াদের বিরুদ্ধে, উপনিবেশের জাতীয় মুক্তির কর্মসূচির ধারণাঃ আধা উপনিবেশের উপনিবেশ থাকতে পারে তত্ত্ব উদাহারণস্বরূপ ভারত নিজে আধা উপনিবেশিক দেশ হয়েও প্রতিবেশী দেশগুলির উপর উপনিবেশিক শোষণ চালিয়ে থাকে, জাতীয় মুক্তির কর্মসূচির সাথে শ্রেণী মুক্তির কর্মসূচির সমন্বয় তথা জাতীয় বিপ্লবের সাথে কৃষি বিপ্লবের সমন্বয়, ধর্মীয় দ্বন্দ্ব তথা সাম্প্রদায়িক শ্রেণীদ্বন্দ্বের অস্তিত্ব আবিষ্কার যা পূর্ববাংলা-পশ্চিমবাংলা, আসাম, ত্রিপুরা তথা ভারতবর্ষের বিভক্তির কারণ হয়েছে, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও, শহর ও গ্রামের সংগ্রামের সমন্বয়, অনিয়মিত ও নিয়মিত গেরিলা দল গড়ে তোলা, পেশাদারবাদঃ বিপ্লবকে কেন্দ্র করে জীবন ও জীবিকা এমন পেশাদার বিপ্লবী গড়ে তোলা, মহান নেতৃত্ব তত্ত্বঃ বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় এক ঝাঁক নেতৃত্ব গড়ে উঠে যারা সেই বিপ্লবকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম ইত্যাদি।

বাংলাদেশে চারু মজুমদারের শিক্ষার মধ্যে রয়েছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারাকে মতাদর্শ হিসেবে গ্রহণ, দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধ ও মুক্ত এলাকা গঠণের লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক সশস্ত্র সংগ্রাম, শ্রেণী মুক্তির কর্মসূচি তথা কৃষি বিপ্লব, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও ধারণা, অনিয়মিত গেরিলা দল গড়ে তোলা, মহান নেতৃত্ব তত্ত্ব ইত্যাদি।

সিরাজ সিকদার চিন্তাধারা ও চারু মজুমদারের শিক্ষা বাংলাদেশের বাস্তবতায় মালেমার প্রয়োগজাত ও সেইসাথে গণযুদ্ধের প্রয়োগজাত। এই দুইয়ের সংশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলাদেশে মালেমার ঐক্যবদ্ধ লাইন গড়ে উঠবে।

যারা এই শিক্ষামালাকে অস্বীকার করে ও করে থাকে তাদের সংশোধনবাদী ধ্যান ধারণা লাইনের বিরুদ্ধে নয়া মালেমা সংগঠন প্রচণ্ড লাইনগত সংগ্রাম চালাবে।

