সরকারী চাকুরীতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন

লেখকঃ হাসন লাল

প্রশ্নটি অনেক আগে থেকে উত্থিত হলেও এ বছর ২০১৮তেই জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে বড় ছাত্র আন্দোলনে রূপ নিয়েছে এপ্রিলে যখন ঢাবি শাহবাগ থেকে সারা দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেঁটে পড়তে থাকেন। দাবী সরকারী চাকুরীতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কার। বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারদের জন্য

ঢাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমাবেশ

ঢাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমাবেশ

৩০% আর নারী, জেলা, উপজেলা, উপজাতি ইত্যাদি সহ প্রায় ৫৬% কোটা দ্বারা সংরক্ষিত। এমনিতেই শতকরা ১ ভাগ কর্মশক্তিও সরকারী চাকুরীর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনা, তারমধ্যেও অধিকাংশ কোটার নামে সরকারী দলীয় লোকজনের দ্বারা ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে পুরণ হয়। এ অবস্থায় ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছেন তারা হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন, যারা আবার বহু লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার সৌভাগ্য প্রাপ্ত। এটা আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্রের দুর্বলতার বহিপ্রকাশ।

মুক্তিযোদ্ধা বলতে তারা বোঝায় তাদের যারা ছিল ভারতের দালাল, আর রাজাকাররা হচ্ছে পাকিস্তানের দালাল। বাংলাদেশ হওয়ার পর যারা জাতি জনগণের অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্ত করার সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন তাদের তারা মুক্তিযোদ্ধা বলেনা বরং যারা ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের আশির্বাদ নিয়ে বিদেশী শোষকদের উপনিবেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বজায় রাখতে কাজ করেছে তাদেরকেই তারা মুক্তিযোদ্ধা বলে। এখন সেই মুক্তিযোদ্ধা না থাকলেও তাদের সন্তানদের তারা ভাঁড়াটিয়া বানাতে চাইছে। এদের মধ্যেও যারা আন্তরিকভাবে যুদ্ধ করেছেন তারা কখনোই চাননা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হোক তাদের সন্তানেরা।

বিষয়টা পরিষ্কার। ছাত্রছাত্রীরা মুক্তিযোদ্ধা নামের ভণ্ডামি বোঝেন। এসব ভাঁওতাবাজি সকলের কাছে পরিষ্কার। কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্ব যখন দোদুল্যমান শক্তির হাতে থাকে তখন ভুক্তভোগী হতে হয় সাধারণদের। এমনটাই ঘটেছে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের গূণ্ডাবাহিনীর ধারাবাহিক হামলা-নির্যাতন-লাঞ্চনার স্বীকার হয়েছেন তরিকুলসহ অনেকে ছাত্রছাত্রী। উল্লেখ্য তরিকুলের চিকিৎসায় পর্যন্ত বাঁধা দেয়া হয়। আন্দোলনে শেখ মুজিব ও হাসিনার ছবি বহন করার চিত্র দেখলে বোঝা যায় তারা প্রতিক্রিয়াশীলদের খুশি করতে চাইছে। তাদের নিজেদেরো বুকের ভেতর আকাঙ্খা রয়েছে ভবিষ্যতে একজন দুর্নীতিবাজ আমলা হয়ে জনগণের মাথায় চেপে বসবে। এই যদি হয় তাহলে এর মধ্যে প্রগতিশীলতার কিছু নেই। আর ন্যায় অন্যায়ের নিরিখে বিচার করলে যে কোন বৈষ্যমই অন্যায়, আর এর বিরুদ্ধে আন্দোলন ন্যায়সংগত। ছাত্রছাত্রীরা জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করেন বলে তাদের মধ্যে প্রগতিশীল ধ্যান ধারনা বাসা বাঁধতে পারে সহজেই। তারা বয়সেও নবীন, ফলে তাদের মধ্যে সম্ভাবনা কাজ করে।

সরকারী চাকুরী মানে প্রতিক্রিয়াশীল সরকারের কর্মকর্তা কর্মচারী হিসেবে জনগণের উপর শোষক শ্রেণীসমূহের শোষণ নিপীড়ণ বজায় রাখার জন্য কাজ করা। বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি হবার পর অসংখ্য সরকারী কর্মচারী আখের গুছিয়ে নিয়েছে-আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এখন আবার সরকারী চাকুরেদের বেতন বেসরকারীদের চেয়ে অনেক বেশী। এটা নবীনদের মধ্যে লোভ লালসার তৈরি করে।

অপরদিকে প্রগতিশীল ধ্যান ধারণা নবীনদের ভিন্ন এক সমাজ ব্যবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে যেখানে লোভ লালসা দুর্নীতি লুন্ঠন সমাজের চাকা নয়, বরং মানুষে মানুষে সাম্য বিরাজ করে, সেখানে চাকুরীর জন্য লক্ষ কোটি টাকা ঘুষও দিতে হবেনা, আমলা হয়ে জনগণের ক্ষতিও করতে হবেনা বরং উপকার করতে হবে। আমরা চাই এমন ধারার মানুষ।

বর্তমান আন্দোলন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর স্বচ্ছল অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও এটা ছাত্রছাত্রীদের সচেতনতার বহিপ্রকাশ এবং সচেতনতা আরো বাড়াবে। এমন আন্দোলনের মধ্যে লোভী মানুষ নয়, প্রগতিশীল মানুষ তৈরি হবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।।