পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির নবম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে গৃহীত একটি দলিল পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ জুন ১৯৭৩
কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ৪ নভেম্বর ২০১৪
পিডিএফ
সমালোচনার পদ্ধতি
○ অতীতে আমরা সমালোচনার সময় পার্টিকর্মী বা কমরেডদের পুরোপুরি কমিউনিস্ট মনে করতাম। এটা বাস্তবমুখী চিন্তা ছিল না। কারণ, পার্টির কর্মীরা পুরোপুরি কমিউনিস্ট নন।
○ পার্টির কর্মীদের মতাদর্শগত ক্ষেত্রকে দুইভাবে ভাগ করা যায়—সর্বহারা দিক, ক্ষুদে বুর্জোয়া দিক।
○ কাজেই কমরেডদের সমালোচনার সময় সর্বদাই মনে রাখতে হবে যাতে তাদের ক্ষুদে বুর্জোয়া দিক ক্ষুদে বুর্জোয়া সংগ্রামের রূপে প্রকাশ না পায় এবং আমাদের উদ্দেশ্য ও ঐক্যকে ব্যহত না করে।
○ আমরা এমনভাবে সমালোচনা করব যাতে কমরেডদের ক্ষুদে বুর্জোয়া দিক ক্ষুদে বুর্জোয়া সংগ্রামের রূপ নিয়ে প্রকাশ না পায়।
ক্ষুদে বুর্জোয়াদের নিজেদের এবং জনগণের সাথে সংগ্রামের রূপ হচ্ছে বিভেদপন্থীবাদী। বিভেদপন্থীবাদ নিম্নরূপে প্রকাশ পায়ঃ
রাগারাগি, ঝগড়া;
মান অভিমান;
কান্নাকাটি;
অসহযোগ;
অসন্তুষ্টতা;
মন খারাপ, হতাশ, নিরাশ;
দলত্যাগ, চক্র, ষড়যন্ত্র করা, উপদল, দুর্গ গঠন করা, গুজব, অপবাদ রটনা করা;
আত্মহত্যা করা;
বদমাইশী কৌশল অবলম্বন করা।
○ সর্বহারার নিজেদের এবং জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্ব/সংগ্রাম মীমাংসার পদ্ধতি হচ্ছে ঐক্য-সমালোচনা-আত্মসমালোচনা-ঐক্য।
সমালোচনা করার পদ্ধতি
ঐক্যঃ যে সকল দিকসমূহের সাথে একমত তা বের করা, তা উল্লেখ করা, প্রশংসা করা, ঐ সকল দিকের সাথে একমত পোষণ করা।
একটি একটি করে সমালোচনার পয়েন্ট নিয়ে অগ্রসর হওয়া। প্রথমেই সমালোচনা না করে ঐ ত্রুটির বিষয় নিয়ে মার্কসবাদ অধ্যয়ন করা (যাকে সমালোচনা করা হবে তাকে নিয়ে), আলোচনা করা, বুঝানো, শুদ্ধি অভিযানের পদ্ধতি অনুসরণ করা।
এ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি সম্পর্কে উপলব্ধি করার পর্যায় উপস্থিত হলে তাকে সমালোচনা করা, ত্রুটি উল্লেখ করা, সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা, তার ত্রুটি সংশোধিত হলে বিপ্লব ও জনগণের উপকার হবে তা তুলে ধরা, তার মানোন্নয়ন ও ভালর জন্য বলা হচ্ছে তাও উল্লেখ করা।
তাকে সংশোধনে সহায়তা করা।
সমালোচনা গ্রহণ করার পদ্ধতি
কেউ সমালোচনা করলে সমালোচকের শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গীর প্রশংসা করা।
সমালোচক উদারতাবাদী নয় তার প্রশংসা করা।
সমালোচক আমার ভালর জন্য বলছে অর্থাৎ আমার ত্রুটি দূর হলে আমি জনগণের ভাল সেবক হবো এ কারণে বলছে বলে সমালোচককে প্রশংসা করা।
দোষ থাকলে বা ভুল হলে অকপটে স্বীকার করা, আত্ম-সমালোচনা করা, সংশোধনের আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে সংশোধন করা।
