সিরাজ সিকদার রচনাঃ পূর্ববাংলার সামাজিক বিকাশের বর্তমান পর্যায়ে প্রধান দ্বন্দ্ব নির্ণয়ের প্রশ্নে নয়া-সংশোধনবাদী হক-তোয়াহা, ট্রটস্কি-চেবাদী দেবেন-মতিন ও ষড়যন্ত্রকারী কাজী-জাহিদ বিশ্বাসঘাতক চক্রের সাথে পূর্ববাংলার মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওসেতুঙ চিন্তানুসারী সর্বহারা বিপ্লবীদের পার্থক্য

 

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার



পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯৭০ এর প্রথম দিক

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদীলেনিনবাদীমাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১৯ অক্টোবর ২০১২


 

পিডিএফ

সভাপতি মাওসেতুঙ বলেছেন, কোন প্রক্রিয়াতে যদি কতকগুলো দ্বন্দ্ব থাকে তবে তাদের মধ্যে অবশ্যই একটা প্রধান দ্বন্দ্ব থাকবে, যা নেতৃস্থানীয় নির্ণায়ক ভূমিকা গ্রহণ করবে। তাই, দুই বা দুয়ের বেশী দ্বন্দ্ব বিশিষ্ট কোন জটিল প্রক্রিয়ার পর্যালোচনা করতে গেলে আমাদের অবশ্যই তার প্রধান দ্বন্দ্বকে খুঁজে পাবার জন্য সর্বপ্রকারের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এই প্রধান দ্বন্দ্বকে আঁকড়ে ধরলে সব সমস্যাকেই সহজে মীমাংসা করা যায়। [১]

কাজেই প্রধান দ্বন্দ্বকে খুঁজে বের করা পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীদের পূর্ববাংলার বিপ্লবের বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক লাইন নির্ণয়ের প্রধান সমস্যা।

কিন্তু নয়া সংশোধনবাদী হক-তোয়াহা, ট্রটস্কী-চেবাদী দেবেন-মতিন ও কাজী-রণো ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতক চক্র ১৯৬৯ সালেও সর্বহারার রাজনৈতিক লাইন নির্ণয়ে প্রধান দ্বন্দ্ব খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করেছে এবং সকল দ্বন্দ্বকে এক ও অবিচ্ছেদ্য বলে মনে করেছে। [২]

ভারতীয় মার্কসবাদী-লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ভারতের বিশেষ সামাজিক অবস্থার বিশেষ বিশ্লেষণ করে সর্বহারার রাজনৈতিক লাইন নির্ণয় করার পর্যায়ে প্রধান দ্বন্দ্ব হিসাবে সামন্তবাদের সাথে কৃষক-জনতার দ্বন্দ্বকে উল্লেখ করেন এবং এই বিশেষ দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য কৃষি বিপ্লবের কর্মসূচী গ্রহণ করেন।

পূর্ববাংলার নয়া সংশোধনবাদী হক-তোয়াহা, ট্রটস্কী-চেবাদী দেবেন-মতিন, কাজী-রণো ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতক চক্র নিজেদেরকে “নক্সালপন্থী” হিসাবে জাহির করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা হিসাবে বিনা আত্ম-সমালোচনা সহকারে রাতারাতি তাদের বক্তব্য [“আমাদের দেশের প্রধান ও মৌলিক বিরোধ হইল একদিকে জনগণ আর অন্যদিকে এই তিনশক্তির (সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, একচেটিয়া পুঁজিবাদ-লেখক) অবিভাজ্য প্রকাশ”] পাল্টিয়ে ভারতীয় মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টির রাজনৈতিক লাইন অর্থাৎ সামন্তবাদের সাথে কৃষক জনতার দ্বন্দ্বকে প্রধান দ্বন্দ্ব এবং এর সমাধান হিসাবে কৃষি বিপ্লবের লাইন গ্রহণ করে। তারা সকলেই পূর্ববাংলার সর্বহারা নির্ণিত রাজনৈতিক লাইন অর্থাৎ পূর্ববাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর জাতীয় দ্বন্দ্ব এবং তা সমাধানের জন্য জাতীয় বিপ্লবের লাইন, অর্থাৎ, পূর্ববাংলাকে জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র গঠন করাকে প্রতিনিয়ত বিরোধিতা করছে।

