মে দিবস ২০১৫: সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও আধা সামন্তবাদের দানবদের উপলব্ধি ও লড়াই করুন!

১ মে ২০১৫

রেঁনেসাঁ চিত্রকর রাফায়েলের বিখ্যাত চিত্রকলা “এথেন্সীয় স্কুল”-এ আমরা দেখি প্লেটো ও এরিস্টটল হচ্ছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রঃ প্লেটো তার তর্জনী স্বর্গের দিকে নির্দেশ করেন বস্তুর বাইরে দেখার জন্য আহবান জানিয়ে, যেখানে এরিষ্টটল তার হাত দ্বারা পৃথিবীর দিকে নির্দেশ করেন।

পাঁচশ বছর পর আমরা দেখি ভাববাদের আর বস্তুবাদের মধ্যে সেই একই দ্বন্দ্ব। ধর্মীয় বর্বরদের কুখ্যাত ভিডিও চিত্রে দেখা যায় তারা ঠান্ডা মাথায় যে খুনগুলো করেছে তাকে ন্যায়সঙ্গত করার জন্য তারা স্বর্গের দিকে নির্দেশ করছে যা গণতান্ত্রিক মনে ভয়ানক আঘাত হানছে।

মধ্যযুগের ভূত আর দূর অতীতের দাসত্ব ও হত্যাসমেত তার কুৎসিত চেহারা প্রদর্শন করে। এটা প্রগতির প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ আর চ্যালেঞ্জ সংস্কৃতি, যুক্তি ও বিজ্ঞানের দিকে অগ্রসরমান মানবতার আদর্শের প্রতি। এটা সভ্যতার আত্মমর্যাদার বিরুদ্ধে এক আক্রমণ।

আর এটা দুর্ঘটনাবশত ঘটেনি, অথবা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির “ষড়যন্ত্র”-এর কারণেও নয়। এর বর্বতার শেকর রয়েছে দুনিয়ার অধিকাংশ দেশের আধা-সামন্তবাদী আধা-উপনিবেশিক চরিত্র ভিত্তিতে।

কেবল অল্প কিছু দেশেই পুঁজিবাদ স্বাভাবিকভাবে বিকাশে সক্ষম হয়েছে, এর উদারনৈতিক ধরণ থেকে একচেটিয়ার আধিপত্যের দিকে সরে এসে সাম্রাজ্যবাদ হয়ে, আঁকাবাঁকা পথের এক জটিল প্রক্রিয়ায়।

অন্য দেশগুলিতে, যেখানে বিশ্বের অধিকাংশ জনগণ বাস করেন, ধর্মগুলি ও জাতীয়তাবাদ এক শক্তিশালী অযৌক্তিক হাতিয়ার হিসেবে জনগণকে প্রতিক্রিয়াশীল পথে সমাবেশিত করে, কারণ সমাজটা এক আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়ার দ্বারা পরিচালিত হয়, যে সাম্রাজ্যবাদের অধীনতায় জন্ম নিয়েছে আর বিভিন্ন সামন্ত শক্তির সাথে মৈত্রীবদ্ধ যারা তাদের কাঠামো বজায় রাখে।

একশত বছর আগে, আর্মেনিয় গণহত্যা সংগঠিত হয়। আর এখনো তা তুর্কী রাষ্ট্র স্বীকার করেনি যদিও তুরস্কের নতুন সরকার ইসলামবাদী। এর কারণ হল দেশে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে, কিন্তু এখনো সেই সামন্ত শক্তিগুলোর সাথে মৈত্রীর উপর নির্ভরশীল যারা ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর সূচনায় তৈরী হয়েছিল।

আমরা ভারতে একই প্রক্রিয়া দেখতে পাই, সেখানে হিন্দুত্ববাদী সর্বাধিক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে; বিপরীতে দেশে শহরায়ন ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের বিকাশ আধা-সামন্তবাদকে বিলোপ করেনা।

আধা সামন্তবাদ কেবল তার রূপ পরিবর্তন করে। এটা অবশ্য ব্যখ্যা করে কেন ইসলামবাদ তিউনিশিয়া, ইরাক, সিরিয়া ও মিশরের মত দেশগুলিতে এত শক্তিশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছেঃ পূর্বতন শাসকগোষ্ঠীর ধর্মনিরপেক্ষ ধরণ নির্বিশেষে এর ভিত্তি হচ্ছে আধা-সামন্তবাদ আধা-উপনিবেশবাদ।

সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যকার সংগ্রাম এখানে এক প্রধান ভূমিকা পালন করে, একেক সাম্রাজ্যবাদ তার নিজ নিজ স্বার্থের সেবক আমলাতান্ত্রিক উপদলকে অন্যগুলির বিরুদ্ধে সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে।

১৯৬০ দশক থেকে ১৯৮০ দশক পর্যন্ত বিশ্বের জনগণকে সংগ্রাম করতে হয়েছে দুই পরাশক্তি মার্কিন ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক দুনিয়াকে ভাগ বাটোয়ার করে নেয়ার বিরুদ্ধে। বর্তমানে তাদেরকে একইভাবে বুঝতে হবে সাম্রাজ্যবাদীরা যে রক্তাক্ত খেলা খেলছে তাকে, এমনকি তারা কোন কোন দেশকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে যেমন ইউক্রেন।

পুঁজিবাদের সাধারণ সংকট কেবল অধিক আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী সংগ্রাম আনতে পারে, আনতে পারে অধিক সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। সাম্রাজ্যবাদীদের নিজেদের দেশেই আজকাল স্বার্থপরতা ও ব্যক্তিতাবাদ ব্যবহার করা হয় জাতীয়তাবাদকে এগিয়ে নিতে আর “ভুমণ্ডলীকরণ” এর প্রেক্ষিতে দেশকে একটা আগ্রাসী দুর্গে পরিণত করার এর আকাঙ্খাকে এগিয়ে নিতে। হতাশা ড্রাগ ও মাদকে পলায়নে, গণহত্যার প্রবণতায় আর জাতীয়তাবাদ ও “সমাজতন্ত্র”-এর একীভূতকরণে প্রলুব্ধ করে।

একইসাথে অনেকদিক থেকে আগ্রাসন পৃথিবীকে বৈশ্বিক মাত্রায় বিকৃত করেঃ জলবায়ু পরিবর্তন থেকে প্রচণ্ড বনধ্বংস, বিপুল শহরায়ন থেকে মহাসাগরের এসিডিকরণ।

বিশ্বজনগণ এ ব্যাপারে জানেনে, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ হবার ও লাল তারার পথ বেছে নেওয়ার তাঁরা পথ খুঁজে পাচ্ছেননা। কমিউনিস্ট রণনৈতিক প্রস্তাবনার অভাব বিশ্বজনগণকে দিশাহীন করে, যারা প্রকৃত গণতন্ত্র চান কিন্তু জানেননা কিভাবে তা অর্জন করতে হবে।

এই প্রেক্ষিতে, বিশ্ববিপ্লবের পশ্চাদপসারণের অবস্থান পুঁজিবাদকে অনুমোদন দেয় নিজেকে আধুনিকীকরণ করতে, বিশেষত নির্ভরশীল দেশগুলিতে, যেখানে সামন্তবাদ তার ধরণ পরিবর্তন করে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের বিকাশের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপুর্ণ হতে। একইভাবে আমরা দেখি মার্কিনের মত পরাশক্তির সাথে দ্বিতীয় বর্গের সাম্রাজ্যবাদী দেশ যেমন ফ্রান্স, জার্মানী ও ইংল্যান্ডের পার্থক্য, আর নির্ভরশীল দেশগুলির মধ্যে সেইমত পার্থক্য আমরা পাই।

যেখানে ইরাকের মত দেশগুলি সামন্তবাদী খুন খারাবীর আতঙ্কে নিপতিত, ব্রাজিলের মত দেশে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের সেবাকারী আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের মাধ্যমে কৃষি-শিল্প বিকাশ ঘটছে।

কাতার ও সৌদি আরবের মত আধা-সামন্তবাদী আধা-উপনিবেশবাদী দেশ খোলামেলা আগ্রাসী নীতি পালন করছে, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলিকে সহায়তা করছে তাদের সমর্থক উপদল তৈরি করতে। আরব বসন্ত কোন “বিপ্লব” ছিলনা, বরং তা ছিল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়াদের মধ্যে এক যুদ্ধ। এটা আকরাম ইয়ারী ও সিরাজ সিকদারের এই থিসিসের সঠিকতা প্রমাণ করে যা দেখিয়েছিল যে একটা নিপীড়িত দেশ ঔপনিবেশিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে ও আধিপত্যকারী চরিত্র অর্জন করতে পারে।

