সিরাজ সিকদার রচনাঃ সর্বহারার সর্বোচ্চ শ্রেণী সংগঠন হিসেবে পার্টি

 

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার

 


পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯৭০

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক ১৯৭২ সালে ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীউদ্ভূত কর্মীদের মতাদর্শগত পুনর্গঠন সম্পর্কেসংকলনপুস্তিকায় প্রকাশিত

পূবাসপা কর্তৃক ১৯৭৪ সালেমতাদর্শগত রচনাবলীতে প্রকাশিত

সিপিএমএলএম বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১২ ডিসেম্বর ২০১২


পিডিএফ

।। স্ট্যালিনের রচনাবলীর ভিত্তিতে ।।

পার্টি হলো শ্রমিক শ্রেণীর সংগঠিত বাহিনী। কিন্তু পার্টিই শ্রমিক শ্রেণীর একমাত্র সংগঠন নয়। সর্বহারার আরো সংগঠন রয়েছে যা ব্যতীত তারা পুঁজির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারে না; ট্রেড ইউনিয়ন, সমবায়, কারখানা সংগঠন, পার্লামেন্টারী গ্রুপ, (পার্টি বহির্ভূত) মহিলাদের সমিতি, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা সংগঠন, যুবলীগ, বিপ্লবী সামরিক সংগঠন, সর্বহারার রাষ্ট্র প্রভৃতি। এ সকল সংগঠনের অধিকাংশ লোকই পার্টি বহির্ভূত। এদের মধ্যে সামান্য অংশই পার্টির সদস্য। বিশেষ অবস্থায় এ সকল সংগঠন শ্রমিক শ্রেণীর একান্ত প্রয়োজন। কেননা এদের ছাড়া বুর্জোয়াদের উৎখাত করে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা নিজের অবস্থাকে সুসংহত করতে পারে না এবং নিজেদের শক্তিকে সুদৃঢ় করতে পারে না। কিন্তু এত প্রচুর সংগঠনের উপর কি করে একক নেতৃত্ব স্থাপন করা যায়? এর কি গ্যারান্টি রয়েছে যে এত বিভিন্ন প্রকার সংগঠন নেতৃত্বকে বিভক্ত করবে না? এটা বলা যায় যে এদের প্রত্যেকটি (অস্পষ্ট – সর্বহারা পথ) কাজ করছে এবং এর ফলে একে অপরের বাঁধা হবার সম্ভাবনা কম। এটা অবশ্যই সত্য। কিন্তু এটাও সত্য যে প্রতিটি সংগঠন একটি লক্ষ্যের জন্য কাজ করছে, কারণ তারা একটি শ্রেণীরই সেবা করে, সে শ্রেণী হলো সর্বহারা। তখন প্রশ্ন উঠে কে নির্ণয় করবে লাইন, সাধারণ লক্ষ্য যার ভিত্তিতে সকল সংগঠনের কার্য পরিচালিত হবে। কোথায় সেই কেন্দ্রীয় সংগঠন যা প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার জন্য কেবলমাত্র সক্ষমই নয় সাধারণ লাইন নির্ণয়ে, অধিকন্তু এর যথেষ্ট সম্মান রয়েছে এ সকল সংগঠনকে নিজস্ব লাইনে অনুসরণ করানোর যাতে নেতৃত্বের ঐক্য স্থাপিত হয় এবং গোলমাল অসম্ভব হয়। সে সংগঠন হলো সর্বহারা পার্টি।

পার্টির সকল প্রকার প্রয়োজনীয় শিক্ষা রয়েছে, কেননা প্রথমতঃ ইহা শ্রমিক শ্রেণীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মিলন স্থান যাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে পার্টি বহির্ভূত সংগঠনের সাথে, অনেক সময় এরাই এ সকল সংগঠনকে পরিচালিত করে। দ্বিতীয়তঃ শ্রমিক শ্রেণীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মিলন ক্ষেত্র হিসেবে পার্টি শ্রমিক শ্রেণীর নেতাদের শিক্ষাকেন্দ্র, যার ফলে তারা সক্ষম হয় তাদের বিভিন্ন সংগঠন চালাতে। তৃতীয়তঃ শ্রমিক শ্রেণীর নেতাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে পার্টি তার অভিজ্ঞতা ও সম্মানের জন্য একমাত্র কেন্দ্র যা সর্বহারাদের সংগ্রামের নেতৃত্ব হিসেবে কাজ করে, যার ফলে শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিটি পার্টি বহির্ভূত সংগঠন সহযোগী শক্তি এবং জনগণের সাথে পার্টিকে যুক্ত করছে এইরূপ প্রকার ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে।

পার্টি হলো সর্বহারা শ্রেণীর সংগঠনের সর্বোচ্চ রূপ।

কিন্তু এটা অবশ্যই বুঝায় না যে পার্টি বহির্ভূত সংগঠনসমূহ, ট্রেড ইউনিয়ন, সমবায় প্রভৃতি অফিসগতভাবে পার্টির অধীন থাকবে। এটা কেবলমাত্র বুঝায় যে পার্টি সদস্যগণ যারা ঐ সকল সংগঠনে কাজ করছেন, বিনা সন্দেহে সেখানে প্রভাবশালী, যতখানি সম্ভব চেষ্টা করবেন পার্টি বহির্ভূত সংগঠনসমূহকে তাদের কাজে সর্বহারার পার্টির নিকটতম করতে এবং যাতে তারা স্বেচ্ছায় পার্টি নেতৃত্ব মেনে নেয়।

এ কারণেই লেনিন বলেছেন যে, পার্টি হলো সর্বহারার শ্রেণী সংগঠনের সর্বোচ্চ রূপ যার রাজনৈতিক নেতৃত্ব অবশ্যই প্রসারিত হবে সর্বহারার অন্যান্য ধরনের সংগঠনের উপর।

এ কারণে পার্টি বহির্ভূত সংগঠনের ‘স্বতন্ত্রতা’ যা পার্লামেন্ট স্বতন্ত্র সদস্য এবং পার্টি বিচ্ছিন্ন সাংবাদিক, সংকীর্ণমনা ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এবং অন্ধ সমবায় কর্মচারীর জন্ম দেয়, সম্পূর্ণরূপে লেনিনবাদী তত্ত্ব ও অনুশীলনের পরিপন্থী। ■