সিরাজ সিকদার রচনাঃ সম্পাদকীয়, লাল ঝান্ডা ৩

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ জুলাই ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১২ আগস্ট ২০১৪


পিডিএফ

চক্র বিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযান পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টিতে প্রতিদিনই সমগ্র সংগঠনব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে, গভীরতর হচ্ছে।

চক্র বিরোধী সংগ্রামে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি মতাদর্শগত ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ক্ষেত্রে বিরাট বিজয় অর্জন করেছে।

চক্রের মতাদর্শগত ভিত্তি লাল ঝাণ্ডায় ও অন্যান্য দলিলে তুলে ধরা হচ্ছে; চক্র বিরোধী মতাদর্শগত সংগ্রাম জোরদার হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে চক্রান্তকারীরা প্রকাশ্যে বাংলাদেশ পুতুল সরকারের চরে, দেশীয় আন্তর্জাতিক শত্রুদের চরে পরিণত হয়েছে। তাদের এই পরিণতি পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি পূর্বেই নির্দেশ করেছিল।

সাংগঠনিকভাবে চক্রান্তকারীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনের অভ্যন্তরে ও বাহিরে তাদের সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

চক্রান্তকারীদের অপরাধের গুরুত্বের ভিত্তিতে বিশ্বাসঘাতক ফজলু ও তার এক সহযোগীকে আমাদের বীর গেরিলারা দৈহিকভাবে নির্মূল করেছেন।

এগুলো হচ্ছে শত্রুবিরোধী সংগ্রামের বিরাট বিজয়। পূর্ববাংলার ইতিহাসে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি সর্ব প্রথম এ ধরণের আলোড়ণ সৃষ্টিকারী তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার সৃষ্টি করেছে। বিপ্লবীদের জন্য ইহা আনন্দের সংবাদ, পক্ষান্তরে বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী ও দেশীয়-আন্তর্জাতিক শত্রুদের জন্য মারাত্মক দুঃখের সংবাদ।

চক্রান্তকারীরা ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ সরকারের চর হিসেবে কমরেডদের ধরিয়ে দেওয়া ও তাদের হত্যার প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এটা তাদের মৃত্যুশয্যার শেষ সংগ্রাম।

কাজেই সমগ্র পার্টিকে অবশ্যই সতর্কতা বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। চক্র বিরোধী সংগ্রামকে আরো বিস্তৃত করতে হবে।

চক্রান্তকারীদের সাথে মতাদর্শগতভাবে এক হয়ে নেতৃত্ব না পাওয়ার কারণে যারা চক্রে যায়নি, ভাগ্যান্বেষী, নেতৃত্ব ও পদ-লোভী, নাম-যশলোভী, চক্রসৃষ্ট প্রতিকুলতার সুযোগসন্ধানীদেরও উন্মোচিত করতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা, সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে এবং তাদেরকে রূপান্তর করতে হবে।

চক্রবিরোধী সংগ্রামকে শুদ্ধি অভিযানের সাথে সম্পর্কিত করতে হবে। চক্রকে শুদ্ধি অভিযানের নেতিবাচক উদাহারণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

চক্রবিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযানের প্রক্রিয়ায় মতাদর্শগত সংগ্রামই হচ্ছে প্রধান দিক। সমগ্র সংগঠনে এই মতাদর্শগত সংগ্রামই হচ্ছে প্রধান কাজ।

পার্টির বিজয় ও টিকে থাকা, পার্টির অন্যান্য কাজ, সশস্ত্র সংগ্রাম, নতুন কর্মী বাড়ানো; সাংগঠনিক সুসংবদ্ধকরণের সফলতা নির্ভর করছে চক্র বিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযানের সাফল্যের উপর এবং বিশেষ করে মতাদর্শগত সংগ্রামের সাফল্যের উপর।

এ সংগ্রামে সফল না হওয়ার অর্থ হচ্ছে পার্টি সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারীদের, অপরিবর্তিত ক্ষুদে বুর্জোয়া, নেতৃত্ব পদলোভীদের পার্টিতে পরিণত হওয়া অর্থাৎ পার্টি দেশীয়-আন্তর্জাতিক শত্রুদের চরে পরিণত হওয়া।

কাজেই চক্র বিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযান হচ্ছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কাজ। অবশ্য এ কেন্দ্রীয় কাজ সম্পাদন করার সময় অন্যান্য কাজও চালিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে সশস্ত্র সংগ্রাম সমগ্র পূর্ববাংলাব্যাপী শুরু করার লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে হবে।

চক্রবিরোধী সংগ্রামে ও শুদ্ধি অভিযানে নূতন কর্মী, সহানুভুতিশীল, সমর্থক, সম্ভব হলে জনগনকেও শরীক করতে হবে, যাতে তারাও এতে অংশ গ্রহণ করেন।

এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ভুল চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতি, চক্রের মুখোস তাদের নিকটও উদ্ঘাটিত হয়, তারাও যাতে পার্টির সুবিধা-অসুবিধা-সংগ্রামের সাথে একাত্ম হতে পারেন, তারাও যাতে অগ্রগামী চিন্তাধারা ও কর্ম পদ্ধতি রপ্ত করে বিপ্লবী কাজে অধিকতর প্রেরণা লাভ করেন।

মার্কসবাদীরা ষড়যন্ত্র করেনা। কাজেই আমদের সংগ্রাম জনগণকে না জানানোর কোন কারণ নেই। জনগনকে জানানোয় বরঞ্চ আমাদের আন্তরিকতাই প্রমাণ করবে; জনগণ আমাদের প্রতি অধিকতর আস্থাশীল হবেন। এ কারণে পোষ্টার, চিকা, লিফলেটের মাধ্যমে ও অন্যান্য গোপন পদ্ধতিতে চক্রবিরোধী সংগ্রাম এবং শুদ্ধি অভিযানের বিষয় জনগণকে জানাতে হবে।

চক্র বিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযানের প্রক্রিয়ায় কেডার ইতিহাস প্রণয়ন, বাসিটা বর্জন, টাটকাটা গ্রহণ, সদস্য, প্রার্থী সদস্যপদ প্রদান, কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনস্থ স্তরসমূহে কংগ্রেস অনুষ্ঠান করা হচ্ছে সাংঠনিক সুসংবদ্ধকরণের লক্ষ্য।

চক্রবিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযান পূর্ববাংলার বিপ্লবী ইতিহাসে নূতন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কমরেডদের মতাদর্শগত মান উন্নত করে অধিকতর বিপ্লবী প্রেরণার সৃষ্টি করেছে।

বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের সংগঠনে এ ধরণের বিপ্লবী পদক্ষেপ কোনদিন গ্রহণ করা হয়নি। এখানেই বিপ্লবী আর অবিপ্লবী পার্টির মধ্যকার পার্থক্য।

চক্রবিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযান হচ্ছে পার্টির মধ্যকার ও বাইরের মিথ্যার সাথে সত্যের প্রকাশ্য লড়াই, ভুলের সাথে সঠিকতার লড়াই, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার সাথে সংশোধনবাদ, অসর্বহারা মতাদর্শের লড়াই, সর্বহারাদের সাথে অসর্বহারাদের তীব্র শ্রেণীসংগ্রাম।

এ লড়াইয়ের মাধ্যমে পার্টিকে বিজয় অর্জন করতে হবে, সত্যকে বিজয় অর্জন করতে হবে, সর্বহারা বিপ্লবীদের বিজয় অর্জন করতে হবে।

এ প্রকার কঠোর ও জটিল সংগ্রামের আঁকাবাঁকা পথ ব্যতিত সহজ বিজয় অর্জনের কোন পথ নেই। পৃথিবীর মহান কোন কিছুই কঠোর সংগ্রাম ছাড়া বিজয় অর্জন করেনি।

কাজেই সমগ্র পার্টির মধ্যকার একমাত্র সর্বহারাদের কেন্দ্র কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির অধীন ঐক্যকে দৃঢ় করতে হবে; বোকা বুড়োর মত লেগে থাকতে হবে সংগ্রামে, আত্মবলিদানে নির্ভয় হয়ে সমস্ত বাঁধাবিঘ্ন অতিক্রম করে চক্রবিরোধী সংগ্রাম এবং শুদ্ধি অভিযানে বিজয় অর্জন করতে হবে; পার্টি বিপ্লব ও জনগণের স্বার্থকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করতে হবে, চক্রান্তকারীদের চূড়ান্তভাবে কবরস্থ করতে হবে, ভুল চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতির সংশোধন করতে হবে।