সিরাজ সিকদার রচনাঃ “পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির উপদলবাদ বিরোধী ঐতিহাসিক সংগ্রাম” শীর্ষক রচনা সংকলনের ভুমিকা (আগষ্ট, ১৯৭৪)

সিরাজ সিকদার রচনা

“পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির

উপদলবাদ বিরোধী ঐতিহাসিক সংগ্রাম” শীর্ষক

রচনা সংকলনের ভুমিকা

 

(আগষ্ট, ১৯৭৪)

sikder

সভাপতি মাও সেতুং বলেছেন,“ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা মনোযোগ দাবী করে।“

অভিজ্ঞতার সারসংকলনের মাধ্যমে নিয়মবিধি আবিষ্কার করা যায় এবং ভবিষ্যতের সমস্যার সমাধান করা যায়।

যতদিন সমাজে শ্রেণী থাকবে ততদিন শ্রেণী সংগ্রাম শেষ হবে না। সমাজের এ শ্রেণী সংগ্রাম সর্বহারার রাজনৈতিক পার্টিতে প্রতিফলিত হবে দুই লাইনের সংগ্রাম অর্থাৎ সর্বহারা ও বুর্জোয়াদের মধ্যকার সংগ্রাম হিসেবে।

এ সংগ্রাম চলবে পার্টি ও রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে।

পার্টির অভ্যন্তরস্থ ও বাইরের বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিনিধিরা সর্বদাই পার্টি ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করে পার্টি ও  রাষ্ট্রকে বুর্জোয়া ফ্যাসিস্ট পার্টি ও রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে মরণপণ প্রচেষ্টা চালাবে।

সর্বহারারাও অনিবার্যভাবেই মরণপণ সংগ্রাম চালাবে পার্টি ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে, বুর্জোয়াদের  পরাজিত  ও ধ্বংস করতে।

এ সংগ্রাম কখনও কখনও তীব্র শ্রেণী সংগ্রামে রূপলাভ করবে। বুর্জোয়া  প্রতিক্রিয়াশীলরা প্রকাশ্য ও গোপন উভয় পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা চালাবে এবং অনিবার্যভাবেই ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করবে। গুজব, অপবাদ-কুৎসা রটাবে, উপদল ও চক্র গঠন করবে।

আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করছে শ্রেণী সমাজে এ ধরনের ঘটনা আকস্মিক কিছু নয়, শ্রেণী সংগ্রামের অনিবার্য পরিণতি।

ক্রুশ্চোভ, লিউ শাওচি, লিনপিয়াও প্রভৃতি প্রতিক্রিয়াশীলদের উদ্ভব উপরোক্ত উপসংহারকেই প্রমাণ করছে।

ক্রুশ্চোভ ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়, লিউ-লিন আংশিক ভাবে ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হলেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত ও ধ্বংস হয়।

সভাপতি মাওসেতুঙের নেতৃত্বে সর্বহারা বিপ্লবীরা লিউ শাওচি, লিন পিয়াও প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের পার্টি রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল ঠেকাতে সমর্থ হয়।

এটা বিশ্বের সর্বহারা বিপ্লবীদের জন্য মহান বিজয় ও শিক্ষা। পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টিতে ফজলু-সুলতান বিশ্বাসঘাতক চক্র পার্টির ক্ষমতা দখল এবং কমরেড সিরাজ সিকদার ও অন্যান্য সাচ্চা বিপ্লবীদের খতম করার উন্মত্ত প্রচেষ্টা চালয়, তারা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে, সুবিধাবাদী, দলত্যাগী, অধঃপতিতদের নিয়ে চক্র-উপদল গঠন করে।

কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং আন্তরিকভাবে সর্বহারা বিপ্লবীরা ফজলু-সুলতান চক্রের বিরুদ্ধে দৃঢ় নীতিভিত্তিক সংগ্রাম পরিচালনা করে এবং তাদেরকে মতাদর্শগত, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে পুরোপুরি পরাজিত ও ধ্বংস করে।

তাদের কেউ কেউ প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা চালাতে যেয়ে সর্বহারা বিপ্লবীদের হাতে খতম হয়।

চক্রের প্রভাব সমুলে উৎপাটিত করার জন্য পার্টিব্যাপী মতাদর্শগত শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এভাবে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি পূর্ব বাংলার ইতিহাসে সর্বপ্রথম উপদলবাদ বিরোধী সংগ্রাম সঠিকভাবে পরিচালনা করে বিজয় অর্জন করে এবং অতিশয় মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

কিন্তু এ সংগ্রামই শেষ নয়। যতদিন সমাজে শ্রেণী আছে ততদিন পার্টির মধ্যকার ওবাইরের বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীলরা প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালাবে পার্টি ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের জন্য।

অনিবার্যভাবে সর্বহারা বিপ্লবীদেরও সর্বদা জীবনমরণ সংগ্রাম চালাতে হবে বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীলদের পরাজিত ও ধ্বংস করা এবং সর্বহারাদের হাতে পার্টি ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা রাখার জন্য।

এ সংগ্রামের বিজয়ের উপর নির্ভর করবে পার্টি বিপ্লবী থাকবে কিনা, রাষ্ট্র সর্বহারাদের থাকবে কিনা।

এ সকল সংগ্রামে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির উপদলবাদ বিরোধী সংগ্রামের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা খুবই সহায়ক হবে।

কাজেই সমগ্র পার্টিকে মনোযোগের সাথে তাৎপর্যসম্পন্ন অতিশয় মূল্যবান অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হবে, দেশীয় আন্তর্জাতিক সর্বহারাদের বুর্জোয়া বিরোধী সংগ্রাম অর্থাৎ, দুই লাইনের জটিল আঁকাবাঁকা জীবন-মরণ সংগ্রাম থেকে শিখতে হবে। বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সর্বদা সংগ্রাম চালিয়ে তাদের পরাজিত ও ধ্বংস করতে হবে। পার্টি ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা সর্বদা যাতে সর্বহারা বিপ্লবীদের হাতে থাকে তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।

এভাবে দেশ, জাতি ও জনগণের মুক্তি সংগ্রাম অব্যাহতভাবে বিজয়ের পথে নিয়ে যেতে হবে।

নোটঃ

ফজলু-সুলতান চক্র বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী এবং দলত্যাগী, সুবিধাবাদী এবং অধঃপতিত, ভ্রষ্টদের নিয়ে চক্র গঠন করে এবং কমরেড সিরাজ সিকদার ও অন্যান্য সাচ্চা বিপ্লবীদের হত্যা করা ও পার্টির ক্ষমতা দখলের জন্য প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা  চালায়।

তাদের এ সকল জঘন্য প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা মাত্র দু’মাস স্থায়ী হয়।

ফজলু প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা চালাতে যেয়ে বিপ্লবীদের হাতে খতম হয়।

ফজলু চক্রের অপর এক পাণ্ডা প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবী হুমায়ূন কবীরও প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা চালাতে যেয়ে খতম হয়।

চক্রের সাথে যুক্ত অন্যান্যদের চিরদিনের জন্য পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

চক্রের অবশিষ্টাংশ বর্তমানে সরকারী চরে পরিণত হয়েছে এবং সর্বহারা পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) নাম দিয়ে জনগণ ও বিপ্লবীদের প্রতারিত করার প্রতিবিপ্লবী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

তাদের এ প্রচেষ্টাও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হতে বাধ্য। অচিরেই তারা ফজলুর মত ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হবে।