সবকিছুই দ্বান্দ্বিকতার নিয়ম অনুসরণ করে, আর এই বিবর্তনের দ্বারা প্রমাণিত হয় উৎপাদনশক্তিসমূহের বিকাশ, এমনভাবে যাতে এর অর্থ হয় আরো অধিক শোষণ, আরো নিপীড়ণ, আরো সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, আর এই যে এটা হচ্ছে আমাদের গ্রহের প্রকৃতির প্রতি হুমকি, আর হুমকি আনন্দ ও সংস্কৃতিপুর্ণ বিশ্বজনগণের সুখী জীবনের প্রতি।

তথাপি এটা বিশ্বাস করা ভুল হবে যে এই নেতিবাচক দিক আমাদের পৃথিবীর প্রধান প্রবণতা। প্রতিটি দেশে এমন লোকেরা আছেন যারা পরিস্থিতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে উপলব্ধির জন্য কাজ করছেন। তারা বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেন তা সে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যাই হোক না কেন।

যখন তারা নিজ দেশের শ্রেণীসংগ্রামের ফল হিসেবে প্রকৃত বিপ্লবী, যখন তারা উপলব্ধি করেন যে তাদেরকে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের ঐতিহ্যে থাকতে হবে, তখন তারা এমন অবদান রাখেন যা তাদের অনুমতি দেয় এক পথনির্দেশক চিন্তাধারা সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যেতে।

প্রতিটি দেশে পথনির্দেশক চিন্তাধারা প্রশ্নটি সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন। যেমন পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি “গনসালো চিন্তাধারা সম্পর্কে” দলিলে ব্যাখ্যা করেনঃ

“বিপ্লব এক চিন্তাধারার জন্ম দেয় যা তাকে পথ প্রদর্শন করে, যা হচ্ছে প্রতিটি বিপ্লবের মূর্ত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সর্বহারার মতাদর্শের সার্বজনীন সত্যের প্রয়োগের ফল; এক পথনির্দেশক চিন্তাধারা যা বিজয়ে পৌঁছাতে আর রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে অপরিহার্য আর অধিকন্তু বিপ্লবকে অব্যাহত রাখতে আর সদা সর্বদা একমাত্র মহান লক্ষ্য সাম্যবাদের দিকে তার পথ পরিক্রমা বজায় রাখতে।”

পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির নেতা গনসালো তাঁর বিখ্যাত সাক্ষাতকারে আমাদের বলেনঃ

“এঙ্গেলসের মতে, আবশ্যিকতা নেতাদের সৃষ্টি করে, আর শীর্ষ নেতাকেও, কিন্তু সেটা কে হবে তা সম্ভাব্যতা দ্বারা নির্ণীত হয়, একটি নির্দিষ্ট স্থান ও কালে যেসব মূর্ত শর্ত একযোগে আসে তার দ্বারা। এভাবে, আমাদের ক্ষেত্রেও, একজন মহান নেতৃত্ব [হ্যাপাতুরা] সৃষ্টি হয়েছে। এটা পার্টির ১৯৭৯ সালের বর্ধিত জাতীয় সম্মেলনে প্রথম স্বীকৃত হয়।

কিন্তু এ প্রশ্নের সাথে আরেকটি মৌলিক প্রশ্ন জড়িত যাকে এড়িয়ে যাওয়া যায়না বরং গুরুত্ব দেয়া দরকারঃ এমন কোন মহান নেতৃত্ব [হ্যাপাতুরা] নেই যা কোন চিন্তাধারার ভিত্তিতে দাঁড়ায়না তার বিকাশের স্তর যাই হোক না কেন।

এর কারণ হচ্ছে একজন ব্যক্তি পার্টি ও বিপ্লবের নেতা হিসেবে কথা বলার জন্য এসেছেন, যেমনটা সিদ্ধান্ত বলে যে আবশ্যিকতা ও ঐতিহাসিক সম্ভাব্যতার সাথে সে সম্পর্কিত, আর অনিবার্যত গনসালো চিন্তাধারার সাথে।

আমাদের কেউই জানেনা বিপ্লব ও পার্টি আমাদের কী করতে আহবান করবে, আর যখন একটা মূর্ত করণীয় সামনে আসে, দায়িত্ব পালন করাটাই একমাত্র কাজ।”

