সিরাজ সিকদার রচনাঃ সাংগঠনিক কাজের উপর কতিপয় পয়েন্ট

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির ১ম কেন্দ্রীয় কমিটির ৭ম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে গৃহীত একটি দলিল। পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯৭৩

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪


পিডিএফ

○ গোড়ামীবাদ বিরোধী শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা।

এ শুদ্ধি অভিযানে নিম্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেয়াঃ

− প্রয়োগ/সমস্যা ব্যতীত তত্ত্ব আলোচনা না করা।

− দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী কর্মপদ্ধতি রপ্ত করা।

এর বাস্তব বহিঃপ্রকাশ— “অনুসন্ধান ছাড়া কথা বলার অধিকার নেই” ইহা সকল কাজে প্রয়োগ করা।

− প্রয়োগের সাফল্যের ভিত্তিতে কর্মী মূল্যায়ন।

− সাংগঠনিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃত্বের যে সকল গোড়ামীবাদী ভুল হয়েছে তা সমালোচনা-আত্মসমালোচনা করা।

− বৈদেশিক অভিজ্ঞতার অন্ধ অনুকরণ বা হুবুহু প্রয়োগ বিরোধিতা করা।

○ ‘নিজেকে জান’ এ পদ্ধতি সকল কাজে ভালভাবে প্রয়োগ করা।

এ তত্ত্ব প্রয়োগ করে সংগঠনের সাথে যুক্তদের—

− কর্মী,

− গেরিলা,

− সহানুভূতিশীল,

− সমর্থক;

কর্মী, গেরিলাদের পুনরায়—

− অগ্রসর,

− মাঝারী,

− পশ্চাদপদ;

সহানুভূতিশীলদের পুনরায়—

− ভাল ও সক্রিয়,

− ভাল,

− সাধারণ;

এবং অগ্রসরদের ভাল ও খারাপ দিক এবং সামর্থ ও সীমাবদ্ধতার দিক খুঁজে বের করা।

এ বিভাগের ভিত্তিতে যোগ্য লোক যোগ্যস্থানে, কর্মীদের মান অনুযায়ী পরিচালক নিয়োগ ও কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

− অগ্রসরদের দিয়ে মাঝারী ও পশ্চাদপদদের পরিচলনা করা।

− অগ্রসরদের দ্রুত উন্নয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা।

− এদের মাঝ থেকে সার্বক্ষণিক ও দায়িত্বশীল কর্মী বের করা।

○ কর্মী ও গেরিলা এবং সহানুভূতিশীলদের সর্বদা কাজে লাগানো।

○ কর্মী ও গেরিলাদের প্রতি শৃংখলা প্রয়োগ করা যাতে তারা সুশৃংখল হয়।

○ নেতৃত্বকে সকল কাজের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

এজন্য পাঁচটি প্রবন্ধের পার্টির মধ্যকার ভুল চিন্তাধারার বিরোধিতার “সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত পরিচালনায় গণতান্ত্রিক জীবন সুনিশ্চিত করা” (৪১ পৃষ্ঠা)-র নীতি প্রয়োগ করা।

○ নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত কার্যকরী হচ্ছে কিনা তা সর্বদা যাচাই করা।

যে স্তর বা কমরেডকে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশ, দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়েছে তার নিকট থেকে উক্ত নির্দেশ, দায়িত্ব, প্রস্তাব কার্যকরী করা সম্পর্কে রিপোর্ট নেওয়া এবং তদারক করা।

উক্ত স্তর বা কমরেডের পরিচালনাধীন (নিম্নস্তর), কর্মীদের নিকট যেয়ে অনুসন্ধান করা ও রিপোর্টের যথার্থতা যাচাই করা।

○ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, নির্দেশ নেতৃত্বের কোন বিশেষ ইউনিটে কার্যকরী করা, বিন্দু ভেঙ্গে প্রবেশ করা, নেতৃত্বের নিজস্ব অভিজ্ঞতা অর্জন করা।

○ নেতৃত্বের পক্ষে উদারতাবাদ কঠোরভাবে পরিহার করা।

○ প্রতিনিয়ত অভিজ্ঞতার সারসংকলন করা, কাজের নিয়মবিধি বের করা। ভুলের পুনরাবৃত্তি কঠোরভাবে পরিহার করা।

○ কঠোরভাবে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং কর্মী, গেরিলা ও সহানুভূতিশীলদের প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলা।

○ নিয়মিত নেতৃত্ব সংস্থার বৈঠকের ব্যবস্থা করা।

○ সাংগঠনিক কাজ পরিকল্পনাহীনভাবে বিকাশ না ঘটানো। আমাদের কাজ হয়েছে এরূপ অঞ্চলের সাথে সংযোগ সাধনের উদ্দেশ্যে, গেরিলাযুদ্ধের জন্য সহায়ক ভৌগলিক ও জনগণের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে কাজ বিস্তারের পরিকল্পনা করা।

○ নেতৃত্বের থাকার জন্য একাধিক আশ্রয়স্থল তৈরী করা যা খুব কম সংখ্যক লোক চিনবে।

○ একজন কুরিয়ার নিয়োগ করা যে বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে এবং উচ্চস্তরের সাথে সংযোগ রক্ষা করবে।

○ সহকারী নেতৃত্ব গড়ে তোলা যে নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে কাজ পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।

○ এক অঞ্চলে ঘেরাও দমন হলে গেরিলা ও পার্টি-কর্মীরা যাতে অন্য অঞ্চলে সরে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করা।

প্রয়োজনবোধে এরূপ অঞ্চলে প্রচার তৎপরতা না চালানো যাতে শত্রু বুঝতে ব্যর্থ হয় যে ঐ এলাকায় আমাদের কাজ বা আশ্রয়স্থল রয়েছে।

প্রয়োজনবোধে এ সকল অঞ্চলে প্রকাশ্যে আমাদের প্রশাসন ব্যবস্থা কায়েম না করা।

আমাদের লোকেরাই পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন কর্মকর্তা হবে।

○ নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করা, অর্থের হিসাব নেওয়া এবং অনুমোদন করা, উচ্চস্তরে পেশ করা।

○ ব্যাপক প্রচার চালানো। এ উদ্দেশ্যে চিকা ব্যবহার করা।

○ অসংগঠিত অঞ্চলের কাজ পরিচালনার জন্য প্রথমে পরিচালক নিয়োগ করা, পরিচালক নতুন যোগাযোগ পরিচালনা করবে, তাদেরকে ধাপে ধাপে পাঠচক্রে, পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নেতৃত্বগ্রুপ গঠন করবে।

এরপরে আঞ্চলিক নেতৃত্ব গ্রুপের নেতা/সম্পাদক এলাকা পরিচালনা, উচ্চস্তরে যোগাযোগ, রিপোর্ট পেশ এবং নির্দেশ গ্রহণের জন্য দায়িত্বে থাকবে।

পরিচালকের ভূমিকা এভাবে শেষ হয়ে যাবে।

○ সর্বক্ষেত্রে ভ্রষ্টদের পরিহার করা (বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃস্থানীয় ক্ষেত্রে)।

○ “সাংগঠনিক কার্য প্রসঙ্গে” দলিল পাঠ ও প্রয়োগ করা। এ দলিলের “পার্টি কমিটির নেতৃত্বের কতিপয় সমস্যা প্রসঙ্গে” দলিল বার বার পাঠ ও প্রয়োগ করা।

○ কেন্দ্রীয় কমিটির ইশতেহারসমূহ ও সংবিধান পাঠ করা।

○ সংগঠনের দলিলাদি নিয়মিত পাঠ করা এবং বিভিন্ন স্তরে পড়ানো এবং দলিলের উপর মন্তব্য সংগ্রহ করা।

○ সহানুভূতিশীলদেরও রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সামরিক ও মতাদর্শগত বিষয় অবহিত করা।

কোন বিষয়ের উপর আলোচনা করা, ক্লাশ নেওয়া ও সভা পরিচালনার পদ্ধতি

পরিচালক নিজের এবং আলোচনা, বৈঠক, সভায় অংশগ্রহণকারীদের বিশেষ অবস্থার বিশেষ বিশ্লেষণ করবেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আমাদের পরিচালকদের কারো কারো তত্ত্বগত মান নীচু, কারো কারো তত্ত্বগত জ্ঞান অনুশীলনের সাথে যুক্ত নয়, ফলে অনেক সময়ই তারা আলোচনার সময় উত্থাপিত বিভিন্ন পশ্নের উত্তর যথাযথভাবে দিতে পারেন না। ফলে তারা কর্মীদের আস্থা হারান।

তারা আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বাহ্নেই ভালভাবে জেনেশুনে নেন না। ফলে বিষয়বস্তু পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেন না।

অংশগ্রহণকারীরাও পূর্বাহ্নেই প্রস্তুত হয়ে আসে না বলে তারা আলোচনায় যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না।

প্রস্তাব, রিপোর্ট ইত্যাদি সভায় পেশ করা হলে সাথে সাথে তা পাঠ করে ভালভাবে বিবেচনা ও পর্যালোচনা করা যায় না।

এ সকল কারণে আলোচনা, ক্লাস, বৈঠকের পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দেয়া হচ্ছে।

○ আলোচ্য বিষয়ক সূচী পূর্বেই অংশগ্রহণকারীদের জানিয়ে দেওয়া।

○ আলোচ্য বিষয়ের সাথে যুক্ত দলিলাদি, পুস্তক পাঠ করতে বলা।

○ আলোচ্য বিষয়ের উপর প্রশ্ন/প্রস্তাব/সমস্যা/রিপোর্ট/আলোচনা, ক্লাশ বা বৈঠকের কমপক্ষে এক বা দুইদিন পূর্বে পরিচালকের নিকট পেশ করা।

○ পরিচালক আলোচ্য বিশেষের উপর দলিলাদি এবং পেশকৃত প্রশ্ন/সমস্যা/প্রস্তাব/রিপোর্ট পাঠ করবেন, এ সকলের সাথে জড়িত পুস্তক, দলিলাদি পড়াশুনা করবেন, উচ্চস্তরের নিকট থেকে পরামর্শ, সহায়তা গ্রহণ করবেন।

এভাবে সহজভাবে বুঝানো এবং প্রশ্নসমূহের যথাযথ উত্তর প্রদানের ক্ষমতা অর্জন করা। প্রয়োজনবোধে পয়েন্ট, উত্তর, প্রস্তাব লিখিতভাবে নিয়ে যাওয়া।

○ আলোচনা, ক্লাশ, বৈঠকের আলোচনা আলোচ্যসূচীর মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা।

○ আলোচনা বৈঠকে অযথা উদ্ধৃতি না আওড়ানো, অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গের অবতারণা না করা, সহজভাবে বাস্তব জীবনের আলোকে আলোচনা করা যাতে কর্মীরা বুঝে।

○ সহজ ভাষায় স্পষ্টভাবে বক্তব্য পেশ করা, অস্পষ্টতা পরিহার করা, ভুল অর্থ হতে পারে এরূপ কথাবার্তা পরিহার করা।

○ সর্বদাই লক্ষ্য রাখতে হবে কর্মীরা বুঝতে পারছে কিনা, তারা মনোযোগী কিনা এবং আলোচনায় তারা আকর্ষণ বোধ করছে কিনা।

○ একঘেয়ে, নিষ্প্রাণ, যান্ত্রিক আলোচনা, গোঁজামিল দেওয়া পরিহার করা।

সংক্ষিপ্ত ও যথাযথভাবে বক্তব্য পেশ করা।

○ কোন বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে উত্তর প্রদান না করা।

ঐ বিষয়ে পরে আলোচনার তারিখ দেওয়া।

ভুল আলোচনা না করা, আবোল তাবোল কথাবার্তা না বলা, মিথ্যা না বলা। এভাবে পরিচালক ও অংশগ্রহণকারী উভয়েই প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা, ক্লাশ বা বৈঠকে যাবেন।

এর ফলে—

○ আলোচনা, ক্লাশ বা বৈঠকের মান উন্নত হবে এবং ভাল ফল দেবে।

○ পরিচালক অযোগ্য হবে না।

○ পরিচালক ও কর্মী উভয়েরই মান উন্নত হবে।

কর্মীদের কি এবং কেন প্রশ্ন করা, প্রস্তাব পেশ করা, রিপোর্ট লেখার অভ্যাসের সৃষ্টি হবে।

○ পড়াশুনা সমস্যাভিত্তিক হবে