বাংলাদেশে ধর্মবাদী আগ্রাসনের সাম্প্রতিক ঘটনাধারা । উৎসঃ সামন্তবাদ।।

লেখকঃ হোসেন নীল

ধর্মবাদী আগ্রাসানের গত বছরের ধারাবাহিকতায় ঐ বছরের শেষ থেকে এ পর্যন্ত বহু হত্যা নির্যাতন চালিয়েছে ধর্মবাদীরা। এর মধ্যে রয়েছেঃ

ইতালীয় এনজিও কর্মী তাভেলা সিজার ধর্মবাদীদের হাতে নিহত হয়

ইতালীয় এনজিও কর্মী তাভেলা সিজার

২৮শে সেপ্টেম্বর ২০১৫ ধর্মবাদীরা তাবেলা সিজার নামে এক ইতালীয় এনজিও কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে ঢাকার গুলশানে।

৩রা অক্টোবর ২০১৫ রংপুরে কুনিও হোশি নামে এক জাপানী খামারীকে গুলি ও ছুরি দিয়ে আঘাত

জাপানী খামারী কুনিও হোশি খুন হলেন রংপুরে

জাপানী খামারী কুনিও হোশি

করে হত্যা করে ধর্মবাদীরা।
৫ অক্টোবর ২০১৫ ধর্মবাদীরা পাবনার ঈশ্বরদীর

পাবনার ধর্মযাজক লুত সরকার

পাবনার ধর্মযাজক লুত সরকার

লুত সরকার নামে এক খ্রীষ্ট ধর্মযাজককে হত্যা চেষ্টা চালায়।
এরা ২২ অক্টোবর মাঝরাতে বাংলাদেশের শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান স্থাপনা হোসেনী দালানে তাজিয়া

হোসেনি দালান

হোসেনি দালান

মিছিলের প্রস্তুতিতে হামলা চালিয়ে সঞ্জু ও জামালকে হত্যা করে, আহত শতাধিক। ২৬ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জের হরিপুরে শিয়া মসজিদের

বগুড়ার হরিপুরের সিয়া মসজিদ

বগুড়ার হরিপুরের শিয়া মসজিদ

নামজরতদের উপর হামলা চালিয়ে মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম হোসেনকে হত্যা ও আরো দুইজনকে আহত করে।
৩০ অক্তোবর ২০১৫। ব্লগার অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে ধর্মবাদীরা

প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন

প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন

নির্মমভাবে খুন করে। দীপন বিশিষ্ট সমাজতন্ত্রের সপক্ষের বুদ্ধিজীবী আবুল কাশেম ফজলুল হকের পুত্র। সাম্যবাদী জনগণ তার পরিবারের উপর

অধ্যাপক আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক

অধ্যাপক আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক

এই হামলায় গভীর মর্মাহত। ঐদিনই আরো দুই প্রকাশক আহমেদ রশীদ টুটুল ও রণদীপম বসু এবং এক ব্লগার তারেকের উপর হামলা করে তাদের আহত করা হয়।
৫ ডিসেম্বর ২০১৫ দিনাজপুরের কান্তাজির মন্দিরে যাত্রা প্যান্ডেলে বোমা হামলা চালানো হয়।
১০ ডিসেম্বর ২০১৫ দিনাজপুরের কাহারোলে ইসকন মন্দিরে হামলা চালায় ধর্মবাদীরা।
২৫ ডিসেম্বর ২০১৫তে রাজশাহীর বাগমারায় আহমদীয়া মসজিদের জুম্মার নামাযরতদের উপর ধর্মবাদী আত্মঘাতী হামলাকারী আক্রমণ চালিয়ে নিজেই নিহত হয়।

দেবীগঞ্জে পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারীকে হত্যা করা হয়

দেবীগঞ্জে পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারীকে হত্যা করা হয়

২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৬ পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে হিন্দু পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারীকে নির্মমভাবে হত্যা করে ধর্মবাদীরা।