পহেলা মে হচ্ছে এক ঐতিহাসিক দিনঃ শ্রমিক শ্রেণীর এক গৌরব, লাল পতাকার এক সম্মান। এই যে পৃথিবী দুর্দশা আর রূপান্তরে পুর্ণ, সেখানে আমাদের যুগের প্রধান দিক হচ্ছে পথনির্দেশক চিন্তাধারাসমূহের সৃষ্টি, যা প্রত্যেক দেশের বিপ্লবীরা এগিয়ে নেন নিজ দেশে বিপ্লবী পথ তৈরি করতে।

এমন একটা বিপ্লবী পথ গণযুদ্ধের মধ্যে গড়ে উঠে যা হচ্ছে এক সশস্ত্র গণ সমাবেশিতকরণ, পুরোনো রাষ্ট্রকে ভাঙতে আর নয়া একটা গড়ে তুলতে, আধা-সামন্তবাদী আধা-উপনিবেশবাদী দেশগুলিতে নয়াগণতন্ত্রের বিপ্লবী কর্মসূচি প্রয়োগ করে আর পুঁজিবাদী দেশগুলিতে সমাজতন্ত্রের।

এখানে তত্ত্বের গুরুত্বের প্রতি জোর দেয়া প্রয়োজন সকল কমিউনিস্ট ধারণাকে রক্ষায়, সাম্রাজ্যবাদী মূল্যবোধের সাথে “আপোষ” করার সকল প্রবণতার বিরুদ্ধে, উত্তর আধুনিক ধ্যান-ধারণার সাথে একীভূত হওয়ার বিরুদ্ধে, অতি বাম মতাবস্থানের বিরুদ্ধে, কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের শিক্ষার বিশেষত ফ্যাসিবিরোধী গণফ্রণ্টের শিক্ষার নেতিকরণের বিরুদ্ধে।

পুঁজিবাদের ক্ষয়ের যুগ হচ্ছে এক যন্ত্রনাদায়ক যুগ; এক শক্তিশালী সদর দপ্তরই কেবল মোকাবেলা করতে পারে সুবিধাবাদ, সংস্কারবাদ, ফ্যাসিবাদ ও প্রতিবিপ্লবের বহুরূপী চেহারাকে। আমরা স্মরণ করতে পারি নেপালের বীরত্বব্যাঞ্জক গণযুদ্ধে কী ঘটেছিল, যার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল।

নেপালী জনগণের জন্য ফল হয়েছে ভয়ংকর; তাদের লক্ষ্য আদর্শের পিঠে ছুরিকাঘাত করেছিল সংশোধনবাদ। কাঠমাণ্ডুর কাছে অতি সম্প্রতি যে ভুমিকম্প হল তা অনেক মৃত্যু বয়ে এনেছে, তা ভিন্ন এক সামাজিক বিকাশের মাধ্যমে এড়ানো যেত যা অধিক বলিষ্ঠ বিনির্মাণ করত। এখানে আমাদেরকে স্মরণে রাখতে হবে কাতারে নেপালী শ্রমিকদের অসহনীয় ও নাটকীয় পরিস্থিতিকেও।

এটা লক্ষ্যনীয় যে আজকাল মধ্যপন্থীরা নেপালে সংশোধনবাদকে ঢেকে রাখতে চেষ্টা চালিয়েছে তার নেতা প্রচণ্ড ও তার “শান্তি আলোচনা”কে রক্ষা করে, সমালোচনাকে এড়াতে যা করা দরকার সবই করে। ২০০৬ শুরু হতে না হতেই, প্রকৃত মাওবাদীরা বলে যে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)র লাইনে বড় সমস্যা রয়েছে, যেখানে মধ্যপন্থীরা “গণযুদ্ধ”কে শুভেচ্ছা তখনো জানাতে থাকে যখন অনেক বছর আগেই আর কোন গণযুদ্ধ নেই আর অনেক দিন আগেই এটা পরিষ্কার হয়েছে যে সংশোধনবাদীরা সেখানে বিজয়ী হয়েছে।

নেপাল সম্পর্কে মধ্যপন্থীদের অবস্থান প্রমাণ করে তাদের কর্তৃক আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ সংক্রান্ত তত্ত্বের নেতিকরণ; এটা বিজ্ঞান হিসেবে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের গুরুত্বকে দেখায়।

আমরা নিচের বিষয়গুলির উপর জোর দিতে চাইঃ

১। দ্বন্দ্ব হচ্ছে অনন্ত বস্তুর অব্যাহত রূপান্তরের মৌলিক নিয়ম। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ হচ্ছে এই নিয়ম উপলব্ধির বিজ্ঞান আর কমিউনিস্ট আন্দোলনের মতাদর্শিক সারবস্তু।

