সিরাজ সিকদার রচনাঃ পূর্ববাংলার নিপীড়িত জনগণের উদ্দেশ্যে সিরাজ সিকদার,পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট, পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি ও পূর্ববাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনীর জরুরী আহবান [ডিসেম্বর ১৯৭৪]

সিরাজ সিকদার রচনা

পূর্ববাংলার নিপীড়িত জনগণের উদ্দেশ্যে
সিরাজ সিকদার,
পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট, পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি ও
পূর্ববাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনীর
জরুরী আহবান

[ডিসেম্বর ১৯৭৪]

[১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭৪ সারা দেশে হরতাল আহবান সম্বলিত লিফলেট]

sikder

বাঙালী জাতি এবং পূর্ববাংলার জনগণের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন!
আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভুদের উৎখাত করে দুর্ভিক্ষ-পীড়িত জনগণকে বাঁচান! ১৫ ও ১৬ই ডিসেম্বর অর্ধদিবস হরতাল পালন করুন!
খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, চাকুরী, বাসস্থানের ব্যবস্থা করুন!
শান্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র কায়েম করুন!

আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভু ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের নিষ্ঠুর শোষণ ও লুন্ঠনের ফলে পূর্ববাংলায় আজ ইতিহাসের চরমতম সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
সমগ্র দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। শহরে গ্রামে রাজপথে টারমিনালে স্টেশনে ক্ষুধার্ত নগ্ন মানুষের ভীড়। একমুঠো ভাতের জন্য, একটি রুটির জন তাদের হাহাকারে পূর্ববাংলার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে। প্রতিদিন শত শত বাংলার সন্তান না খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। লক্ষ লক্ষ জনগণ মৃত্যুর প্রহর গুণছে। খাদ্যাভাব অপুষ্টির কারণে লক্ষ লক্ষ শিশু অন্ধ ও পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। সমগ্র জাতির স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ছে, কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাঙালী জাতি ও জনগণের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
পক্ষান্তরে আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকরা কালোবাজারী, রাহাজানি, মজুদদারী, লাইসেন্স-পারমিটের দৌলতে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এ নিষ্ঠুর বিশ্বাসঘাতকরা এখনও ভারতে খাদ্য পাচার করছে, কালোবাজারী, মজুদদারী, চোরাকারবারী করে প্রতিদিনই খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। এভাবে তারা কালো টাকা ও সম্পদের পাহাড় গড়ছে।
জাতি ও জনগণের প্রতি এদের বিন্দুমাত্র মমতা নেই, এদের বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম নেই।
এ বিশ্বাসঘাতকরা বিশ টাকা মণ দরে চাল, দশ টাকা মণ দরে গম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আর আজ তিনশত টাকারও অধিক দরে চাল, দুইশত টাকারও অধিক দরে গম বিক্রি হচ্ছে।
আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকরা এ সংকটের জন্য দোষ দিচ্ছে বন্যাকে, আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধিকে, ইয়াহিয়ার হামলাকে। বন্যা, আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধি এর আগেও ঘটেছে, তদুপরি পাকিস্তানের শোষণ ও লুন্ঠন থাকা সত্ত্বেও এ অবস্থা কখনো হয়নি।
আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভু ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের নিষ্ঠুরতম শোষণ ও লুন্ঠনই তার জন্য দায়ী।
দেশের এ চরমতম সংকটজনক অবস্থা পূর্ববাংলার প্রতিটি জনগণের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভুদের বিরুদ্ধে চরমতম ঘৃণা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
পূর্ববাংলার জনগণের উপর ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও তার তাবেদার আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকদের এ নিষ্ঠুর শোষণ, লুন্ঠন ও নির্যাতনের পাহাড় চেপে বসে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর কালো দিবস থেকে। ঐদিন ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী বাহিনী আওয়ামী মীরজাফরদের সহায়তায় ঢাকাসহ পূর্ববাংলা দখল করে নেয়।
ঐদিন থেকেই পূর্ববাংলায় ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের উপনিবেশ কায়েম হয়।
আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তাদের প্রভু ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের শোষণ, লুন্ঠন এবং নির্যাতন চিরদিন পূর্ববাংলার জনগণ মুখ বুজে সহ্য করবেন না।
ইতিমধ্যেই পূর্ববাংলার ছাত্র-বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক থেকে চাকুরীজীবী, সেনাবাহিনী, শ্রমিক-কৃষক অর্থাৎ পূর্ববাংলার সর্বস্তরের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। স্বতস্ফূর্তভাবে তারা প্রতিবাদ মিছিল, কোথাও কোথাও খাদ্য লুট, আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকদের খতম করছেন।
পূর্ববাংলার বীর জনগণ ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে নুরুল আমিন সরকারকে উৎখাত করেন।
১৯৬৯-এর মহান গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আয়ুব খাঁকে উৎখাত করেন।
১৯৭১-এর মার্চের মহান গণ অভ্যুত্থান এবং সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে ইয়াহিয়া সামরিক ফ্যাসিস্টদের উৎখাত করেন।
দুর্ভিক্ষপীড়িত, লাঞ্ছিত-নিপীড়িত পূর্ববাংলার জনগণের প্রচণ্ড গণ অসন্তোষের অবশ্যই বিস্ফোরণ ঘটবে এবং আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভুদের উৎখাত করে কবরস্থ করবে।