কাজেই পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীদের নির্ণিত প্রধান দ্বন্দ্ব ও বিশ্বাসঘাতক নয়া-সংশোধনবাদী হক-তোয়াহা, ট্রটস্কী-চেবাদী দেবেন-মতিন ও ষড়যন্ত্রকারী কাজী-রণো নির্ণিত প্রধান দ্বন্দ্বের মাঝে কোনটি পূর্ববাংলার সমাজের ঐতিহাসিক বিকাশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা মার্কসবাদী তত্ত্বমালার সাহায্যে বিশ্লেষণ করা ও খুঁজে বের করা পূর্ববাংলার বিপ্লবের জন্য অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ।

 ঐতিহাসিকভাবে সমস্যাটির বিশেষ উত্থাপন

কোন একটি সামাজিক সমস্যা অধ্যয়ন করার সময় মার্কসবাদী তত্ত্ব স্পষ্টভাবে দাবী করে যে, প্রশ্নটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক সীমার মধ্যে অধ্যয়ন করতে হবে এবং যদি ইহা একটি বিশেষ দেশ সম্পর্কিত হয় (উদাহারণ স্বরূপ একটি নির্দিষ্ট দেশের জাতীয় কর্মসূচী) তবে যথাযথ মনোযোগ দিতে হবে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ নির্ণয় করতে যা একই ঐতিহাসিক যুগে দেশকে অন্যান্য দেশ থেকে পৃথক করে। [৬]

পূর্ববাংলা সামাজিক বিকাশে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ঐতিহাসিক সীমার মধ্যে অবস্থান করছে। সামাজিক বিকাশের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক স্তরে অভ্যন্তরস্থ সামন্তবাদ এবং বৈদেশিক বুর্জোয়াদের উৎখাত করে পুঁজিবাদ বিকাশের শর্তের সৃষ্টি হয়। লেনিন বলেছেন, সমগ্র বিশ্বব্যাপী সামন্তবাদের উপর পুঁজিবাদের চূড়ান্ত বিজয় জাতীয় আন্দোলনের সাথে জড়িত। সকল আন্দোলনের ভিত্তি হলোঃ পণ্য উৎপাদনের সম্পূর্ণ বিজয় অর্জনের জন্য বুর্জোয়ারা অবশ্যই দেশীয় বাজার দখল করবে, অবশ্যই তাদের থাকবে একই ভাষাভাষী লোক অধ্যুষিত, রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ একটি ভূখণ্ড এবং এর ভাষা বিকাশ এর সাহিত্যের সুসংবদ্ধতার পথে সকল বাধা অবশ্যই দূর করতে হবে। [৭]

এ কারণে সকল জাতীয় আন্দোলনের ঝোক হলো জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের দিকে, যার মাধ্যমে আধুনিক পুঁজিবাদের সকল প্রয়োজনসমূহ পূর্ণ হয়। [৮]

অতএব “…… জাতীয় রাষ্ট্র হচ্ছে পুঁজিবাদের নিয়ম ধর্ম। বহুজাতি বিশিষ্ট রাষ্ট্র হচ্ছে পশ্চাদপদ অথবা ব্যতিক্রম। জাতীয় সম্পর্কের ভূমিকা থেকে পুঁজিবাদ বিকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ শর্ত হলো জাতীয় রাষ্ট্র। [৯]

পূর্ববাংলার বর্তমান পুঁজিবাদী সামাজিক বিকাশের পথে বাধা হলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠী, যারা পূর্ববাংলার উপর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিকভাবে জাতীয় নিপীড়ন চালাচ্ছে।

এ কারনে পূর্ববাংলার বিপ্লবের বর্তমান স্তরে পুঁজিবাদ বিকাশের সকল অন্তরায় দূর করার জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রয়োজন।

লেনিন বলেছেন, “……. জাতীয় আন্দোলনের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক অবস্থা অনুসন্ধান করে আমরা অবশ্যম্ভাবীভাবেই এই উপসংহারে পৌঁছেছি যে, জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ বলতে বুঝায় বৈদেশিক জাতিসমূহের থেকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র গঠন। [১০]

তিনি আরও বলেছেন, জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার বলতে রাজনৈতিক অর্থে একমাত্র বুঝায় স্বাধীনতার অধিকার, অত্যাচারী জাতি থেকে রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অধিকার। [১১]

