সিরাজ সিকদার রচনাঃ পূর্ববাংলার সমাজের শ্রেণী বিশ্লেষণ

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার

 


পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯৭০

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক সংশোধিত আকারে প্রকাশ ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১০ নভেম্বর ২০১২


 

পিডিএফ

কারা আমাদের শত্রু, কারা আমাদের মিত্র? এটাই হলো বিপ্লবের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অতীতের সমস্ত বিপ্লবী সংগ্রামগুলো কেন এত অল্প সাফল্য অর্জন করেছে তার মূল কারণ হলো, প্রকৃত শত্রুদের আক্রমণ করার জন্য প্রকৃত বন্ধুদের ঐক্যবদ্ধ করতে না পারা।

বিপ্লবী পার্টি হচ্ছে জনসাধারণের পথ প্রদর্শক। বিপ্লবী পার্টি যখন তাদের ভ্রান্ত পথে চালিত করে তখন কোন বিপ্লবই সার্থক হতে পারে না। পূর্ববাংলার বিপ্লবের সুদীর্ঘ ২৩ বছরের অভিজ্ঞতা এবং ভারতীয় বিপ্লবের ৪৬ বৎসরের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে সংশোধনবাদী, নয়া সংশোধনবাদী, ট্রটস্কী ও চেবাদীরা জনগণকে  বিপথে চালিত করেছে এবং এ কারণে ভারত ও পূর্ববাংলার বিপ্লব বাস্তবায়িত হয়নি।

আমরা অবশ্যই এ সকল বিশ্বাসঘাতক নেতিবাচক উদাহারণ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবো এবং বিপ্লবকে সঠিক পথে পরিচালনা করে জনগণের মুক্তি বাস্তবায়িত করবো। প্রকৃত শত্রুদের আক্রমণ করার জন্য প্রকৃত বন্ধুদের ঐক্যবদ্ধ করতে মনোযোগী হবো।

প্রকৃত শত্রু ও প্রকৃত বন্ধুদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য পূর্ববাংলার সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বিপ্লবের প্রতি তাদের মনোভাবের সাধারণ বিশ্লেষণ করতে হবে।

পূর্ববাংলার সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর অবস্থা কি রকম?

পূর্ববাংলার বুর্জোয়া শ্রেণী

পূর্ববাংলার বুর্জোয়া শ্রেণী চারভাগে বিভক্ত।

এক ভাগ ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের তাবেদার, এক ভাগ সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের তাবেদার, অপর ভাগ মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদের তাবেদার। এক ভাগ জাতীয় বুর্জোয়া।

সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের তাবেদার বুর্জোয়া পূর্ববাংলার সামন্ত গোষ্ঠীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই শ্রেণী পূর্ববাংলার সবচাইতে পশ্চাদপদ প্রতিক্রিয়াশীল উৎপাদন সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে এবং উৎপাদন শক্তির বিকাশ ব্যাহত করে। পূর্ববাংলার বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে এদের অবস্থান অসঙ্গতিপূর্ণ। এরা সামন্তবাদ এবং বৈদেশিকদের পক্ষ নেয়, এবং সর্বদাই অতিমাত্রায় প্রতিবিপ্লবী ভূমিকা পালন করে।

এরা হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া শ্রেণী।

পূর্ববাংলার রাষ্ট্রীয় শিল্প, ব্যবসা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমুহের বড় বড় কর্মচারীরাও এ শ্রেণীর মাঝে পড়ে।

বুর্জোয়াদের চতুর্থ অংশ

এরা ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের তাবেদারদের দ্বারা নিপীড়িত এবং আভ্যন্তরীণ সামন্তবাদ কর্তৃক শৃঙ্খলাবদ্ধ। এ কারণে উভয়ের সাথেই এদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এদিক দিয়ে এরা বিপ্লবী শক্তিগুলির একটি।

ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ এবং সামন্তবাদ কর্তৃক নিপীড়িত বলে উপরোক্ত শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বুর্জোয়াদের এ অংশ কিছুটা উৎসাহ প্রদর্শন করে।

