সিরাজ সিকদার রচনাঃ ক্ষুদে বুর্জোয়া, বুর্জোয়াদের সাথে আলোচনার পদ্ধতি

 

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির ১ম কেন্দ্রীয় কমিটির ৯ম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে গৃহীত এটি একটি দলিল। পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ জুন ১৯৭৩

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১ নম্ভেম্বর ২০১৪


পিডিএফ

○ একটি কাজ করার উপায়

▬ এর জন্য কি কি কাজ করতে হবে তা বের করা। গুরুত্ব অনুযায়ী কাজগুলোর ক্রম নির্ধারণ করা।

▬ এ কাজে চিন্তার ক্ষেত্রে কি কি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা বের করা এবং সেগুলো দূর করার জন্য মতাদর্শগত শিক্ষা প্রদান করা।

যেমন—একটি সামরিক কাজের পূর্বে গেরিলা/পরিচালকের ভয়, বাইরের সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা, অনভিজ্ঞতা, বিভিন্ন বিষয়ের অভাব ইত্যাদি চিন্তার উদয় হতে পারে।

এগুলো দূর করার জন্য মতাদর্শগত শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এগুলো ব্যক্তিস্বার্থ, একতরফাবাদ প্রভৃতি থেকে উদ্ভূত।

▬ অনুসন্ধান, পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একতরফাবাদ, আত্মগতভাব, ভাসাভাসাভাব দূর করার জন্য ক্লাশ নিতে হবে।

এ মতাদর্শগত কাজকেই প্রাধান্য দিতে হবে। কেননা চিন্তা কর্মকে নিয়ন্ত্রিত করে।

▬ মতাদর্শগত কাজকে প্রাধান্য দিয়ে গৌণ কাজগুলিকে একটি একটি করে সম্পন্ন করা।

○ ক্ষুদে বুর্জোয়া, বুর্জোয়া এবং অন্যান্যদের সাথে আলোচনার পদ্ধতি

○ ক্ষুদে বুর্জোয়া, বুর্জোয়া চরিত্রের বহিঃপ্রকাশসমূহ, তাদের সংগ্রামের রূপসমূহ ভালভাবে জানা এবং সেগুলো যাতে আলোচনায় অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায় তা কঠোরভাবে লক্ষ্য রাখা।

○ দ্বান্দ্বিক আলোচনার পদ্ধতি রপ্ত করা।

○ প্রথমে ভাল শ্রোতা হওয়া, তার যে বিষয়ে আগ্রহ (Interest) রয়েছে তাই দিয়ে শুরু করা ও অগ্রসর হওয়া।

প্রথমেই দ্বিমত দিয়ে শুরু না করা।

○ যে সকল দিকের সাথে আমরা একমত তা বের করা এবং সেগুলো উল্লেখ করা এবং প্রশংসা করা ও একমত পোষণ করা।

এগুলো কাজে লাগানো।

○ তাদের ভাল দিকগুলোর প্রশংসা করা, Appreciate করা।

○ তাদেরকে গুরুত্ব প্রদান করা এবং তাদের প্রতি আগ্রহ ও আন্তরিকতা প্রকাশ করা।

○ দ্বিমতসমূহ বের করা।

○ প্রকাশভঙ্গির কারণে দ্বিমতসমূহ দূর করা।

কোন বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকলে মতামত না দেওয়া।

○ মৌলিক দ্বিমতসমূহ একটি একটি করে দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে দূর করা। এগুলো নিয়ে বিতর্ক/ঝগড়া না করা।

○ কমপক্ষে সংযোগ রাখতে রাজী করানো।

○ আলোচনা বিষয়ক অতিরিক্ত পয়েন্ট

১। আলোচনায় নমনীয় হওয়া।

২। পার্টি-লাইন সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকা।

৩। মার্কসবাদ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান থাকা।

৪। কূটনৈতিক (Diplomatic) আলোচনার পদ্ধতি জানা।

৫। উন্নতমানের কথা বলার পদ্ধতি (Improvement of Voice) রপ্ত করা।

৬। ইংরেজীতে কথা বলতে পারা।

৭। বাহ্যিক চালচলনে স্মার্ট হওয়া ও স্বাস্থ্য ভাল রাখা।

৮। বিনয়ী মধুর ব্যবহার করা, ভাল ভদ্রতা-ভব্যতা (Courtesy) জানা।

৯। যাদের সাথে আলাপ করবেন তাদের বক্তব্য ও কাজ সম্পর্কে ভালভাবে জানা।

১০। পার্টির মতামত ছাড়া নিজস্ব মতামত কদাচিতও পেশ না করা এবং মাতব্বরী না করা।

১১। সুসংবদ্ধ আলোচনার জন্য পূর্বাহ্নেই আলোচ্যসূচী নির্ধারণ করে নেওয়া।

○ গণতান্ত্রিক উপায়ে কথা বলার পদ্ধতি

১। একজনের কথা বলার সময় মাঝখানে বলা উচিত নয়। তার বলা শেষ হলে বলা উচিত।

২। প্রশ্ন থাকলে নোট করে রেখে বলা শেষ হলে একটি একটি করে প্রশ্ন করা উচিত।

৩। বুঝতে না পারলে লিখে রেখে বলা শেষে উল্লেখ করা উচিত।

৪। কোন বিষয়ে বক্তা যদি বাদ দিল বলে মনে হয় তবে এইভাবে বক্তব্যের শেষে বিনয়ের সাথে উল্লেখ করা উচিত যে, বিষয়টা উল্লেখ করলে ভাল হয় বা এই বিষয়ে একটু বলেন।

৫। মনে রাখতে হবে যেন অহংকার প্রকাশ না পায়।

৬। মনোযোগের সাথে সকলের সকল বক্তব্য শোনা উচিত।

৭। কেউ একটা বক্তব্য বললে তার মুখের উপরে ভুল বলা উচিত নয়। তাকে ধীরে ধীরে বুঝিয়ে বলা উচিত যাতে সে বুঝতে পারে বিষয়টা সে ভুল বলেছে কিন্তু সে যেন মনক্ষুন্ন না হয়।

৮। অস্পষ্ট জ্ঞান নিয়ে তর্ক না করে স্পষ্টভাবে জানার জন্য প্রশ্ন করা উচিত। বা বিষয়টা সম্পর্কে জানার জন্য কোথায় কোথায় রেফারেন্স আছে জানতে চাওয়া উচিত।