তিনি আরও বলেছেন, “…… আত্মনিয়ন্ত্রণ বলতে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ব্যতীত অন্য কিছু বুঝা ভুল হবে।” [১২]

কাজেই পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীরা পূর্ববাংলার সামাজিক বিকাশের বস্তুগত নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পূর্ববাংলার সমাজের বর্তমান বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক স্তরে, পুঁজিবাদ বিকাশের সকল অন্তরায় দূর করে তার বিকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ শর্ত সৃষ্টির জন্য, পূর্ববাংলার আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্থাৎ পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠী যারা পূর্ববাংলাকে পরাধীন করে তার উপর জাতীয় নিপীড়ন চালাচ্ছে, তাদের পাকিস্তান থেকে পূর্ববাংলাকে জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ববাংলার জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের লাইন গ্রহণ করেছে।

জাতীয় সংগ্রামের সাথে শ্রেণী সংগ্রামের সম্পর্ক

সভাপতি মাও আমাদের শিক্ষা দেন, চূড়ান্ত বিশ্লেষণে জাতীয় সংগ্রাম হচ্ছে শ্রেণী সংগ্রামেরই একটি সমস্যা। [১৩]

তিনি আরো শিক্ষা দেন, “একটি সংগ্রামে, যার চরিত্র হলো জাতীয়, শ্রেণী সংগ্রাম জাতীয় সংগ্রামের রূপ নেয়, যা দুটোর মধ্যে একত্ব বিধান করে।” [১৪]

কাজেই পূর্ববাংলার জনগণের পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠী বিরোধী জাতীয় সংগ্রাম চূড়ান্ত বিশ্লেষণে পূর্ববাংলার বিভিন্ন শ্রেণীর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের স্বার্থরক্ষাকারী পূর্ববাংলার উপর উপনিবেশিক শাসনকারী পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সহযোগী ও সমর্থক পূর্ববাংলার বিশ্বাসঘাতক বুর্জোয়া সামন্ত-জমিদার গোষ্ঠী বিরোধী শ্রেণী সংগ্রাম।

কিন্তু নয়া সংশোধনবাদী হক-তোয়াহা, ট্রটস্কী-চেবাদী, দেবেন-মতিন ও ষড়যন্ত্রকারী কাজী-রণোরা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারাকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে জাতীয় সংগ্রাম শ্রেণী সংগ্রাম নয় বলে ঘোষণা করছে এবং সামন্তবাদ বিরোধী শ্রেণী সংগ্রাম পরিচালনার মুখোশ এঁটে জাতীয় সংগ্রামকে বিরোধিতা করছে।

সভাপতি মাও আমাদের শিক্ষা দেন, “……শ্রেণী সংগ্রামকে বর্তমান জাতীয সংগ্রামের অধীন করা জন্য। [১৫] তিনি আরও বলেছেন, একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ক্ষণে বিভিন্ন শ্রেণীর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দাবীসমূহ একদিকে এমন হবে না যে (শ্রেণীসমূহের মাঝেলেখক) সহযোগিতাকে ধ্বংস করবে, অন্যদিকে জাতীয় সংগ্রামের দাবীসমূহ হবে সকল শ্রেণী সংগ্রাম পরিত্যাগের যাত্রাবিন্দু। [১৬]

পূর্ববাংলার সামাজিক বিকাশের বর্তমান বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক স্তরে জাতীয় বিপ্লব পরিচালনা করে পূর্ববাংলাকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ববাংলায় জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। কাজেই পূর্ববাংলার বিপ্লবের একটি চরিত্র হলো জাতীয়। এ কারণে পূর্ববাংলার বিভিন্ন শ্রেণীসমূহের সংগ্রাম জাতীয় সংগ্রামের রূপ নেবে, শ্রেণী সংগ্রাম জাতীয় সংগ্রামের অধীন হবে এবং জাতীয় সংগ্রামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। অর্থাৎ, পূর্ববাংলার সমাজের কোন শ্রেণীর দাবী দাওয়া এমন হবে না যা জাতীয় সংগ্রামের জন্য বিভিন্ন শ্রেণীর সহযোগিতা ধ্বংস করবে।