কিন্তু অন্যদিকে এ সংগ্রামকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে তারা সক্ষম নয় যেহেতু তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অদৃঢ় এবং এখনো সামন্তবাদ ও বৈদেশিক শোষকদের সাথে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়ে গেছে। তাদের এ দিকটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যখন জনগণের বিপ্লবী শক্তি জোরদার হয়ে উঠে।

জাতীয় বুর্জোয়াদের দ্বিমুখী চরিত্র থেকে পাওয়া যায় যে, কোন কোন সময় এরা বৈদেশিক শোষণ ও সামন্তবাদী শোষণ বিরোধী সংগ্রামে কিছুটা অংশগ্রহণ করতে পারে এবং এভাবে বিপ্লবী শক্তি হিসেবে পরিগণিত  হতে পারে। কিন্তু অন্য সময়ে এরাই আবার দালাল, বিশ্বাসঘাতক বুর্জোয়াদের অনুসরণ করতে পারে।

জাতীয় বুর্জোয়াদের কখনো নিজস্ব রাজনৈতিক পার্টি ছিল না এবং বর্তমানেও নেই।

বর্তমানে তারা যে শুধু দালাল বিশ্বাসঘাতক বুর্জোয়া ও জমিদারদের থেকে পৃথক তাই নয় তারা বিপ্লবের মিত্রও। এ কারণে এটা অবশ্যই প্রয়োজন, জাতীয় বুর্জোয়াদের সম্পর্কে একটি সঠিক নীতি থাকা।

এই নীতি হচেছ তাদের ঐক্য ও সংগ্রামের নীতি, সর্বহারারা নিজস্ব স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রতা এবং উদ্যোগ বজায় রেখে জাতীয় বুর্জোয়াদের ঐক্যবদ্ধ করবে, একই সাথে তাদের দোদুল্যমানতা, বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকবে এবং সংগ্রাম পরিচালনা করবে।

ক্ষুদে বুর্জোয়া

কৃষক ব্যতীত যারা এই শ্রেণীতে পড়ে তারা হচ্ছে—

ক) বিশাল বুদ্ধিজীবী

খ) ক্ষুদে ব্যবসায়ী

গ) হস্তশিল্পী

ঘ) পেশাদার লোক।

এদের সামাজিক অবস্থা মাঝারী চাষীদের সাথে মিলে। তারা সকলেই ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও তার তাবেদার, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের শোষণে শোষিত হচ্ছে এবং দেউলিয়া ও ধ্বংসের পথে চালিত হচেছ। এ কারণে এই ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীর বিভিন্ন স্তর বিপ্লবের একটি পরিচালক শক্তি এবং সর্বহারার বিশ্বস্ত মিত্র। কেবলমাত্র সর্বহারার নেতৃত্বেই এরা মুক্তি অর্জন করতে পারে। এবার আমাদের এই শ্রেণীর বিভিন্ন স্তর বিশ্লেষণ করা যায়।

 

প্রথমতঃ বুদ্ধিজীবী

ছাত্র-যুবক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক, নিম্নস্তরের সরকারী কর্মচারী, ক্ষুদে কেরানী প্রভৃতি। এরা একটি আলাদা শ্রেণী বা স্তর নয়। বর্তমান পূর্ববাংলার সামাজিক অবস্থায় এদের পারিবারিক উৎপত্তি, জীবন ধারণের অবস্থা এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বিচার করে এদের ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীতে ফেলা যায়।

ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের সাথে যোগসাজসে লিপ্ত বুদ্ধিজীবি ছাড়া অধিকাংশ বুদ্ধিজীবি ও ছাত্ররা নিপীড়িত এবং সর্বদাই চাকুরী হারাবার বা পড়াশুনা বন্ধ হবার ভয়ে থাকে। এ কারণে তারা বিপ্লবী হয়। তারা মোটামুটি বুর্জোয়া বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে পরিচিত, তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক চেতনা রয়েছে এবং কোন কোন সময় অগ্রগামী ভূমিকা গ্রহণ করে অথবা বর্তমান বিপ্লবের পর্যায়ে জনগণের সাথে সংযোগকারীর ভূমিকা পালন করে। বিশাল দরিদ্র বুদ্ধিজীবীরা শ্রমিক-কৃষকের সাথে হাত মিলাতে পারে বিপ্লবে অংশগ্রহণ করার জন্য।

অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশে মার্কসবাদ প্রথম প্রচার লাভ করেছে বুদ্ধিজীবীদের মাঝে এবং তারাই প্রথম মার্কসবাদ গ্রহণ করে। বিপ্লবী বুদ্ধিজীবী ব্যতীত বিপ্লবী শক্তিসমূহকে সাফল্যের সাথে সংগঠিত করা  এবং বিপ্লবী কার্য সাফল্যের সাথে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু এই বুদ্ধিজীবীরা যতক্ষণ পর্যন্ত বিপ্লবী গণসংগ্রামে মনে প্রাণে ঝাঁপিয়ে পড়ে অথবা মনস্থির করে জীবন প্রাণ দিয়ে জনগণের সেবা করার এবং তাদের একজন হওয়ার, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা প্রায়ই আত্মগত, ব্যক্তিকেন্দ্রিক, অদৃঢ় এবং অবাস্তববাদী হয়।

এ কারণে যদিও পূর্ববাংলার বুদ্ধিজীবীরা একটি অগ্রগামী ভূমিকা বা জনগণের সাথে সংযোগকারী হিসেবে কাজ করতে পারে কিন্তু এদের সকলেই শেষ পর্যন্ত বিপ্লবী থাকবে না। কেউ কেউ সংকটপূর্ণ সময়ে বিপ্লবী সারি থেকে ঝরে পড়বে এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে, আবার কেউ হয়তো বিপ্লবের শত্রুতে পরিণত হবে। বুদ্ধিজীবীরা তাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারে কেবলমাত্র দীর্ঘদিনের গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে।

দ্বিতীয়ঃ ক্ষুদে ব্যবসায়ী

সাধারণতঃ এরা ছোট দোকান চালায় এবং এক-আধজন কর্মচারী রাখে। তারা ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের তাবেদারদের শোষণের চাপে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকে।

তৃতীয়তঃ হস্তশিল্পী

এদের সংখ্যা প্রচুর, এদের নিজেদের উৎপাদনের উপায় রয়েছে এবং এরা বেতনভুক্ত কোন কর্মচারী রাখে না, রাখলেও একজন দু’জন সাহায্যকারী বা শিক্ষানবীশ রাখে। এদের অবস্থা মাঝারী চাষীদের মত।

চতুর্থতঃ পেশাদার লোক

এদের মধ্যে রয়েছে ডাক্তার, উকিল ও অন্যান্য পেশাদার লোক। তারা অন্যলোককে শোষণ করে না, করলেও সামান্য করে। এদের অবস্থা হস্তশিল্পীদের মতই।

ক্ষুদে বুর্জোয়াদের এই অংশগুলো বিশাল জনতা নিয়ে গঠিত যাদেরকে অবশ্যই আমরা আমাদের পক্ষে আনবো এবং তাদের স্বার্থ আমরা অবশ্যই রক্ষা করবো। কেননা সাধারণভাবে তারা বিপ্লবে যোগ দিতে পারে বা সমর্থন করতে পারে এবং এরা আমাদের ভাল মিত্র। তাদের দুর্বল দিক হলো তাদের কেউ কেউ সহজেই বুর্জোয়া প্রচারে প্রভাবান্বিত হয়। আমরা অবশ্যই এদের মাঝে বিপ্লবী প্রচারণা চালাবো এবং সাংগঠনিক কাজ করবো।

