নিরাপদ সড়কের দাবীতে নবীন ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন

লেখকঃ হোসেন নীল

বিষয়টা নিয়ে আমরা আগে দেখিয়েছি কীভাবে রাষ্ট্র জনগণকে সড়ক পথে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে ঈদযাত্রা ইত্যাদির নামে। বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত। শাজাহান খান একাধারে সরকারের মন্ত্রি, বাসমালিক আবার শ্রমিক নেতাও–মানে চাঁদাবাজদের

নিরাপদ সড়কের দাবীতে নবীন ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের একটি চিত্র

নিরাপদ সড়কের দাবীতে নবীন ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের একটি চিত্র

সর্দার। প্রকৃত শ্রমিক আন্দোলনকে দাবিয়ে দেয়াই তাদের কাজ। শাজাহান খানেরই নিকটাত্মীয় জাবালে নুর বাসের মালিক। এই বাস ঢাকার বিরাট অংশ জুড়ে চলে। এই জাবালে নুরের দুই বাসের প্রতিযোগিতায় প্রাণ গেল রাজীব ও মিম নামের দুই শিক্ষার্থীর-যারা শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনম্যান্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন। ২৯ জুলাই ২০১৮ তারা স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসের জন্য অপেক্ষারত থাকা অবস্থায় জাবালে নুরের এক বাসের নিচে পিষ্ট হয়ে নিহত হন। তারপর শুরু হয় রমিজ উদ্দিন স্কুলের ছাত্রছাত্রিদের আন্দোলন। কয়েকদিন আগে একজন কলেজ ছাত্রকে বাস থেকে নদিতে ফেলে হত্যা করা হয়। এছাড়া বাসচাপায়-ট্রাকচাপায় নিত্যদিন শিশুকিশোরসহ মানুষ নিহত হচ্ছেন। রমিজুদ্দিন স্কুল হতে সাথে সাথে ঢাকাসহ সারা দেশের স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শাজাহান খান হাসি দিয়ে মশকারি করলে তা ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলে। গত তিন চারদিন এ আন্দোলন চলেছে। এর দাবি হচ্ছে হত্যাকারী ড্রাইভাবের ফাঁসি এবং এ ধরনের অপরাধে ফাঁসির শাস্তির আইন করা, শাজাহান খানের পদত্যাগ ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা, রাস্তায় ফুট ওভার ব্রীজ ইত্যাদি নির্মাণ, ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ, ছাত্রছাত্রীদের চাপা দিয়ে হত্যার দায় সরকারের গ্রহণ, সারা দেশে শিক্ষার্থিদের হাফ ভাড়ায় বাসে চলাচলের ব্যবস্থা করা, রাস্তায় থামার সিগনাল দিলে শিক্ষার্থীদের বাসে নিতে হবে ইত্যাদি।

আন্দোলনটি দেশব্যাপী বড় ছাত্র আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এটা পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে দেশের উন্নতি বিষয়ক সরকারের ভাঁওতাবাজি শিশুকিশোররা বিশ্বাস করেনা। তারা জানে তাদের লেখা পড়ার খরচ তাদের পিতামাতা নির্বাহ করতে পারেননা। পথে পথে রয়েছে মৃত্যুফাঁদ। মাফিয়াদের বাসগুলো প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীনির্বিশেষে জনগণকে চাপা দিয়ে হত্যা করে। জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। তাই তারা

বাসচাপায় নিহত শিক্ষার্থী রাজীব ও মিম

বাসচাপায় নিহত শিক্ষার্থী রাজীব ও মিম

জীবন মরণ পন করে আন্দোলনে নেমেছেন। এজন্য অনেক ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় থেকে বিতাড়ণ করা হচ্ছে, রাস্তায় পুলিশী নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ছাত্রলীগের পাণ্ডারা হেল্মেট পরে শিশুকিশোরদের উপর হামলা চালিয়েছে যাতে অনেক ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছে। কিন্তু আন্দোলন তারা দাবিয়ে রাখতে পারেনি।

ছাত্রছাত্রীরা নবিন ও সজীব। তারা এক প্রগতিশীল সমাজ চায়। তারা সমগ্র দুনিয়ার দিকে তাকায় এক নির্ভেজাল দৃষ্টি নিয়ে। তারা রাষ্ট্রচরিত্র ও সমাজ চরিত্র বোঝে। এ রাষ্ট্র ও সমাজ তাদের পক্ষে নয় এটা জন্মের পর থেকেই তারা বুঝত শুরু করে। তারা দেখে পদে পদে বাঁধা। যখন লেখা পড়া শিখে শিক্ষাব্যবস্থার ভন্ডামি তারা দেখে। ন্যায় অন্যায় জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে ও বৈশ্বিক যোগাযোগের মাধ্যমেও সবকিছু তাদের কাছে ধরা পড়ে। তাই তাদের আটকে রাখা যাবেনা। ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন বা নিরাপদ সড়কের আন্দোলন কেবল শুরু। এঁর আগে রাজাকারদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে মুখ্য ভুমিকা নবীনরাই নিয়েছিল। আমাদের মতে ভবিষ্যতে তারা যখন সাম্যভিত্তিক এক সমাজের জন্য মরিয়া লড়াই চালাবেন তখনই সূচিত হবে আরও বৃহত্তর এক প্রগতিশীল লড়াই।।