নয়া সংশোধনবাদী, ট্রটস্কী-চেবাদী ও ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতক চক্ররা স্বাধীন সার্বভৌম পূর্ববাংলা প্রতিষ্ঠার কথা বলেও পূর্ববাংলার সমাজের অভ্যন্তরস্থ সামন্তবাদের সাথে কৃষক জনতার দ্বন্দ্বকে প্রধান বলছে। এভাবে তারা স্বাধীন সার্বভৌম পূর্ববাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় বিচ্ছিন্নতা, জাতীয় স্বাধীনতা, জাতীয় মুক্তির কর্তব্য, অর্থাৎ জাতীয় বিপ্লবকে গৌণ করছে এবং অভ্যন্তরস্থ শ্রেণী সংগ্রাম প্রধান বলে শ্রেণীসমূহের সহযোগিতার পরিবর্তে শ্রেণীসমূহের সহযোগিতা ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

এভাবে জাতীয় সংগ্রামকে প্রাধান্য না দিয়ে, জাতীয় সংগ্রামের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে না ধরে, তা পরিত্যাগ করে পূর্ববাংলার ছয় দফা বুর্জোয়াদের নিকট তুলে ধরেছে। এভাবে জাতীয় স্বাধীনতাকামী লক্ষ লক্ষ জনতাকে আওয়ামী লীগের পিছনে ঠেলে দিয়েছে।

[এখানে লিন পিয়াও এর একটি উদ্ধৃতি ছিল তা বাদ দেওয়া হয়েছে-সর্বহারা পথ]

লেনিন বলেছেন, আমরা যদি আমাদের প্রচারে বিচ্ছিন্নতার অধিকারের শ্লোগান উত্থাপন তা অনুসরণ না করি, তবে আমরা শুধু বুর্জোয়াদেরই নয়, সামন্তগোষ্ঠী অত্যাচারী জাতীয় স্বৈরাচারীদের হাতের খেলনা হবো। [১৭]

এভাবে নয়া সংশোধনবাদী, ট্রটস্কী-চেবাদী ও ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতক দালালদের সামন্তবাদের সাথে কৃষক-জনতার প্রধান দ্বন্দ্বের ভিত্তিতে রচিত আকৃতিগতভাবে বাম কর্মসূচী চূড়ান্ত বিশ্লেষণে পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী, পূর্ববাংলায় তাদের সহযোগী ও সমর্থক বুর্জোয়া ও সামন্ত-জমিদার গোষ্ঠী, পূর্ববাংলার ছয়দফা বুর্জোয়া, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদকে সহায়তা করছে। এ কারণে এই কর্মসূচী সারবস্তুগতভাবে ডান। এটা বাম দিক থেকে ট্রটস্কীবাদী বিচ্যুতি।

জাতীয় সংগ্রাম মূলত কৃষকদের সংগ্রাম

পূর্ববাংলার জনগণের অধিকাংশই কৃষক। কাজেই তাদের অংশগ্রহণ ব্যতীত জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বিজয় সম্ভব নয়। পূর্ববাংলার সামাজিক বিকাশের বর্তমান পর্যায়ে কৃষকদের মৌলিক সমস্যা হলো পূর্ববাংলার ভূমি পূর্ববাংলার কৃষকদের হাতে থাকবে, না পাকিস্তানী উপনিবেশবাদী ও তাদের দালাল বিশ্বাসঘাতক জমিদার-জোতদারদের হাতে থাকবে।

কাজেই পূর্ববাংলার ভূমি থেকে পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দালাল জমিদার-জোতদারদের উৎখাত করে কৃষকদের ভূমির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের উপর থেকে উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দালাল জোতদার-জমিদার এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সকল প্রকার অত্যাচার, অবিচার দূর করার নিমিত্তে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে কৃষকরা অংশগ্রহণ করবে এবং বিপ্লবের সবচাইতে বৃহৎ মৌলিক পরিচালক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

এদেরকে জাগ্রত করে, এদের অংশগ্রহণসহ এবং এদের উপর নির্ভর করে জাতীয় মুক্তির জন্য গণযুদ্ধ পরিচালনা করা সম্পূর্ণ সম্ভব।

