দাম বৃদ্ধি, ভ্যাটসহ সরকারের গণবিরোধী কর্মসূচির আশু ফল।। হাসন লাল

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

প্রতিক্রিয়াশীল আওয়ামী নেতৃতাধীন সরকার যে গণবিরোধী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ইতিমধ্যেই তার ফল ধরতে শুরু করেছে।

দ্রব্যমূল্য

তিন মাস হতে চলল সব্জির দাম দুই তিন গুণ বেড়েছে, কয়েক মাস হল প্রথমে পেঁয়াজ আর পরে কাঁচা মরিচের দাম তিন গুণ হয়েছে। বন্যার আগেই রোজার অসিলায় এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরের অসিলা হল ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও বাংলাদেশে পাচার-রফতানি হ্রাস। পরের অসিলা হল বন্যা। এসব অসিলায় প্রতি বছরই এ ধরণের সংকট তৈরি করা হয়। ফলে জনগণ এগুলো কিনতে গিয়ে নিঃস্ব হয় আর পকেট ভারী হয় বুর্জোয়া ধনিক শ্রেণির। তারা অল্প দামে এসব জিনিস কৃষকদের কাছ থেকে কিনে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বহু গুণ বেশি দামে বেঁচে। এই মুনাফাখোররাই আলীগ, বিএনপি, জাপা, জামাত প্রভৃতি বুর্জোয়া-সামন্ত দলগুলোর ভিত্তি।

বন্যা

বাংলাদেশে ও তার উজান ভারতে অতি বৃষ্টির ফলে যে বন্যা তার ফল উভয় দেশকেই ভোগ করতে হলেও এদেশকে ভাটি হওয়ার কারনে অতি ফল ভোগ করতে হয়। এছাড়া পরিবেশ দূষণ, জনগণ বিরোধী প্রকৃতি বিরোধী রাস্তা ঘাট সেতু নির্মাণ প্রভৃতি কারণে নদী ভরাট হয় আর পর্যাপ্ত পানি সাগরে যেতে পারেনা। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় ফসল নষ্ট হয়, ঘরবাড়ী গবাদী পশুর ক্ষতি হয়। এবারকার বন্যায় বাংলাদেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকার আমন ফসল নষ্ট হয়েছে। বহু ঘরবাড়ী গবাদী পশুর ক্ষতি হয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল শাসক সম্প্রদায় জনগণকে এর ক্ষতিপুরণ প্রদান করেনা, বরং রিলিফের নামে তাদের দালালদের টাকা কামাইয়ের ধান্দা করে দেয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমানো হয়নি

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার অযুহাতে অতীতে সরকার তেলের দাম বাড়ালেও, দীর্ঘদিন যাবত তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে কমতে যখন তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে তখন সরকার তেলের দাম না কমিয়ে বরং বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে। এনিয়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে আলীগ সরকার। আর গ্যাসের দাম দ্বিতীয়বার বাড়ানো হয়েছে। বিদেশ থেকে সস্তায় তেল কিনে এদেশে তিনগুণ বেশী দামে বিক্রী করে সরকার ইতিমধ্যে বিশাল টাকা কামিয়েছে যা তাদের নেতা মন্ত্রী আমলাদের ভোগ বিলাসে ব্যয় হবে, সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের কাছে পাচার হবে। সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে যা তারা জনগণের উপর বর্ধিত করারোপ করে ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে সংগ্রহ করতে চায়।

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়লো। কেন?

তেলের মূল্য কমে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ যখন কমে গেছে তখন তারা বিদ্যুতের মূল্য আরো বৃদ্ধি করেছে নিজেদের ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের জন্য আরো মুনাফা এনে দিতে। কুইক রেন্টালের নামে ভারতীয় কোম্পানীগুলোর হাতে বন্দী হয়ে গেছে বিদ্যুৎ শক্তি। সরকার বলছে যে গ্যাস দশ বছর পর শেষ হয়ে যাবে। আর সরকার কোন জনকল্যানমুখী সরকার নয়। সুতরাং তারা খুব পরিষ্কারভাবে বলে যে সাশ্রয়ী মুল্যে (তাদের ভাষায়) গ্যাস জনগণকে তারা দেবেনা। গ্যাসের লাইন বন্ধ করে বোতলজাত গ্যাস ব্যবহারে জনগণকে বাধ্য করবে যা মানুষকে তিন চারগুণ বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে। তাই, এই দশ বছরে জনগণ গ্যাস তুলনামূলক কম দামে ব্যবহার করতে যাতে না পারে আর শোষক শ্রেণি যাতে আরো মুনাফা কামাতে পারে আর বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে পারে আরো মুনাফা তার ব্যবস্থা তারা করবে। আর কৃষিভিত্তিক এই দেশে অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সুবিধা না থাকায় এর সংযোগ পাওয়াটাই এসব এলাকার মানুষের কাছে মুখ্য। এই সুযোগটাও সরকার নিচ্ছে।

জ্বালানী ও খনির প্রশ্নটি মালিকানার প্রশ্ন

তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি জ্বালানীর মালিকানা জনগণের হাতে নেই। আমাদের যে খনিজ সম্পদ আছে তার মালিকানাও নেই জনগনের হাতে বরং সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের হাতে। আমাদেরই সম্পদ তারা আহরণ করে আমাদেরি কাছে বহু গুণ বেশী দামে বিক্রী করছে। এই অতি মুনাফা তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করছে আর তারা তার একটা অংশ তাদের এদেশীয় দালালদের দেয়।

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ ছাত্র আন্দোলনের মুখে বানচাল

বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার্থীদের শতকরা ৬৫ ভাগই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধনি ও উচ্চ মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা পড়লেও অধিকাংশগুলোতে সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়েরা অনেক অর্থ ব্যয় করে পড়ে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খরচের ভার লাঘব নিশ্চয় সরকার করবেনা, কিন্তু আরো বাড়াবে। ঠিক তাই।

শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলনের মুখে বানচাল সরকারী ভ্যাট

শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলনের মুখে বানচাল সরকারী ভ্যাট

সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনা অধিকাংশ শিক্ষার্থী। অধিকন্তু সেখানে রয়েছে সেশন জট। তাই, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর গত্যন্তর থাকেনা। প্রথমে দশ শতাংশ হারে পরে সাড়ে সাত শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের ফলে তীব্র বিক্ষোভে ফেঁটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। সরকার ভণ্ডামী করে বলে যে ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয়য় কর্তৃপক্ষ দেবে। এটা শিশুশ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও বোঝে কীভাবে কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে অর্থ আদায় করে, সবাই জানে এটা শিক্ষার্থীদেরই দিতে হবে। ফলে সরকারী ভণ্ডামী শিক্ষার্থীদের ক্রোধ আরো বৃদ্ধি করে। অবশেষে সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করে। প্রমাণিত হল এই তরুণ তরুণীরা একটা শক্তি যা যে কোন সময় সংগঠিত হতে পারে। প্রতিক্রিয়াশীলদের এই যে শোষণের চরিত্র তারা বুঝতে পারলেন তা আরো গভীরভাবে বোঝা দরকার। তাহলে তারা ভবিষ্যত সাম্যবাদী সমাজ গড়ার লড়াইয়ে অংশ নিতে পারবেন। যে লড়াই অনেক অনেক কঠিন।।