সিরাজ সিকদার রচনাঃ বন্যা, খরা ও পূর্ববাংলার খাদ্য সমস্যা সমাধানের উপায় (সেপ্টেম্বর ১৯৭৪)

সিরাজ সিকদার রচনা

বন্যা, খরা ও পূর্ববাংলার খাদ্য সমস্যা সমাধানের উপায়

(সেপ্টেম্বর ১৯৭৪)

[স্ফুলিঙ্গ ১নং সংখ্যায় প্রকাশিত]

sikder

সম্প্রতি বন্যায় পূর্ববাংলার প্রায় জেলাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনগণ, গবাদিপশু, খাদ্যশস্য, ঘরবাড়ী ও ধন-সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
বর্ষাকালে বন্যা, আর শুকনার সময় খরা, খাদ্যশস্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি পূর্ববাংলার জনজীবনকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
জনগণ এ সকল সমস্যা থেকে আশু মুক্তি চান, খেয়ে-পড়ে তারা শান্তিতে বাঁচতে চান।
পূর্ববাংলার বন্যা, খরা এবং খাদ্য সমস্যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীদের সাথে জড়িত। বর্তমানে পূর্ববাংলার রাষ্ট্রক্ষমতা ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদের প্রতিনিধি আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকদের হাতে। পূর্ববাংলার কৃষক শ্রমিক জনগণ এদের শোষণ-লুন্ঠন ও নির্যাতনে চরমতম আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরা রোধের এবং খাদ্য সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনগণকে নিজেদের উদ্যোগে কাজে লাগানো। কিন্তু জনগণের সাথে সরকারের সম্পর্ক হচ্ছে শোষণ-লুন্ঠন-নির্যাতনের। এ কারণে জনগণকে সমাবেশিত করে কাজে লাগানো এ সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
উপরন্তু ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীরা তাদের দেশের বন্যা পূর্ববাংলায় চাপিয়ে দিচ্ছে এবং শুকনার সময় ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে পানি আটকে রেখে পূর্ববাংলায় খরা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশ পুতুল সরকার তার প্রভু ভারতের এহেন পূর্ববাংলা বিরোধী কার্যকলাপের কোন বিরোধিতাই করছে না।
কৃষকদের উপর আমলা পুঁজি, সমান্তবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের নির্মম শোষণ-লুন্ঠনের ফলে কৃষকেরা উৎপাদনে উৎসাহ পাচ্ছে না। কালোবাজারী, ভারতে চোরাকারবারী, মহাজনী, মজুতদারী ইত্যাদির কারণে খাদ্য সমস্যা আরো প্রকট হয়েছে।
কাজেই পূর্ববাংলার বন্যা-করা ও খাদ্য সমস্যা সমাধান সম্ভব পূর্ববাংলার গণবিরোধী বিশ্বাসঘাতক সরকারকে উৎখাত করে জনগণের সরকার কায়েম করার মাধ্যমে।
সর্বহারার শ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষক-সৈনিক ও দেশপ্রেমিকদের সরকার ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদকে উৎখাত করে কৃষক শ্রমিক জনগণের রাষ্ট্রক্ষমতা কায়েম করতে হবে।
ফলে জনগণ নিজেরাই হবেন রাষ্ট্রের মালিক।
তারা একত্রিত হয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে যুক্ত হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় নির্মাণ, খাল-নদী খননের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরা সমস্যার সমাধান করবে এবং কমিউন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খাদ্য সমস্যার সমাধান করবে।
ফারাক্কা সমস্যা, ভারতের বন্যা সমস্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি মানতে ভারতকে বাধ্য করতে হবে।
চীন ও ভিয়েতনামে এভাবে গণসরকার কায়েমের মাধ্যমে জনগণ নিজেরাই আত্মনির্ভরতার ভিত্তিতে বন্যা, খরা, খাদ্য সমস্যার সমাধান করেছে।
একই পথে আমাদের পক্ষেও সম্ভব হবে বন্যা, খরা ও খাদ্য সমস্যার সমাধান করা।
মনি-মোজাফফর সংশোধনবাদী বিশ্বাসঘাতকরা বন্যা, খরা ও খাদ্য সমস্যার মূল কারণ ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ এবং পূর্ববাংলার আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদের প্রতিনিধিদের পূর্ববাংলার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এবং তাদের নজিরবিহীন শোষণ ও লুন্ঠন—এ সত্যকে স্বীকার করে না।
এ সমস্যা সমাধানের জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে উপরিউক্ত প্রতিক্রিয়াশীলদের উৎখাত করে জনগণের ক্ষমতা দখলের বিপ্লবী কর্মসূচী না নিয়ে মনি-মোজাফফর সংশোধনবাদী বিশ্বাসঘাতকরা নিছক সংস্কারমূলক কাজ এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের লেজুড়বৃত্তি করছে।
কাজেই পূর্ববাংলার বন্যা, খরা ও খাদ্য সমস্যার সমাধান সম্ভব বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে জনগণের সরকার কায়েমের মাধ্যমে।