কমরেড গনসালোর মৃত্যু

গনসালো

গনসালো

মাও মৃত্যুপরবর্তী কালের সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ কমিউনিস্ট কমরেড এবিম্যাল গুজম্যান ওরফে গনসালো গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ শত্রুর হাতে বন্দী অবস্থায় চিকিতসাসেবা বঞ্চিত হয়ে কয়েক যুগের নির্জন কারাবসের চরমতম নির্যাতন নিপীড়ন সয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃতদেহ কবর দিতে দেয়নি পেরুর প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র কারণ তারা ভয় পেয়েছে তাকে কবর দিলে সেটা তাদের ভাষায় একটা তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হবে। অর্থাৎ মৃত গনসালোও তাদের জন্য এক বিরাট হুমকি। কারণ গনসালো আর কোন ব্যক্তি নয় এটা এক চিন্তাধারা। আর এর এমন শক্তি রয়েছে যা পেরু কেন সারা দুনিয়ার প্রতিক্রিয়াকে পরাজিত করতে পারে।

গনসালোর জন্ম ১৯৩৪ সালে। ম্যারিয়েতেগুইর প্রতিষ্ঠিত পেরুর কমিউনিস্ট পার্টিকে তিনি ১৯৬০ এর দশকে পুনর্গঠিত করেন। দীর্ঘদিন পার্টিকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের মতাদর্শে পুনর্গঠিত করে গ্রামে কৃষকদের মধ্যে পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি স্থাপন করেন। অতঃপর ১৯৮০ সালে তার নেতৃত্বে পার্টি গনযুদ্ধ সূচিত করে। পেরুর সমাজে এ ছিল এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। আধা-সামন্ততান্ত্রিক আধা-ঔপনিবেশিক সমাজের কাঠামোয় যে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ গড়ে উঠেছে তার ভিত কেঁপে উঠে আর ভাঙন ঘটতে থাকে।

১৯৯২ সালে সভাপতি গনসালো প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রের হাতে গ্রেফতার হন। বন্দী অবস্থায় তিনি এক বিখ্যাত ভাষণে কমিউনিস্টদের দিশা দেন আর বলেন যে এটা একটা পথের বাঁক মাত্র। তিনি গণযুদ্ধ অব্যাহত রাখতে বলেন।

কমরেড গনসালোই মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ সূত্রায়ণ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীকে এই অস্ত্রে সজ্জিত করে গেছেন যা অপরাজেয়। তিনি চিন্তাধারার তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে কমিউনিজমের মতবাদ দেশে দেশে বিপ্লবের মূর্ত বাস্তবতায় আবির্ভূত হয় আর গণযুদ্ধের সাথে বিকশিত হয়। এ এক অসাধারণ শিক্ষা যার দ্বারা সারা দুনিয়ার কমিউনিস্টরা নিজ নিজ দেশের চিন্তাধারাকে আবিষ্কার পুনরাবিষ্কার করতে সক্ষম হন। উদাহারণস্বরূপ আমাদের দেশে সিরাজ সিকদার চিন্তাধারাকে আমরা পুনরাবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি। একইভাবে ভারতে চারু মজুমদারের শিক্ষার কথা আসতে পারে যার প্রভাব পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় পড়েছিল। তুরষ্কে ইব্রাহিম কাপাক্কায়া, আফগানিস্তানে আকরাম ইয়ারি, অস্ট্রিয়ায় আলফ্রেড ক্লাহর এগুলো এক একটা চিন্তাধারার উদাহারণ। আমরা গনসালোর জীবন থেকে শিক্ষা নেই, সারা দুনিয়ায় প্রতিটি কমিউনিস্ট  শিক্ষা নেবেন। তিনি কোন ব্যক্তি নন, তিনি এক ইতিহাস। সে ইতিহাস সাম্যবাদের। সুতরাং গৌরবোজ্জ্বল মহান!

কমরেড গনসালো চিরকাল বেঁচে থাকবেন! তাঁর মৃত্যু নেই!

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ

২১ নভেম্বর ২০২১