দোষ না থাকলে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক হওয়া।
সমালোচনা গ্রহণ করার পদ্ধতির উপর অতিরিক্ত পয়েন্টসমূহ
১। কেউ সমালোচনা করলে তা প্রত্যাখ্যান না করে গ্রহণ করা, অস্বীকার না করা।
২। সমালোচনা শুনে অন্যের ঘাড়ে দোষ না চাপানো।
৩। যা বলা হলো তা বিশ্লেষণ ও বিচার করা; দরকার হলে সময় নেওয়া বিচার-বিশ্লেষণের জন্য।
৪। যে বিষয়ে বা কাজ সম্পর্কে বলা হলো অনেক সময় মনে হয় যে কাজটা করিনি বা করার ইচ্ছাও ছিল না। এ অবস্থায় বুঝিয়ে বলতে বলা।
৫। আপনার সমালোচনার সাথে আমি একমত তবে কি কি ক্ষেত্রে এসব প্রকাশ পেল বুঝিয়ে বলুন—এ মনোভাব প্রকাশ করা।
৬। সমালোচনাকে অপমানজনক বা অসম্মানজনক মনে না করা। বিদ্রুপ করেছে এরূপ মনে না করা। ইত্যাদি চিন্তা করলে সমালোচনার বিষয়বস্তুর উপর চিন্তা থাকবে না। বিষয়বস্তুর গুরুত্ব ভুলে যাবে এবং ত্রুটি সংশোধিত হবে না।
৭। সমালোচনা গ্রহণের সময় চার ধরণের একতরফাবাদের বিরোধিতা করাঃ
ক) ফর্ম/পদ্ধতিকে আঁকড়ে ধরা;
খ) অপমানজনক মনে করা;
গ) নিজের প্রতি হতাশ হওয়া;
ঘ) প্রতিশোধবাদী হওয়া।
৮। সমালোচনা যেই করুক তাকে অভিনন্দিত করা।
৯। ত্রুটি থাকলে আন্তরিকভাবে স্বীকার করা, আত্মসমালোচনা করা এবং সংশোধনের জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালানো।
১০। সংশোধনের জন্য অন্যের সহায়তা ও নিজস্ব প্রচেষ্টা প্রয়োজন, এর মাঝে নিজস্ব প্রচেষ্টা প্রধান। নিজস্ব প্রচেষ্টা হলো—বারংবার শিক্ষা, বিশ্লেষণ, সহায়তা গ্রহণ এবং সংশোধনের জন্য শেষ পর্যন্ত অধ্যবসায়ের সাথে লেগে থাকা।
১১। ত্রুটির উৎস অতীত ও বর্তমানের মাঝে, বিশেষ করে অতীতের সমাজ জীবনের মাঝে নিহিত। তাই অতীত বর্তমানকে বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে ত্রুটির উৎস, প্রকৃতি ও নিয়মবিধি আবিষ্কার করে তা সংশোধন করা সহজ হবে।
১২। ত্রুটি অস্বীকার করা, পদ্ধতিকে দোষ দেওয়া, দোষ অন্যের কাঁধে চাপানো, হতাশ হয়ে যাওয়া, প্রতিশোধবাদী হওয়া ইত্যাদি খারাপ। এতে অন্যদের ধারণা খারাপ হয়ে যাবে, অন্যের সাথে সম্পর্কের অবনতি হবে, নিজেরও অধঃপতন হবে।
১৩। সমালোচনাকে স্বাগত জানানো। যুক্তি খাড়া না করা, ঐক্যের দিক খুঁজে বের করা।
১৪। সমালোচনা গ্রহণ করার পদ্ধতি ‘যা জানেন বলুন, সবটাই বলুন, বক্তাকে দোষ দেবেন না, ভুল থাকলে সংশোধন করুন, ভুল না থাকলে সতর্ক হোন’, এ মনোভাবের সৃষ্টি করতে হবে।
১৫। যে বিষয়ে সমালোচনা হয়েছে তা সংশোধনের মাধ্যমে সমালোচকের সাথে ঐ বিষয়ে অনৈক্য দূর করা। এভাবে আরো উন্নততর ঐক্য অর্জন করা।
১৬। উপরোক্ত পদ্ধতিতে ঐক্যের উদ্দেশ্য নিয়ে সমালোচনা, শিক্ষা প্রদান, আত্মসমালোচনা, সংশোধনের মাধ্যমে ত্রুটি দূর করার ভিত্তিতে নতুন ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা।
এভাবে ঐক্য-সমালোচনা-আত্মসমালোচনা-ঐক্যের লক্ষ্য অর্জন করা □