ক্ষুদে বুর্জোয়াদের নিম্নলিখিত স্তরে বিভক্ত করা যায়ঃ

ক্ষুদে বুর্জোয়াদের উচ্চস্তরঃ

এই স্তরে পড়ে যাদের কিছু  উদ্বৃত্ত অর্থ ও খাদ্য আছে অথবা যারা শারীরিক অথবা মানসিক শ্রম দ্বারা নিজেদের ভরণ-পোষণের জন্য প্রতি বছর যতটুকু প্রয়োজন তার অধিক উপার্জন করে। এ ধরণের লোক ধনী হেতে অত্যন্ত আগ্রহী। বিপুল অর্থ সঞ্চয়ের ইচ্ছা না থাকলেও এরা বুর্জোয়াদের স্তরে উন্নীত হতে সর্বদাই ইচ্ছুক। লোকের নিকট সম্মান পায় এমন টাকাওয়ালা লোক দেখলেই তাদের মুখ দিয়ে লালা নির্গত হয়। এই ধরণের লোক ভীরু। তারা সরকারী অফিসারকে ভয় করে এবং বিপ্লবকে ভয় করে। যেহেতু এদের অর্থনৈতিক অবস্থা বুর্জোয়া শ্রেণীর অর্থনৈতিক অবস্থার অত্যন্ত কাছাকাছি, তাই তারা বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রচারকে খুবই বিশ্বাস করে এবং বিপ্লবের প্রতি সন্দেহের মনোভাব পোষণ করে। ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীর মধ্যে এ অংশ সংখ্যালঘু এবং এরা ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীর দক্ষিণপন্থী।

ক্ষুদে বুর্জোয়াদের মাঝারীস্তরঃ

এরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মোটামুটি নিজেদের ভরণপোষণ করতে পারে। এ শাখার লোক প্রথম শাখার লোক থেকে অনেক ভিন্ন। এরা ধনী হতে চায়, কিন্তু ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের তাবেদার কর্তৃক শোষিত হয়ে তারা অনুভব করে যে অধিক পরিশ্রম করলেও বেঁচে থাকা কষ্টকর। আন্দোলন সম্পর্কে তারা সন্দেহ পোষণ করে ইহা বিজয় অর্জন করবে কিনা, তারা আন্দোলনে ঝুঁকি সহজে নিতে চায় না এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করে। কিন্তু কখনো বিপ্লবের বিরোধিতা করে না। এ শাখায় লোকসংখ্যা খুব বেশী, ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রায় অর্ধেক।

ক্ষুদে বুর্জোয়াদের নিম্নস্তরঃ

এই শ্রেণীতে রয়েছে তারা যাদের জীবন যাত্রার ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটছে। এ শাখার লোক অনেকেই পুর্বে হয়তো কোন অবস্থাপন্ন পরিবারভূক্ত ছিল, কিন্তু ক্রমে ক্রমে তারা এমন অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে, কোন মতে জীবিকা নির্বাহ করাও তাদের পক্ষে কষ্টকর। তাদের জীবনযাত্রার মানের ক্রমশঃই অবনতি হচেছ। এ ধরণের লোক অধিক মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে, কারণ তাদের অতীত ও বর্তমানের মাঝে একটা বৈপরিত্যের তুলনা রয়েছে। বিপ্লবী আন্দোলনে এ ধরণের লোক অতি গুরুত্বপূর্ণ। এদের সংখ্যাও কম নয়। এরাই ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীর বামপন্থী অংশ।

ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীর উপরোক্ত তিনটি শাখাই স্বাভাবিক সময়েই বিপ্লবের প্রতি ভিন্ন ভিন্ন মনোভাব পোষণ করে, কিন্তু যুদ্ধের সময় অর্থাৎ যখন বিপ্লবী উত্তাল জোয়ার বৃদ্ধি পায়, বিজয়ের আলো চোখে পড়ে, তখন শুধু  ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীর বামপন্থী নয়, মধ্যপন্থীও বিপ্লবে যোগদান করতে পারে। এমনকি সর্বহারা শ্রেণী ও ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীর বামপন্থীদের বিরাট বৈপ্লবিক স্রোতে ভেসে দক্ষিণপন্থীরা বিপ্লবের সঙ্গে যেতে বাধ্য হয়।

 

ক্ষুদে হস্তশিল্পী

ক্ষুদে হস্তশিল্পীদেরকে  আধা সর্বহারা শ্রেণী বলা হয়, কারণ যদিও তাদের উৎপাদনের সরল উপকরণ আছে এবং স্বতন্ত্র পেশা রয়েছে তবু তারা প্রায়শঃই আংশিকভাবে শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হয়। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা গ্রামাঞ্চলের গরীব কৃষকদের মতোই। তাদের সংসার খরচের ভারী বোঝা, উপার্জন ও জীবন নির্বাহের ব্যয়ের ব্যবধান এবং প্রতিনিয়ত দারিদ্রের জ্বালা ও বেকারত্বের আশংকার থেকে বিচার করলে গরীব কৃষকদের সঙ্গে তাদের মোটামুটি সাদৃশ্য আছে।

