সিপিএমএলএম বাংলাদেশ দলিলঃ মানব পাচারঃ আধুনিক দাস প্রথা উন্মোচিত (২৩ জুন ২০১৫)

স্থানান্তর বনাম পাচার

প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের স্থানান্তর। তখন ছিল কেবল প্রাকৃতিক বাঁধা। এটা ছিল স্বাভাবিক। এখন রয়েছে বিবিধ রাষ্ট্রের বাঁধা। এখনো মানুষের প্রয়োজন থেকে স্থানান্তর

বঙ্গোপসাগরে নৌকাযোগে অভিবাসন যাত্রা

বঙ্গোপসাগরে নৌকাযোগে অভিবাসন যাত্রা বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের

হওয়া, কিন্তু তা শোষক শ্রেণীর ভয়ানক শোষণের ফলাফল হিসেবে মারাত্মক অভাব ও দারিদ্র থেকে, আর মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে বল প্রয়োগে সাগর জঙ্গল পেরিয়ে আর এক নতুন দাস ব্যবস্থায় ভর্তি হওয়া। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের অধিবাসী হয়েও সেখান থেকে বিতাড়িত হচ্ছেন। মিয়ানমারের রাষ্ট্র, সেনা শাসকরা আর সুকির মত তথাকথিত গণতন্ত্রীরা রোহিঙ্গাদেরকে সেদেশের নাগরিক বলে স্বীকার করেনা, বরং তাদের উপর নামিয়ে এনেছে ভয়ংকর জাতিগত নিপীড়ণ। তারা বাঙালী হলেও তাদেরকে বাংলাদেশে ঢুকতে দিতে চায়না বাঙালী বা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সাইনবোর্ডধারীরা। বাংলাদেশের বাঙালীরা ভারতের বাঙালী অধ্যুষিত রাজ্যে ঢুকতে গেলে ভারতীয় রাষ্ট্র বর্ডারে কত মানুষকে গুলি করে মেরেছে ও মারছে তার সংখ্যা কেউ জানেনা। আর এখন যে চিত্রটি দেখা যাচ্ছে তা

রোহিঙ্গা অভিবাসীরা আন্দামান সাগরে ভাসমান

রোহিঙ্গা অভিবাসীরা আন্দামান সাগরে ভাসমান

হল রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীরা বঙ্গোপসাগরে ও ভারত মহাসাগরে ভাসছে, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় আবিষ্কৃত হচ্ছে শত শত গণকবর যা পুর্ন হয়ে রয়েছে এই সব অনেক মানুষের দেহ দ্বারা, যাদের অনেকেই খাঁচায় আবদ্ধ হয়ে ছিল। এরা যেতে চায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া অথবা অন্য কোন দেশে। পাচারকারীরা অর্থের লোভে তাদের পাচার করে থাকে, পাচার করতে না পারলে দাস হিসেবে থাইল্যান্ড অথবা কোন দেশে বিক্রী করে দেয়। তাদের আটকে রেখে মুক্তি পন আদায় করে। না পেলে না খাইয়ে অথবা অন্য উপায়ে মেরে গণকবর দেয়।

এইসব মানবদের প্রতি হাসিনার ক্রোধ

প্রতিক্রিয়াশীল সরকারের প্রধানমন্ত্রী সাগরে ভাসা মানবদের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করেছে আর হুশিয়ারি দিয়েছে যে কেউ যদি পাচার হয় তাহলে তার বিচার করা হবে।

সবাই যেটা বুঝতে পেরেছেন যে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্পর্কে হাসিনার গাল গল্প

সমুদ্রে ভয়ংকর অভিবাসন যাত্রা

সমুদ্রে ভয়ংকর অভিবাসন যাত্রা

একমুহুর্তে যখন ফাঁকা প্রমাণ হয়ে গেল তখনই তার এ ক্রোধ প্রকাশ পেল। আরো যা সত্যি তা হল দাসপ্রথা উন্মোচিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার বিপুল বৃদ্ধি প্রচলিত সমাজে একটা বোঁঝা। আবার এই বিপুল জনসংখ্যাই প্রতিক্রিয়াশীলদের দাস সমাজের মজুদ। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিরাটাকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি ছোট আয়তনের দেশে এটা অনেক বেশি। জনসংখ্যা কম ছিল যখন তখনো মানুষের জীবন জীবিকার কোন নিশ্চয়তা ছিলনা, আর এখনতো ভুমিও বহু খণ্ডে ভাগ হয়ে গেছে। সুতরাং মানুষ বস্তুগতভাবেই বেরিয়ে পরবে কাজের সন্ধানে এটাই স্বাভাবিক। তাই এদেশের মানুষ পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র ও সরকারগুলো এতে বাঁধা দিচ্ছে। যেখানে যাচ্ছে সেখানে তাদের দাস হিসেবে খাটতে হচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকায় সাদারা যে কাজ করেনা তা তাদেরই করতে হচ্ছে দিনরাত দাঁড়িয়ে থেকে অল্প কিছু ডলারের জন্য। এজন্য ভুমধ্যসাগর পারি দিতেও দ্বিধা করছেনা অনেক বঙ্গ সন্তান। সেখানেও সমুদ্রে ডুবে তারা মারা যাচ্ছেন। সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে মধ্যযুগীয় দাস হিসেবে ১০/১৫ হাজার টাকায় মরুভুমিতে দিনরাত কাজ করতে হয় আর মহিলারা গৃহস্থালী কাজে মালিকের যৌনদাসীতে পরিণত হয়। বাংলাদেশ সরকার লক্ষ লক্ষ মানবকে পাচারের জন্য চুক্তি সই করেছে সৌদি সরকারের সাথে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায়ও অল্প মজুরিতে একই ভাবে দিন রাত তাদের খাটতে হয়।