লেনিন বলেছেন, প্রথম যুগের (বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের যুগলেখক) বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো জাতীয় সংগ্রামের জাগরণ এবং জনসমষ্টির সবচেয়ে অধিক পশ্চাদপদ অংশ কৃষক জনতাকে সকল আন্দোলনে টেনে আনা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং বিশেষ করে জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। [১৮]

এ কারণে স্ট্যালিন যথার্থই বলেছেন, আমরা প্রায়ই বলে থাকি জাতীয় প্রশ্নের সারবস্তু হলো কৃষক প্রশ্ন। [১৯] তিনি একই সাথে বলেছেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, জাতীয় প্রশ্ন কৃষক প্রশ্নের আওতায় পড়ে, কৃষক প্রশ্ন জাতীয় প্রশ্নের মত সমান ব্যাপ্তি বিশিষ্ট, কৃষক প্রশ্ন জাতীয় প্রশ্ন অভিন্ন। কোন প্রকার প্রমাণের প্রয়োজনই হয় না যে, জাতীয় প্রশ্ন হচ্ছে ব্যাপ্তির দিক থেকে ব্যাপকতর এবং সারবস্তুর দিক থেকে অধিকতর সমৃদ্ধশালী।

অর্থাৎ, জাতীয় মুক্তির প্রশ্নে শুধু কৃষকদেরই নয়, পূর্ববাংলার শ্রমিক, ক্ষুদে বুর্জোয়া, বুর্জোয়া, বিভিন্ন উপজাতি, ধর্মীয় সম্প্রদায়, দেশপ্রেমিক গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এবং আলোকপ্রাপ্ত ভদ্রলোকদের ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব যা কৃষক প্রশ্নে সম্ভব নয়।

এ কারণে জাতীয় যুদ্ধে মাতৃভূমিকে উদ্ধার ও মুক্ত করার জন্য ব্যাপক জনতাকে অংশগ্রহণ করানো যায়, কিন্তু কৃষক প্রশ্ন হলো আভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ যা মূলতঃ কৃষকদের অংশগ্রহণেই হয়।

কাজেই জাতীয় প্রশ্ন অধিকতর সারবস্তু ও ব্যাপ্তি বিশিষ্ট।

ভারতীয় সমাজের বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সর্বহারাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী এবং পূর্ববাংলার সমাজের বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ববাংলার সর্বহারাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী

লেনিন বলেছেন, “কোন একটি বিশেষ সামাজিক সমস্যা অধ্যয়ন করার সময় মার্কসবাদী তত্ত্বমালা অবশ্যই দাবী করে যে, প্রশ্নটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক সীমার মধ্যে অধ্যযন করতে হবে এবং যদি ইহা একটি বিশেষ দেশ সম্পর্কিত হয় (উদাহারণ স্বরূপ, একটি নির্দিষ্ট দেশের জাতীয় কর্মসূচী) তবে যথাযথ মনোযোগ দিতে হবে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ নির্ণয় করতে যা একই ঐতিহাসিক যুগে দেশকে অন্যান্য দেশ থেকে পৃথক করে।” [২১]

বিশেষ অবস্থার বিশেষ বিশ্লেষণ, বিশেষ দ্বন্দ্বের বিশেষ সমাধান হচ্ছে মার্কসবাদের জীবন্ত আত্মা।

পূর্ববাংলার সর্বহারাদের পূর্ববাংলার সামাজিক বিকাশের বস্তুগত নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হলে নির্ণয় করতে হবে পূর্ববাংলার সমাজ কোন ঐতিহাসিক যুগে অবস্থান করছে, আর নির্ণয় করতে হবে এ একই ঐতিহাসিক যুগে পূর্ববাংলার সমাজের সাথে অন্যান্য দেশের, বিশেষ করে ভারতের সমাজের কী কী পার্থক্য রয়েছে।

