২৯ মে ২০১৫
সেই একই চিত্রঃ সেই বর্বরতা
সেই একই চিত্র। বর্বর। বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে, যদিও প্রাথমিক পর্যায়ের। ধর্মবাদী নয়া ফ্যাসিবাদী বর্বরতার চিত্র এখন বাংলাদেশেও। সেই একই সামন্ত সমাজ। এখানে আবার
আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়ারা শাসনও করছে। ৭১ সালে যেমন দেখা গিয়েছিল তেমনি এই বর্বরতা, তবে নতুন রূপে নতুন বেশে।
সাম্প্রতিক আমলাতান্ত্রিক পুঁজির ব্যাপক বিকাশ এদেশে যেমন নিরীশ্বরবাদী ব্লগারদের জন্ম দিয়েছে তেমনিভাবে অপরদিকে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ কর্তৃক সামন্ততন্ত্রের শক্তিশালীকরণ সংঘটিত হচ্ছে।
ধর্মবাদীরা নিরীশ্বরবাদী ব্লগারদের হত্যা করছে মাথায় আঘাত করে। বিজ্ঞানমনষ্ক মানব মস্তিষ্ককে তারা শত্রু মনে করে। এথেকেই বোঝা যায় এদের বর্বরতার মাত্রা। রাজীব
হায়দার, অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু আর সর্বশেষ অনন্ত বিজয় দাশ নিহত হয়েছেন ঐ নরপশুদের কর্তৃক।
উপরোক্ত ব্লগারগণ তাদের নিরীশ্বরবাদী মতের কারণে খুন হয়েছেন। ইসলাম ধর্মবাদী কতিপয় গোষ্ঠী যেমন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও আল কায়দা ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা দায় স্বীকারো করেছে। এছাড়া বাবুর উপর আক্রমণকারীদের কয়েকজনকে হিজড়া নামে
পরিচিত যৌন সংখ্যালঘুরা আটক করার পর
এঘটনায় উপরোক্ত ধর্মবাদীদের সংশ্লিষ্টতাই দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের উদাসীন ভাবের কারণে এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে অনেকেই
ধারণা করেন সরকারও কোন না কোন ভাবে এর সাথে জড়িত। অভিজিত রায়ের উপর যখন হত্যাকারীরা আক্রমণ করে তখন পুলিশের একটি দল খুব কাছেই ছিল।
ইসলাম ধর্মবাদের মত অনুসারে কেবল আল্লাহই সৃষ্টি করতে পারেন। শিল্পসংস্কৃতি, বিজ্ঞান বা যে কোন সৃষ্টিশীল কাজ করার অনুমতি মানুষের নেই। সুতরাং আপাতত নিরীশ্বরবাদীরা
আক্রমণের লক্ষ্য হলেও আসল লক্ষ্য শিল্প সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান নিজেই।
এ প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র জয় জানিয়ে দিয়েছে যে তারা নাস্তিক্যবাদের পক্ষে নয়। এতে বিপদে পড়েছে সেই সব বুদ্ধিজীবিরা যারা আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদ নিয়ে চলে।
নিহত ব্লগারদের মোটামুটি সবাই সরকারের উপর অসন্তুষ্ট ছিল। কেবল অভিজিত রায়ের
একটি বইয়ে কমিউনিস্ট বিরোধী কিছু কথা দেখা গেছে যা থেকে তার বুর্জোয়া প্রবণতা বোঝা যায়। বাকীরা মোটামুটি প্রগতিশীল প্রতীয়মান হয়।
বাংলাদেশে নয়া নিরীশ্বরবাদী ব্লগারদের উৎপত্তি
ও নয়া ধর্মবাদীদের উৎপত্তি
বাংলাদেশের আধা সামন্ততান্ত্রিক আধা উপনিবেশিক সমাজে যে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ জন্ম নিয়েছে তাকে একদিকে যেমন সাম্রাজ্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী অধীনতায় পুঁজিবাদ জন্ম দিতে হচ্ছে অন্যদিকে সামন্ততন্ত্রকে নতুনভাবে আরো শক্তিশালী করতে হচ্ছে। তাদের সাম্প্রতিক পুঁজিবাদের বিকাশ আধুনিক শ্রমিক শ্রেণীর পাশাপাশি আলোকপ্রাপ্ত মধ্যবিত্ত তরুনদের জন্ম দিচ্ছে—যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে। এরাই হচ্ছে এই ব্লগারগণ। আগেকার যুগের অর্ধশিক্ষিত কেরানী সম্প্রদায় থেকে এরা ভিন্ন। অপরদিকে নয়া সামন্ততন্ত্রের শক্তিশালীকরণের কারণে নয়া ধর্মবাদীদের উদ্ভব হয়েছে। এরাও না কেরানী না অর্ধশিক্ষিত। পুরোনো ধর্মবাদী থেকে উন্নত এরা ফ্যাসিবাদী।
ধর্মবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা কারা?
ধর্মবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা এই প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র, সমাজ ব্যবস্থা।
তালিবান, আল কায়দা, আই এসের মত শক্তিগুলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও দেশী প্রতিক্রিয়াশীলদের মিলিত ষড়যন্ত্রে উদ্ভব ঘটেছে। বাংলাদেশে ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। সমাজ জীবনে ধর্মের আধিপত্যকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এক ধর্মবাদী দানব তৈরি হচ্ছে।
নিরীশ্বরবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিতে পারে কারা?
নিরীশ্বরবাদীরা দুই ধরণেরঃ একটি ধারা প্রচলিত সমাজের পুঁজিবাদী ধারার প্রতি আস্থাশীল আর অন্য ধারাটি প্রগিতিশীল, তারা প্রচলিত সমাজের বিরোধী। ফলে সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের প্রতি তাদের আস্থা। ব্যাপক অধিকাংশ নিরীশ্বরবাদী এই শেষোক্ত ধারার।
যারা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের উপর আস্থা রেখেছেন, তারা বিশ্বাসঘাতকতা প্রাপ্ত হয়েছেন। কারণ কী? কারণ হচ্ছে তারা যে বিজ্ঞানের প্রতি আস্থাশীল, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ সেই বিজ্ঞানের বিরোধী, কারণ বিজ্ঞান সমাজ প্রগতিকেই সেবা করে।
এটা সকল নিরীশ্বরবাদী ব্লগারদের আরো ভালভাবে বুঝতে হবে। তারা যদি সমাজের বিপ্লবী রূপান্তর না বোঝেন তাহলে যথার্থ বিজ্ঞানও তারা বুঝবেন না, এটাও বুঝবেন না কী ভয়ানক শ্রেণীসংগ্রাম সমাজে বিদ্যমান। ব্যাপক জনগনের স্বার্থকে তারা যদি সেবা করেন, জনগণ অবশ্যই তাদের পাশে থাকবেন। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হাতের কাছে যা আছে তাই নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত থাকুন।