দোকান কর্মচারী

দোকান কর্মচারী হচ্ছে ভাড়াটে কমী, নিজেদের সামান্য বেতন দিয়েই তাদের পরিবার চালাতে হয়। যদিও প্রতি বছরই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, তবু তাদের বেতন একবার মাত্র বাড়ে। আপনি যদি কখনো তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপ করেন তাহলে তখনই তারা তাদের অন্তহীন দুঃখ-দুর্দশার কথা শোনাতে থাকবে। তাদের অবস্থা গরীব কৃষক ও ক্ষুদে হস্তশিল্পীদের থেকে বেশী পৃথক নয়, বিপ্লবী প্রচারণাকে তারা অতি সহজেই গ্রহণ করে।

 

ফেরিওয়ালা

ফেরিওয়ালারা পণ্যদ্রব্য নিজেরা বহন করুক বা রাস্তার উভয় পার্শ্বে দোকান খুলে বিক্রয় করুক, তাদের মূলধন অল্প এবং উপার্জিত অর্থও কম। এতে তাদের খাওয়া পরার খরচ কুলায় না। তাদের অবস্থা গরীব কৃষকদের থেকে বেশী পৃথক নয়। তাই তাদেরও গরীব কৃষকদের মত বিপ্লবের প্রয়োজন হয় যা তাদের  বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করবে।

 

জমিদার শ্রেণী

জমিদারের জমি আছে কিন্তু সে নিজে শ্রমে অংশগ্রহণ করে না (সামান্য করতেও পারে) এবং চাষীদের শোষণ করে বেঁচে থাকে। জমি পত্তনির টাকা, বর্গা ও ভাগা আদায়ই তাদের শোষণের প্রধান ধরন। সে কারখানা ও ব্যবসা করতে পারে।

[সুদখোর – যাদের আয়ের প্রধান অংশ সুদ খাওয়া এবং যাদের অবস্থা গড়পড়তা মাঝারী চাষীর চাইতে ভাল তাদেরকেও জমিদারের শ্রেণীভুক্ত করা হবে]।

ওয়াক্ফ সম্পত্তি, স্কুল ও অন্যান্য সম্পত্তির তত্ত্বাবধানও এই শোষণের আওতায় পড়ে।

একজন দেউলিয়া জমিদার যদি শ্রমে অংশগ্রহণ না করে, অন্যদের ঠকিয়ে তা লুট করে অথবা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাহায্যে গড়পড়তা মাঝারী চাষীর চাইতে ভাল অবস্থায় থাকে তাহলে সেও জমিদারের পর্যায়ে পড়ে।

পঞ্চায়েত সদস্য, সরকারী কর্মচারী (তহশীলদার, সি.ও, পুলিশ-দারোগা), মুজিববাদী, মস্কোপন্থী স্থানীয় জালিম ও টাউট ভদ্রলোকেরা জমিদার শ্রেণীর রাজনৈতিক প্রতিনিধি ও অতিশয় নিষ্ঠুর লোক। ধনী চাষীদের মধ্যে প্রায়শঃই ক্ষুদে স্থানীয় জালিম ও টাউট ভদ্রলোক দেখা যায়।

যে সকল ব্যক্তিরা জমিদারকে বর্গা-পত্তনি ইত্যাদিতে সাহায্য করে এবং তার সম্পত্তি দেখাশুনা এবং জমিদার কর্তৃক চাষী শোষণের উপর যাদের আয়ের প্রধান অংশ নির্ভর করে, যদি তারা গড়পড়তা মাঝারী চাষীর চাইতেও ভাল অবস্থায় থাকে তাহলে তাদেরকেও জমিদারের পর্যায়ভুক্ত করা হবে।