[সম্প্রতি আব্দুল হক ১নং সংশোধনবাদী বিশ্বাসঘাতক একটি প্রবন্ধে (আধা-উপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী প্রসঙ্গে) স্ট্যালিনের এই উদ্ধৃতির প্রথম অংশ, অর্থাৎ, “জাতীয় প্রশ্ন মূলতঃ কৃষক প্রশ্ন” দ্বারা প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, পূর্ববাংলার সমাজে কৃষকদের সাথে সামন্তবাদের দ্বন্দ্ব প্রধান। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক চক্র উদ্ধৃতির পরের অংশটি চেপে গেছে। এমনকি উদ্ধৃতিটি স্ট্যালিনের কোন রচনা ও কত পাতা থেকে সংগ্রীহিত তাও এই বিশ্বাসঘাতক চক্র উল্লেখ করেনি যাতে কেউ উদ্ধৃতিটির পরের অংশ “কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, জাতীয় প্রশ্ন কৃষক প্রশ্নের আওতায় পড়ে, কৃষক প্রশ্ন জাতীয় প্রশ্নের মত সমান ব্যাপ্তি বিশিষ্ট, কৃষক প্রশ্ন ও জাতীয় প্রশ্ন অভিন্ন। কোন প্রকার প্রমাণের প্রয়োজনই হয় না যে, জাতীয় প্রশ্ন হচ্ছে ব্যাপ্তির দিক থেকে ব্যাপকতর এবং সারবস্তুর দিক দিয়ে অধিকতর সমৃদ্ধশালী।”-এই অংশ না দেওয়ার কারণ, যে-কেউ এই অংশ পাঠ করলে সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় প্রশ্নের প্রাধান্যকে স্বীকার করবেন এবং আব্দুল হক বিশ্বাসঘাতক চক্রের ভাওতাবাজি বুঝতে পারবেন]

পূর্ববাংলা ও ভারত সামাজিক বিকাশের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ঐতিহাসিক সীমার মধ্যে অবস্থান করছে।

বহুজাতি অধ্যুষিত ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে কার্যরত ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)’র কর্মসূচী ভারতের সকল জাতির বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক স্তর অতিক্রমণের কর্মসূচী।

যেহেতু সাম্রাজ্যবাদ বা সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ভারতকে আক্রমণ করেনি এবং সাম্রাজ্যবাদী, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদীরা ও ভারতের দালাল আমলাতান্ত্রিক পুঁজিপতিরা সামন্তবাদের উপর ভিত্তি করে ব্যাপক কৃষক জনতাকে শোষণ ও লুন্ঠন করছে, এ কারণে ভারতে সামন্তবাদের সঙ্গে কৃষক জনতার দ্বন্দ্ব প্রধান। যেহেতু বহুজাতিভিত্তিক রাষ্ট্র পুঁজিবাদ বিকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ শর্ত নয় এবং পশ্চাদপদ, এ কারণে অবশ্যম্ভাবীভাবেই সেখানে জাতীয় নিপীড়ন ও তার বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম (সেখানে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব অসমাপ্ত রয়ে গেছে) চলবে।

ভারতীয় সর্বহারারা সামাজিক বিকাশের এই বস্তুগত নিয়মকে স্বীকার করেই তাদের কর্মসূচীতে প্রতিটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্থাৎ, বিচ্ছিন্ন স্বাধীন জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার গ্রহণ করেছে। এ কারণেই তারা নাগা ও মিজো জাতির ও অন্যান্য নিপীড়িত জাতি-উপজাতির মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করেন।

অন্যদিকে পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীদের রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হচ্ছে পূর্ববাংলার জন্য, যা জাতিগতভাবে নিপীড়িত লাঞ্ছিত। এ কারণে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ, জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্ববাংলাকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ববাংলার জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন ও সামন্তবাদকে উৎখাতের মাধ্যমে পূর্ববাংলার বুর্জোয়া বিকাশের অন্তরায় দূর করা, পূর্ববাংলার বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক স্তরে সামাজিক বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য।

কাজেই জাতিগতভাবে নিপীড়িত পূর্ববাংলার বিশেষ অবস্থার বিশেষ বিশ্লেষণ না করে ভারতের বহুজাতিক বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রচিত রাজনৈতিক লাইন গ্রহণ করে তারা দ্বান্দ্বিক ঐতিহাসিক বস্তুবাদী সামাজিক বিশ্লেষণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়েছে।

