সিরাজ সিকদার রচনাঃ ১ গ নং-উপব্যুরোর আওতাধীন অঞ্চলসমূহের পরিচালকদের সাথে ব্যুরো পরিচালকের বৈঠক শেষে ব্যুরো পরিচালক কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ডিসেম্বর ১৯৭৩

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com ) এর অনলাইন প্রকাশনা ১০ ডিসেম্বর ২০১৪


পিডিএফ

১) আমাদের কাজের লক্ষ্য হছে

▬ গ্রামে ঘাঁটি গঠন করা, গ্রামসমুহ মুক্ত করা,

▬ শহর ঘেরাও করা,

▬ শেষ পর্যন্ত শহর দখল করা।

বর্তমানে আমাদের সশস্ত্র সংগ্রামের অভিজ্ঞ লোক গড়ে উঠছে, অস্ত্র দখল হচ্ছে, গ্রামসমুহ থেকে জাতীয় শত্রু উৎখাত হচ্ছে, শত্রুর ছোট ছোট অবস্থান থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করতে আমরা সক্ষম হচ্ছি। কাজের ব্যাপক বিস্তৃতি হয়েছে, শহরে ও গ্রামে ভাল কাজ হচ্ছে, গণসংগ্রামের মাধ্যমে গণসমর্থনকে কাজে লাগাবার পদ্ধতি রপ্ত হচ্ছে, কর্মীদের মানোন্নয়ন ও সুসংবদ্ধকরণের পদ্ধতি কর্মীরা আয়ত্ব করছে, অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উপায় আবিষ্কৃত হয়েছে, দেশপ্রেমিক ও বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ করার পদ্ধতি প্রয়োগ হচ্ছে। এভাবে আমাদের সংগঠনের চমৎকার অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই বর্তমানে আমাদেরকে ঘাঁটি এলাকা গড়ে তোলার লক্ষ্য সামনে রেখে সংগঠনের চমৎকার অবস্থাকে কাজে লাগাতে হবে এবং কাজ করতে হবে।

সমভূমিতে ভ্রাম্যমান ঘাঁটি এলাকা এবং জাতীয় শত্রুমুক্ত বিস্তীর্ণ গেরিলা অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে।

রণনৈতিক সুবিধাজনক স্থানে স্থায়ী ঘাঁটি এলাকা গড়ে তুলতে হবে।

এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির দশম ইশতেহার, ১নং ব্যুরোর ষষ্ঠ সিদ্ধান্তের লক্ষ্যসমুহ কার্যকরী করতে হবে।

ঘাঁটি এলাকার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হলে বিপ্লবের বিরাট অগ্রগতি সাধিত হবে।

২) দশম ইশতেহার, ১নং ব্যুরোর ষষ্ঠ প্রস্তাব গুরুত্বসহকারে পাঠ ও প্রয়োগ করতে হবে। এর ভিত্তিতেই সুসংবদ্ধকরণ চালাতে হবে।

৩) ২৬শে মার্চ, ১৯৭৪ সাল সমগ্র পূর্ববাংলা ব্যাপী হরতাল পালনের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

হরতালের কারণ-

▬  জাতীয় পরাধীনতা দিবস পালন।

▬  রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে।

▬  রক্ষীবাহিনী উৎখাতের জন্য।

প্রস্তাবিত হরতালের বিষয়ে এখন থেকেই জনগণের মাঝে প্রচার চালাতে হবে। হরতাল সংক্রান্ত সারসংকলন প্রয়োগ করতে হবে। [১]

৪) অর্থনৈতিক অপারেশন সংক্রান্তঃ

আমাদের প্রয়োজন, ক্ষমতা এবং বাস্তব অবস্থা দ্বারা অপারেশন নির্ধারিত হবে।

অর্থনৈতিক অপারেশনে যে সকল বিপর্যয় ঘটেছে তার মূল কারণ ছিল পরিকল্পনার ত্রুটি।

৫) দায়িত্বে নিযুক্ত হলে তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে, কোন কমিটির সদস্য হলে সদস্যের ভূমিকা ঠিকভাবে পালন করা, সম্ভব না হলে দায়িত্ব গ্রহণ করা বা সদস্য না হওয়া।

৬) অপারেশনঃ

▬ যে কোন অপারশনের পর “অপারেশন সিট” পূরণ করা।

▬ অপারেশনের নির্ণায়ক হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনা।

▬ অপারেশনের স্তরসমুহ নির্ধারণ করে দেওয়া, এবং তা কঠোরভাবে পালন করতে বলা, কোন কোন স্তর পালন করা না হলে অপারেশন বাতিল হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া।

▬ কোন লক্ষ্যবস্তুর অপারেশন করার মত শর্তসমূহ উপস্থিত না থাকলে পরিকল্পিতভাবে তা তৈরী করা।

প্রতি অঞ্চল তার আওতাভুক্ত অপারেশন টার্গেটসমুহ বিশ্লেষণ করে রাখবে এবং প্রয়োজনীয় শর্তসমুহ তৈরী করার জন্য এখন থেকেই কাজ করবে।

▬ বর্তমানে অর্থনৈতিক অপারেশনকে প্রাধান্য দেওয়া। সম্ভব হলে সামরিক লক্ষ্যবস্তুসহ, সামরিক লক্ষ্যবস্তু ঠেকিয়ে বা শুধু অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তু। চেষ্টা করতে হবে গ্রামের উপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা।

▬ ‘পচা শামুকে পা কাটে’ অর্থাৎ যথাযথ গুরুত্ব না দিলে ছোট অপারেশনেও বিরাট বিপর্যয় ঘটতে পারে।

▬ পরিকল্পনা কার্যকরী করার মত লোক আছে, কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নের লোকের অভাব রয়েছে।

▬ ভ্রষ্টদের রিক্রুট না করা।

▬ সামরিক হামলার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা।

▬ দখলকৃত দ্রব্যাদি ও অস্ত্র সংক্রান্ত নিয়মবিধি কঠোরভাবে কার্যকরী করা।

▬ অপারেশনে জনসমর্থনকে কাজে লাগাবার বিষয় বিবেচনা করা।

জনসমর্থন উদ্দেশ্যহীন হবে যদি তাকে কাজে না লাগানো হয়।

▬ দিনের বেলায় অপারেশন খুব জটিল। এ কারণে এতে অতিমাত্রায় মনোযোগ দিতে হবে।

▬ অপারশন পূর্বেকার, অপারেশন কালীন, অপারেশন পরবর্তী স্তরসমূহ অতিশয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে পরিকল্পনা করতে হবে।

▬ অপারশনের উল্লিখিত স্তরগুলো সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সামগ্রিক অপারেশন পরিচালক উত্থাপিত সমস্যাবলী সমাধান করতে পারেন এইরূপ দুরত্বে অবস্থান করবেন।

▬ অপারেশনসহ সকল ক্ষেত্রে কর্মীদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। এই যত্নশীলতা নির্ভূল লাইন ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তব অবস্থার সাথে সংগতি রেখে তা কার্যকরী করার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।

▬ প্রতি অঞ্চলে সচল বাহিনীর ইউনিট গড়ে তোলা, যারা সমগ্র পূর্ব বাংলায় গেরিলা তৎপরতা চালাতে সক্ষম।

৭) সংগঠনের দলিলসমূহ বারংবার গুরুত্বসহকারে অধ্যয়ন ও প্রয়োগ করা।

৮) গোপন কর্মপদ্ধতি ও শৃংখলাকে আরো জোরদার করতে হবে। সঠিক গোপন কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য শত্রুর ব্যাপক চাপের মুখেও আমাদের ক্ষতি কম হচ্ছে।

৯) আন্তর্জাতিক

বিপ্লবের জন্য একটি পার্টিকে প্রধানতঃ নির্ভর করতে হবে নিজের মতাদর্শগত, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সামরিক ও অন্যান্য লাইন সঠিকভাবে প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন এবং জনগণের উপর অর্থাৎ আভ্যন্তরীণ ভিত্তির উপর।

শুধু আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্থাৎ শর্তের উপর নির্ভর করে বিপ্লব করা যায় না। উপরন্তু নিজের ভুল থাকলে অর্থাৎ ভিত্তি ঠিক না হলে আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্থাৎ শর্ত কোন কাজেই আসে না, উপরন্তু তা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।

ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি চীনের সমর্থন ভারতীয় পার্টির ভুলের কারণে কোন কাজেই আসেনি। একইভাবে হক-তোয়াহাদের প্রতি ভারতীয় পার্টির সমর্থন হক-তোয়াহাদের ভুলের কারণে কোন কাজেই আসেনি। হক-তোয়াহারা ভারতীয় পার্টির সমর্থনের সার্টিফিকেট দেখিয়ে বিপ্লবীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এ সার্টিফিকেটও শেষ পর্যন্ত তাদের বিপর্যয় ঠেকাতে পারিনি।

আমরা তখনই বলেছি হক-তোয়াহাদের সমর্থন করা ভারতীয় পার্টির একটি আত্মগত ভুল পদক্ষেপ।

আমরা এ সমর্থনে বিগড়ে না যেয়ে দৃঢ়ভাবে আমাদের সঠিক লাইনে কাজ চালিয়ে যাই এবং অব্যাহতভাবে বিজয় অর্জন করি।

বর্তমানে যারা ভুল তাদের প্রতি কোন কারণে (আমাদের তরফ থেকে যোগাযোগ করতে না পারা এবং ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টির আত্মগত ভুলের কারণে) আন্তর্জাতিক মর্যাদা রয়েছে (চীনসহ) এই রূপ ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টির সমর্থন এলে তাতে বিভ্রান্ত হলে চলবে না। দৃঢ়ভাবে আমাদের সঠিক লাইনে কাজ করে যেতে হবে। এবং ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টিসমুহের ভূল ভাঙ্গাবার প্রচেষ্টা চালাতে হবে যাতে তারা সঠিক লাইনকে সমর্থন করে।

মনিসিং-মোজাফফর সংশোধনবাদীদের প্রতি আন্তর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন ভিয়েতনাম পার্টির সমর্থন এর প্রমাণ। এ সমর্থন বিপ্লবে কোন সহায়তা করার পরিবর্তে বিপ্লব বিঘ্ন করছে।

আমাদের সঠিক পার্টির প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন বিশেষ করে ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টিসমুহের সমর্থন পাবার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

১০) ‘জনৈক কমরেড প্রসঙ্গে’ দলিলটি পাঠ ও পর্যালোচনা করা হয় এবং মতামত দেওয়া হয়।

১১)  ফেব্রুয়ারীর মাঝে সদস্য/প্রার্থী সদস্য ফর্ম (যারা পূরণ করেননি) পূরণ করে জমা দিতে হবে।

সর্বনিম্ন মানদন্ডঃ

▬ সক্রিয় কর্মী,

▬ কমপক্ষে ৬ মাস কাজ করেছে,

▬ বয়স সর্বনিম্ন ১৬ বছর।

১২) ১৬ই ডিসেম্বর হরতাল সংক্রান্তঃ

১৬ই ডিসেম্বরের হরতাল আহবান একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন সিন্ধান্ত। এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্টি অর্জন করেছে গণসংগ্রাম পরিচলানার মহান অভিজ্ঞতা, ব্যাপক গণসমর্থন, পার্টির অভূতপূর্ব প্রচার, সংশোধনবাদীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব।

কেন্দ্রীয় ভিত্তিক হরতালের অভিজ্ঞতার সারসংকলন প্রদান করা হবে।

বরিশাল, মাদারীপুরে পূর্ণাঙ্গ হরতাল পালন এবং ঢাকা–টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন অংশে আংশিক হরতাল পালনের জন্য উপরোক্ত জেলাসমুহের কমরেড ও জনগণকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে।

১৩) প্রতি অঞ্চলে কমপক্ষে একজন অনুসন্ধানকারী নিয়োগ করতে হবে।

নোটঃ

১। এ সিদ্ধান্তটি পরে বাতিল করা হয়