এই যে পাচার হওয়া মানবগোষ্ঠী তারাই আবার পুঁজিবাদীদের জন্য পুঁজি এনে দিচ্ছে। এক কোটি বাংলাদেশী বিদেশ থেকে যে টাকা পাঠায় তা এই রাষ্ট্রের ডলার রিজার্ভ গড়ে তোলে। এটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক আয়ের উৎস।

এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ক্রমাগত গর্ব করে আসছে।

কিন্তু এই মানুষগুলোই যখন অসহায়, খাদ্যহীন, পানিহীন সমুদ্রে ভাসমান, তখন তাদের একবিন্দু খাদ্য তো দুরের কথা এমনকি সহানুভূতিও প্রকাশ করেনি প্রতিক্রিয়াশীলরা, বরং

ভাসমান অভুক্ত অভিবাসীরা

ভাসমান অভুক্ত অভিবাসীরা

তাদেরকে হুশিয়ারি দিয়েছে। কত মানুষ সাগরে ডুবে, অনাহারে মারা গেছেন অথবা পাচারকারীদের বন্দীশালায় মারা গেছেন তা কেউ জানেনা।

দুনিয়ার জনসংখ্যা সুষমভাবে বন্টিত হতে হবে

এটা সবাই জানেন যে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা অসমভাবে ছড়িয়ে আছে। পাচারের ঘটনাগুলো আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে আরো পরিষ্কারভাবে এই চিত্র ফুঁটে উঠে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ অল্প কিছু স্থানে গাদাগাদি করে রয়েছে, আর অন্যদিকে অনেক দেশে জনসংখ্যা সামান্য, কিন্তু তারা অধিকাংশ স্থান দখল করে রয়েছে। রাশিয়ার জনসংখ্যা বাংলাদেশের চেয়েও কম, কিন্তু সে একশ গুণ বেশি স্থান দখল করে আছে। বাঙ্গালী জাতি সংখ্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা গোটা ইউরোপের চেয়ে বেশী হতে যাচ্ছে অথচ তার থাকার পর্যাপ্ত স্থান নেই। এটা মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্বের অধিকাংশ জাতিরই একই অবস্থা, তাই তারা মেনে নেবেনও না। দুনিয়ার জনগণের সুষম বন্টনের জন্য তারা অবশ্যই সংগ্রাম করবেন, আর সে সংগ্রাম হবে বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের এক অংশ।

বাংলাদেশের অর্থনীতি আধুনিক দাস শ্রমের ভিত্তিতে সংগঠিত

বিশ্ব অর্থনীতিও তাই

বাংলাদেশের অর্থনীতি তিনটি বৃহৎ খাত রয়েছেঃ

১। কৃষি —– এখানে আদি ভুমিদাস প্রথা আধুনিক রূপে এখনো বিদ্যমান।

২। শিল্প — প্রধানত পোশাক শিল্প, আধা সামন্ততান্ত্রিক ভুমিদাসসুলভ দাস প্রথা আধুনিক রূপে এখনো বিদ্যমান।

৩। প্রবাসী শ্রমিক যারা বিদেশে আধুনিক দাস শ্রমের স্বীকার।

সুতরং বাংলাদেশের অর্থনীতি আধুনিক দাস শ্রমের ভিত্তিতে সংগঠিত। সেটা অংশত মজুরি দাসত্ব, অংশত ভুমি দাসত্ব আর অংশত পুর্ন দাসত্ব।

তৃতীয় বিশ্বের সব দেশেই একই চিত্র।

সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের মজুদ শ্রমকেই আবার দাস শ্রম হিসেবে ব্যবহার করছে।

সুতরাং, মানবদের কর্তব্য এর বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়া, লড়াই করা আর মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী