সিরাজ সিকদার রচনাঃ ১৯৭৪-এর বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণের অগ্রগতি (সেপ্টেম্বর ১৯৭৪)

সিরাজ সিকদার রচনা

 ১৯৭৪-এর বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণের অগ্রগতি

 (সেপ্টেম্বর ১৯৭৪)

 [স্ফুলিঙ্গ ১নং সংখ্যায় প্রকাশিত]

sikder

বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণ সাফল্যজনকভাবে শুরু হয় সাভারের শিমুলিয়া ফাঁড়ি আক্রমণ ও দখলের মাধ্যমে।

এবার বর্ষাকালীন আক্রমণ গত বছরের তুলনায় একমাস আগেই শুরু হয়েছে।

শিমুলিয়া দখলের ফলে বেশ কিছুসংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া যায়।

১৯৭৪-এর জুন মাসে পার্বত্য চট্রগ্রামে পারোয়া ফাঁড়ি দখল করা হয়।

এ আক্রমণ আমাদের পার্বত্য গেরিলারা পরিচালনা করে।

প্রকাশ্য দিনের বেলায় আক্রমণ করে দুঃসাহসী গেরিলারা ক্যাম্পটি দখল করে নেয়।

এতে ১৬টি রাইফেল, ৪টি SLR এবং ১টি LMG-সহ প্রচুর গোলাবারুদ দখল হয়।

পরদিন ঐ এলাকায় পুলিশ-বিডিআর গেলে ওৎ পেতে থাকা গেরিলাদের আক্রমণের মুখে পড়ে তারা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসে।

বহুদিন পর্যন্ত পুলিশ, বিডিআর, রক্ষী বা সেনাবাহিনী সেখানে যায়নি।

এ আক্রমণের ফলে পার্বত্য চট্রগ্রাম ও চট্রগ্রামের জনসাধারণের মাঝে বিপুল সাড়া জেগেছে এবং সরকার ও তার ভাড়াটে বাহিনীর মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি হয়েছে।

জুলাই মাসে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানা আমাদের দুঃসাহসী গেরিলাদের আক্রমণের নিকট আত্মসমর্পণ করে।

গেরিলারা থানার সমুদয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে নিরাপদে সরে আসে।

আমাদের গেরিলারা সাফল্যজনক হামলা চালিয়ে সিলেটের ধর্মপাশা থানা, ঢাকার আঁটি পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে এবং থানা ও ফাঁড়ির পতন ঘটে। গেরিলারা সমুদয় অস্ত্র দখল করে নেয়।

১৯৭৩ সালের বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণের সময় আমাদেরকে মোকাবেলা করতে হয়েছে শুধু পুলিশ বাহিনীকে।

এবারকার বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণ ব্যাহত করার জন্য আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকরা যৌথ অভিযানের মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিডিআর, রক্ষীকে পুলিশের সাথে নিয়োগ করেছে।

শত্রুচাপের এরূপ কয়েকগুণ বৃদ্ধিতে কোথাও কোথাও আমাদের কিছুটা ক্ষতি সত্ত্বেও বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণ অব্যাহত গতিতে চলছে।

আমাদের কর্মী ও গেরিলারা ক্ষতি ও বিপর্যয়কে দৃঢ়তার সাথে অতিক্রম করে জাতীয় শত্রু খতম, থানা-ফাঁড়ি দখল ইত্যাদি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে আমরা নিয়মিত বাহিনী গঠন, মুক্তাঞ্চল গড়ে তোলার দিকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছি।

এটা বাংলাদেশ পুতুল সরকারের তথাকথিত যৌথ অভিযানের প্রতি আমাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব।

বাংলাদেশ পুতুল সরকার তার সকল প্রকার বাহিনী নিয়োগ করেও আমাদের তৎপরতা ও বিকাশ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের আর কোন বাহিনী নেই যা আমাদের বিরুদ্ধে নিয়োগ করতে পারে।

কাজেই আওয়ামী বিশ্বাসঘাতকদের নিজেদের ও তাদের প্রভুদের রক্ষার জন্য শেষ পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীকে ডেকে আনতে হবে।

পূর্ববাংলার মাটিতে উপনিবেশবাদী ভারতীয় বাহিনীর তৎপরতা পূর্ববাংলার সকল জনগণকে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে ডেকে আনবে।

এর ফলে আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভুদের পতন আরো ত্বরান্বিত হবে।