নিরীশ্বরবাদী ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ

নিরীশ্বরবাদী ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ

সর্বশেষ ৬ এপ্রিল ২০১৬ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র নিরীশ্বরবাদী ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদকে খুন করেছে ধর্মবাদী বর্বররা।

নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র বিক্ষোভ

নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র বিক্ষোভ

উপরোক্ত ঘটনাগুলি কী প্রমাণ করে?
সামন্ততন্ত্র এর উৎস

সামন্ততন্ত্র হচ্ছে এমন এক সমাজব্যবস্থা যা ধর্মের জন্য সবচেয়ে মানানসই। এজন্য মধ্যযুগে ধর্মের এমন বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল। ধর্মের পতাকাতলে কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করা হত, বন্দীদের দাস ও অর্ধদাস বানান হত, নারিদের দাসী ও অর্ধদাসী বানিয়ে রাখা হত। এই সমাজে মানুষকে অতিরিক্ত শোষণ করা হয়, শ্রমঘণ্টা অধিক থাকে। বেগার খাটতে হয়। ইসলাম ধর্মবাদী রাজারা ভিন্ন ধর্মের লোকেদের কাছে বাড়তি কর (যিজিয়া কর) আদায় করত। অলৌকিকতা ও পরজগতের কথা বলে মানুষকে অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখা গেলে শোষকশ্রেণীর প্রতি তাদের অনুগত রাখা যাবে তাই তারা ভয়ঙ্কর নিবর্তনমূলক কুসংস্কার চালু করে। পরবর্তীতে বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী এই সমাজব্যবস্থার শত্রু হয়ে দেখা দেয়।
বর্তমানে শাসকশ্রেণি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বানিয়েছে এই লক্ষ্য থকে যাতে সমাজের ঘাঁশমুল স্তর পর্যন্ত ধর্মীয় নির্যাতন চালু রাখা যায়। তাহলে তাদের অন্যায় শাসন নির্বিঘ্ন হবে। এভাবে এরা সামন্ততন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের ধর্মশিক্ষা বাধ্যমুলক করা হয়েছে, ধর্মীয় লেবাস পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে, যারা এটা অস্বীকার করছে তাদের উপর নামিয়ে আনছে অবর্ণনীয় নির্যাতন।  গত ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ফেনির মধ্যম চারিপুরে মাদ্রাসার এক শিক্ষক মোশাররফ হোসেন এক ১২ বছর বয়সি ছাত্রকে ফ্যানে ঝুলিয়ে নির্যাতন করেছে।
সুতরাং এই ধর্মবাদী সন্ত্রাসীদের ভিত্তি এই সরকার, রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যেই আছে, আছে এর ভিত্তি সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে।
হাসিনা যখন ব্লগারদের ধর্মবিরোধী প্রচারের জন্য অভিযুক্ত করে তখন সে এটাই বুঝাতে চায় যে সে একই ধর্মবাদে বিশ্বাসী। কিন্তু সে সাম্রাজবাদ ও সম্প্রসরাণবাদেও বাঁধা। তারা সৌদি জোটে যোগ দিয়েছে, ভারতীয় জোটে আছে, রাশিয়া, চীন, আমেরিকা, জাপান সবগুলির খেদমত করছে। আবার ধর্মবাদীদেরও সামাজিক ও বিবিধ ইন্ধন যোগাচ্ছে। খেলাটা কিন্তু অতি বিপজ্জনক! শেখ মুজিবের পতনের সময় ভারত যে তাকে রক্ষা করতে আসেনি তার একটা কারণ মনে হয় এটা যে সে (শেখ) বিভিন্ন দিকে তাল দিচ্ছিল। কিন্তু ভারত সম্প্রসারণবাদ ধীরে ধীরে কঠোরতার দিকেই যাচ্ছে। রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম হলেও, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নেই, আর সাংস্কৃতিক ভিত্তি এখানে তাদের প্রায় হাতছাড়া। তাই তারা স্বভাবতই সেদিকেও মনোযোগ দেবে।