এই শ্রেণী বিদেশী শোষণের একটি প্রধান স্তম্ভ। এরা পূর্ববাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে বাধা হিসেবে কাজ করে এবং এদের কোন প্রগতিশীল ভূমিকা নেই। এ কারণে শ্রেণী হিসেবে এরা বিপ্লবের পরিচালক শক্তি তো নয়ই, বরঞ্চ বিপ্লবের লক্ষ্য। বর্তমানে পূর্ববাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এ শ্রেণীর এক অংশ ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দালাল হিসেবে কাজ করছে, আর এক অংশ দোদুল্যমান। কিন্তু বেশ কিছুসংখ্যক মাঝারী ও ছোট জমিদার রয়েছে যারা কিছুটা পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্পর্কের সংস্পর্শে এসেছে এবং যারা স্বাধীনতা সংগ্রাম সমর্থন করতে পারে। এদেরকে আমরা অবশ্যই আমাদের নেতৃত্বে একত্রিত করার প্রচেষ্টা চালাবো। এরাই হলো গ্রামের আলোকপ্রাপ্ত ভদ্রলোক।

 

ধনী চাষী

সাধারণ নিয়মেই ধনী চাষীর জমি আছে। কোন কোন ধনী চাষীর কিছুটা জমি বর্গা বা পত্তনী নেওয়া, বাকীটা নিজের। আবার কোন কোন ধনী চাষীর নিজের কোন জমি নাই, সবটাই বর্গা বা পত্তনী নেয়া। সাধারণতঃ ধনী চাষীর গড়পড়তার বেশী চাষের যন্ত্রপাতি (লাঙ্গল, গরু) আছে এবং বেশী নগদ টাকা আছে। সে নিজে শ্রমে অংশগ্রহণ করে, তার শোষণের প্রধান ধরন কামলা বা মজুর খাটানো (দীর্ঘমেয়াদী মজুর)। এ ছাড়াও সে জমির কিছু অংশ বর্গা পত্তনী দিতে পারে এবং বর্গা বা পত্তনীর মাধ্যমে শোষণ চালাতে পারে। সে টাকা কর্জ দিতে পারে বা ব্যবসা বাণিজ্যও করতে পারে। যে ব্যক্তি তার ঊর্বর জমির কিছুটা মজুর না খাটিয়ে নিজেই চাষ করে কিন্তু বাকীটা পত্তনী দিয়ে শোষণ করে, কর্জ দিয়ে বা অন্য উপায়ে শোষণ করে তাকে ধনী চাষী ধরা হবে। ধনী চাষী নিয়তই শোষণ করে এবং ইহা তার আয়ের প্রধান উৎস।

সাধারণভাবে বলতে গেলে তারা পূর্ববাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে কিছুটা ভূমিকা পালন করতে পারে এবং জমিদার বিরোধী ভূমি বিপ্লবী সংগ্রামে নিরপেক্ষ থাকতে পারে। এ কারণে আমরা ধনী চাষীদের জমিদার শ্রেণীভূক্ত করবো না এবং অপরিপক্কভাবে তাদের ধ্বংস করার নীতি নেব না।

 

মাঝারী চাষী

অনেক মাঝারী চাষীর জমি আছে। কারো কিছুটা জমি নিজের, বাকীটা বর্গা অথবা পত্তনী নেয়া। এদের সকলেরই বেশ কিছু চাষের যন্ত্রপাতি আছে। একজন মাঝারী চাষীর আয়ের সম্পূর্ণ বা প্রধান অংশ আসে নিজের শ্রম থেকে। সাধারণতঃ সে অন্যকে শোষণ করে না। বরং বছর শেষে বর্গা (বর্গার অংশ দেওয়া), পত্তনীর টাকা, কর্জের সুদ, সরকারের ক্রমবর্ধমান খাজনা, উন্নয়নকর, শিক্ষাকর, চৌকিদারীকর প্রভৃতি দিয়ে নিজেই শোষিত হয়। কিন্তু সাধারণতঃ সে শ্রম বিক্রয় করে না (মজুরী বা কামলা খাটে না)। কিছু কিছু (স্বচ্ছল) মাঝারী চাষী কিছু শোষণও করে, কিন্তু তা তাদের নিয়মিত কিংবা আয়ের প্রধান উৎস নয়।