২। বিপ্লবী তত্ত্ব ছাড়া বিপ্লবী আন্দোলন হতে পারেনা। স্বতস্ফূর্ততা বিপ্লবে চালিত করেনা; এক মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির প্রয়োজন যে দৃঢ়ভাবে প্রয়োগ করে স্বাধীনতা, স্বায়ত্বশাসন ও আত্মনির্ভরতা।

৩। এযাবতকালের বিদ্যমান সমাজের ইতিহাস হচ্ছে শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস। জনগণ ইতিহাস সৃষ্টি করে আর পার্টি তাদের পরিচালনা করে পথনির্দেশক চিন্তাধারার নির্দেশনার মাধ্যমে—যা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট দেশের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রয়োগ।

৪। পুঁজিবাদ তার উদারনৈতিক ধরণ থেকে সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হয়েছে একচেটিয়ার কর্তৃত্ব দ্বারা বিশেষায়িত হয়ে, যা ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের দিকে ধাবমান। ফ্যাসিবিরোধী যুক্ত গণফ্রন্ট—যার কথা কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক কর্তৃক বলা হয়েছিল, তা সর্বহারা একনায়কত্বের আকারে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক ভিত্তির শর্ত গঠন করে।

৫। পুঁজিবাদ যা নিপীড়িত দেশে সাম্রাজ্যবাদ বিভিন্ন মাত্রার সামন্তবাদের সাথে গড়ে তোলে তা হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক। শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর ভিত্তিতে যৌথ একনায়কত্ব হিসেবে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব আধা-সামন্তবাদী উপাদানগুলিকে ধ্বংস করে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক ভিত্তি হিসেবে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ উচ্ছেদের পথ উন্মোচন করে।

৬। বিপ্লবের তিন হাতিয়ার হচ্ছে পার্টি, বাহিনী ও যুক্তফ্রন্ট—এগুলো উপলব্ধ হয় আন্তর্জাতিক সর্বহারার সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য সামরিক তত্ত্ব হিসেবে গণযুদ্ধের কাঠামোতে। গণযুদ্ধের অপরাজেয়তা অনিবার্য, কারণ তা পুরোনোর বিরুদ্ধে নতুনকে প্রতিনিধিত্ব করে এক বৈর দ্বন্দ্বের বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত হিসেবে।

৭। কমিউনিস্ট মতাদর্শ সকল বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রাধান্য অর্জন করে শিল্পকলা ও সাহিত্যে সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদ আর বিজ্ঞানে মার্কসবাদী দর্শন তথা দ্বন্দ্বের নিয়ম। ক্ষমতা দখল করা মানে সমাজের সকল স্তরে ক্ষমতা দখল করা, যেমনটা মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পাণ্ডিত্যপুর্ণ উদাহারণ দেখায়।

মাওবাদ বিদ্রোহ সমর্থনের কোন “হাতিয়ার” নয়, বরং তা হচ্ছে পরিস্থিতির বস্তুবাদী উপলব্ধি আর তাই তা হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণী কর্তৃক কমিউনিস্ট আদর্শের বিপ্লবী প্রয়োগঃ বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অংশ হিসেবে প্রতিটি দেশে গণযুদ্ধের মারফত শ্রেণীসংগ্রাম, ক্ষমতা জয় করা ও রক্ষা করা!

পহেলা মে ২০১৫ তে, আমরা আবারো প্রকৃত কমিউনিস্টদের মৌলিক নীতির আহবান জানাইঃ

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ জিন্দাবাদ! দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সর্বাধিক বিকশিত রূপ হিসেবে মাওবাদ জিন্দাবাদ!

ঊর্ধ্বে তুলে ধরুন, রক্ষা করুন, প্রয়োগ করুন, প্রধানত প্রয়োগ করুন মাওবাদ!

প্রত্যেক দেশে গণযুদ্ধের সূচনা ও বিকাশের জন্য পথনির্দেশক চিন্তাধারার সৃষ্টি ও প্রয়োগের জন্য সংগ্রাম করুন!

সাম্যবাদ এর পূর্বাবধি গণযুদ্ধ!

আফগানিস্তানের ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন (মার্কসবাদ-লেনিনবাদী-মাওবাদী, প্রধানত মাওবাদী)

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী

বেলজিয়ামের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী কেন্দ্র

ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী)