সিরাজ সিকদার রচনাঃ সামরিক ক্ষেত্রে কতিপয় গাইড লাইন

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ডিসেম্বর ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪


 

পিডিএফ

১। ব্রাশ ফায়ার করা যায় এরূপ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র (স্টেন, ব্রেটা, এলএমজি, পিস্তল) সংক্রান্তঃ

আমরা অনেকগুলো ব্রাশ ফায়ার করা যায় এরূপ অস্ত্রাদি হারিয়েছি। কাজেই এ সম্পর্কে নীতি নির্ধারণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

○ গ্রামে রাতে জাতীয় শত্রু অপারেশনে স্টেন, ব্রেটা বা এলএমজি ব্যবহার না করা। দেশীয় অস্ত্র দ্বারা অপারেশন করা, প্রয়োজনবোধে রাইফেল ব্যবহার করা।

○ পুলিশ, সামরিক বাহিনীকে অল্প দূর থেকে এমবুশ করার জন্য এ ধরণের অস্ত্র খুবই সহায়ক। কাজেই এ ধরণের হাওমলার জন্য এগুলো রেখে দিতে হবে।

○ শহরে গ্রামে কমান্ডো হামলার জন্য সীমিত সংখ্যায় ব্যবহার করা।

○ রাখা, স্থানান্তরে অতিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করা।

○ নেতৃস্থানীয় ও সম্ভাবনাময় কর্মীদের দিয়ে অস্ত্রাদি একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তর না করা।

○ কোন প্রকার গাফিলতির জন্য এ ধরণের অস্ত্র খোয়া গেলে শাস্তি প্রদান করা।

○ কমান্ডার/কমিশার অপারেশনের সময় প্রয়োজন বোধে নিরাপত্তার জন্য স্টেন, ব্রেটা, পিস্তল সঙ্গে রাখতে পারেন। তিনি উহা নিজ হেফাজতে সতর্কতার সাথে রাখবেন যাতে তা খোয়া না যায়। অপ্রয়োজনীয়ভাবে একটিও গুলি খরচ করবেন না।

○ যত্রতত্র ব্যবহারের ফলে এবং গুরুত্ব না বুঝার ফলে এগুলো খোয়া যাচ্ছে এবং অস্ত্রের উপর অতি নির্ভরতা জন্মাচ্ছে।

২। শহর ও গ্রামাঞ্চলে অস্ত্রের অনুসন্ধান করা, সম্ভব হলে অপারেশন করে তা সংগ্রহ করা, ক্রয় করা।

৩। গেরিলা অপারেশনের সময় (অর্থাৎ পরিকল্পনা কার্যকরী করার সময়) কমান্ডার নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে।

অপারেশন প্রাক্কালে কমিশার/পরিচালকের সাথে কমান্ডারের যোগাযোগ করার ব্যবস্থার অভাবে কমান্ডার তার ভূমিকা পালনে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে।

ফলে অপারেশন হয়নি, পুরোপুরি সফল হয়নি অথবা ট্রুপ বিপদে পড়েছে।

কমান্ডার, পরিচালক/কমিশারের সাথে সংযোগ রাখতে পারে তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজনে যাতে কমান্ডার বাস্তব অবস্থা জানতে পারে ও নির্দেশ নিতে পারে।

এ ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে অনেক অপারেশনে ব্যর্থতা ঠেকানো সম্ভব হবে।

এ কারণে কমান্ডার যাতে কমিশার/পরিচালকের সাথে সংযোগ রাখতে পারে তার জন্য ‘ওয়াকিটকি’, ‘ওয়্যারল্যাস’ এর ব্যবস্থা করার প্রচেষ্টা চালানো।

অপর পদ্ধতি হচ্ছে অপারেশনের মাধ্যমে কমান্ডারদের অভিজ্ঞ করে তোলা, শিক্ষা প্রদান করা যাতে কমান্ডার অপারেশনকালে উত্থাপিত নতুন সমস্যাবলীর সমাধান ঠাণ্ডা মাথায় দিতে পারে।

৪। অনেক সময় কমান্ডার অপারেশন প্রাক্কালে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। এ কারণেই সহকারী কমান্ডার ঠিক করে দেওয়া প্রয়োজন। কমান্ডার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সহকারী কমান্ডার ট্রুপ পরিচালনা করবে, কমান্ড দেবে।

সহকারী কমান্ডারও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে গেরিলাদের মাঝে যে কেউ কমান্ড গ্রহণ করে ট্রুপকে পরিচালনা করবে এবং নির্দেশ দেবে।

এ ব্যবস্থা অপারেশন পরিকল্পনাকালে গেরিলাদের ভালভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে, যাতে কমান্ড সমস্যা না উঠে।

এক সাথে সকলেই কমান্ড না দেয় সে বিষয়েও সতর্ক করতে হবে, অর্থাৎ কমান্ডার ব্যর্থ হলে সহকারী কমান্ডার, সহকারী কমান্ডার ব্যর্থ হলে যে কোন গেরিলা কমান্ড দেবে—এই নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।