হক-তোয়াহা নয়া সংশোধনবাদী, দেবেন-মতিন ট্রটস্কি-চেবাদী, কাজী-রণো ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতক চক্র পূর্ববাংলার সমাজের বিশেষ অবস্থার বিশেষ বিশ্লেষণ করে বিশেষ দ্বন্দ্বসমূহ ও তার বিশেষ সমাধান নির্ণয় না করে ভারতের বিশেষ সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ণিত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির কর্মসূচী থেকে সামন্তবাদের সাথে কৃষক-জনতার দ্বন্দ্বকে প্রধান দ্বন্দ্ব হিসেবে নিয়ে যে কর্মসূচী প্রণয়ন করেছে তা পূর্ববাংলার সমাজের বস্তুগত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন নয়। এ কারণে এ কর্মসূচী পূর্ববাংলার জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।

শ্রমিক শ্রেনীর নেতৃত্বে জাতীয় সংগ্রাম এবং বুর্জোয়া শ্রেণীর নেতৃত্বে জাতীয় সংগ্রাম

পূর্ববাংলার শ্রমিক শ্রেণী কেবলমাত্র বর্তমান জাতীয় বিপ্লবের নেতৃত্ব গ্রহণ করে, ইহা পরিচালনা ও সম্পন্ন করার মাধ্যমেই বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে।

বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্ব বিপ্লবের সমগ্র চেহারাটাই পাল্টে দেয়, শ্রেণীসমূহকে নতুনভাবে সন্নিবেশিত করে, কৃষক বিপ্লবের প্রচণ্ড জোযার সৃষ্টি করে, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লবে সম্পূর্ণতা আনে, গণতান্ত্রিক বিপ্লব থেকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে উত্তরণের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। [২৩]

কিন্তু বুর্জোয়াদের নেতৃত্বে এ বিপ্লব সম্পন্ন হতে পারে না, কেননা সাম্রাজ্যবাদী ও সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী যুগে বুর্জোয়ারা সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের সাথে শত-সহস্র বন্ধনে আবদ্ধ। সাম্রাজ্যবাদ তাদেরকে লুন্ঠন ও শোষণ করে নিজস্ব শংখলে আবদ্ধ করে। এ কারণে বুর্জোয়ারা ঐতিহাসিকভাবে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের সাথে আঁতাত করে এবং বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।

কাজেই পূর্ববাংলার স্বাধীন ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্ব ও বুর্জোয়াদের নেতৃত্বকে পৃথক করে না দেখে, জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম বুর্জোয়ারাও দাবী করে বলে উহা পরিত্যাজ্য, একথা বলে আবদুল হক-তোয়াহা নয়া সংশোধনবাদী, দেবেন-মতিন ট্রটস্কি-চেবাদী ও কাজী-রণো ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতক চক্র প্রমাণ করে যে, তারা সর্বহারা ও বুর্জোয়াদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার ক্ষমতা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে।

উপসংহার

উপরোক্ত মার্কসবাদী বিশ্লেষণ থেকে আমরা পাই, পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তির সমস্যা প্রধান সমস্যা অর্থাৎ, পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর সাথে পূর্ববাংলার জনগণের দ্বন্দ্ব প্রধান দ্বন্দ্ব।

নয়া সংশোধনবাদী হক-তোয়াহা, ট্রটস্কী-চেবাদী দেবেন-মতিন, ষড়যন্ত্রকারী কাজী-রণো বিশ্বাসঘাতক চক্র কৃষক জনতার সাথে সামন্তবাদের দ্বন্দ্বকে প্রধান (অল্প কিছুদিন যাবত) বলে জাতীয় প্রশ্নে মার্কসবাদী তত্ত্বমালার বিরোধিতা করেছে যা আকৃতিগতভাবে বাম কিন্তু সারবস্তুগতভাবে ডান, অর্থাৎ বাম দিক থেকে ট্রটস্কিবাদী তত্ত্ব এবং এভাবে পূর্ববাংলার জাতীয় বিপ্লবের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছে, পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবী ও জনগণকে জাতীয় সংগ্রাম থেকে দূরে শত্রুর পিছনে ঠেলে দিচ্ছে এবং বিশ্বস্ত পদলেহী কুকুর হিসেবে কাজ করছে পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠী, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, পূর্ববাংলার বুর্জোয়া, জমিদার ও প্রতিক্রিয়াশীল দৈত্য-দানবের।

♦ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারা জিন্দাবাদ!

♦ পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন-জিন্দাবাদ!

♦ পূর্ববাংলার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র-জিন্দাবাদ!