পূর্ববাংলার শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, সেনাবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, বিভিন্ন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, ব্যক্তি এবং পূর্ববাংলার সকল জনগণের উদ্দেশ্যে আহবান জানাচ্ছি—

আপনারা অতীতের গৌরবময় সংগ্রামী ঐতিহ্য অনুসরণ করে এগিয়ে আসুন, বাঙালী জাতি ও পূর্ববাংলার জনগণকে বাঁচান। প্রকাশ্য বা গোপনে আপনারা নিজ নিজ এলাকায় সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলুন এবং নিম্নলিখিত দায়িত্ব পালন করুনঃ
* কমিটির নেতৃত্বে সকল দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করুন।
* খাদ্যদ্রব্যসহ সকল জিনিসের ভারতে পাচার বন্ধ করুন। পাচার হচ্ছে এরূপ দ্রব্য দখল করে জনগণের মাঝে বিনামূল্যে বিলিয়ে দিন।
* মজুতদারী, কালোবাজারী, চোরাকারবারী, মুনাফাখোরদের খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দখল করে জনগণের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করুন। এদেরকে শাস্তি বিধান করুন।
* সরকারী গুদাম, খাদ্য দখল করে বিনামূল্যে ক্ষুদার্তদের মাঝে বিতরণ করুন।
* স্বচ্ছল অবস্থাসম্পন্নদের থেকে চাঁদা, সাহায্য সংগ্রহ করে ক্ষুধার্থদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করুন।
* টাউট আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক, আত্মসাৎকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জনগণের মাঝে বিতরণ করুন, ঘৃণ্যদের চরম শাস্তি দিন।
* ঘৃণ্যদের চরম শাস্তি দিন।
* ভুখা মিছিল, প্রতিবাদ সভা, ঘেরাও, ধর্মঘট, হরতাল, অভ্যুত্থান, সশস্ত্র সংগ্রাম জোরদার করুন।
* সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, ইউনিট পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করুন!

১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের ঢাকাসহ পূর্ববাংলা দখল এবং পূর্ববাংলায় তার উপনিবেশ কায়েমের প্রতিবাদে ১৫ ও ১৬ই ডিসেম্বর হরতাল পালন করুন!

* অফিস-আদালাত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, যানবাহন, হাট-বাজার ইত্যাদি অর্ধদিবস বন্ধ রাখুন।
* মিটিং, মিছিল, হরতাল, ঘেরাও, বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান এবং সশস্ত্র সংগ্রামের সমন্বয়ের মাধ্যমে আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভুদের উৎখাত করে পূর্ববাংলার শ্রমিক-কৃষক, দেশপ্রেমিকদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করুন।

জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিম্নলিখিত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করুনঃ

১। আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকদের উৎখাত করা, তাদের আলো টাকা ও সম্পত্তি জাতীয়করণ করা, তাদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা। তাদের মধ্যকার ঘৃণ্য খুনীদের চরম শাস্তি প্রদান করা।
আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকদের দ্বারা বন্দী সকল দেশপ্রেমিকদের মুক্তি প্রদান, তাদের দেশ সেবার সুযোগ প্রদান।
কালোবাজারী, মজুতদারী, মহাজনী, চোরাকারবারী, মুনাফাখোরদের কঠোর হস্তে দমন করা। এদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা। মারাত্মক অপরাধীদের চরম শাস্তি প্রদান করা।
সীমান্ত সীল করা, ভারতে পাচার কঠোর হস্তে দমন করা। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের সাথে স্বাক্ষরিক্ত জাতীয় স্বার্থ বিরোধী সকল প্রকার প্রকাশ্য, গোপন চুক্তি বাতিল করা। বিভিন্ন যৌথ কমিটি বাতিল করা।
সোভিয়েট-মার্কিনের সাথে স্বাক্ষরিত সকল অসম জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করা। বেরুবাড়ীসহ ভারতকে প্রদত্ত পূর্ববাংলার সমগ্র ভুখণ্ড ফেরত আনা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব কঠোরভাবে বজায় রাখা।
২। বাক-স্বাধীনতা, ভোট প্রদানের স্বাধীনতা, সমাবেশ ও রাজনৈতিক কাজের স্বাধীনতা, মিটিং-মিছিলের স্বাধীনতা, পত্রিকা ও প্রকাশনার স্বাধীনতা প্রদান করা।
সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে একটি জাতীয় পরিষদ নির্বাচন করা। এ জাতীয় পরিষদ সংবিধান প্রণয়ন করবে।
সরকার এ জাতীয় পরিষদের নিকট দায়ী থাকবে।
৩। দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ, অনাহারে মৃত্যু ঠেকনোর জন্য সম্ভাব্য সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ।
৪। ভুমি সংস্কার করা, নির্দিষ্ট সীমার অতিরিক্ত জমি বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা, জাতীয় বিশ্বাসঘাতকদের ভুমি বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ।
ব্যাপক জনগণকে সমাবেশিত করে বন্যা ও খরা সমস্যার সমাধান করা।
ভারতীয়ও সম্প্রসারণবাদকে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ফারাক্কা সমস্যার সমাধান করতে বাধ্য করা।
প্রতি ইঞ্চি অনাবাদী জমিতে আবাদের ব্যবস্থা করা, খাদ্যদ্রব্যের অপচয়, মজুতদারী, চোরাকারবারী বন্ধ করা।
কৃষি ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করা।
এভাবে খাদ্য সমস্যার সমাধান করা।
৫। শিল্প কারখানায় আওয়ামী বিশ্বাসঘাওতকদের ও দালালদের কার্যকলাপ বেআইনি ঘোষণা করা ও কঠোরভাবে বন্ধ করা।
– পূর্ববাংলার শিল্প-কারখানা পরিচালনার জন্য শ্রমিক, কারিগরি ও প্রশাসদের সমন্বয়ে সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করা। অপচয়, শিল্পারখানার সম্পদ আত্মসাৎ, চোরাকারবারী, কাজে ফাঁকি ইত্যাদি বন্ধ করা।
ব্যাপক শিল্পায়ন করা।
কুটির শিল্প ও হস্তশিল্প এবং ক্ষুদ্র শিল্পকে রক্ষা করা ও সহায়তা করা।
দেশপ্রেমিক শিল্পপতিদের রক্ষা করা।
এভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্র্যব্যের দিক দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়া। পযায়ক্রমে মূল্য কমিয়ে আনা।
৬। আমানী-রফতানী বাণিজ্য জাতীইয়করণ করা। ইহা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করা। আমদানী-রফতানীর ক্ষেত্রে দেশীয় প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেওয়া। আমদানী-রফতানী ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থা চালু করা। বিদেশী মুদ্রা পাচাকারী, চোরাকারবারী, কালোবাজারী ও দুর্নীতিবাজদের কঠোর হস্তে দমন করা।
৭। কালো টাকা ও সম্পদ রাষ্ট্রীয়করণ, বিদেশী শোষণ ও লুন্ঠনের অবসান, চোরাকারবারী, পাচার, মহাজনী-মজুতদারীসহ সকল প্রকার সামাজিক দুর্নীতির অবসান, কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি ও আধুনিকীকরণ, পণ্যদ্রব্যের সুষ্ঠু বাজারজাত করা, বেকারত্বের অবসান, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপক আহরণ, দেশীয় দ্রব্যের ব্যবহার, বৈদেশিক আমদানী কঠোরভাবে হ্রাস করা, বৈদেশিক রপ্তানী বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত হ্রাস করা। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা।
৮। মাতৃভুমিকে রক্ষার জন্য সত্যিকারের জনগণের স্বার্থের সেবক হিসেবে বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীকে পুনর্গঠন করা। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, রক্ষীবাহিনী এবং অন্যান্য প্রাইভেট প্রকাশ্য ও গুপ্ত বাহিনী, গণবিরোধী বাহিনীসমূহকে বেআইনী করা। আওয়ামী বিশ্বাসঘাওতকদের অস্ত্রধারী দলসমূহের ডাকাতি এবং অন্যান্য নির্যাতন বন্ধ করা।
এ ধরণের বাহিনীর ঘৃণ্যদের চরম শাস্তি দেওয়া।
সেনাবাহিনী কৃষি, শিল্প, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকবে, উৎপাদনে অংশগ্রহণ করবে।
তারা আঞ্চলিক অখণ্ডতা, জাতীয় সার্বভৌমত্ব কঠোরভাবে রক্ষা করবে। সীমান্ত বন্ধ রাখবে, রাষ্ট্রবিরোধীদের দমন করবে।
সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত করার জন্য রাজনৈতিক বিভাগ প্রতিষ্ঠা, অগণতান্ত্রিক নিয়মকানুন বাতিল করা। সেনাবাহিনী রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করবে।
৯। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকদের নেতৃত্ব বাতিল করা। সম্প্রসারণবাদী, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী ও অশ্লীল সংস্কৃতি বেআইনি করা।
জাতীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও শিক্ষার পদ্ধতি গড়ে তোলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন সাধন করা।
১০। শ্রমিক-মজুর ও বেসামরিক কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের চাহিদা পুরণ।
১১। নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা, মাতা ও সন্তানদের রক্ষা করা।
১২। আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকদের হাতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা, তাদের পরিবারের দায়িত্বে গ্রহণ করা, আহতদের চিকিৎসা, শারীরিক অক্ষমদের পুনর্বাসন করা।
১৩। সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের রিলিফ প্রদান।
১৪। আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকদের প্রশাসনের সাথে যুক্ত সৎ ও দেশপ্রেমিক কর্মচারীদের দেশসেবার সুযোগ প্রদান করা, যুদ্ধবন্দীদের প্রতি সদয় আচরণ করা।
১৫। প্রবাসী বাঙালীদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ করা।
১৬। পূর্ববাংলায় অবস্থানকারী বিদেশী নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ।
১৭। পূর্ববাংলার জাতিগত সংখ্যালঘুদের পূর্ববাংলার রাষ্ট্রীয় সীমার মাঝে স্বায়ত্বশাসন প্রদান, তাদেরকে দ্রুত উন্নতির ব্যবস্থা করা, বাঙালী শোষকদের অত্যাচার বন্ধ করা।
ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
ধর্মীয়, ভাষাগত সংখালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করা।
ধর্মীয়, ভাষাগত, জাতিগত বিভেদ সৃষ্টিকারী, নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করা।
১৮। শান্তি ও নিরপেক্ষতার বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করা। ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, প্যালেস্টাইনসহ বিশ্বের নিপীড়িত দেশ ও জাতিসমূহের মুক্তি সংগ্রাম সমর্থন করা।
বাঙালী জাতি ও জনগণের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। তাই সকল দেশপ্রেমিক জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে—বাঙালী জাতি ও জনগণকে বাঁচানো।
আসুন, আমরা আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভুদের উৎখাত করি, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও শান্তি আনয়ন করি, ক্ষুধার অবসান করি, চাকুরী, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা বিধান করি, পূর্ববাংলার জনগণকে বাঁচাই।
দলমত নির্বিশেষে প্রকাশ্যে ও গোপনে কর্মরত সকল দেশপ্রেমিক বিরোধী রাজনৈতিক দল, গ্রুপ, গোষ্ঠী ও ব্যক্তির নিকট আমরা আবেদন জানাচ্ছি—আপনারা পূর্ববাংলার জনগণের এ চরমতম সংকটজনক মুহুর্তে আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হোন, আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভুদের উৎখাত করে পূর্ববাংলার জনগণের বাঁচানোর কাজে শরীক হোন!

• আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভু ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের উৎখাত করুন।
• বাংলাদেশ পুতুল সরকারকে উৎখাত করুন। জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম করুন।
• খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, চাকুরী, বাসস্থানের ব্যবস্থা করুন, শান্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র কায়েম করুন।
• বাঙালী জাতি ও জনগণের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন—তাদেরকে বাঁচান।
• সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলুন, দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করুন, আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকদের উৎখাত করুন।
• বেরুবাড়ী ফিরিয়ে আনুন, ফারাক্কা সমস্যা সমাধানে ভারতকে বাধ্য করুন।
• মজুতদারী, চোরাকারবারী, কালোবাজারী, মহাজন, মুনাফাখোর, লাইসেন্স-পারমিটধারী, কালো টাকার মালিক আওয়ামী দুষ্কৃতিকারীদের উৎখাত করুন।

► ১৫ ও ১৬ই ডিসেম্বর কালো দিনে অর্ধদিবস হরতাল পালন করুন।
► অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, হাট-বাজার ইত্যাদি উভয় দিন অর্ধদিবস বন্ধ রাখুন!
► পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট জিন্দাবাদ!
► পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি জিন্দাবাদ!
► পূর্ববাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনী জিন্দাবাদ!
► সিরাজ সিকদার জিন্দাবাদ!