মাঝারী চাষীরা জাতীয় ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবে কেবল অংশগ্রহণই করে না, তারা সমাজতন্ত্রও গ্রহণ করবে। এ কারণে সমগ্র মাঝারী চাষীরাই সর্বহারাদের নিকটতম মিত্র এবং বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক শক্তি। মাঝারী চাষীদের সমর্থন বা বিরোধিতা বিপ্লবের বিজয় বা পরাজয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এটা বিশেষভাবে সত্য কৃষি বিপ্লবের পর যখন তারাই লোকসংখ্যায় সংখ্যাগুরু হয়।

 

গরীব চাষী

গরীব চাষীদের কারো কারো নিজের কিছু জমি ও অল্প কয়টা চাষের যন্ত্রপাতি আছে। সাধারণতঃ গরীব চাষীকে বর্গা বা পত্তনী নেয়া জমিতে কাজ করতে হয়। গরীব চাষী বর্গায় (ফসলের ভাগ দেয়া), পত্তনীর টাকা, কর্জের সুদ, সরকারের ক্রমবর্ধমান খাজনা, উন্নয়ন কর, শিক্ষা কর, চৌকিদারী কর, সরকারী কর্মচারীদের দুর্নীতি ও সর্বোপরী মজুরী খাটায় শোষিত হয়।

সাধারণতঃ মাঝারী চাষীকে শ্রমশক্তি বিক্রয় করতে হয় না (অর্থাৎ মজুরী বা কামলা খাটতে হয় না), অন্যদিকে গরীব চাষীকে তার শ্রমশক্তি বিক্রয় করতে হয়। ইহাই মাঝারী চাষী ও গরীব চাষীকে পার্থক্য করার প্রধান উপায়।

গরীব চাষীরা সহজেই বিপ্লবী প্রচারণা গ্রহণ করে। শ্রমিক শ্রেণী ও শ্রমিক শ্রেণীর পার্টি অবশ্যই গরীব চাষীর উপর নির্ভর করে মাঝারী চাষীদের ঐক্যবদ্ধ করবে, জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে ও ভূমি সংস্কার করবে। “বিপ্লবের গোড়ার দিকে মাঝারী কৃষকগণ দোটানায় ছিলেন। যখন তারা ঘটনা প্রবাহের সাধারণ ধারা স্পষ্টভাবে দেখতে পান এবং বিপ্লবের বিজয় আসন্ন হয়, শুধু তখনই তারা বিপ্লবের পক্ষে আসেন”— বলেছেন সভাপতি মাওসেতুঙ।

সর্বহারার নেতৃত্বেই গরীব চাষী ও মাঝারী চাষীরা মুক্তি পেতে পারে। কেবলমাত্র সর্বহারাই গরীব চাষী ও মাঝারী চাষীদের ঐক্যবদ্ধ করে বিপ্লবকে বিজয়ের দিকে পরিচালনা করতে পারে। কৃষক বলতে আমরা ক্ষেতমজুর, গরীব চাষী ও মাঝারী চাষীকে বুঝি।

 

সর্বহারা শ্রেণী

পূর্ববাংলার আধুনিক শিল্প সর্বহারারা প্রধানতঃ চটকল, চিনিকল, বস্ত্র, শিল্প, রেলওয়ে, ডক, পরিবহন ইত্যাদিতে কর্মরত। এদের মধ্যে অধিকাংশ পুঁজির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ। শিল্পীয় সর্বহারা যদিও সংখ্যায় অল্প, তবুও তারা পূর্ববাংলার নতুন উৎপাদন শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। আধুনিক পূর্ববাংলায় তারাই সবচাইতে প্রগতিশীল শ্রেণী এবং বৈপ্লবিক আন্দোলনের পরিচালক শক্তি। কেন তারা এই ভূমিকা দখল করে? এর প্রথম কারণ হচ্ছে তারা কেন্দ্রীভূত। অন্য যে কোন অংশের লোক এদের মত কেন্দ্রীভূত নয়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে এদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিম্নমানের। উৎপাদনের উপকরণ হতে তারা বঞ্চিত, নিজের হাত দু’টি ছাড়া তাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ধনী হবার কোন আশা নেই এবং ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের তাবেদাররা তাদের সঙ্গে অতিশয় নিষ্ঠুর ব্যবহার করে। সুতরাং সংগ্রামে তারা অগ্রবর্তী। শহরের কুলি, মুটে-মজুর, রিকশাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, ঝাড়ুদার, মেথর, ঠেলাওয়ালা, ঠিকা ঝি, হোটেল বয়, বিড়ি শ্রমিক প্রভৃতিদেরও নিজেদের হাত দু’টি ছাড়া আর কোন সম্বল নেই। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা শিল্প শ্রমিকদের মতই। কিন্তু শিল্প শ্রমিকদের চেয়ে এরা কম কেন্দ্রীভূত এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এদের ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ।

 

গ্রাম্য সর্বহারা বা গ্রাম্য শ্রমিক বা ক্ষেতমজুর

পূর্ববাংলার কৃষিতে এখনো পুঁজিবাদী কৃষিকর্ম খুব কম। গ্রাম্য সর্বহারা শ্রেণী বলতে বার্ষিক, মাসিক অথবা দৈনিক ভাড়াটে কৃষকদের বুঝায়। এই ধরনের ভাড়াটে কৃষকদের শুধু যে জমি এবং কৃষি যন্ত্রপাতি নেই তা নয়, এমনকি তাদের কোন মূলধনও নেই। শুধু নিজেদের শ্রমশক্তি বিক্রি করেই বেঁচে থাকতে হয়। তাদের কাজের সময় এত দীর্ঘ, বেতন এত কম, শ্রমের অবস্থা এত শোচনীয় এবং কাজ এত নিরাপত্তাহীন যে অন্য সকল শ্রমিকদের তুলনায় তাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। গ্রামাঞ্চলে এ ধরণের লোকেরাই সবচেয়ে কষ্ট ভোগ করছে এবং কৃষক আন্দোলনে এদের অবস্থান গরীব চাষীদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

 

ভ্রষ্ট সর্বহারা

গ্রাম ও শহরে বহু বেকার রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে জীবন ধারণের উপায় থেকে বঞ্চিত বলে তারা অবৈধ উপায় অবলম্বন করে। এ কারণেই সৃষ্টি হয়েছে ডাকাত, চোর, ভিক্ষুক, পতিতা এবং বহু লোক যারা ফকিরালী, ওঝা, তাবিজ বিক্রী প্রভৃতি করে বেঁচে থাকে। এই সামাজিক স্তর অস্থায়ী। এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিক্রিয়াশীল কর্তৃক ক্রীত হতে পারে। অন্যরা বিপ্লবে যোগ দিতে পারে। এ ধরণের লোকদের গঠনমূলক গুণের অভাব রয়েছে এবং সহজেই ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠে। বিপ্লবে যোগদানের পর বিপ্লবী সারিতে তারাই হয় ভ্রাম্যমান বিদ্রোহীবাদের এবং নৈরাজ্যবাদের উৎস। অতএব আমাদের জানতে হবে কিভাবে তাদেরকে পরিবর্তিত করতে হয় এবং তাদের ধ্বংসত্মক প্রবণতাকে ঠেকানো যায়।

উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে আমরা দেখি আমাদের শত্রু হলো ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও তাদের শাসকগোষ্ঠী, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের উপর নির্ভরশীল দালাল বুর্জোয়া ও সামন্তবাদী এবং তাদের উপর নির্ভরশীল বুদ্ধিজীবীদের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ।

বিপ্লবের নেতা হলো শ্রমিক শ্রেণী ও তার পার্টি, নিকটতম মিত্র হলো কৃষক ও ক্ষুদে বুর্জোয়া। জাতীয় বুর্জোয়াদের প্রতি আমাদের ঐক্য ও সংগ্রামের নীতি থাকবে। যতক্ষণ তারা জাতীয় মুক্তি ও গণতন্ত্র সমর্থন করবে এবং সর্বহারার পার্টির বিরোধিতা করবে না, ততক্ষণ তাদেরকে আমাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যখন তারা সর্বহারার পার্টির বিরোধিতা করবে এবং জাতীয় মুক্তি ও গণতন্ত্রের বিরোধিতা করবে তখন তাদেরকে সমালোচনা করতে হবে এবং তাদের প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে হবে। ■