♦ সংশোধনবাদ, নয়া সংশোধনবাদ, ট্রটস্কী-চেবাদ ও অন্যান্য সকল বিকৃতি ও সংশোধন খতম কর! □

নোট

১। সভাপতি মাওসেতুঙ-এর উদ্ধৃতি-পৃঃ ২৫৫

২। ক) নয়া সংশোধনবাদী পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)-এর কর্মসূচী দ্রষ্টব্য।

খ) ট্রটস্কী-চেবাদী পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির রণনীতি ও কর্মসূচী (খসড়া) দ্রষ্টব্য।

গ) ১নং নয়া সংশোধনবাদী বিশ্বাসঘাতক চক্র আবদুল হক তার প্রকাশিত “পূর্ববাংলা আধা উপনিবেশিক-আধা সামন্তবাদী” পুস্তকে লিখেছে (৫৮ পাতা) “এই তিন শক্তি (সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, একচেটিয়া পুঁজিবাদ-লেখক) হইল এক ও অবিচ্ছিন্ন শক্তি। এই তিন শক্তির অবিচ্ছিন্ন সত্তাকে পৃথকভাবে বিচার করার অর্থই হল ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক ইহাদের স্বার্থের পক্ষে ওকালতি করা এবং ইহাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কাজ করা। আজ আমাদের দেশের প্রধান ও মৌলিক বিরোধ হইল একদিকে জনগণ আর অন্যদিকে এই তিন শক্তির অবিভাজ্য প্রকাশ।”

পক্ষান্তরে সভাপতি মাও আমাদের শিক্ষা দেন, “…একটি প্রক্রিয়ার সকল দ্বন্দ্বকে একজন অবশ্যই সমান গুরুত্ব দেবেন না, অবশ্যই তিনি পার্থক্য করবেন প্রধান গৌণ দ্বন্দ্বের মাঝে এবং বিশেষ গুরুত্ব দেবেন প্রধান দ্বন্দ্বকে আঁকড়ে ধরতে।

কেননা প্রধান দ্বন্দ্বকে আঁকড়ে ধরলেই সব সমস্যাকেই সহজে মীমাংসা করা যায়।

কাজেই পূর্ববাংলার সামাজিক বিকাশের জটিল প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দ্বন্দ্বসমূহ বিশ্লেষণ করে (প্রধান) দ্বন্দ্ব নির্ণয় করার সর্বহারার দর্শন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের একটি মূলনীতি। কিন্তু ১নং নয়া সংশোধনবাদী বিশ্বাসঘাতক চক্র আব্দুল হক সকল দ্বন্দ্বকে ‘এক ও অবিচ্ছিন্ন শক্তি’ বলে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে অস্বীকার করেছে এবং তাকে সংশোধন করেছে।

সভাপতি মাও এদের সম্পর্কে বলেছেন, হাজার হাজার পণ্ডিত কাজের লোক রয়েছেন যারা এটা বুঝেন না এবং ফলে কুয়াশায় ডুবে যান, সমস্যার মূলে যেতে পারেন না এবং স্বাভাবিকভাবেই দ্বন্দ্বগুলোর মীমাংসার পদ্ধতি পান না।

এভাবে বিশ্বাসঘাতক চক্র সচেতনভাবে মার্কসবাদকে বিকৃত ও সংশোধিত করেছে শ্রেণীশত্রুর দালালীর জন্য।

৩। Mao Four Essays on Philosophy—p.54

৪। Do, P-53

৫। Do, P-54

৬। V.I. Lenin: Critical Remarks On The National Question. The Right of Nations to Self Determination. P-74

৭। Do, P-66

৮। Do, P-67

৯। Do, P-73

১০। Do, P-67

১১। Do, P-175

১২। Do, P-68

১৩। সভাপতি মাওসেতুঙের উদ্ধৃতি: পৃ-১১

১৪। Selected Works of Mao Tse-tung Vol-II. P-215

১৫। Do, P-215

১৬। Do, P-215

১৭। V.I. Lenin. Critical Remarks on the National Question. The Right of Nations to Self Determination P-93

১৮। Do P-75

১৯। J.V Stalin: Problems of Leninism. P-141

২০। Do P-141

২১। V.I. Lenin: Critical Remarks on The National Question. Right of Nations to Self Determination. P-74

২২। Mao. Four Essays on Philosophy. P-44 ■