বাংলাদেশে সিরাজ সিকদার চিন্তাধারার ধারক বাহক সংগঠন ছিল ধারাবাহিকভাবে মাও সেতুঙ চিন্তাধারা গবেষণাগার (১৯৬৭-১৯৬৮), পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন ( ১৯৬৮-১৯৭১), পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি (১৯৭১-২০১২, এর মধ্যে ১৯৭১-১৯৭৫ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে, তারপর ১৯৭৫-এ কমরেড সিরাজ সিকদার শত্রুর হাতে শহীদ হওয়ার পর ক্রমে ক্রমে পার্টি সংস্কারবাদী ধারায় গড়িয়ে পড়ে, ১৯৯০ দশকে পার্টিতে বৃহৎ দুই লাইনের সংগ্রাম সূচিত হলেও মতাদর্শিক সংশ্লেষণে উপনীত হতে পারেনা বরং সংস্কারবাদী সংশোধনবাদী প্রবল মতধারার প্রভাবে পার্টি মূলত বিলোপের দিকে ধাবিত হয়ে একুশ শতকের প্রথম দশকের শেষে মূলত বিলুপ্ত হয়, ১৯৯০ দশকের শেষে সিরাজ সিকদার চর্চা কেন্দ্র সিসি চিন্তাধারার কথা বলে, অল্পদিন পরে পূবাসপা মাওবাদী পুনর্গঠন কেন্দ্রের সবুজ গ্রুপও একই কথা বলে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দ্রুত বিলুপ্ত হয়, ২০০৪ সালে পূবাসপা মাওবাদী একতা গ্রুপ একটি অধ্যয়ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সিসি চিন্তাধারা উত্থাপন করে আর সিসি চিন্তাধারা ও সিএম শিক্ষার ফিউশনের কথা বলে), বর্তমান কালে কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ (২০১২ সালে গঠিত), জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ ও সিরাজ সিকদার চর্চা কেন্দ্র সিরাজ সিকদার চিন্তাধারা মত ধারণ করে, এর মধ্যে সিপিএমএলএম বাংলাদেশ সিরাজ সিকদার চিন্তাধারার পাশাপাশি ভারতে প্রয়োগের ফল হিসেবে ও গৌনত বাংলাদেশে তার প্রভাব হিসেবে চারু মজুমদারের শিক্ষার কথা বলেছে। বর্তমানে সিপিএমএলএম যথাযথ গুরুত্বে সিরাজ সিকদার চিন্তাধারা ও চারু মজুমদার শিক্ষার সংশ্লেষণ ঘটানোর মত প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে চারু মজুমদার শিক্ষার ধারক বাহক সংগঠন ছিল পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (১৯৭০-২০০৮), পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) (১৯৬৭-১৯৭৫), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (১৯৭২-১৯৭৫)। পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টিসমেত বিশ শতকের এই আদি দলগুলো সঠিক লাইন থেকে বিচ্যুত হয়ে দীর্ঘকাল সংশোধনবাদী সংস্কারবাদী লাইন অনুশীলনের ফল হিসেবে মূলতঃ বিলুপ্ত। বর্তমানে মূলত ধ্বংসপ্রাপ্ত পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত অনেক নেতাকর্মী যেমন সিরাজ সিকদার চিন্তাধারার মত অন্তত অংশত ধারণ করেন আবার মুলত ধ্বংসপ্রাপ্ত পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি ও সাম্যবাদী দলের অনেক নেতা-কর্মীই চারু মজুমদার শিক্ষার মত অন্তত অংশত ধারণ করেন। এরকম অনেক কমরেডই সিরাজ সিকদার চিন্তাধারার সাথে চারু মজুমদার শিক্ষার সংশ্লেষণের মত প্রকাশ করেছেন। আমাদের ঐক্যবদ্ধ নতুন পার্টি সংগঠন সিরাজ সিকদার চিন্তাধারা ও চারু মজুমদার শিক্ষার সংশ্লেষণ ঘটাবে। নতুন সংগঠনটি হবে বিশ শতকে গড়ে উঠা দলগুলোর আদি অকৃত্রিম মতাদর্শিক ধারাবাহিকতাঃ নির্দিষ্টভাবে বললে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ এবং সিরাজ সিকদার চিন্তাধারা ও চারু মজুমদার শিক্ষার ধারাবাহিকতা কিন্তু কোনভাবেই সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা নয়। একুশ শতকের নতুন বাস্তবতায় আজকে নতুনভাবে সবকিছু গড়ে উঠবে, অবশ্যই নতুন ভিত্তিতে।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও বৃটেনসহ পশ্চিম ইউরোপ পরাজিত হয়ে পালিয়েছে। ইউরোপে যুদ্ধ দামামা বেজে উঠেছে। রাশিয়া সোভিয়েত আমলের হারানো এলাকা উদ্ধারে নেমেছে। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের অন্তত এক পঞ্চমাংশ — রুশ ভাষাভাষী অঞ্চল — দখল করেছে। বৈশ্বিক দ্বন্দ্বের একদিকে রাশিয়া ও চীন অন্যদিকে মার্কিন, বৃটেনসহ পশ্চিম ইউরোপ। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর বিরুদ্ধে রাশিয়ার ছায়া যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে যা যে কোন সময় প্রত্যক্ষ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এই সুযোগে চীনও তাইওয়ান দখল করে নিতে পারে। এ নিয়ে মার্কিনের সাথে চীনের যে কোন সময় যুদ্ধ বাঁধার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিগত দশকের মধ্যে রাশিয়া ও চীন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এখন বিশ্বকে পুনরায় ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধার সম্ভাবনাও রয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্বব্যাপী বিপ্লবী শক্তিসমূহের পুনরুত্থান ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে।

বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীল আওয়ামী সরকার ভূয়া নির্বাচন সংগঠিত করছে একের পর এক। তারা স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট। তাদের বর্তমান ফ্যাসিবাদের নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অতীত ফ্যাসিবাদ ছিলঃ সোনার বাংলা শেখ মুজিব আলীগ স্বৈরতন্ত্র, বাকশাল শেখ আলীগ স্বৈরতন্ত্র, খালকাটা জিয়া বাজাদ সামরিক বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র, এরশাদ জাপা নতুন বাংলা সামরিক বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র, খালেদা বাজাদ স্বৈরতন্ত্র, তত্ত্বাবধায়ক সামরিক বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র, হাসিনা আলীগ স্বৈরতন্ত্র প্রভৃতি। বর্তমান আলীগ ডিজিটাল স্বৈরতান্ত্রিক সরকার প্রধানভাবে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দালাল, এছাড়াও মার্কিন, রুশ, চীন এই তিন পরাশক্তিকে যথাক্রমে গ্যাস, পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, অবকাঠামো গড়ে তোলার নামে আর জাপানকে অবকাঠামো গড়ে তোলার নামে দীর্ঘমেয়াদী শোষণের সুযোগ দিয়েছে। ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছে ও বিদ্যুৎ সেক্টর ছেড়ে দিয়েছে। ভারতের সাথে চোরাচালানের অর্থনীতিও রয়েছে। পুরো বাংলাদেশ একটা বাজার হিসেবে কাজ করে উক্ত শক্তিগুলির, বিশেষত ভারতের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আর চীনের ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর। সৌদি আধিপত্যবাদ বাংলাদেশে ধর্মীয় সামন্তবাদের প্রধান মদদদাতা।  সে এখানে ধর্মীয় ক্ষেত্রে বড় পুঁজি বিনিয়োগ করে। তুর্কী আধিপত্যবাদও বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রির নামে ঢুকেছে। এদেশে প্রধান অস্ত্র বিক্রেতা রুশ, চীন তারপর আমেরিকা। বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগের নামে উক্ত সকল সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদ এদেশকে আষ্ট্রেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছে। সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী দুষণের ফলে আমাদের পৃথিবী গ্রহটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বন জঙ্গল নদীনালা ধ্বংস, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ আমাদের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে প্রতি দিন। করোনা ভাইরাস অতিমারীতে পঞ্চাশ লাখেরও অধিক মানুষ পৃথিবীতে মারা গেছেন। এই অতিমারী প্রকৃতি ধ্বংসের ফল হিসেবে প্রকৃতির সরাসরি পালটা আক্রমণ। বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী ও দালাল বুর্জোয়ারা জনগণকে রক্ষা করার প্রকৃত কোন উদ্যোগ নেয়নি। স্বাস্থ্যসুবিধা বঞ্ছিত জনগণ একদিকে অসুখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে অন্যদিকে কাজের অভাবে অনাহারে অর্ধাহারে থেকেছে। প্রতিক্রিয়াশীল সরকারসমূহ তাদের খাদ্যের যোগান দেয়নি, এক আধ মাসের জন্য অল্পকিছু লোককে ভিক্ষা দিয়েছে। শোষকেরা তাদের উপর লক ডাউনের মত নিষেধাজ্ঞা জারি করে চলাফেরার স্বাধীনতা হরণ করেছে আর স্বাস্থ্যসুবিধাবঞ্ছিত অনাহার-অর্ধাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। সরকার ভাইরাসের আমল শেষ না হতেই তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। তারপর সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ বাকী সব ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে বিভাজন, অবরোধ ইত্যাদি কারণে জ্বালানী তেল ও গ্যাস, ভোজ্য তেল, খাদ্য শস্য, সার ইত্যাদির সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়েছে। বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ায় জ্বালানী সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম প্রায় দেড়গুণ হয়েছে। আর মানুষের জীবন যাত্রার মানের চরম অবনতি ঘটেছে। এদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র সম্পদ পাচার করতে করতে প্রায় দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার প্রায় শুন্যের কাছাকাছি। ব্যাংকগুলো একে একে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। দালাল বুর্শোয়ারা জনগণের গচ্ছিত অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করে নিচ্ছে। প্রতিক্রিয়াশীল সরকার আগামী বছরের বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষের কথা জানিয়ে বাংলাদেশেও তা হবে জানিয়ে দিয়েছে। এদিকে বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের দালালদের রাজনৈতিক দল সমূহের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে পুনরায় কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে। এটি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে আর এদের ঝুলন্ত, অস্থায়ী ও বৈধতাহীন ক্ষমতা অবস্থা আরো বৃদ্ধি পেতে পেতে থাকবে। সাম্যবাদী দলসমূহকে এ অবস্থায় নিজেদের ঐক্য মারফত এগিয়ে যেতে হবে ক্ষমতা গ্রহণে।

করোনা ভাইরাস ও তৎপরবর্তী সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ, দুষণ, আর খাদ্য, তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ ভেঙে এখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মধ্যে প্রবেশ করেছে পৃথিবী। বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। সাম্রাজ্যবাদ তথা পুঁজিবাদের টিকে থাকার কোন যৌক্তিকতা নেই। এমতাবস্থায় হয় পুঁজিবাদকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে নাহয় দুনিয়াকে নিজেকে ধ্বংস হতে হবে। পৃথিবীর শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ চান পুঁজিবাদের ধ্বংস। মনুষ্য জাতিকে বাঁচতে হলে পুঁজিবাদের মৃত্যু ত্বরান্বিত করতে হবে। আর মানুষ এগিয়ে চলবে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের পথে।।

১২/১২/২০২২ □